#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_২১
ঢাকা শহরের প্রতিটা অলিতে গলিতে ঘুরছে তারা। তাদেরকে বাধা দেওয়ার মতো কেউ নেই। চিল মুডে চিল করছে তাঁরা। নিরা আর মানহা দুজনে মহাখুশি। বিয়ের পর প্রথম নিরা অয়নের সাথে লং ড্রাইভে আসছে। প্রিয় মানুষের সাথে সময় কাটাতে কার না ভালো লাগে। বাইক চালাতে চালাতে হঠাৎ করে বাইক থামিয়ে দেয় অয়ন। মিরাজ একটু পিছনে ছিল সেজন্য ভাইয়ের দেখা দেখি সেও বাইক থামিয়ে দেয়। অয়ন বাইক থামিয়েছে কারণ তার সামনে আরও একজন বাইক থামিয়েছে। মানহা অবাক হয় লোকটা কে হতে পারে। মাথায় হেলমেটের কারণে বুঝতে পারছে না কে হতে পারে? লোকটা কে দেখার জন্য চুপ করে থাকে সে।
অয়ন মাথা থেকে হেলমেট খুলে বললো, ভাইয়া আপনি এখানে? এই অসময়ে?
তাদের সামনে থাকা লোকটা এবার নিজের মাথা থেকে হেলমেট খুলে ফেলে। মানহা’র মুখ বিস্ময়ে হা হয়ে যায়। এই প্রথম সে আবরারকে বাইক চালাতে দেখছে। লোকটা দেখতে মারাত্মক হ্যান্ডস্যাম। আজকে একটু বেশি সুন্দর লাগছে তাকে। রাতের মৃদু আলোয় দেখা যাচ্ছে তার চিলকি চুল গুলো বাতাসে উড়ছে। ছিঃ ছিঃ সে কেন এসব ভাবছে?
মৃদু হেসে বলে, হ্যাঁ একটু কাজ ছিল এখানে। তোমাদের দেখলাম তাই এগিয়ে আসলাম।
“ওহ আচ্ছা। ভালো করছেন। আমাদের সাথে লং ড্রাইভে চলেন। অনেক মজা হবে।
“আবরার আড়চোখে মানহা ‘র দিকে তাকিয়ে ফের অয়নের দিকে তাকিয়ে বলে, আমার কি প্রিয় মানুষ আছে যাকে নিয়ে লং ড্রাইভে যাবো। আমার হচ্ছে পোড়া কপাল। এই পোড়া কপালে কি আর লং ড্রাইভ আছে বলো ইনোসেন্ট ফেস করে বলে।
” তারা তিনজনে বুঝতে পারে কথাটা কাকে মিন করা হয়েছে।মানহা অন্য দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে।
” নিরা আড়চোখে মানহা ‘র দিকে তাকিয়ে আবার তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে, ভাইয়া তুমি চলো তো। এখানে অনেক্ক্ষণ ধরে দাড়িয়ে আছি আর কতক্ষণ থাকবো। আবার বাসায় ফিরতে হবে তো।
তিনটা বাইকে পাঁচ জন মানুষ। তারা রাতের শহর ঘুরতে ব্যস্ত। অয়নরা বাইক থামিয়ে পার্কিং করে হাঁটতে শুরু করে।
প্রথমে অয়নরা তারপর মানহা মিরাজ আবরার। হঠাৎ মিরাজের ফোনে কল আসায় সে সাইডে চলে যায়। আবরার আর মানহা পাশাপাশি হাঁটে। মানহা’ র অনেক ইনসিকিউর ফিল হয়। দুজনের নিরবতার মাঝে আবরার বলে,
” বনবিড়াল! আবেগ মাখা কন্ঠ। মানহা নিজের দৃষ্টি স্থির করে হাঁটতে থাকে। এখন তার মনে হচ্ছে বাবা মা’র সাথে চলে যাওয়ায় বেটার ছিল। বনবিড়াল আর কত ঘুরাবেন আমায়। আপনি কি কিছুই বোঝেন না। বয়স বাড়ছে তো। কবে বাবা ডাক শুনব বলুন।
আবরারের কথা শুনে থমকে দাড়ায় মানহা। রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তার পানে।
আবরার বলতে বলতে কি বলে ফেলছে নিজেই বুঝতে পারে নি। যখন পারে তখন জিভে কামড় খায়। সে ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলছে। মানহা’র রাগি ফেস দেখে বুকে ফু দিয়ে বলে,
” দেখুন ওভাবে তাকাবেন না।
” আপনার কি লজ্জা শরম নেই আবরার। কোথায় কি বলতে হয় সেটাও কি গুলিয়ে খেয়ে ফেলছেন।
” আই এম সরি বনবিড়াল।
” প্লিজ ওসব নামে আমাকে ডাকবেন।
” একশবার ডাকব আপনার কি?
