গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব-৩৬+৩৭ + বোনাস পর্ব

0
315

#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_ছত্রিশ [Mehendi_special]

সময় সময়ের তালে বয়ে চলেছে। সব বিষন্নতা কষ্ট ভুলে শুরু হতে চলেছে নতুন অধ্যায়। আজ ফাইজা আর ফারদিনে’র মেহেন্দী। দুজনের মেহেন্দীর অনুষ্ঠান ফারদিনের বাড়ি’তে’ই আয়োজন করা হয়েছে। গায়ে হলুদ মেহেন্দী দুই’টাই ফারদিনের বাড়ি’তে হবে। আর বিয়ে’টা দুজনের বাড়িতে। ফারদিন আজ সাদা আর কালো কম্বিনেশনে পাঞ্জাবী পড়েছে। চুল গুলো শ্যাম্পু করায় আরো বেশি সিল্কি হয়ে গেছে। হাতে একটা কালো ঘড়ি। মুখে রয়েছে সেই ভুবন ভুলানো হাসি। যা দেখে কোনো মেয়ে ক্রাশ খেলেও খেতে পারে। জেহের ও ফারদিন’কে আজ মনে হচ্ছে জমজ ভাই। দুজনেই সেম ড্রেস,ঘড়ি,জুতা। ওরা দুজন সব ঠিক ঠাক সাজানো হয়েছে কিনা তা তদারকি করছে। উপরের রুমে সাজানো হচ্ছে ফাইজা’কে। ফাইজা সিল্কের একটা সাদা শাড়ি পড়েছে। সাথে তাজা লাল গোলাপ ফুলের গহনা। মুখে হালকা সাজ। দেখতে বেশ মিষ্টি লাগছে। কাকতালীয় ভাবে আজ আরজা’কেও ফাইজা’র মতো সাজানো হয়েছে। সেদিনের পর আরজা আর জেহের সামনে আসে’নি। জেহের কয়েকবার গিয়েছিলো ওদের বাড়ি। কিন্তু, আরজা জেহেরের সামনে আসে’নি। আজ যত’ই হোক বেস্ট ফ্রেন্ড এর মেহেন্দী না এসে কি থাকা যায়। আরজা প্রথমে আসতে রাজি হয়’নি৷ কারন, জেহের’কে দেখে নিজেকে সামলাতে পারবে না। কিন্তু, ফাইজা তো আর শুনবার পাত্রী নয়। পার্লার থেকে লোক এসে ওদের সাজিয়ে দিয়েছে। আরজা প্রথমে বুঝতে পারে’নি। সাজানোর আগে অনেক বার বারন করেছে। কিন্তু কেউ শুনে’নি। তাই সাজানো শেষ হতে’ই ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে নিজের সাজ দেখে মুখ হা করে অবাক স্বরে বলে উঠলো…..

—আজ কার মেহেন্দী। আমার নাকি তোর তাই তো বোঝা যাচ্ছে না। সবাই তো ভাববে আমাদের দুজনের এই বিয়ে?

আরজার কথা শুনে ফাইজা মুখ টিপে হেসে জবাব দিলো…..

— হ্যা, দুজনের এই তো বিয়ে…..

এইটুকু বলেই মুখে হাত দিয়ে থেমে গিয়ে মনে মনে বলে উঠলো….

–এই রে এক্ষুনি সত্যি ফাঁস হয়ে যাচ্ছিলো৷ ভাইয়া আমাকে গনোধোলাই দিবে। ফাইজা, কন্ট্রোল কন্ট্রোল……

ফাইজা পূর্নরায় কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরজা সন্দিহান দৃষ্টি’তে ফাইজার দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলো…..

–থেমে গেলি কেনো? দুজনের বিয়ে মানে?

এইবার ফাইজা থতমত খেয়ে আমতা আমতা করে বললো…..

–ইয়ে হ্যাঁ। মানে না। ধুর হ্যাঁ, দুজনের এই তো বিয়ে আমার আর উনার।

বলেই লাজুক হাসলো ফাইজা। এই প্রথম ফাইজা ফারদিন’কে উনি বলে সম্মোধন করলো। এতে আরজা চোখ বড় বড় তাঁকিয়ে থেকে বললো…..

–আরে বাহহ। উনি আহা কি মধুর প্রেম। দোয়া করি তোরা সারাজীবন এমন করে’ই সুখে থাক।

বলতে’ই আরজার গলা আটকে এলো। চোখে জল এসে ভীড় করলো। বুকের ভেতর’টা চে’পে আসলো। অসহ্য যন্ত্রনা অনুভব হতে লাগলো। আজ যদি জেহের ও আমাকে ভালোবাসতো তাহলে আমাদের বিয়ে’টাও এত’টাই সুখের হতো। এইটুকু ভেবে’ই আরজা চোখের জল লুঁকাতে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। আর ফাইজা ওর দিকে অসহায় চোখে তাঁকিয়ে থেকে বলে উঠলো…..

–আমি জানি তুই অনেক কষ্ট পাচ্ছিস। ভাইয়া’টা কেনো তোকে এত’টা কষ্ট দিচ্ছে কে জানে? তবে বিয়ের দিন যেই সারপ্রাইজ’টা পাবি সেদিন তোর সব দুঃখ ঘুঁচে যাবে…….

বলে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো।
____________________________________________
আরজা সিড়ি সামনে এসে নিচে তাঁকিয়ে থেমে গেলো। জেহের’কে আজ কি সুন্দর লাগছে। মুখের হাসি’টা মন কেড়ে নেওয়ার মতো। আরজা ওর দিকে তাঁকিয়ে আনমনে বলে উঠলো…..

–কি হতো আমাকে একবার ভালোবাসলে জেহের ভাইয়া? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আপনাকে ছেড়ে আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না।

বলতে না বলতে ওর চোখ বেয়ে শ্রাবন ধারা নামতে শুরু করলো। কাঁধে কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে আরজা তাড়াতাড়ি চোখের জল মুছে মুখে হাসির রেখা টেনে পেছনে তাকালো। ফাইজা’কে দেখে মুখের হাসি’টা চওড়া করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কোথা থেকে তনুজা এসে তাড়া দিয়ে বলে উঠলো….

–তোরা এখনো এখানে দাড়িয়ে কেনো? ওইদিকে সবাই বসে আছে তোদের জন্য। তাড়াতাড়ি চল….

বলেই ওদের দুজন’কে নিয়ে নিচে নামতে লাগলো। আরজা’কে না চাইতেও মুখে হাসি ধরে রাখতে হচ্ছে।
____________________________________________
ফারদিন আর জেহের পাশাপাশি বসে আছে। স্টেজের সোফায়৷ চারদিকে নানা রকম ফুল বাতি দিয়ে সাজানো। সিড়ি দিয়ে ফাইজা আর আরজা দুজন’কেই নামতে দেখে ওরা দুজনে’ই হাবলার মতো চেয়ে রইলো। ফাইজা নিচে নেমে এসে ফারদিনের দিকে তাঁকাতেই ফারদিন হাত দিয়ে ওয়াও দেখালো। ফাইজা লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে উঠলো। ফারদিনের বরাবর অন্য একটা স্টেজে সোফা বিছানো। সেখানে আরজা আর ফাইজা’কে পাশাপাশি বসানো হলো। ওরা সবাই বসতে’ই জেহের মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করলো…….

