গোধুলির শেষ বিকেলে তুমি আমি পর্ব-৩৯+৪০

0
202

#গোধুলির_শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#পর্ব৩৯
#Raiha_Zubair_Ripti

মধ্যে রাত,,বাহিরে বইছে তুমুল বাতাস। একটু আগে বিদ্যুৎ ও চলে গেছে এমন বাতাসের পূর্বাভাস পেয়ে। এই বাতাসের মধ্যে বেলকনিতে থাকা যাচ্ছিলো না বলে সাদমান রুমের ভেতর চলে আসে ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে। প্রথমেই দৃষ্টি যায় বিছানায়। শাফায়াত রুয়াত হাত জড়িয়ে শুয়ে আছে। সাদমান হাল্কা হেসে নিজের রুমে চলে যায়। ঘুম ঘুম ও পাচ্ছে।
সাদমান শাফায়াত এর রুম থেকে চলে যেতেই আকাশের বুক চিঁড়ে ঝোড়ো বৃষ্টির আবির্ভাব হলো। সেই সাথে সশব্দে চমকাতে লাগলো বিদ্যুৎ। এ যেনো এক প্রকার প্রলয় ঝংকার। রুমের জানালা খোলা থাকায় পর্দা গুলো উড়ো উড়ি করছে। ছিটে ফোঁটা পানিও আসছে রুয়াতের শরীরে। কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো রুয়াত। পানির ছিটে আগের তুলনায় তীব্র হতেই রুয়াত পিট পিট করে চোখ মেলে তাকালো। সর্ব প্রথম চোখ গেলো শাফায়াত এর দিকে। বিজলির ঝলকানির আলোয় থেকে থেকে শাফায়তের মুখশ্রী স্পষ্ট হচ্ছে। পাশেই ফ্লোরে বসে রুয়াতের হাত জড়িয়ে ধরে বিছানায় মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। রুয়াতের ওষ্ঠের কোনে হাসি ফুটে উঠলো। রুয়াত উঠে বসতে নিলে মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করে। যার দরুন আর উঠতে পারে না। ঠাস করে বালিশের উপর শুয়ে পড়ে।

শাফায়াত টান লাগায় ধাপ করে চোখ মেলে তাকায়। রুয়াত চোখ মুখ কুঁচকে মাথা দু হাত দিয়ে চেপে ধরে আছে। শাফায়াত হন্তদন্ত হয়ে ফ্লোর থেকে উঠে বিছানায় বসে। রুয়াতের গালে হাত রেখে অস্থির কন্ঠে বলে-
-“ হোয়াটস হ্যাপেন্ড রুয়াত৷ কি হয়েছে? ব্যথা করছে কোথাও? খারাপ লাগছে?
রুয়াত শাফায়াতের দিকে তাকালো। মাথা থেকে এক হাত সরিয়ে শাফায়াত এর গালে রেখে শীতল কন্ঠে বলল-
-“ অস্থির হবেন না শাফু। আমি ঠিক আছি। মাথাটা একটু ব্যথা করছে।
শাফায়াত শান্ত হতে পারলো না। রুয়াতের মাথার বালিশ টা টেনে খাটে খাঁড়া ভাবে রেখে রুয়াতকে আধশোয়া করে শুইয়ে দিলো। তারপর রুয়াতের দু হাত শাফায়াত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল-
-“ জ্বর আসলো কি করে রুয়াত? জ্বরে তোমার কি অবস্থা হয়ে গিয়েছিল কোনো আইডিয়া আছে? জ্ঞান হারিয়ে অচেতন হয়ে পড়েছিলে বিছানায়। সাদমান….

