#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_২৫
আজ শুক্রবার। বন্ধের দিন হওয়ায় সবাই ফ্রী থাকে। পরিবার কে সময় দেয়। প্রিয় মানুষ কে সময় দেয়। আগামী শুক্রবারে আবরার আর মানহার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হয়েছে। বাট মানহা শর্ত দেয় বিয়েটা সাদা মাটা ভাবেই হবে। সব শর্ত মেনে নেয় আবরার। কিন্তু পরিবারের সবাই মানতে নারাজ কারণ তাদের একমাত্র ছেলের বিয়ে সাদামাটা হলে কিভাবে হবে। আবরার বুঝিয়ে সবাইকে রাজি করায়। মানহা কে কথা দেয় তাদের বিয়ে টা ঘরোয়া ভাবেই হবে নো পেনিক।
আবরার খুশিতে সেদিন তার অফিসের সকল স্টাফ কে মিষ্টি খাইয়েছে।৷ সকলে অবাক হয়ে তাদের তেজ স্যার কে দেখছিল। যে স্যার কাজ ছাড়া ব্যতিরিক্ত কথা বলে না সেই স্যার আজ সবার সাথে হেঁসে হেসে কথা বলছে নিজে সবাইকে মিষ্টি দিচ্ছে। সবাই বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে ছিল আবরারের দিকে। ইশান সবটা বুঝতে পেড়েছিল। পরে আবরার নিজে সমস্ত ঘটনা খুলে বলছে। ইশান নিজেও খুশি হয়ে স্যারের খুশি দেখে।
******
পড়ন্ত বিকেল শেষে গোধূলি সন্ধ্যার জন্ম হয়। তেমনি আমার অনুভূতিগুলো দলিত মথিত হয়েই যেন তোমার অভিমান শুরু হয়।
~ছনিয়া তাবাচ্ছুম অনি ~
একটা পার্কের ভিতরে বসে আছে আবরার আর মানহা। দুজনে কিছু একান্ত সময় কাটাতে চাই। নিজেদের ভিতর সব আন্ডারস্ট্যান্ডিং করে নিতে চাই। বিয়ের পর কোনো বাঁধা যেন তাদের ছুতে না পারে। দু’জনে টুকটাক কথা বলে। আবরার একজনের সাথে মানহা’র পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। সেজন্য আজ পড়ন্ত বিকেলে এখানে এসেছে তারা।আবরার চাই না বিয়ের আগে থেকে মানহা তাকে ভুল বুঝুক।
দুর থেকে এক জোড়া চোখ তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। কষ্টে বুকটা তার ফেটে যাচ্ছে। বুকে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। কেন হচ্ছে? প্রিয় মানুষকে অন্য এক পুরুষের সাথে দেখে। চোখ বেয়ে এক ফোটা নোনা পানি গড়িয়ে পরে। লোক টা যে আর কেউ নয় রাকিব। মানহা কে সে বিয়ের আগে থেকেই পাগলের মতো ভালোবাসে। হুট করে এক ধমকা হাওয়া এসে সব কিছু লন্ডভন্ড করে দেয়। মানহা’র পরিবার মানহা কে অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দেয়। জীবনে প্রথম বার সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিল রাকিব।। কারণ সে ব্যর্থ প্রেমিক। নিজের ভালোবাসার কথা তাকে বলতে পারছিল না। বন্ধুত্বের কথা ভেবে চুপ করে ছিল। পরে যখন মানহা’র ডিভোর্স হয়ে যায় তখন তাকে আপন করে করে নিতে চেয়েছিল বাট সেটাও হয়নি। সে চলে গেলো অচেনা দেশে। সবার থেকে অনেক দুরে। কখনো সাহস করে বলতে পারেনি। কারণ সে বেকার ছিল। কোনো বাবা মা চায় না তার মেয়ে কে বেকার ছেলের হাতে তুলে দিতে। মানহা দেশে ফেরার পর নতুন করে আবার ও স্বপ্ন দেখে। দিন রাত পরিশ্রম করে একটা চাকরি পেয়েছে সে। মানহার সাথে সংসার করার স্বপ্ন বুনেছে। ছোট একটা সংসার হবে তাদের। থাকবে না কোনো বাধা। তাদের গল্প টা অন্য সবার থেকে ভিন্ন বানাতে চেয়েছিল। বাট নিমিষেই সব কিছু ভেঙে চুড়ে শেষ হয়ে গেলো তার৷ বিড়বিড় করে বলে,,
