#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি
#পর্ব-৩৯
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
রুদ্রিকের সাথে কাজলকে দেখে যেনো ইশানি ও মাহির শকড হয়ে গেলো। তারা এইসময় কাজলকে
আশা করেনি। তার মানে কী রুদ্রিক সবকিছু জেনে গেছে। মাহির ইশানির দিকে চোখগরম করে তাঁকায়। যার অর্থ কাজল এখানে এলো কীভাবে? ইশানিও তাজ্জব বনে গেছে। সে ও ঠিক বুঝতে পারছে নাহ। রুদ্রিক ও কাজলকে দেখে সবাই যেনো নিশ্চিন্ত হলো।
মাহির রুদ্রিকের দিকে তীক্ন দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বললো,
—-“তোমরা এখানে এসে কী ভেবেছো? তোমরা কী ভেবেছো আজকে আমাকে এই কম্পানির পাউয়ার নিতে আটকে দিবে?”
রুদ্রিক নিজের ব্লাক সানগ্লাস্টা খুলে, কিছুটা শান্ত গলায় বলে,
—“মাহির আহমেদ আমি কিছুক্ষন আগে একটা কথা বলেছিলাম। লাইফে ইজ আ গেম। এই গেমে প্রতিটা ধাপে টুইস্ট থাকে। এইবার আপনি দেখবেন রাফসিন শেখ রুদ্রিকের গেমের আসল টুইস্ট। প্রমাণগুলো পুড়িয়ে ফেললেই কী এতো সহজে অতীতের সব সত্য লুকানো যায় না। সো বি কেয়ারফুল। ”
রুদ্রিকের কথা শুনে ইশানি শেখ ও মাহির আহমেদ কুলকুল করে ঘামতে থাকে।
রুদ্রিক তাদের দিকে টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বললো,
—“এখুনি ঘামছেন কেনো? এখনো তো অনেক কিছু বলার বাকি। ”
ইশানি ম্যাম ও মাহির আহমেদের অবস্হা বুঝতে পেরে আমি তাদের দিকে মুঁচকি হেঁসে বললাম,
—” এমন সময়ে আমাকে বোধহয় আপনারা আশা করেনিনি তাইনা? আহা ভূল টাইমে এসে গেছি আমরা রুদ্রিক। ”
আমার কথার প্রতিউত্তরে রুদ্রিক ও কিছুটা ঠাট্টার সুরে বললো,
—“একদম ঠিক বলেছিস কাজল, মাহির আহমেদ এবং ইশানি শেখ আমাদের এই মূহুর্তে একদম এক্সপেক্ট করেনি। তারা তো ভেবেছিলো খুব সহজেই আজকেই তারা শেখ গ্রুপ অফ কম্পানির পাউয়ার নিয়ে নিবে। বাট আমরা এসে বোধহয় সব প্ল্যানের বারোটা বাজালাম।
রাফসিন শেখ রুদ্রিক ও তার ওয়াইফ কাজলরেখা শেখ থাকতে এই কম্পানির পাউয়ার আপনি কীভাবে নিবেন? সবকিছু এতোটা সহজ? ”
সাদি ভাইয়া এইবার মুখ খুলে বললেন,
—“রুদ্রিক তুই কোথায় ছিলিস?”
সিথি আমার কাছে এসে বললো,
—“কাজল তোকেও ফোনে পাওয়া যাচ্ছিলো নাহ। জানিস কতটা চিন্তায় ছিলাম আমি। সারাদিন কোথায় ছিলিস তুই? ”
আমি ইশানি ম্যামকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
—“ইশানি ম্যাম হয়তো ভালো করে বলতে পারবে। কেননা উনিই তো আমাকে সারারাত বদ্ধ ঘরে আমাকে আটকিয়ে রেখেছিলো।”
—-“কিন্তু ইশানি আপাই কেনো করেছিলো? ”
দিয়া পিপির প্রশ্নে বড় সাহেব ক্ষিপ্ত গলায় বললেন,
—“ইশানির মতো মানুষের কোনো বিশ্বাস নেই। ও নিজের স্বার্থের জন্যে সবকিছু করতে পারে।”
ইশানি শেখ কি বলবে বুঝতে পারছে না।
লাজুক বলে উঠলো,
—“রুদ্রিক তোমরা কিছু প্রমাণের কথা বলছিলি। কিসের প্রমাণ ছিলো? ”
রুদ্রিক ইশারা করে আমাকে চিঠিটা দিতে বলে। আমি রুদ্রিকের দিকে চিঠিটা দিয়ে বললাম,