” আমার কি মানে।
” পাল্লে ঠেকান দেখি।
মানহা আর একটা কথাও বলে না। কারণ সে জানে আবরার তার ছেঁড়া মানুষ। তা না হলে তার পিছে এমন আটার মতো লেগে থাকতো।
_____
“মিরাজ ফোন রিসিভ করে বলে এত রাতে না ঘুমিয়ে কল দিছিস কেন? জানিস কয়টা বাজে? রাত সাড়ে এগারো টা।
” ফোনের ওপর প্রান্ত থেকে তানশি বলে, আরে গাধা বাংলাদেশে এখন সাড়ে এগারো টা বাজলেও আমেরিকা এখন সাড়ে নয়টা বাজে।
” ওহ সিট। আমার তো খেয়াল ছিল না।
” তো মশাই আপনি এখন কি করছেন?
” লং ড্রাইভে আসছি বাট তোর জন্য ভেস্তে গেলো। মিরাজের কথা শুনে তানশির মুখে আধার ঘনিয়ে এলো। মিরাজ লং ড্রাইভে গেছে তার মানে মিরাজের গার্লফ্রেন্ড আছে। মুহূর্তেই চোখ দুটো টলমল করে তার।
তানশির কোনো রেসপন্স না পেয়ে মিরাজ ফের বলে, কি রে কথা বলছিস না কেন? অডিও কল হওয়ায় মিরাজ বুঝতে পারলো না তানশি কাঁদছে। তানশি নিজেকে স্বাভাবিক করে কাপাকাপা কন্ঠে বলে,
” কার সাথে গিয়েছিস মিরাজ। তোর যে গার্লফ্রেন্ড আছে এটা তো কখনো বলিস নি।
” মিরাজের টনক নড়ে তানশি এতক্ষণ চুপ ছিল কেন সেটা বুঝতে পারে। মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এসে ভড় করে মিরাজের। ফের বলে, আরে তুই চলে যাওয়ার পরই ওর সাথে দেখা দ্যান সেটিংটা করে নি। জানিসই তো আজকাল মেয়েরা যা শুরু করছে। তানশি খট করে কল কেটে দেয়।
মিরাজ কে সে খুব ভালোবাসে। সেই অষ্টাদশী কন্যা যখন বুঝতে শুরু করেছে ভালোবাসা কি? ঠিক তখন থেকেই মিরাজ কে সে পাগলের মতো ভালোবাসে। কিন্তু কখনো বলেনি। কিংবা কাউকে বুঝতেও দেয়নি। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে সে সবচেয়ে ভুল করে ফেলছে। নিজের মনের কথাটা না বলে। নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারে না। হাউমাউ করে কান্না করে দেয়।
মিরাজ ফোন হাতে নিয়ে ভ্যাবলার মতো চেয়ে থাকে। মুখের উপর কল কেটে দিল। হায় রে মানুষ! সে কি খুব বেশি মজা করে ফেলছে। তানশি কি এখন কান্না করছে। মিরাজ ফের কল দেয় কিন্তু রিসিভ করে না। মিরাজ আবারও চলে যায় সবার মাজে। বিষয় টা পরে দেখবে।
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
বারোটার সময় বাসায় ফেরে চারজনে। অনেক ঘুরাঘুরির কারণে টায়ার্ড হয়ে পড়ে। আবার রাতও অনেক হয়েছে। সেজন্য ড্রেজ চেঞ্জ করে শুয়ে পরে। তলিয়ে যায় গভির ঘুমে।
*****
তানশি সকাল থেকে মনমরা হয়ে আছে ক্যাম্পাসে। ভার্সির ক্যাম্পাসে এক কোনায় সে আর তার বান্ধবী জেনি। জেনি বার বার জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে। কিন্তু তানশি কিছু বলছে না। জেনি আর সহ্য হয় না এভাবে বসে থাকলে কি কোনো সমস্যার সমাধান হয়। সেজন্য এবার জোরেই বলে ফেলে,
“তানশি লুক এট মি?ক্যাম্পাসের অনেকেই তাদের দিকে তাকায়। জেনি আমেরিকার মেয়ে। সে বাংলা পারে না। টুকটাক তানশির থেকে শিখছে। তারা ইংরেজিতে কথা বলে
” হ্যা বল।
” ক্লিয়ার করে বল কি হয়েছে?