❝সুন্দর ছিল গল্পটা কিন্তু পূর্ণতা পেল না, ভালোবাসার কমতি ছিল না তবুও তোমায় পাওয়া হলো না❞
এক টান দিয়ে বাইক নিয়ে হাওয়া চটে পার হয়ে যায় সেখান থেকে। প্রেয়সীকে অন্য কারোর পাশে দেখে তার সহ্য হচ্ছে না।
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
সেদিনের সেই মেয়েটাকে দেখে অবাক হয়ে আবরারের দিকে তাকায় মানহা। ইশারায় জিজ্ঞেস করে মেয়েটা কে? আবরার মেয়েটা কে নিজেদের পাশে বসিয়ে মানহার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।
” মানহা এটা হচ্ছে আমার খালামণির একমাত্র মেয়ে নিসা। এবার অনার্স ফাস্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট। অনেক পাঁজি মেয়ে। যাকে বলে বদের হাড্ডি। নিসা এটা হচ্ছে তোদের একমাত্র ভাবি।
” নিসা হাত উঁচু করে বলে, হাই ভাবিমনি। কেমন আছো তুমি?
” মানহা মুচকি হেসে বলে, আলহামদুলিল্লাহ তুমি কেমন আছো?
” আমিও আলহামদুলিল্লাহ আছি। ভাবিমনি সেদিনের জন্য সরি কানে হাত দিয়ে বলে। ভাইয়ার কোনো দোষ ছিল না আমিই ভাইয়া কে জোর করে এটা করতে বলেছি। ভাইয়া কে তুমি ভুল বুঝো না প্লিজ।
” আরে তুমি কেন সরি বলছো। আমি মাইন্ড করিনি।
” মানহা আপনারা দুজন কথা বলুন আমি কিছু অর্ডার দিয়ে আসি।
” ভাইয়াাাা–
” কি হয়েছে? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।
” তুমি ভাবিমনি কে আপনি করে বলছো ছিহ ছিহ। এটা কোনো কথা হলো। আজ থেকে তুমি করে বলবা।
নিসার কথা শুনে দুজনেই মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। আবরার নিসা কে বলে,,
” আচ্ছা ঠিক আছে। যাই আমি।
সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরে আসে মানহা।
***
অফিসের কাজে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ছে আবরার। বিয়ের পর কয়েকদিন অফিসে আসতে পারবে না এজন্য দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা শুধু কাজই করে যাচ্ছে। অফিস রুমে বসে কাজ করছিল আবরার। তখন বাইরে থেকে কেউ দরজা নক করে। বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে যায়। কাজের সময় কেউ ডিস্টার্ব করুক এটা মানতে পারে না সে। কিন্তু বার বার নক করায় চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে দরজা খুলেই বলে,
” তোমরা জানো না কাজ করার সময় আমাকে ডিস্টার্ব করলে এর পরিণাম কি হতে পারে। একটু জোরে বলায় সবাই আবরারের দিকে তাকায়। সামনের লোকটা কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিছু বলার সাহস হচ্ছে না। লোকটাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে, কি হলো এখন চুপ করে আছো কেন? বোবা হয়ে গেছো নাকি?
” স্যা’র একজন আপনার সাথে দেখা করতে আসছে। বলছে খুব আর্জেন্ট নাকি। আমি তাকে বলছি স্যার ব্যস্ত আছে বাট মেয়েটা আমার কথা শুনছে। সে নাকি আপনার সাথে দেখা না করে যাবে না।
” মেয়ে, কে সে?
” তিশা চৌধুরী- পিছন থেকে মেয়েলি কন্ঠস্বর পেয়ে তাকিয়ে দেখে তিশা। মুহূর্তেই চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায়। এই মুহূর্তে তিশা কে এক্সপেক্ট করেনি সে।
” আপনি আমার অফিসে কেন?
