গোপনে রাঙানো প্রেম পর্ব-৪৫+৪৬

0
419

#গোপনে_রাঙানো_প্রেম
#হুযাইফা_মাইশা
—৪৫

ওয়াহিদ লম্বা দম টানে। সামনে বসা মেয়েটার কোনো হেলদোল নেই। একধ্যানে চা গিলছে। ওয়াহিদ যেন কোনো অবহেলার বস্তু। সে তো ‘র‍্যাগ’ দিবে বলে মজা করলো শুধু। এখন এমন ভান করছে যেন দৃষ্টি তার দিকে আনাই ঘোর পাপের সমতুল্য। ওয়াহিদ শেষমেশ না পারতে মুখ খুলল,
“ নিশাত? আমি যে তোমাকে ভালোবাসি, সেটা বিশ্বাস করেছো?”

নিশাত বড্ড অবহেলার সহিত একবার চোখ তুলে তাকালো। পরপরই মাথা নুইয়ে ফেলল। তার বুকের ভেতর ঝড় বইছে। অনুভূতির এক অদ্ভুত ঝড়।

ওয়াহিদ আশানুরূপ জবাবও পেলনা, ইশারাও না। ও পুনরায় বলল,
“ নিশাত! আমি কি তোমাকে জোর করছি?”
নিশাত এবার ছোট্ট করে বলে,
“ না।” বলেই সে হাঁফ ছাড়ে।

.

সময় স্রোতের মতই বয়ে চলছে। দেখতে দেখতে আজ দুই মাস পেরিয়ে গেছে। ফেব্রুয়ারী আসলো বলে।
আলিফ শেখ আর সাঈম রহমান মুখোমুখি বসা। বিরাট গম্ভীর আলোচনা চলছে। সুহাদ পাশেই চুপটি করে বসা। তার কথা বলার কিছু নেই। হবু শশুরের সামনে কথা বলতে তার লজ্জাও লাগছে বটে। রোজ মেয়েটা ওকে কিছুই জানায়নি আজকের ব্যাপারে। অথচ সকাল সকাল ওদের বাড়িতে হানা দিয়েছেন আলিফ শেখ। বিয়ের আলোচনা চলছে। উনি আর দেরী করতে চাননা। তার স্ত্রী চান যত দ্রুত সম্ভব এবার বিয়েটা হোক। সাঈম রহমান আলোচনার এক পর্যায়ে মাথা ঘুরালের সুহাদের দিকে। সুহাদের থতমত খাওয়া দৃষ্টি। সাঈম সাহেব বললেন,
“ সুহাদ, তোমার কোনো আপত্তি নেই তো?”
“ না, আব্বু।” সঙ্গে সঙ্গে জবাব এলো সুহাদের। আলিফ শেখ উঠে দাঁড়ালেন। বিস্তর হেসে বললেন,
“ দেখ ভাই, ফেব্রুয়ারী বাদে হাতে আর ফ্রি সময় নেই। এরপর আমাদের কাজের ব্যস্ততা বাড়বে। এই সময়টাই ঠিক মনে হচ্ছে আমার কাছে, বাকিটা তোর ওপর।”

..

নায়ীব দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। ঘোর অন্ধকার। রাত তখন প্রায় সাড়ে এগারোটা। নিশাতের পরীক্ষা চলছে,সে জলদি জলদি ঘুমায়, আবার খুব ভোরে উঠে পড়তে বসে। নাবিদ সাহেবের প্রেশার বেড়েছে,তাই তিনিও দেরীতে ঘুমাননা। অন্ধকারে ঘেরা চারপাশের দিকে চেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল নায়ীব। ধীর কদমে এগিয়ে গেল নিজের রুমটার দিকে। আধ-খোলা দরজাটা পুরোপুরি খুলে,অন্ধকারেই সুইচবোর্ড হাতড়ালো নায়ীব। নিঃশব্দে লাইট জ্বালাতেই দেখল, বিছানার মাঝবরাবর একজন শুয়ে আছে। আধো-আধো চোখের পাতা মেলে তার দিকে তাকাচ্ছে। নায়ীব এগোয়,
“ ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম নাকি?”

স্রোত উঠে বসে। চোখ কচলে বলে,
“ না, না। আমি অপেক্ষা করছিলাম। কখন যে ঘুমিয়ে গেছি!”
নায়ীব ঘড়ি খুলতে খুলতে ওর দিকে চাইলো। মেয়েটা তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে নেমে ছুটলো রান্নাঘরে। সে-ও এখনও খায়নি।

নায়ীব খাবার টেবিলে দুটো প্লেট দেখে চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কপট রাগে ছেয়ে যায় কণ্ঠ,
“ যেদিন দেরী হয়, সেদিন অপেক্ষা করেন কেনো? আব্বু আর নিশাতের সঙ্গে খেতে পারেননা?”
স্রোত শুকনো মুখে হাসে,
“ না।”
ওর ছোট্ট জবাবের পিঠে এবার নিশ্চুপ থাকে নায়ীব। প্লেটে মাছ তুলে দেয় স্রোত। তার পাত তখনও খালি। ইলিশ মাছ নায়ীবের প্রিয়,সেটাই আজ রাবেয়া রান্না করেছেন। অথচ এই কাঁটাযুক্ত মাছ স্রোত গিলতে পারেনা কোনোভাবেই।

