#গ্যারাকলে_জোৎস্নারাত
#লেখিকা_সিনথিয়া_জাহান
#পর্বঃ৬
কিছুদিন নিশ্চুপ থাকার পর আজ গালিব মেহতাব তার অতি অপ্রিয় ডাক্তারকে নিয়ে চলে আসলেন সিদ্দিকী পরিবারে ৷ সেদিনের অপ্রীতিকর ঘটনার পর বিয়ের দিন তারিখ নিয়ে আলোচনা করার মতো মানসিক অবস্থায় কেউ ছিল না ৷ শুধু গালিব মেহতাব ই না নিলয়ের বাবা এনামুল মাহমুদ আর ওর মা নিতু খাতুনও এসেছেন ৷
গালিব মেহতাব উনাদের সাথে সৌজন্যমূলক কথা বললেন ৷ অতঃপর জোবায়ের সিদ্দিকীর সাথে বিয়ে নিয়ে আলোচনা করতে লাগলেন ৷ এখানে শুধু বড়
রাই আছে ৷ জোৎস্না রাত কলেজে ৷ গুরবাজ আর নিলয় নিজেদের কর্মস্থলে ৷
বিয়ের দিন তারিখ ঠিকঠাক করে উনারা খাবার খেতে খেতে খোশগল্পে মেতে উঠলেন ৷ সেই সময় জোৎস্না রাত কলেজ থেকে ফিরে আসল ৷ এসে অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষদের দেখে দু বোন থমকে গেল ৷ যদিও জোৎস্না একটু একটু লজ্জা পাচ্ছে কিন্তু রাতের ভীষণ ভয় করছে ৷ ও এখনও গুরবাজকে মেনে নিতে পারেনি ৷
মেয়েদের দিকে নজর যেতেই জোবায়ের সিদ্দিকী গাল প্রশস্ত করে হেসে বললেন,,,
এই তো আমার অমাবস্যা রাত চলে এসেছে ৷
উনার কথা শুনে এক সেকেন্ড চুপ থেকে সকলে মাথা নিচু করে হাসতে লাগল, অবশ্য জোৎস্না হাসছে না, ও কটমট দৃষ্টিতে নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে আছে ৷ গালিব মেহতাবের হাসতে হাসতে শ্বাস টান উঠতে ধরল ৷ তা দেখে ডাক্তার মনসুর উত্তেজিত হয়ে বলতে লাগল,,,
স্যার শ্বাস কে আদর করে ডাকুন আর বলুন যে শান্ত হয়ে যাও ৷ তাহলে দেখবেন শ্বাস নরমাল হয়ে গেছে ৷
গালিব মেহতাব বুকে হাত দিয়ে কটমট দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,, যেখানে আমার বউ আমার কথা শোনেনি সেখানে শ্বাস শুনবে উজবুক?
শুনতেও পারে স্যার ৷ শ্বাস তো আর মেয়ে মানুষ না ৷
উপরে গম্ভীর মুখ করে থাকলেও এই প্রথমবার মনসুর এর কথায় গালিব মেহতাব সম্মত হলেন ৷ এসব আবোল তাবোল কথা বললেও মনসুর খুব ভালোমতো গালিব মেহতাবের চিকিৎসা করে কিন্তু এই হুটহাট শ্বাস টান উঠে গেলে এসব কথা বলে উনার মনোযোগ ডাইভার্ট করার চেষ্টা করে ও এবং এতে কাজও হয় ৷
নাইমা রহমান নিজের স্বামীর প্রতি প্রচন্ড হতাশ ৷ এই নাম ভুলে যাওয়ার রোগ সেই বিয়ের পর থেকে দেখছেন ৷ উনাকে যে কত অদ্ভুত অদ্ভুত নামে ডাকত সেসবের কথা না তোলাই ভালো ৷ উনি ভেবেছিলেন বাচ্চাদের নাম অন্তত ভুলবে না কিন্তু না উনাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে জোবায়ের সিদ্দিকী নিজের বাচ্চার নামও মনে রাখতে পারেন না ৷
স্বামীর থেকে নজর সরিয়ে উনি মেয়েদের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলতে লাগলেন,,,
মেয়েরা দ্রুত গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো ৷ তোমাদের হবু শ্বশুড় শ্বাশুড়ির সাথে কথাবার্তা বলতে হবে তো নাকি? বিয়ের দিন তারিখ তো ঠিক করে ফেলেছি অলরেডি ৷
রাতের চোয়াল ঝুলে গেল ৷ ও কিছু বলতে যাবে তার আগেই জোৎস্না ওকে টেনে উপরে নিয়ে গেল ৷ ওর তো আর রাতের মতো বিয়ে করতে সমস্যা নেই ৷ দু বোন চলে যেতেই জোবায়ের সিদ্দিকী গলা খাকারি দিয়ে নিজের একটু আগের করা ভুল ঢাকতে বলে উঠলেন,,,,
তা আপনাদের মেয়েদের দেখছি না যে?
