#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected story)
#পর্ব- ৫১
#Jannnatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
কাজল ধীরে ধীরে রেসপন্স করছে! সত্যি এইটা মিরাক্কাল। ডক্টর খানিক্টা চিৎকার করেই কথাগুলো বলতেই,রুদ্রিকসহ সকলে ভিতরে চলে গেলো।
রুদ্রিক ভিতরে গিয়ে দেখে কাজলের হাতের আঙ্গুলগুলো আস্তে আস্তে কোনরকম নড়ে উঠছে। দিয়া নিজের মুখে হাত দিয়ে ফেলে খুশিতে। সিথি তো খুশিতে কেঁদেই উঠে। রুদ্রিকের বাবা-মা সহ, তনয় ছুটকিও কাজলের বাবা-মা ও চলে আসে। কাজলের মা তার স্বামীকে জড়িয়ে কেঁদে দেয়। নিজের চটপটে মেয়েকে এইভাবে নড়তে দেখে তাদের যেন খুশির অন্তর নেই। রুদ্রি ধীরে ধীরে এগিয়ে কাজলের কাছে গিয়ে বসে। রুদ্রিক বুঝতে পারছে কাজলের নিজের চোখজোড়া খুলতে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। রুদ্রিক কাজলের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে বলে,
‘জানেমান আস্তে ধীরে নিজের চোখ খোলার চেস্টা কর। আমি জানি তুই পারবি। একটিবার খুল প্লিয। ‘
খানিক্টা অসহায় নিয়ে কথাগুলো বললো রুদ্রিক।
রুদ্রিকের কথা শুনে কাজল আস্তে আস্তে করে নিজের চোখজোড়া খুলার চেস্টা করে। সর্বপ্রথম রুদ্রিককেই সে দেখতে পায়। রুদ্রিককেই দেখেই কাজলের অন্তরটা জুড়িয়ে যায়।
এতোদিন পরে কোমায় থেকে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে দেখে কাজলের যেনো এতোদিনের সব দুঃখ কষ্ট নিমেষেই যেনো শেষ হয়ে গেলো।
সবার মুখে ফুটে উঠলো। ছুটকি খুশিতে তনয়কে জড়িয়ে ধরলো। তনয় হাঁসলো।
কাজলকে চোখ খুলতে দেখে রুদ্রিক কাজলের মুখে অজস্র চুমু খেলো। এতোদিনের অপেক্ষা অবশেষে তাদের শেষ হলো। তার কাজল তার শুভ্ররাঙাপরী আবারোও সুস্হ হয়ে উঠেছে, রুদ্রিকের খুশি দেখে কে। কাজল ও তার রুদ্রিকের ভালোবাসা ভরা প্রতিটি স্পর্শ মনের গভীর থেকে অনুভব করছে। রুদ্রিক কাজলের হাতজোড়ায় চুমু খেয়ে বলে,
‘আমি আজ কতদিন পর এতোটা খুশি হয়েছি তোকে বলে বুঝাতো পারবো নাহ কাজল। আমার হাত এখনো কেঁপে চলেছে অনাবরত। তুই আজ ঠিক দশ মাস পর আবারো চোখ খুলে তাঁকিয়েছিস। ‘
রুদ্রিকের চোখ থেকে দুফোটো জল গড়িয়ে পড়লো।
কাজল তা সযত্নে মুঁছিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,
‘একদম কাঁদবে নাহ বুঝেছো? তুমি দিন দিন মেয়েদের মতো ছিচকাদুনে হয়ে যাচ্ছো বুঝলে? ‘
কাজলের কথা শুনে সবাই হেঁসে উঠে। কাজল কোনরকম উঠতে চাইলে ডক্টর তৎক্ষনাক কাজলকে থামিয়ে বলে,
‘কি করছেন আপনি? এখনো আপনার শরীর ঠিক হয়নি। দীর্ঘ দশ মাস পরে আপনি চোখ খুলেছেন। এইসময় আপনার বেশি কথা বলা ঠিক হবেনা। তাছাড়া আপনার এখনো রিষ্ক আছে। ‘
ডক্টরের কথায় রুদ্রিক কাজলের দিকে কড়া চোখে তাঁকিয়ে বলে,
‘তোকে কে উঠতে বলেছে? ‘
‘কিন্তু আমার মেয়েটা? ও কোথায়? কতদিন হলো আমার মেয়েটাকে দেখিনা। আমি সেই কবে দেখেছিলাম। কোথায় আমার মেয়ে? ‘
কাজলের কথার মাঝেই সিথি কুহুকে নিয়ে কাজলের কোলে দিয়ে বলে,
‘এই নে তোর মেয়ে। দেখেছিস কতটা বড় হয়ে গেছে।
একদম তোর মতো দেখতে হয়েছে কিন্তু। ‘