নায়ীব আড়চোখে তাকালো। রাশভারি গলায় প্রশ্ন করল,
“ মাছ খাচ্ছেন না কেনো?”
“ কাঁটা..”
স্রোত ঠোঁট গোল করে বলে। নায়ীব তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে। স্রোত ভাত নিয়ে নাড়াচাড়া করে। তার ক্ষিদে ম-রে গেছে সেই কবেই। সেকেন্ড কয়েক গড়াতেই প্লেটের এক কোণে স্থান পায় নায়ীবের বেছে বেছে দেয়া মাছ। স্রোত চোখ তুলে তাকাতেই নায়ীব গাঢ় স্বরে বলে,
“ খান।”

খাওয়া শেষে নায়ীব চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পড়ে। স্রোত সব গুছিয়ে আসতে আসতে মিনিট দশ এক পেরোয়। ও রুমে ঢুকতেই লম্বা হয়ে শুয়ে থাকা নায়ীবের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে,
“ ঘুমিয়ে গেছেন?”
নায়ীব সে কথার উত্তর দেয় অন্যভাবে,
“ লাইট অফ করে দিন।”

স্রোত লাইট অফ করে গুটিগুটি পায়ে এগোয়। বিছানায় শুতেই খেয়াল করে নায়ীব সোজা হয়ে,মাথায় হাত ঠেকিয়ে শুয়ে আছে। স্রোত কাছ ঘেঁষে,
“ টেনশড্?”

উত্তর আসেনা। স্রোত হাতে ভর দিয়ে আধশোয়া হয়। ওর দিকে ঝুঁকে বলে,
“ এ্যাই, নায়ীব! শুনছেন?”
“ কি?” কণ্ঠটা কেমন এলোমেলো শুনালো। স্রোত মাথা রাখল প্রশ্বস্ত বুকটায়। ম্লান গলায় বলল,
“ রাগ করেছেন কেনো?”

উত্তর আসেনা এবারও। স্রোত মাথা তুলে,
“ আচ্ছা। আর কোনোদিন অপেক্ষা করবোনা। সন্ধ্যা হলেই খেয়ে ফেলবো।”
নায়ীব ড্রিম লাইটের আবছা আলোয় চোখ খুলে ওর দিকে তাকায়। পিটপিট করে তাকিয়ে রয়েছে মেয়েটা। সে দৃষ্টিতে রাগ গলতে বাধ্য। নায়ীব অপলক, নির্নিমেষ চেয়ে রয়। জবাব না পেয়ে মুখ আগায় স্রোত। শক্ত চোয়ালে ঠোঁট ছুঁয়ে বলে,
“ আর হবেনা, বললাম তো।”
নায়ীবের হাত তখন ওকে ঝাপটে ধরে। বুকের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে বলে,
“ আমি বাইরে নাশতা করি, স্রোত। তাই রাতে ক্ষিদে ওতটা পায়না। আপনি আর অপেক্ষা করবেন না, ঠিকাছে?”

রোজ গালে হাত ঠেকিয়ে স্ক্রিনের দিকে চেয়ে আছে। সুহাদ ভিডিও কলে। অদ্ভুত! ছেলেটার এত প্রফুল্লতা তো আগে টের পায়নি রোজ। বিয়ে ঠিক হয়েছে কি, সুহাদের উৎফুল্লতা বেড়েই চলেছে। রোজ হেসে ফেলল অকারণেই। ওপাশে থাকা সুহাদ এবার কথা থামায়। প্রশ্ন করে,
“ হাসছো কেনো,রোজ?”
“ এমনি। তুমি বলো,আর কি কি প্ল্যান করেছো বিয়ে নিয়ে?”
সুহাদ পুনরায় বলা শুরু করে।
রোজ মন দিয়ে শুনে।

..

