গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব-৩০+৩১

0
298

#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_ত্রিশ

বেস্ট ফ্রেন্ড নামক মানুষ’টা যে ঠকাতে পারে এখনো ভাবতে পারছেনা ফারদিন। নিরব’কে তো ও ফ্রেন্ড কম ভাই বেশি ভাবতো। আর সেই ভাই ও’কে ঠকালো? চোখের সামনে নিরব আর তিথী’কে একটা লোহার র’ডের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। সামনেই ফারদিন দেয়ালে হেলান দিয়ে খুব শান্ত ভঙ্গী’তে দাড়িয়ে আছে। ও’কে দেখে বোঝাই যাচ্ছেনা এখানে খুব ভয়ংকর কিছু হতে যাচ্ছে। নিরবের চোখে ভয় আর তিথী’র চোখে মুগ্ধতা। তিথী মুখে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে এক দৃষ্টি’তে চেয়ে আছে ফারদিনের দিকে। নিরব বার বার ভয়ে ঢোক গিলছে। অনেক ক্ষন নিরবতায় কে’টে গেলো। নিরব’তা ভেঙে নিরব ভয়ার্ত স্বরে বলে উঠলো…..

–আমাকে এইভাবে নিয়ে এসেছিস কেনো? এই মেয়ে’টার তোর আর তিথী’র ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে। তুই ওর সাথে আমাকে কেনো এখানে নিয়ে এসেছিস?

নিরবের কথা শুনে ফারদিন বাঁকা হেসে উওর দিলো…..

–হোয়াট ডু ইউ ওয়া’ন্ট টু প্রুভ ইউর’সেল্ফ বাই আস্কিং স্টুপিড কুয়েশ্চন?

ফারদিনের কথার মানে বুঝতে পারলো না ওরা দুজনে’ই। নিরব খানিক ক্ষন প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাঁকিয়ে থেকে কিছুটা কঠিন স্বরে বলে উঠলো….

–আমার ধৈর্যের পরিক্ষা নিস না। তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তাই ওর এক’টা ম্যাসেজ পেয়ে এখানে ছুটে এসেছি আর তুই আমাকে এভাবে রেখে এখন হেয়ালি করছিস…….

নিরবের কথায় ফারদিন একটু শব্দ করে হেসে ওর দিকে এগিয়ে গেলো। নিরবের মুখোমুখি দাড়িয়ে শান্ত কন্ঠে বললো…..

–কা’পুরুষ কাকে বলে আমি সত্যি জানতাম না। তোকে দেখে জেনে গেলাম। পেছন থেকে ছু’ড়ি মা/রা’র কাজ’টা কা’পুরুষ’রাই করে জানিস তো?

এইবার নিরব সম্পূর্ন ভরকে গেলো। মস্তিষ্ক প্রশ্ন করে বসলো” তবে কি ফারদিন সব জেনে গেছে?” যদি ফারদিন সব’টা জেনে যায় তাহলে আজ ও’কে কেউ বাঁচাতে পারবে না। ফারদিনের ভয়ংকর রুপ’টা ও খুব ভালো করে জানে? প্রশ্ন’টা ভেসে উঠতে’ই কয়েকবার ঢোক গিলে নিলো। চোখে মুখে ভয়ের রাশি ফুটে উঠছে। কপালে ঘাম জমতে শুরু করেছে। বিন্দু বিন্দু ঘামের ফোটা কপাল বেয়ে পড়লো। নিরবের চোখে ছটফটা’নি দেখা যাচ্ছে। তা দেখে ফারদিনের ঠোঁটের হাসি’টা চওড়া হলো। নিরব ভয়ার্ত স্বরে বললো….

–তুই কি বুঝাতে চাচ্ছিস?

ফারদিন এইবার দাতে দাত কড়মড় করতে করতে নিরবে’র কলার’টা ধরে বলে উঠলো…..

–তুই আমার সাথে কেনো বেঈমানী করলি? আমার পেছনে ছু’ড়ি মা/রতে তোর একবার ও বাধলো না? ছিঃ

বলেই কলার ছেড়ে দিয়ে রাগে ফোস ফোস করতে লাগলো। তিথী এখনো হাসি মুখে ফারদিনের রাগী চেহারা’টা দেখছে। তিথী’কে এতটা শান্ত আর নিরন দেখে ফারদিন অবাক হয়ে ওর দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলো…..

