গোধূলির শেষ প্রণয় পর্ব-১৫+১৬

0
6

#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_১৫

মিনিট দশেক হয়েছে মানহা রা আবরারদের বাড়ি আসছে। ড্রয়িংরুমে বসে চারপাশ টা দেখছে। নিরার মা হালিমা বেগম তাদেরকে বসিয়ে রেখে গেছেন চা নাস্তা আনতে। নিরা আর তানশি কথা বললেও মানহা বলে না সে চুপ করে আছে। সে আছে গভীর ভাবনায়। আবরার যদি সামনাসামনি বেধে যায় তখন কি করবে? তাদের বাড়ি এসে তাকেই এভয়েড করা কেমন একটা হয়ে যায়৷

নিরা অনেক্ক্ষণ ধরে খেয়াল করছে মানহা আসার পর থেকে কেমন চুপচাপ হয়ে আছে। কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসে নিরা। সে তো খুব করেই জানে তার মানহা আপু কেন এমন করে আছে? নিরার মনে পরে যায় সেদিনের কথা যখন আবরার ফোন দিয়ে তাকে সব বলে। আর আজ তার ভাইয়ের কথা মতো মানহা কে তাদের বাড়ি আনছে৷ পরিকল্পিত ভাবে প্ল্যান করে এখানে আসছে মানহা যদি কোনো মতে জানতো তাহলে কখনো আসতো না। তাই তো এত লুকোচুরি। নিরার ভাবনার ছেদ পড়ে মানহার কথায়।

” তোমার আবার কি হলো এমন করে তাকিয়ে আছো কেন? আগে কখনো দেখোনি নাকি আজকে একটু বেশি সুন্দর লাগছে কোনটা ভ্রু নাচিয়ে বলে।

” মানহার কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় নিরা। আমতাআমতা করে বলে তুমি চুপচাপ আছো কেন তাই দেখছিলাম আর কি।

নিরার কথার পরিপ্রেক্ষিতে মানহা কিছু বলে না। তার আগেই হালিমা বেগম চলে আসেন। তিনজনের হাতে চা দিলেন সাথে বিস্কুট ও দিলেন। সে গুলো খেয়ে নিরা তার রুমে নিয়ে যায়। নিরার রুমে গিয়ে তানশি ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পরে। তানশির কান্ডে হেসে ওঠে দুজনে। দুজনকে হাসতে দেখে তানশি নিজেও হো হো করে হেসে ওঠে।





ছাদে একা দাড়িয়ে আছে মানহা। সেই কখন তাকে রেখে নিচে গেছে নিরা। একা একা বোরিং লাগছে তাঁর। রোদের প্রখরতা বাড়ছে। এখন নাগাদ বারোটা বাজে। ছাদে লাগানো কাঠগোলাপের দিকে নজর পরে তার। মুহূর্তেই অনেক ভালোলাগা কাজ করে। হেঁটে গিয়ে কাঠগোলাপের কাছে দাড়ায়। ঝুঁকে একটা ফুল ছিড়তে যায় কিন্তু পুরুষালি কন্ঠ পেয়ে থেমে যায় মানহা।

” কারোর অনুমতি ছাড়া তার ফুল গাছ থেকে ফুল ছেড়া ঘোর অপরাধ সেটা কি মিস মানহা খান জানে না।

মানহা পিছনে ফিরে আবরার কে দেখে চমকে যায়। যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যে হয়। সেটা আজ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। যাকে সে ইগনোর করছে যার সামনে পরবে না বলে দেখে শুনে চলছে আর এখন সেই তার সামনে।

ভদ্রতার খাতিরে বলে,,

” সরি। আমি জানতাম না গাছটা আপনার। বলে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নেয় কিন্তু পারেনা আবরারের কথায় থেমে যেতে হয় তাকে।

” আমাকে ইগনোর করছেন আপনি?আমি কি করেছি?

” আবরারের সামনে এসে বলে, আপনি জানেন না কি করছেন?

“দেখুন মানহা। আপনি প্লিজ বোঝার চেষ্টা করুন। আপনাকে ছাড়া আমি ভালো নেই করুন গলায় বলে।

” আবরারের চাহনি দেখে খারাপ লাগে মানহার। কিন্তু কিছু করার নেই তার। সে আর কোনো পুরুষের সাথে নিজেকে জড়াতে চায় না। আবরার সব দিক থেকেই পারফেক্ট কিন্তু, কিন্তু রয়েই যায়।

” আপনি চুপ করে আছেন কেন মানহা। প্লিজ কথা বলুন।

” মিস্টার আবরার আপনি যেটা বলছেন সেটা কখনই সম্ভব না। আর আমি কোনো সিনক্রিয়েট করতে চাচ্ছি না। এখানে যে কেউ চলে আসতে পারে। আপনি প্লিজ চলে যান। আন্টি দেখলে খারাপ ভাববে। আমি চায় না আন্টি আমাকে খারাপ ভাবুক।

” এখানে কেউ আসবে না। আর আপনাকে কেউ খারাপ বলবেও না। আচ্ছা আপনি একটু ঠান্ডা মাথায় ভাবেন তো। আমি কি দেখতে খুব খারাপ। আমাকে এত অপছন্দ কেন আপনার?

