#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_৩৫ ( গ্রামের সুন্দর মুহূর্তে)
নতুন এক ভোরের সূচনা হয়। অন্য আর পাঁচ টা ভোরের থেকে আজকের ভোর টা হয় অন্যরকম। পরিবেশটা শান্ত শীতল নিরিবিলি। নেই কোনো যানজটের শব্দ।
আবরার ঘুম থেকে উঠে রুমের বাইরে এসেছে। দাঁড়ানোর সাথে সাথে গা’য়ে ঠান্ডা বাতাস এসে বাড়িখায়। মুহূর্তেই চোখ বুজে নেয়। চারপাশটা কুয়াশায় আসন্ন। মানহা’র মামাদের বাড়ির সামনে অনেক গুলো লোক জমিতে কাজ করছে। সারা মাঠে ধান পেকে লাল হয়ে গেছে। কৃষকেরা সেই ধান গুলো কাটছে। কোনো কোনো জমিতে ধান বাঁধছে। এমন সুন্দর দৃশ্য আবরার আগে কখনো দেখেনি।
ছোট ছোট বাচ্চারা জায়নামাজ কাধে জড়িয়ে আরবি বই নিয়ে মাদ্রাসাা পড়তে যাচ্ছে। কি অপরুপ দৃশ্য।
আবরারের শীত অনুভূত হয়। গা’য়ে তার টিশার্ট। শীতের কাপড় পড়েনি। মানহা বলছিল গ্রামে অনেক শীত পরে। আবরার বাসার ভিতরে চলে যায়।
দেখতে দেখতে সূর্য মামা সুপারি গাছের ফাঁক দিয়ে উঁকি মারছে। সূর্য তার কিরণ দিয়ে চারপাশ টা আলোকিত করে ফেলছে। মানহা’র মামাদের বাড়ির পাশ দিয়ে সারি সারি সুপারি গাছ সহ আরও অনেক ধরনের গাছ লাগানো।
সকাল আটটা। নতুন জামাই যত্নের কোনো খামতি রাখছেন না তারা। সকালের নাস্তা শেষ করে যে যার রুমে চলে যায়। আর বাড়ির গিন্নিরা দুপুরে খাবার জন্য কাজে লেগে পরে।
বাড়ির মহিলারা বসেছেন পিঠা বানাতে। শীতকাল মানেই পিঠা খাওয়ার সময়৷ এসময় কৃষকের ঘরে নতুন ধান আসে। আর সেই ধান থেকে চালের গুঁড়া করে পিঠা তৈরি করে। তার ভাপা পিঠা বানানোর জন্য প্রথমে চালের গুঁড়া গুলো মেখে নেয়। তারপর তার ভিতরে নারকেল মেশায়। এভাবেই তারা একের পর এক পিঠা বানাতে থাকে।
সকাল গড়িয়ে দুপুর। প্রথমে বাড়ির পুরুষ সদস্য গুলো গোসল খানায় যায়। অয়ন আর মিরাজ আগে গ্রামে আসছে। এভাবে কলতলায় গোসল করছে বিধায় তাদের সমস্যা হয়নি। বিপত্তি ঘটে আবরারের বেলায়। আগে কখনো এভাবে খোলা মেলা গোসল করেনি বলে তার সমস্যা হচ্ছে। অয়ন আর মিরাজ গোসল শেষ করে আবরার কে যেতে বলে। আবরার করুণ চোখে সবার দিকে তাকায়। নিরারও সেম অবস্থা। দুই ভাই বোন আগে কখনো এভাবে গ্রামের খোলা মেলা পরিবেশের সাথে মানানসই না। নিরা মানহা’র দিকে করুণ চোখে তাকায়। বিষয়টা বুঝতে পেরে মানহা বলে,,
” নিরা তোমার টা পরে দেখছি। আগে তোমার ভাইয়ের সমস্যা টা সলভ করি। আবরার চলো আমার সাথে বলে উঠান থেকে কলতলায় চলে যায়। মানহা’র পিছুপিছু আবরার হাঁটে। মানহা সোজা গোসলখানায় ঢুকে পরে।
শহরের মতো গ্রামে নেই কোনো বড়সড় বাথরুম, গোসলখানা। এখানে সবটা আলাদা আলাদা। মানহা মোটর জুড়ে বালতিতে পানি ভরে। টিন দিয়ে চারপাশ টা ঘেরা। আবরার ভিতরে ঢুকে। মানহা সব ব্যবস্থা করে চলে যেতে গেলে আবরার হাত ধরে আঁটকে দেয়। মানহা ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে কি?
