#গোপনে_রাঙানো_প্রেম
#হুযাইফা_মাইশা
—৫১ (প্রথমাংশ)
ওয়াহিদ পরদিন ফুলের তোড়া নিয়ে হাজির হলো। একহাতে বিশাল এক ফুলের তোড়া,অন্যহাতে ছোট আরেকটা।
নিশাত সকালে বাসায় ফিরে বিকেলের দিকে আবার হসপিটালে চলে গেছে। যেহেতু নরমাল ডেলিভারি, ওত থাকা লাগবেনা। নিশাতকে রেখে,নায়ীব বাসায় আসার জন্য বেরিয়েছিল। গোসল করে আবার চলে আসবে। কিন্তু করিডোরে আসতেই ওয়াহিদের মুখোমুখি হতে হলো।
ওয়াহিদ খেয়াল করলো,নায়ীব এবার আর তাকে দেখে মুখ থমথমে বানায়নি। ওয়াহিদ প্রফুল্লচিত্তে সালাম দিতেই নায়ীব হাসিমুখে জবাব দিল। ওকে কেবিনে নিয়ে আসতেই নিশাত চমকে উঠে।
কিয়ৎক্ষণ কুশলাদি সেড়ে নায়ীব বেরিয়ে পড়ে। ওয়াহিদ ফুলের তোড়া নিয়ে এগোয়। নিশাত তন্মধ্যে হইহই করে উঠে,
“ দু’টো বুকে কিসের? বাবু তো ফুল চিনেইনা।”
ওয়াহিদ ঘাড় কাত করে তাকাল ওর দিকে। স্রোত গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। পাশে শুয়ে থাকা বাচ্চাটাও ঘুমে বিভোর। পরিবেশ একদম ঠান্ডা। বড় তোড়াটা ও জায়গায় রেখে অন্যটা নিশাতের দিকে এগিয়ে দিল,
“ ওটা তোমার ভাবীর আর তার ছেলের। এটা তোমার।”
“ কি আশ্চর্য! আমার জন্য আবার ফুল কেন?”
নখ খুঁটতে খুঁটতে জিজ্ঞেস করল নিশাত। ওয়াহিদ সেটা ওর হাতে চাপিয়ে বলল,
“ ভবিষ্যৎ এ তো তোমার বাচ্চা-কাচ্চাও হবে। তা-ই দিলাম। এডভান্স বলতে পারো।”
মুহুর্তেই মুখটা বিকৃত হলো নিশাতের। ছিহ ছিহ করে উঠল সঙ্গে সঙ্গেই।
..
সত্যি সত্যিই সপ্তাহ দুই এক এর মাথায় ওয়াহিদ বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন সমেত হাজির হলো। প্রাইভেট কোম্পানির ভালো পদেই আছে সে। বেতনও ভালো। সুতরাং এবার আর আপত্তি জানানোর কোনো কারণ নেই।
সকাল থেকেই দরজা আটকে বসে আছে নিশাত। লজ্জায় নাকি ভয়ে,বুঝতে পারছেনা স্রোত। ও ছেলেকে নায়ীবের কাছে রেখে দ্রুত নিশাতের কাছে আসলো। আজ শুক্রবার বিধায় নায়ীবের ডিউটি নেই। সপ্তাহের এই দিনটার জন্য নায়ীব এখন মুখিয়ে থাকে।
স্রোত দরজা ধা-ক্কাতেই নিশাত ছুটে এসে দরজা খুলে। কাচুমাচু মুখে বলে,
“ ওহ, ভাবী! তুমি!”
“ তো কাকে আশা করছো,নিশাত! রেডি হওনি? ওরা তো বসে আছে।”
“ভাবী আমার লজ্জা লাগছে। অস্থির লাগছে। যদি মাথা ঘুরে পরে যাই?”
স্রোত চোখ বড়বড় করে তাকালো। আঁতকে উঠে বলল,
“ আশ্চর্য! মাথা ঘুরছে তোমার? প্রেশার লো?”
