#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected story)
#পর্ব- ৩৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মাহির আহমেদ রুমে ঢুকতে-ই’ আমি কোণায় গিয়ে লুকিয়ে পড়ি। মাহির চারপাশে চোখ বুলিয়ে রুমের আলমারির দিকে এগিয়ে গিয়ে,সবকিছু ছুড়ে ফেলে ঘাটাঘাটি শুরু করে দেয়। আমি লুকিয়ে তা দেখতে থাকি। মাহির আহমেদ সবকিছু ছুড়ে ফেলে দেয়। কিন্তু কোনো কিছু-ই’ খুঁজে পাচ্ছে নাহ। বিরক্ত হয়ে মাহির দেয়ালে পাঞ্চ করে বলে,
–“কুঞ্জের লেখা কিচ্ছু খুঁজে পাচ্ছি নাহ। যতটুকু সম্ভব এখানে-ই’ তো সবকিছু থাকার কথা। তার মানে কী রুদ্রিক সব প্রমাণ গুলো পেয়ে গেলো? ওহ শিট। ”
মাহির চেয়ারে বসে পড়ে ।
আমি কোনোরকম উঠে দাঁড়ালাম। মাহির আহমেদ অন্যদিকে ঘুড়ে আছেন। এই সুযোগে-ই’ আমাকে পালাতে হবে। কথাটি ভেবে আমি বাইরের দিকে খুব সাবধানতার সহকারে পা রাখতে-ই’ বেখায়ালিভাবে আমার হাত থেকে ফাইলগুলো নীচে পড়ে যায়। আমি আবারো নিজের জায়গায় গিয়ে লুকিয়ে পড়ি।
হঠাৎ রুমে শব্দ হতে-ই’ মাহির ঘুরে তাঁকিয়ে দেখে কেউ নেই। কিসের শব্দ হলো? তারমানে কী রুমে কেউ আছে?
মাহির উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
—“কে এখানে?”
কারো সাড়াশব্দ না পেয়ে মাহির এগিয়ে গেলো।
মাহির আহমেদ তো আমার দিকে-ই’ এগিয়ে আসছে। কী হবে এখন? হে আলাহ সাহায্য করো।
আমি আর কিছু না ভেবে উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়ে বাহিরে চলে গেলাম।
কাজলকে হঠাৎ দেখে মাহির বুঝে গেছে কাজলের কাছে-ই’ সব প্রমাণ রয়েছে। তাই মাহিরও কাজলের পিছনে ছুটে যায়।
রুদ্রিক গাড়ি থেকে বেড়িয়ে যশোরের ভিআইপি হরোষ্টিক হোটেলের ভিতরে চলে যায়। কাউন্টারের সামনে আসতে-ই’ একজন মেয়ে মিস্টি হেঁসে বললেন,
–“জ্বী স্যার কি হেল্প লাগবে বলুন?”
রুদ্রিক নিজের কার্ডটা মহিলাটির দিকে এগিয়ে বললো,
—“আমি রাফসিন শেখ রুদ্রিক। এখুনি এই হোটেলের মেনেজার উদ্দিন সাহেবের সাথে দেখা করতে চাই। আমার কিছু ইনফরমেশন লাগবে।”
—“ওকে স্যার কিছুক্ষন ওয়েট করুন। আমি এখুনি স্যারকে ফোন করে দিচ্ছি। ”
মেয়েটি উদ্দিন সাহেবকে কল করে রুদ্রিকের কথা বলে। রুদ্রিকের কথা শুনে উদ্দিন সাহেব মেয়েটিকে রুদ্রিককে তার কেবিনে পাঠিয়ে দিতে বলে।
রুদ্রিক উদ্দিন সাহেবের কেবিনে ঢুকতে-ই’, উদ্দিন সাহেব উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
—“আহা আমার কী সৌভাগ্য। আসো রুদ্রিক বাবা ভিতরে আসো। ”
রুদ্রিক সৌজন্যতা মূলক হাঁসি দিয়ে বললো,
—“কেমন আছেন আংকেল? ”
—“এইতো ভালো-ই’ আছি। তোমার বাবা তো এখন আমার খবর-ই’ রাখে নাহ। আমি যে তার কলেজ লাইফের ফ্রেন্ড তা বোধহয় সে ভূলে গেছে। আচ্ছা যা-ই’ হোক আগে তুমি কী খাবে বলো? ”
রুদ্রিক এইবার কিছুটা তাড়া দিয়ে-ই’ বললো,
—“নাহ আংকেল আপাতত আমি কিচ্ছু খাবো নাহ। এখন শুধু আমার কিছু ইনফরমেশন লাগবে। ”
