গোধূলী বেলার স্মৃতি পর্ব-২৯

0
1934

#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
#পর্ব- ২৯
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
লাইব্রেরিতে ঢুকতে-ই’ ছোট সাহেব আমাকে কোলে তুলে নেয়। এতে আমি খানিক্টা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাই। ছোট সাহেব খুশি হয়ে বলে,
–“আমি আজকে কতটা খুশি তোকে বলে বুঝাতে পারবো নাহ রে কাজল। ”
ছোট সাহেবের খুশি দেখে আমিও হেঁসে বললাম,
—“কি এমন খুশির কথা? আমাকে বলুন, কিন্তু তার আগে আমাকে নামিয়ে তো দিন। যে কেউ যখন তখন চলে আসবে। ”
ছোট সাহেব বাঁকা হেঁসে বলে,

—“যে কেউ দেখুক তাতে আমার কী? এই রাফসিন শেখ রুদ্রিক কাউকে পরোয়া করেনা ওকে? ”

আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,

—-“হুম তা তো বুঝলাম। কিন্তু আমাকে নামিয়ে দিন প্লিয প্নিয। ”

ছোট সাহেব আমার অনুরোধ শুনে আমাকে নামিয়ে দিলেন। আমি উনার দিকে তাঁকিয়ে বললাম,

—“এইবার তো বলুন? খুশির এতো কারন? ”

ছোট সাহেব আমার দিকে ঝুঁকে বললেন,

—“ম্যাম ইশানি পিপি আমাদের বিষয়টা মেনে নিয়েছে এন্ড ইশানি পিপি তোর বাবার কাছে আমাদের বিয়ের প্রস্তাব নিয়েও চলে যাবে। ”
(লেখিকা ঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

ছোট সাহেবের কথা শুনে বিরাট বড় ঝটকা খেলাম।
ইশানি ম্যাম সবকিছু মেনে নিয়েছে? এতো সহজে?
উনার মতো অহংকারী মহিলা বাড়ির সামান্য ড্রাইভারের মেয়েকে নিজের বাড়ির বউ করতে এতো সহজে মেনে নিলো? কেনো যেনো আমার সবকিছু মেনে নিতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। আমার ভাবনার মাঝে-ই’ ছোট সাহেব আমাকে মৃদ্যু ধাক্কা দিয়ে বলল,
—“কি হলো কাজল তুই কী হ্যাপি নাহ? ”

ছোটসাহেবের কথা শুনে আমি সায় দিয়ে বললাম,

—-“হ্যাপি হবো কেনো ছোটসাহেব? খুব খুশি আমি।”

ছোট সাহেবের আমার কথা শুনে আমার কপালে চুমু খেয়ে বললেন,

–“তোকে ঠিক বলে বুঝাতে পারবো নাহ। কতটা খুশি আমি। কাজল তোকে নিজের করে পাবো আমি। ”

আমি উনার দিকে তাঁকিয়ে বললাম,
—“এতোটা ভালোবাসেন আমাকে ছোটসাহেব আমাকে? ”

ছোটসাহেব আমার কথাশুনে কিছুটা ঘোরলাগা কন্ঠে বললেন,

—“ম্যাম আপনার ভাবনার বাইরেও অধিক ভালোবাসি আপনি আমি। আমি তোকে তোর মায়াবীর মুখখানার মায়ায় পড়ে গিয়েছিলাম। কে জানতো বল? আমি তোকে এতোটা ভালোবাসবো? ”

আমি চুপ হয়ে পড়লাম।

ছোট সাহেবের কথার মাঝে-ই’ ছোট সাহেবের ফোন বেজে উঠে।

ছোট সাহেব ‘জাস্ট আ মিনিট ‘ বলে একটু আড়ালে চলে যায়।

লাইব্রেরি থেকে সবকিছু-ই’ দেখছে সাদি এবং সিথি। তারা এইটা ভেবে নিশ্চিন্ত কাজল ও রুদ্রিকের মধ্যে সবকিছু ঠিক হয়ে আছে।

সিথি সাদির কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,
—“সব কিছু-ই’ ঠিক মনে হচ্ছে,কিন্তু আমার ভয় শুধু পিপিকে নিয়ে। পিপি এতো সহজে সব কিছু মেনে নিলো? ”

সাদি নিজের চশমাটা ঠিক করতে করতে বলল,

—“যদি কোনো ঝামালা হলেও আমি আর তুমি আছি কি করতে? আমাদের সেই সমস্যার সমাধান করতে হবে। ”

—-“হুম একদম ঠিক বলেছো সাদি ভাইয়া। ”

—-“তো এখন চলো আমরা এখন যাই। ওদের মতো ওরা থাকুক। ”

সাদির কথা শুনে সিথি বিড়বিড় করে বলে,

—“দিব্যি তো ছিলাম। এখন এই পড়ুয়া মাস্টার নিয়ে গিয়ে পড়তে৷ বসাবে দূর জীবনটা তেজপাতা করে ছাড়লো। ”

সাদি কড়া গলায় বলল,

—“কি হলো এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেনো? চলো। ”