দুপাশে ঘাড় নাড়ায় নিশাত। স্রোত দম ফেলে বলে,
“ আমি একটা শাড়ি এনে দিচ্ছি। পরিয়েও দেব, কোনো তালবাহানা চলবেনা।”
সে নিশাতের প্রত্যুত্তরের আশা করে সময় নষ্ট করলনা। চটজলদি শাড়ি নিয়ে এল। সে এখন নিজেও শাড়ি পরতে পারে। পরাতেই দারুণ পটু। সবকিছুই সে গুছিয়ে রেখেছিল। শাড়ি গায়ে জড়াতেই নিশাতের লজ্জার পরিমাণ বাড়লো। আচমকাই চোখ ছলছল করে, ব্যাকুল গলায় এক আকুল আবেদন করে বসল,
“ ভাবী! ভাইয়াকে বলে দিও,ওরা যদি বিয়ের ডেট ফেলতে চায়,তাহলে যেন আরো কয়েকমাস পর ফেলে। বেশি ভালো হবে আগামী বছর ফেললে। ”
“ কেন?” কুঁচি ঠিক করতে করতে প্রশ্ন ছুঁড়ে স্রোত।
“ পুচকুটাকে ছেড়ে এত জলদি যাবনা। ও আরেকটু বড় হোক।”
স্রোত হতাশ নিঃশ্বাস ছাড়ে। বলে,
“ পা’গল মেয়ে। যাও, চুল আঁচড়ে আসো। আমি আসছি।”
সে নিজের রুমে আসে। রাবেয়া নাশতা বানাচ্ছেন। তাই রান্নাঘরের চিন্তা তার নেই। রুমে এসে এক চমৎকার দৃশ্য দেখে তার চোখ ভরে উঠল। নায়ীব ঘরজুড়ে পায়চারি করছে। বুকে শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে ছেলেকে। সে বাচ্চা সামলাতে আনাড়ি। প্রথমদিন খুব হিমশিম খেয়েছিল।
বুঝ হওয়ার পর নিশাত বাদে নায়ীব কাউকেই তেমন কোলে নেয়নি। একদম অনবিজ্ঞ হাতে ছেলেকে আঁকড়ে ধরে আছে। যেন ধরতে একটু এদিক সেদিক হলেও সর্বনা শ ঘটে যাবে।
স্রোত চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখল তার কান্ড। ছেলে তার গাঢ় ঘুমে। নায়ীবের সকল ধ্যান-জ্ঞান,ছেলের মুখের দিকে। বউকে সে খেয়াল করলো আরো অনেক পরে। হকচকিয়ে সে এক চিলতে হেসেও ফেলল সঙ্গে সঙ্গে। স্বর খা দে নামিয়ে সে জিজ্ঞেস করে,
“ কোথায় গেছিলেন?”
“ নিশাতের কাছে। ওকে রেডি করিয়ে এলাম।”
বলতে বলতে এগোয় স্রোত। হাত বাড়িয়ে ঘুমন্ত ছেলেকে কোলে তোলার আগেই আরেক ঘটনা ঘটলো। ছেলে তার কাজ সেড়ে ফেলেছে বাবার কোলে। নায়ীব অসহায় চোখে একবার পাঞ্জাবির দিকে তাকায়। স্রোত দ্রুত ছেলেকে কোলে নিয়ে বলে,
“ পাঞ্জাবি পালটে আসুন। আব্বু ডাকছেন।”
নায়ীব ভেজা অংশটা ধুঁয়ে এল। পাঞ্জাবি পাল্টালো না।
ওয়াহিদ একটু পর পর নড়েচড়ে বসছে। এসেছে আধ ঘন্টা হলো। নিশাতের আসার নামগন্ধ নেই। কেউ একটু তাকে ডেকেও আনছেনা। ওয়াহিদ মাকে ঠেলল। আফিয়া চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আবার চোখ ঘুরালেন। নাবিদ সাহেবের উদ্দেশ্যে, সেই প্রথম দিনের মত করে বললেন,
“ ভাই সাহেব,আপনাদের মেয়ে কোথায়?”
নায়ীব তখন নিশাতের রুমের সামনে দিয়ে আসছিল। ড্রয়িং রুমে চলা এই কথোপকথন শুনে সে তড়াক করে নিশাতের রুমের দিকে চাইল। নিশাত উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিল। ভাইকে দেখেই চুপসে গেল। শুকনো হেসে ভেতরে ঢোকার আগেই নায়ীব বলল,
“ বাইরে আয়। ওরা খুঁজছে তোকে।”
নিশাত দরজা পুরোপুরি খুললো। আড়ষ্ট চিত্তে সে এক কদম এগুলো। নায়ীব হাসলো। নিশাতের গায়ে মায়ের একখানা কাতান শাড়ি। মানিয়েছে দারুণ। মায়ের মতই লাগছে। ওর হাসি দেখেই নিশাতের আড়ষ্টতা বাড়লো। ঠোঁট উলটে জিজ্ঞেস করল,
“ হাসছো কেনো,ভাইয়া? খারাপ লাগছে? তাহলে আমি যাবনা।”
“ না না,আয়। অনেক সুন্দর লাগছে আমার নিশুকে।”
বলতে সে হাত বাড়ায়। নিশাত ভাইয়ের হাত চেপে ধরেই তাদের সামনে যায়।
ওয়াহিদের এদিক-ওদিকে ঘুরপাক খাওয়া চাহনি আচমকাই স্থির হলো। কিন্তু তার চিত্ত অশান্ত, অস্থির বনে রইল। পিঠ টানটান করে বসলো সে। আড়চোখে বাকিদের দিকে তাকিয়ে,আবার নেত্র স্থাপন করল একদম সামনে।
নিশাতের করা হাতখোঁপার যাচ্ছেতাই অবস্থা। মাথার অর্ধেকটা ঢাকা ঘোমটার আড়ালে। তাও কানের কাছটায় ছোট্ট দুই গোছা চুল জ্বা:লাতন করছে খুব। সে ক্রমশ হাত দিয়ে সেগুলো সরাচ্ছে তাই। ওয়াহিদ মন চাইলো, সবকিছু দাপিয়ে ওর পাশে গিয়ে বসতে। চুলগুলো নিজ হাতে সরিয়ে দিতে। ললাটে ঠোঁট ছোঁয়াতে। তার অস্থির মন যে কতশত নিষিদ্ধ আবদার বুনে চলেছে! তার হিসেব নেই। নিশাত সেগুলো শুনলে জ্ঞান হারাবে নিশ্চিত।
কথাবার্তা শুরু হতেই আফিয়া বলে উঠলেন,
“ সামনের মাসেই ডেটটা ফিক্স করা হোক তাহলে? আপনাদেরও সমস্যা নেই,আমাদেরও নেই।”
নাবিদ সাহেব নির্ভেজাল একজন মানুষ। ছেলে নিজের পছন্দে বিয়ে করেছে। মেয়েও তা-ই করবে। তিনি বড়জোর ঠিক-ভুল ধরিয়ে দিতে পারবেন। জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে কখনোই তিনি বাচ্চাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করার মানসিকতা পুষে রাখেন না।
নাবিদ সাহেব মাথা দুলানোর আগেই নায়ীব কেঁশে উঠে। গলা ঝেড়ে বলে,
“ এত জলদি?”