“ আব্বু, আপনারাও আমার সঙ্গে চলুন না।” স্রোত ঠোঁট কামড়ে, নিচু স্বরে বলে।

নাবিদ সাহেব উত্তর দেয়ার পূর্বে হাসলেন,
“ তা কি করে হয়, মা? নিশাতের পরীক্ষা চলছে। দেখি আমি পারলে বিয়ের দিন যাব নাহয়?”
স্রোত ম্লান মুখে নিশাতের দিকে চায়। বেচারিরও মন খারাপ। সুহাদের বিয়ের আর এক সপ্তাহ বাকি। সামনের শুক্রবারে বিয়ে। নিশাতের পরীক্ষা,নায়ীবের ডিউটি। নাবিদ সাহেব গেলে তো আর একা যাবেন না মেয়েকে ফেলে। স্রোত পড়েছে বিপাকে। তার একা যেতে মন চাচ্ছেনা, আবার না গেলেও শান্তি লাগছেনা।
ও উঠে রুমে চলে এলো। নায়ীব তখন বিছানার ওপর বসে ল্যাপটপ ঘাটছে। ভীষণ মনোযোগী। স্রোত দরজাটা ভিড়িয়ে এলো। এরপর বিছানায় উঠে, ল্যাপটপটা অফ করে রাখল পাশে। নায়ীব সহসা হতভম্ব হয়ে বলে,
“ দরকার ছিলো তো।”
স্রোত ভীষণ মায়া মায়া হাতে ওকে প্যাঁচিয়ে ধরে। বুকে মুখ গুঁজে বলে,
“ আমি একা যাবনা।”
“ কেনো যাবেন না?”
“ একা যেতে ভালো লাগেনা।”
“ আপনার সব কাজিনরা আসবে, হৈ-হুল্লোড় করবে। আপনার অবশ্যই ভালো লাগবে।”
“ আপনাকে ছাড়া ভালো লাগবেনা।”
নায়ীবের ঠোঁট দখল করে এক বিস্তর হাসি। চুলের ভাঁজে আঙুল চালিয়ে বলে,
“ আমি যাব তো আগেরদিন। তখন কিন্তু আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকা লাগবে বলে দিচ্ছি।”
স্রোত আরেকটু ঘনিষ্ঠ হয়। বলে,
“ আচ্ছা, থাকবো।”

পরদিন। আজ ও বাড়ির সবাই এসেছে মার্কেট করতে। ভীষণ তাড়াহুড়োয় গয়না নেয়া হয়নি। আজ আশা,ইমা দুজনেই এলেন। স্রোত আজ নিজে হরেক পদেএ আইটেম রান্না করছে। নায়ীব বাসায় নেই। সে বলেছিল স্রোতকে দিয়ে আসবে। স্রোত মানা করেছে। সে আশাদের সঙ্গেই যেতে পারবে। নায়ীব রাতে আসে ক্লান্ত হয়ে,এরপর ওকে দিতে গেলে ওর পরেরদিনের ছুটি নিতে হবে। বিশাল ভেজালের কাজ সেসব।
আশা একপল মেয়ের দিকে চাইলেন। প্রশ্ন করলেন,
“ এগুলো আমার মেয়ে রান্না করেছে?”
“ হ্যাঁ, তোমার মেয়েই করেছে।”
নাবিদ সাহেব ড্রয়িং রুম থেকেই হাসলেন। বললেন,
“ খান,বেয়ান। আপনার মেয়ের যে কতো গুণ! বলে শেষ করা যাবেনা।”
স্রোত লজ্জা পেয়ে হাসলো কেবল।

..

তখন ঘড়ির কাটা বারোর ঘরে। পাশে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে তিন্নি। অথচ স্রোতের চোখের পাতায় একচুলও ঘুম নেই। ও ঠোঁট চেপে স্ক্রিনের দিকে চেয়ে আছে। অপেক্ষা করছে কাঙ্ক্ষিত কিছুর। বাইরে থেকে অল্প-সল্প শোরগোল শোনা যাচ্ছে। ওগুলো লাইটিং-এর লোকদের। পুরো বাড়িতে মরিচবাতি লাগাচ্ছে। সন্ধ্যার দিকে শুরু করেছে,এখনও নাকি শেষ হয়নি। কিয়ৎক্ষণের মাথায়ই ফোনটা ভাইব্রেট করে ওঠে। স্রোত ত্বরিত সতর্ক চোখে তাকায় তিন্নির দিকে। ভাবখানা এমন, যেন সে লুকিয়ে প্রেম করছে। ধরা পড়ার মা’রাত্মক ভয় বুকে।
ও বুক ভরে দম টেনে,উৎফুল্ল চিত্তে কল ধরে। টুকটাক দিনলিপি সেড়ে স্রোত ভারী,মন খারাপি গলায় প্রশ্ন করে,
“ আপনি কখন আসবেন?”
“ চলে আসব কাল রাতে।”
“ দেরী হবে?”
“ নট শিওর।” নায়ীবের জবাবে মন খারাপের পরিমাণ বাড়ে স্রোতের। চারদিন মানুষটাকে সামনা-সামনি দেখেনি। বুকে মাথা রাখেনি,মিছে মিছে রাগ করেনি। অথচ মনে হচ্ছে চার যুগ পেরিয়ে গেছে। বিয়ের পরও এত প্রেম থাকে মন? জানা ছিলনা স্রোতের।
ওর নিশ্চুপতায় মন খারাপির ভাবটা চট করে টের পেয়ে গেল নায়ীব। এই মেয়েকে সে পড়েছে, আগাগোড়া মুখস্থ করেছে।

“ এত মিস করে করে তো আমার মাথা খারাপ করে দিচ্ছেন, স্রোত। আমার তো মন চাইছে,এখনই চলে আসি ওখানে। আপনার মন খারাপ দূর করে দেই।”

স্রোত স্মিত হাসে,
“ তাহলে চলে আসুন না!”