—“এই চিঠিটা কুঞ্জ পিপির লেখা। যাতে স্পষ্ট লেখা রয়েছে কে তার সন্তানের পিতা এবং কে তাকে আত্বহত্যা করার জন্যে প্রতিনিয়ত বাধ্য করেছে। ”
আমার কথা শুনে বড় সাহেব কান্নামিশ্রিত গলায় বললেন,
—“রুদ্রিক তো তার ফুপিয়াম্মুর মৃত্যুর জন্যে আমাকে এবং জেসমিনকে দায়ী করে। যদিও আমাদের ও দোষ ছিলো, কিন্তু সেসময় আমাদের ও মাথা ঠিক ছিলো নাহ। কুঞ্জ কিছুতে-ই’ তার সন্তানের বাবার নাম বলছিলো নাহ। তার মধ্যে আবার সে সন্তানকে এভোয়েডও করতে চাইছিলো নাহ। তাই আমরা তখন হিতাহিতজ্ঞান শূন্য হয়ে কুঞ্জের প্রতি অমানবিক আচরণ করে ফেলেছিলাম। ”
কথাটি বলে আফজাল শেখ কেঁদে উঠে।
দিয়া আফজাল শেখকে ধরে বলে,
—“তুমি একটু শান্ত হও ভাইয়ূ। ”
আমি মাহির আহমেদের দিকে তাঁকিয়ে বললাম,
—-“এই লোকটাই হলো কুঞ্জ পিপির সন্তানের বাবা। কুঞ্জ পিপি দিনের পর দিন ঠকিয়েছে এই লোকটাই।”
ইশানি ও রুদ্রিক ছাড়া বাকি সবাই কথাটি শুনে থম মেরে রইলো।
রুদ্রিক চিঠিটাকে শক্ত করে চেপে ধরে। মাহির থমথমে গলায় বললো,
—“এইসব কি ছাইপাশ লেখা রয়েছে। এতে কীভাবে প্রমাণ হয় আমি কুঞ্জের সন্তানের বাবা ছিলাম? দেখো গিয়ে কত পুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক করে শেষে আমাকে ফাঁসানোর জন্যে এইসব চিঠি লিখে গেছে। চরিত্রহীন মেয়ে-ছেলে একটা। ”
রুদ্রিক কথাটি শুনেই রাগে মাহিরের নাকে জোড়ে ঘুষি দেয়। মাহির ছিটকে পড়ে যায়। রুদ্রিক নিজের শার্টের ফ্লড করে মাহিরের পেটে লাত্থি দিতে দিতে বললো,
—“তোর সাহস কী করে হলো? আমার ফুপিয়াম্মুকে চরিত্রহীন বলেছিস তুই? তোর যে জিহব্বা দিয়ে ‘ চরিত্রহীন ‘ শব্দটি উচ্চারণ করেছিস, সেই জিহব্বা আমি টেনে ছিড়ে ফেলবো। ”
রুদ্রিক ইচ্ছামতো মাহিরকে ঘুষি দিচ্ছে। মাহির ব্যাথায় আর্তনাদ করছে।
—-” রুদ্রিক কি করছিস কী মাহির তো মরে-ই’ যাবে.
ইশানি ম্যাম কথাটি বলে এগোতে নিলে আমি উনার হাত ধরে বলললাম,
—“ওই লোকটার জন্যে আর কত নীচে নামবেন আপনি ইশানি ম্যাম? ভালোবাসাতে আপনি এতোটা অন্ধ হয়ে গেলেন? কীভাবে? ”
আমাদের কথার মাঝেই পুলিশ চলে আসে। অফিসার এসে কোনরকম রুদ্রিককে আটকিয়ে বলে,
—“কি করছেন কী মিঃ রুদ্রিক। আইন নিজের হাতে এইভাবে তুলে নিবেন নাহ। ”
রুদ্রিক জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিতে থাকে। রাগে যেনো তার কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। মাহিরকে খুন করে ফেলতে পারলে সে শান্ত হতো।
মাহির কোনরকম উঠে দাঁড়িয়ে অফিসের কাছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে গিয়ে বললো,
—“দেখুন অফিসার কীভাবে আমার উপর মিথ্যে দায়ভার দিয়ে দিচ্ছে। কিসব চিঠি দিয়ে বলছে আমি নাকি কুঞ্জের আত্বহত্যার পিছনে দায়ী। এইসব চিঠি বানানো যায়, হাতের লেখা নকল করে। ”
রুদ্রিক উচ্চস্বরে হেঁসে উঠে।
মাহির অবাক হয় রুদ্রিকের কান্ডে। রুদ্রিক খানিক্টা হেঁসেই’ বললো,
—“আমি যশোরে গিয়ে সব ইনফরমেশন কালেক্ট করে এসেছি। ”
পুলিশ এগিয়ে এসে বলল,
