#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_২৩
বদ্ধ ঘরে নিজেকে বন্দী করে রাখছে আবরার। ঘর থেকে ঠিক মতো বের হয় না দুইটা দিন। ইশান কে অফিসের সব কিছু দেখে রাখতে বলছে। ইশান তার স্যারের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে । আবরারের মা হালিমা বেগম ছেলের দুশ্চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠেছেন। বাড়ির সবাই খেয়াল করছেন আবরার আর আগের মতো নেই। কিছু একটা হয়েছে তার ছেলের বাট তারা কেউ জানেন না। তাই নিরা কে খবর দিয়েছে আসার জন্য। নিরা বলছে সন্ধ্যায় আসবে। হালিমা বেগম ছেলের রুমের দরজায় কড়া নাড়ে। ভিতর থেকে কোনো রেসপন্স পান না। সেজন্য দৌড়ে গিয়ে স্বামী কে ডেকে আনেন। আনোয়ার হোসেন তার স্ত্রী ডাকে দৌড়ে ছেলের রুমে আসেন।
আনোয়ার হোসেন বড় দুশ্চিন্তায় পরে যান। তার ছেলে তো এমন না। আবরার যথেষ্ট বুদ্ধিমান ছেলে। তিনি আর সময় ব্যায় না করে ছেলে কে ডাকা শুরু করেন।
” তেজ দরজা খোল। দরজা কেন বন্ধ করে রাখছিস।
” (……..)
” তেজ আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস না তুই। স্বামীর সাথে হালিমা বেগমও ডাকা শুরু করেন। তেজ বাবা রে দরজা খোল।
আবরার সবার ডাকাডাকি করতে দেখে বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে বলে। আমাকে একটু একা থাকতে দাও তোমরা? তোমরা কেন বুঝতে পারছো না আমার বাইরে যেতে ভালো লাগছে না। প্লিজ লিভ মি এলোন।
তারা দুজনেই অবাক হয়ে ছেলের পানে তাকান। ছেলেকে বড্ড অচেনা লাগছে তাদের। আনোয়ার হোসেন বিস্ময় নিয়ে বললো,
” তেজ তোর কি হয়েছে? এমন রুড বিহেভ করছিস কেন বাবা?
” তোমরা আমার সমস্যার সমাধান করতে পারবে। জানি পারবে না। তাহলে ডিস্টার্ব কেন করছো?
” তোর মনের কথা আমাদের সাথে শেয়ার কর। আমরা আমাদের স্ব সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করব।
” তোমাদের কিভাবে বলবো সেটাই তো বুঝছি না বাবা।
” আচ্ছা তুই শান্ত হয়ে বোস। আমাদের কে সব টা বল। দেখবি নিজেকে অনেক হালকা লাগবে।
আবরারের রুমের ভিতর দুজনে এসে বসেন। আবরার চুপটি করে বসে আছে। বাবা মা দুজনে তাকিয়ে আছেন ছেলের পানে। তাদের শোনা টা খুব দরকার। আবরার বাবা মার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করে।
” জানো আমি একটা মেয়ে কে খুব ভালোবেসে ফেলেছি। তাকে এতটাই ভালোবেসেছি তাকে আর ভুলতে পারছি না। জানো বাবা মেয়ে টাকে আমার মনের কথা বলছি বাট সে রিজেক্ট করছে। সে নাকি আমাকে ভালোবাসে না৷ আগে কখনও এতটা কষ্ট পায়নি যতটা কষ্ট পেয়েছি সেদিন। জানো মা মেয়েটা না আমাকে ছেড়ে অনেক দুরে চলে গেছে। আমি এখন কি করব মা বলতে বলতে চোখ বেয়ে এক ফোটা নোনা পানি গড়িয়ে পরে হালিমা বেগমের হাতে। হালিমা বেগম চমকে ওঠেন ছেলেকে দেখে। তিনি আবরারের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলেন।
” তোকে কেন ভালোবাসে না সেটা বলেনি বাবা। তোর মাঝে কি এমন খামতি আছে যার জন্য তোকে রিজেক্ট করছে।
” হ্যাঁ মা। সেটা বলেছে। বাট তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই।
” কি বলেছে আবরার। কেন তোকে রিজেক্ট করলো। (আনোয়ার)
” বাবা মেয়েটা ডিভোর্সি।
” হোয়াটটট—-??