নিশাত মনে মনে খুশি হলো। তবে সেই খুশিতে ভাটা পড়ল মিনিট খানেকের মাথায়। ওয়াহিদের খালা রয়েসয়ে বলে উঠলেন,
“ বিয়েটা তো আটকে আছে অনেকদিন ধরে। কথা তো ছিলো ওয়াহিদ চাকরি পেলেই বিয়ের তারিখ ফেলা হবে।”
নায়ীবের ভ্রুযুগল বেঁকে গেল সহসা। তা দেখেই নিশাতের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল কয়েকবার। নায়ীবের মন মেজাজ বিগড়ে গেল। তারা কবে এ কথা বলেছে? আর এই মহিলাই বা কখন শুনলেন তা?
স্রোত ছেলেকে শুইয়ে এসেছে। তার কাছে আপাতত রাবেয়াকে রেখে এসেছে। সে দাঁড়িয়ে ছিল ড্রয়িংরুমের পর্দার আড়ালে। আলাপ-আলোচনার এক ফাঁকে সে পর্দা সরালো কিঞ্চিৎ। নিশাতের জড়সড় ভাব,নায়ীব কুঁচকানো চোখ মুখ দেখে তার নিজেরও মাথায় টেনশন ধরে গেল।
অথচ নায়ীব তেমন কিছুই বললনা। কেবল উদ্রেকহীন,নিরাসক্ত কণ্ঠে বলল,
“ ঠিকাছে,যা আপনারা ভালো মনে করেন।”
..
উনারা চলে যেতেই জোহা এল। অনেকদিন পর এখানে আসা তার। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর আর এক দন্ড ফুরসৎ মিলেনা এদিক ওদিক যাওয়ার। ও এসেই সোজা নিশাতকে জিজ্ঞেস করল,
“ বাপরে! দেখে তো মনে হচ্ছে আজই বিয়ে ছিল।”
নিশাত নাক টানে। চোখ দাপিয়ে কান্না আসছে তার। সে ভেজা কণ্ঠে বলল,
“ জোহা,খালি বিয়ের কথা বলোনা। ভালো লাগেনা।”
“ ওমা! এ কি কথা? বিয়ে করবেন তাতে কান্নার কি? আমার বিয়ে হলে তো এতক্ষণে পাড়ায় পাড়ায় কার্ড বিলিয়ে আসতাম।”
“ তাইতো করবে,তুমি তো সবার চেয়ে আলাদা।”
স্রোত রুমে ঢুকে। তাকে দেখেই মিষ্টি হাসে জোহা। বলে,
“ আপু আপনার বাবু কই?”
“ ঘুমাচ্ছে।”
“ দেখতে কার মত হয়েছে?”
ভাবনায় পড়লো স্রোত। ছেলের গায়ের রঙ তার মত। নাকও তার মত একটু বোঁচা। বাকিসব বাবার মত। এই কথা সে জোহাকে ভেঙে ভেঙে বলবে কি করে!
..
