#গ্যারাকলে_জোৎস্নারাত
#লেখিকা_সিনথিয়া_জাহান
#পর্বঃ৩
অস্থিতিশীল পরিস্থিতি টা এখন নরমাল হয়েছে ৷ শ্বাস টান ওঠার ভয়ে গালিব মেহতাব ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৷ অন্য একদিন এসে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হবে ৷ নিলয়ও তার বাবা মাকে নিয়ে ফিরে গেছে ৷ যে একটা ঘটনা ঘটে গেল সেটা দেখার পর কেউ ই ভালো কিছু হজম করার অবস্থাতে নেই ৷
গুরবাজ চলে যাওয়ার পরপরই রাত নিজের রুমে এসে চুপটি করে বসে আছে ৷ একটু পর জোৎস্না ওর রুমে চলে আসল ৷ রাতের রাশভারী মুখের দিকে নজর যেতেই জোৎস্নার ভ্রু কুঁচকে গেল ৷ ও বোনের পাশে গিয়ে বসে বলতে লাগল,,,
কি রে মুখটা গন্ডারের এক সপ্তাহের পুরনো মলমূত্রের মতো করে রেখেছিস কেন? কোনোই রসকষ নেই ছ্যাহ ছ্যাহ!
রাত কটমট দৃষ্টিতে বোনের দিকে তাকিয়ে বলল,,, এই সমস্ত অদ্ভুত কথাবার্তা ছাড়া তোর বাক্য সম্পূর্ণ হয় না বে’য়াদব?
জোৎস্না রাতের কাঁধে মাথা রেখে বলল,,, না রে আদব ৷
রাত চোখমুখ কুঁচকে কিছুক্ষণ বোনের দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিল ৷ কিছুক্ষণ পিনপতন নিরবতা ৷ হঠাৎ জোৎস্নার মাথায় দু*ষ্টু বুদ্ধি চলে আসল ৷ ও গলা খাকারি দিয়ে বলতে লাগল,,,,
পুলিশের প্রেমে পড়ে গেলি নাকি? আমার দুলা ব্রো কে খুব মিস করছিস? ফোন করে ডাকব?
রাত চুপ করে থাকল ৷ তা দেখে জোৎস্না মিটমিটিয়ে হাসতে লাগল ৷ অতঃপর ভ্রু নাচাতে নাচাতে বলল,,,
মুরুব্বি মুরুব্বি উহু উহু ৷ বাবাকে বলে বিয়েটা আজই দেওয়ার ব্যবস্থা করব নাকি বল ৷
রাত কঠিন দৃষ্টিতে জোৎস্নার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,, এতোই যখন শখ তো তোর টিউবলাইট কে ধরে এনে বিয়ে কর যত্তসব!
জোৎস্না হাসি বাদ দিয়ে মুখটা গম্ভীর করে বলল,,,, কি বললি? টিউবলাইট? উনাকে আমি যা ইচ্ছা বলব তাই বলে তুইও বলবি?
হ্যাঁ বলব ৷ কারন তোর ওই টিউবলাইটের বোকামীর জন্য আজ আমি হার্ট এ’ট্যাক করতে ধরেছিলাম!
হ্যাঁ তোর সাথে একমত কিন্তু টিউবলাইট বলবি না ৷ সম্মান দিয়ে কথা বলবি ৷ ভুলে যাস না আমি তোর পাঁচ মিনিটের বড় ৷ সে হিসেবে উনি তোর গুরুজন ৷ গুরুজনকে সম্মান দিয়ে কথা বলতে হয় ৷ যাহ ছোট বোন জন্য এবারের মতো মাফ করে দিলাম ৷
রাত ভ্রু কুঁচকে কয়েক সেকেন্ড বোনের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,,,,
আবারও যদি এমন উল্টাপাল্টা কিছু করে তখন?
তখন বলবি “ডিয়ার সম্মানীয় দুলাভাই, আপনার মাথার দুই থেকে একটা তাঁরের গন্ডগোলের কারনে আমার হাই প্রেশার আরো হাই হয়ে গিয়েছিল ৷ তাই বিনীত নিবেদন এই যে অনুগ্রহপূর্বক আপনার মাথা টা কিছুক্ষণের জন্য সোকেজে সাজিয়ে রাখুন ধন্যবাদ ৷”
জোৎস্নার নাটকীয়ভাবে বলা কথাটায় রাত না চাইতেও জোরে হেসে ফেলল ৷ ওর হাসি দেখে জোৎস্নাও হাসতে শুরু করল ৷ এভাবে দুজনে বেশ কিছুক্ষণ হাসার পর ক্লান্ত হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিল ৷ কিন্তু হঠাৎ রাত ধড়পড় করে বিছানা থেকে উঠে জোৎস্নার হাত টেনে বলল,,,
এই শোন না ৷
জোৎস্না শোয়া অবস্থাতেই ভ্রু নাচিয়ে বলল,,, কি?