গালিব মেহতাব বুকে হাত দিয়ে চোখ বড় বড় করে বললেন,,, আমার মেয়ে? আমার মা, মেয়ে, বউ কেউ নেই ৷
এনামুল মাহমুদও সমান হতভম্ভ গলায় বললেন,,, ভাইজান আমারও তো দুই ছেলে , মেয়ে নেই ৷ নিলয় আর প্লাবন আমাদের দুইমাত্র ছেলে ৷
জোবায়ের সিদ্দিকী ইচ্ছাপূর্বক কাঁশার অভিনয় করতে লাগলেন ৷ সামনের মানুষগুলো আসল কাহিনী বুঝতে সক্ষম না হলেও নাইমা রহমান বেশ ভালোভাবেই বুঝলেন যে জোবায়ের সিদ্দিকী মেয়েরা বলতে গুরবাজ আর নিলয়কেই বুঝিয়েছে ৷
মিথ্যা কাঁশি বন্ধ করে উনি বললেন,,, এই আপনাদের মনোযোগ আমার কথায় আছে দেখছি ৷ আমি তো জানি যে আপনাদের মেয়ে নেই ৷ মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য এই কথা বলেছি আমি ৷
উনার কথা শুনে বাকিরা সামান্য হাসলেন ৷ অন্যদিকে নাইমা রহমান দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ৷ এবার কোনো ভুল না করে জোবায়ের সিদ্দিকী বললেন,,,
ছেলেরা কখন আসবে?
এনামুল মাহমুদ বললেন,,, এতোক্ষণে এসে যাওয়ার কথা ৷ হয়তো কাজে ফেঁসে গিয়েছিল ৷
উনার কথা শেষ হলে গালিব মেহতাব বলে উঠলেন,,,, আমার ছেলে সম্ভবত আসামীদের সাথে সময় কাটাচ্ছে ৷ ওদের সাথে একটু সুখ দুঃখের আলাপ করা শেষ হলে চলে আসবে বলে আশা করা যায় ৷
গালিব মেহতাবের কথায় একটু হাসবেন তার আগেই সবার মনোযোগ আকর্ষণ করল সিড়ি বেয়ে নেমে আসা রাত সিদ্দিকী ৷ ও লাল কালোর সংমিশ্রণের একটা শাড়ি আর হিজাব পড়েছে ৷ ওর দিকে তাকিয়ে সকলে বলে উঠল,,,
মাশাআল্লাহ ৷
রাত মাথা নিচু করে সকলের সামনে চলে আসল ৷ দুই পক্ষই ওকে নিজের বউমা ভাবছে ৷ গালিব মেহতাব রাতের থেকে চোখ সরিয়ে পাশে তাকাতেই কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়লেন ৷ অতঃপর বলে উঠলেন,,,
এক মিনিট ভাইজান এটা আমার বউমাও হতে পারে ৷ তাই আপাতত চোখ সরিয়ে রাখুন ৷
আমাদেরও বউমা হতে পারে ৷তো আপাতত আপনিও চোখটা সরিয়ে রাখুন ৷
উনাদের টানা হেঁচড়ার মাঝে জোবায়ের সিদ্দিকী মুচকি হেসে বললেন,,,
আমার মেয়ে জিমকে শাড়ি পড়লে এতোটা সুন্দর লাগে?
