গোপনে রাঙানো প্রেম পর্ব-৫২ এবং শেষ পর্ব

0
963

#গোপনে_রাঙানো_প্রেম
#হুযাইফা_মাইশা
—৫২ (সমাপ্তি পর্ব)

“ বালুর ওপর বসে আছো কেনো,হিমি? এটা কেমন ধরণের বাচ্চামো! উঠে আসো। কাপড়ে বালু লেগে যাচ্ছে।”

গুরুগম্ভীর স্বর। মেঘের গুড়গুড় আওয়াজ যেমন চিত্তে কম্পন তুলে,তেমনই এক পুরুষালী আওয়াজ। কর্ণকুহরে তা প্রবেশ করলেও হিমির কোনো ভাবান্তর হলোনা। তবে তার উজ্জ্বল, ঝলমলে চেহারায় মেঘের মত তমসা নেমে আসে। মুখ উঁচিয়ে, আবদারের সুর টেনে বলে,
“ একটু থাকি না, ইশরাক? ভালো লাগছে।”

সে কথা কোনোক্রমেই গ্রাহ্য করলোনা ইশরাক। সে একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে। ভ্রু যুগল কুঁচকে আসে বিরক্তিতে। বলে,
“ উঠো। হোটেলে যেতে হবে। লাঞ্চ টাইম হয়ে যাচ্ছে।”

অগত্যা উঠতে হলো হিমিকে। সুন্দর ড্রেসটার নিচের দিকে ভেজা বালু দেখেই নাকমুখ কুঁচকালো ইশরাক। বলল,
“ হোটেলে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নিও প্রথমেই। বি শ্রী লাগছে।”

চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাঁটা ধরে হিমি।
ইশরাকের সঙ্গে তার দাম্পত্য জীবন প্রায় এক বছরের। তেত্রিশ বছর বয়সী ইশরাক সবকিছুই একটু পার্ফেক্টলি হ্যান্ডেল করতে চায়। মাথা থেকে পা অব্দি তার পার্ফেক্ট জিনিসপত্রে মোড়ানো চাই। হিমির ক্ষেত্রেও তার এই রুলসের ছাড় নেই। হিমির ওপরও সে এক ধরণের জোর চালায়। এই ব্যাপার বাদে বাকিসবে হিমির আপত্তি নেই। দাম্পত্য জীবন যে খুব খারাপ যাচ্ছে,এমনও না। তবে হিমির একা থাকলে ভাবুক হয়ে পড়ে। সে ক্রমশ নিজস্বতা হারাচ্ছে। প্রতি পদে তাকে দ্বারস্থ হতে হয় ইশরাকের। বাইরে গেলে কি পরবে,কীভাবে বিহেভ করতে হবে— এসব উদ্ভট জিনিস ইশরাকের ইন্সট্রাকশানেই হয়।

হিমি হোটেলে এসে ড্রেস পাল্টে নিল। ভেজা চুলগুলো খুলেই সে বেরোনোর জন্য উদ্যত হচ্ছিল। ইশরাক হাত টেনে ধরলো। হাতে একটা ক্লিপ ধরিয়ে বলল,
“ বেঁধে নাও।”
হিমি আড়চোখে তাকায়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও চুলগুলো বেঁধে নেয়। ইশরাক ওর হাত ধরে বাইরে বেরিয়ে আসে।

..