রাত আমতা আমতা করে বলল,,, আ-আ-আমি ওই পুলিশকে বিয়ে করব না ৷ তুই একটু বাবা মায়ের সাথে কথা বলে দেখ না বোনু ৷
জোৎস্না তড়াক করে শোয়া থেকে উঠে বসল ৷ বোনের করুণ মুখের দিকে ক্ষণকাল তাকিয়ে থেকে বলল,,,
কেন করবি না বিয়ে?
রাত বোনের চোখে চোখ রেখে বলল,,, উনাকে দেখলেই আমার ভয় লাগে ৷ শুধু মনে হয় কখন না জানি আমাকে তুলে আ**ছাড় মা**রে!
জোৎস্না হেসে ফেলে বলল,,, হায় আল্লাহ তোকে কেন আ**ছাড় মা**রবে? উদ্দেশ্য কি?
জানি না ৷ কিন্তু সত্যি বলছি খুব ভয় লাগে ৷ তার উপর জানিস উনি একটুও হাসেন না ৷ উনি নাকি হাসার সময় পান না ৷ এটা কোনো কথা বল? একটা মানুষ নাকি হাসার জন্য সময় পায় না কি আশ্চর্য!
জোৎস্না ওর কথা শুনে এক সেকেন্ড নিশ্চুপ থেকে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল ৷ হাসতে হাসতেই বলল,,,
শালাহ হাসার জন্য নাকি সময় পায় না ৷ আর এদিকে আমি সারাদিন হাসার কারনে পড়াশোনার জন্য সময় বের করতে পারি না ছ্যাহ! বাই দা ওয়ে দুলা ব্রো কে আমার হেব্বি পছন্দ হয়েছে ৷
রাত বোনকে ঝাকিয়ে বলল,,, বিয়েটা ক্যান্সেল করার ব্যবস্থা কর ইয়ার ৷
সর বেডি ৷ আমি বিয়ে ভাঙার মতো অ*শ্লীল কাজের ধারের কাছেও নেই ৷ সবচেয়ে বড় কথা দুলা ব্রো কে আমার পছন্দ হয়েছে ৷ সো এসব ঢংয়ের আলাপ বাদ দিয়ে ইন্সপেক্টর গুরবাজ মেহতাবের কথা ভাব ৷ আমি গেলাম খাবার খেতে ৷ এতো কাহিনী দেখে পেট খালি হয়ে গেছে!
কথাটা বলে জোৎস্না রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷ ওদিকে রাত অসহায় মুখে বসে আছে ৷ এমন সময় ওর ফোন বেজে উঠল ৷ ফোনের স্ক্রিনে অপরিচিত নাম্বার দেখে রাতের ভ্রু কুঁচকে গেল ৷ ও ফোন রিসিভ করে সালাম দিয়ে বলল,,,
কে?
গুরবাজ শান্ত গলায় বলল,,, তোমার বাচ্চার বাবা ৷
ব্যক্তিটা কে বুঝতে পারতেই রাতের বুকটা ভয়ে ধুকপুক করতে লাগল ৷ ওর গলায় এসে সব কথামালা আটকে গেল ৷ গুরবাজ উত্তর না পেয়ে পুনরায় বলল,,
এতো ভয় পেলে হবে? আমাকে ভয় পাবে আমাদের বাচ্চা রা ৷ বাচ্চার মা কেন ভয় পাবে?
রাত অবশেষে মুখ খুলে বলল,,, বাচ্চার কথা বলবেন না খবরদার ৷ আমি বললাম না আপনাকে আমি বিয়ে করব না?
আমিও বললাম না তোমাকে আমি বিয়ে করবই করব ৷
কেন জোর করছেন?
কেন জেদ করছো?
কারন আপনি পুলিশ ৷
আচ্ছা পুলিশের পরিচয় ছাড়াও আমার মানুষের যে একটা পরিচয় আছে সেটা দেখাতে হবে তোমাকে ৷ তবেই বিশ্বাস করাতে পারব যে আমি পুলিশের পাশাপাশি একজন মানুষও ৷
আমি চাই না দেখতে ৷
কিন্তু আমি তো দেখাতে চাই রাত সিদ্দিকী ৷
পারবেন না ৷
পারব ৷ আমি আজ একটা কেস নিয়ে ব্যস্ত আছি ৷ তো কাল তোমাদের বাড়ির পাশের রেস্টুরেন্টে আমাদের দেখা হচ্ছে ৷ সকাল দশটায় পৌঁছে যেও ৷
লাভ নেই আমি যাব না ৷
বলে রাত ফট করে ফোনটা কেটে দিল ৷ জোৎস্না চলেই যাচ্ছিল কিন্তু রাতকে ফোনে কথা বলতে দেখে ও থেমে গিয়েছিল ৷ সব শোনার পর আর বোনের এমন আচরণ দেখার পর ওর মুখটা পোড়া বেগুনের মতো গম্ভীর হয়ে গেল ৷ ও দাঁতে দাঁত চেপে বিরবির করে বলল,,,
শালাহ তোকে তো এবার দুলা ব্রো কে বিয়ে করতেই হবে ৷ তোর এতো ঢং আর নেওয়া যাচ্ছে না! দেখ আমি কি করি ৷ তার আগে একটু খাই ৷
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
জোৎস্না দশটা আপেল আর পাঁচটা কমলা খেয়ে রুমে চলে গেল নিজের মিশন কমপ্লিট করার জন্য ৷ কিন্তু এই মিশন কমপ্লিট করার জন্য ওর রাতের ফোনের দরকার পড়বে ৷ ও বোনের দিকে যেতে ধরবে এমন সময় ওর ফোনে মেসেজের টুং টাং শব্দ হলো ৷ ফোন হাতে নিয়ে দেখল নিলয়ের মেসেজ ৷ ও লিখেছে,,,
তোমার বোনের পছন্দ ভালো না তবে তোমার পছন্দ কিন্তু মারাত্মক ৷ নয়তো আমার মতো একটা ছেলেকে পছন্দ করতে নাহ তুমি!