নাহিনকে নিয়ে ঘরের ভেতর ঘুরাঘুরি করছে নিশাত। সঙ্গে তার ননস্টপ বকবক। নায়ীবের কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। জুতো খুলতে খুলতে সে বলল,
“ একটু আস্তে কথা বল.. আমার ছেলের কানে সমস্যা হবে।”
নিশাত সে কথার ধার ধারলনা। তার কথাও থামলনা। নায়ীব তড়িঘড়ি করে গিয়ে গোসল সেড়ে ছেলেকে কোলে নিল। স্রোত রান্নাঘর থেকে তা দেখে চাপা হাসে। নায়ীব নিজেও ঘুরঘুর করছে,কথা বলছে। কোলে থাকা নাহিন পিটপিট করে তাকাচ্ছে। তবে ক্ষণকাল গড়াতেই সে গলা ফাঁটিয়ে কেঁদে উঠল। সঙ্গে সঙ্গেই দুই ভাইবোন ব্যাকুল,অস্থির হলো। দুজনেই ব্যস্ত হয়ে ডাকা শুরু করল স্রোতকে। সে রান্নাঘর পেরিয়ে আসার ক্ষণেই নিশাত ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বলে,
“ এতক্ষণ তো ঠান্ডা ছিল। তোমার কোলেই যত দো ষ। বাইরে থেকে এলে আগে দোয়া দুরুদ পড়ে তারপর নাহিনকে কোলে নিবে। এর আগে খবরদার ওকে ধরবেনা।”
নায়ীব জ্বল ন্ত চোখে তাকায়। ছেলেকে স্রোতের কোলে ধরিয়ে তেড়েমেড়ে বলে,
“ একদম জ্ঞান বিলাবি না। আমার ছেলেকে আমি একশোবার কোলে নিব।”
“ কতবার নেও দিনে,তাতো দেখিই।”
“ আমি দিনে বাসায় থাকি?”
“ থাকোনা কেন?”
নিশাতের উদ্দেশ্য নায়ীবকে রাগানো। সে সফলও বটে। বহুদিন পর ভাইয়ের সঙ্গে জবরদস্ত এক তর্কাতর্কি হলো তার। স্রোত এদের কারবারে অতিষ্ঠ বরাবরের মত।
..
ওয়াহিদ নিশাতকে একটু ঠেলতেই সে সামনের দিকে ঝুঁকে যায়। চিৎকার দেয়ার আগেই ওয়াহিদ একহাতে তার মুখ,অন্যহাতে তার বাহু চেপে সোজা করে বসায়। নিশাত সম্বিৎ ফিরে পেয়েই তেঁতে উঠে,
“ ফেলে দিবেন নাকি!”
“ আশ্চর্য! এত রাগারাগি করছো কেনো,নিশু? সেই কখন থেকে চুপ করে আছো!”
নিশাত চোখ ফিরিয়ে সামনে তাকালো। চলন্ত রিকশা থেকে অদূরের জ্যাম দেখে সে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে। একটু দূর এগোতেই রিকশা সেই জ্যামে আটকা পড়ে। ওয়াহিদ সুযোগ বুঝে তার হাত চেপে ধরে। আঙুলের ভাঁজে আঙুল গলিয়ে,নরম গলায় জিজ্ঞেস করে,
“ কি হলো? কথা বলো?”
“ ভালো লাগছেনা।”
“ কেনো? মন খারাপ?”
“ বিয়ের মাত্র পনেরো দিন বাকি।”
ওয়াহিদ হতচকিত নেত্রে তাকায়।
“ সেজন্য মন খারাপ?”
অবুঝ বনে, একবার উপর নিচ মাথা দুলায় নিশাত। অথচ তার এই নিরব উত্তরে ওয়াহিদের আকুবাকু করা মনটা মুহুর্তেই খারাপ হয়ে যায়। শীতল অথচ দারুণ অশান্ত গলায় সে শুধায়,
“ তোমার কি ইন্টারেস্ট চলে যাচ্ছে নিশাত?”
“ কিসের ইন্টারেস্ট?” নিশাত ঠোঁট চেপে জিজ্ঞেস করে। অথচ প্রশ্নের বিপরীতে কেবল নির্বাক বনে চেয়ে রয় ওয়াহিদ। সেকেন্ড খানেক গড়াতেই নিশাত অস্থির হয়ে উঠে,
“ বাসা ছেড়ে চলে যাব,সেজন্য মন খারাপ। বিয়ে নিয়ে আমি খুব এক্সাইটেড,সত্যি।
তিন সত্যি, ওয়াহিদ। ভালোবাসায় আবার ইন্টারেস্ট চলে যায়? এটা কেমন কথা? আপনি ভুল বুঝছেন।”
ওয়াহিদ শুণ্যে চেয়ে,চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বলে,
“ আমি তোমায় ঘরে তোলার জন্য কতকি করছি, নিশাত। এক এক দিনটা কেমন অপেক্ষায় পাড় করি,তুমি বুঝতেও পারবেনা।”
নিশাত ঠোঁট কাম-ড়ে চেয়ে রয়। সে কথার ফাঁকে ফাঁকে অনেক ভুলভাল কথাও বলে ফেলে। এবার থেকে সে ভেবেচিন্তে কথা বলবে। অনেক্ষণ চুপ থেকে ও অল্প হেসে বলে,
“ আমি গুছিয়ে কথা বলতে পারিনা,ওয়াহিদ। এটা জেনেও কেনো আপনি এত মাইন্ড করেন?”
ওয়াহিদ নিশ্চুপ রইল। কাঁধে নিশাতের মাথা ঠেকতেই সে নড়েচড়ে উঠে। নিশাত সঙ্গে সঙ্গে বলে,
“ পড়ে যাব তো।”
ওয়াহিদ ওর হাত শক্ত করে ধরে। দৃঢ় গলায় বলে,
“ পড়বেনা।”
পড়ন্ত বিকেলের এই ব্যস্ত রাস্তায়,জ্যামে আটকে থাকা রিকশার মধ্যে দুজনের নিশ্চুপ প্রেম বিনিময়ের চেয়ে বোধহয় আর কোনো সুন্দর দৃশ্য নেই।
চলবে.