–আজ সবাই’কে আরেক’টা খুশির খবর দিতে চাই। আমরা ভাই বোন মিলে একটা ডিসিশন নিয়েছি যে, আমরা দুজনে এক সাথে দুজনের ভালোবাসার মানুষ’টাকে বিয়ে করব। আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন আমার কথা। মানে আজ আমার ও মেহেন্দীর অনুষ্ঠান হবে……

জেহের কথা শেষ হতেই চারদিকে কড়ো-তালির শব্দে মুখরিত হতে লাগলো। আরজা যেনো আকাশ থেকে পড়লো। মুহূর্তে’ই চারদিক ঘূর্নিপাকের মতো ঘুরতে লাগলো। গলায় এসে নিঃশ্বাস আটকে রইলো। চারপাশের কোনো শোরগোল ওর কান অব্দি পৌঁছালো না। কিছু সময়ের জন্য ও নিথর পাথরে পরিনত হলো। আরজা’কে নিস্তব্ধ দেখে জেহের ফাইজা’র দিকে অসহায় চাহনী দিতে’ই ফাইজা চোখের ইশারায় কিছু বুঝালো। তারপর আরজা’কে ধাক্কা দিয়ে খুশি মনে বলে উঠলো……

—কিরে তুই চুপ করে গেলি কেনো? আমার যে কি খুশি লাগছে। তোর খুশি লাগছে না।

ফাইজা’র কথায় আরজা নিজের ধ্যানে ফিরে এসে হকচকিয়ে বলে উঠলো….

–হ্যাঁ, খুশির খবর তো। আমার ও খুব খুশি লাগছে। দুটো বিয়ে খাবো……..

চেষ্টা করেও মুখে হাসি ফুটাতে পারলো না আরজা। ভেতরে যেই ঝড় বইছে তা কি করে বুঝাবে ও সবাই’কে। এই যন্ত্রনা বুঝার মতো কেউ নেই ওর। নিজের চোখের সামনে নিজের ভালোবাসার মানুষ’টাকে অন্যের সাথে বিয়ের পিরিতে বসতে দেখতে হবে। এই মৃ/ত্যু যন্ত্রনা ও কি করে সহ্য করবে? সব যন্ত্রনা ভেতরে চে’পে রেখে মুখে হাসি ফুটিয়ে শুরু করলো মেহেন্দী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান শুরু হলো ফারদিন আর ফাইজা’র কাপল ডান্স দিয়ে।

“Tumko paya hai to ”
jaise khoya hoon
kehna chahoon bhi
to tumse kya kahoon”

গান’টায় বেশ রোমান্টিক একটা ডান্স হলো ফারদিন ফাইজা’র। নাচ শেষ হতে’ই আরজা নিজেই ফাইজার হাতে খুব সুন্দর করে মেহেদী লাগিয়ে দিতে লাগলো। হাতের মাঝে ফারদিনের নামের অক্ষর’টা বসিয়ে দিলো। ফাইজা’র মেহেদী দেওয়া শেষ হতে’ই আরজা ফারদিনের হাতে মেহেদী লাগিয়ে দিলো। আর ওদের কিছু কাজিন আত্মীয় স্বজন মিলে গান বাজনা নাচে ব্যস্ত। সবাই মিলে তা উপভোগ করছে। ফারদিনের হাতে মেহেদী লাগানো শেষ হতে’ই আরজা স্টেজ থেকে নামার জন্য পা বাড়াতে’ই জেহের বলে উঠলো…..

–আজ তো আমার মেহেন্দী। তাহলে আমাকেও মেহেদী লাগিয়ে দাও তো বাচ্চা।

জেহের কথা শুনে আরজা ভেতর থেকে ভেঙে গেলেও মুখে চওড়া একটা হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো……

—হ্যাঁ দিচ্ছি জেহের ভাইয়া।

বলেই বুকের ভেতরে চা’পা যন্ত্রনা জেহেরের জাতে মেহেদী লাগিয়ে দিতে লাগলো। শেষ পর্যায়ে জেহের হাতে পিয়াঙ্কা নামের অক্ষর লিখতে গেলে জেহের বাধা দিয়ে বলে উঠলো…..

–আরে আরে কি করছো? “পি” লিখছো কেনো?

জেহের এই প্রশ্নে আরজা অবাক হয়ে জবাব দিলো
..

–আপনার ভালোবাসার মানুষ’টার নাম তো পিয়াঙ্কা তাই “পি” লিখছি…

এইবার জেহের একটু বিরক্ত নিয়ে উওর দিলো…..

–তোমাকে কে বলেছে এক লাইন বেশি বুঝতে। ওর ডাক নাম পিয়াঙ্কা কিন্তু আসল নাম “এ” দিয়ে তাই “এ” লিখো……

এইবার আরজার বুক’টা খানিক’টা কেঁপে উঠলো। নিজের নামের অক্ষর’টা জেহের হাতে লিখতে ওর বুক কাঁপছে। কি আশ্চর্য নামের অক্ষর এক কিন্তু মানুষ দুটো ভিন্ন। এইটুকু ভেবে একিটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে জেহেরের হাতে সুন্দর করে “Aj” লিখে দিলো। মেহেদী দেওয়া শেষ হতে’ই আরজা নিচে নেমে সবার সাথে নাচে যোগ দিলো। চারদিকে সাউন্ডবক্সে গান বাজচ্ছে।
“mehendi hai Rachne waali”
haathon mein gehri lali”

গান’টা বাজছে। আর আরজা তালে তালে সবার সাথে নেচে যাচ্ছে। জেহের মুগ্ধ নয়নে ওর দিকে তাঁকিয়ে আছে।
____________________________________________
সবার চোখের আড়ালে ফারদিন এসে ফাইজা’র হাত ধরে লুঁকিয়ে উপরে নিজের রুমে নিয়ে আসলো। এক হাত দিয়ে দরজা’টা বন্ধ করে ফাইজা’কে দরজার সাথে চে’পে ধরে মুগ্ধ নয়নে ওর দিকে তাঁকিয়ে রইলো। আর ফাইজা হা করে বলে উঠলো…..

–দিদা যদি দেখেছে আমরা একসাথে আপনাকে…..

আর বলতে পারলো না তার আগেই ফারদিন ফাইজা’র ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। ডিপলি একটা চুমু খেয়ে নেশাময় কন্ঠে বলে উঠলো…..

–অর্ধেক পাগল তো আগে’ই করে দিয়েছিলে। এখন কি পুরো পা’গল করার ধান্দায় নেমেছো জান…..

বলে ফাইজা’র গলায় মুখ ডুবালো। ফাইজা মুহূতে’ই আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো। দুই হাত মেহেদী ভর্তি। তাই চাইলেও ফারদিন’কে সরাতে পারছে না।আর ফারদিন সে তার প্রেয়সীর শরীরের ঘ্রানে ব্যস্ত………

#চলবে

#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্বঃসাইত্রিশ[প্রথমাংশ]
[Holud Special]

হলুদ লেহেঙ্গার সাথে লাল আর হলুদ কম্বিনেশনে গহনা পড়েছে ফাইজা। খোলা চুলে সৌন্দর্য দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। ফারদিনের আবদারে চুল খোলা রাখতে হয়েছে। আরজা আজো ফাইজার মতো সেম কালার লেহেঙ্গা আর গহনা পড়েছে। কিন্তু ওর চুল গুলো স্টাইল করে বেনুনী করে বাধা আর বিভিন্ন রঙিন ক্লিপ লাগানো চুলে। আরজা’কেও দেখতে খুব মিষ্টি লাগছে। কাল অনুষ্ঠান শেষে ফাইজা জোর করে আরজা’র হাতে মেহেদী পড়িয়ে দিয়েছিলো। হাতের মাঝে [AJ] খুব সুন্দর করে লিখে দিয়েছে। এতে অবশ্য আরজা’র খটকা লাগে’নি কারন আরজা যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে তার নাম ও J দিয়ে। আরজা’র মুখে আজ চওড়া হাসি। মনে হচ্ছে সব কিছু ঠিক ঠাক আছে আজ। খুব সহজে’ই মেনে নিয়েছে সব আরজা। কেনো যেনো এই ব্যাপার’টায় জেহেরের খটকা লাগছে। জেহের, ফারদিন আজ বাসন্তী আর লাল কম্বিনেশনে পাঞ্জাবী পড়েছে। হাতে আজ সিলভার কালার ঘড়ি। ফারদিন সব কিছুর তদারকি করছে আর জেহের মন ম’রা হয়ে এক কোনে চেয়ারে বসে বসে ভাবছে…..

–একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে। আমার ড্রামাকুইন’টা খুব কষ্ট পাচ্ছে। মুখের হাসি বিলিন হয়ে গেছে। চঞ্চল মেয়ে’টা শান্ত হয়ে গেছে। বিশ্বাস করো, আমার ও তোমাকে এই অবস্থায় দেখতে কষ্ট হচ্ছে খুব। কিন্তু, জানো তো, কষ্টের পর স্বস্তি আছে। আর এটা তোমার শাস্তি। কি শাস্তি জানো, আমাকে ভালোবেসেও অন্য একজনের সাথে টাইম পাস করার শাস্তি…….

কাঁধে হাতের স্পর্শ পেয়ে জেহের হকচকিয়ে উঠে ঘুরে তাঁকিয়ে দেখে আরজা’র মা দাড়িয়ে আছে। আরজা’র মা’কে দেখে’ই জেহের দাড়িয়ে পড়ে সালাম দিয়ে অন্য একটা চেয়ার তার দিকে এগিয়ে দিলো বসার জন্য। আরজার মা বসতে বসতে জেহের’কেও বসার জন্য ইশারা করলো। জেহের মাথা নিঁচু করে শান্ত কন্ঠে বললো….

–আমাকে ক্ষমা করবেন আন্টি। আমি জানি আমি আপনাদের মেয়ে’কে খুব বেশি কষ্ট দিচ্ছি। আর মাত্র একটা দিন তারপর আর কোনোদিন আপনার মেয়ে’কে কষ্ট দিব না আন্টি প্রমিস…

জেহেরে’র নিঁচু স্বর শুনে আরজা’র একটু হেসে জেহের’কে বলে উঠলো……

–আমি জানি বাবা তুমি আমার মেয়ে’কে খুব বেশি ভালোবাসো। আর, এই সারপ্রাইজ’টা পেয়ে আমার মেয়ে তোমার উপর রেগে থাকতে’ই পারবে না। আমি তো শুধু তোমার সাথে কথা বলার জন্য আসলাম।

আরজা’র মায়ের কথায় জেহের এইবার স্বস্তির হাসি হাসলো। ভেবেছিলো মেয়ের কষ্টে হয়তো উনারা ও কষ্ট পাচ্ছে। তাই আগেই অনুতপ্ত হয়ে কথা গুলো বলেছে।
___________________________________________
তনুজা আর সায়মা খানম মিলে ওদের দুজন’কে নিয়ে নিচে নামলো। হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হলো। আজো কালকের মতো আরজা আর ফাইজা এক সোফায় আর ফারদিন জেহের এক সোফায়। জেহের’কে আজ খুব সুন্দর লাগছে। না চাইতেও আরজা’র চোখ বার বার ওই দিকে যাচ্ছে। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে ফারদিন মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে সবার উদ্দেশ্য হাসি মুখে বলে উঠলো…..

–আজ অনুষ্ঠান শুরু হবে আমার একমাত্র শা’লিকার একটা মন মাতানো গান দিয়ে সাথে সুর মেলাবে তার ওয়ান এন্ড অনলি জিজু ফারদিন। সবাই রাজি তো……..

ফারদিনের কথা শুনে সবাই এক সাথে কড়ো তালি দিয়ে চেঁচিয়ে উঠে সম্মতি জানালো। আর আরজা অস্বস্তি’তে পড়েছে। গান’টা ও বরাবর খুব ভালো গায়। ছোট বেলা থেকে’ই গানের প্রতি জোঁক বেশি ওর। গান ও শিখেছে কয়েক বছর। কিন্তু অনেক দিন গানের সাথে ওর দেখা সাক্ষাত নেই। এই মুহূর্তে কি গান গাইবে তা নিয়ে খুব বেশি ভাবনায় পড়ে গেলো। ফারদিন স্টাইল করে গিয়ে আরজার দিক্ব হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠলো……

–কাম ইন মাই হাফ-ঘাড়ওয়ালি…..

সবাই আরেকবার করোতালি দিয়ে উঠলো। আরজা’র অস্বস্তি নিয়ে ফারদিনে’র হাত ধরে স্টেজ থেকে নেমে এলো। মাইক্রোফোন’টা হাতে নিয়ে জেহেরের দিকে একবার নজর দিলো। জেহের এক দৃষ্টি’তে ওর দিকে তাঁকিয়ে আছে তা দেখে তাড়াতাড়ি আরজা দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। ফারদিনের কাছে গানের’ নাম’টা বলতে’ই ফারদিন অসহায় ফেস করে ফিসফিসিয়ে আরজা’র কানে বললো…..

–আজ এত সুন্দর একটা দিনে তুমি এই ছ্যাকা খাওয়া মার্কা গান গেয়ে সবাই’কে ইমোশনাল করে দিবে তো শা’লিকা…….

ফারদিনের কথা আরজা স্বশব্দে হেসে উঠলো। দুষ্টুমি ভঙ্গিমাতে বলে উঠলো….

–আমি তো আর আমার জিজুর মতো রোমান্টিক নই যে রোমান্টিক গান গেয়ে সবাই’কে রোমান্টিক বানিয়ে দিব। এই দায়িত্ব’টা বরং আমার জিজুর থাকুক আর আমি না হয় দুঃখ বিলাশ করার জন্য এই গান’টাই গাইলাম……..

আরজার এহেতুক কথা শুনে ফারদিনের মুখ’টা চুপসে গেলো। উওর দেওয়ার শব্দ খুঁজে পেলো না। হাফ ছেড়ে বললো…..

–যথা আজ্ঞা। আপনি যাহা বলিবেন তাহা’ই হইবে…..

বলে দুজনে’ই একসাথে হেসে উঠলো। আরজা’র কথা মতো ফারদিন গিটারে সুর তুলতে লাগলো। আর আরজা মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে গান’টা শুরু করতে যেয়েও কয়েকবার থেমে গেলো। ওর বুকের ভেতরে সুনামি শুরু হয়েছে। এলোমেলোহীন ঢৈউ এসে বার বার তীরে আছড়ে পড়ছে। চোখের পাতা দুটো নোনা জল দ্বারা ভারী হতে লাগলো। তাও মুখে হাসি ফুটিয়ে জেহেরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গাইতে শুরু করলো……

“তুমি যাকে ভালোবাসো”
স্নানের ঘরে বাষ্পে ভাসো
তার জীবনে ঝড়…

তোমার কথায় শব্দ দূষন
তোমার গলার স্বর
আমার দরজায় খিল দিয়েছি
আমার দারুন জ্বর

তুমি অন্য কারোর সঙ্গে বেঁধো ঘর….
তুমি অন্য কারোর সঙ্গে বেঁধো ঘুর….

এইটুকু গেয়ে থেমে গেলো ওর গলার স্বর আটকে আসচ্ছে। বুকের ভেতর চে’পে আসচ্ছে। জেহেরের দিকের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অন্য দিকে দিয়ে আবার গাইতে শুরু করলো…….

তোমার নৌকোর মুখোমুখি আমার সৈন্য দল
বাঁচার লড়াই…..