” মিরাজের গার্লফ্রেন্ড আছে জেনি।
” হোয়াট?
” হ্যা কাল রাতে তারা লং ড্রাইভে গেছে।
” কি বলিস। তোকে বার বার করে বলছিলাম মনের কথা বলে দে শুনলি না তুই। এখন কি হবে তাহলে মুখে হাত দিয়ে ভাবুক হয়ে বলে।
” আমি জানি না রে। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। মিরাজ কি বোঝে না আমি ওকে লাইক করি। ওর সাথে এক টা মাস একই ছাদের নিচে কাটিয়েছি। ওর সাথে ঝগড়া করেছি। কতশত কথা বলছি। বাট বুঝলো না রে। আমি হেরে গেলাম বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে তানশি।
” প্লিজ কান্না করিস না। এভাবে ভেঙে পড়লে হবে না। আমি মিরাজের সাথে কথা বলব। প্লিজ তুই কান্না অফ কর।
তাদের দুজনের আর ক্লাস করা হলো না। দুজনের বাসা পাশাপাশি। ভার্সিটি থেকে বের হয় দুজনে। তানশির মন ভালো করার জন্য তারা ঘুরবে। তাতে যদি তানশির মন ভালো হয়৷
তানশির বেস্ট ফ্রেন্ড জেনি। একই সাথে তাদের বেড়ে ওঠা। তানশির জন্ম বাংলাদেশে হলেও ছোট থেকেই তানশি আমেরিকায় বড় হয়েছে। সেই জন্য তাদের বন্ডিং টা অনেক স্ট্রং।
‘
‘
‘
‘
‘
দেখতে দেখতে দশ দিন পার হয়ে গেছে। কিভাবে যে সময় পার হয়ে গেছে বুঝতে পারে নি মানহা। তাকে আমেরিকা যেতে হবে খুব আর্জেন্ট। তাই তো বাবা মা চাচা চাচি সবাইকে নিজের রুমে ডেকেছে।
সবাই মানহার রুমে বসে আছে। মানহা র জুরুরি তলবে হাজির সকলে। মিনহাজ খান মেয়ে কে উদ্দেশ্য করে বলেব,,
” মানহা মামনি কি বলবে তুমি? কিছু কি হয়েছে?
” না বাবা কিছু হয়নি। তোমাদের কে একটা কথা বলার জন্য আসতে বলছি।
” হ্যা তা বল মা মিলন খান বলেন।
” চাচ্চু বাবা মা বড় আম্মু তোমাদের কে আমি যা বলব সেটা কাউকে বলবে না। এমনকি ভাইয়া মিরাজ কেউ না।
” মিনহাজ খান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন কেন? আর কি কথা বলবি?
” বাবা আমাকে আমেরিকা যেতে হবে।
” কিহহ? কিন্তু কেন?