–তোকে সেদিন বলেছিলাম আমার থেকে দূরে থাকা তোর জন্য মঙ্গল। শুধু শুধু নিজের মৃ’ত্যু নিজে’ই ডেকে আনলি। ভেবেছিলাম আর কয়েক’টা দিন তোকে বাঁচিয়ে রাখব। কিন্তু, তুই নিজেই তোর আয়ু কমিয়ে দিলি…….

ফারদিনের কথা শুনে তিথী হালকা হেসে মুগ্ধ নয়নে ফারদিনের দিকে তাঁকিয়ে ঘোর লাগা কন্ঠে বললো…..

–রেগে গেলে তোমাকে আরো বেশি সুন্দর লাগে। বিলিভ মি, ইউ লুক সো নাইস। মোস্ট হ্যান্ডসাম বয় ইন মাই লাইফ। আই লাভ ইউ। আই লাভ ইউ। …..

এই মুহূর্তে তিথী’র দ্বারা এমন কথা আশা করা যায়। তাই নিরব না ভরকালেও ফারদি৷ ঠিকি ভরকালো। এই মেয়ে’টার কি ভয় নেই। একটুও বিচলিত বা ভয়ের চিহ্ন ওর মুখে নেই। যা আছে তা শুধু ফারদিনের প্রতি মুগ্ধ’তা। তিথীর কথা শুনে ফারদিনের রাগে শরীর কিড়বিড় করে উঠলো। কি আশ্চর্য একটা মেয়ে এতটা সাইকো কি করে হতে পারে? রাগে ফারদিন তিথীর গাল চেপে ধরে বলে উঠলো…..

— তুই তোর সব লিমিট ক্রস করে গেছিস। তোকে এক্ষুনি আমার জ্যান্ত পুড়িয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।

তিথী’র মধ্যে এখনো কোনো ভাবাবেগ দেখা গেলো না। সে পূর্বের মতো ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে বলে উঠলো…..

–তোমার হাতে খু’ন হতেও আমি রাজি…….

ফারদিন এইবার শরীরের সমস্ত শক্তি তিথী’র গালে থা’প্প’ড় মে’রে বলে উঠলো…..

–তোর মতো নির্লজ্জ মেয়ে পৃথিবী’তে একটাও নেই। লজ্জা করছে না তোর। তোর বাবা-মা’র বয়সী দুইটা মানুষ’কে তুই নিজের হাতে খু’ন করেছিস। এতটা নিচে নামতে পারলি না।

তিথী এবার ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে উঠলো……

–ওদের মৃ’ত্যু আমার হাতে লেখা ছিলো। এটা নিয়ে লজ্জিত হওয়ার মতো কিছু দেখছি না আমি। সো, স্টপ ইউর ননসেন্স টকিং……

ফারদিন ভেবে পাচ্ছে না। এই মেয়ে কোন ধাতু দিয়ে তৈরি খুঁজে পাচ্ছে না ও? গার্ড’কে দেখে তিথী’র মুখ’টা বেঁধে দেওয়ার ইশারা করলো। তারপর নিরবের দিকে তাঁকিয়ে শান্ত কন্ঠে প্রশ্ন করলো…..

–কেনো করেছিস এইসব? তুই তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলি। একমাত্র তোকে আমি সব থেকে বেশি বিশ্বাস করতাম আর তুই আমার বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করলি?

নিরব মাথা নিচু করে আছে। কি উওর দিবে ও? সত্যি তো এই ছেলে’টা ও’কে সব থেকে বেশি বিশ্বাস করতো আর ও তাকে ঠকালো? ফারদিন আবারো চেঁচিয়ে প্রশ্ন করে উঠলো…..

–টেল মি হোয়াই ইউ ডিড দ্যাট?