শাফায়াত কথাটা আর সম্পূর্ণ করতে পারলো না। রুয়াত তর্জনী আঙ্গুল শাফায়াত এর ওষ্ঠে রেখে বলল-
-“ হিস ক্ষিধে পেয়েছে ভীষণ।
শাফায়াত শান্ত চোখে রুয়াতের চোখের দিকে তাকিয়ে তারপর ঘাড় বেঁকিয়ে পাশে রাখা খাবারের প্লেটের দিকে তাকালো। আস্তে করে বিছানা থেকে নেমে ফোনের লাইট জ্বালিয়ে খাবার টা রুয়াতের সামনে এনে বলল-
-“ নাও।
রুয়াত ঘাড় ফিরিয়ে বলল-
-“ খাইয়ে দিন।
শাফায়াত গ্লাস থেকে পানি নিয়ে হাত ধুয়ে রুয়াতের মুখে খাবার তুলে দিলো। রুয়াত এক লোকমা খাবার মুখে নিয়েই চোখ মুখ খিঁচে ফেললো। মুখের ভঙ্গিমা তেমনটাই রেখে বলল-
-“ এমন তিতে কেনো খাবার? ছিঃ। এই বাজে রান্না টা কে রেঁধেছে?
শাফায়াত এক লোকমা খাবার নিজের মুখে তুলে নিলো। নাহ্ খাবার তো তিতে না। যথেষ্ট সুস্বাদু খেতে। শাফায়াত ফের খাবার রুয়াতের মুখে তুলে দিতে নিলে রুয়াত মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে বলে-
-“ খাব না এই বাজে খাবার। টেস্ট টা ভীষন বাজে। প্লিজ একটা ডিম পোস করে আনুন।
-“ শিওর?
-“ হু।
শাফায়াত এঁটো হাত ধুয়ে রান্না ঘরে আসলো। ফ্রিজ থেকে একটা ডিম বের করে পোস করে রুমে আসলো। রুয়াত তখন বালিশে চোখ বুজে আছে। শাফায়াত ডিমের প্লেট টা রুয়াতের কোলে দিয়ে বলে-
-“ রুয়াত ডিম এনেছি খেয়ে নাও। ঔষধ ও খাওয়ার আছে।
রুয়াত চোখ মেলে তাকালো। ডিমের প্লেটের দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ শরীর এমন ক্লান্ত লাগতেছে কেনো শাফু?
-“ শরীরে জ্বর তোমার। ভুলে গেলে?
-“ হঠাৎ জ্বর কেনো আসলো? আমি কি বৃষ্টি তে ভিজেছিলাম?
-“ জানি না। ডিম টা খাও।
রুয়াত ডিম ছিঁড়ে এক টুকরা মুখে দিয়ে চিবাতেই আবার সেই তিতে তিতে ভাব মুখের ভেতর। ডিম খাওয়ার ইচ্ছে টা মরে গেলো। রুয়াত প্লেট টা শাফায়াত এর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল-
-“ আপনি নিশ্চয়ই কিছু খান নি। এটা খেয়ে নিন।
-“ না এটা তোমার জন্য এনেছি তুমি খাও।
-“ না খেতে ইচ্ছে করছে না। তিতে লাগছে ডিম টা। মুখের রুচি টাটা বাই বাই করে চলে গেছে। আপনি খান। আর হ্যাঁ খেতে জোর করবেন না। তাহলে কিন্তু উল্টি এসে বিছানা ফ্লোর সব ভেসে যাবে।
শাফায়াত জোর করলো না। পানির গ্লাস সহকারে ঔষধ রুয়াতের হাতে দিয়ে বলল-
-“ খেয়ে নাও। বেটার ফিল পাবে।
রুয়াত বাধ্য মেয়ের মতো খেয়ে নিলো ঔষধ গুলো। শাফায়াত ডিম টা খেয়ে রুয়াতের পাশে এসে শুয়ে পড়লো। রুয়াত আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো শাফায়াত কে। রুয়াতের গরম শরীর শাফায়াত এর শীতল শরীরে এসে বিঁধতে লাগলো। মনে হচ্ছে পু’ড়ে যাবে কিয়ৎ ক্ষন এভাবে থাকলে। অথচ মেয়েটা বুকে মুখ গুঁজে জাপ্টে ধরে আছে। শাফায়াত চাদর টেনে দু’জনের শরীরে নিলো। রুয়াতের এলোমেলো চুল গুলো মুখের উপর থেকে সরিয়ে কানের পেছনে গুঁজে দিলো। তারপর আলতো করে কপালে চুমু খেলো। রুয়াত হেঁসে ফেললো। শাফায়াত এর গলায় রুয়াত ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বলল-
-“ সেম সেম শাফু। শুভ রাত্রি।
শাফায়াত হেঁসে ফেললো।

রাতের সকল আঁধার ঝড়ঝাপটা কে বিদায় দিয়ে পৃথিবীর বুক চিঁড়ে উদয় হলো এক ফালি সূর্যের আলোর। সূর্যের আলোয় ঝলমলে করছে চারিপাশ। বৃষ্টির ফলে কাঁদা হওয়া রাস্তাটার কাঁদা শুকাতে শুরু করেছে৷ গাছপালার ভেজা পাতা শুকিয়ে এখন মৃদু বাতাসে খেলা করছে। বাগানে এখন ও কাঁদা থাকায় গায়ে হলুদের স্টেজ টা শাফায়াত দের ছাঁদে বানানোর ব্যবস্থা করা হলো। সাদমান নিজের বিয়ের ডেকোরেশন সব নিজেই লোকজন দের বলে বলে দিচ্ছে। এই তো ভোরের দিকে সাদমান এর মা বাবা,খালা ফিরেছে। সাত টা বাজতেই ডেকোরেশন এর লোকরাও চলে আসে। শারমিন বেগম বাড়ি ফিরে সোজা নিজের রুমে চলে গিয়েছিলেন। এখন সাড়ে আট টা বাজে। রুম থেকে বের হয়ে দেখে তার ছেলে খাবার সার্ভ করছে। বেশ অবাক হলেন। চেয়ার টেনে বসতেই সাদমান এর মা বললেন-
-“ আপা বসো। আজ শাফায়াত নিজের হাতে ব্রেকফাস্ট বানিয়েছে।
শারমিন বেগম প্লেট টেনে বলল-
-“ তুই রান্না ঘরে ঢুকেছিলি?
শাফায়াত অন্য প্লেটে খাবার বেড়ে বলে-
-“ হ্যাঁ।
-“ কেনো রুয়াত কোথায়?
-“ ঘুমাচ্ছে।
-“ এতল বেলা হয়ে গেলো এখনও ঘুমাচ্ছে! ঠিক আছে তো শরীর?
-“ জ্বর আসছে রুয়াতের। গতকাল সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিল। ওষুধ খেয়েছে রাতে। সেজন্য এখনও ঘুমে। রুয়াত উঠলে তুমি একটু মা খাইয়ে দিও।
-“ কেনো তুই কোথাও যাচ্ছিস?
-“ হু ভার্সিটি যাচ্ছি। আজ পোগ্রাম আছে।
-“ বাসায় ও তো প্রোগ্রাম শাফু।
-“ আমার জানা মতে আজ তো কোনে প্রোগ্রাম নেই মা। গায়ে হলুদ তো কাল।
-“ শপিং তো করতে হবে তোদের। শুনেছি তোর আর রুয়াতের কেনাকাটা বাকি।
-“ সে আমি আসার পথে নিয়ে আসবো। এখন আসছি তুমি রুয়াতের একটু খেয়াল রেখো।