নায়ীব দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কণ্ঠে মিশে যায় অগাধ অসহায়ত্ব,
“ ডিউটি না থাকলে এই রাতেই চলে আসতাম।”

স্রোত কিছু বলার পূর্বেই ঠকঠক আওয়াজ আসে। দরজার ওপর প্রান্তে কেউ দাঁড়িয়ে,মৃদু শব্দে ঠকঠক শব্দ তুলছে হাতের সাহায্যে। স্রোত ভড়কে যায় এক মুহুর্তের জন্য। কান থেকে ফোনটা সরিয়ে একবার দরজার দিকে চায়। হাঁক ছাড়ার পূর্বে তিন্নিকে দেখে মায়া জাগে মনে। বেচারি ঘুমিয়েছে একটু আগে। হাঁক-ডাক দিলেই জেগে যাবে,ঘুমে ব্যাঘাত ঘটবে। ও ফোন পুনরায় কানে ঠেকিয়ে বিছানা থেকে নামে। ক্ষীণ কণ্ঠে বলে,
“ রাখছি। গুড নাইট।”
“ রাগ করলেন,মিসেস?”
“ উহু, না। ঘুমাব।” পা চালাতে চালাতে হাসে স্রোত। ওর স্বাভাবিক কণ্ঠ শুনে নায়ীব স্বস্তি পায়,
“দ্যান ওকে। লাভ ইউ,মিসেস।”
ফিসফিস করে এবার উত্তর দিয়ে কল কাটে স্রোত।
রুমে কেবল একটা লো পাওয়ারের বাতি জ্বলছে। ঠকঠক আওয়াজটা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এই রাত্তিরে কার এত তাড়া!

চলবে.

#গোপনে_রাঙানো_প্রেম
#হুযাইফা_মাইশা
—৪৬

ঘরজুড়ে আবছা আলোর রাজত্ব। ওপাশে থাকা পুরুষ অবয়বটিকে দেখে স্রোত চিনতে পারলনা। অনেক্ষণ দম ধরে চেয়ে,উদাম দরজাটা ভিড়ালো খানিকটা। লহু স্বরে জানতে চাইল,
“ কে?”
একটা ভারিক্কি গলা শোনা যায়,
“ জ্বি,আমি লাইটিং এর লোক। এদিকের জানলার ধারে লাইটগুলো বাঁধবো।”
“ জানলার ধারে?” স্রোত বুঝলনা কিছুই।
“জ্বি,বাইরের দিকে। এদিকে লাইট দিতে বলেছে,তাই।”
“ আচ্ছা,একটু দাঁড়ান।”
দরজাটা আটকে দ্রুত রুমের বাতি জ্বালায় স্রোত। বিছানায় শুয়ে থাকা তিন্নিকে ভালোমতো কম্বল দিয়ে প্যাঁচিয়ে, নিজের গায়েও বড় ওড়না জড়ালো। এরপর দরজা খুলে সরে বলল,
“ আসুন।”

ভেতরে ঢুকল এক পঁচিশ-ছাব্বিশের বছরের এক যুবক। হ্যাংলা,পাতলা। তবে গলা শুনে তা মনে হয়নি। স্রোত চেপে দাঁড়ালো। জানলার ধারটায় চলে গেল ছেলেটা। জানলা খুলে কিসব করলো। এর মধ্যে একবার নজর ঘুরিয়ে তাকালো। স্রোতের এলোমেলো দৃষ্টি তখন ঘরের প্রতিটা কোণায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। বাইরের শোরগোল ক্রমশ কমে আসছে। বাকিরা বোধহয় ঘুমিয়ে গেছে, কেবল নিচ ইফাদের চড়া গলায় লোকদের উদ্দেশ্যে ছুঁড়া বকাবকিগুলো শোনা যাচ্ছে।
ছেলেটার কাজ শেষ হলো। দ্রুত গতিতে বেরোতেই স্রোত দরজা আটকে হাঁফ ছাড়ে।

..