#গোপনে_রাঙানো_প্রেম
#হুযাইফা_মাইশা
—৫১(শেষাংশ)
পার্লারের মেয়েগুলো বের হতেই স্রোত হুড়মুড় করে ঢুকে রুমে। আজ বিয়ে। নিশাতের গায়ে টুকটুকে লাল শাড়ি। মুখে ভারী মেক আপ। গা ভর্তি গয়না। স্রোত ঢুকতেই সে দুঃখী গলায় বলল,
“ ভাবী, দু’টো হার কমাও না! এই ভারী গয়না নিয়ে হাঁটবো কি করে?”
“ চুপ করো,নিশু। এগুলো তোমার। হাঁটা লাগবেনা,গাড়ি রেডি আছে। সিঁড়ি বেয়ে নামতে যদি কষ্ট হয় তাহলে ছাদ থেকে একটা রশি ফেলে দিব,ধরে ধরে নেমে যাবে।”
নিশাত ঠোঁট ভেঙে ফুঁপিয়ে উঠে সহসা। স্রোতের ঠাট্টার স্বর পালটে যায় সঙ্গে সঙ্গে,
“ ওমা! কি হলো!”
নিশাত ভ্যা ভ্যা করে কান্না শুরু করতেই ঘরে হুড়মুড় করে ঢুকেন নাবিদ সাহেব। সিক্ত নয়নজোড়া স্থির হয় মেয়ের পানে। কোলে নাতি। নায়ীব সকাল থেকে কমিউনিটি সেন্টার আর বাসায় ছুটোছুটি করছে।
নিশাত বাবাকে দেখে কান্নার আওয়াজ বাড়ায়। ভাঙা স্বরে ডাকে,
“ বা..বা।”
ভদ্রলোক হকচকালেন। মেয়ের এই অসময়ে কান্নার কারণ বুঝে আসছেনা। তার নিজেরও ভেতর ভেতর অশান্তি লাগছে। স্রোতের একহাত আপনা আপনি মাথায় চলে যায়। হতচকিত গলায় সে আওড়ায়,
“ আল্লাহ! একি! বিদায়ের সময় তাহলে কি করবে তুমি নিশু! তোমাকে সামলাবে কিভাবে!”
সত্যি সত্যিই তাকে বিদায়ের সময় সামলানো গেলনা। এক ঝাঁক মানুষের মধ্যেই সে হাউমাউ করে কাঁদলো। কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞানও হারিয়ে ফেলল। সেসময় নাবিদ সাহেব নাতিকে নিয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার বুকটা খালি খালি লাগছিল। সামনে গেলেই কান্না চলে আসবে বলে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মেয়েকে জ্ঞান হারাতে দেখে ছুটে এলেন ব্যস্ত পায়ে৷ ওয়াহিদ তখন মাথার পাঁগড়ি খুলে গাড়িতে ছুঁড়ে,নিশাতকে সামলে নেয়। বুকের সঙ্গে চেপে ধরে অসহায় মুখে তাকায়। সবাই তখন এক সুরে বলল, বউকে গাড়িতে তোলো। সে তাই করলো। নায়ীব সন্তপর্ণে একবার বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে,ওয়াহিদের নিকট এক আর্জি রাখল,
“ ওর খেয়াল রেখো,ওয়াহিদ। ও খুব চঞ্চল। নিজের খেয়াল রাখতে পারেনা।”
“ বিশ্বাস রাখুন,ভাইয়া। হতাশ করবনা। আসি,দোয়া করবেন।”
আশ্বাস দিয়ে সে নিশাতকে নিয়ে গাড়িতে উঠে।
নায়ীব চেয়ে চেয়ে দেখে,গাড়িগুলো একে একে দৃষ্টিসীমানার বাইরে চলে যাচ্ছে। আর সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে তার আদরের বোন,কলিজার টুকরোকে। ও চাপা নিঃশ্বাস ফেলে ঘাড় ফিরায়। ভীড়েও তার দৃষ্টি ঠিকই খুঁজে পেয়ে যায় স্রোতকে। এককোণায় জবুথবু বনে দাঁড়িয়ে,চোখ থেকে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে। নাবিদ সাহেব এগিয়ে এলেন। কাঁধের ওপর নাহিন ঘুমিয়ে গেছে। যেকোনো সময় উঠে যাবে। এগিয়ে এসেই তিনি বললেন,
“ ওদের বললেনা কেনো পৌঁছে যাতে ফোন দেয়?”
“ দিবে,আব্বু। এমনিই দিবে।”
বলতে বলতে সে ছেলেকে নিজের কোলে নিয়ে আসে।
.