আবরার দুষ্টু হেঁসে মানহা’র হাত টান দিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে। আবরারের কান্ডে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় মানহা। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,,
” কি হয়েছে? এমন করছো কেন? আবরারের মুখে দুষ্টু হাসি, ফের ঠোঁট কামড়ে বলে,
” চলো না বউ দুজন এক সাথে গোসল করি। আবরারের কথায় বিস্ময়ে মুখ হা হয়ে যায় মানহা’র। বিস্ময় নিয়ে বলে,
” ছিহ তুমি কি বলছো এসব। তোমার মাথা ঠিক আছে। এটা শহর নয় গ্রাম। আর গ্রামের মানুষ গুলো কেমন সেটা তুমি জানো না। চুপচাপ গোসল করে বের হও। আমি বাইরে যাচ্ছি।
” তুমি এমন কেন বউ? দুজনে একটু রোমান্স করতে করতে গোসল করতে পারতাম।
” বেশি কথা বলো না। যা বলছি তাই করো। তোমার গোসল শেষ হলে আমি আর নিরা গোসল করব বলে গোসলখানা থেকে বের হয়ে যায়। আবরার করুন চোখে বউয়ের দিকে তাকিয়ে রয়। মুখ কালো করে গোসল করে।
আবরারের গোসল শেষ হলে নিরা আর মানহা গোসল করে।
দুপুর দুইটা। মানহা’র মামাতো বোন কলি। সে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। মানহা’র ছোট মামার মেয়ে। কলি নতুন দুলাভাইয়ের জন্য পিঠা নিয়ে এসেছে। পিঠা খাওয়ার মাঝেই দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য ডাক পড়ে।
আজকের মেনুতে আছে খাসির গোশত, মুরগির গোশত, ছোট মাছ দিয়ে পেয়াজ দিয়ে রান্না করছে, বড় মাছ দিয়ে লাউ রান্না করছে। মানহা’র মামাদের সবজির বাগান আছে। নিজেদের খেতের লাউ। সবাই মিলে দুপুরের খাবার শেষ করে।
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
”
”
‘
‘
‘
‘
”
‘
‘
‘
‘
‘
মানহা আবরার অয়ন নিরা মিরাজ মানহা’র বড় মামার মেয়ে তাসনুভা সে এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে। তার বড় ভাই তানজিম। সে এখানকার কলেজের টিচার। সারাদিন কলেজ করে সবার সাথে ঘুরতে আসার এনার্জি পায় নি। সেজন্য আসেনি। মেজো মামা’র ছেলে রাফি সে অনার্স সেকেন্ড ইয়ার মিরাজের ব্যাচমেট, আর ছোট মামার দুই মেয়ে কলি আর অলি দুজনে এসএসসি পরীক্ষার্থী। তারা জমজ বোন। সবাই মিলে ঘুরতে বের হয়েছে। গ্রামের সুন্দর পরিবেশ টা উপভোগ করার লোভ সামালাতে পারছে না তারা। মানহা নিরা দুজনে খুব এক্সাইটেড। ইটের সলিং রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে তারা। আঁকাবাঁকা রাস্তায় মানুষের অভাব নেই। ছোট ছোট বাচ্চা ছেলে মেয়ে খেলা করছে।
রাস্তা থেকে এবার মাঠে নেমে পরে। কিছু কিছু জমিতে ধান নেই। আবার কিছু জমিতে ধান কেটে ফেলে রাখা হয়েছে আবার কিছু জমিতে ধান বাধছে কৃষকে। দৃশ্য টা সত্যি দেখার মতো। হুট করে আবরার বলে ওঠে,,
” আমরা কত সুখী জীবনই না পাড় করি। আর দেখো ইনারা কি কষ্ট করে কাজ করছে। আর আমরা এই ধান থেকেই চাল পায়। যা দিয়ে আমাদের জীবন চলে।
আবরারের কথায় মুগ্ধ হয় মানহা। তার কথা শুনে রাফি বলে,
” ঠিক বলছেন দুলাভাই। আমাদের গ্রামের শুধু আমাদের না এখানের প্রতিটা গ্রামের নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষ গুলা খেটেখুটে কষ্ট করে নিজেদের সংসার চালায়। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ বহন করে।
” জীবন বড়ই অদ্ভুত।
কেউ জমির ছোট আইল দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। কেউ জমির ভিতর দিয়ে। এভাবে তারা খালের পাড়ে দাঁড়ায়।
এই গ্রামের মাঝ দিয়ে অনেক বড় একটা খাল আছে। সেই খালে ছোট বড় অনেক মাছ পাওয়া যায়।
এত পথ হেঁটে কষ্ট হয়ে গেছে নিরার। জীবনে প্রথম বার এত পথ হাঁটছে সে। মানহা আগে অনেকবার আসছে এজন্য তার কিছু হয়নি। খালের পাড়ের সবুজ ঘাসের উপর বসে পরে মানহা। নিরা খালের ব্রিজ উপর দাঁড়ায়। বিকেলের সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপচে পড়ছে চারপাশে। নিরা দৌড়ে দৌড়ে চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখছে। খালের পানিতে দেখতে সুন্দর ফুল দেখে মানহা কে জিজ্ঞেস করে,,
” ভাবিমনি এই ফুলের নাম কি?