উঠোনের এক ধারে,খোলা আসমানের নিচেই সোফা পাতিয়ে ছোট্ট হলুদের আয়োজন করা হয়েছে। শীত-টীত বাকিদের অনূভুত হলেও, স্রোতের শরীর দরদর করে ঘামছে। হলুদের দু’টো বাটি সোফার সামনে রাখা সাজানো টেবিলের ওপর রেখে ও সোজা হয়ে দাঁড়াল। কোমরে হাত দিয়ে এদিক-ওদিক চাইলো। মরিচবাতিতে সজ্জিত দোতলা বাড়িটিকে আজ অন্যরকম সুন্দর লাগছে। ঘরভর্তি মানুষের হইহই শুনলেই প্রাণ ঠান্ডা হয়ে যায়। স্রোতের অনুষ্ঠান ভালো লাগে। ভীষণ ভালো লাগে মানুষদের মধ্যে মিশে থাকতে। স্বভাবে সে মিশুক কিনা।
পা দু’টো ঝিনঝিন করছে ওর। দোতলায় সে এই নিয়ে চারবার উঠেছে। এইবার শেষ,বাকি অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পর নামবে আর।
ওর রেডি হওয়াও বাকি। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হচ্ছে। নায়ীবের আসার নাম-গন্ধ নেই।
স্রোত ঘোর অনিচ্ছা সত্ত্বেও রেডি হলো। বিষন্ন লাগছে,এমতাবস্থায় রেডি হওয়ার মুড নেই। তবুও,গায়ে হলুদে তো থাকতে হবে। এমন ফকিরের বেশভূষায় গেলে তার নিজেরই লজ্জা লাগবে।
নিচের শোরগোল,গানের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে এখান থেকে। স্রোত ধীরে-সুস্থে রেডি হলো। চুলগুলো আঁচড়ানোর ক্ষণেই দরজা ধাক্কানো শুরু হলো।
স্রোত দ্রুত পা চালিয়ে দরজা খুলে দিতেই সাবিলা উঁকি দিল। কণ্ঠে ভীষণ তাড়া তার,
“ আরে ভাই! এতক্ষণ কি করছিস? আয় নিচে। সবাই অপেক্ষা করছে।”
“ যা, তোরা। আমার সময় লাগবে।”
“ দুলাভাই কখন আসবে?”
স্রোত আয়নার সামনে যেতে যেতে উত্তর দিল,
“ জানিনা, এসে পড়বে। তোরা যা। আমার মাথা ব্যথা করছে,ওষুধ খেয়ে আসছি।”
সাবিলা দ্বিরুক্তি করলোনা। মাথা ব্যথার মধ্যে টেনে নিয়ে যাওয়া বোধ হয় ভালো হবেনা। তাই ও দরজা ভিড়িয়ে চলে গেল। স্রোত কিঞ্চিৎ মিথ্যা বলেছে। ব্যথাটা মাথায় নয়, মনে। ও ফোন হাতে নিলো। নয়টা চব্বিশ। এতক্ষণ লাগে বুঝি আসতে? ও ফোনটা বিছানার এককোণে ছুঁড়ে ফেলতেই দরজায় পুনরায় ঠকঠক আওয়াজ এল। স্রোত তীব্র বিরক্তি নিয়ে ঝাঁঝাল স্বরে বলল,
“ কি হয়েছে? বললাম তো পরে যাব।”

প্রত্যুত্তর এলনা। তবে আস্তে-ধীরে দরজাটা পুরোদমে খুলে গেল। ওপাশে দাঁড়ানো হ্যাংলা,পাতলা গড়নের মানুষটাকে চিনতে অসুবিধে হলোনা। কালকের সেই ছেলেটা। এলোমেলো দৃষ্টি তার স্রোতের দিকেই। স্রোতের স্নায়ু শিথিল হলো। আচমকাই অজানা ভীতি ঝেঁকে ধরল। তার জানামতে,ইতোমধ্যে বাকিরা নিচে চলে গেছে। এই চেয়ারম্যান ভিটা আপাতত খালি। হৈ-হুল্লোড়ের আওয়াজে তা-ই আন্দাজ করা যাচ্ছে। স্রোত কোনোরকমে ভীতি ঢেকে,পুনরায় ঝাঁঝাল স্বরে বলল,
“ কি চাই?”

ছেলে নাকি পুরুষ বলা উচিত,স্রোতের জানা নেই। তবে কাপুরুষ বললে ভুল হবেনা। স্থির চোখে চেয়ে সে এগিয়ে এল। স্রোতের এবার হতবাক হওয়া ছাড়া উপায় নেই। গলা দিয়ে আপনা-আপনি বেরোলো,
“ কি চাই আপনার? আজব!এগোচ্ছেন কেনো?”

ওপর প্রান্তের ব্যক্তিটির ঠোঁটে বিস্তর হাসি ফুটিয়ে তুলল। সে খুব ধীর পায়ে এগোচ্ছিল,এবার গতি দ্রুত হলো। ক্ষীপ্র বেগে সে এগিয়ে এসে স্রোতের হাত ধরার চেষ্টা করল। স্রোত সরে গেল ত্বরিত। ভয়ানক দৃষ্টির কবলে পড়েও সে শক্ত খলস ছাড়লোনা। চোখে-মুখে ঘৃণা ফুটে উঠল,
“ অসভ্য! মজা দেখাচ্ছি,দাঁড়া!”
ও দরজার দিকে পা বাড়ানোর আগেই হাতে টান পড়ল। সে স্পর্শে গা ঘিনঘিন করে উঠল স্রোতের। হাত ঝাড়ি দিয়ে ছাড়াতে চাইলেও লাভ হলোনা। এবার চেপে রাখা ভীতি গুলো কণ্ঠনালী গলিয়ে প্রকাশ হল,
“ হাত ছাড়ুন,প্লিজ! আমি কিন্তু চেঁচাবো!”

ব্যক্তিটি এবার প্রথমবারের মত মুখ খুলল,
“ তোমাকে আমার ভালো লেগেছে। আমার কথা শুনো,খুব খুশি করব। ভাব দেখালে সমস্যা আছে। জান বাঁচাতে চাইলে..”

