গোধূলী বেলার স্মৃতি পর্ব-৩৭

0
1705

#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি
#পর্ব- ৩৭
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)

গাঁয়ে এখনো বৌ-ভাতের লেহেংগানিয়ে-ই’,রুদ্রিককে অনাবরত ফোন করে যাচ্ছি। রুদ্রিক ফোনটা-ই’ ধরছে নাহ। আমার বড্ড চিন্তা হচ্ছে। রুদ্রিক কোথায় গেলো? ফোনটা-ই’ বা ধরছে নাহ কেনো? আমাকে এইভাবে উত্তেজিত হয়ে যেতে দেখে দিদুন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
–“এইভাবে উত্তেজিত হয়ে না দিদিভাই। রুদ্রিই দাদুভাই নিশ্চই কোনো কাজে আছে। ”

—“তা-ই’ বলে ফোনটাও ধরবে নাহ।”

কথাটি বলে আমি রুদ্রিকের নাম্বারে আবারো কল করলাম,কিন্তু এখন তো বন্ধ করে ফেলেছে।

আমি ফোনটা ফেলে দেই। দিদুন বললেন,

—“আমি বলে কী দিদিভাই তুমি একটু শান্ত হও। রুদ্রিক দাদুভাই সময়মতো ফোন করে দিবে। তুমি আগে নিজের গাঁয়ে লেহেংগাটা পাল্টে এসো।”

দিদুন আমার হাতে একটি শাড়ি দিয়ে, রুম ত্যাগ করেন।

আমিও শাড়িটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যাই।

আমি ওয়াশরুম থেকে বেড়োতে-ই’, মুসকান কোথা থেকে যেনো দৌড়ে চলে আসে। আমি মুসকানের কাছে গিয়ে দেখি মুসকানের ছোট্ট একটি চিরকুট রয়েছে।
আমি মুসকানের দিকে ঝুঁকে বলে উঠলাম,

–“মুসকান সোনা। তোমার হাতে কিসের চিঠি? ”

মুসকান আমার কথা শুনে, আদো গলায় বলল,

–“একটা আংকেল আমাল হাতে দিতে । তোমাকে দিতে বলতে।”

আমার জন্যে চিরকুট? কে দিয়েছে? আমি মুসকানের হাত থেকে চিরকুট নিয়ে নেই। আমি চিরকুটটি হাতে নিয়ে খুলে দেখি রুদ্রিকের লেখা চিরকুট । তাতে লেখা রয়েছে,

—“কাজল আমাকে ফোনে না পেলে তুই ‘বেলি কুঞ্জ ‘ চলে যাবি। সেখানে কিছু প্রুফ আছে মাহির আহমাদের বিরুদ্ধে। তুই সে প্রুফ গুলো আজকের জন্যে হলেও লুকিয়ে ফেলবি। আমার যতটুকু মনে
হচ্ছে মাহির আহমাদ কোনোভাবে বেলিকুঞ্জে যাওয়ার চেস্টা করবে এইসব প্রমান লুকানোর জন্যে। তুই তার আগে সব প্রমাণগুলো লুকিয়ে ফেলবি। আমার জন্যে চিন্তা করবি নাহ। আমি যেখানে-ই’ আছি। ঠিক আছি৷ ”

রুদ্রিকের লেখা চিরকুট পেয়ে মনে হলো কলিজায় পানি আসলো। বুঝতে পারছি নাহ রুদ্রিকের মনে এখন কি চলছে। নাহ এখন ভাবার সময় নেই।

আমি আর সময় নষ্ট না করে দ্রুত হাতের পার্স নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।

অন্যদিকে,

মাহির প্রশ্ন করে বললো,

—“আপনি রুদ্রিক শেখের আইনজীবি?

—-“জ্বী। ”

—-“আপনার এখানে কাজ কিসের? যেখানে আমার কাছে সব পেপার-ই’ রয়েছে। ”

—-“হুট করে একজন এর কম্পানি নিজের নামে বলে চালিয়ে দিলে-ই’ তো হবে নাহ। রাফসিন শেখ রুদ্রিক আপনার নামে ফ্রড কেস করেছেন। পুলিশ আগে সবকিছুর তদন্ত করে দেখবেন, তার আগে আপনি শেখ গ্রুপ অফ ইন্ড্রাস্টির পাউয়ার নিতে পারবেন নাহ। ”

আইনীজীবির কথা শুনে সবার মুখে হাঁসি ফুটে উঠে।

কথাটি বলে রুদ্রিকের আইনজীবি ফারুক সাহেব কিছু পেপার মাহিরের হাতে তুলে দেয়। মাহির পেপার গুলো চেক করে দেখে, রুদ্রিক সত্যি কেস করেছে। ”