” বাবা সেখানে আমার যাবতীয় সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কাগজপাতি আছে। আমার স্কুল কলেজ ভার্সিটি সব তার। সেগুলো আমার লাগবে।
” কবে যেতে চাচ্ছো মা ( মিলন খান বলেন)
” আগামীকাল। আমি যে আমেরিকা যাব সেটা জানবে কিন্তু কেন যাচ্ছি সেটা যেন না জানে। আমি দশদিনের মধ্যে ফিরে আসব ইনশা আল্লাহ।
” আচ্ছা বেশ। তাই যেও।
তারা রুম থেকে বের হয়ে যায়। মানহা মুচকি হেসে বেলকনিতে দাড়ায়।
তার সাথে এতদিন সবাই গেইম খেলছে। তাকে বোকা বানিয়েছে। সে কেন ছেড়ে দেবে? মিস্টার আবরার তেজ তুমি যদি চলো ডালে ডালে তো মানহা খান চলে পাতায় পাতায় বলে রহস্যময়ী হেসে ওঠে। জাস্ট ওয়েট এন্ড সি মিস্টার আবরার তেজ। তোমাকে আমি বুঝিয়ে ছাড়ব ভালোবাসার মানুষ দুরে চলে গেলে কেমন লাগে।
চলবে ইনশা আল্লাহ
#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_২২
সকাল সকাল রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে মানহা। তাকে এমন পরিপার্টি হয়ে নিচে নামতে দেখে অয়ন মিরাজ নিরা তিনজনই অবাক হয়। বাকিরা তো সবটা জানে। নিরা অবাকের রেশ নিয়ে জিজ্ঞেস করে,,
” আপু তুমি সাজগোছ করে কোথায় যাচ্ছো? হ্যাঁ রে বোন তুই কোথায় যাচ্ছিস আমাদের কাউকে তো কিছু বলিস নি। ( অয়ন বলে )
” মানহা সবার রিয়াকশন দেখে মনে মনে বলে মাত্র তো শুরু দেখো আমি কি কি করতে পারি। মানহা কে চুপ থাকতে দেখে মিরাজ উঠে এসে মানহার সামনে দাঁড়ায়। খুটে খুটে দেখে বিস্ময় নিয়ে বলে,
” আপু তুমি আমেরিকা যাচ্ছো?
” হ্যাঁ সোজা জবাব। মানহার কথা শুনে অয়ন চেচিয়ে বলে,
” কি বলছিস এসব। তোর মাথা ঠিক আছে হ্যাঁ। তুই না সবাইকে বললি তুই আর আমেরিকা যাবি না তাহলে হঠাৎ করে ডিসিশন চেঞ্জ করলি কেন বোন? তুই কি রাগ করে চলে যাচ্ছিস?
ভাইদের এত এত প্রশ্নের জবাব কি করে দেবে মানহা। নিজের ভিতরে অনেক দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাজ করছে। মিথ্যা বলতে কেমন একটা লাগছে। মানহা কে চুপ থাকতে দেখে মিলন খান এগিয়ে আসেন। সবাই কে যে যার জায়গায় বসতে বলেন। তারা আগের জায়গায় গিয়ে বসে। মিলন খান সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,,
” শোনো মানহা মামনি আমেরিকা যেতে চাই। মামনি নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে। সে এখন যথেষ্ট বড় হয়েছে এবং যথেষ্ট বুদ্ধিমতি। সে কোনো বাচ্চা মেয়ে নয়। সে এখানে থাকতে চাচ্ছে না। আমরা জোর করে তাকে ধরে বেঁধে রাখতে পারি না।
” তাই বলে বাবা ( অয়ন)
” কোনো কথা নয় অয়ন। মানহা মামনি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা আমরা মেনে নিয়েছি। তোমাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাকে করতে পারো। মানহা চাচ্চুর দিকে কৃতজ্ঞতা র সহিত তাকায়। তাকে বড় বাঁচানো বাঁচিয়ে দিল। মিলন খান ইশারায় আস্বস্ত করেন।
কারো মুখে কোনো কথা নেয়। অয়ন গম্ভীর দৃষ্টিতে বোনের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। খুব অভিমান হয়েছে তার। তার বোনটা এমন কেন করছে? সবটা তার রহস্যময় লাগছে। তার বোন যেটা বলে সেটাই করে। মানহার কথার খেলাপ হয় না কখনো কিন্তু আজ হঠাৎ কি হলো ওর?