” আমি কি কখনো বলছি আমি আপনাকে অপছন্দ করি। কেন নিজেকে খারাপ বলছে। বলে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।

” আবরার মানহার হাত ধরে দাড় করিয়ে দেয়। আবরারের কি হলো সে জানে না আচমকা মানহা জড়িয়ে ধরে বলে প্লিজ আমাকে ছেড়ে চলে যেয়েন না। আপনাকে খুব ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি।

হঠাৎ এমন কিছু হবে কল্পনার বাইরে ছিল মানহার। আচমকা শরীর জুড়ে শীতল বাতাস বয়ে যায়। এক অন্যরকম অনুভূতির সাথে পরিচয় হয়। এ কেমন অনুভূতি?

আবরারের হুশ আসতে ছিটকে দুরে সরে যায়। এ সে কি করলো। আবেগে মানহা কে জড়িয়ে ধরলো। মানহা এখন কি ভাববে। সে খারাপ।

মানহা স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রয়। তার সাথে এতক্ষণ কি হলো সেটা বুঝে উঠতে সময় লাগে। আশ্চর্য হয়ে আবরারের দিকে তাকায় দেখে সে মাথা নিচু করে আছে।

আবরার মানহার দিকে তাকিয়ে বলে সরি। আমি বুঝতে পারিনি এমন কিছু করে ফেলবো। আই এম এক্সট্রিমলি সরি। এমন টা আর হবে না। বলে গট গট পায়ে হেঁটে চলে যায়।

মানহা বিস্ময়ে এখনো আবরারের যাওয়ার পানে চেয়ে থাকে।

এমন একটা আপত্তিকর ঘটনা ঘটবে কখনো বুঝতে পারে নি। এমন কিছু ঘটতে পারে যদি বুঝতো তাহলে কখনোই আসতো না।

________

বিকালে বাসায় চলে আসে তিনজনে। সেই ঘটনার পর থেকে মানহা চুপচাপ হয়ে গেছে। কারোর সাথে কথা বলেনি। বিকালের পর থেকে রুম থেকে আর বের হয়নি।

সন্ধ্যায় পর নিরা এসে ডাকলেও সায় দেয়নি। নিরা বুঝতে পারছে কিছু একটা হয়েছে।

তানিয়া বেগম রাতের খাবার খাওয়ার জন্য ডাকলেও বলছে তার খিদে নেয় খাবে বা।

সারারাত এপাশ ওপাশ করে। চোখে কিছুতেই ঘুম আসে না। বার বার তখনকার ঘটনা চোখের সামনে ভেসে উঠছে কিছুতেই ভুলতে পারছে না। কেন এমন হচ্ছে তার? এভাবেই কখন ঘুমিয়ে পড়ে টের পায় না।

রাত একটা। আবরার এখনও বিছানায় যেতে পারেনি। তার ভিতরে অস্থিরতা কাজ করে। সে খুব ভুল করে ফেলছে। মানহা কে সে স্পর্শ করছে। সে তো এমনটা করতে চায় নি। মানহা কে সে হালাল করে পেতে চায়। এই অস্থিরতার কারণে সারাটা রাত ঘুম হয় না তার। ভোর রাতে চোখ টা একটু লেগে আসছিল। ফজরের আযান কানে আসতেই ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে। নামাজ পরার জন্য ফ্রেশ হয়ে ওজু করে জানামাজে দাড়ায়। নামাজ শেষ করে বেলকনিতে দাড়ায়। চারপাশটা কুয়াশায় ঢেকে গেছে। আগের থেকে অনেকটা বেশি কুয়াশা পরা শুরু করছে। অক্টোবর শেষ হতে চললো কুয়াশা তো পরবেই।

দুর থেকে এক জোড়া শালিক পাখি দেখা যায়। দুজনে দু দিকে মুখ করে বসে আছে। সেটা দেখে আবরার হেসে ওঠে বলে,,

” খুব অভিমান হয়েছে তাই না তোদের। অভিমান না রেখে দ্রুত মিটিয়ে নে। নয়লে সম্পর্কের মধ্যে দুরত্ব বেড়ে যাবে।