—“কিহ ইনফরমেশন লাগবে তোমার বলো? ”
________
সাদি ‘মায়া কুঞ্জ ‘ এসে দেখে সিথি এক কোণে গুটি-শুটি মেরে বসে আছে। সাদি সিথির পাশে বসে উঠে,
—“আর ইউ ওকে? ”
সিথি হঠাৎ করে সাদিকে জড়িয়ে ধরে কান্নার সুরে বলে,
—“সাদি ভাইয়া আমার না কিচ্ছু ভালো লাগছে নাহ। বড্ড কান্না পাচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে ভীষন। আমি জানিনা কী করবো এখন? একদিকে ভাইয়ূ ফোন তুলছে নাহ,অন্যদিকে কাজলও যেনো কোথায় বেড়িয়ে গেলো। আমার সত্যি আজকে অসহায় লাগছে।”
সাদির কি হলো কে জানে? সাদি নিজেও সিথিকে জড়িয়ে ধরে, সিথিকে শান্ত করে নরম কন্ঠে বললো,
—“নিজেকে একদম অসহায় মনে করবে নাহ। একটা কথায় সবসময় মনে রাখবে তোমার সাদি সবসময় তোমার সবরকম বিপদে তোমার পাশে আছে। ”
—‘তোমার সাদি ‘ কথাটাতে ছোট্ট কিন্তু সিথির জন্যে বিশাল কিছু। সিথি সাদির বুকে একেবারে মিশে গিয়ে বলে উঠলো,
—“তুমি-ই’ তো আমার সব সাদি ভাইয়া। তুমি তো আমার সবথেকে বড় ভরসার জায়গা। ”
____________
ছুটকির চোখে জল দেখে তনয় ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললো,
–“ছুটকি তুমি এখানে কেন? তোমার চোখে জল-ই’ বা কেনো? মুছো তাড়াতাড়ি। ”
ছুটকি নিজের চোখের জলটুকু মুছতে গিয়েও মুছলো নাহ। বরং তয়নের দিকে অশ্রুসিক্ত দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বললো,
—“আমার চোখের জলের প্রতিটি বিন্দু প্রতিটা অশ্রু তো আপনাকে ঘিরে-ই’ তনয় ভাই। তা কী আপনি বুঝতে পারেন? হয়তো পারেন তবুও অবুঝ হয়ে থাকে। ”
তনয় আবারো সিগারেট ঠোটে চেপে ধরে। যেনো ছুটকির কোনো কথা-ই’ সে শুনেনি।
তনয়কে চুপ থাকতে দেখে ছুটকি হতাশ হলো। সে হতাশার সুরে-ই’ বললো,
—“তনয় ভাই কিছু বলছি আমি৷ ”
তনয় সিগারেটের টাকা দোকানদারের হাতে গুজে দিয়ে, নিজের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ছুটকির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
—“পড়াশোনা মন দিয়ে করো । এইসব বাচ্ছামি করার সময় এখন তোমার নয়। ”
তনয় এগিয়ে গেলো।
—“ভালোবাসি । আমি বাচ্ছামি করছি নাহ। ”
তনয় থেমে যায় । তবুও পিছনে ফিরেনা। এইসব ভালোবাসা তার কাছে এখন তুচ্ছ লাগে। সবকিছু-ই’ মিথ্যে।
তয়ন আবারো যেতে নিলে ছুটকি বলে উঠে,
—“আপনি আজকে চলে যাচ্ছেন তো তনয় ভাই? সমস্যা নেই। আমার ভালোবাসা সত্যি হলে আপনাকে এই ছুটকির দারপ্রান্তে এসে কোনো একদিন দাঁড়াতে-ই’ হবে। ”
কথাটি গিয়ে তনয়ের বুকে লাগে।
ছুটকি তার কান্না আটকানোর চেস্টা করছে কিন্তু পারছে নাহ। সে-ই’ কেঁদে-ই’ দিলো।
তনয় বাসে উঠে চলে গেলো। ছুটকি মুখে হাত দিয়ে চলে গেলো।
_______
শাড়ি নিয়ে-ই’ একপ্রকার দৌড়ে ছুটে চলেছি আমি।
মাহির আহমেদ আমার পিছনে গাড়ি নিয়ে আসছে।
আমার মাথা এখন ঠান্ডা করতে হবে, যে করে-ই’ হোক। হাতের সব ফাইলগুলো সবার আগে পুলিশ স্টেশনে জমা দিতে হবে।