” কেন আসতে পারি না বুঝি। আপনি আমার বিজনেস পার্টনার। থুরি আমার না আমার বাবার। আর বাবার মানেই তো আমার তাই না।
” কেন এসেছেন সেটা বলে কেটে পড়ুন।
” দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বললে বেমানান লাগবে চলুন কোথাও গিয়ে বসে কথা বলি।
ইচ্ছা না থাকা স্বত্তেও আবরার কে যেতে হয় তিশার সাথে। কারণ তিশার বাবা এরশাদ চৌধুরীর সাথে তাদের অনেক দিনের পার্টনারশিপ । তার সাথে তার ভালো সম্পর্ক। আবরার তিশা কে নিয়ে তার কেবিনে যায়। আবরার নিজের চেয়ারে বসে। তিশা কে তার সামনের চেয়ারে বসতে বলে। তিশা রুমের চারপাশ টায় চোখ বুলিয়ে নেয়। সবটা খুব সুন্দর করে গোছানো। ভালো লাগে তার। একটা চেয়ার টেনে বসে পরে তিশা। তিশা কে বসতে দেখে বলে,,
” তো বলুন। কি দরকারে আসছেন?
” সেদিনের ব্যাপারে কি ভাবলেন। মানে আমার প্রস্তাবে কি রাজি আছেন?
” এতদিন পর ওটা নিয়ে কথা বলতে আসছেন আপনি। আমি আপনাকে আগেও বলছি এখনো বলছি আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারব না। আপনি কেন সেটা নিয়ে পরে আছেন বলুন তো। দেশে কি ছেলের অভাব পড়ছে। আপনি যথেষ্ট সুন্দরী স্মার্ট মেয়ে নিশ্চয় ভালো ছেলেকে জীবন সঙ্গী পাবেন।
আপনি এখন আসতে পারেন।
” কেন পারবেন না সেটা কি জানতে পারি?
” সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
” তাহলে আর কি বলব। আপনার ভাগ্য আপনি নিজ হাতে শেষ করছেন আমার তো আর কিছু বলার থাকে না। এর জন্য আপনাকে পস্তাতে হবে আবরার তেজ। বলে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
*****
তিশা বাড়ি এসে নিজের রুমের সবকিছু ভাংচুর করছে৷ সামনে যা পাচ্ছে তাই ফেলে দিচ্ছে। নিজের রাগ কিছুতেই কন্ট্রোল করতে পারছে না সে। রিজেক্ট শব্দ টা তার ডিকশনারি তে নেয়। আর সেই শব্দ টা আবরারের থেকে দুই বার পেলো। কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। উপর থেকে ভাংচুরের শব্দ পেয়ে দৌড়ে এলেন এরশাদ চৌধুরী। দরজা খোলা ছিল বলে দ্রুত ঢুকতে পারছেন তিনি। মেয়ে কে উত্তেজিত হতে দেখে অবাক হন তিনি। দ্রুত পায়ে গিয়ে মেয়ে কে জড়িয়ে ধরেন। তিশা বাবা কে পেয়ে তাকে আকড়ে ধরে। এরশাদ চৌধুরী বললো,,
” মাই ডটার প্লিজ শান্ত হও। এত উত্তেজিত হলে তোমার শরীর খারাপ করবে। কি হয়েছে পাপা কে বলো পাপা সব ঠিক করে দেবে।
” পাপা আমি আবরার কে বিয়ে করতে চাই।
” কাকে, সোজা দাঁড় করিয়ে বলে।
” আবরার তেজ কে পাপা। তাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
” সেটা তো ভালো কথা। তাহলে এত রেগে আছো কেন?