দুজনেই চেচিয়ে ওঠেন। আবরার বাবা মা দুজনের দিকেই তাকায়। তারা যেন আকাশ থেকে পড়ছে।
” তোমরা এমন কেন করছো?
” তুই একটা ডিভোর্সি মেয়ে কে ভালোবেসেছিস। তোর মাথা ঠিক আছে। আমাদের স্ট্যান্ডার কোথায় সেটা কি ভুলে গেছিস। হালিমা বেগম একটু জোরেই বলে ফেলেন।
এত কথাবার্তার শব্দ শুনে আবরারের দাদা তার রুমে চলে আসেন। এসে জিজ্ঞেস করেন কি হয়েছে? এত চেচামেচি শোনা যাচ্ছে। হালিমা বেগম বিছানা থেকে উঠে এসে শশুরের সামনে দাড়িয়ে বললো,
” বাবা আপনার নাতির কথা শুনুন। সে পাগল হয়ে গেছে। জেনে শুনে একটা ডিভোর্সি মেয়ে কে ভালোবেসেছে।।
” তাতে সমস্যা কোথায়? শশুরের কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে যায় হালিমা। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন,
” বাবা আপনি এসব কি বলছেন। আপনিও ওর তালে তাল দিচ্ছেন।
” বউমা তুমি শান্ত হয়ে বসো। ব্যাপার টা ঘোলাটে না করে ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখো।
আবরারের দাদু গিয়ে তার সামনে বসে। আবরার কে কিছুক্ষণ পরক্ষ করে দেখে। ছেলে টা আগের থেকে শুকিয়ে গেছে। চেহারায় আগের সৌন্দর্য টা নেয়। চোখের নিচে কালচে দাগ পড়েছে।
আবরার এতক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে সব দেখছিল। মানহা তাকে বলছিল তার মা তাকে মেনে নিতে পারবে না। সে যে ডিভোর্সি মেয়ে। আবরার কত বড় মুখ করে বলছিল তার মা ওরকম না। সে মেনে নেবে। আজ সবটায় ফিকে মনে হচ্ছে।
” দাদু ভাই তুমি মেয়েটা কে? তার বাড়ির ঠিকানা দাও। আমি নিজে গিয়ে কথা বলবো।
” দাদু তোমরা সবাই তাকে চেনো।
” কে সে?
” নিরার ননদ মানহা।
তারা যেন খুব বেশি অবাক হন। তিনি খুশি হয়ে বলেন, তাহলে তো ভালোই হলো। তাদের সাথে আরও একটা আত্মীয়তার সুযোগ পাচ্ছি।
” দাদু তোমার মানহা কে মেনে নিতে কোনো অসুবিধা নেয়।
” না রে দাদু ভাই। মানহা মেয়েটা কে আমার খুব পছন্দ। কিন্তু তোর ও যে হবে সেটা ভাবনার বাইরে ছিল।
” আই লাভ ইউ দাদু। এই জন্য তোমাকে আমি এত ভালোবাসি। খুশিতে তাকে জড়িয়ে ধরে। খানিকক্ষণ পরে আবরার তার বাবার দিকে তাকায়। ফের বলে,
” বাবা তুমিও কি মা’র মতো মানহা কে মেনে নিতে পারবে না।
” আমার কোনো আপত্তি নেয় বাবা। বাট তোর মা যে কেন মানতে পারছে না সেটা আমি জানি না।
আবরারের দাদু আনসার হোসেন ছেলের বউকে জিজ্ঞেস করে।
” বউ মা তোমার কেন এত আপত্তি সেটা কি জানতে পারি। মেয়েটা কোন দিক দিয়ে খারাপ বলো? তোমার তাকে কেন অপছন্দ?
” বাবা মানহা মেয়েটা খুব ভালো। আমারও তাকে খুব ভালো লাগে কিন্তু মেয়েটা যে ডিভোর্সি। সমাজের মানুষ কি বলবে?