মাহির পেপারসগুলো দেখে বাঁকা হাঁসে। মাহির কিছুটা হেঁসে-ই’ বললো,

—-“ঠিক আছে আমি আপাতত পাউয়ার নিচ্ছি নাহ। পুলিশ তো তদন্ত করার জন্যে ২৪ ঘন্টা সময় নিয়েছে। যত-ই’ তদন্ত করুক এই কম্পানির পাউয়ার শেষে আমাকে দিতে-ই’ হবে,কেননা এই পেপারস গুলো আসল। সব থেকে বড় কথা আফজাল শেখের সাইন আছে। পেপার স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে,আফজাল শেখ নিজ ইচ্ছায় এই কম্পানির পাউয়ার আমাকে দিয়েছে। ”

আফজাল শেখ রাগে চিৎকার করে বললো,

—“একদম মিথ্যে বলবে নাহ মাহির। আমি তোমাদের কোনো পাউয়ার দে-ই’ নি। তোমরা ছলনা করে আমার থেকে কম্পানির পাউয়ার নিয়েছো। তোমাকে আর কি বলবো? যেখানে নিজের বোন-ই’ বিশ্বাসঘাতকতা করে। ”

ইশানি আফজালের দিকে তাঁকিয়ে অসহায় কন্ঠে বললো,

—“ভাইয়া…..

ইশানিকে থামিয়ে আফজাল শেখ বললেন,

—-“তুমি একদম কথা বলবে নাহ। নাহলে আমার হাত কিন্তু তোমার গালে চলে যাবে,নিশ্চই এই বয়সে আমার হাতে গালে থাপ্পড় খেতে চাইছো নাহ। ”

—-“রিলাক্স আফজাল সাহেব। এত্তো উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন কেন? আপনার বয়সের দিকেও একটু্ খেয়াল করুন। আপনিতেও কম্পানি হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে পড়ে যদি হার্ট অ্যাটাক টাইপের কিছু হয়ে যায়…

মাহিরের কথা শুনে সাদ এইবার চরম রেগে তেড়ে এসে মাহিরের কলার চেপে ধরে বলে,

—“হাও ডেয়ার ইউ। আংকেলকে এইসব কথা বলার সাহস পান কোথা থেকে? ”

—-“সাদি কী করছো কী? ”
কথাটি বলে লাজুক এসে সাদিকে মাহিরের থেকে ছাড়িয়ে নেয়।

সাদি রাগে ফুশছে। লাজুক সাদিকে শান্ত করে বলে,

—“এখন আমাদের মাথা ঠান্ডা রেখে সব কাজ করতে হবে। শান্ত হও। ”

মাহির নিজের কলার ঠিক করতে করতে সাদিকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—“এই বয়সে ছোট খাটো বিষয়ে উত্তেজিত হয়ে গেলে কি করে চলবে ইয়াং ম্যান। ”

সাদি রাগে ফুশছে

—-“কালকে আমি পাউয়ার নিয়ে-ই’ নিবো। এইসব কেস করে কোনো লাভ হবনা। আজকে-ই’ আপনাদের সময় দিলাম। নিজেদের অফিস শেষবারের মতো দেখে নিয়েন। চলো ইশানি। ”

মাহির কথাটি বলে ইশানির হাত ধরে বাইরে চলে গেলো।

মাহির চলে যেতে-ই’ রুদ্রিকের আইনজীবি মিঃ আফজাল শেখকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

—“মি শেখ রুদ্রিক আমাকে দিয়ে কেস করিয়ে দিয়েছেন। কেস যখন করা হয়েছে তখন চিন্তা করবেন নাহ। এখনো হাতে ২৪ঘন্টা সময় আছে। এই সময়ের মধ্যে রুদ্রিক কিছু না কিছু একটা করবে-ই’।”

আইনজীবির কথা শুনে আফজাল শেখ কিছুটা ভরসা পায়। তিনি জানেন রুদ্রিক এই কম্পানিকে বাঁচানোর জন্যে শেষ পর্যন্ত যাবে।

—-“ভাইয়ূ তুমি বরং এখন বাড়িতে যাও। আমি এবং লাজুক পুলিশ অফিসারের কাছে যাচ্ছি। ”

দিয়ার কথা শুনে লাজুক ও সায় দিয়ে বললো,

—-“হ্যা স্যার আপনি এখন চলে যান। এইসময় আপনার থাকাটা ঠিক হবেনা। আমি এবং দিয়া ম্যাম এইদিকটা দেখে নিচ্ছি। আমাদের উপর একটু আস্হা রাখুন। ”

লাজুকের কথায় আফজাল শেখ সম্মতি দিয়ে বললেন,

—“ঠিক আছে আমি বরং যাই। ”

লাজুক এইবার আইনজীবির কাছে গিয়ে বললেন,

—“আমরা পুলিশ স্টেশনে যাচ্ছি আপনিও কি যাবেন?”

—“জ্বী আমি যাচ্ছি কিছুক্ষন পরে। ”

—-“আমিও কি যাবো?