একটু পরেই শালিক জোড়া মুখোমুখি হয়ে বসে। আবরারের অনেক ভালো লাগে। কি সুন্দর তারা মিলে গেলে। মানহা যদি তার মনের কথা গুলো বুঝতো তাহলে কত সুন্দর একটা সংসার হতো। এক জোড়া শালিকের মতো তাদেরও টোনাটুনির সংসার হতো। কিন্তু সেটা তো এখনও ঢের দেড়ি আছে। তার বনবিড়াল এখন কোনো পুরুষ কে টাস্ট করতে পারছে না। কিন্তু তার বিশ্বাস বনবিড়াল তার ভালোবাসা ঠিকই বুঝবে। খুব তাড়াতাড়ি।

আজ বিকালে হবে খেলা। বনবিড়াল আজ বিকাল থেকে শুরু তোমাকে আমার করে পাওয়ার খেলা। তোমাকে যে আমার হতেই হবে। আমায় ছাড়া তুমি আর কারোর হবে না। ইটস মাই প্রমিস। এটা আমার কাছে আমার প্রমিজ। তোমাকে আমার করেই ছাড়বে ডিয়ার বনবিড়াল বলে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে।

এখন যদি তাকে কেউ দেখে তাহলে সে বলবে সে পাগলের মতো হাসছে কেন? সে তো পাগল তার বনবিড়ালের প্রেমে। তার বনবিড়ালের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। বনবিড়ালের মন জয় করার জন্য নিজেকে তৈরি করে নেয়।

চলবে ইনশা আল্লাহ

#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_১৬

দুপুরের পর থেকে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। সাথে খুব বাতাস হচ্ছে। আবার বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। খান বাড়ির পিচ্চি সদস্য গুলো প্ল্যান করছিল তারা সবাই ঘুরতে বের হবে। অয়ন সবাইকে ট্রিট দেবে। সকলে রাজি ছিল বাট হুট করে বৃষ্টি শুরু হয়ে তাদের সব প্ল্যান ভেস্তে গেলো। এই নিয়ে দুঃখের শেষ নেয় তাদের। দুপুর থেকে বৃষ্টি হচ্ছে তো থামার নাম গন্ধ নেয়। এখন প্রায় পাঁচ টা বাজতে চললো। সকলে মানহার রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে। বাইরে যেতে পারলো না তো কি হয়েছে বাড়িতেই তারা আনন্দ উল্লাস করবে৷ সেই মোতাবেক সবাই মানহার রুমে হাজির হয়েছে৷ এখন কি খেলা করবে সেটাই ভাবছে। সবাই যখন ভাবতে ব্যস্ত তখন মানহা চিল্লিয়ে বলে,,

” পেয়েছি।
” সবাই অবাক হয়ে বলে কি পেয়েছিস?
” খেলা।
” কি খেলা?

” গানের কলি। এটা খেললে খুব মজা হবে। বাট খেলাটা হবে দুই দলে। আমরা মেয়েরা একটা দল আর তোমরা ছেলেরা একটা দল। কি বলো সবাই।

” হ্যাঁ। কিন্তু? অয়ন বলে,
” মানহা জিজ্ঞেস করে কিন্তু কি ভাইয়া?

” কিছু না৷ ঠিক আছে।

” আচ্ছা তাহলে শোনো প্রথমে টস করা হবে যাদের প্রথম দান পরবে তারা গান ধরবে এবং গানের লাস্ট অক্ষর দিয়ে পরবর্তী গান ধরা হবে ওকেহ।

” ওকে ওকে। তাহলে শুরু করা যাক।

মানহা তানশি নিরা এক দিকে বসে। আর তাদের বিপরীত পাশে অয়ন মিরাজ তাসকিন বসে।

পাঁচ টাকার কয়েল দিয়ে টস করা হয়। অয়নরা শাপলা আর মানহারা সেতু। কাদের প্রথমে পরে সে নিয়ে কি উত্তেজনা তাদের মাঝে। মিরাজ তো বারবার বলছে তাদের শাপলা পরবে৷ তানশি মিরাজের কথায় মুখ ভেংচি কেটে বলে,,

” এ্যাা আসছে আমার শাপলা ওয়ালা। দেখিস আমাদের সেতু পরবে।

” মিরাজ সেও কম যায় না। সেও বলে দেখ তানু বিবি মুখ ভাঙাবি না বলে দিলাম৷

মানহা বুজতে পারে মিরাজদের ঝগড়া কোোথায় গিয়ে দাড়াবে তাই আগে বাগেই থামিয়ে দেয় দুজনকে।