সিথি বিরক্তি মুখে ‘যাচ্ছি তো ‘ বলে পা বাড়ালো।
তা দেখে সাদি হাঁসলো। আজ-কাল সিথিকে পড়া দিয়ে জ্বালাতে তার ভালো-ই’ লাগে।

এদিকে,
লাজুক কেবিনে ঢুকতে-ই’ দিয়া হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে বলে,
—” নাকবোঁচা এ্যাসিস্টেন্ট আপনার মায়ের ফোন নাম্বার টা দিন। ”
দিয়ার কথায় লাজুক কিছুটা অবাক হয়ে বলে,
—“কিন্তু কেনো? ”
দিয়া কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,

—“দিতে যখন বলেছি তখন দিন। “,

দিয়ার ধমকে লাজুক নিজের ফোনটা এগিয়ে দেয়।
লাজুকের ফোন নিয়ে দিয়া লাজুকের মাকে ফোন দেয়। লাজুকের মা কিছু বলার আগে-ই’
দিয়া তাড়াহুড়া করে বলে,
–“আআসসালামু আলাইকুম আন্টি। আপনি কিছু বলবেন তার আগে আমি কিছু বলতে চাই। আপনি আপনার ছেলের বিয়ে একজন নিশ্পাপ বাচ্ছা মেয়ের সাথে দিতে চাইছেন তা মোটেও ঠিক নয়। যাকে বলে একদম অন্যায়। আপনার ছেলের সাথে এতো পিচ্ছি মেয়েকে মানাবে নাহ। আপনার ছেলের মতো হ্যান্ডসাম নাকবোচার সাথে আমার মতো মেয়েকে-ই’ মানাবে। আন্টি আপনি কিন্তু আবার ভাববেন নাহ আমি আপনার ছেলেকে পছন্দ করি। জাস্ট বলে দিলাম আপনার ছেলের সাথে ওই পুচকি মেয়েকে একদম বিয়ে দিবেন নাহ হুহ। দিবেন না মানে দিবেন নাহ। ”

(লেখিকা ঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
দিয়া যেনো শান্ত কন্ঠে বড়সড় হুমকি দিয়ে দিলো লাজুকের মাকে।

কথাটি বলে-ই’ দিয়া লাজুকের হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে গটগট করে বেড়িয়ে গেলো।

লাজুক ফোন কানে নিলো।
লাজুকের মা ফোনের ওইপাশ থেকে বলে উঠে,
—“কে ছিলো রে বাবা? বাবাগো মনে হচ্ছিলো খুব রেগে আছে। ”

লাজুক মুঁচকি হেঁসে বলল,
—“তোমার হবু বউমা ছিলো। তোমার হবু বউমাকে একটু-আকটু জ্বালিয়েছিলাম তাই সে রেগে আছে। ”

লাজুকের মা হেঁসে বললাম,

—“সত্যি তুই খুব দুষ্টু হয়েছিস লাজুক। তাড়াতাড়ি আমার হবু বউমাকে আমার ঘরের বউ করে নিয়ে আয় তো। ”

লাজুক হেঁসে বলে,

—“খুব তাড়াতাড়ি নিয়ে আসবো। ”

কথাটি বলে লাজুক এগিয়ে গেলো অফিসের কফি কেন্টিনের দিকে। সে জানে এখন দিয়া সেখানে-ই’ আছে।

দিয়া কফি মুখে নিতে যাবে তখনি লাজুকের কথা তার কানে ভেসে উঠে।

—-“ম্যাম এখনো কী নিজের ভালোবাসাটা অপ্রকাশিত রাখবেন? মন খুলে যদি নিজের অনুভুতিগুলো-ই’ যদি প্রকাশ করতে না পারেন তাহলে দিনশেষে শুধু আফসোস করে যেতে-ই’ হয়।”

দিয়া কফির কাপ টা রেখে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

—“ভালোবাসাকে বাস্তবতার ভীরে হারিয়ে যেতে দেখেছি। দেখেছি কীভাবে নিজের সবটুকু ভালোবাসা অন্য কারো মাঝে বিলিয়ে দিয়ে, নিজের অস্হিত্ব কীভাবে বিলিন হয়ে যায়। ”

লাজুক খানিক্টা অবাক হয়ে বলে,

—“আপনার কথা ঠিক বুঝলাম নাহ। ”

—-“আমার মেঝ আপাই ভালোবাসার কাছে হেরে গিয়ে আত্বহত্যার পথ বেঁছে নিয়েছিলো। তাই আমারোও ভালোবাসতে বড্ড ভয় করে নাঁকবোচা
এসিস্টেন্ট। ”

লাজুক দিয়ার হাত শক্ত করে ধরে বলে,

—“জীবন সঠিক কারো হাত ধরলে দেখবেন ভালোবাসা খুব সুন্দর। ভালোবাসাকে একটিবার ভরসা করে-ই’ দেখুন দিয়া ম্যাম। ”

দিয়া অজান্তেই লাজুককে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। লাজুক হাঁসে।

অন্যদিকে,

রুদ্রিক ফোনের স্ক্রিনে তাঁকিয়ে দেখে তাদের অফিসের বস মিঃ আশিয়াক রাইজাদার ফোন। রুদ্রিক ফোন রিসিভ করে বলে,