নাহিন বালুর মধ্যে একটা কাঠি দিয়ে আঁকিবুঁকি করছে। পাশেই আগ্রহ নিয়ে বসে আছে স্রোত। নাহিন আচমকাই চোখ তুলে তাকালো। সে এখন একটু আধটু কথা বলে শিখেছে। সবার প্রথমেই রপ্ত করেছে ‘বাবা’ ডাক। সে একপ্রকার বুলি আওড়ায় তা। আর এই বুলি তার মুখ থেকে সরেই না।
অধিকাংশ সময়ই ‘বাবা’ ডাকটা সে সম্পূর্ণ উচ্চারণ করেনা। কারণ ‘বাব’ বললেই তার বাবা ছুটে আসে। ‘আকার’ আর লাগেনা। মায়ের ক্ষেত্রে তা নায়। কেঁদেকুটে একাকার বানিয়ে সে মাকে ডাকে।
স্রোত ছোটবেলা থেকেই দেখেছে, ছেলেরা মায়ের নেওটা হয়। উদারণ হিসেবে জলজ্যান্ত সুহাদ,ইফাদ, ইনানকে দেখে এসেছে এতকাল। নায়ীবও তাই। সেও তার মাকে বেশি ভালোবাসতো। কিন্তু নিজের ছেলের ক্ষেত্রে উল্টো ঘটলো কেনো,স্রোত বুঝে পায়না। সারাদিন সে ছেলের পেছনে ঘুরঘুর করে। শত যু-দ্ধ করে খাওয়ায়। আর রাতে বাবা এলেই তাকে ভুলে যায়!

নাহিন হাসলো মায়ের দিকে চেয়ে। বালু মাখানো হাতটা মায়ের গালে ছোঁয়ানোর আগেই স্রোত সরে গেল। হাত ধরে বলল,
“ এগুলোতে ময়লা,বাবা। ফেলে দাও।”

হাত ঝাড়া দিল স্রোতই। নিজে উঠে,ছেলেকেও দাঁড় করালো। প্যান্ট ঝাড়তে নিলেই নাহিন হাত উঁচিয়ে বলল,
“কোল..”
স্রোত অসহায় মুখে বলল,
“ মায়ের কোমরে ব্যথা,সোনা। বাবা এলে কোলে নিবে।”
কোলে তোলার শক্তি সত্যিই অবিশিষ্ট নেই।
কালই ওরা সমুদ্র দেখতে এসেছে। নাহিন ছবিতে সমুদ্রে দেখে বায়না ধরেছিল। সেই বায়না রাখতেই নায়ীবের তোড়জোড় শুরু। দুদিনের মাথায়ই সে হাজির হলো সমুদ্রে। অবশ্য এটা স্রোতের জন্য তার দেয়া অ্যানিভার্সেরি গিফটও বলা যায়।
গতমাসে প্রমোশনও হয়েছে তার।

নায়ীব মিনিট খানেকের মাথায়ই হাজির হলো। হাতে চারটা চিপসের প্যাকেট। সেগুলো নাহিনের গলায় ঝুলিয়ে দিতেই সে ছোট ছোট দুই হাত উঁচাল,
“ বাব,কোল।”
নায়ীব চট করে কোলে তুলে নিল তাকে। স্রোতের দিকে চেয়ে বলল,
“ পকেটে হাত দিন তো।”
“ হ্যাঁ? ”
“ দিন..”
বলেই সে একপাশে ঘুরলো। স্রোত ভ্যাবাচেকা খেয়ে পকেটে হাত ঢুকাতেই মচমচে শব্দ শোনা গেল। হাত বের করতেই সঙ্গে এল অগণিত চকলেট। নাহিন চকলেট খেতে পারেনা। গলায় আটকে যায় তার। স্রোতও তেমন একটা খায়না। ও সরু চোখে চেয়ে, জিজ্ঞেস করল,
“ আমি চকলেট খাই?”
“ এগুলোয় মিষ্টি কম,খেয়ে দেখুন।”
বলতে বলতেই সে বুকপকেটে ঝুলানো কালো চশমাটা চোখে পরলো। পকেট হাতড়ে আরেকটা চশমা বের করে ছেলের চোখেও পরিয়ে দিল। শব্দ করে গালে চুমু দিতেই নাহিন গলা জড়িয়ে ধরে। আধো আধো স্বরে বুলি আওড়ায়,
“ বাব,খেলি..”
“ মা অনেক টায়ার্ড। লাঞ্চ করে আমরা একটা ঘুম দিয়ে, বিকেলে এসে খেলব আবার,ওকে?”