মিরাজ কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। মানহা পিছন থেকে ডাকলেও রেসপন্স করে না। অয়নও সেম কাজ করে। থাকলো শুধু নিরা সেই বা আর কি করবে। শাশুড়ী আর চাচি শাশুড়ীর কাছে চলে যায়।
মানহা কে তানিয়া বেগম পরম যত্নে খাইয়ে দেন। আর চোখের পানি ফেলেন। মানহা মা কে কান্না করতে দেখে ফিসফিস করে বলে, মা কান্না করলে কিন্তু আর আসবো নানে । তখন কিন্তু সবসময় কাঁদতে হবেনে। তার থেকে ভালো হাসি মুখে আমায় বিদায় দাও। খাওয়া শেষ করে সবার থেকে বিদায় নেয় মানহা। তানিয়া বেগম কান্না করছেন। মিনহাজ খান মেয়েকে এয়ারপোর্টে দিয়ে আসবেন।
মানহা বাসা থেকে বের হতেই নিরা দৌড়ে রুমে চলে যায়। আবরার কে এখনই বলতে হবে নইলে কি যে হবে আল্লায় জানে।
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
চার তলা বিশিষ্ট বিল্ডিংয়ে দাড়িয়ে আছে এক রমনী। তার দৃষ্টি সামনে বড় বড় বিন্ডিংয়ে। রমনীটি আর কেউ নয় । রমনী টি হলো মানহা। আজ দুইটা দিন হয়ে গেছে সে আমেরিকা আসছে। আসার পর অয়ন আর মিরাজের সাথে কথা হয়নি। হয়নি বললে ভুল হবে মানহা ফোন দিলে কেটে দেয়। কোনো ব্যাপার না কয়টা দিনেরই তো ব্যাপার ভেবে মুচকি হাসে । আবরারের কথা ভেবে অনেক হাসি পাচ্ছে। মনে পড়ে যায় সেদিনের কথা। মানহা যখন এয়ারপোর্টের ভিতরে ঢুকে পরে তখন আবরার কে তার দিকে ছুটে আসতে দেখে। মানহা না দেখার ভান করে চলে আসছিল। এয়ারপোর্টের লোক আবরার কে ভিতরে ঢুকতে দেয়নি। নিরাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়েছিল তাকে।
আবরার যোগাযোগ করলেও সে করেনি।
মানহা যখন তার ফুপির বাসায় পৌঁছালো তখন তাকে দেখে ভুত দেখা মতো চমকে যায় সকলে। সাথে অনেক খুশিও হয়। তানশির সে কি কান্ড। আপু কে পেয়ে অনেক হ্যাপি সে। তানভি খান মানহা কে রেস্ট নিতে উপরে পাঠিয়ে দেন।
*******
আমেরিকার সুন্দর একটি জায়গা হলো সান ডিয়াগো, ক্যালিফোর্নিয়া। স্বপরিবারে ঘুরতে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো স্থান।এ শহরের উপকূল বরাবর রয়েছে একাধিক সমুদ্রতট। যেখানে বসেই বেশির ভাগ সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়। তবে নানা ধরনের জলক্রীড়ার ব্যবস্থাও আছে। এ ছাড়াও বিশাল সমুদ্রের তলার জগৎটা ঠিক কী রকম, তা জানতে গেলে এক বার ঘুরে আসতে হবে লা জোলা আন্ডারওয়াটার পার্ক অ্যান্ড কোভ থেকে। এ ছাড়াও রয়েছে সান ডিয়েগো চিড়িয়াখানা, বালবোয়া পার্ক, স্প্যানিশ ভিলেজ আর্ট সেন্টার। হাতে সময় নিয়ে ঘুরতে হবে।
আজ তানশিদের স্বপরিবার মিলে এসেছে সান ডিয়াগো তে। মানহা ও এসেছে। জায়গাটা অসম্ভব রকমের সুন্দর। মানহার বরাবর সমুদ্র খুব পছন্দ।
সমুদ্রের ধারে পা ভিজিয়ে বসে মানহা। তার দেখাদেখি তানশিও সেম কাজ করছে। তাসকিন কে তাদের ছবি তুলে দিতে বলে। তাসকিন খুব ভালো ফটোগ্রাফার। ছবি তোলা তার নেশা। যেখানেই যাবে সেখানেই ক্যামেরা নিয়ে যায়। মানহা আর তানশি বিভিন্ন ধরনের পোজ দেয় আর তাসকিন তাদের ছবি তুলছে। গোধূলির শেষ বিকেলে ছবিটার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলছে। সেখান থেকে একজন লোক কে ডেকে ফ্যামিলি ফটো তোলে তাসকিন।