” সমাজের মানুষের কথা ভেবে তুমি তোমার ছেলেকে কষ্ট দিবে। তাদের কাজই তো মানুষ কে হেই কথা বলা। তাদের কথায় কান না দিয়ে চলো। তাহলেই জীবন সুন্দর। তোমাকে একটা কথা বলি। কথা টা আজও তোমরা কেউ জানো না।
” কি কথা বাবা। ( আনোয়ার হোসেন)
” বলুন বাবা। ( হালিমা)
” আজ থেকে অনেক বছর আগের কথা। আমি তখন তেজ দাদু ভাইয়ের বয়সি। দাদু ভাইয়ের মতো আমিও একটা ডিভোর্সি মেয়েকে ভালোবেসে ফেলি। মেয়েটা আমাকে চিনতো না জানতো না। হঠাৎ একদিন বাবা মা কে বুঝিয়ে শুনিয়ে রাজি করিয়ে মেয়েটার বাড়ি নিয়ে যায়। বিয়ের প্রস্তাব দেয় কিন্তু মেয়েটা রাজি হচ্ছিল না একই কারণে। কিন্তু আমিও হাল ছাড়ি নি মেয়েটাকে জয় করে তাকে নিজের বউ করে ঘরে আনি। তার কথা শুনে সকলে অবাক হয়ে যান।
তিনি ফের বলেন, আমি তেজ দাদু ভাইয়ের মাঝে নিজেকে দেখতে পারছি। আমি দৃঢ় বিশ্বাস দাদু ভাই মানহা সব দিক দিয়ে প্রটেক্ট করতে পারবে। বউমা তুমি কি মানহা কে মেনে নিতে পারবে না। আমার মা ও তোমার শাশুড়ী কে মেনে নিছিল।
হালিমা বেগম কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবরারের দিকে তাকিয়ে বললো, আমার কোনো আপত্তি নেয়। মানহা কে নিয়ে যদি আমার ছেলে সুখে থাকতে পারে তাহলে কোনো সমস্যা নেই। বলে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। তার পিছন পিছন তারাও বেড়িয়ে যায়। আবরার খুশি তে পাগল প্রায়। মানহা কে নিজের করেই ছাড়বে।
সমাজের মানুষ কে দেখিয়ে দেবে ভালোবাসা কোনো ডিভোর্স শব্দ মানে।
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
:
‘
‘
‘
নিজের মাতৃভূমিতে পা রাখে মানহা। আমেরিকায় তার যা যা প্রয়োজন ছিল সবটা করে আসছে। ফিরে আসে আপন নিড়ে। এই দশ দিনে একবারও অয়ন মিরাজের সাথে কথা হয়নি। মাঝে দুএক দিন নিরার সাথে কথা হয়েছে। মূলত নিরা কে অয়ন কথা বলতে দেয় নি। অয়ন পাগলামো দেখে সবাই অবাক হয়।
বাসার সামনে এসে কলিংবেল বাজায়। একটুপর এসে মিরাজ দরজা খুলে দেয়। কারণ এসময় সবাই নিজের কাজে ব্যস্ত। দরজায় মানহা কে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে লাফ দিয়ে ওঠে মিরাজ। ভুত ভুত বলে চিল্লাতে থাকে। অয়ন সোফায় বসে ফোন দেখছিল হঠাৎ মিরাজ কে লাফাতে দেখে এগিয়ে যায়। দরজায় মানহা কে দেখে খুব অবাক হয়। কিছু বলতে গিয়ে থেমে যায়। মুখ ফিরিয়ে উপরে চলে যায়। মানহা পিছন থেকে ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকতে থাকে। মানহার চেঁচানো শুনে সকলে ড্রয়িংরুমে চলে আসে। তানিয়া বেগম মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরেন।। তারা জানতো আজ ফিরে আসবে। শুধু জানতো না তাদের দুই পাগল ছেলে। মিরাজ ছোট চাচি কে ঠেলে মানহা কে জড়িয়ে ধরে বলে,