এইবার নিরব ও ফারদিনের সাথে চেঁচিয়ে বলে উঠলো……

–বিকজ, আই লাভ ফাইজা। শুনতে পেয়েছিস তুই আমি ভালোবাসি ও’কে? খুব বেশি ভালোবাসি। তোর থেকে ও বেশি ভালোবাসি ও’কে আমি। চার বছর ধরে পা’গলের মতো ভালোবেসে এসেছি ও’কে। আর তুই আমাদের মাঝে উড়ে এসে জুড়ে বসেছিস। আমার থেকে আমার ভালোবাসা’কে কেড়ে নিয়েছিস তুই। তুই ওর যোগ্য না বুঝতে পেরেছিস……..

আর বলতে পারলো না নিরব তার আগেই বিল্ডিং কেঁপে উঠলো এক ভয়ংকর চিৎকারে। আর চিৎকার’টা নিরবের গলা থেকে এসেছে। ওর বুক চিড়ে গলগল করে স্রোতের মতো র’ক্ত বের হচ্ছে। কিছু র’ক্ত ছিটে ফারদিনের মুখে লেগেছে। আর নিরব গলা কা’টা মুরগীর মতো ছটফট করতে লাগলো। ওর চিৎকারে ফারদিন হা হা করে হেসে দিলো উঠলো। তারপর বলে উঠলো…..

–আজ সারাদিন তোর ছটফটানির দেখব আমি। যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে তুই নিজেই নিজের মৃ’ত্যু চাইবি……..

বলে গার্ড’দের কিছু বুঝিয়ে বেড়িয়ে গেলো। বা’কি কাজ’টা পরের জন্য রেখে দিলো৷ এখন আগে ফাইজা’র কাছে যেতে হবে বলে চট্রগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
____________________________________________
মাঝ রাতে চাদের আলোয় চারদিক’টা আলোকিত হয়ে আছে৷ পূর্নিমার গোলাকার চাদ’টা আকাশ ছেয়ে আলো ছড়াচ্ছে। ফাইজা খাটে বসে এক দৃষ্টি’তে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাঁকিয়ে আছে। ফারদিনের জন্য বুকের ভেতর’টা বার বার ফে’টে চৌচির হয়ে যাচ্ছে৷ চোখ থেকে অশ্রু ফোটা গড়িয়ে পড়ছে। হঠাৎ করে দমকা বাতাস শুরু হতে’ই ফাইজা বেলকনি’তে দৌড়ে গেলো। বেলকনি থেকে জামা-কাপড় গুলো হাতে নিয়ে ভেতরে আসার জন্য ঘুরেও থেমে গেলো। হুট করে পেছনে ফিরে বাইরে তাঁকিয়ে থেমে গেলো। ল্যাম্প পোস্টের আলোয় সাদা গাড়ি’টা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে৷ আর গাড়ির সাথে’ই হেলান দিয়ে দাড়িয়ে থাকা মানুষ’টা যে বড্ড বেশি চেনা ওর। এত রাতে এই মানুষ’টাকে একদম আশা করে’নি ও? তবে কি ও ভুল দেখছে। বাতাসে চুল গুলো উড়ে কপালে লেপ্টে আছে। ঘামে ভেজা শার্ট ও শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। কিন্তু, এত রাতে এই মানুষ’টা এখানে কি করে এলো? ঠিকানা পেলো কোথায়? মানুষ’টাকে দেখে ফাইজা’র সব রাগ, অভিমান নিমিশেই অশ্রু হয়ে বেড়িয়ে এলো নেত্র দ্বারা।

–আমি তোমাকে ছাড়া ভালো নেই জান। বিশ্বাস করো, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে প্রতি মুহূর্ত। শূন্য লাগছে তোমাকে ছাড়া সব কিছু। প্লিজ ফিরিয়ে নাও আমাকে। আমার ছটিফটা’নি দেখেও তুমি কি করে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছো বার বার? একটা বার ফিরিয়ে নাও আমাকে প্লিজ৷ ম’রে যাব আমি। বিলিভ মি, আই কা’ন্ট লিভ উইথ’আউট ইউ……

চেঁচিয়ে কথা গুলো বলে’ই হাটু ভেঙে বসে পড়লো ফারদিন। ফাইজা কোনো উওর না দিয়ে রুমে ঢুকে গেলো। তা দেখে ফারদিন এইবার ডুঁকরে কেঁদে উঠলো………