বাজে ইঙ্গিতে বমি পেল স্রোতের। অশ্রুসিক্ত নেত্রে চেয়ে,সেকেন্ড খানেকের মাথায়ই হাত উঁচিয়ে শক্ত এক চ-ড় বসালো গালে। হাতের বাঁধন আরো শক্ত হলো তাতে। চেঁচানোর পূর্বেই মুখ চেপে ধরল সে। কণ্ঠে ক্রোধ ঢেলে বলল,
“ ভালো মুখে বললাম, মানলি না।”
স্রোতের মনে হলো, এর চেয়ে কেউ বুকে ছু-রি মে-রে দিক। তাও শ্রেয় এই ঘৃণ্য স্পর্শ থেকে। ও ছটফট করে উঠল। চোখ বেয়ে অনবরত ঝরতে থাকলো নোনাজল। নিঃশ্বাসটুকুও নিতে কষ্ট হচ্ছে। ও ছটফট করতে করতেই পা দিলে পাড়া দিল ছেলেটার পায়ে। ভাগ্যিস হিল পরেছিল।
একে তো ছটফটানি সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছিলো,তন্মধ্যে আবার পায়ে আঘা-ত! সে সামলাতে পারলোনা।
হাত ছুটে আসতেই স্রোত ছুটলো দরজার দিকে।
দরজা ডিঙিয়ে একপা বাড়াতেই একটা শক্ত বুকে তার থুতনি লাগে। আর্তনাদ স্বরূপ হুহু করে কেঁদে উঠে স্রোত। সে কান্নার শব্দ ঝংকার তুলে কানে। ও কাঁদতে কাঁদতেই মেদহীন পুরুষালী পেটটা পেঁচিয়ে ধরে। এই স্পর্শ তার চেনা,ভীষণ প্রিয়। এই পুরুষালী ঘ্রাণও তার চেনা।
ও বুকে মাথা রেখে হেঁচকি তুলে ভাঙা গলায় ডাকে,
“ নায়ীব, নায়ীব…রুমে..”

নায়ীব ওকে বুকে নিয়েই এগোয়। রুমে একপা রাখতেই তার চোখ জ্বলে উঠে। রক্তিম চোখে তাকাতেই ওপরপ্রান্তের মানুষটা ভড়কে যায়। হাঁটু কাঁপে এমন ক্রুরদার দৃষ্টিতে। মনে জাগে প্রাণ সংশয়। সে তো পাক্কা ঘন্টা খানেকের নিশ্চয়তা নিয়ে এসেছিল.. যে, কেউ আসবেনা এই সময়টুকুতে। স্রোতের টালবাহানাও সে শুনেছে। হাতে যথেষ্ট সময় ছিল। তবে এ কোত্থেকে এলো? গলা বেয়ে দু’টো ফাঁকা ঢোক নেমে যায় অচিরেই।

স্রোতের কান্নার আওয়াজ থেমে গেছে। ও বুক থেকে মুখ তুলে,হাতের বাঁধন ঢিলে হয় তার। নায়ীবের শক্ত চোখ-মুখের দিকে চেয়ে ওর মনটা অশান্ত হয়। নায়ীব এত শান্ত কেন? ও কি ভুল বুঝছে? ঠোঁট খুলে কিছু বলার পূর্বেই নায়ীব ওকে নিয়ে এক পা পিছায়। বুক থেকে তুলে। তবে হাত আটকে রেখে গুরুগম্ভীর গলায় প্রশ্ন করে,
“ কে ও?”
সে প্রশ্নের স্বরটা তীরের চেয়ে কম নয়। স্রোত ভাঙা গলায় বলে,
“ চিনিনা, নায়ীব। ও হঠাৎ, রুমে..”
বলতে বলতেই তার কণ্ঠনালীতে শব্দ আটকে যায়। হাতের দিকে চায়। ওমনি উন্মাদের মত আচরণ করে বলে,
“ হাত ছাড়ুন,নায়ীব। ও আমাকে ছুঁয়েছে। আমার ঘেন্না হচ্ছে। ছাড়ুন, আমি হাত ধুঁবো।”

নায়ীব জ্বলন্ত চোখে একবার চায়। হাতটা ছুটে যায়। স্রোতকে ফেলেই সে ঘরের ভেতরে ছুটে। এ যেন ক্ষীপ্ত কোনো বাঘ।
ছেলেটা ভড়কালো। পালানোর পায়তারা করেও লাভ হলোনা। দরজার সামনে ওরা এমনভাবে দাঁড়িয়ে ছিল! এই পাতলা শরীর নিয়ে মেয়েটাকে সামলাতেই হিমিশিম খেতে হচ্ছিলো। আর এই শক্ত পুরুষের টেক্কা দেয়া? অসম্ভব। সে বোধহয় মনে মনে পরাজয় মেনে নিয়েছে। তাও শেষ সুযোগ হাত ছাড়া করলনা। ড্রেসিং টেবিলের ওপর রাখা জিনিসপাতি হাতে তুলে ছুঁড়লো। নায়ীব ত্বরিত মাথা সরিয়ে,বড় দুই কদমে এগিয়ে আসে। গালে থা-বা বসিয়ে হুঙ্কার ছাড়ে,
“ কু*** বাচ্চা!”