সকলে হতভম্ভ চোখে উনার দিকে তাকালেন ৷ জিম এতোক্ষণ কোথায় ছিল সেটা জানা নেই ৷ কিন্তু ওর নাম উচ্চারণের ৫০ সেকেন্ডের মাথায় ও কোথা থেকে বাবার সম্মুখে এসে কাটকাট গলায় বললেন,,,
বাবা আমি বুঝে গেছি ৷তুমি আপুদের আগে আমাকেই বিয়ে দিতে চাও ৷ ব্যাপার না আমি মাইন্ড করব না ৷ পাত্রী দেখা শুরু করে দাও ৷
ওর কথায় জোবায়ের সিদ্দিকী থতমত খেয়ে গেলেও বাকিরা জোরে হেসে ফেললেন ৷ মনসুর নিজে হাসার পাশাপাশি গালিব মেহতাবকে আস্তে হাসার পরামর্শ দিতে লাগল যেন আবার শ্বাস টান না ওঠে ৷
জোৎস্না সিড়ি বেয়ে নামতে নামতে বলতে লাগল,,,,, খুব পেকে গেছিস তাই না? এখনও শার্টের বোতাম লাগানো শিখিস নি তাতেই বউ চাচ্ছিস ছ্যাহ!
আমি কি আর স্বাধে চাচ্ছি? বাবাই আমাকে বাধ্য করছে ৷ এখন তো আমার গুরবাজ ভাইয়া আর নিলয় ভাইয়ার সামনে যেতে লজ্জা করে ৷ মনে হয় ওদের না হওয়া বউ আমি!
আরো একবার সবাই হেসে উঠল ৷ মনসুরের কথাকে পাত্তা না দিয়ে গালিব মেহতাব জোরে জোরে হাসতে লাগলেন ৷ অবশ্য শ্বাস টানও উঠেছে ফলশ্রুতিতে কিন্তু উনি মনসুরকে সেটা বুঝতে দেননি ৷ তবে নিজেকে সামলে নিয়ে উনি এনামুল মাহমুদের কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বললেন,,,
আগেই বলেছিলাম এটা আমার বউমা ৷ আপনার বউমা তো সবেমাত্র আসল ৷
এনামুল মাহমুদ কিছু বললেন না, শুধু মুচকি হাসলেন ৷ উনি একদম শান্তশিষ্ট একজন মানুষ ৷ খুব বেশি কথা বলেন না ৷ ওদিকে জোৎস্না রাতের পাশে গিয়ে বসল ৷ আজ ওদের দুজনকে আলাদা করা খুব কঠিন ৷ কারন দুজনেই একই শাড়ি, একই হিজাব একইভাবে পড়েছে ৷ তার উপর দুজনেই মাথা নিচু করে রেখেছে ৷ অবশ্য জোৎস্না লজ্জায় আর রাত ভয়ে ৷
একটু পর নিলয় চলে আসল ৷ এসেই বেচারা থমকে গেল ৷ নিজের প্রিয় মানুষ টাকে যেন নতুন রুপে দেখছে ও ৷ একদম লাজুক লাল টুকটুকে বউয়ের মতো ৷ কিন্তু পরমুহূর্তে ওর মুগ্ধতা ভরা মুখমন্ডল কুঁচকে গেল ৷ কারন দু দুটো লাজুক লতা বসে আছে ৷ এর মধ্যে কোনটা ওর সেটা ও ঠাওর করতে সক্ষম হচ্ছে না ৷
নিজের হতভম্ভতা কাটিয়ে ও বড়দের সালাম দিয়ে সকলের সাথে টুকটাক কথা বলে বাবা মায়ের পাশে বসে পড়ল ৷ তারপর চোখ সরু করে সামনের দুই ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে থাকল ৷ খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগল কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় কিনা ৷ কিন্তু কিছুই পেল না ও ৷ মনে হচ্ছে জোৎস্নাকে ফটোকপি করে আরেকটা জোৎস্না বানানো হয়েছে!