আমি আবারো দৌড়ে ছুটতে লাগলাম। তখনি আমার সামনে একটি গাড়ি এসে আমাকে ধাক্কা দিলো। আমি ধপ করে মাটিতে পড়ে যাই। গাড়ি থেকে ইশানি ম্যাম বেড়িয়ে আসেন। ইশানি ম্যাম আমার কাছে এসে ফাইলগুলো হাতে নিয়ে বললেন,
—“এই ফাইলগুলো তুমি কোথায় পেলে? ”
ইশানি ম্যামের কথার মাঝে-ই’ পিছন দিয়ে মাহির আহমেদ এর গাড়ি এসে থামলো। এইবার কি হবে?
মাহির আহমেদ বেড়িয়ে এসে বাঁকা হেঁসে বললো,
—“একদম পার্ফেক্ট টাইমে এসেছো। ”
কথাটি বলে ইশানির থেকে ফাইলগুলো মাহির নিয়ে
তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
আমি আটকাতে গিয়েও পারলাম নাহ। ইশানি ম্যাম আমাকে শক্ত করে চেপে ধরেছে। এইবার কি হবে?
রুদ্রিক আমাকে এতো ভরসা করে একটা কাজ দিলো,কিন্তু আমি তা করতে পারলাম নাহ। আমার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো।
ইশানি জানে সে ভূল করেছে,কিন্তু ইশানি বা কী করবে? এইসব প্রমাণের মাধ্যমে সকলের সামনে অতীত চলে আসবে, যার জন্য মাহিরের ক্ষতি হতে পারে। যা ইশানি কিছুতে-ই’ হতে দিতে পারেনা।
মাহির ইশানিকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—“কালকে আমাকে যে করে-ই’ হোক কম্পানির পাউয়ার নিতে হবে। তার মাঝে এই কাজল বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে হবে। ওর ব্যবস্হা তুমি করে দিও। ”
ইশানি ম্যাম আমার হাত ধরে উঠাতে নিলে আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেস্টা করতে-ই,’ উনি আমার হাত আরো জোড়ে চেপে ধরে মাহির আহমেদ এর দিকে তাঁকিয়ে বললেন,
—“তুমি কোনো চিন্তা করোনা মাহির। ”
__________
ভোরের আলো মুখে পড়তে-ই’ আমি সোজা হয়ে বসি। আমার হাত বেঁধে একটি অন্ধকার রুমে বন্ধ করে রেখে গেছে ইশানি শেখ ও মাহির আহমেদ।
আমি সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে নিজের হাতের বাঁধন খুলার চেস্টা করলাম, খুললো নাহ। তাই আমি হাল্কা করে দরি দিয়ে ঘসতে শুরু করলাম। এতে খুব সহজে-ই’ আমার হাতের বাঁধন খুঁলে গেল। আমি নিজের শাড়ির আঁচল থেকে চিঠিটা বের করে নিলাম।
বুদ্ধি খাটিয়ে, কুঞ্জ পিপির লেখা চিঠিটা শাড়ির আঁচলে লুকিয়ে রেখেছিলাম। যার মধ্যে স্পষ্ট লেখা রয়েছে কীভাবে কুঞ্জ পিপির আত্বহত্যার পিছনে মাহির আহমেদের হাত রয়েছে।
আমি উঠে দাঁড়িয়ে
তাড়াতাড়ি দরজার কাছে গেলাম। দরজা বন্ধ তাই জানালা দিয়ে-ই’ তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে গেলাম।
_____
সকাল সকাল করে-ই’ আফজাল শেখ, সিথি, সাদি,দিয়া ও লাজুক অফিসে পৌছে গিয়েছে।
কাজলের নাম্বার বন্ধ দেখে সিথির চিন্তার শেষ নেই।
মাহির ও ইশানি ও অফিসে প্রবেশ করে।
মাহির নিজের কোটাটা ঠিক করে আফজাল শেখের কাছে গিয়ে কটু গলায় বললো,
—“তা মিঃ আফজাল শেখ পুলিশ তো কিছু করতে পারলো নাহ। এখন কী হবে?