” পাপা সে আমাকে রিজেক্ট করছে। সেটা আমি মেনে নিতে পারছি না।
” আচ্ছা তুমি শান্ত হও আমি বিষয়টা দেখছি। মেয়েকে ঠান্ডা করে নিজের রুমে চলে যান।
বড্ড চিন্তায় পড়ে গেছেন তিনি। কি করবেন এখন? মেয়ে টাকে ছোট থেকে আদর যত্ন করে বড় করেছেন। যখন যা চেয়েছে তাই দিয়েছে। কোনো তার কমতি রাখেন নি। তার স্ত্রী মারা যাবার পর থেকে মেয়ে টা অনেক জেদি হয়ে গেছে। যা চেয়েছে সেটা না পেলে সব লন্ডভন্ড করে দেয়। কিচ্ছু মানে না। আবরার কে সে খুব ভালো করেই চেনে। আবরার যেটাই না বলে সেটা না’ই করে। না কে আর হ্যাঁ বলানো সম্ভব নয়। তাও মেয়ের জন্য আবরারের সাথে কথা বলবেন যদি কিছু করা যায়।
চলবে ইনশা আল্লাহ
#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_২৬
দেখতে দেখতে বিয়ের সময় ঘনিয়ে আসছে আবরার আর মানহার। তাদের বিয়েটা সাদামাটা ভাবে হলেও আবরার তার প্রেয়সীকে নিজের মনের মতো করে সাজিয়ে নিয়ে যেতে চাই। অল্প কিছু সংখ্যক মানুষ থাকবে বিয়েতে যারা তাদের নিকট আপনজন। আবরারের কথা মতো আজ সন্ধ্যায় তারা শপিংয়ে যাবে। মানহা যেতে চাই না বাট আবরারের জেদের কাছে হার মানতে হয়।
******
আবরার নিজ কক্ষে বসে ফাইল দেখছে। তার পাশে দাড়িয়ে আছে ইশান। অনেক্ক্ষণ যাবত কিছু বলার জন্য চেষ্টা করছে কিন্তু বলতে পারছে না। আবরার ফাইল চেক করছে আর ইশান কে লক্ষ্য করছে। ইশান আর চুপ করে থাকতে পারে না। কারণ সে যদি চুপ করে থাকে তাহলে আজ কথাটা বলতেই পারবে না। সেজন্য বলে,
” স্যার একটা কথা বলার ছিল?
আবরার ফাইল থেকে মুখ সরিয়ে বলে, হ্যাঁ বলো?
” স্যার___ আর বলতে পারলো না। তার আগেই বাইরে থেকে কেউ দরজা নক করে। ইশান বিরক্তিতে ‘চ’ উচ্চারণ করে। ইশানের অবস্থা দেখে মিটিমিটি হাসছে আবরার। ফের বললো, যাও কে এসেছে দেখে এসো?
ইশান বিড়বিড় করে বলতে বলতে দরজা খুলতে চলে যায়। দরজা খুলে পিয়ন কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে,
” কি হয়েছে?
” স্যার এরশাদ চৌধুরী স্যারের সাথে দেখা করতে আসছে। স্যার অনুমতি দিলে তাকে ভিতরে আসতে বলবো।
” আচ্ছা দাঁড়াও শুনে দেখি। ইশানের অনেক রাগ হচ্ছে এখনই কেন তাকে আসতে হলো? শালার কপালটাই খারাপ আমার। নিজে নিজে বকতে বকতে আবরারের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
” স্যার এরশাদ চৌধুরী আপনার সাথে দেখা করতে আসছে। শালার টাকলা কি আসার সময় পাইলো না। আমি যখনই বলতে গেলাম ঠিক তখনই কেন ভিলেনের মতো এন্ট্রি নিতে হলো হ্যা?
ইশানের কথা শুনে আবরার হালকা হেসে বলে, কষ্ট পেয়ো না ইশান। পরে সময় করে তোমার সব কথা শুনব। তুমি গিয়ে তাকে আসতে বলো।
” ধুর ভাল্লাগে না বলে হাটা ধরে। গিয়ে পিয়ন কে বলে তাকে ভিতরে আনতে।
একটু পর এরশাদ চৌধুরী আবরারের কক্ষে আসে। তাকে দেখে আবরার কুশল বিনিময় করে বসতে দেয়। ইশারায় তার জন্য চা নাস্তার ব্যবস্থা করতে বলে।
” আঙ্কেল হঠাৎ কি মনে করে আমার কথা মনে পড়লো?
