গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব-৬+৭

0
434

#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_ছয়

এক পায়ে ভর করে হাতে বই নিয়ে দাড়িয়ে আছে ফাইজা। ওর সামনেই সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে এক ধ্যানে মোবাইলে গেম’স খেলছে ফারদিন। ফাইজা বার বার পড়ে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলে নিচ্ছে। ফারদিন গেম’সের মাঝে মাঝে আড় চোখে দেখছে ফাইজা’কে। অদ্ভুত সব শাস্তি দেয় ফারদিন। আজ পড়া না পা’রার এমন শাস্তি দিয়েছে। কালকে’ই তো কত কেয়ার দেখাচ্ছিলো আর আজ আবার এমন খা”টা’শের মতো বিহেভিয়ার করছে। ভাবতেই ফাইজা’র রাগে শরীর জ্বলে উঠলো। ফাইজা মনে মনে ফারদিনের গুষ্টি উদ্ধার করছে। ওর চেহারা দেখে ফারদিন মিটমিটিয়ে হাসচ্ছে। ফাইজা এইবার অসহায় ফেস করে ফারদিনের দিকে তাঁকিয়ে নরম স্বরে বলে উঠলো…..

–স্যার কাল থেকে পাক্কা সব পড়ে আসব…..

ফারদিন যেনো শুনেও শুনলো না ওর কথা। তা দেখে ফাইজা রাগে দাতে দাত চেপে বিড়বিড় করতে লাগলো…..

–এহহ এমন ভাব দেখাচ্ছে যেনো কোন রাজ্যের রাজপুত্র। মন চাচ্ছে নাক বরাবর একটা ঘু’ষি মে-রে নাকের বারান্দা ছুটিয়ে ফেলি। শা’লা খা’রুশ…….

ফারদিন চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে দেখে ফাইজা বিড়বিড় করছে। ওর বুঝতে বাকি রইলো না ফাইজা ওর গুষ্টি উদ্ধার করছে। ফারদিন আচমকা ধমক দিয়ে বলে উঠলো…..

–এই মেয়ে কি বিড়বিড় করছো?

ফারদিনের ধমক শুনে ফাইজা ভয়ে লাফিয়ে উঠতেই নিজেই নিজের প্লাজুর সাথে পা আটকে ধ’পাস করে পড়ে গেলো। এইবার আর ফারদিন হাসি কন্ট্রোল করতে পারলো না। রুম কাঁপিয়ে হাহা করে হেসে উঠলো। ফাইজা নিচে পড়ে হাবলার মতো তাঁকিয়ে ফারদিনের হাসি দেখছে। কোথায় ও পড়ে গেছে ওকে তুলবে। তা না করে সে হেসে হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। ফাইজা রাগী চাহনি দিয়ে আছে ফারদিনের দিকে। ফাইজার দিকে তাঁকিয়ে ফারদিনের হাসি থেমে গেলো। মুহূর্তেই চোখে মুখে একটা রাগী ভাব এনে বলে উঠলো…..

—এক্ষুনি থা’প্প’ড় মে-রে গালের চামড়া তুলে দিব। সব পড়া ফাঁকি দেওয়ার ধান্দা। কি ভেবেছো? এমন করলে তোমার শাস্তি কমে যাবে। নো ওয়ে, বরং শাস্তি বেড়ে যাবে। এখন তুমি এক পা তুলে কান ধরে দাড়িয়ে থাকবে……..

ফারদিনের কথা শুনে ফাইজার কেঁদে দেওয়ার উপক্রম। এই ছেলে’টা কেনো ওর সাথে এমন করে। হাসলে ছেলে’টাকে কত সুন্দর লাগে। অথচ সব সময় মুখ গম্ভীর করে রাখবে। উঠে দাড়িয়ে ফাইজা আমতা আমতা করে বলে উঠলো……

—স্যার পেটে খুব ব্যাথা এভাবে দাড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে….