শাফায়াত চলে গেলো। গাড়ি ড্রাইভ করে ভার্সিটি আসতেই দশটা বেজে গেলো। পুরো ভার্সিটির মাঠ সজানো। বাহির থেকে স্টল ও বসেছে। শাফায়াত সোজা সাইফুল ইসলাম এর কক্ষে চলে গেলেন। কিছু আলাপ-সালাপ করে কক্ষ থেকে বের হতেই দেখা হলো নেহালের সাথে। পাশে রোহান ও আছে। দুজনেই শাফায়াত কে সালাম দিলো। শাফায়াত সালামের জবাব দিলো। শাফায়াত জিজ্ঞেস করলো-
-“ কোনো প্রবলেম হয়েছিল আমি চলে যাওয়ায় কাল?
নেহাল জবাবে বলল-
-“ না স্যার সমস্যা হয় নি।
শাফায়াত চলে গেলো। নেহাল রোহান ভেতরে ঢুকে চেয়ার টেনে বসলো। সাইফুল ইসলাম আড়চোখে তাকালেন। বললেন-
-“ এখানে কেনো তোরা?
রোহান শার্টের কলার ঠিক করে বলল-
-“ কাল থেকে তো অনেক খাটালেন। এখন আমাদের জন্য কিছু করুন।
-“ তোদের জন্য কি করতে হবে আবার? খাবারের ব্যবস্থা তো করাই আছে।
-“ খাবার তো আমার বাসায় ও আছে। আমাদের ট্যুরের ব্যবস্থা করুন।
-“ কিসের ট্যুর? কুয়াকাটা থেকে না ঘুরিয়ে আনলাম তোদের।
-“ আপনি ঘুরিয়ে এনেছেন! চাঁদা কত নিছেন মনে আছে? এখন একটাই কথা আমি নেহাল খাগড়াছড়ি বান্দরবন যেতে চাচ্ছি আপনি তার বন্দোবস্ত করবেন।
-“ ওখানে গিয়ে কি করবি তোরা?
-“ বান্দরের সাথে লুডু খেলবো বান্দরবনে।
-“ বেয়াদব যা এখান থেকে। বড় হ আগে। একা একা ঘুরার উপযুক্ত এখনও হোস নি তোরা।
-“ বাবা হবার উপযুক্ত হয়ে গেছি আমরা তাই না?
-“ তো বিয়ে কর গিয়ে। তোর মামু কে বল পাত্রী দেখতে।
-“ পাত্রী সব ঠিকঠাক। এখন গিয়ে তুলে নিয়ে আসবো।
-“ দাওয়াত দিস আমাদের। ভাগিয়ে নিয়ে আসিস না।
-“ দাওয়াত এর গ্যারান্টি দিতে পারছি না। আমাকে দিয়ে ভরসা নেই। না মানলে ভাগিয়েও আনতে পারি। তা বলছি কি শুনুন। আমি প্রোগ্রামে থাকতে পারবো না।
-“ কেনো রে কোন কোথায় যাবি?
-“ কিছু গেস্ট আসবে তাদের রিসিভ করতে যাব।
-“ তো কি? বাসায় পৌঁছে দিয়ে চলে আসবি এখানে।
-“ আমার থাকতে হবে কেনো? আর কাজ করার জন্য লোক নেই? শুধু আমাকে খাটান। আমাকে যখন এতোই খাটান তাহলে ঘরের জামাই করে নিন। আফটারঅল আমি যথেষ্ট হ্যান্ডসাম রিচ ছেলে।
-“ চোখ পেছনে লাগিয়ে হাঁটা ধরো বাপ। আমার কপালে এতো মন্দ জুটাতে চাই না। তোর গেস্ট আসবে কখন?
-“ বিকেলে।
-“ ওদের সামলিয়ে তাড়াতাড়ি চলে আসিস। তুই থাবি না শাফায়াত ও থাকবে না। সামলাবে কে?
-“ কেনো স্যার কেনো থাকবে না?
-“ শাফায়াত দের বাড়িতে বিয়ে। তার উপর ওর বউ রুয়াত অসুস্থ।
রোহান আগের মতো আর এখন অস্থির হলো না। শান্ত কন্ঠেই বলল-
-“ আচ্ছা আমও চেষ্টা করবো আসার। এখন কি আর কোনো কাজ আছে? থাকলে বলুন করে দেই।
-“ কাজ নেই। যা আছে সব সন্ধ্যায়।
-“ এখন তাহলে ক্লাবে যাচ্ছি।