স্রোত হাসে। সে তো বলেই নি সে টায়ার্ড। তারপরেও লোকটা বুঝে গেছে!

ওরা হাঁটতে হাঁটতে লাঞ্চ করতে আসে। নাহিন বসে বাবার পাশে। অর্ডার প্লেস করে অনেক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়।
স্রোত এদিক ওদিকে চোখ ঘুরাতে ঘুরাতে বলে,
“ আব্বু,নিশু আসলে আরো মজা হতো।”
“ আব্বু এতদূর জার্নি করবেনা। নিশুর তো সময় নেই। পরীক্ষা সামনে,ওয়াহিদেরও অফিস।”

স্রোত গালে হাত ঠেকিয়ে,মাথা নাড়ায়।
নায়ীব হাত এগোয়। গালের পাশটায় অল্প বালু লেগে আছে। সেগুলো তর্জনী দিয়ে সরিয়ে দেয়। ভ্রু নাঁচিয়ে বলে,
“ বালু কীভাবে লাগলো?”
“ আপনার ছেলের কাজকারবার।”
বলতে বলতেই সে নাহিনের দিকে তাকায়।
তার দুটো দাঁত উঠেছে। সেগুলো দেখিয়ে দেখিয়েই সে হাসছে। নাদুসনুদুস চেহারা। চুলে বাবার মতই কাট দেয়া। যত বড় হচ্ছে,বাবার গঠনই পাচ্ছে। তাকে দেখলে স্রোতের ছেলে মনেই হয়না।

“ নায়ীব?”

উৎফুল্ল এক নারীকণ্ঠ। স্রোতের ভাবনায় ছেদ পড়ে তা কানে আসতেই। নায়ীব তাকানোর আগেই সে ত্বরিত ঘাড় বাঁকায়। অত্যন্ত সুন্দরী এক রমণী দাঁড়িয়ে। ঠোঁটের ভাঁজে ঝলমলে হাসি। তা দেখেই স্রোতের চিকন ভ্রুদ্বয় বেঁকে যায়।

নায়ীব নিজেও চমকে তাকালো। তবে হিমিকে দেখেই চমক ভাবটা গায়েব হয়ে গেল। কণ্ঠে মিথ্যে আগ্রহ ঢালার চেষ্টা করল,
“ তুমি? কেমন আছো?”

সৌজন্যবোধ থেকে করা প্রশ্নটা। স্রোতের বাঁকানো ভ্রুযুগলের সঙ্গে সঙ্গে চোখ-মুখও বিকৃত হলো।
হিমির সেদিকে খেয়াল নেই। ওর আগ্রহী দৃষ্টি নায়ীবের দিকে।

“ ভালো আছি,নায়ীব। এটা কে?”
বলতে বলতে সে আঙুল উঁচালো নাহিনের দিকে। অপরিচিত মানুষ দেখে নাহিনের হাসি হাসি মুখটাও ধপ করে নিভে গেল। সে ঠোঁট উল্টে মায়ের দিকে তাকালো।

নায়ীব এবার পিঠ সোজা করে বসলো। হাত বাড়িয়ে নাহিনের চুলগুলো এলোমেলো করে দিতে দিতে বলল,
“ আমার ছেলে।”

হিমি কি ভেবে হাসলো।
“ তুমি বাচ্চার বাপও হয়ে গেছো,নায়ীব? দেখে তো মনেই হয়না। এখনও কেমন ফিট এন্ড ফাইন আছো। যাইহোক, শুভকামনা।
এই বুঝি তোমার বউ?”