ফাইজার কথা শুনে ফারদিনের কালকের কথা মনে পড়ে গেলো। ফারদিন হুট করে দাড়িয়ে গেলো। চোখ দুটো সাথে সাথে রক্তিম বর্ণ ধারন করতে লাগলো। হাত দুটো শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো। হঠাৎ ফারদিনের বদলে যাওয়া রুপ’টা দেখে ফাইজা ভয়ে বার বার ঢোক গিলছে। ও ভাবছে ফারদিন এক্ষুনি ও’কে এসে থা’প্পড় দিয়ে দাত ফেলে দিবে। ভয়ে ফাইজা দুই গালে হাত দিয়ে কয়েক-পা পিছিয়ে গেলো। ফারদিন ফাইজার ভয়ার্ত চেহারা দেখে। মুষ্টিবদ্ধ হাত’টা ছেড়ে দিয়ে ঘাড়ের দুই পাশে হাত রেখে নিজেকে শান্ত করলো। চোখ বন্ধ করে জোরে একটা নিশ্বাস নিয়ে। বিড়বিড় করে বললো…..

–ড্যাম ইট। এতটা স্টুপিডের মতো কাজ কি করে করতে পারলাম আমি। মেয়ে’টা অসুস্থ জানা স্বত্তেও কি করে এত ক্ষন এইভাবে দাড় করিয়ে রাখতে পারলাম। ওহ গড কি করে ভুলে গেলাম এই কথা’টা রাবিশ…..

নিজের উপরেই রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। ফাইজা এখনো গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। ফারদিন এগিয়ে ফাইজার দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ফাইজা চোখ বন্ধ করে এক নিশ্বাসে বলে উঠলো…..

–স্যারি, স্যারি, স্যার। আর হবে না স্যার প্লিজ মা’র’বে’ন না। আমার ভুল হয়ে গেছে….

গালে কারোর শীতল হাতের স্পর্শ পেতেই ফাইজা চোখ খুলতেই অবাকের শেষ সীমানায়। ফারদিন ওর দিকে এক দৃষ্টি’তে তাঁকিয়ে আছে। ফারদিনের চোখে আজ কি যেনো আছে। কেমন একটা মাতাল চাহনী। এই দৃষ্টির অর্থ ফাইজা বুঝতে পারছে না। ফারদিনের স্পর্শে ফাইজা জমে গেলো। নড়ার শক্তি পাচ্ছেনা আজ। হৃদযন্ত্র’টা এত বেশি লাফাচ্ছে যে মনে হচ্ছে এক্ষুনি বের হয়ে যাবে। ফাইজা কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই শীতল হাত দুটো ফাইজার কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। ফাইজা তাল সামলাতে না পেরে ফারদিনের বুকের সাথে বা’ড়ি খেলো। ফারদিনের কান্ডে অটোমেটিক কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেলো ওর। ফাইজা ফারদিনের পেশীবহুল বাহু খামচে ধরে আছে। ফারদিন কেনো এমন করছে? ফারদিনের দিকে প্রশ্ন সূচক চাহনী দিতেই ফাইজা’কে আরেক দফা অবাক করে ফাইজার কপালে পরম আবেশে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। ফাইজা এইবার চারশো ভোল্টের শক খেয়ে চোখ বড় বড় করে তাঁকিয়ে আছে। ফারদিনের দিকে। ফাইজার ওষ্ঠ জোড়া তির তির করে কাঁপছে যা ফারদিন’কে আরো কাছে টানছে। ভয়ে ওর গলা শুকিয়ে আসচ্ছে। কিছুক্ষন পর পর জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিচ্ছে৷ ফারদিনে কেমন যেনো ঘোরে চলে গেলো। ফাইজার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট রাখার জন্য একদম কাছে যেতেই মুহূর্তে ওর সব এলোমেলো হয়ে গেলো। ফাইজা’কে ধাক্কা মে/রে দূরে সরিয়ে দিলো। আকস্মিক ধাক্কা সামলাতে না পেরে ফাইজা ছিটকে টেবিলের কর্নারে বাড়ি খেতেই মৃদ স্বরে ব্যাথায় “আহঃ” বলে উঠলো। ফারদিন আর এক মিনিট ও না দাড়িয়ে বড় বড় পা ফেলে চলে গেলো। ফাইজা এখনো ঘোরের মধ্যে আছে। কি হয়ে গেলো ওর সাথে? ফারদিন কেনো এমন আচরণ করলো? আর ফারদিনের ছোয়া কেনো এত চেনা লাগছে ওর? ফাইজা ধপ করে বিছানায়া বসে পড়লো। ওর মাথা চড়কির মতো ঘুরছে। কাল রাতে ফারদিনের গাড়ি দেখে ফাইজা কিছুক্ষন বেলকনি’তে দাড়িয়ে থাকতেই দেখলো। ফারদিন ওদের বিল্ডিং থেকে বের হয়ে চলে গেলো। তখন ফাইজা ভেবে নিয়েছিলো ও যা সব ভাবছিলো সব ভুল। ছায়া মানব’টি ফারদিন না। এমন কি কাল রাতে বেলকনি’র দরজা ইচ্ছেকৃত ভাবে খোলা রেখেছিলো ফাইজা। কিন্তু কাল রাতে কেউ ওর রুমে প্রবেশ করেনি। আর আজ ফারদিনের এমন আচরণ আবারো ভাবাচ্ছে ওকে??
____________________________________________
ফারদিন বাড়ি এসেই রুমের সমস্ত কিছু ভাংচুর করছে। সায়মা খানম ফারদিন’কে কিছুতেই থামাতে পারছেনা। হাতের সামনে যা কিছু ছিলো ইতোমধ্যে সব ভাঙা শেষ। এক পর্যায় হাঁপিয়ে উঠে ক্লান্ত শরীরে ধপ করে সোফায় বসে পড়লো। দুই হাতে চুল গুলোকে শক্ত করে খামচে ধরলো। সায়মা খানম কাঁপা কাঁপা হাতে ফারদিনের কাঁধে হাত রাখতেই ফারদিন আচমকা সায়মা খানম’কে ঝাপটে ধরলো। সায়মা খানম আস্তে করে ফারদিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে উঠলো…..