রোহান নেহাল চলে গেলো। শাফায়াত বিকেল অব্দি ভার্সিটি থেকে তারপর শপিংমলে চলে আসলো। রুয়াত আর নিজের জন্য মেচিং করে শাড়ি পাঞ্জাবি, শার্ট থ্রিপিস নিয়ে নিলো। বাড়ি ফিরতে ফুরতে সন্ধ্যা। পুরো বাড়ি মরিচ বাতিতে ঝলমলে করছে। রুমে আসতেই দেখলো রুয়াত কপালে হাত ঠেকিয়ে শুয়ে আছে। শাফায়াত প্যাকেট গুলো সোফায় রেখে এগিয়ে এসে বলল-
-“ এখন কেমন আছে শরীর?
শাফায়াত এর কন্ঠ শুনে রুয়াত হাত সরালো কপাল থেকে। উত্তরে বলল-
-“ আগের থেকে বেটার।
-“ সকালের খাবার খাওনি কেনো সম্পূর্ণ? মা ফোন করে সব টা বলেছে।
-“ তিতে লাগছিল। তবে দুপুরে কিন্তু খেয়েছি আগের থেকে ভালো। মা বলে নি সেটা?
-“ হুমম বলেছে। তোমার জন্য শপিং করে এনেছি। ম্যাচিং ম্যাচিং করে দেখবে?
-“ কাল সকালে দেখবো। আপনি আগে ফ্রেশ হয়ে আসুন।
শাফায়াত ওয়াশরুমে চলে গেলো।

রোহান বিকেলে তার খালা আর খালাতো বোন কে ধানমন্ডি থেকে নিয়ে আসে। কিসের জন্য এসেছে সেটা রোহান নিজেও জানে না। রোহান নিজের ফ্ল্যাটে তার খালা আর খালাতো বোন কে রেখে চলে আসতে নিলে খালাতো বোন সুমা রোহানের সাথে ভার্সিটি আসতে চায়। রোহান মানা করে না। সুমা কে সাথে করে নিয়ে আসে। ভার্সিটির মাঠ টা রঙবেরঙের আলোয় সজ্জিত। রোহান সুমা কে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে ঢুকে। সাইফুল ইসলাম রোহান কেই খুঁজছিল। দেখামাত্রই টেনে নিয়ে বলল-
-“ ফুল কোথায়? অতিথিরা তো চলে আসলো।
রোহান পকেট থেকে ফোন বের করে নেহাল কে ফোন করে ফুলের কথা বলল।
-“ বলে দিয়েছি। আসতেছে ফুল। আপনাদের অতিথি এতো লেটুস কেনো? আসার কথা তো ছিলো পাঁচ টায়। এখন বাজে ছয় টা।
-“ আসলে তুই নিজেই জিজ্ঞেস করিস। আফটারঅল তর মামুর ই তো বন্ধু।
-“ আচ্ছা এখন আসি, একটু ঘুরতে তো দিন। আসতে না আসতেই শুধু কাজের জন্য টেনে নিয়ে আসেন। আর ডাকবেন না। নিজের ছেলেকে খাটান এখন।

রোহান চলে আসলো। সুমা কে নিয়ে স্টলে ঘুরতে লাগলো। নেহাল একটু আগেই নীতি কে নিয়ে এসেছে। নীতি বসে ছিলো চেয়ারে। তার সামনে দিয়েই রোহান চলে গেলো অথচ তাকালো না। নীতি ঘাড় বেঁকিয়ে দেখলো। রোহানের সাথে অতিপরিচিত এক মুখ। একবার দেখেছিল এই মেয়ের ছবি রোহানের ফোনে নীতি। রোহান বেশ প্রশংসা করেছিল এই মেয়ের। মেয়েটা মেডিক্যাল পড়ছে। নীতি পকেট থেকে ফোন বেট করে রোহান কে ফোন করলো। আশ্চর্য ফোন রিসিভ হচ্ছে না। নীতির রাগ হলো। ইচ্ছে করলো উঠে গিয়ে বলতে-
-“ ফোন টা কেনো রিসিভ করছেন না? হাতেই তো আছে ফোন।
কিন্তু নীতি সামলে নিলো নিজেকে। ঘাড় সোজা করে কপালে এক আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করতে লাগলো। কোথা থেকে নেহাল আসলো দৌড়ে। নীতির পাশে বসে বলল-
-“ কিছু লাগবে তোর?
নীতি ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ না কেনো?
-“ রোহান বলল তুই ফোন করেছিলি। সেজন্য আসলাম।
নীতি দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। বলল-
-“ আমাকে বাসায় দিয়ে আসবা? মাথা ব্যথা করছে বক্সের আওয়াজে।
নেহাল অবাক হয়ে বলল-
-“ আসলিই তো একটু আগে। এখনই চলে যাবি?
-“ হু আসলে দম বন্ধ লাগছে এতো মানুষের ভীড়ে। একটু একাকী থাকতে চাই।
-“ আচ্ছা চল।
নেহাল নীতি কে নিয়ে চলে আসলো। আসার আগে নীতি রোহানের দিকে তাকাতে ভুললো না। সেই মেয়েকে নিয়ে ফুচকা খাচ্ছে হেঁসে হেসে! কই তার সাথে তো কখনও হেঁসে কথা বলে না। মেয়েটা কি খুব স্পেশাল রোহানের কাছে!