” আবরার বাবা আমি তোমার সাথে আলাদা কথা বলতে চাই। আবরার ইশারায় ইশান কে বেড়িয়ে যেতে বলে। ইশান চলে যায়।
****
“আঙ্কেল কি হয়েছে বলুন?
” আবরার বাবা আমার একটা রিকুয়েষ্ট রাখবা। অনেক আশা নিয়ে এসেছি। বড্ড নিরুপায় আমি।
” আঙ্কেল আপনি কি বলতে চান একটু ক্লিয়ার করে বলবেন। আমি কিছু বুঝছি না আপনার কথা।
” বাবা তুমি তো জানো আমার একমাত্র মা মরা মেয়ে তিশা। ও তোমাকে খুব পছন্দ করে। তোমাকে বিয়ে করতে চাই। তোমাকে না পেলে ও সব শেষ করে দেবে। প্লিজ বাবা তুমি আমার মেয়েটাকে বিয়ে করো ?
এরশাদ চৌধুরীর কথা শুনে থমকে যায় আবরার। তিনি কি বলছেন এসব। সবটা তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। বিস্মিত হয়ে বলে,,
” আঙ্কেল এসব আপনি কি বলছেন? আপনি যা বলছেন সেটা কখনই সম্ভব নয়।
” প্লিজ বাবা তুমি একটু ভেবে বলো?
” আঙ্কেল আমি আপনাকে অনেক শ্রদ্ধা করি। প্লিজ এমন কিছু বলেন না যাতে আমাদের সম্পর্ক টা নষ্ট না হয়ে যায়। আপনি হয়তো জানেন না আমার বিয়ে কনফার্ম হয়ে গেছে৷
” হোয়াট— কি বলছো তুমি?
” জ্বি আঙ্কেল। আমাদের বিয়েটা সামনের শুক্রবারে হবে। তেমন কাউকে বলা হয়নি সেজন্য জানেন না। আসলে বিয়েটা সাদামাটা ভাবে হবে। পরে একসময় বড় করে পার্টি দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেব বলে ভাবছি।
” তাহলে আর কিছু বলার নাই। কাঁধে হাত দিয়ে বলে, কংগ্রাচুলেশনস ইয়াং ম্যান। তোমাদের বিবাহিতা জীবনের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
” ধন্যবাদ আঙ্কেল।
” আসি বেটা ভালো থেকো বলে তিনি বেড়িয়ে গেলেন। তিনি মনে মনে ঠিক করেছেন মেয়েকে কালই তার খালামনির কাছে লন্ডন পাঠিয়ে দেবে।
*********
সন্ধ্যা সাতটা। সবাই রেডি হয়ে শপিংয়ের উদ্দেশ্য রওনা হয়। ঢাকার নামকরা শপিংমলের সামনে গিয়ে একসাথে হয় সবাই। চারপাশে মানুষ গিজগিজ করছে। তারা গিয়ে বসে শাড়ির দোকানে। কাল হলুদ পরের দিন বিয়ে। প্রথমে হলুদের শাড়ি নেয় তারা। নিরা আর মানহা দুজনেই সেম কালেকশনের শাড়ি নেয়। তারপর ছেলেদের জন্য হলুদ পাঞ্জাবি নেয়। তারপর বিয়ের জন্য লাল বেনারসি দেখে। আবরার মানহা কে চয়েজ করতে বলে। বাট এত এত শাড়ির মধ্যে কোনটা রেখে কোনটা নেবে কনফিউশনে পরে। করুন চোখে আবরারের দিকে তাকায়। প্রেয়সীর মুখের ভাষা বুঝে ফেলে আবরার। ইশারায় আস্বস্ত করে নিজে দেখতে থাকে৷ একটা লাল রঙের বেনারসিতে চোখ আটকে যায় আবরারের। সেটা ধরে নিয়ে মানহার হাতে দেয়। জিজ্ঞেস করে কেমন? মাথা নেড়ে সুন্দর বলে। সবাই আবরারের চয়েসের প্রশংসা করে। শপিং শেষ হলে একটা রেস্টুরেন্টের খেতে যায়। রাতের ডিনার শেষ করে রাত দশটায় বাসায় ফেরে সকলে।
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
আকাশ জুড়ে হাজার তাঁরা,
চাঁদের আলো হাসে।
রাতের বেলার শিশির কণা
গড়িয়ে পড়ে ঘাসে।
আকাশে তাঁরা রা ঝলমল করছে।