–কি হয়েছে নানু ভাই? কেনো এইভাবে নিজেকে আ’ঘাত করছো? কি প্রবলেম দীদা’কে খুলে বলো?

সায়মা খানমের কথা শুনে ফারদিন এলোমেলোহীন ভাবে বলতে লাগলো…..

–দীদা আমি কেনো ওর কাছে গেলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি’না। কেনো আমি নিজের অতীত ভুলতে পারছি’না। কেনো আমার মা’কে ওরা আমার কাছ থেকে কেড়ে নিলো? শুধু মাত্র একজন নারীর জন্য আমি আজো কোনো নারী’কে মন থেকে মেনে নিতে পারছি’না। নিজের বোনের স্বামীর সাথে পরকিয়ায় লিপ্ত হয়ে নিজেদের দোষ ঢাকতে ওরা আমার মা’কে আমার থেকে কেড়ে নিলো। এত’টা জঘন্য একজন মেয়ে কি করে হতে পারে দীদা? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে দীদা। খুব কষ্ট হচ্ছে…..

ফারদিনের কষ্টের পরিমান’টা সায়মা খানম বুঝতে পেরে চুপ হয়ে গেলো। সায়মা খানমের চোখ থেকেও জল গড়িয়ে পড়ছে। ছেলে’টা যে ভালো নেই। তা সে বেশ বুঝতে পারছে। কবে এই কষ্ট থেকে মুক্তি পাবে ছেলেটা…………