সে এবার তাকালো স্রোতের দিকে। স্রোত চোখ-মুখ স্বাভাবিক রাখার আপ্রাণ প্রয়াস চালালো।
নায়ীব মাথা দুলিয়ে বলল,
“ ইয়াহ, শি ইজ মাই ওয়াইফ।”
“ দারুণ মিষ্টি দেখতে। সুন্দরী বউ পেয়েছো,বলতে হয়। আসি,দেখা হয়ে ভালো লাগলো। ভালো থেকো।”

বলতে বলতে সে এক হাত নাড়ালো নাহিনের দিকে চেয়ে। নাহিনও হাত নাড়ালো। এই কাজে তার রাজ্যের আগ্রহ। কেউ টাটা দিলে সেও বিপরীতে টাটা দেখায়। কাজটা দাদার শেখানো। তবে দুইবার হাত নাড়াতেই মা তার হাত চেপে নামিয়ে দিল। চোখ রাঙালো অকারণেই।

হিমি সেখান থেকে চলে এল দ্রুত কদমে। ভারী দু’টো নিঃশ্বাস ফেলে সে নিজেকে ধাতস্থ করলো। এরপর চলে গেল নিজেদের টেবিলে।

স্রোত হাত সরালো সময় নিয়ে। ধমকে বলল,
“ অপরিচিত মানুষদের সাথে এত ভাব কিসের তোর?”

নাহিন ঠোঁট উল্টালো। সে করলো কি?
নায়ীব হতভম্ব হলো,
“ ওকে বকছেন কেনো?”

স্রোত সে কথার জবাব দিলনা। তন্মধ্যে খাবার চলে এলো। ওয়েটার যেতেই স্রোত তীর্যক চেয়ে, রয়েসয়ে জিজ্ঞেস করল,
“ কে ছিল?”

নায়ীব ছেলের প্লেটে অল্প খাবার বেড়ে দিল। নির্লিপ্ত গলায় বলল,
“ স্কুলের ফ্রেন্ড।”
“ নাম কি?”
এবার থতমত খেল নায়ীব। একপলক চোখ তুলে তাকালো স্রোতের দিকে। উত্তরখানা এমন ভাবে দিল, যেন স্রোত শুনতে না পায়।
“ হিমি।”

কিন্তু কানখাড়া করে বসে থাকা স্রোতের কানকে ফাঁকি দেয়া গেলনা। সে ঠিকই,স্পষ্ট শুনলো দুই অক্ষরের ছোট্ট নামটা। সঙ্গে সঙ্গেই মস্তিষ্কে দাউদাউ করে অনল জ্ব লে উঠল যেন। চিবিয়ে চিবিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“ কোন হিমি?”
“ কোন হিমি আবার!”
“ আপনার এক্স?”

নায়ীব তব্দা খেল। চোখ রাঙিয়ে বলল,
“ নাহিন আছে।”

স্রোত তেঁতে উঠল,
“ নাহিনের সামনে তো তার সঙ্গে কথা বলা যায়।”
“ কি আশ্চর্য! রাগছেন কেনো? আমি তো কথা বলতে যাইনি। ও এসেছে। চেনা-পরিচিত মানুষ। এভাবে মুখ ঘুরিয়ে নিলে কেমন দেখায় না?”

স্রোত আচমকাই শান্ত বনে গেল। কাটকাট গলায় কেবল বলল,
“ ঠিকাছে,ভালো।”

লাঞ্চ সেড়ে উঠে,নায়ীব যেই না নাহিনকে কোলে নিতে যাবে তক্ষুনি বাঘের মত থা বা বসিয়ে ছেলেকে নিজের কাছে আনলো স্রোত। দাঁতে দাঁত পি-ষে বলল,
“ আমার কোলে আয়,তোর বাবাকে দেখে তো মনেই হয়না তার ঘরে একটা ছেলে আছে। সে হচ্ছে জোয়ান ছেলে-পেলে। তাকে তার মত ঘুরতে দাও।”

নায়ীব হতভম্ব চোখে তাকিয়ে দেখল। কি বলবে ভেবে পেলনা। হোটেলে ফিরেও কিছু করা গেলনা। কারণ মা ছেলে বিছানায় শুয়েই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে।

..