কত গুলো তাঁরা আবার মিটিমিটি করে জ্বলছে। রাত অনেক হওয়ায় ঘুমাতে চলে যায় মানহা।
নতুন এক ভোরের সূচনা হয়। সূর্য তার কিরণ দিয়ে অন্ধকার কে আলোকিত করে তুলে। সারা পৃথিবী তার আলোয় আলোকিত হয়। তেমনি মানহার অন্ধকার জীবন কে আলোকিত করে তুলছে আবরার। সমস্ত আঁধার সরিয়ে আলোর সূচনা তৈরি করে। চোখে আলো পড়তেই চোখ পিটপিট করে তাকায়। আড়মোড়া ছেড়ে বিছানা থেকে উঠে বসে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে সকাল আটটা বাজে। সেটা দেখে লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে পরে। দ্রুত ওয়াশরুমে ছুট লাগায়। ফ্রেশ হয়ে নিচে নামে। রান্না মাত্র শেষ হয়েছে এবার সবাই খেতে বসবে। তাদের বাসায় সবসময় তাড়াতাড়ি রান্না হয় কেননা তার বাবা যাই অফিসে আর চাচা ভাই মিলে শো রুমে যায়। সবাই একসাথে সকালের খাবার শেষ করে। যে যার কাজে ছুট লাগায়। মানহা খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে এসে তানশি কে কল লাগায়। বার দুয়েক রিং হতেই রিসিভ করে তানশি।
” হেই আপু কেমন আছো? এত দিন পর আমার কথা মনে পড়লো বুঝি?
” আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি। আমার ছোট বোনটা কেমন আছে শুনি।
” আমিও আলহামদুলিল্লাহ। কি করছো এখন?
” বসে বসে আপনার সাথে কথা বলি।
” আপু তোমার সাথে আমার আড়ি। কথা কমু না। তুমি অনেক খারাপ।
” ওমা কেন? আমি আবার কি করলাম?
” আমাকে ছাড়াই তুমি বিয়া কইরা নিচ্ছো। এটা কি ঠিক বলো?
বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় লাল নীল হতে থাকে মানহা। মানহা কে লজ্জা পেতে দেখে তানশি বলে,
” ওলে বাবা- রে আমার আপুটা দেখি নজ্জা পাচ্ছে। তানশির পাশ থেকে জেনি বলে এই তোর কথা আমি কিছু বুঝছি না প্লিজ আমাকে একটু বুঝায় দে।
” ধুর বাল তুই কেমনে বুঝবি। পরে কমু। তানশির কথা শুনে মুখ টা কালো হয়ে যায়। জেনির মুখ কালো দেখি হেসে বলে, পরে বলছি মেরি জান। রাগ করো না।
” তানশি জেনি এত রাতে তোর কাছে?
“হ্যা আপু। দুজনে মিলে এসাইনমেন্ট করছি।
” ওহ আচ্ছা। তাহলে ভালো থাক পড়ে কথা বলব।
” আচ্ছা আপু। বাই।
” আল্লাহ হাফেজ।
__________
সকাল গড়িয়ে বিকাল। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা। খান ভিলায় মানহার হলুদের অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। মানহা কে নিরা সুন্দর করে সাজিয়ে আনছে। মানহা সাজতে না চাইলেও জোর করে সাজিয়েছে। মানহা স্টেজে বসিয়ে দেয় নিরা। ভাইয়ের বিয়েতে অনেক অনেক ইচ্ছা ছিল তার। কিন্তু সব কি আর পূরণ করা যায়। মানহার হলুদ শেষ হলে সে ছুটবে নিজ বাসায়। ভাই কে হলুদ লাগাতে। সবাই একে একে হলুদ ছোঁয়ায় মানহা কে। অনেক আনন্দ উল্লাসের মাধ্যমে শেষ হয় মানহার হলুদের অনুষ্ঠান।
চলবে ইনশা আল্লাহ
রিচেক দেওয়া হয়নি।
[ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]