সারা বিকেল ঘুরে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরে সকলে।
মানহা নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বেলকনি দাঁড়ায়। ফোন চেক করে তার চোখ উল্টে যায়। আবরারের অসংখ্য মেসেজ, ফোন কল। প্রতিটা মেসেজ খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছে মানহা। লাস্টের মেসেজ পড়ে ঠোঁটে ফুটে ওঠে তৃপ্তির হাসি। অজানা কারণে মনটা শীতল হয়ে ওঠে। মেসেজটি পড়া শুরু করে সে।
” বনবিড়াল। আপনাকে ছাড়া আমি ভালো নেই।।
। জানি আপনিও আমাকে ছাড়া ভালো নেই। আপনাকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ। আর কত বলেন। আর কত অপেক্ষা করাবেন? আপনার সাথে যোগাযোগ করতে চাচ্ছি বাট আপনি যোগাযোগ করছেন না। কেন বলুন তো? কি দোষ করেছি আমি। আপনাকে ভালোবাসাই কি আমার দোষ। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে এমন দোষ আমি বার বার করতে রাজি আছি। ভালোবাসার মানুষ দুরে চলে গেলে যে পরিমাণ কষ্ট সেটা তো আপনি জানেন। তাহলে কেন সেই কষ্ট আমাকে দিচ্ছেন? প্লিজ ফিরে আসুন না। সেদিন যখন জানতে পারলাম আপনি চলে যাচ্ছেন তখন আপনার জন্য সব কিছু ফেলে ছুটে গেছি কিন্তু আপনার সাথে কথা বলতে পারলাম, না আপনাকে ভালো করে দেখতে পারলাম। কোনোটায় না। কত বার ডেকেছি সেটা কি আপনি জানেন? না জানেন না। জানলে হয়তো যোগাযোগ করতেন। বিষন্নতা আমাকে ঘিরে ধরেছে বনবিড়াল । আমার সবকিছু বিষাক্ত লাগছে বনবিড়াল । কিছুতেই কাজে মন দিতে পারছি না। এমন হলে কোম্পানির ক্ষতি হবে সেটা জেনেও আমি কিছু করতে পারছি না। আপনার নেশা আমার সবকিছু এলোমেলো করে দিছে। আপনি কি ভেবেছেন আপনি দুরে চলে গেলে আমি আপনাকে ভুলে যাবো মোটেও না। আবরার তেজ যাকে একবার মন দিয়ে ফেলছে সেটা মরার আগ পর্যন্ত ফেরত নেবে না। ভালোবাসলে ভালোবাসার মানুষকে ভুলে থাকা যায় না বনবিড়াল। আমার ভালোবাসা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে আমি পাবোই ইন শাআল্লাহ।
বনবিড়াল প্লিজ কাম ব্যাক। প্লিজ আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। বুক টা ফেটে যাচ্ছে। কাউকে বলতে পারছি না। প্লিজ বনবিড়াল প্লিজ। ( তারপর কয়েকটা কান্নার ইমুজি দেওয়া )
পুরো মেসেজটা পড়ে থমকে যায় মানহা। সে জানতো আবরার তাকে ভালোবাসে বাট এতটা কল্পনা করতে পারেনি। এখন তার কি করা উচিত। কথা বলবে। না থাক সবটা সামনাসামনি হবে ভেবেই মুচকি হাসে। শুধু ছোট্ট একটা মেসেজ দিয়ে রাখে।
❝ এত অধৈর্য্যে কেন আপনি ? সবুর করুন। ধৈর্যের ফল সব সময় মিষ্টি হয় ❞
‘
‘
‘
‘
‘
:
:
‘
তানশি বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। পাশে ফোনের পর ফোন বেজেই চলেছে বাট রিসিভ করছে না। ফোনের ওপর প্রান্তের মানুষ টাও ধৈর্য সহকারে ফোন দিয়েই যাচ্ছে। সে পণ করছে ফোন না ধরা পর্যন্ত সে ফোন দিয়েই যাবে।