নিশাতের চোখ-মুখ ভেজা। চোখের পানি,নাকের পানি সব মিশে একাকার। ওয়াহিদ ঠোঁট চেপে বোতল থেকে পানি নিয়ে আলতো হাতে ছিটায়। দুইবারের মাথায় নিশাত নড়ে উঠে। চোখ দু’টো খুলেই সে ঝুঁকে থাকা ওয়াহিদকে দেখে হকচকায়। ওয়াহিদ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে,বোতলের ছিপ আটকায়। পরপরই নিশাতকে টান দিয়ে সোজা করে বসায়। গাল ছুঁয়ে বলে,
“ ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে,নিশু..”
“ কি করলাম?”
নিশাত হতচকিত গলায় প্রশ্ন করে। উত্তরের আশা না করেই পুনরায় ব্যস্ত গলায় শুধায়,
“ আমি কোথায়?”
“ কি আশ্চর্য, নিশাত! গাড়িতে তুমি। বাইরে চেয়ে দেখো, সন্ধ্যা হচ্ছে। একটু পরই বাসায় চলে যাব।”
নিশাত আচমকাই শান্ত হয়। মিনিট খানেক গড়াতেই তার দুনিয়া ভর্তি দুঃখের কথা মনে পড়ে। মস্তিষ্কে কিলবিল করে বাসার সুন্দর সুন্দর স্মৃতি। কালও সে নাহিনকে কোলে নিয়ে ঘুরছিল। ভাবীর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলো। বাবার সঙ্গে মনখুলে গল্প করছিল। ভাইয়ার সঙ্গে ঠাট্টা করছিল। আর আজ? সম্পূর্ণ অচেনা এক বাড়িতে ঠাই হবে তার। এই দুঃখ কোথায় রাখবে নিশাত! সে বাবা-ভাইকে ছাড়া কক্ষনো কোথাও থাকেনি। ভাবতে ভাবতেই তার অক্ষিকোটর ভরে উঠে। ব্যথিত গলায় শুধায়,
“ ওয়াহিদ,বাসায় যাব কবে?”
“ এইতো,চলে যাব।”
“ উহু,আমার বাসায়।”
“ এটাও এখন থেকে তোমারই বাসা,নিশু। দু’টোই তোমার বাসা। সবাই তোমাকে খুব ভালোবাসবে নিশাত। আরেকটি বারের মতন, ভরসা রাখো আমার ওপর? কান্না থামাও,লক্ষীটি।”
হাত দু’টো মুঠোয় ভরে নেয় ওয়াহিদ। চুড়ি ভর্তি হাতে একফাঁকে চুমুও খায়। গাড়িতে ওরা দুজন, আর সামনে ড্রাইভার। তার ধ্যান ড্রাইভিং এ। রাস্তার কোলাহলের কারণে সে পেছনের কিছু এমনিতেও শুনতে পারছেনা। নিশাত তাও গুটিয়ে নিল নিজেকে। কান্নাও থেমে গেল সঙ্গে সঙ্গে। গাল দুটো মুহুর্তে রক্তিম হলো। হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলল,
“ আচ্ছা। হাত ছাড়ুন। লজ্জা লাগছে।”
ওয়াহিদ বুক ভরে দম টানে। হাতের বাঁধন আরো দৃঢ় হয়।
..
নায়মা এদিক-ওদিক চক্কর কেটে এসে থামলেন স্রোতের রুমের সামনে। স্রোত তখন আঁচলের পিন-টিন খুলছিলো। বড্ড অশান্তি লাগছে তার। নায়মা ঘরে ঢুকলেন নিঃশব্দে। পেছন থেকে বললেন,
“ ছেলে কোথায় তোমার?”
স্রোত হকচকিয়ে ফিরে। আলতো হেসে বলে,
“ জ্বি,আব্বুর কাছে ছিলো।”
“ আর এখন?”
“ আব্বু নাহয় নায়ীবের কাছেই থাকবে।”
“ কই,নায়ীবের কাছে তো দেখলাম না। ভাইও রুমে বসে আছে। তার কাছেও নেই।”
স্রোত বড়বড় চোখে তাকায়। বুক ধড়ফড়িয়ে উঠে। নায়মাকে রেখেই সে বেরিয়ে যায়। ঘর মানুষজনে ভর্তি। এত এত আত্মীয়স্বজনের খুব কম সংখ্যক মানুষকেই সে চেনে। তার বাড়ির লোকেরা সেন্টার থেকেই চলে গেছে।
ও পুরো বাসা ব্যগ্র চিত্তে ছেলেকে খুঁজলো। শেষমেশ দেখল, তাকে নিয়েই নায়ীব ঘরে ঢুকছে। নায়ীবের দিকে দ্রুত কদমে এগোতেই সে অল্প হাসে। বলে,
“ কি হয়েছে? এত চিন্তিত কেন?”