জোৎস্না আড়চোখে মাথা চুলকাতে থাকা দ্বিধান্বিত নিলয়কে দেখে ঠোঁট চেপে হাসতে লাগল ৷ একই শাড়ি পড়ার আইডিয়া টা ওরই ছিল ৷ ও শুধু নিলয় না গুরবাজকেও আজ দ্বিধায় ফেলতে চায় ৷ সেদিন রাত এসে ওকে বলেছে সব ৷ গুরবাজ কিভাবে রাতকে চিনতে পেল সেটাই অনুসন্ধান করতে চায় জোৎস্না ৷
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
জোৎস্না ছাদে চলে গেল কিছু সময়ের জন্য ৷ আসলে ওর ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে ৷ সকলের সামনে তো আর শান্তিমতো খাওয়া যাবে না তাই ও ছল চাতুরী করে এদিকে চলে আসল ৷ শাড়ির আঁচলের নিচে আসার সময় কিছু ফল নিয়ে এসেছে ও ৷ তবে হাত দুটো মেলে ৩ টার মতো আপেল আর একটা কমলা দেখে জোৎস্নার ভ্রু কুঁচকে গেল ৷ ও আফসোসের স্বরে বলে উঠল,,
এটুকু দিয়ে তো আমার পেটের এক কোণাও ভরবে না ছ্যাহ! তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে যে এতো কম আনব সেটা কি জানা ছিল?
হতাশ হলেও জোৎস্না আপেল খেতে শুরু করল ৷ এই সময় গুরবাজের গাড়ি এসে বাড়ির সামনে দাঁড়াল ৷ ও গাড়ি থেকে নেমে ফোন বের করল ৷ গালিব মেহতাব বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছিল ওকে ৷ ফোনের পাশাপাশি একটা মেসেজও দেখতে পেল ৷ মেসেজ ওপেন করে দেখল সেখানে লেখা,,,
আমার বউমা আজ শাড়ি পড়েছে ৷ দেখতে চাইলে আয় , না চাইলে আসামীর সাথে শুয়ে থাক!
গুরবাজ কপাল কুঁচকে মেসেজ টার দিকে ক্ষণকাল তাকিয়ে থেকে ফোন পকেটে পুড়ল ৷ হঠাৎ ছাদের দিকে নজর যেতেই ওর কুঞ্চিত ভ্রু যুগল সোজা হয়ে আসল ৷ বাবার কথা ভুলে গিয়ে মুগ্ধ হয়ে ছাদে থাকা শাড়ি পরিহিত রমনীটির দিকে তাকিয়ে থাকল ৷
ও দ্রুতপদে ভিতরে প্রবেশ করল ৷ তারপর আশেপাশে খুব একটা নজর না দিয়ে সোজা গিয়ে হবু শ্বশুড় শ্বাশুড়িকে সালাম দিল ৷ তারপর খোলা হাওয়া মন ভরে উপভোগ করার মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে চট জলদি সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগল ছাদে যাওয়ার জন্য ৷ ও এতোটাই অন্যমনস্ক ছিল যে রাতকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় বলল,,,
সাইড প্লিজ শালিকা ৷
গুরবাজ চলে গেল ৷ রাত অবাক চোখে কিছুক্ষণ ওর গমনপথের দিকে তাকিয়ে থেকে বিরবির করে বলল,,,
শালিকা! জোৎস্নার পরিকল্পনা সফল হতে চলেছে দেখছি ৷
সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে রাত বড়দের চা দিতে লাগল ৷ ওদিকে নিলয় এবার হান্ড্রেট পার্সেন্ট সিউর যে এটাই ওর জোৎস্না ৷ পুলিশ যেহেতু উপরের জনের কাছে গিয়েছে তাহলে আর কোনো সন্দেহই রইল না ৷
রাত সকলকে চা দিতে দিতে নিলয়ের সম্মুখে চলে গেল ৷ সামান্য হেসে ও একটা কাপ ওর হাতে দিয়ে দিল ৷ নিলয় চায়ের কাপ নিয়ে ভ্রু নাচিয়ে রাতকে চোখ মারল ৷ এতে করে রাত থতমত খেয়ে গেল ৷ তাই ও চট জলদি নিলয়ের সামনে থেকে চলে গেল ৷