” আপু তুমি এত তাড়াতাড়ি ফিরবে আমি জানতাম না। মিরাজ আর অভিমান করে থাকতে পারলো না। সে ভাবছে তার আপু ফিরে আসছে এতেই সে খুশি। মানহা সবার সাথে ভালো মন্দ কথা বলে দোতালায় যায়। সিড়ি দিয়ে ওঠার সময় ভাবে তার অয়ন ভাইয়া খুব অভিমান করছে তার উপরে। যা সহজে ভাঙবে না।
চলবে ইনশা আল্লাহ।
#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_২৪ ( ধামাকা পর্ব )
রাতের আকাশে আমরা যে উজ্বল নক্ষত্র দেখতে পাই তন্মধ্য সবগুলো নক্ষত্র তারকা নয়।এই উজ্বল নক্ষত্রের মধ্যে কিছু তারা,কিছু গ্রহ।রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্বল তারার নাম হলো লুব্ধক।আবার আকাশে কিছু উজ্বল নক্ষত্র দেখা যায় এর মধ্যে শুক্র গ্রহ রয়েছে যেটাকে আমরা শুকতারা বলে থাকি।এছাড়াও বৃহস্পতি ,শনি,মঙ্গল,বুধ গ্রহকেও রাতের আকাশে জ্বলজ্বল করতে দেখা যায়।
এসব ছাড়াও মহাকাশে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন রয়েছে।যা পৃথিবী থেকে উজ্বল তারার মতোই দেখতে লাগে।মহাকাশ স্টেশনে ব্যবহৃত বিভিন্ন রঙের আলো যা পৃথিবী থেকে দেখতে বিভিন্ন রঙের উজ্বল তারার মতো মনে হয়।
মানহা এক মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে। হয়তো তার জীবনের কিছু কিছু স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই তারাময় আকাশে। অনেক জার্নি করার কারণে টায়ার্ড লাগছে তাঁর সেজন্য দ্রুত রাতের খাবার শেষ করে এসেছে। এখন টানা ঘুমের দরকার তার। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেও এক ঝাক ঘুম এসে ভড় করে চোখে। তলিয়ে যায় গভির ঘুমে।
______________
সকাল সকাল খান বাড়িতে মানুষের আনাগোনা দেখা যায়। কালকে নিরার যাওয়ার কথা থাকলে তাকে যেতে নিষেধ করে হালিমা বেগম। কেন যাবে না সেটা জিজ্ঞেস করলে বলে কাল তাদের বাসায় আসছে তারা সবাই। নিরা অবাক হলেও কিছু বলে না। তারা যে কেন এসেছে সেটাই এখনো জানে না।
সকালে ঘুম থেকে উঠে অয়ন ছাদে দাড়িয়ে ফোনে কথা বলছিল। তখন মানহা পা টিপে টিপে অয়নের পিছনে দাঁড়ায়। অয়ন টের পায় তার পিছনে কেউ একজন আছে। একটু পর এটাও বুঝতে পারে পিছনে তার বোন দাঁড়িয়ে আছে। মিটিমিটি হাসছে অয়ন। বাট মানহা ভাবে ফোনে কথা বলছে এজন্য হয়তো হাসছে। সেজন্য চুপ করে অপেক্ষা করে কথা শেষ হওয়া পর্যন্ত। অয়ন কথা শেষ করে পিছনে ফিরে মানহা কে দেখে না দেখার ভান করে চলে যেতে নেয়। কিন্তু যেতে পারে না। মানহার কথা শুনে তার পা থেমে যায়।
” ভাইয়া তুমি এত অভিমান করছো আমার উপরে? সেদিনের পর থেকে আজ পর্যন্ত একটা বারও কথা বলোনি আমার সাথে ? আমি কি এমন করছে যার জন্য এমন করছো? কথা না বললে অনেক দুরে চলে যাব চাইলেই আর কাছে পাবে না বলতে বলতে ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে।
অয়ন বোনের কান্নার শব্দ পেয়ে তড়িৎ গতিতে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে বলে,
” কান্না করিস না বোন? বিশ্বাস কর বোন আমি কোনো অভিমান করিনি? প্লিজ কান্না থামা তোর কান্না যে আমার সহ্য হয় না?