মনে হলো গালে কেউ জ্ব,লন্ত কিছু চেপে ধরেছে। চোয়ালটা বোধহয় ভেঙেই গেছে। আর্তনাদের আওয়াজটা মুখ থেকে বেরোলো সঙ্গে সঙ্গেই।
স্রোত ব্যগ্র হয়ে রুমে ঢুকলো। হা হয়ে চেয়ে দেখল এক নতুন নায়ীবকে। যে কিনা বেধড়ক মা-রতে ব্যস্ত। মাটিতে পাতলা শরীরটা গড়াগড়ি খাচ্ছে। নাক-মুখ থেকে র-ক্ত গড়িয়ে মেঝেতে পড়ছে। নায়ীব তখনও পেটের ওপর লা*থি দিচ্ছে। এ আরেক নায়ীব, হিং-স্র নায়ীব। নিচ থেকে গান-বাজনার আওয়াজ আসছে। সেসবের সঙ্গে আর্তনাদের শব্দ মিশে যাচ্ছে। কানে বাজছে খুব। স্রোত কানে হাতে চেপে বলে,
“ নায়ীব! নায়ীব! ছাড়ুন,মরে যাবে।”

নায়ীব থামে আরো দুই মিনিট পর। নিস্তেজ দেহটায় অল্প প্রাণ বাকি। সে আধো আধো চোখে দেখে নায়ীবের মুখটা। কোন কুক্ষণে যে আজ মাথায় এসব কুবুদ্ধি চেপেছিল! বড্ড আফসোস হলো বোধহয় নিজের প্রতি।

নায়ীব মুখের ওপর পা চেপে ধরার আগেই স্রোত ছুটে আসে। পেছন থেকে টেনে ধরে,
“ ছাড়ুন। ম রে যাবে। খু*নি হবেন আপনি।”

নায়ীব ঝাড়া দিয়ে সরালো ওকে। স্রোত পেছালো কিছুটা। হতবাক চোখে তাকাতেই নায়ীব ভীষণ শান্ত গলায় বলল,
“ ফাঁকা রুম আছে?”
স্রোত মাথা নাড়তেই নায়ীব ওই নিস্তেজ শরীরটা টেনে-হিঁচড়ে পাশের ফাঁকা রুমে নিয়ে গেল। এই রুমটা স্টোররুমের মত। আপাতত কেউ থাকছেনা। ধুলো ভর্তি সে রুমে আস্ত এক অ-মানুষকে রেখে দরজাটা আটকালো নায়ীব। শরীর বেয়ে ঘাম ঝরছে,বক্ষে তখনও ঝড়। মাথার রগ বুঝি ছিঁড়ে যাচ্ছে রাগে। ও দরজার ওপরই একটা লা-থি দিয়ে বলল,
“ ওর শাস্তি এখনও বাকি। অনেক বাকি।”
এরপর সে ঘুরে দাঁড়ালো। নিজের রুমের সামনেটায় স্থির বনে স্রোত দাঁড়িয়ে। নায়ীব এল,দানবের মত পা ফেলে। স্রোতকে আপাদমস্তক দেখতেই তার রাগের তেজ কমলো। রক্তিম মুখটা ছুঁয়ে দেয়ার আগেই স্রোত সরে গেল। অদ্ভুত গলায় বলল,
“ ছুঁবেন না,নায়ীব।”
নায়ীবের ভ্রুযুগল বেঁকে গেল। এগোতেই হাত দিয়ে থামাল স্রোত। চোখ মুছতে মুছতে বলল,
“ ওই জানো-য়ার আমাকে ছুঁয়েছে। আমার হাত ধরেছে। এত বাজে স্পর্শ! আমার বমি পাচ্ছিলো,দম বন্ধ লাগছিলো, নায়ীব। বিশ্বাস করুন!”
নায়ীব এগিয়ে এল। হাত,মুখ; কিছুই ছোঁয়া গেলনা তারপরও। স্রোত বারংবার সরে যাচ্ছে। নায়ীব কঠিন চোখ-মুখে চেয়ে রইল কয়েক পল। এরপরই আচানক জোরে হাত টেনে বাথরুমে নিয়ে গেল। ঠান্ডা পানি ছেড়ে হাতদু’টো ভিজালো তাতে। বলল,
“ নিন,হাত পরিষ্কার করুন।”