#চলবে?

#গোধুলির_শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#পর্ব৪০
#Raiha_Zubair_Ripti

গায়ে হলুদের শাড়ি পড়ে স্টেজে বসে আছে রজনী। একটু আগেই শাফায়াত, রুয়াত এসেছে। সাদমান এর গায়ে হলুদ শেষ হয়েছে। রুয়াতের শরীরে এখনও হাল্কা জ্বর আছে। শাফায়াত রুয়াত কে ধরে নিয়ে স্টেজে আসলো। রজনী তাকালো বোনের দিকে। রুয়াত হাসলো। বাটি থেকে একটএ হলুদ নিয়ে রজনীর গালে ছুঁইয়ে দিলো। তারপর জড়িয়ে ধরে বলল-
-“ সকল সুখ তোমার হোক আপা। আর দুঃখ রা না ভিড়ুক তোমার তীরে।
শাফায়াত ও হলুদ ছুঁইয়ে দিলো। হাল্কা একটু নাচগান শেষ হলে শাফায়াত রুয়াত কে নিয়ে চলে আসে। রজনী রুমে এসে শাড়ি পাল্টানোর জন্য উদ্যোত হলে বিছানায় থাকা ফোন টা বেজে উঠে। রজনী তাকিয়ে দেখে সাদমান কল করেছে। তাও আবার ভিডিও কল। রজনী রিসিভ করলো ফোন টা। মুহূর্তে ফোনের স্কিনে ভেসে উঠলো সাদমানের মুখশ্রী। রজনী গম্ভীর মুখে বলল-
-“ মনে পড়লো আমাকে কল দেবার কথা?
সাদমান হাসলো। গায়ে হলুদের শাড়ি সাথে কাঁচা ফুলের গহনায় অপরূপ সুন্দর লাগছে। সাদমান কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে শুধালো-
-“ অনেক আগেই দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ফোন ছিলো না কাছে। ব্রো নিয়ে গিয়েছিল।
-“ কেনো?
-“ কেনো আবার। আমাকে শায়েস্তা করার জন্য। আমাকে ফোন দিতে দিবে না। কথা বলতে দিবে না।
-“ আর কারো ফোন ছিলো না কল দেওয়ার জন্য?
-“ হু ছিল কিন্তু লজ্জার ও তো একটা ব্যপার আছে।
-“ ঠোঁট কাটা দের আবার লজ্জা থাকে নাকি?
-“ হোয়াট ডু ইউ মিন আমি বেশরম?
-“ বাদ দিন। তা ফোন টা কখন পেলেন হাতে?
-“ এই তো একটু আগেই। তবে আমি কিন্তু আপনাকে দেখেছি।
-“ কিভাবে?
-“ মনে মনে স্বপ্নে।
রজনী হেঁসে ফেললো।
-“ একদম হাসবেন না রজনী।
-“ কেনো?
-“ বুকে এসে বিঁধে। ইচ্ছে করে টুক করে আপনার গাল টেনে ধরি।
-“ তাই বুঝি?
-“ হু।
-“ আচ্ছা আমাকে কেমন লাগছে?
সাদমান রজনী কে রাগানোর জন্য বলল-
-” মোটামুটি।
রজনী ভ্রু কুঁচকালো। তাকে কি সুন্দর লাগছে না গায়ে হলুদের সাজে? মোটামুটি মানে কি হ্যাঁ? এভাবে মুখের উপর কোনো ছেলে বলে তার হবু বউ কে?
-“আপনি কি জানেন আপনাকে মেক-আপ ছাড়াই বেশি সুন্দর লাগে?
-“ আমাকে কি সুন্দর লাগছে না সাদমান? হাল্কা মেক-আপ করেছি।
সাদমান কিছুক্ষণ ভেবে বলল-
-“ হু সুন্দর লাগছে বাট এতো ভারী মেক-আপ করবেন না খবরদার বিয়ে তে। দেখা যাবে প্রথম রাত টার অর্ধেকই কেটে যাবে মেক-আপ তুলতে তুলতে।
রজনী মুখ বাঁকিয়ে বলল-
-“ অসভ্য। একটু তো প্রশংসা করতেন আমার। আর এটা ভারী মেক-আপ না। আমি খুবই সিম্পল সাজ দিছি।
-“ মিথ্যা প্রশংসা আমার দ্বারা হয় না।
-“ আচ্ছা রাখি।
-“ আরেহ্ রাগ করছেন কেনো। শুনুন।
-“ কি? বলেন।
-“ কাল তো বিয়ে।
-“ জানি তো।
-“ ফিলিংস টা কেমন?
-“ ভালোই।
-“ শুধুই ভালো?
-“ হু।
-“ রেগে বলছেন জানি তো। আমার তো রাতই কাটছে না। কখন সকাল হবে আর আমি আপনাকে নিজের করে নিতে আসবো। উফ সময় গুলোর কাটা মনে হচ্ছে চলতেই চাচ্ছে না। এই প্রেমিক পুরুষের অপেক্ষা দেখে মজা নিচ্ছে।
-“ তাড়াতাড়ি আসবেন।
-“ ভোর হলেই চলে আসি কি বলেন?
রজনী হেঁসে বলল-
-“ হু চলে আসুন।
-“ রাখছি ঘুমান। কাল দেখা হচ্ছে আমাদের।
রজনী ফোন টা কে’টে দিলো। তারপর মেক-আপ শাড়ি বদলে থ্রিপিস পড়ে নিলো।