#চলবে

#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_একত্রিশ

মধ্য রাতে অঝোরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ফারদিন এখনো হাটু ভেঙে বসে আছে বৃষ্টির মধ্যে। সারা শরীর ভিজে চুপচুপ হয়ে আছে। জানালার ফাঁক দিয়ে অনেক ক্ষন যাবৎ দেখছিলো ফাইজা। ভেবেছিলো ছেলে’টা নিজের শরীরের কথা চিন্তা করে উঠে যাবে। কিন্তু, এই ছেলে’টাকে তো ও চিনে
। তাই, এখন আর চুপ করে থাকতে পারলো না। ওড়না’টা মাথায় দিয়ে বেড়িয়ে গেলো বাইরে। ফাইজা’কে বেড়িয়ে আসতে দেখে ফারদিনের মুখে হাসি ফুটলো না। হুড়মুড়িয়ে উঠে দাড়িয়ে পড়লো। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় ফারদিনের মুখ’টা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। চোখ দুটো অসহায় চাহনী দিয়ে আছে। মুখ’টা শুকিয়ে গেছে। ফারদিনে মুখ’টা দেখে ফাইজা’র বুকের ভেতর’ট মুচড়ে উঠলো। ফাইজা এক দৃষ্টি’তে ওর দিকে কিছুক্ষন তাঁকিয়ে রইলো। নরম স্বরে কিছু বলতে যাবে তখনি নাদিয়া বেগম আর হাসনাত সাহেবের সাদা কাফন প্যাচানো মুখ’টা ভেসে উঠলো চোখের সামনে। তখনি, ফাইজা’র মুখ’টা আবার কঠিন রুপ ধারন করলো। কন্ঠস্বর কঠোর করে বললো…….

—আপনি কেনো এসেছেন এখানে?

ফাইজার প্রশ্নে ফারদিনের মন’টা বিশিয়ে গেলো। তাও নিজেকে সামলে ফাইজার হাত দুটো আকড়ে ধরে বলে উঠলো….

—প্লিজ আমাকে দূরে ঠেলে দিও না জান। আমি থাকতে পারছি না। পারছিনা আমি…….

বলতে না বলতে ওর গলা জড়িয়ে আসলো। অঝোরে বৃষ্টির জলের মাঝেও ফাইজা ঠিক বুঝতে পারলো ফারদিন কাঁদছে। দুজনের মনের অবস্থা’ই এক। শ্রাবনের শ্রাবন ধারায় সেদিন ভিজেছিলো খুশি’তে আর আজ ভিজচ্ছে বিষাদের আগুন নেভানোর জন্য। ফাইজা’র চোখ থেকেও পানি গড়িয়ে পড়ার আগে হাত’টা ছাড়িয়ে নিয়ে ফাইজা পূর্বের মতোই কঠোর স্বরে বলে উঠলো…..

—আমাকে আমার মতো ছেড়ে দিন প্লিজ। আমি চাইনা আমার জন্য আর কারোর জীবন হারাতে হোক। এখানে আর কোনো দিন আসবেন না। এটা আমার অনুরোধ…..

বলেই হাত জোড় করে ধরে আবারো বললো…..

–প্লিজ চলে যান। আর কোনো দিন আসবেন না…..

বলেই পা বাড়ালো সামনের দিকে। ফারদিন এইবার কান্নারত কন্ঠে চেঁচিয়ে বলে উঠলো…..

—আমি ম’রে যাবো সত্যি। অনেক বেশি ভালোবাসি তোমাকে। প্লিজ ডোন্ট লিভ মি জান…….