#চলবে

#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_সাত

কলেজের ক্যাম্পাসে সবার সামনে আচমকা ফাইজার গালে থা’প্পড় পড়লো। মুহূর্তেই ওর কান গরম হয়ে চিনচিনে ব্যাথা শুরু হলো। গালের হা’ড্ডি গুলো বোধহয় ভেঙে গেছে এমন লাগছে। গাল জ্বলে যাচ্ছে। ব্যাথায় চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়তো। ফাইজা’র সামনেই ফারদিন রাগী দৃষ্টি’তে তাঁকিয়ে আছে। ফারদিন’কে দেখেই মনে হচ্ছে ও অনেক রেগে আছে। কলেজের ক্যাম্পাসে আরজা আর ফাইজা বসে গল্প করছিলো। ওদের পাশেই দুইটা ছেলে বসে গল্প করছিলো। আর, তখনি হুট করে ওর গালে থা’প্পড় পড়ায় সবাই ভরকে গেলো। ফারদিন’কে দেখেই ওরা তিন জন চুপ করে রইলো। আরজা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাড়িয়ে ফাইজা’র পেছনে লুঁকিয়ে পড়লো। আর ফাইজা অশ্রু ভর্তি চোখে সারা ক্যাম্পাসে একবার চোখ বুলাতেই দেখলো উপস্থিত সবাই ওদের দিকে চেয়ে আছে। কিছু মেয়ে মিটমিটিয়ে হাসচ্ছে। লজ্জা আর অপমানে ফাইজার মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। হঠাৎ, করেই ফারদিনের প্রতি রাগে ফাইজার চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। চোখ দুটো মুহূর্তেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিলো ফারদিনেফ দিকে। রাগে ফেটে পড়ে আচমকা সবাই’কে অবাক করে দিয়ে ফারদিনের কলার চে’পে ধরলো। ফারদিন ফাইজার এহেতুক আচরণে অবাক হয়ে দাড়িয়ে রইলো। ফারদিন নিজের কলার ছুটানোর জন্য ফাইজার হাত চে’পে ধরতেই ফাইজা চেঁচিয়ে বলে উঠলো…..

—কেনো আমার গায়ে হাত দিলেন? কথায় কথায় আমার গায়ে হাত তোলার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? কি ভেবেছেন? আমার কোনো আত্মমর্যাদা নেই। সব সময় চুপ থাকি বলে আমার সাথে যখন যেখানে ইচ্ছে যেমন খুশি তেমন ব্যবহার করবেন। হাউ ডেয়ার ইউ মিস্টার ফারদিন আবসার তাজ। আজকে আপনাকে আমার সব প্রশ্নের উওর দিতেই হবে। কে আপনি? কোন অধিকারে আমার গায়ে হাত তুলেন সব সময়? শুধুমাত্র আপনাকে ভালোবাসি আর আপনি আমার স্যার বলে এতদিন সব’টা মুখ বুঝে মেনে নিয়েছি। আজকে আপনাকে জবাব দিতে হবে। এন্সার মি…….