আমার মন্ত্রী খোয়া গেছে
একটা চালের ভুল
কোথায় দাড়াই……?

কথার উপর কেবল কথা
সিলিং ছুঁতে চায়..
নিজের মুখে আয়না আদল
লাগছে অসহায়….

তুমি অন্য কারোর ছন্দে বেঁধো গান….
তুমি অন্য কারোর ছন্দে বেঁধো গান……

এইটুকি গেয়ে আর গাইতে পারলো না আরজা। চোখ থেকে নেমে এলো অথৈজল। চোখের নোনা জল সবার থেকে আড়াল করার জন্য গান’টা এইটুকু গেয়েই দৌড়ে অন্য দিকে চলে গেলো। আরজা’কে ওমন ভাবে দৌড়ে যেতে দেখে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে আছে। আর জেহের নিস্তব্দ হয়ে মাথা নিঁচু করে আছে। ওর চোখ থেকেও টুপটাপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে। ফারদিন অসহায় চোখে ফাইজা’র দিকে তাঁকাতে’ই দেখলো ফাইজা’র চোখেও জল। ফারদিন তাড়াতাড়ি পরিস্থিতি সামলানোর জন্য চেঁচিয়ে বলে উঠলো…..

–আমার শা’লিকার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স এর জন্য একটা হাত তালি অবশ্যই প্রয়োজন………

ফারদিনের কথায় সবাই এক সাথে হাত তালি দিয়ে উঠলো। কেউ কেউ শিষ বাজালো। নিরবতা কেটে গেলো সাউন্ড বক্সের গানে। ফাইজা স্টেজ থেকে নেমে আরজা পেছন পেছন গেলো। আরজা এক কোনে দাড়িয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ফাইজা গিয়ে আরজার কাঁধে হাত রাখতে’ই আরজা আচমকা ফাইজা’কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। ফাইজা কি বলে স্বান্তনা দিবে খুঁজে পাচ্ছেনা। নিজেকে অপরাধী লাগছে। কাল আরজা’র কষ্ট দেখতে না পেরে অর্ধেক সত্যি’টা আরজা’কে বলে দিয়েছিলো। আরজা’কে বলে ছিলো জেহের কাউকে ভালোবাসেনা। আর বিয়েও অন্য কাউকে করবেনা। আর এটা বলেছে একটু অপেক্ষা কর তোর জন্য বিরাট একটা সারপ্রাইজ আছে। আরজা ফাইজা’র কথা ভাবার্থ পুরো বুঝতে পারেনাই। তাই আরজা কষ্ট পাচ্ছে কারন জেহের আরজা’র থেকে দূরে দূরে থাকছে তাই। আরজা কাঁদতে কাঁদতে বললো……

–জেহের ভাইয়া কেনো আমাকে কষ্ট দিচ্ছে ফাইজু। আমার সত্যি অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে। এর থেকে ম’রে যাওয়া ও বোধহয় ভালো। আমার ম’রে যেতেই ইচ্ছে করছে……

ফাইজা এইবার রেগে আরজা’কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলে উঠলো….

–ম’রে যাবি তাইনা। কেনো ম’রে যাবি। কেনো এত কষ্ট পাচ্ছিস?

এইবার আরজা চুপ করে গেলো। আরজা কখনো ফাইজা’কে বলে’নি ও জেহের’কে ভালোবাসে। তাও কাল ফাইজা নিজেই বলেছিলো আরজা’কে অর্ধেক সত্যি। আজো আরজা’র নিশ্চুপ থাকা’টা ফাইজা মেনে নিতে পারছেনা। আরজা কথা এড়িয়ে যেতে চোখের জল মুছে নিয়ে বললো……

–গান গাইতে গাইতে আমি বেশি ইমোশনাল হয়ে গেছি ফাইজু। কি বলতে কি বললাম এইসব নিয়ে ভাবিস না। চল চল ওইদিকে সবাই কি ভাবছে কে জানে? তাড়াতাড়ি আয়……

বলে আরজা সামনে পা বাড়ালো। আর ফাইজা ওর দিকে তাঁকিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে বললো…..

—কাল তোর সব দুঃখ,যন্ত্রনা ঘুঁচে যাবে। আমার ভাই’টা ও কষ্ট পাচ্ছে। তাও কেনো এমন করছে কে জানে? হয়তো কিছু সারপ্রাইজ এমন বিষাদময় হয়…….

বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেও পা বাড়ালো সেদিকে।
আরজা স্টেজের সামনে এসে জেহের চুপসানো মুখের দিকে তাঁকিয়ে নিজে নিজে’ই হালকা হেসে বললো……

–ভালোবাসারা থাকুক হৃদয়ে লুকায়িত…
প্রকাশ হোক অশ্রুধারার বিষাদিনী যন্ত্রনা…….

#চলবে

#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_সাইত্রিশ[শেষাংশ]
[Holud special]

ফাইজার মুখের উপর ফারদিনের গরম নিশ্বাস পড়ছে। অনুভূতি’তে বুকের ধুকপুকানি বেড়ে চলেছে। ফারদিনের থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর জন্য মুচড়া-মুচড়ি করে যাচ্ছে ফাইজা। আর ফারদিন সে এক ধ্যানে তাঁকিয়ে আছে তার প্রেয়সীর দিকে। হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার সাথে সাথে ফারদিন’ ও’কে টেনে নিয়ে আসে। সেই থেকে এক নজরে তাঁকিয়ে আছে ওর দিকে। এতে ফাইজা’র অস্বস্তি যেনো বেড়ে চলেছে। ফাইজা এইবার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে প্রশ্ন করে বসলো…….

–কি সমস্যা আপনার? যখন তখন টানাটানি শুরু করেন। এখন কিছু বলেন না। খালি হা করে তাঁকিয়ে আছেন…..

ফারদিন উওর না দিয়ে ফাইজা’র নাকে নাক ঘষলো। অনুভূতি’তে এইবার ফাইজা ফারদিনের পাঞ্জাবি খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে নিলো। ফাইজা’র চোখের পাতা কাঁপছে। ঠোঁট গুলো তিরতির করছে। এতে ফারদিনের নেশা যেনো দ্বিগুন বেড়ে গেলো। কপালে হলুদ লাগানো দেখে মুখ’টা হলদে হয়ে আছে দেখতে বেশ মায়াবী লাগছে। ফারদিন ঘোর লাগা কন্ঠে বললো……

–আমার বউ’টাকে যদি আমি হলুদ না লাগাতে পারি তাহলে পুরো হলুদ অনুষ্ঠান অসম্পন্ন রয়ে যাবে তো…….

ফাইজা এখনো চোখ বন্ধ করে রয়েছে। ফারদিন পাশের টেবিল থেকে হলুদের বাটি নিয়ে ফাইজা’র দুই গালে, নাকের মাথায় লাগালো। তারপর নিজেই ফাইজা’র গালে গাল ঘষলো। ফারদিনের হালকা দাড়ির খোচা ফাইজার গালে লাগতে’ই আরো বেশি খামচে ধরলো ফারদিনের বাহু। ফাইজা’র অবস্থা দেখে ফারদিন মুখ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। ফাইজা হালকা কাঁপছে। তা দেখে ফারদিন ফাইজা’র দিকে ঘনিষ্ঠ হয়ে বলে উঠলো…..

–আজকে এত বেশি কাঁপা-কাঁপি করো না জান। কিছু’টা না হয় আমাদের ফুলশ….

বলতে পারলো না তার আগে’ই ফাইজা ফারদিনের মুখ চে’পে ধরলো। ফারদিন না থেমে ফাইজা’র হাতে চু’মু খেলো। ফাইজা রাগী চাহনী দিয়ে বললো…….