কাজল তার মেয়েকে কাছে পেয়ে আদরে আদরে তার মেয়েকে ভড়িয়ে দেয়। পুরো ফুটন্ত গোলাপের মতো দেখতে হয়েছে তাদের ছোট্ট মেয়ে। মাশা-আল্লাহ বলে মেয়ের কপালে চুমু খায় কাজল। গোলাপের মতো টুকটুকে মেয়েটাকে দেখে কাজলের প্রাণটা যেনো জুড়িয়ে যায়।
মেয়েটাও তার মায়ের স্পর্শ পেয়েই খিলখিল করে হাঁসতে লাগলো। তাকে দেখেই মনে হচ্ছে আজ সে অনেক খুশি। কিন্তু আমার সোনটার নামটা কি? কাজল নিজে নিজে প্রশ্নটা করে। কাজল প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে রুদ্রিকের দিকে তাঁকাতেই রুদ্রিক বলে উঠে,
‘আমাদের মেয়ে কুহু শেখ। ‘
কুহুপাখি কি সুন্দর নামটা। কাজল তার কলিজার টুকরোকে নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে। রুদ্রিকও প্রশান্তির হাঁসি দিয়ে কাজল ও তার মেয়ে কুহুকে জড়িয়ে ধরে বুকে।
সবাই মুগ্ধতা নিয়ে ছোট্ট পরিবারটাকে দেখছে। সত্যি কতটা সুন্দর! সাদি এগিয়ে এসে দিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘এই সুন্দর মুহুর্তের একটা সেল্ফি তুললে কেমন হয় দিয়া পিপি? ‘
‘একদম পারফেক্ট ‘
কথাটি বলে দিয়া নিজের ফোনটা বের করতে নিলে, লাজুক তাতে বাঁধা দিয়ে বলে,
‘উহু আজকে সেল্ফি নয়। আজকে একটা ফ্যামেলি পিকচার হয়ে যাক শুধুমাত্র রুদ্রিক, কাজল ও তাদের ছোট্ট মেয়ের। ‘।
লাজুকের কথায় সায় দিয়ে দিয়া টুক করে কয়েকটা পিক তুলে ফেললো। রুদ্রিক -কাজল ও তাদের মেয়ের ছবিগুলো ক্যামেরাবন্দী হয়ে গেলো।
ডক্টর কাজলের কাছে এসে বললেন,
‘ম্যাম এখন কিন্তু আপনার ব্যাড থেকে উঠলে একদম চলবে নাহ। এখনো আপনার অনেক টেস্ট বাকি রয়েছে। মিঃ রুদ্রিক আপনি কালকে আপনার ওয়াইফে কালকে চেকাপ করাতে নিয়ে আসবেন। ‘
‘ওকে ডক্টর। ‘
____________
তনয় গেটের কাছে আসতেই ছুটকি দৌড়ে তনয়ের সামনে এসে বলে,
‘তুমি কী চলে যাচ্ছো তনয় ভাই? ‘
‘কি মনে হয়? ‘
‘চলে যাচ্ছো। থাকবেই নাহ বা কেন? তুমি তো ঢাকায় এসেছিলে আপুনিকে দেখতে। আপুনি এখন সুস্হ হয়ে গেছে। এখন তো চলেই যাবে। আচ্ছা তুমি আপুই কে কি এখনো ভালোবাসো? ‘
খানিক্টা অভিমান নিয়ে কথাগুলো বললো।
ছুটকি তনয় রাগ করলো নাহ বরং হাঁসলো। হেঁসেই বললো,
‘ছুটকি একটা কথা কী জানো? আমি কাজলকে ভালোবাসিনি। আমি ভেবেছি আমার বিরহ ভরা জীবনে কাজলের কাছে আমি নিজের সুখ খুঁজে পাবো তাই কাজলের কাছে ছুটে এসেছিলাম। কিন্তু এইটা বুঝে গেছি রুদ্রিকের থেকে কাজলকে কেউ ভালোবাসতে পারবে নাহ। কেউ নাহ। কাজল শুধুমাত্র রুদ্রিকের জন্যে। আর আমার ভালোবাসার কথা বলছো? এইবার আমি নিজের জীবনের সঠিক সিদ্ধান্তটা নিবো। ‘
কথাটি বলে তনয় সামনের দিকে এগোতে নিলে, ছুটকি বলে উঠে,
‘তোমার কথাটা বুঝলাম নাহ। ‘
‘আমি বোধহয় তোমার ভালোবাসার মায়ায় সত্যি পড়ে গেলাম। ‘
কথাটি বলে তনয় আর দাঁড়ালো নাহ চলে গেলো। ছুটকি মুখে হাত দিয়ে লাফিয়ে উঠলো। আজকে একের পর খুশির খবর আসছে।
______
কাজল মেয়েটাকে ফিটার খাওয়াতে গিয়েও পারছে নাহ। মেয়েটা কেঁদে উঠছে।
‘সত্যি কাজল তুই কিচ্ছু পারিস নাহ। অকর্মা হয়ে গিয়েছিস। ‘
‘ওহ আচ্ছা তাইনা অকর্মা হয়ে গেছি আমি? নিজে কি পারো হুহ? ‘
‘ওকে এখনি দেখাচ্ছি। ‘