রাগে ফাইজা কি বলছে ও নিজেও বুঝতে পারছে না। রাগে আর লজ্জা অপমানে ফাইজা চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। আর ফারদিনের কানে এখনো একটা শব্দ বাজচ্ছে” আপনাকে ভালোবাসি”। ফারদিন যেনো নিজের কান’কেই বিশ্বাস করতে পারছে না। ফাইজা হঠাৎ করেই সবার সামনে ফারদিন’কে জড়িয়ে ধরে জোরে কান্না করতে লাগলো। এইবার উপস্থিত সবাই বিস্ময়ের শেষ সীমানায়। আরজা মুখ’টা হা করে তাঁকিয়ে আছে ওদের দিকে। ফারদিন এখনো ঘোরের মধ্যে আছে। ফাইজা যখন আরজার সাথে কথা বলছিলো তখন ওর ওড়না’টা বুকের এক সাইড থেকে সরে গিয়েছিলো। আর তখন ফাইজা’র পাশে বসে থাকা ছেলে’টা লোভাত্তুর দৃষ্টি’তে সেদিকে তাঁকিয়ে পাশের ছেলে’টাকে কিছু একটা ইশারা করে ফাইজা’র দিকে হাত বাড়াতে লাগলো। ফাইজা কথায় এতই ব্যস্ত ছিলো যে সেদিকে ওর কোনো ধ্যানেই ছিলো না। ফারদিন ক্যাম্পাসে ঢুকতেই এই দৃশ্য দেখে ওর রাগে কপালের রক’টা ফুলে উঠলো। ফাইজা এতটা কেয়ার লেস ভাবতেই রাগ কন্ট্রোল করতে না পে’রে এসে ফাইজার গালে থা’প্পড় মে’রে’ছিলো। ফাইজা এখনো ফারদিন’কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে যাচ্ছে। ফারদিন ফাইজার মাথায় হাত রাখতেই ফাইজা’র হুশ ফিরে আসলো। ফাইজা তৎক্ষনাৎ ফারদিন’কে ছেড়ে দিয়ে ওর থেকে খানিক’টা দূরে গিয়ে দাড়িয়ে পড়লো। আড় চোখে দেখলো সবাই ওদের দিকে তাঁকিয়ে আছে। নিজের বো’কা’মির জন্য এখন নিজের উপর রাগ উঠছে ওর। ফারদিন ফাইজা’কে কিছু না বলে রাগী চাহনী নিক্ষেপ করলো ছেলেদুটোর দিকে। বা’ঘের মতো দুই হাতে ছেলে’টার কলার চে’পে ধরলো। ফারদিনের কান্ডে ফাইজা এইবার বিস্ময়ের চরম পর্যায়। শরীরের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে ঘু-ষি মে/রে বসলো ছেলে’টার নাকে। ছেলে’টা ছিটকে গিয়ে মাঠের মধ্যে পড়লো। ফারদিন রাগে কাঁপছে। ছেলে’টা ব্যাথায় কুঁকিড়ে উঠতেই ফারদিন রাগে ছেলেটা’র গলা চে’পে ধরে মাটির সাথে মিশিয়ে নিয়ে রাগে চিৎকার করে বলতে লাগলো……

–তোর সাহস কি করে হলো ওর দিকে হাত বাড়ানো?

বলেই আরেক’টা ঘু’ষি বসিয়ে দিলো। একাধারে মে/রেই যাচ্ছে। কয়েক’জন শিক্ষক ছুটে এসে ফারদিন’কে থামানোর চেষ্টা করছে। ফাইজা এখনো অবাক হয়ে তাঁকিয়ে আছে ফারদিনের দিকে। ভয়ে ওর বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করছে। ফারদিন’কে সবাই মিলে টেনে আনলে ফারদিন পা দিয়ে লা/থি মা/রা শুরু করলো। ছেলে’টার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। কয়েকজন ছেলে এসে ওই ছেলে’টাকে ধরে হসপিটালে নিয়ে যেতে লাগলো। সবাই ফারদিনের রাগ দেখে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আছে। ফাইজা আর আরজা দুইজন একসাথে দুইজনের হাত ধরে দাড়িয়ে আছে। আরজার ভয়ে প্রান যায় যায় অবস্থা। রাগে ফারদিনের মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে। সবাই ফারদিন’কে টেনে দূরে সরিয়ে এনে ছেড়ে দিতেই ফারদিন সোজা এসে ফাইজার হাত চেপে ধরলো। এইবার ফাইজা ভয়ে প্রান বেড়িয়ে যেতে লাগলো। ফারদিন কাউকে কোনো উওর না দিয়ে ফাইজার হাত চেপে ধরে হাটা শুরু করলো। ফাইজা রোবটের মতো ফারদিনের সাথে হাটা শুরু করলো। ফারদিন ফাইজা’কে টেনে এনে গাড়িতে বসিয়ে শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দিলো। আজ তিনদিন পর ফাইজা কলেজে এসেছিলো। আর কলেজে এসেই এই অবস্থায় পড়বে ও ভাবতেও পারছেনা। ফাইজা ভয়ে হাত কচলাচ্ছে। ফারদিন গাড়িতে উঠেই গাড়ি স্ট্যাট দিলো। ফাইজা ভেবে ছিলো ফারদিন ওকে বাড়ি নিয়ে আসবে কিন্তু যখন দেখলো গাড়ি অন্য রাস্তায় যাচ্ছে তখন ফাইজা ভয়ার্ত স্বরে বলে উঠলো….