রুয়াত বাসায় ফিরেই ঘুম দিয়েছে। শরীর টা আর ভালো লাগছে না। এই শরীর খারাপ নিয়েও সারাদিন কাজ করেছে। রুয়াত মোটেও চায় না শরীর খারাপ দেখে হাত পা গুটিয়ে সব কাজ কর্ম শ্বাশুড়ি ননদের উপর ছেড়ে দিতে। শারমিন বেগম অনেক মানা করেছিল কাজকর্ম না করতে। কিন্তু রুয়াত শুনেনি। হলুদ বাটা থেকে শুরু করে গায়ে হলুদের সব কাজ রুয়াত করেছে। শাফায়াত কাজে ব্যস্ত থাকায় জানতে পারে নি। এখন মায়ের কাছে শুনে রাগে কিড়মিড় করছে। শাফায়াত রুমে এসে দেখে রুয়াত শাড়ি পাল্টে ঘুমিয়ে পড়েছে। শাফায়াত ডাকলো না। শরীর ভরা রাগ নিয়েই শুয়ে পড়লো।

সকাল হতেই রুয়াত ঘুম থেকে উঠে কাজে লেগে পড়তে নিলে শাফায়াত বাড়ি ভর্তি সবার সামনে ধমক দিয়ে ঘরে নিয়ে আসে। এই তো রুয়াত ড্রয়িং রুমে বসে শ্বাশুড়ির হাতে হাতে কাজ করছিল। শাফায়াত ঘুম থেকে উঠে রুয়াত কে দেখতে না পেয়ে বাহিরে এসে দেখে রুয়াত কাজ করছে। আশ্চর্য কাজ করার জন্য তো লোক রাখা হয়েছে। তারপরেও এরা কেনো কাজ করবে? তার উপর রুয়াতের শরীর ও ভালো না। তাই লোকজন ভুলে ধমকে নিয়ে আসে।

রুয়াত মুখ ফুলিয়ে বসে আছে রুমে। শাফায়াত আড়চোখে রুয়াত কে দেখলো। রুয়াত রেগে বলল-
-“ আশ্চর্য আপনি এভাবে ধমকে নিয়ে আসলেন কেনো আমায়?
-“ তো কিভাবে নিয়ে আসবো?
-“ লোকজন কি ভাবলো।
-“ তাতে আমাদের কি?
-“ সবাই বলবে বাড়ির বউ হাত পা গুটিয়ে বসে আছে।
-“ থাকবে দুদিন তারা। তারপর চলে যাবে। তাদের বলা না বলায় কি আসে যায়।
-“ আমার ভালো লাগছে না এভাবে বসে থাকতে। আপনি না বাড়ির ছেলে। আপনি এভাবে বসে আছেন কেনো? যান সাদমান ভাইকে সাহায্য করুন।
-“ তারজন্য নাইমুর আছে। আমার যেতে হবে না। তুমি চুপচাপ রেডি হও। আর তুমি কোন আক্কেলে এ শরীর নিয়ে কাজ করতে যাও। কাজে হাত দিতে মানা করেছিলাম না?
-“ অসহ্যকর আপনি সেটা জানেন?
-“ এখন জানলাম। কিন্তু করার কিছু নেই। এই অসহ্যকর কেই টলারেট করতে হবে সারাজীবন।