—-“জ্বী স্যার বলুন। ”

আশিয়াক রাইজাদা বললেন,

—-“আগামী সপ্তাহে আমাদের কম্পানির একটা ইম্পর্টেন্ট প্রযেক্ট আছে। আমি সেই প্রযেক্টের দায়িত্ব তোমাকে দিতে চাই। আমি জানি তুমি মানা করবে নাহ। ”

—-“তাহলে তো স্যার আমাকে এক সপ্তাহের জন্যে
ঢাকার বাইরে যেতে হবে। ”

রুদ্রিকের কথা শুনে আশিয়াক বললেন,

—“তা তো যেতে হবে। রুদ্রিক অনেক ভরসা করে তোমাকে এই প্রযেক্টের দায়িত্ব দিতে চাচ্ছি। আশা করি তুমি আমাকে নিরাশ করবে নাহ। ”

কাজলের থেকে এক সপ্তাহ দূরে যেতে হবে বলে রুদ্রিকের মন খারাপ হলেও, কাজের জন্যে তার সেক্রিফাইজড করলো।

রুদ্রিক হাঁসিমুখে বলল,

—-“ওকে স্যার আপনি চিন্তা করবেন নাহ।

কথাটি বলে রুদ্রিজ ফোন কেটে দিলো।

ছোটসাহেবকে শুকনো মুখে এগিয়ে আসতে দেখে,
আমি বলে উঠলাম,
–“কি হলো ছোটসাহেব? আপনার মুখটা হঠাৎ শুকনো লাগছে কেনো? ”

আমার কথা শুনে ছোটসাহেব বলে উঠলো,

—“কাজল তুই তো জানিস। আমি রাইজাদা গ্রুপ অফ কম্পনিতে চাকরী করি। স্যার আমাকে খুব ভরসা করে একটি প্রযেক্ট হ্যান্ডেল করতে দিয়েছেন। তাই আমাকে এক সপ্তাহের জন্যে ঢাকার বাহিরে যেতে হবে। ”

ছোট সাহেবের সাথে কয়েকদিন দেখা হবে নাহ। ভেবে-ই’ মনটা খারাপ হয়ে গেলো। তবুও মুখে হাঁসি ফুটিয়ে বললাম,

—“এতো আরো খুশির খবর। এই প্রযেক্টে আপনি সফল হলে, আপনার কত নাম হবে তাইনা ছোটসাহেব? ”

—-“তা তো হবে,কিন্তু তোকে অনেক মিস করবো রে ‘শুভ্ররাঙাপরী’.। ”

আমি শুকনো হাঁসি দিলাম।

রুদ্রিক বুঝলো কাজলের মন খারাপ হয়েছে। তাই সে

বলে উঠে,

—-“চল আজকে আমি তোকে একটা জায়গায় নিয়ে যাই। ”

—-“কোথায় যাবো? ”

—-“গেলে-ই’ দেখতে পাবি। আপাতত চল তো।”

কথাটি বলে-ই’ ছোট সাহেব আমার হাত ধরে উনার গাড়ির দিকে নিয়ে গেলেন। ছোট সাহেব বললেন,

—“উঠে পড়। ”

আমিও প্রশ্ন না করে গাড়িতে উঠে পড়লাম। ছোটসাহেব গাড়িতে উঠে পড়লো।

গাড়ি একটি আইস্ক্রিম পার্লারের সামনে রাখা হলো।

আইস্ক্রিম পার্লার দেখে আমি কিছুটা এক্সাইটেড হয়ে বললাম,

—“আইস্ক্রিম পার্লার? ”

ছোট সাহেব আমার কথা শুনে বললেন,

—“হুম আইস্ক্রিম পার্লার। তোর পছন্দ না আইস্ক্রিম? আজকে তুই যত খুশি আইস্ক্রিম খেতে পারিস।”

আমি খুশি হয়ে বলি,

—-“সত্যি? ”

উনি মাথা নাড়িয়ে বলেন,

—“একদম সত্যি। ”

আমরা দুজনে আইস্ক্রিম পার্লারের ভিতরে ঢুকে পড়লাম।

ছোটসাহেব বলার সাথে সাথে-ই’

ভিন্ন ধরনের অনেকগুলো আইস্ক্রিম চলে আসলো।

আমি ভ্যানেলা আইস্ক্রিম হাতে নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম।

রুদ্রিক মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে তার কাজলের দিকে। হঠাৎ করে-ই’ কাজলের মধ্যে শয়তানী বুদ্ধি চলে আসলো।

সে আইস্ক্রিম দিয়ে রুদ্রিকের গালের খানিক্টা অংশে লাগিয়ে দেয়।

কাজলের এমন কান্ডে রুদ্রিক কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলল,

—“এইসব কি কাজল কি করলি তুই? পুরো মুখে ভরিয়ে দিলি। ”

কাজল খিলখিল করে হেঁসে উঠে। কাজলকে হাঁসতে দেখে রুদ্রিক ও হেঁসে উঠে।

বাকীটা আগামী পর্বে….

চলবে।