মানহা কয়েন রা উপরে উঠিয়ে নিজের হাতের মাঝে ধরে ফেলে। তাঁর পর তার উপর থেকে হাত টা সরিয়ে দেখে সেতু পরছে। তানশি চেচিয়ে বলে দেখলি মিরাজেন্নে তোকে বলছিলাম না আমরাই পাবো।

খেলা শুরু হয়ে যায়। তানশি ‘ন’ দিয়ে ধরে। মিরাজ লাফ মেরে বলে নারে না আর তো পারে না __ এই থাম তুই তোকে আর বলতে হবে না। যা গলা তোর তানশি বলে ওঠে।

” মিরাজ খেপে ওঠে। শর্ত সাপেক্ষ লাস্টের অক্ষর দিয়ে মানহাদের বলতে হবে। আবারও ‘ন’ দিয়ে। তিনজনে ভাবতে থাকে। কিন্তু মনে পরছে না। তানশি ‘ন’ দিয়ে মিরাজের গাওয়া গানটায় পারতো। এখন কি করবে। নখ কামড়াতে থাকে। খানিক পরে মানহা বলে আমি পারবানে,,

তানশির চোখ চকচক করে ওঠে।আপু তাড়াতাড়ি বলো,,

❝ নাগর আমার নিঠুর বড়ো, মনও বোঝে না। আমার ভাঙা খাচা পরে আছে, সে তো আসে না❞

সবাই করতালি দেয়। মানহার গানের প্রসংশা করে। মানহা খুব সুন্দর গান গাইতে পারে। নিরা এই প্রথম মানহার কন্ঠে গান শুনছে। সে তো মুগ্ধ হয়ে গেছে এত সুন্দর গলা। সে তো জানতোই না। মানহা শুধু মুচকি হাসে কিছু বলে না।

অনেক হাসি ঠাট্টার মাধ্যমে তাদের গানের কলি খেলাটা শেষ হয়। মানহারা জিতে যায়। কারণ তাসকিন তেমন একটা গান পারে না। অয়ন মোটামুটি ভালোই পারে তাও আবার নিরার জন্য শেখা। তাই এখন কাজে দিল। আর মিরাজ খুব সুন্দর গান পারে। একটা গানে তারা হেরে যায়।





বৃষ্টি হওয়ার সুবাদে খিচুড়ি রান্না করে খান বাড়ি। কারণ বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি না খেলে চলে। এটা তো হতে পারে না। খিচুড়ির সাথে ডিম ভাজি। ডিনারটা জমে খিড়। সবাই তৃপ্তি সহকারে খায়। যে যার মতো খেয়ে সবাই ঘুমাতে চলে যায়৷

অনেক রাত হয়ে গেছে। মানহা বৃষ্টি ভেজা রাত উপভোগ করছে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। তার কেন যেন মনে হচ্ছে তাকে কেউ দেখছে। খুব গভীর ভাবে। কিন্তু আশেপাশে কাউকে দেখছে না। ল্যামপোস্টের আলোয় রাস্তা আলোকিত হয়ে আছে। অনেক দুরে একটা গাড়ি দেখতে পায়। মেইন রাস্তায় এমন গাড়ি থাকবেই এটা কে না জানে। কিন্তু মনের ভিতর কেমন খচখচ করছে। হঠাৎ লক্ষ করে তাদের বাসার নিচে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক তার রুম বরাবর। কিন্তু কে? এত রাতে কে হতে পারে? খুব কৌতুহল জাগে নিজের মধ্যে। তাই তো ভালো করে লক্ষ্য করে। একটু পরেই বুঝতে পারে লোকটা কে? এত রাতে তাকে এখানে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেছে মানহা। মানহা কে তার দিকে আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে লোকটা মুচকি হাসে। মাঝ রাস্তা থেকে ডাক দিয়ে বলে,,

” বনবিড়াল
মানহা আরেকদফা চমকে যায় লোকটা তাকে বনবিড়াল বলছে। মানে সেদিনের তিনিই ইনি৷ দুয়ে দুয়ে চার হয়ে গেলো আজ।

” মানহার কোনো রেসপন্স না পেয়ে আবারও চেচিয়ে বলে ওঠে, মানহা আপনি কি আমার কথা শুনতে পারছেন না?

” আবরার আপনি এখানে কি করছেন? প্লিজ চলে যান। কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

” আপনি আমার কথায় রাজি হলে আমি চলে যাবো৷

” প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড। কেন এমন করছেন?