—মুখ সামলা’তে শিখুন। আর কেউ যদি এখন এসে আমাদের দেখে কি হবে ভাবুন তো?

ফারদিন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো……

–এখন থেকে মুখ সামলানো শিখব কেনো? বরং বেশি বলব কারন এখন থেকে তুমি আমার বউ। আর কেউ দেখলে দেখবে তাতে আই ডোন্ট কেয়ার। আমার বউ, আমার মুড, আমি রোমান্স করব তাতে কার বাবার কি বলো তো? আমি পারলে তো এক্ষুনি…….

বলে থেমে গেলো। সশব্দে হেসে ফাইজা’র নাকে নাক ঘষলো পূর্নরায়। ফাইজা’র গাল দুটো দুই হাতে আকড়ে ধরে ফাইজা’র কপালে কপাল ঠেকালো। নেশাময় কন্ঠে বললো……

–আর মাত্র কয়েক ঘন্টা তারপর তুমি সারাজীবনের জন্য আমার। শুধু আর শুধুমাত্র আমার জান। উপর ওয়ালা ছাড়া কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবেনা জান।

ফাইজা এইবার আদুরে হয়ে উঠলো। ভালো লাগা এক আবেশে ছেয়ে গেলো অঙ্গ-প্রতঙ্গ। “ভালোবাসি” বলে আকড়ে ধরলো ফারদিন’কে। ফারদিন ও মিষ্টি হেসে জড়িয়ে নিলো নিজের প্রিয়তমা’কে।
____________________________________________
আরজা চারদিকে ফাইজা’কে খুঁজতে ছিলো। খুঁজতে খুঁজতে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে’ই কারোর হেচকা টানে বিশাল দেহী কারোর বুকে ধাক্কা খেলো। আরজা চোখ মুখ কুচকে রেখেছে ভয়ে। ভেবেছিলো সিড়ি দিয়ে পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু নাকের মধ্যে চেনা পারফিউমের ঘ্রান যেতে’ই আরজা’র বুক’টা কেঁপে উঠলো। শরীরে কম্পন সৃষ্টি হলো। ভয়ে ভয়ে মাথা উঠাতে’ই সামনে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তি’কে দেখে আরজা কয়েকপা পিছিয়ে যেতে নিয়েও পারলো না। জেহের ও’কে শক্ত করে ধরে সামনের দেয়ালের সাথে চে’পে ধরলো। আরজা ভয়ে বার বার ঢোঁক গিলছে। কাঁপা-কাঁপি স্বরে বললো……

-দূরে সরে দাড়ান জেহের ভাইয়া। আমার অস্বস্তি হচ্ছে…..

জেহের ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে আঙ্গুল দিয়ে আরজার গালে স্লাইড করতে’ই আরজা চোখ বন্ধ করে নিলো। জেহের কিছু’টা আরজা’র দিকে ঝুঁকতে’ই আরজা’র হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো। চোখ খুলতে’ই জেহের’কে নিজের এত কাছে দেখে কিছু’টা অবাক হলো। এক নজরে জেহের দিকে তাঁকিয়ে রইলো। জেহের আরজা’র দিকে তাঁকিয়ে মুচকি হেসে আরজার গালের সাথে গাল ঘষে ওর কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে নিমিশেই আরজা’র থেকে দূরে চলে গেলো। সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে আরজা’র দিকে পেছন ফিরে তাঁকিয়ে দুষ্টুমি হাসি দিয়ে নিচে নেমে গেলো। আর আরজা ঠান্ডা বরফ হয়ে দাড়িয়ে আছে। ওর শরীর নিমিশেই বরফে পরিনত হলো। হঠাৎ এহেতুক ঘটনায় আরজা থরথর করে কাঁপতে লাগলো। নিজের লেহেঙ্গা’ জোরে খামচে ধরলো। কল্পনাও করতে পারছেনা জেহের এমন কাজ করতে পারতে। মনের মধ্যে প্রশান্তি বয়ে চললো। খুশিতে মুখে হাসি ফুটলো আরজা’র। চোখ দিয়ে টুপটাপ করে পানি পড়তে লাগলো। আজকের এই নোনাজল খুশির। কষ্টের না। চোখ বন্ধ করে গাল হাত দিয়ে জেহের ছোয়া অনুভব করতে লাগলো।
____________________________________________
রাতে অনুষ্ঠান শেষে সবাই সব কিছু গুঁছিয়ে সুয়ে পড়লো। কিন্তু সবার চোখের আড়ালে ফারদিন জেগে আছে। তার প্রিয়তমা’কে এক নজর দেখার জন্য। আজকের রাত’টা প্রিয়তমা’র সাথে কাটাবে বলে। কিন্তু ফাইজা কোথায় ঘুমিয়েছে ফারদিন নিজেও জানেনা। তাই সবাই সুয়ে পড়তে অন্ধকারে ফারদিন পা টিপে টিপে সবার আগে গেস্ট রুমে ঢুকলো। কারন, ওর জানা মতে ফাইজা আর আরজা দুজনের এই রুমে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রুমের দরজায় হাত রাখতে’ই দেখলো দরজা খোলা। মনে মনে একটু খুশি হলো। মোবাইলের আপসা আলোয় রুমের মধ্যে ঢুকলো। খাটের সামনে যেতে তিন জোড়া পা দেখে ফারদিন ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। জানা মতে দুই জোড়া পা থাকা’র কথা। সবাই পাতলা কম্বল দিয়ে মুড়ি দিয়ে সুয়ে আছে। গরমের মধ্যে কেউ কম্বল গায়ে সুয়ে থাকতে পারে। ভাবতে পারছেনা ফারদিন। এখন কি করে ফাইজা’কে খুঁজে বের করবে? খুব চিন্তায় পড়ে গেলো এইবার। মনে মনে দোয়া দরুদ পড়তে লাগলো একটা উপায় খুঁজে পাওয়ার জন্য। মাথা’র মধ্যে তৎক্ষনাৎ একটা দুষ্টু বুদ্ধি আসলো। ওদের পায়ের সামনে বসে আস্তে আস্তে তিনজনের পায়ে সুড়সুড়ি দিতে লাগলো। পাশের দুইজনের মধ্যে তেমন একটা ভাবান্তর হলো না। মাঝের’টার পায়ে সুড়সুড়ি দিতে’ই আচমকা ফারদিনের মুখে এসে এক লা/থি উড়ে এসে পড়তে’ই ফারদিন হঠাৎ ব্যাথায় “আহ” করে মৃদ শব্দ করে পড়ে গেলো। নাক বরাবর লা’থি’টা এসে পড়েছে। ফারদিন নাক ডলতে ডলতে মিনমিনিয়ে বলে উঠলো……

—ও খোদা এ কার পা’টা উড়ে এসে আমার কপালে ঠেকলো কে জানে? তারে যদি একবার পাই ওর নাক’ আমি ঘু’ষি মে’রে থেতলে দিব। ঠিক করে ঘুমাতে পারেনা নাকি। ঘুমের মধ্যে হাত-পা ছড়ানোর অভ্যাস যদি আমার বউ’টার থাকে আমার কি হবে?

ফারদিনের মুখ’টা এই মুহূর্তে খুব অসহায় লাগছে। এমন সময় পাশের একজন নড়ে উঠতে’ই তার হাত কম্বলের নিচ থেকে বেড়িয়ে এলো। কিন্তু হাত’টা সম্পূর্ণ ঢাকা ওড়না দিয়ে। ওড়না’টা চিনতে পেরে ফারদিনের মুখে হাসি ফুটলো। খুশি মনে উঠে গিয়ে মানুষ’টার মুখ না দেখে’ই জড়িয়ে ধরলো। ফারদিন কম্বলের উপর দিয়ে মুখ অনুমান করে চুমু খেয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো…..