“ কিছুনা। দেখি, ওর ক্ষিদে পেয়েছে নিশ্চয়ই। খাইয়ে আনি। আপনিও ফ্রেশ হোন।”
সে ব্যস্ত পায়ে ছেলেকে নিয়ে রুমে ছুটে। হতভম্ব নায়ীবও পিছু পিছু যায়।
নায়মা নাহিনকে দেখেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন। স্রোতের উদ্দেশ্যে বললেন,
“ বাচ্চাকে কাছছাড়া করবানা। বাইরে অনেক মানুষ। ঘরে নিয়ে বসে থাকবা।”
স্রোত মাথা নাড়তেই তিনি বেরিয়ে যায়। স্রোত শান্ত হয়। ছেলের ফোলা ফোলা দুই গালে টুপ করে দুটো চুমু খায়।
.
মাস কয়েক পরের কথা।
নিশাত ক্লাস শেষ করে দাঁড়াতেই সামনে এসে বাইক থামে। হেলমেটের ফাঁক দিয়ে চোখ টিপ দেয় ওয়াহিদ। নিশাত ভ্যাবাচেকা খেতেই ওয়াহিদ হেসে বলে,
“ উঠুন,সুন্দরী।”
নিশাত উঠে বসে। দুহাতে ঝাপটে ধরে ওয়াহিদকে। ওয়াহিদ বাইক স্টার্ট দেয়ার পূর্বে শ্লেষাত্মক কণ্ঠে বলে,
“ মন চায় সারাদিন তোমায় নিয়ে বাইকে করে ঘুরি।”
“ কেনো?” নিশাত ভ্রু কুঁচকায়। ওয়াহিদ হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“ তুমি তো কাছেই আসোনা। এই বাইকে বসার সময় যাও বা একটু জড়িয়ে ধরো। বাসায় তো তাও ধরোনা।”
নিশাত বিরক্তি নিয়ে বলে,
“ ফালতু না বকে বাইক স্টার্ট দিন। অসহ্য লাগছে গরমে।”
“ গরমে? নাকি আমার কারণে?”
“ গরম আর আপনার আউলফাউল কথার কারণে।”
“ নিশাত, তুমি কিন্তু কথা দিয়েছিলে আমাকে আর হার্ট করবেনা।”
রাতারাতি গলার স্বর পাল্টানোয় অবাক হলো নিশাত। থুতনি কাঁধে ঠেকিয়ে,ভাবুক চিত্তে বলল,
“ আবার কি বললাম!”
ওয়াহিদ বাইক স্টার্ট দেয়। নিশাত ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
“ আপনার এত রোমান্সের জ্বা লায় আমার লজ্জা লাগে।”
“ সেজন্য ‘অসহ্য লাগে’ বলতে হয়?”
নিশাত হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে। বুক ভরে দম টেনে, ঠোঁট উলটে বলে,
“ সে তো মজা করে বলেছি।”
“ তারপরেও। এজন্য তোমাকে জরিমানা দিতে হবে।”
“ কি? কিসের জরিমানা?” হকচকায় নিশাত। ওয়াহিদ বাইকের স্পিড কমিয়ে, মিররে তাকায়। ফাঁকা রাস্তা খেয়াল করে,মিররের মধ্য দিয়েই নিশাতের চোখে চোখ রাখে। অল্প হাসতেই তার অক্ষিপুটে সুক্ষ্ণ ভাঁজ পড়ে,ভারী সুন্দর লাগে দেখতে। নিশাত তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে আছে,উত্তরের আশায়। সেকেন্ড খানেক গড়াতেই ওয়াহিদ বলে,
“ বাসায় গিয়ে,গুনে গুনে দশটা চুমু দিবে আমায়। এটাই জরিমানা এন্ড পানিশমেন্ট। ওকে?”
নিশাত মাথা নাড়ায়। ওয়াহিদকে চমকে দিয়ে,নির্লিপ্ত ভঙ্গিমায় বলে উঠে,
“ ওকে!”
..
রুমে ঢুকে তাজ্জব বনে গেল নায়ীব। ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাকালো সামনে। খাটের মাঝখানটায় নাহিন বসে আছে। সে এখন একটু একটু বসতে পারে। সাপোর্ট আর ব্যারিকেড হিসেবে কয়েকটা বালিশ রাখতে হয় পাশে।
সে পিটপিট নেত্রে বাবাকে দেখে, মুহুর্তেই চেহারায় খুশি খুশি ভাব চলে আসে। নায়ীব দ্রুত পায়ে এগোয়। ছেলেকে কোলে তুলে,মাথা থেকে পা অব্দি পরখ করে। দ্বিতীয় দফায় তব্দা খেয়ে সে স্রোতকে ডাকে,
“ স্রোত,স্রোত! কোথায় আপনি?”
স্রোত হকচকিয়ে বাথরুম থেকে বেরোয়। নায়ীবকে দেখে ফিচেল হেসে বলে,
“ আপনি এসে গেছেন?”
“ এসব কি?” উত্তর না দিয়ে পালটা প্রশ্ন করে নায়ীব। স্রোত ভ্রু নাঁচায়,
“ কি?”
“ আমার ছেলের গায়ে মেয়েদের কাপড় কেন? কে পরিয়েছে?”