সাদির প্রশ্নে লাজুক বললো,

—” আপাতত আমরা বরং যাই। তুমি বরং আপাতত মায়া কুঞ্জে গিয়ে দেখো সেখানকার কি অবস্হা।”

সাদি মাথা নাড়ালো।

লাজুক ও দিয়া বেড়িয়ে গেলো। আফজাল শেখও চলে গেলেন।

__________

তনয় আজ সিলেটে চলে যাবে। তাই তনয় ও নিতিয়া বাসের জন্যে অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষন পরে-ই’ বাস ছেড়ে যাবে। হাতে এখনো পাঁচ মিনিট সময় আছে। তনয় নিতিয়ার কাছে পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বললো,

—“তুই বাসে উঠে পড়। আমি আসছি৷ ”

নিতিয়া মাথা নাড়িয়ে তনয়ের থেকে বোতলটা নিয়ে বাসে উঠে যায় । তনয় একটি দোকান থেকে সিগারেট কিনে নিয়ে সিগারেট জ্বালিয়ে, স্মোক করতে থাকে । পিছন থেকে কেউ নিচু গলায় বললো,

—“তনয় ভাই’।

পরিচিত গলা শুনতে পেয়ে তনয় তাঁকিয়ে দেখে ছুটকি দাঁড়িয়ে আছে। এমা ছুটকির চোখে জল কেন?

___________

আফজাল শেখ চলে যেতে-ই’ আইনজীবি সাহেব ও বেড়িয়ে যান। আইনজীবি বাইরে এসে সরাসরি রুদ্রিকের নাম্বারে ফোন করে।

রুদ্রিক গাড়ি চালাচ্ছিলো আইনজীবি ফারুক সাহেবের নাম্বার দেখে রুদ্রিক গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিয়ে, ফোনটা রিসিভ করে।

—-“জ্বী ফারুক সাহেব ওইদিকের কতদূর অবস্হা? ”

—“মিঃ রুদ্রিক আপনার প্ল্যান অনুযায়ী ২৪ঘন্টা হাতে সময় নিয়ে নিয়েছি। মাহির আহমেদ এখন ২৪ ঘন্টার আগে পাউয়ার নিতে পারবে নাহ। ”

রুদ্রিক গাড়ি চালাতে চালাতে নিজের বাঁকা দাঁতের হাঁসি দিয়ে বললো,

—“গুড ভেইরি গুড। থ্যাংকস আ লট মিঃ ফারুক। আমি এখন রাখছি। ”

কথাটি বলে রুদ্রিক ফোন কেটে দেয়।

—-“মিঃ মাহির আহমেদ গেমের রুলস এইবার আপনাকে রাফসিন শেখ রুদ্রিক শেখাবে। ”

কথাটি বলে রুদ্রিক নিজের সানগ্লাসটা পড়ে নেয়। গাড়ি ঘুড়িয়ে ফেলে। এখন তার গন্তব্য যশোর।

মাহির ফোনে কারো সাথে কথা বলতে বলতে বেড়োচ্ছে। তার বেড়োনোর মাঝে-ই’ ইশানি এসে বললো,

—“কোথায় যাচ্ছো তুমি? ”

—-” আমার মনে হচ্ছে রুদ্রিক কোনো গেম খেলছে। আমাকে এখুনি ‘বেলিকুঞ্জে’ যেতে হবে। ওইখানে কুঞ্জ নিশ্চই কোনো প্রমান রেখে গেছে। উফ আমার মাথায় আগে কেনো ‘বেলিকুঞ্জের ‘ নাম মাথায় এলো নাহ। আচ্ছা যা-ই’ হোক তুমি থাকো। আমি এখুনি যাচ্ছি। ”

কথাটা বলে মাহির তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে গেলো।

মাহির বেড়িয়ে যেতে-ই’ ইশানির মন কচকচ করতে লাগলো। সে বুঝে গেছে মাহির কাজ ঠিক করছে নাহ। এখন মাহিরের যদি কোনো ক্ষতি হয় তাহলে?

অন্যদিকে,

আমি ‘বেলিকুঞ্জে’ গিয়ে দেখি, সবকিছু এলোমেলোভাবে রয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে টেবিলে থাকা কিছু ফাইলস চেক করলাম। এগুলো তো কুঞ্জ পিপির লিখা চিঠি ও সব ডাইরি। তারমানে এখানে এমনকিছু রয়েছে, যা মাহির আহমাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে দাঁড় করানো যাবে। বুঝতে পারলাম এগুলো এখানে থাকা বিপদজনক। আমি ফাইলগুলো হাতে নিলাম। তখনি বাইরে থেকে গাড়ির হর্ণ শুনা গেলো। এখন আবার এখানে কে এলো? আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাঁকিয়ে দেখলাম, মাহির আহমেদ গাড়ি থেকে বের হচ্ছে।
এখন কী হবে?

বাকীটা আগামী পর্বে..

চলবে