–জান একটু উঠো না প্লিজ। আজকের রাত’টা তুমি আর আমি নির্ঘুম কাটাব। কালকে তো আর সুযোগ পাবোনা। তাই উঠোনা প্লিজ……

ফারদিন বলতে’ই জবাবে কেউ চিকন স্বরে মিনমিনিয়ে বললো….

–নাহ জান আমি উঠতে পারব না….

গলার স্বর’টা অচেনা লাগলো ফারদিনের। পরক্ষনেই মনে করলো হয়তো ঘুমের কন্ঠ তাই অন্যরকম লাগছে। তাই আরো একবার চুমু খেয়ে বললো……

–উঠোনা জান প্লিজ। সবাই জেগে গেলে খুব সমস্যা হয়ে যাবে………

কথা’টা শেষ হতে না হতে’ই রুমে আলো জ্বলে উঠলো। আলো দেখে ফারদিন ধড়ফড়িয়ে উঠে দাড়াতে’ই বিস্ফোরিত কন্ঠে ভেসে আসলো……

–বাহঃ বাহ আপনি আমাকে শেষ অব্দি ঠকালেন। এই রাতের আধারে আপনি মেয়েদের সাথে এইসব করেন। ছিঃ…….

চেনা কন্ঠস্বর শুনে ফারদিন চোখ বড় বড় করে পেছনে তাঁকাতে’ই ফাইজা’কে দেখে ওর হার্ট অ্যাটাক করার অবস্থা। চোখ দুটো রসগোল্লার মতো বড় বড় হয়ে গেলো। একবার খাটের দিকে তো আরেকবার ফাইজা’র দিকে তাঁকিয়ে তোতলানো স্বরে বলে উঠলো……

–তুতুমি এখানে?

ফাইজা এইবার রাগী ফেস করে ফারদিনের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো…..

–হ্যা আমি এখানে। আর আমি এখানে বলেই দেখতে পারলাম আপনার আসল রুপ। কাল আমাদের বিয়ে আর আজ আপনি এইসব করছেন।

বলেই ন্যাকা কান্না শুরু করলো। মুখে ওড়না দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো…..

–এখন আমি সবাইকে মুখ দেখাব কি করে?

বলে কান্নার বেগ বাড়িয়ে নিচে বসে হাত পা ছড়িয়ে বিলাপ করতে করতে কপাল চাপড়ে বলতে লাগলো……

— এ আমার কি সর্বনাশ হলো গো? এখন আমার কি হবে গো? ও খোদা তুমি আমার কপালে এমন একটা স্বামী লিখেছিলে? আমার কি হবে গো?? এখন আমাকে কে বিয়ে করবে গো?

ফারদিন বেচারার কান্না করে দেওয়ার উপক্রম। মুখ দিয়ে শব্দ’ই বের হচ্ছেনা। ফাইজার চিৎকার শুনে জেহের আর দৌড়ে এলো পাশের রুম থেকে। আরজা আর তনুজা দুজনেই ধড়ফড়িয়ে উঠলো। কিন্তু কম্বলের নিচে কে আছে এখনো ফারদিন জানেনা। তনুজা খাটে বসে বসে মিটমিটিয়ে হাসচ্ছে। ফারদিন তাঁকাতেই এমন একটা ভান ধরলো যেনো এখানে কি হচ্ছে সে কিছুনা। তনুজাও ফারদিন’কে দেখাতে বিস্ময় ভরা চোখে তাঁকিয়ে রইলো। আরজা তাড়াতাড়ি ফাইজা’র কাছে এসে বসে প্রশ্ন করে বসলো……

–কি হয়েছে ফাইজু? এত রাতে এভাবে কান্না করছিস কেনো?

জেহের ও এগিয়েও সেম প্রশ্ন করলো। ফাইজা আরজা’কে জড়িয়ে ধরে বিলাপের স্বরে পূর্নরায় বলতে লাগলো…..

–আমার সব শেষ হয়ে গেছে রে আরজু। আমি এখন এই মুখ কি করে দেখাব। আমার স্বামী কিনা……

এইটুকু বলেই কান্নার বেগ আরো বাড়িয়ে দিলো। ফারদিন অসহায় হয়ে দাড়িয়ে ফাইজা’র দিকে চেয়ে আছে। ওর সাথে কি হচ্ছে ও এখনো বুঝতে পারছেনা। মাথার দশ হাত উপর দিয়ে যাচ্ছে সব। ফারদিন সব কিছু মাথায় রেখেও অবাক স্বরে বলে উঠলো…..

–ফাইজা যদি এখানে থাকে তাহলে কম্বলের নিচে কে?

এইটুকু প্রশ্ন করে কম্বল’টা টান দিয়ে সরাতে’ই কম্বলের নিচের ব্যাক্তি’টাকে দেখে ফারদিন জোরে চিৎকার করে বলে উঠলো……

–লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতুম মিনায-যোয়ালিমিন…..

এইটুকু বলে বুকে হাত দিয়ে ধড়াম করে খাটের উপর পড়ে গেলো। ফারদিন’কে এমন করে পড়তে দেখে উপস্থিত সবাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। সায়মা খানম ভয় পেয়ে গেলো। ফাইজা আর আরজা দুজনে’ই দৌড়ে গেলো ফারদিনের দিকে। ফাইজা ফারদিনের সামনে গিয়ে ফারদিনের গালে সপাটে একটা থা’প্প’ড় মা/রতে’ই ফারদিন লাফিয়ে উঠে ফাইজা’র হাত ধরে বলতে লাগলো…..

–বিশ্বাস করো জান৷ আমি ভেবেছিলাম ওইটা তুমি। আমি অন্য মেয়ের জন্য এখানে আসি’নি…..

ফাইজা নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ন্যাকা স্বরে বললো…….

—আপনাকে আর মিথ্যা বলতে হবেনা। আমি আপনার পাপি মুখ দেখতে চাইনা। চললাম আমি বাপের বাড়ি…..

বলে মুখে ওড়না গুঁজে কাঁদতে কাঁদতে বাইরে চলে এলো। আরজা ফারদিনের দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলো……

–জিজু আপনার যে এই মুদ্রাদোষ ছিলো আগে জানতাম না। ছিঃ জিজু ছিঃ আপনি আমার প্রানের টুকরো বান্ধবী’কে ঠকালেন। এমন আশা করি’নি আপনার কাছে থেকে ছিঃ…..

বলে আরজা ও বেড়িয়ে গেলো। তনুজা ফারদিন’কে এসব বলে বেড়িয়ে গেলো। আর সায়মা খানম মিটমিটিয়ে হাসচ্ছে। তা দেখে ফারদিন এইবার কাঁদো কাঁদো স্বর করে বলে উঠলো…..

–এই বুড়ো কালে তোমার আমার চুমু খেতে ইচ্ছে করল দীদা। কি দরকার ছিলো আমার বউ এর ওড়না’টা হাতে প্যাচানোর। এখন আমার কি হবে গো দীদা। এখন আমার কি হবে….

এইবার ফারদিন ও হাত পা ছড়িয়ে বিলাপ করতে লাগলো। আর সায়মা খানম মিছে মিছে স্বান্তনা দিতে লাগলো। জেহের হাবুলের মতো চেয়েই আছে ফারদিনের দিকে। বেচারার মুখ দেখে জেহের পেট ফেটে হাসি হাসচ্ছে। কিন্তু হাসতে পারছেনা।
____________________________________________
ফাইজা আর আরজা রুমের বাড়িয়ে সিড়ির সামনে দুজনে থেমে গেলো। ফাইজা মুখ ঘুরিয়ে আরজা’র দিকে মুখের ভঙ্গিমা চেঞ্জ করে লাজুক স্বরে বললো……

—আমিও তোমার থেকে কম অভিনয় জানিনা বান্ধবী। কেমন হলো আমার অভিনয় বলো তো…..