সাদমান সকাল সকাল গোসল করে শেরওয়ানি পড়ে রুমে বসে আছে। নাইমুর হাত ঘড়ির দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। সবে বাজে দশটা। আর এই ছেলে এখনই রেডি হয়ে বসে আছে! সাদমান নাইমুর কে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল-
-“ এই ব্রো এর বন্ধু ব্রো বোনের স্বামী দুলাভাই কখন যাব আমি বিয়ে করতে?
নাইমুর হতাশ হয়ে জবাব দিলো-
-“ এখনও সময় হয় নি সাদমান। আরো অনেকটা সময় আছে। এতো সকাল সকাল কেউ বিয়ে করতে যায় না।
-“ আশ্চর্য দশ টা বাজে। এটা এখনও সকাল মনে হয় তোমার কাছে! কত বেলা হয়ে গেছে। আর এখন গেলে সমস্যা টা কোথায়? আমার বিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি, আমার বউ। সেখানে যেতে হলে আমার সময়ের অপেক্ষা করতে হবে!
-“ হ্যাঁ ভাই করতে হবে। আর জ্বালাস না। সময় হলে তোকে নিয়ে যাব। এবার চুপ থাক।
-“ এটা কিন্তু অন্যায়। শালার সময়ও আমার সাথে বাটপারি করা শুরু করে দিছে। এই দিন, দিন না। আমারও দিন আসবে। দেখে নিব।
-“ আমেরিকায় বসে দেখে নিস। আমি আসছি রেডি হয়ে। রুম থেকে বের হবি না। মেয়েদের ও এতো বলতে হয় না। যতবার তোকে বলতে হচ্ছে আমার।
নাইমুর চলে গেলো। সাদমান রুমে পায়চারি করতে লাগলো হাতে ঘড়ি নিয়ে।

রজনী অফ হোয়াইট কালারের বেনারসি টা পড়ে বসে আছে রুমে। মুখে তেমন মেক-আপ করেনি গতকাল রাতে সাদমানের বলা কথা স্মরণ করে। হঠাৎ ফোন বেজে উঠায় তাকিয়ে দেখলো রুয়াত ফোন করেছে। রজনী রিসভ করতেই রুয়াত কে দেখতে পেলো। রুয়াত মুগ্ধ হয়ে দেখছে তার বোন কে। কি স্নিগ্ধ লাগছে তার বোন কে। রজনী গম্ভীর মুখে বলল-
-“ কতদূর তুই৷ কখন আসবি?
-“ আমরা গাড়িতে আপা। বাসার কাছাকাছি। সাদমান ভাইয়া তোমাকে আজ এ রূপে দেখলে ট্রাস্ট মি হার্ট অ্যাটাক করে বসবে।
রজনী লজ্জা পেলো।
-“ রাখছি। অপেক্ষার প্রহর গুনো সাদমান ভাইয়ের আসার।

শাফায়াত দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। এতো এনার্জি কোথায় পায় এই মেয়ে মাথায় আসে না তার। এমন একটা ভাব ধরে আছে মনে হচ্ছে সে একদম পুরোপুরি সুস্থ। রুয়াত ব্লাক কালারের শাড়ি পড়েছে। শাফায়াত ব্লাক স্যুট পড়েছে।
সামনের গাড়িতে সাদমান আছে। দেখতে দেখতে তারা রজনী দের বাসার সামনে চলে আসলো। রুয়াত বাড়িতে পা রাখতেই কনেপক্ষ হয়ে গেট আঁটকে দাঁড়ালো। ত্রিশ হাজার টাকা না দিলে ঢুকতে দিবে না। সাদমান সরু চোখে তাকালো রুয়াতের দিকে। সে তো একটা টাকাও নিয়ে আসে নি। এখন কি বিয়ে করতে এসে ভাইদের কাছে হাত পাততে হবে! সাদমান শাফায়াত এর দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ ব্রো আমি তো টাকা নিয়ে আসে নি৷ প্লিজ তুমি দিয়ে দাও। আমি বাসায় ফিরেই দিয়ে দিব।
শাফায়াত জবাবে বলল-
-“ আমি কি এতো টাকা নিয়ে আসছি নাকি? এই রুয়াত এটা কিন্তু ঠিক না। টাকা আনি নি আমরা।
-“ তাহলে ঢুকতেও হবে না। দাঁড়িয়ে থাকুন বাহিরে।
নাইমুর ভাগ্যিস পনেরো হাজারের মতো টাকা এনেছিল। সেটা শাফায়াত এর হাতে দিয়ে বলল-
-“ আমার কাছে এটা আছে। সাদমান বোকা টাকা না এনে বিয়ে করতে চলে আসছে। তোর কাছে থাকলে এগুলো দিয়ে ম্যানেজ কর।
শাফায়াত তর্ক বিতর্ক খুব কম করে। তার এসব ভালো লাগে না। নিজের কাছে দশ হাজারের মতো ছিলো সেগুলো রুয়াতের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল-
-“ আর নেই। ২৫ হাজারের মতোই আছে।
রুয়াত টাকাটা নিয়ে ঢুকতে দিলো সবাই কে। সাদমান কে বসানো হয়েছে ড্রয়িংরুমে। তার সামনেই রজনী বসে আছে ঘোমটা টেনে। মাঝখানে সাদা পাতলা পর্দা দেওয়া। রজনীর মুখ টা এখনও দেখার সৌভাগ্য তার হয় নি। কাজি এসে বিয়ে পড়ানো শুরু করলে। রজনী কে কবুল বলতে বললো। রজনীর নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসলো। শাড়ির আঁচল খামচে ধরে সময় নিয়ে কবুল বললো। সাদমান কে বলতে বললে সাদমান সাথে সাথে বলে ফেলে। সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে। কবুল বলার শেষে সাদমান কে রজনীর মুখ দেখতে বলা হয়। সাদমান কাঁপা কাঁপা হাতে রজনীর ঘোমটা টা সরায়। সাথে সাথে দেহের হৃৎস্পন্দন থেমে যায়। পূর্ণতা পাবার আনন্দ বুঝি এটাই? এতে খুশি প্রশান্তি লাগছে যে বলে বোঝানো দায়। সাদমান মুখে কিছু বিরবির করে রজনীর মাথায় ফু দিলো। তারপর লোকজনের তোয়াক্কা করলো না। রজনীর কপালে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দেয়। পুরো শরীর বরফের মতো জমে যায় রজনীর। তারা এখন আমরা তে পরিনত হয়েছে। পবিত্র এক বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। সুখ দুঃখের সঙ্গী হয়েছে।