স্রোতের ভ্রুযুগল সোজা হয়,ঠোঁটে অল্প বিস্তর হাসির দেখা মিলে। নায়ীব তখনও জিজ্ঞাসু নজরে চেয়ে। নাহিনের গায়ে একটা গোলাপি ফ্রক। মাথায় অল্প স্বল্প চুল। গায়ের রংটাও তার ফকফকা ফর্সা। প্রথম দেখায় যে কেউ ভুল করে মেয়ে বলে ফেলতে বাধ্য।
স্রোত হেসে হেসেই বলল,
“ এত এত কাপড় আনা হয়েছে মেয়েদের। সেগুলো তো পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। তাই ভাবলাম ওকে পরিয়ে দেখি। দেখুন,ও কি খুশি।”
নাহিন খিলখিল করে হাসছে। হাসতে হাসতে বাবার গাল লালায় ভরিয়ে ফেলছে। নায়ীব মুখ কুঁচকে হেসে ফেলল। ছেলের গালে ঠেসে এক চুমু বসিয়ে বলল,
“ বাবা ফ্রেশ হয়ে আসি,এরপর আদর করব।”
..
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল বেণী করতে করতে একপলক নায়ীবের দিকে তাকায় স্রোত। সে একধ্যানে এদিকেই চেয়ে। গভীর,দৃঢ় দৃষ্টি। দীর্ঘ দশ মিনিট ধরে কোনো হেলদোল নেই। স্রোত আস্তে ধীরে বেণী করে লাইট নিভাতে গেল। তার পিঠ এলানো চুল এখন কোমর সমান। নায়ীবের বড্ড ভালো লাগে লম্বা চুল।
ড্রিম লাইট জ্বা লিয়ে আসতেই নায়ীব তাকে টেনে বারান্দায় নিয়ে এল। কিছুটা শীত শীত লাগছে। এমন এক শীতের দিনেই স্রোতকে সে স্ত্রীরুপে পেয়েছে। এখন সন্তানের মা। সবটাই যেন রুপকথার গল্পের মত ঠেকে নায়ীবের কাছে। সে ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখতো। এরপর মায়ের মৃ ত্যু, হিমির অসহ্য রকমের প্রত্যাখ্যান,সব মিলিয়ে সে ভেতর ভেতর গুমরে ম র ছিলো। তারপর থেকেই ও ভবিষ্যৎ এর পরোয়া করতোনা। কিন্তু এখন করে। এখন সে রোজ বাঁচার স্বপ্ন দেখে। ছেলেকে কোলে নিলেই তার বুক ভরে উঠে। রাতে যখন মা-ছেলে তার কাছ ঘেঁষে শোয়,নায়ীবের প্রশান্তিতে আপনা আপনি চোখ বুঁজে আসে। শত কাজের প্রেশার থাকলেও সেসব কোথায় যেন উবে যায়।
নায়ীব টুলে বসলো। উরুর ওপর স্থান হলো স্রোতের। চুলের ভাঁজে আঙ্গুল ডুবাতেই স্রোত নড়েচড়ে উঠে,
“ মাত্র বেঁধে এসেছি।”
নায়ীব শুনেও যেন শুনেনি। নিজের মত চুলের ফাঁকে হাত চালিয়ে,একসময় ঘাড়ে ওপর ঠোঁট ছুঁয়ালো,
“ ধন্যবাদ,স্রোতশ্রী।”
“ কিসের জন্য?”
“ আমার জীবনে আসার জন্য।”
“ জীবনে?”
“ উহু, রিপোর্ট লিখাতে আমার থানায় আসার জন্য।”
বলতে বলতেই হাসে নায়ীব। সেদিন দেখা না হলে পরবর্তীতে একবার দেখা হতোই। ভাগ্য তাদের মিলিয়ে দিতো নিশ্চয়ই। নায়ীব তখনও নিশ্চিত নিজের অজান্তেই,গোপনে এই রমণীর প্রেমে পড়তো। নায়ীব আগে মা-রাত্মক অবাক হতো। এই কাঠখোট্টা হৃদয়ে সে এত প্রেমও পুষে রাখতো! সে নিজেই জানতোনা। এখন অবশ্য অনাক হয়না। স্রোতের প্রেমে না পড়ে,তাকে ভালো না বেসে নায়ীব থাকতেই পারেনা।
রাত বাড়তেই স্রোত নড়চড় শুরু করল। লহু গলায় বলল,
“ নাহিন উঠে যাবে। এর আগে ঘুমাতে চলুন। কাল তো ডিউটিও..”
শক্ত তর্জনীর দাপটে ঠোঁট দু’টো বন্ধ হয়ে যায় স্রোতের। আহাম্মক বনে,গোলগোল চোখে তাকানোর ক্ষণেই নায়ীব এগোয়। খুব নিকটে এসে ফিসফিস করে,
“ ছেলের মাকে আদর করার সময় এখন। ছেলে আরামসে ঘুমাক।”
স্রোত হেসে তাকে ঠেলার আগেই দুহাতে তাকে ঝাপটে ধরে নায়ীব। অধরে অধর মিশাতেই শান্ত বনে যায় স্রোত।
চলবে.