ফাইজার কথা শুনে ওরা আর নিজেদের কন্ট্রোল করতে পারলো না। দুজনে এক সাথে হা হা করে হেসে দিলো। পেট ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে ফাইজা’র তাও হাসি থামছে। ফারদিন’কে ঘোল খাওয়ালো প্লান করে। বেচারার মুখ’টা মনে পড়তে’ই ফাইজা হাসি থামাতে পারছেনা। দুজনে একসাথে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আর ওইদিকে ফারদিন কেঁদে কেটে একাকার অবস্থা…….

#চলবে

#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_বোনাস_পার্ট(২)

প্রায় বিশ মিনিট ধরে কান ধরে উঠবস করছে ফারদিন। ওর সামনে’ই বুকে হাত গুঁজে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাড়িয়ে আছে ফাইজা।
টিচা’র হয়ে স্টুডেন্টের সামনে কান ধরে উঠবস করার মতো বিরল দৃশ্য এই প্রথম ঘটলো মনে হচ্ছে ফাইজা’র কাছে। ফারদিনের অবস্থা এখন “ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি”। আরজা, তনুজা, আর সায়মা খানম পাশেই সোফায় বসে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে৷ সেই তখন থেকে ফাইজা’ রাগ করে ছিলো। কিছুতে’ই বিয়ে করবে না আজ বলে’ই দিয়েছে। ঘড়ির কাটা চার’টা ছুঁইছুঁই। ফারদিন বেচারা ফাইজা’র হাতে পায়ে ধরার মতো অবস্থা হয়েছিলো। শেষ অব্দি ফাইজা শাস্তি হিসেবে একশো বার কান ধরে উঠবস করতে বলেছে। নিজের বিয়ে বাঁচানোর জন্য এখন ফারদিন’কে কান ধরে উঠবস করতে হচ্ছে। ফারদিনের চেহারা’টা এখন এত’টা অসহায় লাগছে যা দেখে’ই ফাইজা কিছু’তে হাসি থামিয়ে রাখতে পারছেনা। তাও, অনেক কষ্ট হাসি দমিয়ে রেখে মুখে গম্ভীর্য ধরে রেখেছে। আরজা’র হাসি দেখে ফারদিন ওর দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁতে দাত চে’পে বলে উঠলো…..

–আজ আমার মতো অসহায় একটা ছেলে পেয়ে তোমরা দুই হিটলার অত্যাচার করছো। কিন্তু, কলেজে। ভুলে যেও না আমি তোমাদের টির্চার। সেখানে আমি যেইটা বলব সেইটাই করতে হবে। মাইন্ড ইট শা’লিকা……

বলে চোখ টিপ মা’রলো আরজা’কে। ফারদিনের কথা শুনে আরজা’র হাসি মুখ’টা চুপসে গেলো। সত্যি, তো কলেজে গিয়ে না জানি এইসবের শোধ কিভাবে তুলবে ফারদিন? এইসব ভেবে’ই আরজা’র মুখ’টা কাঁদো কাঁদো হয়ে গেলো। ফাইজা’ আরজার অবস্থা দেখে ওর দিকে ভ্রু কুচকে তাঁকিয়ে বললো…..

–লিস্টেন, মিস্টার ফারদিন আবসার বাড়িতে আপনি সম্পর্কে আমার হবু বর আর আমার বেস্টুর একমাত্র জিজু। তাই বাড়িতে আমরা যা খুশি করতে পারব। বাড়ির সম্পর্ক আর কলেজের সম্পর্ক গুলিয়ে জগা-খিচুড়ি বানাবেন না……

বলে মুখ বাঁকালো। ফাইজা’র কথা শুনে আরজা এইবার একটু মনে জোর পেলো। জেহের অনেক ক্ষন আগেই এদের মাঝ থেকে উঠে চলে গিয়েছিলো। মনের মধ্যে শান্তি নেই ওর। তাই ঘুমাতে চলে গেছে। ফারদিন কান ছেড়ে দিতে’ই আরজা জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো…..

–এই চিটিং চিটিং। মাত্র ৩০ বার হয়েছে। আরো ৭০ বার বাকি হ্যা মেরি জিজু……

আরজা ও এইবার এইটুকু বলে ফারদিনের দিকে তাঁকিয়ে চোখ টিপ মা’রলো। ফারদিন কোমরে হাত দিয়ে ন্যাকা স্বরে বলে উঠলো…..

–বিয়ের আগে’ই যদি বুড়ো বানিয়ে দিতে চাও তাহলে আমি আরো ৭০ বার কান ধরে উঠবস করতে রাজি।

আরজা ফারদিনের কথা শুনে কিছু একটা ভাবলো তারপর ভাবুক স্বরেই বললো……

–থাক থাক আপনার শাস্তি মাফ। আমার এই স্মার্ট জিজু’টাকে আমি বুড়ো বানাতে চাইনা….

বলে লাজুক হাসলো। ফারদিন যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। ফাইজাও আরজা’র তালে তাল মিলিয়ে ফারদিন’কে মাফ করে দিলো। ফারদিন খুশিতে লাফিয়ে উঠে দৌড়ে গিয়ে আরজা’কে জড়িয়ে ধরে ওর গালে চু’মু খাওয়ার জন্য কাছে যেতে’ই আরজা গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো……

–ফাইজু রে বাঁচা…….

আরজা’র চিৎকারে ফারদিন থতমত খেয়ে থেমে গেলো। খুশির চোটে বউ’কে রেখে শা’লি’কে চুমু খেয়ে ফেলছিলো ভেবে জিভে কামড় দিয়ে কান ধরে নিঁচু স্বরে বললো……

–স্যারি স্যারি শা’লিকা। বউ’কে জড়িয়ে ধরতে গিয়ে হাত ফস্কে শা’লিকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। ক্ষমা করে দাও প্লিজ প্লিজ……

সরে এলো আরজা’র কাছ থেকে। পেছনে ঘুরে দেখলো ফাইজা’র রাগী ফেস করে কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে৷ তা দেখে ফারদিন ঢোঁক গিলে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠলো…..

–বিশ্বাস করো বউ হাত ফস্কে হতে গেছিলো সর্বনাশ’টা। আমার কোনো দোষ নেই….

ফারদিনের মুখের রিয়েকশন দেখে এইবার উপস্থিত সবাই উচ্চোস্বরে হেসে দিলো। পুরো ঘর জুড়ে হাসির রোল পড়ে গেলো। আর ফারদিন লজ্জা পেয়ে মাথা চুলকাতে লাগলো। তনুজা আর সায়মা খানম সবাই’কে তাড়া দিতে লাগলো ঘুমানোর জন্য। আর ফারদিন চোখের ইশারায় ফাইজা’কে ঘুমাতে বারন করছে। তাই ফাইজা’ আমতা আমতা করতে’ই আরজা বুঝতে পারলো। দুষ্টুমি ভঙ্গি’তে ফারদিনের সামনে দাড়িয়ে বলে উঠলো…..

–জিজু তখন উড়ে আসা লা’থি’ খাওয়ার সাধ কেমন ছিলো……

এইটুকু বলে’ই ফারদিন’কে ভেংচি কেটে আরজা দিলো দৌড়। ব্যাপার’টা বুঝতে ফারদিনের কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো। যখ’নি বুঝতে পারলো তখনি জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো…..