বিকালে বেরোনোর কথা থাকলেও প্ল্যান মাফিক কিচ্ছুটি হলোনা। নাহিনের ঘুম স্রোতের মতই গাঢ়। শত হাঁক ডাকেও একচুল নড়ানো যায়না। দুজনেই হাত ছড়িয়ে ঘুমালো অনেক্ষণ। কেবল জেগে জেগে ছটফট করলো নায়ীব।
মা ছেলে উঠলো সন্ধ্যার একটু পূর্বে। নায়ীব তখন বারান্দায় বসে ছিল। ম্যাগাজিন পড়ছিল। সূর্য অস্ত যাচ্ছে। দারুণ দৃশ্য। এখান থেকে সমুদ্রও দেখা যায়।

নাহিন গুটিগুটি পায়ে হেঁটে এলো। নায়ীবের শার্ট আঁকড়ে,আলতো হাতে টানলো,
“ বাবা,মা ডাকে।”
“ যাচ্ছি,বাবা।”
বলতে বলতে সে উঠে। ঝুঁকে, ছেলের হাত ধরে রুমে আসে।

“ আমরা বেরোবো কখন?”
ঘুমু ঘুমু গলার স্বর। চোখ-মুখও ফোলা। প্রশ্ন করতে করতেই সে একবার আদুরে হাই তুলে। নায়ীব নিগুঢ় চোখে চেয়ে খেয়াল করে। এই না ঘুমোচ্ছিলো? এত দ্রুত উঠে রেডিও হয়ে গেছে?

“ গরম কাপড় সাথে নিন, বাইরে ঠান্ডা আছে। ” নায়ীবের কথাটা খুবই ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে শুনলো স্রোত। কথা শেষ হতেই হাত বাড়িয়ে নাহিনকে ডেকে বলল,
“ আসো,জ্যাকেট পরিয়ে দেই।”

নাহিন জ্যাকেট পরে, বেরোলো আগে আগে। পিছু পিছু যেতে গেলেই কনুইয়ে চাপ পড়ে স্রোতের। রক্তিম চোখে চেয়ে, ঘাড় ফেরাতেই নায়ীবের কঠিন দৃষ্টির কবলে নুয়ে যেতে হয়।
নায়ীব তেজি গলায় বলে,
“ আপনাকেও গরম কিছু পরতে বলেছি।”
“ পারবোনা।”

হাত ছাড়াতে চাইলেও ছাড়ানো গেলনা। দৃঢ় হাতে এবার কাঁধও চেপে ধরলো নায়ীব। দরজা লক করে ছেলের দিকে তাকালো। নায়ীব আলতো হেসে বলল,
“ বাবা,হাঁটো দেখি।”

সে খুশি মনে হাঁটা ধরে। টুপটাপ পা ফেলে এগিয়ে যায়।

..

সমুদ্রের কিনারায় এসে দাঁড়াতেই ঠান্ডা বাতাসের এক ঝাপটা এসে শরীর কাঁপিয়ে দিল। স্রোত স্থির দাঁড়িয়ে রইল। বুক ভরে নিঃশ্বাস টানলো। বাবা,ছেলে কই গেছে জানা নেই। বলে যায়নি।

মিনিট পাঁচ এক স্থির চিত্তে দাঁড়িয়ে রইল স্রোত। সমুদ্রে তারও এই প্রথম আসা। এত কাছ থেকে সমুদ্র দেখা,জল ছোঁয়া। নতুন এক অনুভূতি।