রুদ্রিক এগিয়ে এসে, কাজলের থেকে ফিটারটা নিয়ে, তার মেয়েকে সযত্নে খাওয়াতে শুরু করে দিলো। মেয়েটাও বাবাকে দেখে টুকটুক করে খেয়ে নিলো। বাবা-মেয়ের কান্ড দেখে আমি বললাম,
‘ওরে বাবা! এতোক্ষন কি কান্না আর এখন বাবা আসাতেই সব কান্না শেষ? ‘
কাজলের কথা কুহু কি বুঝলো কে জানে? কুহু হেঁসে দিলো।
রুদ্রিক কিছুটা ভাব নিয়ে বললো,
‘দশ মাস ধরে এই কাজ আমি করছি। সো তুই আমাকে চ্যালেন্জ দিতে আসবি নাহ হুহ। ‘
কাজল মুখ বেঁকিয়ে বলল,
‘ওকে আমার তাহলে কি কাজ? আমাকে তো কারো লাগবে নাহ। তাহলে আমি বরং চলে যাই। ‘
।
কথাটি বলে কাজল চলে যেতে নিলে, রুদ্রিক কাজলের হাত ধরে আমাকে কোলে বসিয়ে বলে,
‘একদম কোথাও চলে যাওয়ার কথা বললে ঠ্যাং খুঁড়া করে দিবো। আমার থেকে দূরে কোথায় যেতে পারবি নাহ। ‘
‘যদি হারিয়ে যাই? ‘
আমার প্রশ্নে রুদ্রিক কিছুক্ষন থেমে বলে,
‘এইসব কি প্রশ্ন করছিস কাজল? ‘
‘তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। আগে বলো যদি কোনদিন হারিয়ে যাই তাহলে?’
‘হারিয়ে যেতে দিবো নাহ। খুঁজে হলেও বার বার তোকে ফিরিয়ে এনে রুদ্রিকের দারপ্রান্তে এসে দাঁড় করাবো। ‘
রুদ্রিকের সোজা উত্তর।
‘যদি ফিরিয়ে আনতে না পারো তাহলে? ‘
‘তাহলে তোর পিছনে পিছনে চলে যাবো। তবুও তোকে আমার থেকে কোনদিন আলাদা হতে দিবো নাহ জানেমান।’
আরেকটা কথা সবসময় মাথায় রাখবি কাজল ছাড়া রুদ্রিক কিচ্ছু নাহ। রুদ্রিকের শুভ্ররাঙাপরী আছে বলেই রুদ্রিক রয়েছে। ‘
কথাটি বলে রুদ্রিক কাজলের কপালে ভালোবাসার পরম একেঁ দিলো। কাজলের শরীর শিউরে উঠলো ভালোলাগার স্পর্শে।
‘রুদ্রিক একটা গান গেঁয়ে শুনাবে? ‘
‘হঠাৎ? ‘
‘অনেকদিন শুনেনা। আজকে শুনতে চাই। ‘
রুদ্রিক কাজলের আবদার ফেলতে না পেরে গিটারটা নিয়ে প্রানভরা নিঃশ্বাস নিয়ে কাজলকে ডেডিকেট করে গাইতে লাগলো,
কাজল তুই আমার কাছেই থেকে যাস বরং….
কেননা……
আমার পরান যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো
আমার পরান যাহা চায়
তোমা ছাড়া আর এ জগতে
মোর কেহ নাই, কিছু নাই গো
আমার পরান যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো
আমার পরান যাহা চায়
রুদ্রিকের গান শুনে আনমনে কাজল তার সেই ‘গোধূলী বেলার স্মৃতি ‘ ডাইরিতে লিখালিখি করতে লাগলো।
রুদ্রিক গানটা থামিয়ে আমার পাশে বসে বললো,
‘কি এতো লিখছিস আমাকে বলবি? ‘
‘এখন নাহ। যখন সময় আসবে তখন তুমি নিজেই দেখতে পাবে। ‘
‘অনেক হয়েছে। এখন ঘুমাতে হবে। ‘
রুদ্রিক কাজলজে কোলে নিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে নিজেও বিছানায় শুয়ে পড়ে। তাদের দুজনের মাঝখানে রয়েছে তাদের ছোট্ট পরী কুহু।
রুদ্রিক কাজল ও তার কুহু পরীর হাতদুটো নিজের হাতেত মুঠোয় নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়লো। আজ সে বড্ড নিশ্চিন্ত। কাজল ও রুদ্রিক ও তার মেয়ের দিকে তাঁকিয়ে প্রশান্তির হাঁসি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
মাঝরাতে রুদ্রিকের ঘুম ভাঙ্গতেই রুদ্রিক বিছানায় তাঁকিয়ে দেখে কাজল নেই। কাজল কোথায় গেলো? তখনি তার কানে মৃদ্যু চিৎকার ভেঁসে আসে।
বাকীটা আগামী পর্বে!
চলবে।