” আপনি হ্যাঁ বলুন। তাহলে চলে যাব।

” আচ্ছা ভেবে দেখবো। আপনি এখন যান।

” ঠিক আছে। এখন এগারোটা বাজে। বারোটার মধ্যে আমার উত্তর চায়। আর হ্যা উত্তর টা যেন ইয়েস হয় নো যেন না হয়। আর যদি না বলেন তাহলে,,,কিন্তু। আমি ঠিক বারোটার সময় ফোন দেবো। আসি ডিয়ার বনবিড়াল বলে মুচকি হেসে গাড়িতে গিয়ে বসে।

মানহা বিস্ময় নিয়ে এখনো তাকিয়ে রয়। লোকটা তাকে কি বলে গেলো? এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। লোকটা এমন কেন করছে? তার মতো মানুষের তো পাগলামি করাটা খাটে না। তিনি কেন অবুজ শিশুর মতো করছে। ভেবে পায় না।






ঘড়ির টিংটং শব্দে জানান দিচ্ছে রাত বারোটা বাজে। মানহা এখনও কোনো ডিসিশন নিতে পারেনি। এই এক ঘন্টা সময় ধরে শুধু ভেবেই গেছে কি করবে? মাথায় শুধু একটা কথায় বারি খাচ্ছে সে ডিভোর্সি নারী। শুধু এই একটা শব্দেই আটকে যাচ্ছে। আবরার যা চাচ্ছে সেটা কখনোই সম্ভব না। তার ভাবনার মাঝেই ফোন কল আসে। মানহা জানে কে কল করছে। ফোনটা রিসিভ করতে ইচ্ছে করছে না আবার মন সায় দিচ্ছে না তাকে অপেক্ষা করানোর। অনেক ভেবে চিন্তে কাঁপা কাঁপা হাতে কল টা রিসিভ করে কানে নেয়। তখনই শুনতে পায়।

” মানহা কি ডিসিশন নিলেন। আমি সিউর আপনি আমার প্রস্তাবে রাজি আছেন।

” মানহা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। লোকটা কত আশা নিয়ে ফোন করছে। তাকে কিভাবে ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু তাকে তো বাস্তবতা বুঝতে হবে। বাচ্চামো করলে তো হবে না।

” কি হলো আপনি চুপ করে আছেন কেন? কিছু কি হয়েছে বনবিড়াল অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে৷

” চুপ না থেকে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলায় তার কাছে উত্তম বলে মনে হয়। তাই তো নিজেকে সামলে বলে,,
আই এম সরি আবরার। আপনি কখনও ফোন দেবেন না আমাকে। আপনার মুখও দেখতে চায় না আমি। আর কখনো আমার সামনে আসবেন না বলে কল কেটে ফ্লোরে বসে পরে। হাউমাউ করে কান্না করে দেয়। তার কেন এত কষ্ট হচ্ছে। ডিভোর্সের দুইটা বছর হয়ে গেলো এমন তো কখনও হয়নি। কেন এত কষ্ট হচ্ছে কেন? বুকটা ফেটে যাচ্ছে তার?

আবরার এখনো ফোন টা কানে ধরে রাখছে। তার কানে শুধু বাজছে আপনি কখনো আমার সামনে আসবেন না। আপনার মুখও দেখতে চায় না। চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পরে। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে তার। জোরে কান্না করলে হয় তো নিজে হালকা মনে হতো কিন্তু সে যে পুরুষ। পুরুষ দের নাকি কাদতে নেয়। তাদের কান্না মানায় না। ধপ করে বিছানায় বসে পরে। এটা কি হচ্ছে তার সাথে? কেন হচ্ছে? একটু খানি ভালোবাসলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যাবে বনবিড়াল। আপনাতে কি আমার ঠায় হবে না। আপনাকে আমার খুব প্রয়োজন। ঠিক আছে এত দিন ভালো ভাবে বুজিয়েছি বাট আপনি আমলে নেননি। কিন্তু কাল থেকে আমার নতুন রুপ দেখবেন। পুরুষের যেনম ভালো রুপ আছে তেমনি তাদের খারাপ রুপটাও আছে। এতদিন আপনাকে ভালোবেসে পাগলামি করছি।
কাল থেকে এক অন্য আমি কে দেখবেন।

কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পড়ে মানহা। সারাটা রাত ওইভাবেই ঘুমিয়ে থাকে। ভোরের আলো ফুটতেই ঘুম ভাঙে যায় মানহার। আড়মোড়া ছেড়ে উঠতে গেলে ঘাড়ে ব্যথা লাগে। মনে পরে যায় কাল রাতে কথা। মুহূর্তেই চোখ ভিজে ওঠে।

চলবে ইনশা আল্লাহ।

[ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]