মেসেজ টা দেখে জোৎস্না কি রিয়েক্ট করবে বুঝতে পারছে না ৷ ক্ষণকাল আহাম্মক হয়ে থাকার পর ও রিপ্লাই দিল,,,
সেই জন্যেই আপনি বিছানার তলায় গিয়ে ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদেন আর আমার দুলা ব্রো আসামীদের কাঁদায় ৷ আসলেই আমার পছন্দ ইউনিক!
মেসেজ দিয়ে নিলয় মিটমিটিয়ে হাসছিল ৷ কিন্তু জোৎস্নার রিপ্লাই দেখে ও থতমত খেয়ে গেল ৷ নিজের প্রেস্টিজ এভাবে ন*ষ্ট হতে দিতে পারে না ও ৷ তাই টাইপ করতে লাগল,,,
আমি তো কাঁদার অভিনয় করেছিলাম ৷ দেখলাম তুমি কি রিয়েক্ট করো ৷ ছেলেরা কাঁদে না বুঝলে? আমি ওই পুলিশকে এক সেকেন্ডেই কাঁদিয়ে ফেলতে পারি! নেহাতই তোমার বোনের কষ্ট হবে দেখে চুপ ছিলাম নয়তো দেখিয়ে দিতাম এই নিলয় মাহমুদ কি জিনিস!
ওর মেসেজ দেখে জোৎস্না পাক্কা দুই মিনিট হাসল ৷ অতঃপর রিপ্লাই দিল,,,
জাহাপনা আজকের মতো ঢপ মারা শেষ হয়ে থাকলে গিয়ে একটু গোসল করুন ৷এতোটা মিথ্যা কথা হয়তো আপনার শরীরের শিরা উপশিরাগুলো স**হ্য করতে পারছে না!
নিলয়কে মেসেজ দেওয়া শেষ করে জোৎস্না চলে গেল রাতের ফোন চু**রি করতে ৷ ভাগ্য ওর সহায় ছিল , রাত নিজের রুমে ছিল না ৷ সেই সুযোগে ও ফোনটা নিয়ে নিজের রুমে চলে গেল ৷ তারপর রিসেন্ট ডায়াল করা নাম্বার টাতে ফোন দিল ৷ একবার রিং পড়তেই রিসিভ হলো ৷ রাতের থেকে এমন রিজেকশন পেয়ে গুরবাজের মুড অফ হয়ে গিয়েছিল ৷ তাই রাতের থেকে ফোন পাওয়া মাত্রই রিসিভ করল ৷
জোৎস্না নিজের তিড়িংবিড়িং স্বভাব আর কথাবার্তা কে নমনীয় করে বলল,,,
তখন ওভাবে কথা বলাটা হয়তো উচিত হয়নি আমার ৷ ঠিক আছে কাল আপনার সাথে দেখা করব আমি ৷
গুরবাজ ভীষণ খুশি হয়ে বলল,,, ঠিক আছে ৷ কাল ঠিক দশটায় রেস্টুরেন্টে দেখা হচ্ছে আমাদের ৷
জোৎস্না ফোন কেটে দিয়ে বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিল ৷ তবে পিছু ঘুরে তাকাতেই ওর পিলে চমকে উঠল ৷ রাত ওর পিছনে দাঁড়িয়ে আছে ৷ জোৎস্না নিজেকে সামলে ইতস্তত করে বলল,,,
এখানে কি করছিস?
রাত বুকে দু হাত গুজে কাটকাট গলায় বলল,,, তুই কি করছিস বল তো?
জোৎস্না আমতা আমতা করে বলল,,, ক-ক-কি করেছি?
আমার ফোন তোর কাছে কেন?
জোৎস্না নিজের নার্ভাসনেস দূর করার জন্য গলা খাকারি দিয়ে বলল,,,
কি করছি মানে? তুই জানিস না আমার ফোনে এমবি নেই? ভিডিও না দেখতে পেয়ে আমার গালিব আঙ্কেল এর মতো শ্বাস টান উঠে যাচ্ছিল তাই তোর ফোনে একটু ভিডিও দেখছিলাম ৷ এতো হিংসুক কেন রে তুই?
চলবে,,,,