মানহা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদেই চলেছে। অয়ন সোজা করে দাঁড় করিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে, তোর ওই চোখে যেন আর পানি না দেখি। তুই সব সময় হাসিখুশি থাকবি বোন।
” তুমি রাগ করে নেয় তো ভাইয়া।
“নারে পাগলী।
দুই ভাই বোন হাসিখুশী হয়ে নিচে নামে। একজন আরেকজন কে একেক কথা বলছে আর হাসছে। সিড়ি দিয়ে দুজন হাসতে হাসতে নামতে দেখে চোখটা জুড়িয়ে যায় সবার। আবরার এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে তার বনবিড়ালের পানে।
ড্রয়িংরুমে এত মানুষ তারপর ও আবরার দের কে দেখে হকচকিয়ে যায় মানহা। হুট করে দাঁড়িয়ে যায় সিঁড়ির মাঝে। মন আর সায় দিচ্ছে না নিচে নামতে। আবার এখান থেকে চলে গেলে ব্যাপার টা খারাপ দেখায় সেজন্য যেতে পারে না। হঠাৎ বোন কে থেমে যেতে দেখে পিছু ফিরে তাকায় অয়ন। ইশারায় জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে, মানহা হালকা হেঁসে কিছু না বলে। ভদ্র তার জন্য নিচে নেমে আসে। অয়ন সবার সাথে হেঁসে হেসে কথা বলে। মানহা সবার সাথে কুশল বিনিময় করে রান্না ঘরে চলে যায়। এখানে থাকলে অস্বস্তিতে পড়তে হবে। সবার সাথে হাতে হাতে কাজ করে দেয় মানহা।
সবার জন্য নাস্তা তৈরি করে নিয়ে আসে মানহা আর নিরা। মানহার চিন্তা ভাবনা ভালোই ভালোই এখান থেকে কেটে পড়তে পারলে হয়। আবরার মানহার দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখের পলক পরে না। মনে হচ্ছে কত দিনের তৃষ্ণা মিটাচ্ছেন তিনি। এতে যেন আরও বেশি অস্বস্তিতে পড়ে মানহা। আবরারের পাশেই অয়ন দাঁড়িয়ে ছিল। বোনের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিচু হয়ে ফিসফিস করে বলে,,
” ভাইয়া চোখের পলকটা একটু ফেলেন। আমার বোনটা যে লজ্জা পাচ্ছে। এখানে কিন্তু বড়রা আছে। একটু তো সরম করুন।
“অয়নের কথায় লজ্জায় চোখ ফিরিয়ে নেয় আবরার। ফের সামনে তাকিয়ে দেখে মানহা সেখানে নেয়। আশেপাশে তাকিয়ে কোথাও পায় না। নিরাশ হয়ে অয়নের দিকে তাকায়। অয়ন ইশারায় উপরে দেখিয়ে দেয়। কারণ সে উপরে নিজের রুমে চলে গেছে।
মানহা সুযোগ বুঝে নাস্তা দিয়েই কেটে পড়ে। চলে যায় নিজের রুমে। রুমে এসে হাফ ছেড়ে বাঁচে সে। কেমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিল। লজ্জা সরম বলতে কিছু নেয় লোকটার। আর তারা আমাকেই বা কি ভাবতো। ছিঃ ছিঃ
______
নাস্তা শেষ করে সোফায় আরাম করে বসেন আনোয়ার হোসেন। কিছু টা নড়েচড়ে বসে বাবার দিকে তাকান।আনসার হোসেন ইশারায় বলতে বলে।
খান ভিলার ড্রয়িংরুমে সকলে উপস্থিত আছে। নেই শুধু মানহা আর মিরাজ। তারা নিজেদের রুমে আছে। আনোয়ার হোসেন মিলন আর মিনহাজ খান কে উদ্দেশ্য করে বলেন।
” বেয়াই সাহেব আমরা এখানে এসেছি একটা প্রস্তাব নিয়ে । বলতে পারেন অনেক আশা নিয়ে চাইতে এসেছি।
” আপনি নির্ধিদ্বায় বলতে পারেন বেয়াই সাব। (মিলন খান)
” আমরা আপনাদের কি এমন দিতে পারি।আপনাদের তো কিছুর অভাব নেই। আমাদের দেওয়ার সাধ্যি মধ্যে থাকলে অবশ্যই দেবো। (মিনহাজ খান)
” আসলে কথাটা যে কিভাবে বলি বুঝতে পারছি না।
ছেলেকে আমতাআমতা করতে দেখে অখুশি হন আনসার হোসেন। সেজন্য তিনি আর চুপ থাকতে পারেন না। তার বুঝা হয়ে গেছে আনোয়ার পারবে না। অন্য দিকে আবরার রেগে ফেটে পড়ছে। এতটুকু কথা বলতে এত সময় কেন নিচ্ছে ?