–এটা তো আমার বাড়ির রাস্তা না। আমি বাড়ি যাব। স্যার, প্লিজ গাড়ি থামান। আমি বা…..

আর বলার আগেই ফারদিন জোরে ব্রেক করলো। আচমকা ব্রেক কসাই ফাইজা ঝুঁকে পড়তেই এক হাত ওর কপালে ছুয়ে দিতেই ও মাথায় ব্যাথা পাওয়ার হাত থেকে বেঁচে গেলো। কিন্তু, হাতের ব্যাক্তি’টার হাতে যে প্রচন্ড ব্যাথা লেগেছে তা বেশ বোঝা যাচ্ছে। ফাইজা ভয়ে চোখ মুখ খিচে রেখেছিলো। যখন দেখলো ও ব্যাথা পায়’নি তখন চোখ খুলতেই দেখলো ওর কপাল ফারদিনের হাতের উপর। ফাইজা নিজেকে সামলে নিতেই ফারদিন হাত সরিয়ে নিলো। ওর হাত’টা ব্যাথায় লাল হয়ে উঠেছে তা ফাইজার দৃষ্টি এড়ালো না। ফারদিন শান্ত কন্ঠে বললো…..

–নো কুয়েশ্চন। গাড়ি যতক্ষন না থামবে ততক্ষন অব্দি একটা সাউন্ড আমার কানে আসলে খুব খারাপ হবে। মাইন্ড ইট…..
বলেই আবার গাড়ি স্ট্যাট দিলো। ফাইজ ভয়ে আর প্রশ্ন করতে পারলো। অজানা এক অভিমান এসে মনের কোনে জড়ো হলো। ছলছল চোখে জানালার দিকে দৃষ্টি দিলো। রাগের বশে আজ সত্যি’টা ফারদিনের সামনে বলে দিয়ে যে ভুল করেছে তা এখন বেশ বুঝতে পারছে। ফারদিন তো ওকে সহ্যই করতে পারেনা। আর এখন ছাত্রী হয়ে স্যার কে ভালোবাসে এই কথা’টা শুনে নিশ্চয়ই একে অভদ্র,নির্লজ্জ ভাবছে। আজ নিশ্চয়ই সেদিনের মতো হাজার’টা কথা শুনাবে। হয়তো গায়েও হাত তুলবে আবার। আজ যদি ফারদিন ওকে আবার অপমান করে তাহলে ও কিছুতেই মুখ বুজে সহ্য করে নিবে না। ফারদিনের মুখের উপর পাল্টা জবাব দিবে। ভালোবাসার মধ্যে তো কোনো ভুল নেই। হোক না সে বয়সে বেশ কয়েকবছরের বড় আর সম্পর্কে টিচার। তাতে কি ভালোবাসা তো এসভ দেখে হয়না। এক বছর ধরে নিজের মনের মধ্যে এই কথা লুঁকিয়ে রেখেছিলো আজ এইভাবে নিজের অজান্তেই সেই কথা’টা প্রকাশ পাবে বুঝতে ও পারেনি ফাইজা। গাড়ি’টা থেমে যেতেই ফাইজার ভাবনায় ছেদ ঘটলো৷ ফাইজা চোখের জল টুকু মুছে নিয়ে জানালা দিকে তাঁকাতেই ওর মাথায় বাজ ভেঙে পড়লো। কারন ফাইজার চোখের সামনে স্পষ্ট লেখা আছে “কাজী অফিস”। হঠাৎ, কাজী অফিসের সামনে এসে গাড়ি থামতেই ফাইজার বুকের ভেতর’টা মুচড়ে উঠলো। ফারদিন কি করতে চলেছে? কি ঘটবে? কোন অপ্রত্যাশিত ঘটনার সাক্ষী হতে চলেছে ফাইজা………

#চলবে