মানহা রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে নামার সময় খেয়াল করে তানশির ফোন বেজেই চলেছে বাট রিসিভ করছে না। সেজন্য তানশির রুমে আসে। এসে দেখে তানশি উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। ভাবে ঘুমিয়ে আছে এজন্য ফোন ধরছে না। তানশির কাছে এসে ধাক্কা দিলে তানশি লাফ মেরে উঠে বসে বুকে ফু দিয়ে বলে।
” হায়! আল্লাহ আপু একটুর জন্য আমার পরাণ পাখিটা ফুরুত কইরা চলে যাচ্ছিল।
মানহা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে। মানহা কে তাকিয়ে থাকতে দেখে তানশি হো হো করে হেসে বলে আপু তুমি আমার রুমে কিছু বলবে?
” তুই আগে বল ফোন কেন ধরছিস না? বারবার বেজে বেজে কেটে যাচ্ছে। কে ফোন দিছে?
” তানশি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, তোমার আদরের ভাই মিরাজেন্নে ফোন দিছে।
” তাহলে ধরছিস না কেন? অবাক হয়ে বলে।
” কেন ধরব?
” মানে ধরবি না কেন?
” আপু তোমার ভাইয়ের গফ আছে। তাকে নিয়ে লং ড্রাইভে যায়। তার সাথে ডেটিংয়ে যায়। আর শুনবে।
” তোকে এসব কে বলছে অবাক হয়ে বলে।
” কেন তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না? তোমার আদরের ভাই বলেছে আমাকে।
” কবে বলছে।
” তিনদিন আগে। তোমাদের ওখানে হয়তো রাত এগারো টা কি সাড়ে এগারো টা বাজে। শুক্রবার রাতে।
তানশির কথা শুনে হো হো করে হেসে ওঠে মানহা। হাসতে হাসতে পেট চেপে ধরে বসে পরে। অতিরিক্ত হাসার কারণে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। হঠাৎ আপুকে এত হাসতে দেখে ঘাবড়ে যায় তানশি। তার আপুর হঠাৎ কি হলো। এমন হাসছে কেন? বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে আছে। তারপর বলে,,
” আপু তুমি হাসছো কেন? আমি কি এমন বললাম যার জন্য এমন পাগলের মতো হাসছো?
” মানহা হাসি কন্ট্রোল করে বলে, বোন মিরাজ তোকে বোকা বানিয়েছে।
” মানে!
” হ্যাঁ রে। সেদিন পরিবারের সবাই মিলে রাতে ডিনার করতে গিছিলাম। তারপর আমরা চার জনে লং ড্রাইভে গিছিলাম।
” কিহহহ! এত বড় ধোঁকা। ওকে তো আমি ছাড়ছি না। আমার সাথে প্রাঙ্ক করে। মজা বুঝাবো তানশি কি সেটা দেখিয়ে দেবো তোমার ভাই কে। তাকে সাবধানে থাকতে বলো।
” আচ্ছা তানশি। আমাকে একটা কথা বলতো?
” বলো।
” তুই এত জেলাস ফিল করলি কেন? আমি যা আন্দাজ করছি সেটা কি সত্যি।
” তানশি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। লজ্জায় বিছানা থেকে নেমে দৌড়ে চলে যায়।
মানহা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। তানশি দৌড়ে পালালো লজ্জায়। তাহলে তার এত দিনের ধারণা সত্যি হলো। ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে কিন্তু কেউ কাউকে বলেনি। এক জায়গায় হলেই টম এন্ড জেরির মতো ঝগড়া লেগে থাকতো বলবে কখন।
চলবে ইনশা আল্লাহ
[ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]