নাতির দিকে তাকিয়ে ব্যাপারটা বুঝতে পারেন তিনি। সেজন্য বলেন, আনোয়ার তুই থাম আমি বলছি।
” আমরা আপনাদের মেয়েকে আমাদের বাড়ির বউ করতে চাই। মানহা দিদি ভাই কে আমার আবরার দাদু ভাইয়ের বউ করে নিতে চায়।
উপস্থিত সকলে চারশো চল্লিশ ভোল্টের ঝটকা খায়। বিস্মিত নয়নে একে অপরের দিকে তাকায়।
মিনহাজ খান বলেন, এসব আপনারা কি বলছেন? আপনারা কি জানেন আমার মেয়ে একজন —-
বাকিটুকু আর বলতে পারলো না তার আগেই থামিয়ে দেন আবরারের দাদু। থেমে যান মিনহাজ খান।
” আমরা সবটা জেনেই এসেছি। আমাদের কোনো আপত্তি নেয়। যেখানে আমার দাদু ভাই মানহা দিদি ভাই কে ভালোবাসে সেখানে আর কি বলার থাকতে পারে বলুন।
তারা যেন আবারও ঝটকা খায়। আবরার তাদের মেয়েকে ভালোবাসে। কই কখনো তো বলেনি বা কারোর মুখে শোনেনি। বিস্ময় নিয়ে আবরারের দিকে তাকান। আবরার মাথা নিচু করে বসে আছে। অয়নের দিকে তাকালে অয়ন অন্য দিকে মুখ করে তাকায়।
নিরা অয়নের হাত চেপে ধরে আছে। খুশিতে চোখে পানি চলে আসছে তার। সবাই কথাটা জেনে গেছে। আর তার মা যে মেনে নিছে এটা অবিশ্বাস্য। কিভাবে সম্ভব?
তিনি আবারও বলেন, এখন আপনারা বলুন। আপনারা কি আমাদের প্রস্তাবে রাজি আছেন।
” আমরা মানহা মামনির সাথে কথা না বলে কিছু বলতে পারছি না। মামনি এখন বড় হয়েছে নিজের ভালো নিজে বুঝতে শিখেছে। মামনির যদি কোনো আপত্তি না থাকে তাহলে আমাদের ও কোনো আপত্তি নেই। আমরা রাজি আছি কি বলিস মিনহাজ।
” হ্যাঁ ভাইজান। তুমি ঠিকই বলছো।
তানিয়া বেগম খুশিতে কেঁদে দিছেন। এত বড় একটা সুখবর পাবেন আশা করেননি।
‘
‘
‘
দোতালায় নিজের রুম থেকে সব টা শুনছে মানহা। তার ভাবনার বাইরে ছিল এটা। আবরার তার ফ্যামিলি নিয়ে তাদের বাড়ি চলে আসতে পারে এটা ভাবে নি। সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব ওহ নো আর ভাবতে পারছি না। সারা রুম জুড়ে পায়চারি করছে। এখন সে কি করবে। তার প্ল্যান তো সবটা ভেস্তে দিল আবরার। ধুর কিছু ভালো লাগে না। একটা কাজ ও ঠিক করে করতে দিল না। সে কি হ্যাঁ বলে দেবে। আর যদি না বলে দেয় আবরার কি খুব কষ্ট পাবে। বেচারা এই কয়দিনে বহুত কষ্ট পেয়েছে। এবার তার কি করা উচিত। তার ভাবনার মাঝেই তার বাবা আর চাচা আসে তার রুমে। হঠাৎ দুজনকে দেখে ভড়কে যায়। পরক্ষণে নিজেকে সামলে হালকা হেসে বলে,,
“তোমরা এখানে? কিছু বলবে বাবা ?
মিনহাজ খান মেয়ের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় পুরে বলে,,
“মামনি তোমাকে একটা কথা বলবো। তুমি তো আমাদের সব কথায় শুনছো। তারা অনেক আশা নিয়ে এসেছে তাদেরকে কিভাবে ফিরিয়ে দেই। বাট আমরা তোমাকে জোর করব না। তুমি যা চাইবে সেটাই হবে। তোমার কি আবরার কে বিয়ে করতে কোনো সমস্যা আছে। তুমি তো তাকে চেনো। তার আচার ব্যবহার কেমন? দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ সব দিক দিয়েই পারফেক্ট। তোমার মতামত কি মামনি?