” কচুরিপানা দেখতে সুন্দর না।
” হ্যা খুব সুন্দর। অয়ন আমাকে কয়েকটা ফুল তুলে দাও। বউয়ের কথায় অয়ন ফুল তুলে নিরার হাতে ধরিয়ে দেয়।
আবরার এত সুন্দর দৃশ্য আগে কখনো দেখেনি। প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য তাকে আকৃষ্ট করেছে। সে প্রকৃতি সৌন্দর্যে মুগ্ধ। আস্তে আস্তে বিকেল শেষ হয়ে যাচ্ছে। গোধূলির শেষ প্রণয়ে থমকে গেছে আবরার। দ্বিতীয় বারের মতো #গোধূলির_শেষ_প্রণয় এ পড়ে গেছে সে। এই সুন্দর দৃশ্য ক্যাপশন না করে রাখলে কি হয়? অয়ন কে ডেকে তার বনবিড়ালের সাথে গোধূলির সুন্দর মুহূর্তে ক্যামেরা বন্দি করে রাখতে চায়। স্মৃতি হিসেবে। অয়ন সুন্দর করে দুজনের ছবি তুলে দেয়।
মানহা সব ভাইবোন দের সাথে কিছু ছবি তোলে। স্মৃতি হিসেবে সারাজীবন থাকবে।
হঠাৎ করে কলি বলে ওঠে,,
” জানো মানহাপু। কিছুদিন আগে খালের ওই পাড়ে অনেক কাশফুল ফুটছিল। দেখতে যা লাগছি। আমি আর কলি এখান থেকে ছবিও তুলছিলাম।
” ইশশশ রে মিস করে গেলাম। আগে যদি জানতাম তাহলে তখনই আসতাম। কাশফুলের বাগানের থেকে গ্রামের এই খালের কাশফুলের সৌন্দর্য হাজার গুণ সুন্দর।
” সামনের বার আসনে আপু। খুব মজা করব।
” ইনশা আল্লাহ আমার কিউট বনু বলে কলির গাল দুটো টেনে দেয়। কলি চঞ্চল স্বভাবের আর অলি সে চুপচাপ স্বভাবের। কম কথা বলে।
সারা বিকেল ঘুরাঘুরি করে বাসায় ফেরে সকলে।
পাখিরা তাদের নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। ঝাক বেধে উড়ে চলেছে দুর আকাশে। দেখতে মারাত্মক লাগছে।
❝ পাখি সব করে রব রাতি পোহাইলো,
কাননে কুসুমকলি সকলি ফুটিল❞
চলবে ইনশা আল্লাহ
#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_৩৬
চারপাশে ঝিঁঝি পোকার শব্দে ঝা ঝা করছে। চারপাশ নিশ্চুপ, নিস্তব্ধ। নেই কোনো মানুষের আনাগোনা।রাত গভীর। গ্রামের মানুষ গুলো সব ঘুমিয়ে পরছে। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে সবাই অনেক ক্লান্ত হয়ে পরে। সেজন্য যে যার মতো রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পরছে। পুরো বাড়ির একটা মানুষও জেগে নেই। আবরার বাদে। আবরারের ঘুম আসছে না। মানহা ঘুমিয়ে গেলে টিপি সারে রুম থেকে বেড়িয়ে ছাদে দাড়িয়ে আছে। শীতের ভিতর তার গা’য়ে পাতলা গেঞ্জি। শরীর জুড়ে শীতল বাতাস বয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ টা তার কাছে অসাধারণ লাগছে। গ্রামের মানুষ গুলো ঘরের বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়ছে। এখন দশটা বাজে। এত তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যস আবরারের নেই। সেজন্য ছাদে এসেছে। গ্রামের একটা অসুবিধা আছে। ঠিক ভাবে নেট পায় না। ছাদের খোলামেলা জায়গায় ভালোই নেট চলছে।
_______
মিরাজ আর রাফি সমবয়সী হওয়ায় দুজনে এক রুমে থাকছে। দুজনের কেউ এখনো ঘুমোই নি। দুজনে শুয়ে শুয়ে ফোন চাপছে আর গল্প করছে। হঠাৎ করে রাফি মিরাজ কে জিজ্ঞেস করে,,
” মিরাজ তোমাকে একটা কথা বলব। যদি কিছু মনে না করো?