ফারদিনের আকুতি ভরা কন্ঠ শুনে থেমে গেলো ফাইজার পা। বুকের ভেতরের লুকানো ভালোবাসা গুলো মুহূর্তেই খা খা করে উঠলো। দুমড়ে মুচড়ে উঠলো ভেতর’টা৷ ভালোবাসা এত’টা অসহায় না হলেও পারতো। মনে প্রেম ভালোবাসা থাকে কিন্তু চা’পা পড়ে অভিমানের আড়ালে। আড়াল থেকে চাইলেও বেড়িয়ে আসা যায়না। ভালোবাসার মানুষের কাছে দুনিয়ার সব থেকে শক্তিশালী ব্যাক্তি’টাও অসহায়। নিজেকে ধরে রাখার শক্তি আর পেলো না। ছুটে গিয়ে হামলে পড়লো ফারদিনের বুকে। মুশলধারার বৃষ্টির সাথে মিশে গেলো বাধ ভাঙা কান্নার স্বর। ফারদিন এক মুহূর্তের জন্য ঘোরে চলে গিয়েছিলো। ফাইজা’র কান্নার স্বরে নিজেকে আর সামলাতে পারলোনা নিজেও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। মুশলধারের বৃষ্টির মাঝে দুজন ব্যাক্তি হারানো ভালোবাসা ফিরে পেয়ে অঝরে কাঁদছে। আর কান্না’টা খুশির কান্না। ভালোবাসা ফিরে পাওয়ার কান্না। ফাইজা ফারদিনের ভেজা শার্ট’টা খামচে ধরে কান্না করতে করতে বলে উঠলো…..

–আমি ও ভালো নেই আপনাকে ছাড়া। বিশ্বাস করুন বাবা-মায়ের এইভাবে চলে যাওয়া’টা আমি কিছুতে’ই মেনে নিতে পারছিনা। আমি ভেঙে গেছি। খুব বাজে ভাবে ভেঙে গেছি। নিজেকে নতুন করে গড়ে তোলার শক্তি, ক্ষমতা, আত্মবিশ্বাস নেই আমার। ও তো আমাকে মে’রে ফেলতে পারতো। ওর শত্রু’তা আমার সাথে। তাহলে, কেনো আমাকে এতিম করে দিলো…..

বলেই আবারো কাঁদতে লাগলো। ফারদিন প্রতিউওরে কিছুক্ষন চুপ থেকে শান্ত কন্ঠে বললো……

–আন্টি আংকেল আর কোনো দিন ফিরে আসবে না। এই কঠিন সত্য’টা একদিন সবাই’কে মেনে নিতে হবে। কিন্তু আমি শুধু তোমাকে একটা কথা দিতে পারি। আন্টি আংকেল’কে যারা নির্মম ভাবে তোমার থেকে কেড়ে নিয়েছে তাদের দুজন’কে আমি ভয়ানক মৃ’ত্যু দিব। তোমার চোখের সামনে……..

ষ্টির বেগ কিছু’টা কমেছে। দুজনেই অনেকক্ষন যাবৎ ভিজছে। দুজন শব্দ’টা শুনে ফাইজা’র কান্না থেমে গেলো। মস্তিষ্ক প্রশ্ন করে বসলো” দুজন কারা?”। প্রশ্ন’টা করার জন্য ফাইজা মুখ খুলতে’ই ফারদিন বলে উঠলো….

–ভেতরে চলো। আগে ফ্রেশ হয়ে নেও। নয়তো শরীর খারাপ হবে….

;বলে ওর হাত ধরে ভেতরে নিয়ে আসলো। এতক্ষন নিজে ভিজে গেছে। নিজের শরীরের কথা একবার ও ভাবে’নি অথচ এখন কি সুন্দর নিজের ভালোবাসার মানুষ’টার কথা আগে ভাবলো। ভাবতে’ই নিজের অজান্তে ফাইজার মুখে হাসি ফুটলো। এই মানুষ’টা ও’কে সত্যি বড্ড বেশি ভালোবাসে। ভেতরে এসে প্রথমে ফাইজা ফ্রেশ হয়ে কিচেনে চলে গেলো। ফারদিন ফ্রেশ হয়ে জেহেরের থেকে টি-শার্ট আর টাউজার পড়েছে। চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে ফাইজা দুই মগ ধোয়া উঠা কফি হাতে দাড়িয়ে আছে। ফারদিন’কে দেখে’ই মগ দুটো ট্রি-টেবিলে রেখে ওর দিকে এক গ্লাস পানি হাতে এগিয়ে আসলো। তারপর একটা ওষুধ ফারদিনের হাতে দিয়ে খেয়ে নিতে বললো। এটা জ্বরের ওষুধ। ফারদিনের শরীর প্রচন্ড গরম। সাথে চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। ফারদিন হালকা হেসে আপত্তি না করে ওষুধ’টা খেয়ে নিলো। ফাইজা ওষুধ’টা দিয়ে পেছনে ফিরে সামনে আগানোর জন্য পা বাড়াতে’ই ফারদিন ওর হাত ধরে ফেললো। হঠাৎ হাত ধরায় ফাইজা ফারদিনের দিকে ভ্রু কুচকে তাকা’তেই ফারদিন ও’কে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলে উঠলো….