সন্ধ্যা হলে রজনী কে নিয়ে আসা হয় শাফায়াত দের বাসায়। রজনী খুব একটা কান্না করে নি। শাফায়াত দের বাসায় এসে রজনী কে সাদমান এর রুমে দিয়ে আসা হয়। সাদমান যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রুমে চলে আসে। রজনীর কাছে এসে রজনী কে শাড়ি বদলে আসতে বলে। রজনী শাড়ি বদলে সুতি কাপড়ের শাড়ি পড়ে নেয়। সাদমান নিজেও রুমেও ভেতর শেরওয়ানি বদলে টিশার্ট পড়ে নেয়। তারপর রজনী কে নিয়ে বেলকনিতে চলে আসে। আকাশ টা কালো মেঘে ঢাকা। চাঁদের দেখা কখনও মিলছে তো আবার কখনও কালো মেঘে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। সাদমান প্যান্টের পকেট থেকে একটা বক্স বের করলো। রজনী তখন আকাশ দেখতে ব্যস্ত। সাদমান হাঁটু গেঁড়ে বসে বলল-
-“ মিসেস সাদমান ধন্যবাদ আমার জীবনে আসার জন্য। ধন্যবাদ আমার জীবন কে এতো সুন্দর করে দেবার জন্য। ধন্যবাদ আমাকে ভালোবাসতে দেবার জন্য। ধন্যবাদ….
সাদমান শেষ করতে পারলো না। তার আগেই রজনী সাদমানের গালে হাত রেখে বলল-
-“ ধন্যবাদ আপনাকে সাদমান আমাকে দ্বিতীয় বার স্বপ্ন দেখার সাহস দেওয়ার জন্য।
সাদমান গাল থেকে রজনীর হাত সরিয়ে অনামিকা আঙুলে আংটি টা পড়িয়ে দিয়ে চুমু খেয়ে দাঁড়িয়ে বলল-
-“ ভালোবাসি আপনাকে ভীষণ রজনী।
রজনী সাদমান কে জড়িয়ে ধরে বলল-
-“ আমিও আপনাকে ভালোবাসি সাদমান। আমার হাত কখনও ছেড়ে দিয়েন না। একবার নিজেকে সামলে নিতে পেরেছি কিন্তু দ্বিতীয় বার আর পারবো না।
সাদমান শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল-
-“ কক্ষনও ছাড়বো না আপনার হাত। আপনি ভরসা করতে পারেন আমায়। ভরসার অমর্যাদা আমি কখনই করবো না।

বেলকনিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে নীতি। হাতে জ্বলজ্বল করছে রোহান সুমার ছবি সাথে নেহাল আর ওর ফ্রেন্ড রাও আছে। কি হাসিখুশি লাগছে রোহান কে। অথচ নীতির জীবনে হাসিখুশি নেই আজ। লোকটা এতো পাষাণ কেনো? একটু বেশি ভালোবাসে বলে লোকটা এমন করছে? ভালোবাসলে এতো কষ্ট কেনো হয় হৃদয়ে? আচ্ছা আজ থেকে যদি নীতি রোহান কে না ভালোবাসে তাহলে কি এই কষ্ট থেকে নীতি মুক্তি পাবে? হ্যাঁ পাবে মুক্তি। ভালোবাসাও থাকবে না হৃদয়ে তাহলে যন্ত্রণা ও হবে না। নীতি ফেসবুক থেকে বেরিয়ে আসলো। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল-
-“ কাউকে নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসতে নেই। নিজের জন্য ও কিছু রেখে দিতে হয়। নাহলে পরে পস্তাতে হয়। আর যাকে ভালোবাসবে তার থেকেই অবজ্ঞা সহ্য করতে হয়। আপনাকে নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসার ফল এখন পাচ্ছি। তাই তো আপনাকে পাবার তীব্র ইচ্ছে নিয়ে আজ থেকে আমি আপনার থেকে দূরে সরে আসলাম। কি বলুন তো? আমি খুব করে দেখলাম,ভাবলামও। যে মানুষটা আমাকে ছাড়া ভালো থাকে,আমার থাকা না থাকায় কিছু যায় আসে না। তাকে আর যাই হোক ভালোবাসা যায় না। আপনি ভালো থাকুন। আর আমিও না হয় আজ থেকে নতুন ভাবে ভালো থাকার চেষ্টা করবো আপনি বিহীন। খুব কষ্ট হবে জানি। তবুও চেষ্টা করবো খুব।

#চলবে?