কথাটি বলে মাহির হু হা করে হেঁসে উঠলো।
সবাই দাঁত খিচে সহ্য করে আছে। সাদির ইচ্ছে করছে লোকটাকে মাটিতে পিষে ফেলতে।
আমি আজকে অফিসের পাউয়ার আমি নিয়ে-ই’ ছাড়বো। (মাহির বললো)
______
আমি যত দ্রুত সম্ভব দৌড়ে যাচ্ছি। অফিসে পৌছাতে-ই’ হবে। আমার ভাবনার মাঝে-ই’ আমার সামনে একটি গাড়ি এসে থামলো। গাড়ি থেকে রুদ্রিক বেড়িয়ে এসে বললো,
—“কাজল তুই এখান কীভাবে? ”
রুদ্রিক খেয়াল করে দেখে কাজলের চোখ-মুখ শুকিয়ে গেছে একেবারে। কাজলকে দেখেও বেশ অসুস্হ লাগছে।
আমি জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিতে লাগলাম। রুদ্রিক আমাকে ঝাঁকিয়ে বললো,
—“আর ইউ ওকে? কাজল? ”
আমি রুদ্রিকের হাত ধরে বললাম,
—“আম ওকে রুদ্রিক ডোন্ট বি প্যানিকড। আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই। ”
—“সব হবে তার আগে তোর রেস্টের এর প্রয়োজন। ”
—-“রুদ্রিক….
আমার কথার মাঝে-ই’ রুদ্রিক গম্ভীর সুরে বললো,
—“কাজল একদম কথা নয়।
রুদ্রিক আমার হাতে পানির বোতল ধরিয়ে দিলো।
আমি ঢগঢগ করে পানি খেয়ে নিলাম।
রুদ্রিক বলে উঠলো,
—“এখন তোমার যা বলার বলো। ”
আমি রুদ্রিককে সবকিছু খুলে বললাম। রুদ্রিক নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেললো। ইশানি শেখ ও মাহির আহমেদকে এর যোগ্য জবাব সে দিবে।
রুদ্রিক আমাকে তাড়া দিয়ে বললো,
—“এখন আমাদের তাড়াতাড়ি অফিসে যেতে হবে।
লেটস গো কাজল। ”
______________
আফজাল শেখ চেয়ারে বসে পড়লেন, তিনি বুঝতে পারছেন এইবার তার কম্পানি চলে যাবে।
মাহির পকেটে হাত গুজে বললো,
—“আপনারা শুধু শুধু অফিসে বসে আছেন কেন?
কোনো লাভ হবে নাহ। রুদ্রিক কিচ্ছু করতে পারবে নাহ। হাহ। এই শেখ গ্রুপ অফ কম্পানি এখন মাহির আহমেদের। ”
মাহির হেঁসে উঠে।
—-“মাহির আহমেদ স্বপ্ন দেখা ভালো,বাট
নিজের লেভেল অনুযায়ী স্বপ্ন দেখা উচিৎ। আফটার অল লাইফ একটা গেম। ”
কথাটি বলে রুদ্রিক প্রবেশ করে।
বাকীটা আগামী পর্বে…
চলবে…