—“মাহির আহমেদ আপনি যশোরের হোটলে প্রায় সময় মিস কুঞ্জের সাথে বসবাস করতেন। সবাই তাকে আপনার স্ত্রী বলেই জানতো। রিসেপশনিস্টের কাছে আপনার এবং মিস কুঞ্জের সাইন ও রয়েছে।”
মাহির ও ইশানি থমকে যায়।
রুদ্রিক মাহিরের কাছে গিয়ে মাহিরের শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বললো,
—“রাফসিন শেখ রুদ্রিক আসলে তা তা তোর কল্পনার বাইরে। ”
আফজাল শেখ কোনোরকম উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
—-“আমাকে পুরো ঘটনাটা খুলে বলো, রুদ্রিক। ”
রুদ্রিক এইবার শুরু থেকে বলা শুরু করে যা কুঞ্জ তার ডাইরিতে লিখে গিয়েছিলো।
রুদ্রিকের ভাষ্যমতে কুঞ্জ তার ডাইরিতে লিখে গিয়েছিলো,
মাহিরের সাথে তার পরিচয় যশোরের একটি ভার্সিটিতে হয়। কুঞ্জ যশোরের ভার্সিটিতে পড়াশোনা করতো।
মাহির সেখানে এমনি ঘুরতে গিয়েছিলো। কুঞ্জকে প্রথম দেখাতেই মাহিরের পছন্দ হয়ে যায়। সে কুঞ্জকে প্রপোজও করে বসে। কুঞ্জ তা এক্সপেক্টও করে ফেলে। মাহিরের তখন তার স্ত্রীর সাথে ঝামালা হচ্ছিলো বলে, সে কুঞ্জকে ব্যবহার করতে শুরু করে। মাহির জানে কুঞ্জ ইশানির বোন কিন্তু কুঞ্জ জানতো নাহ মাহির বিবাহিত এবং তার-ই’ বোনের স্বামী।
রুদ্রিক আবারোও বলে উঠে,
—“মাহির লোক টা ফুপিয়াম্মির.মিব্রেনওয়াশ এমনভাবে করছিলো যার কারণে, সে নিজের সর্বোচ্চ বিলিয়ে দিয়েছিলো। ফুপিয়াম্মুর তখন আবেগের বয়স ছিলো। ভালোবেসে ভূলকেও সঠিক মনে করতো। তার সুযোগ নিয়েছে মাহির আহমেদ। ফুপিয়াম্মু যখন তার সন্তানের কথায় মাহিরকে জানায়,তখন মাহির তা অস্বীকার করে এবং প্রতিনিয়ত মানষিক অত্যাচার করতো,যার ফলে ফুপিয়াম্মু আত্বহত্যার পথ বেঁচে নিয়েছিলো সেদিন।”
—-“ইশানি আপাই কী প্রথম থেকে সব জানতো? ”
দিয়ার প্রশ্নে রুদ্রিক বললো,
—“নাহ, ফুপিয়াম্মু মারা যাওয়ার পর ইশানি শেখ তা জানতে পারেন। তিনিও মাহির আহমেদের ভালোবাসায়ে এতোটা অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন যে,নিজের বোনের খুনিকে বাঁচানোর জন্যে সর্বোচ্চ চেস্টা করেছে। এমনকি ডির্ভোসের একটা নাটক করে মাহির আহমেদকে এইসবের থেকে দূরে পাঠিয়ে দিয়েছে, যেনো মাহিরের প্রতি কারো বিন্দুমাত্র সন্দেহ না হয়। ”
আফজাল শেখ আর কিছু সহ্য করতে পারছে নাহ। তিনি চেয়ারে বসে পড়েন। এতো কিছু হয়ে গেছে অতীতে।
পুলিশ অফিসার এইবার মাহিরের দিকে বন্ধুক তাঁক করে বলে,
—“আপনি যে মিস কুঞ্জকে আত্বহত্যার জন্যে প্রলোচন দেখিয়েছেন,তার প্রমানও মিঃ রুদ্রিক আমাদের দিয়েছেন। আপনার ও মিস কুঞ্জের ফোনআলাপের রেকর্ড মিস কুঞ্জের ফোনে ছিলো। যা মিঃ রুদ্রিক সংগ্রহ করেছেন। সো ইউ আর আন্ডার এ্যারেস্ট মিঃ আহমেদ। তা ছাড়াও শেখ গ্রুপ অফ কম্পানির পাউয়ার প্রতারণা করে নিতে চেয়েছেন। তাই আপনার ও ইশানি শেখের নামে ফ্রড কেস করা হয়েছে। ইউ আর আন্ডার এ্যারেস্ট মিঃ আহমেদ।”
মাহির এইবার সব দিক দিয়ে ফেঁসে গেছে। সে বুঝতে পারছে নাহ, এইবার সে কী করবে?
আমি এগিয়ে এসে বললাম,
—“আপনি এইবার কোথাও পালাতে পারবেন নাহ মিঃ আহমেদ। ”
তখনি ফায়ারিং করে। গুলির শব্দ কানে আসতেই…..
চলবে?