” চিল ইয়ার। সামান্য একটা কথা জিজ্ঞেস করবে তাতে মনে করার কি আছে।
” তুমি কাউকে ভালোবাসো?
রাফি’র কথায় ফোন থেকে চোখ সরিয়ে রাফি’র দিকে তাকায়। চোখের সামনে ভেসে ওঠে মায়াবী মুখ। মিষ্টি হাসি,রাগি রাগি ফেস মুহূর্তেই হেসে ওঠে মিরাজ। মিরাজের হাসি দেখে ভ্রু কুচকে তাকায় রাফি। মিরাজের হাবভাব দেখে বলে,
” আমি নিশ্চিত তুমি কোনো মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছো।
” মিরাজ মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যা বলে।
” কে সে? আমাকে কি তার ছবি দেখানো যায়।
” মেয়েটাকে তুমি চেনো।
” কেমনে অবাক হয়ে,
” হ্যাঁ। মেয়েটা আমার ফুপির মেয়ে তানশি। যাকে আমি নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি।
” কি বলো? তানশি! তানশি তো আমাদের ব্যাচমেট ছিল। এখন কেথায় সে? তাকে কেন আনোনি তোমরা।
” সে তো বাংলাদেশে নেই।
” কোথায়।
” আমেরিকা।
” সো স্যাড। কষ্ট পেয়ো না। রাত তো অনেক হলো ঘুমিয়ে পড়ো।
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
”
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
সকাল নয়টা। নাস্তা শেষ করে সবাই সকালের মিষ্টি রোদে বসে আছে ছাদে। মূলত তারা আলোচনায় বসেছে। আজ শুক্রবার। বন্ধের দিন বলে সবাই বাড়ি আছে। মানহা’র মামাতো ভাই তানজিম সবার উদ্দেশ্য বলে,,
” গাইস, আমরা যদি আজ পিকনিক করি তাহলে কেমন হবে? তানজিমের কথায় সবাই একমত হয়। তানজিম ফের বলে,
” মানহা আসলে আমরা প্রত্যেকবারই পিকনিক করি। এবার করব না তা কি করে হয়।
বড় ভাইয়ের কথা শুনে মনটা ভরে যায় মানহা’র। পিকনিকের কথা টা মনে রেখেছে জেনে খুব খুশি হয়।
অয়ন বলে, কিন্তু তানজিম ভাই পিকনিক কখন করবে। আজ তো শুক্রবার। তানজিম আর অয়ন দুজন কয়েক দিনের ছোট বড়। অয়নের থেকে পাঁচদিনের বড় তানজিম। সেজন্য অয়ন তানজিম ভাই বলে ডাকে।
” আসলেই তো। আবরার ভাই আপনি কিছু বলছেন না কেন?