” বাবা–
” তুমি শুধু রাজি আছো কিনা তাই বলো প্রিন্সেস। বাকিটুকু আমরা সামলে নেব।
” পরিবারের সবার হাসিমুখ টা দেখে আর না করতে পারে না মানহা। তাই বলে, বাবা বিয়ে তে আমার আপত্তি নেই। বাট,,
” কিন্তু কি মামনি
“আমি আবরারের সাথে কথা বলতে চাই।
” আলহামদুলিল্লাহ তুই রাজি আছিস এতেই আমরা খুশি। তোর খুশি দেখার জন্য আমরা সব করতে পারি রে মা। চাচার কথায় হালকা মুচকি হাসে মানহা।
দু’জনে চলে যায় নিচে। ড্রয়িংরুমে সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। আবরার ছটফট করছে। মানহা কি না করে দিল তাদের মুখ টা এমন কালো হয়ে আছে কেন? আমি কি হেরে গেলাম তাহলে? ঠান্ডার ভিতরে প্রচুর ঘামতে শুরু করে আবরার।
দুজনে সোফায় এসে বসেন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেন। মানহা মামনির কোনো আপত্তি নেয় কিন্তু?
” কিন্তু কি আঙ্কেল। ফট করে মুখ ফসকে বলে ফেলে আবরার। সবাই আবরারের দিকে তাকায়। আবরার কিছু টা অপ্রস্তুত হয়ে পরে। নিজেকে নিজেই বকছে কি দরকার ছিল আগ বাড়িয়ে শুনতে যাওয়ার।
আবরারের অবস্থা দেখে সকলে হেসে ফেলেন। আবরার আরও বেশি অস্বস্তিতে পরে। মাথা চুলকে আমতাআমতা করে। মিনহাজ খান হেসে বলেন,
” তোমার সাথে কথা বলতে চাই মামনি। ছাদে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। নিরা মা আবরার বাবা কে ছাদে নিয়ে যাও তো। সোফা থেকে উঠে হনহন করে ছাদের উদ্দেশ্য চলে যায়। আবরারের কান্ডে সকলে আরেক দফা হেসে ওঠেন। হালিমা বেগম তো বলেই ফেলেন পাগল একটা। এখানে যে বড় রা আছে সেটা বেমালুম ভুলে গেছে।
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
ছাদে দাড়িয়ে আছে দুজন মানব। দুজনেই নিশ্চুপ হয়ে আছে। নিরবতা ভেঙে আবরার বলে,
” বনবিড়াল
” মানহা তড়িৎ বেগে আবরারের দিকে তাকায়। একবার ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে নেয়। আগের থেকে লোকটা অনেক পাল্টে গেছে। মানহা গম্ভীর কণ্ঠে বলে।
” এতটুকুতেই এই অবস্থা। কোথায় গেলো সেই আবরার তেজের সুদর্শন চেহারা। নিজেকে আয়নায় দেখছেন নিজের কি হাল করছেন। চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়ে গেছে। কতটা শুকিয়ে গেছেন। এমন হলে তো মেয়েরা তাকাবে না।
” প্রেয়সীর কথা গুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছিল আবরার। শরীরে ভালো লাগা ছেয়ে যায়। লাস্টের কথা শুনে বলে।
” তার জন্য আপনি তো আছেন। দরকার নাই কোনো মেয়ের তাকানো। শুধু আমার বনবিড়াল তাকালেই চলবে আমার।
” মানহা বনবিড়াল নামটা যতবারই শোনে ততবারই অবাক হয়। তাকে কেন বনবিড়াল বলে। আবরার ফের বলে,
” আমাকে কষ্ট দেওয়া শেষ হয়েছে আপনার। যদি না হয়ে থাকে তাহলে দিতে পারেন আমি প্রস্তুত আছি।
আবরারের কথা শুনে খিলখিল করে হেসে ওঠে মানহা। প্রেয়সীর হাসি মুখের দিকে একাধারে চেয়ে থাকে। বাকি জীবন টা প্রেয়সীর হাসি মুখ দেখে পাড় করে দিতে পারবে। প্রেয়সীকে হাসতে দেখে নিজেও হেসে ফেলে।
চলবে ইনশা আল্লাহ
[ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]