—“তবে’রে আজ দেখাচ্ছি মজা দাড়াও”

সেও আরজা পেছন পেছন ছুটলো। ফাইজা’ও ওদের পেছন ছুটলো। তনুজা আর সায়মা খামন দুজনে ওদের কান্ডে হাসতে লাগলো।
____________________________________________
ছাদে এসে তিন’টায় মিলে এক সাথে হাসতে লাগলো। ফারদিন হাটু’তে ভর দিয়ে ঝুঁকে হাঁপাচ্ছে। ফাইজা’র যেনো কিছুতে’ই হাসি থামছেনা। পুরো বাড়ি রঙিন বাতি’তে ঝলমল করছে। আরজা হাসি থামিয়ে বলে উঠলো…..

–এইবার আপনারা দুজন প্রেম করুন আমি আসচ্ছি….

বলে নাচতে নাচতে চলে গেলো। আরজা চলে যেতে’ই ফারদিন দুষ্টু’মি ভঙ্গিতে ফাইজা’র দিকে তাঁকিয়ে ভ্রু নাঁচিয়ে বলে উঠলো….

–এইবার তুমি কোথায় যাবে জান….

ফারদিনের মুখের ভঙ্গি’মা দেখে’ই ফাইজা’র এতক্ষনের সব হাসি উড়ে গেলো৷ ঢোঁক গিলতে লাগলো একের পর এক। হৃদ যন্ত্রনা লাফাতে শুরু করলো। আমতা আমতা করে পেছনে যেতে গিয়ে দোলনার সাথে লেগে দোলনায় বসে পড়লো।।ফারদিন এগিয়ে এসে ফাইজা’র দুই পাশে হাত রেখে ফাইজা’র দিকে ঝুঁকলো। এতটাই কাছে ঝুঁকে আছে ফারদিন এক্ষুনি কথা বললে ঠোঁট ফাইজা’র ঠোঁট স্পর্শ করবে। ফাইজা ফারদিনের কলা’র চে’পে ধরে বলে উঠলো….

–কি ভেবেছেন শুধু আপনি’ই পারেন সব কিছু করতে। আর আমি শুধু ভয় পেয়ে যাব। কাবি নেহি…….

বলে এই প্রথম ফাইজা ফারদিনের ঠোঁট ঠোঁট রাখার প্রস্তুতি নিতে’ই ফারদিন সরে আসলো ফাইজা’র কাছ থেকে। এতে ফাইজা মুখ টিপে হাসলো। ফারদিন ফাইজা’র থেকে দূরে গিয়ে আমতা আমতা করে বললো….

–ইয়ে মানে আজকে’ই যদি সব রোমান্স করে ফেলি তাহলে কালকের জন্য কি রাখব জান……

ফারদিনের কথা শুনে ফাইজা নিঃশব্দে হাসলো। ফারদিন ও একটু হেসে মাথা চুলকে ফাইজা’র পাশে এসে বসে পড়লো। এক হাতে ফাইজা’কে টেনে বুকে জড়িয়ে নিলো। ফাইজা ও দুই হাতে আকড়ে ধরলো ফারদিন’কে অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো…..

–আপনি আমার এক টুকরো সুখের রাজ্য। এই রাজ্য ছেড়ে আমি কখনো দূরে যেতে চাইনা…..

ফারদিন ফাইজা’র থুতনি তুলে ধরলো নিজের দিকে। ফাইজা’র গালে হালকা কামড় দিয়ে বললো…..

–এতক্ষন ইচ্ছে করে আমাকে হেনস্তা করার শাস্তি এটা…..

ফাইজা একটু দুষ্টু হেসে ফারদিনের কলা’র ধরে নিজের কাছে নিয়ে ফারদিনের গালে জোরে কামড় দিয়ে উঠলো। ব্যাথায় ফারদিন “মা’গো” বলে জোরে জোরে গাল ডলতে ডলতে বলে উঠলো…..

–হোয়াট ইজ দিস জান?

ফাইজা আঙ্গুল দিয়ে নিজের চুল প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে ডোন্ট কেয়ার ভাবে বললো…..

–অন্য মেয়ে’কে চু’মু খাওয়ার শাস্তি এটা…..

অন্য মেয়ে কাকে আবার চু’মু খেলাম। এই প্রশ্ন’টা করতে গিয়েও ফারদিন থেমে গেলো। কিছুক্ষন আগের ঘটনা মনে করে হেসে দিলো। ফাইজাও তালে তাল মিলিয়ে হেসে দিলো। তারপর দুজনে’ই দুজন’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। ভোরের আলো ফুটতে আর বেশিক্ষন নেই। এই কয়েক মুহূর্ত দুজন নিরবে কাটাবে। এই সময়’টা হবে ওদের দুজনের। দোলনা বাতাসের তালে তালে দুলে যাচ্ছে। কয়েক মুহূত কেটে গেলো এভাবেই নিরব। উপভোগ করতে লাগলো সময়’টা। ফাইজা ফারদিনের বুকে চুপটি করে মাথা রেখে আছে। ফারদিন নিঁচু স্বরে বলতে লাগলো……

–তোমাকে পেয়ে আমি নতুন করে বাঁচতে শিখেছি। তুমি আমার হাসির উৎস। আমি জানি তোমার মনের কোথাও না কোথাও একটা দুঃখ রয়ে গেছে যে, তুমি কোনোদিন মা হতে পারবে না। কিন্তু, বিশ্বাস করো আমার এটা নিয়ে এক বিন্দু আফসোস নেই। কোনো মেয়ে মা হতে পারবেনা এটা জেনে বাইরের লোক যেই আচরণ’টা করে এটা আদৌ কোনো মনুষ্য জাতির কাজ হতে পারেনা। মেয়ে’রা হলো মায়ের জাত। ওদের সম্মানের জায়গা’টা সবার উপরে। ওরা কত সুন্দর দুই হাতে সংসার সামলে রাখে। তাও দিন শেষে সব দোষ মেয়েদের হয়। কত মেয়ে’কে এইজন্য শুশুড় বাড়ি ছাড়া হতে হয়। কিন্তু, কেউ একবার ও ভাবেনা যে, এই মেয়ে’টা নিজে কত’টা কষ্ট পাচ্ছে। সবার যার যার দিক চিন্তা করে স্বার্থপরের মতো। মা হতে হলে কি গর্ভধারণ করতে’ই হবে এমন নয়। মা হতে হলে মায়ের মতো স্নেহ,ভালোবাসা থাকা’টাই যথেষ্ট। আচ্ছা সংসার করতে হলে, কাউকে ভালোবাসতে হলে কি রুপ, সৌন্দর্য, আর মা হওয়ার ক্ষমতা থাকতে’ই হবে এমন কি কোথাও লেখা আছে। দুটো মনের মিল হয় কোনো মানুষের রুপ আর সৌন্দর্যের তো মিল হয়না। আমাদের সমাজ’টা এখনো উন্নত হতে পারলো না। এইসব কথা কেনো বললাম জানো? তুমি প্লিজ কষ্ট পেও না। আমি তোমাকে মাতৃত্বের সুখ হতে বঞ্চিত হতে দিব না। ফুটফুটে একটা সদ্য জন্মানো বাচ্চা তোমাকে গিফট করব দেখো…….

ফাইজা’র চোখ থেকে গড়িয়ে পানি পড়ছে। নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে ভাগ্যবতী মেয়ে মনে হচ্ছে। কোনো ছেলে একটা মেয়ে’কে এমন করে বুঝতে পেরে। এটা ফারদিন’কে না দেখে বুঝতে পারতোনা ফাইজা। কোনো উওর না দিয়ে পূর্বের মতো চুপ’টি করে রইলো ফারদিনের বুকে। ফারদিন ও প্রেয়সীর মাথায় পরম আবেশে হাত বুলাতে লাগলো।

#চলবে