” আবরার মুচকি হেসে বলে, তোমরা যা ভালো মনে করো তাই করো। আমি আর কি বলব।
” আচ্ছা আজ রাতে করলে কেমন হয়।
” বেশ ভালো হবে ভাইয়া ( তাসনুভা)
আচ্ছা তাহলে আজ রাতে সবাই মিলে খুব আনন্দ উল্লাস করব। কালকেও যেহেতু স্কুল কলেজ বন্ধ আছে। তাহলে কাল সকালে সবাইকে নিয়ে আমাদের গ্রাম থেকে আরো এক গ্রাম পর একটা ঘেড় আছে সেখানে নিয়ে যাবো। ঠিক আছে।
” আচ্ছা ঠিক আছে।
*******
আজ পিকনিকের সবটা হবে গ্রাম্য স্টাইলে। তার জন্য সন্ধ্যার পরেই বাড়ির ছেলে গুলো উঠানে কারেন্টের তাড় টেনে বাল্ব দিয়েছে। সারা উঠান দিনের আলোর মতো পরিষ্কার লাগছে। তাসনুভা মানহা কলি অলি চারজনে উঠানে ইট দিয়ে চুলা বানাচ্ছে। নিরা সবার সাথে আছে। সে এসব কোনো দিন করেনি এজন্য সবটা ভালো করে দেখছে। তারও খুব ইচ্ছা করছে এদের মতো করে চুলা বানাতে। কিন্তু সে তো পারে না। এজন্য মুখ গোমড়া করে বসে আছে।
আবরার অয়ন তানজিম বড় তিনজনে বাজার থেকে পিকনিকের যাবতীয় জিনিস কিনে আনছে। তারা বিরিয়ানি রান্না করবে। তার সাথে গরুর গোশত।
ছেলে মেয়ে মিলে রান্না করবে। আবরার খুব ভালো বিরিয়ানি রান্না করতে পারে। সেটা জেনেছে নিরার থেকে। নিরা মুখ ফসকে বলে ফেলছে। এজন্য তানজিম বলছে,
” আবরার ভাই আপনার হাতের স্পেশাল বিরিয়ানি খাবো আমরা। প্লিজ না করবেন না।
” আবরার না বলতে পারে না। প্রেয়সীর মুখের দিকে তাকিয়ে তার হাস্য জ্বল মুখ দেখে রাজি হয়ে যায়।
উঠানে গোল করে চুলা বানানোর জায়গায় চেয়ার নিয়ে বসে সবাই। আবরার কে রান্নার দায়িত্ব দিয়েছে। কিন্তু বিপত্তি ঘটে চুলায় আগুন জালাতে গিয়ে। গ্রামের সবাই খড়ি দিয়ে রান্না করে যেটা আবরার পারে না। বার বার চেষ্টা করেও যখন হচ্ছিল না তখন চেয়ার থেকে উঠে পরে মানহা। আবরার কে সরে বসতে বলে ছোট টুলে বসে মানহা। গ্যাসলাইট নিয়ে খড়িতে আগুন ধরায়। আবরার কে বলে সে জাল দিচ্ছে বাকিটা তাকে করতে।
জামাই বউ কে মিলে তালে কাজ করতে দেখে সবাই মিটিমিটি হাসে। মিরাজ সবার আড়ালে কয়েকটা ফটো তুলে নেয়। পরে সারপ্রাইজ দেওয়া যাবে ভেবে মুচকি হাসে।
রান্না শেষ হয় দশটায়। বাড়ির মুরব্বি গুলো খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ছে। ছোটদের কে তারা ডিস্টার্ব করে না। তাদের মতো করে আনন্দ করতে দেয়।
উঠানে মাদুর পেতে বসে সবাই। মানহা নিজ হাতে সবাইকে বেড়ে দিয়ে নিজের প্লেটেও দেয়। একে একে সবাই খাওয়া শুরু করে। আবরার সবার মুখের দিকে চেয়ে থাকে। কেমন হয়েছে জানার জন্য। তানজিম আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে,
” ভাই আপনি তো খুব ভালো রান্না করতে পারেন। জাস্ট অসাধারণ হয়েছে।
” আবরারের ঠোঁটে ফুটে ওঠে হাসি। আবরার মানহা’র কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
” বনবিড়াল খাবারটা কেমন হয়েছে। মানহা দুষ্টু হেসে বলে,
” ভালো হয়েছে তবে আমার বরের থেকে বেশি না।
আবরার হেসে ওঠে মানহা র কথায়। খাবার শেষ করে কিছুক্ষণ গল্প করে যে যার মতো রুমে চলে যায়।
*******
আবরারের বুকে ঘাপটি মেরে শুয়ে আছে মানহা। দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে আছে। আবরার বলে,
” জানো বনবিড়াল। আমি আগে কখনো এমন সুন্দর মুহূর্ত কাটায় নি। গ্রামের সুন্দর মুহূর্ত গুলো বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। শুধু মাত্র তোমার জন্য এমন একটা দিন পেয়েছি। আই লাভ ইউ বনবিড়াল। আই লাভ ইউ সো মাচ ডিয়ার বউ।
” আই লাভ ইউ টু ডিয়ার কিউট গুলুমুলু স্বামীজান বলে হেসে ওঠে। বউয়ের হাসি দেখে আবরারও হেসে ওঠে।
চলবে ইনশা আল্লাহ
[ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]