মিনিট খানেকের মাথায়ই পেছন থেকে গলা ঝাপটে ধরলো নাহিন। স্রোত অকস্মাৎ ঘাবড়ে গেল। সেকেন্ড খানেক সময় খুঁইয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে ছেলেকে ধরতেই সে গলা জড়িয়ে, মিনমিন করে বলে,
“ মা, বাবা সরি।”
“ হুহ?”
“ বাবা সরি বুলছে।”
স্রোত না পারতেই হেসে ফেলল। গালে টুপ করে চুমু বসাতেই রিটার্নে ছোট্ট প্রাণটা দু’গাল চুমু,লালায় ভরিয়ে ফেলল।
নায়ীব একহাত পকেটে গুঁজে তা দেখে।
অন্যহাতে থাকা গোলাপ ফুলটা স্রোতের কানে পিঠে গুঁজে দিতে উদ্যত হয় আচমকা। স্রোত বাঁধা দিতে পারেনা। বিষ্ময়ের মাত্রা আকাশচুম্বি হয়,যখন নায়ীব ছেলের দিকে তাকিয়ে এক অদ্ভুত আবদার করে,
“ বাবা,তোমার মাকে আরেকটা গিফট দেই?”
নাহিন মাথা দুলাতেই নায়ীব এগোয়। দুহাতের আজলায় স্রোতের মুখ ভরে,শীতল ললাটে একটা উষ্ণ চুমু বসায়। স্রোত ভয়া নক লজ্জায় গুটিয়ে যায় সাথে সাথেই।
ভাষাহারা বনে, এদিক ওদিক সতর্ক চোখে তাকিয়ে একবার দেখে নেয়। না, কারোর ধ্যান এদিকে নেই। ও চাপা নিঃশ্বাস ফেলতেই নায়ীব পুনরায় ছেলের নিকট আর্জি রাখে,
“ বাবা,আরেকটা দেই?”

নাহিন মাথা নাড়ানোর আগেই সে এগিয়ে আসে। এবার ঠেসে গালে শব্দ করে চুমু খেয়ে কানের কাছটায় মুখ আনে। ফিসফিস করে,স্পষ্ট গলায় বলে,
“ সরি,মিসেস।”

স্রোত ভেঙ্গচি কাটে। নরম স্বরে বলে,
“ হুহ,পরেরবার ওই মেয়ের সঙ্গে কথা বললে..”
“ বলবোনা। দেখলেই উলটো ঘুরে দৌঁড় দিব,আই প্রমিজ।”

সে এবার তাকায় ছেলের দিকে। বেহুদাই বলে,
“ ঠিক বলেছি না, বাবা?”

তার বলার ধরণে হেসে কুটিকুটি হয় নাহিন। মায়ের কোল থেকে নামার তোড়জোড় শুরু করে সঙ্গে সঙ্গে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
“ বাবা,খেলি।”

বলেই সে ছুট লাগায়। সে বড়জোর দুই কদম এগোলো। ভেজা বালুতেই ধপাস করে পড়লো তারপর। নায়ীব হকচকিয়ে এগোয়। দাঁড় করিয়ে,প্যান্ট ঝেড়ে দিতেই ছেলে আবার ছুট লাগায়। নায়ীব পিছুপিছু যায়। বলে,
“ বাবা,এত জোরে দৌঁড়ায় না। পড়ে গেলে ব্যথা পাবে।”

স্রোত প্রফুল্ল চিত্তে তা দেখে। শ্লথ গতিতে কদম ফেলে তাদের পিছু হাঁটা ধরে। খুশিতে তার চোখ ভরে উঠে। এত সুখ! এত সুখ তার ভাগ্যে লেখা! সে তো কল্পনাই করেনি। এই বাপ-ছেলেকে দেখলেই তার প্রাণ খুশিতে ঝলমলিয়ে উঠে কেনো? সবকিছুই রুপকথার মত ঠেকে কেনো? স্রোত জানেনা। জানতে চায়ও না। কিছু কৌতুহল বুকের ভেতর পাথর চাপা দিয়ে রাখাই শ্রেয়। সে কেবল চায়,এই রুপকথা যেন শরীর থেকে রূহ আলাদা হওয়ার আগ অব্দি চোখের সামনে থাকে। আর কিচ্ছুটি সে চায়না। কিচ্ছু না।

সমাপ্ত।
গল্পটা নিয়ে দুই এক লাইন বলে যাওয়ার অনুরোধ রইলো।❤️