–চুল দিয়ে পানি পড়ছে সে খেয়াল আছে। কতক্ষন বৃষ্টি’তে ভিজেছো তারপর এখনো চুল ভেজা। শরীর মারাত্মক খারাপ করবে। একটু ও চিন্তা নেই নিজের জন্য তাইনা……

বলে’ আলতো হাতে যত্নসহকারে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছে দিতে লাগলো। আর ফাইজা অশ্রু মাখা চোখে তাঁকিয়ে আছে ওর দিকে। এই ছেলে’টাকে এই কয়েকদিন কষ্ট দিয়েছে ভাবতে’ই ওর বুক ফে’টে যাচ্ছে কষ্টে। ফারদিন চুল মুছিয়ে ফাইজার দিকে তাঁকাতে’ই ওর চোখে জল দেখে অস্থির কন্ঠে বললো…

–কাদঁছো কেনো? খারাপ লাগছে? মাথা ব্যাথা করছে?

ফাইজা প্রশ্নের উওর না দিয়ে ফারদিন’কে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো…..

–এত বেশি ভালোবাসেন কেনো বলেন তো?

ফাইজার প্রশ্নে ফারদিন শব্দ করে হেসে ওর কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে বলে উঠলো…..

–তুমি আমার বেঁচে থাকার ওষুধ। তোমাকে ভালো না বাসলে বেঁচে থাকব কি করে জান?

ফারদিনের কথায় ফাইজা ওর দিকে ঘোর লাগা চাহনি দিয়ে অন্যরকম স্বরে বললো….

–আপনার গালে একটা চুমু খেতে পারি মিস্টার অভদ্র…..

ফাইজার কথা শুনে ফারদিন বাঁকা হেসে ভ্রু নাঁচিয়ে বলে উঠলো…..

–তুমি চাইলে অন্য জায়গায় ও চুমু খেতে পারো জান……

বলে ঠোঁটের দিকে ইশারা করলো। ফাইজা মুখ চেপে হেসে পরম আবেশে ফারদিনের গালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। ফারদিন তো আর থেমে থাকার ব্যাক্তি না সে একে একে ফাইজার দুই গালসহ কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। তারপর ফাইজা’কে নিয়ে ধপ করে সুয়ে পড়লো। ফাইজা’কে বুকের মধ্যে চেপে ধরে বলে উঠলো…..

–কয়েকদিন শান্তি’তে ঘুমাতে পারি’নি জান। তাই আজ নো সাউন্ড। আমি তোমাকে বুকে জড়িয়ে শান্তি’র ঘুম চাই।

ফারদিন আকুল আবেদনে ফাইজা আর আপত্তি না করে ওর বুকে চুপ’টি করে মাথা রেখে চুপ করে রইলো। মস্তিষ্ক ভুলে যাওয়া প্রশ্ন’টা মনে করিয়ে দিতে’ই ফাইজা ফট করে প্রশ্ন করে বসলো……

–আপনি তখন দুজন কেনো বললেন? কে আছে তিথীর সাথে?

ফারদিন চোখ বন্ধ করেই শান্ত কন্ঠে উওর দিলো…..

–যাকে বেস্ট ফ্রেন্ড ভেবে ভাই এর মতো সম্মানীয় আসন দিয়েছিলাম। সেই বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে আমার সাথে। আমার জানের দিকে হাত বাড়িয়েছে। আমাকে’ই জোর গলায় বলেছে “ও আমার জান’কে ভালোবাসে”।

ফাইজা থম মে’রে আছে। কি বলছে এগুলা? মনে মনে একটাই নাম ভেসে আসলো” নিরব ভাইয়া “। যে মানুষ’টা ফারদিনের অনুপস্থিতিতে আমাকে আগলে রেখেছিলো। সেই, মানুষ’টা কি করে এত’টা খারাপ হবে?

#চলবে