স্রোত অনুভূতিশুণ্যের মত হাত ধুঁয়ে সরে এলো। বাথরুম থেকে বেরোতেই এবার তাকে বুকের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলল নায়ীব। পুরো মুখে এলোপাথাড়ি চুমু খেয়ে ক্ষান্ত হলো। কপালে কপাল ঠেকিয়ে নিশ্চুপ রইল। স্রোতের চোখ বন্ধ। জল গড়িয়ে পড়ছে গাল বেয়ে। নায়ীব চোখের পাতায় ঠোঁট ছুঁয়াতেই উদাম খোলা দরজার ওপাশ থেকে চিৎকার ভেসে এল,
“ আয়হায়! আমি কিছু দেখিনি। সরি ফর ডিস্টার্বিং,বাট এখন আপনাদের নিচে যেতে হবে। সবাই অপেক্ষা করছে।”
তিন্নির গলা। সে উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে। স্রোত হকচকালেও বিন্দু পরিমাণ দূরত্ব বাড়ালোনা। কিছু বলার আগেই নায়ীব অত্যন্ত স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল,
“ ফ্রেশ হয়ে আসছি। জাস্ট গিভ আস ফিফটিন মিনিটস।”
“ সে আপনি আসুন রেস্ট নিয়ে। বউকে তো ছাড়ুন?”
“ সরি,সে আপাতত আমার সেবা করুক একটু। ফিফটিন মিনিটস পর বউ নিয়ে আসছি।”
তিন্নি হেসে চলে গেল। নায়ীবের স্বাভাবিক গলা শুনে তড়াক করে মুখের দিকে চাইলো স্রোত। নায়ীব মৃদু গলায় বলল,
“ ছাড়ি এখন? ফ্রেশ হয়ে আসি?”
স্রোত মাথা নাড়তেই সে ওকে বুক থেকে তুলে। গাল দু’টো মুছিয়ে দিয়ে বলে,
“ আপাতত যা হয়েছে, তা মাথা থেকে মুছে ফেলুন। বাকিটা আমার ওপর। কান্না থামান,মুখের অবস্থা দেখলে সবাই প্রশ্ন করবে। আমি আসছি ফ্রেশ হয়ে, আপনি ঠিক হোন।”
বলে সে বাথরুমে ঢুকে পাঞ্জাবি নিয়ে।
স্রোত কিছুক্ষণ থম মে-রে বসে থাকে। এরপর দ্রুত উঠে মেঝে পরিষ্কার করে,আয়নার সামনে দাঁড়ায়। লিপস্টিক,চোখের কাজলের অবস্থা বেহাল। পুরো মুখ মুছে ও। প্রসাধনীর আস্তরণে ঢাকা পড়ে মুখেই এই বেহাল দশা। চোখ দু’টো শুধু লাল দেখাচ্ছে। চোখে তো আর মেক-আপ লাগানো যায়না। স্রোত ধীর পায়ে হেঁটে এসে বিছানায় বসে।

নায়ীব বেরোয় মিনিট পাঁচ-এক এর মধ্যেই। গায়ে তার একটা গাঢ় সবুজ রঙের পাঞ্জাবী। তার কাপড়-চোপড় স্রোত আগেই নিজের সঙ্গে এনেছে। পরণের এই পাঞ্জাবিটা স্রোতের কাপড়ের সঙ্গে মিলিয়ে কেনা।
নায়ীব গাঢ় চোখে তাকায়। পা দুলিয়ে বসে আছে স্রোত। গায়ে বাসন্তী রঙের একটা পোশাক। কি যেন নাম..নায়ীব মস্তিষ্কে চাপ দেয়,মনে পড়ে। এটাকে লেহেঙ্গা বলে। তবে এত ভারী না। সুন্দর,নরমাল। ওড়নাটা গাঢ় সবুজ রঙের,নায়ীবের পাঞ্জাবির সঙ্গে মিল। সেটা এমনভাবে প্যাঁচানো,মনে হচ্ছে শাড়ি পরেছে। হাত ভর্তি চুড়ি। চোখ-মুখ স্বাভাবিক দেখাচ্ছে আগের তুলনায়। নায়ীব তা দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কিঞ্চিৎ লম্বা হওয়া চুলগুলোয় ব্রাশ চালায়। আয়নার ভেতরও নজর রাখে স্রোতের ওপর। শান্ত গলায় বলে,
“ কিছু খেয়েছিলেন?”
“ হু..হুম!”
“ কি খেয়েছিলেন?” এই প্রশ্নের উত্তর আসেনা। নায়ীব সামনে এসে দাঁড়ায় এবার। থুতনি ধরে মুখ উঁচিয়ে বলে,
“ মিথ্যা বলবেন না, স্রোত। মিথ্যা বাদে সব সহ্য করতে পারব।”
স্রোত মাথা নাড়ে। নায়ীব হাত টেনে ধরে,
“ চলুন,নিচে যাই। বেশিক্ষণ থাকা লাগবেনা ওখানে,আধ ঘন্টা পর চলে আসব।”
স্রোত নিঃশব্দে সম্মতি দেয়। নায়ীব পা চালায়। বেরিয়ে একবার স্টোররুমের দিকে দৃষ্টি নেয়। রাগটা দমিয়ে রাখে ও। বিয়ের বাড়ির আনন্দ মাটি করতে চায়না। এখন শুধু রাত গভীর হওয়ার অপেক্ষা।

চলবে.