সকলকে চা দেওয়া শেষে রাত পুনরায় নিজের আসনে গিয়ে বসল ৷ কিন্তু নিলয়ের দিকে চোখ যেতেই ওর ভ্রু কুঁচকে গেল ৷ নিলয় ওর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ৷ এক সেকেন্ডের জন্যেও চোখের পলক ফেলছে না ৷ রাত তাকাতেই নিলয় ওকে ফ্লায়িং কিস দিল ৷
রাতের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল ৷ ও তৎক্ষণাৎ চোখ সরিয়ে নিল ৷ ভুলেও দ্বিতীয়বার ওর দিকে তাকাল না ৷ ওর ইচ্ছা হচ্ছে গলা ফাটিয়ে বলতে,,,
এই আমি সেই আমি না আর সেই আমি এই আমি না ৷ প্লিজ পুট ইয়র নজর অন্য জায়গায় ৷
কিন্তু বড়দের সামনে ও কিছুই বলতে পারছে না আর না পারছে ইশরায় নিলয়ের ভুল ভাঙিয়ে দিতে কেননা তাকানোর সাথেই এক একটা ফ্লায়িং কিস ওর দিকে লাফাতে লাফাতে চলে আসছে ৷
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
গুরবাজ ছাদে গিয়ে থেমে গেল ৷ ওর বুকটা ধড়াস ধড়াস করতেছে ৷ গালিব মেহতাবের মতো বুকে হাত দিয়ে হৃদয়টাকে নমনীয় করার চেষ্টা করে ও এক পা এক পা করে এগিয়ে গেল ৷ ওদিকে জোৎস্না অপর মুখ হয়ে গোগ্রাসে আপেল আর কমলা গিলছে ৷
গুরবাজ ঠিক চার কদম দুরত্বে গিয়ে থেমে গেল ৷ তারপর গলা খাকারি দিয়ে বলল,,,
এই যে আমার বাচ্চার মাম্মা আমাকে কি একটুও মনে জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না? তুমি তো আমার হৃদয়ে বড় একটা জায়গায় নিজের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করেছো তাহলে আমাকে কেন দিচ্ছ না?
জোৎস্নার মুখ থেকে আপেলের টুকরো পড়ে গেল ৷ চোখ দুটোও বড় বড় হয়ে গেল ৷ পুরো বিষয়টা হজম করতে ওর পাক্কা এক মিনিট লাগল ৷ পর মুহূর্তে মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চলে আসল ৷ অপর দিকে মুখ করে রেখেই ও কন্ঠটা নরম করে বলল,,,
আপনার কথায় একটু ভুল ছিল ৷ তাই জায়গা দিতে সময় লাগছে ৷
গুরবাজ ভ্রু কুঁচকে বলল,,, কি ভুল বলেছি?
এই যে বাচ্চার মাম্মা বলে ডাকলেন ৷ কিন্তু আমাদের তো বাচ্চা নেই ৷ আমাকে আগে নিজের ঘরনী বানিয়ে নিন তারপর ভেবে দেখব ৷
ঘরনী বানাতে চাই না ৷ তোমাকে আমার হৃদয়ের রানী বানাতে চাই ৷ ঠিক আছে সময় নাও কিন্তু জায়গাটা যেন আমিই পাই ৷
জোৎস্না মিটমিট করে হাসতে লাগল ৷ রাতকে আর একটু ফাঁসানোর জন্য ও বলতে লাগল,,,
একটা সত্যি কথা বলি?
বলো ৷
আমমম আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে ৷ আপনি আমার স্বপ্নে দেখা রাজকুমারের মতোই ৷
গুরবাজের মন টা মুহূর্তেই নেচে উঠল ৷ উত্তেজনায় ওর গলা কাঁপতে লাগল ৷ ওর অবস্থা নিজ চোখে দেখার জন্যে জোৎস্না পিছু ঘুরল ৷ তবে জোৎস্না সেই দৃশ্য উপভোগ করতে পারল না কারন ওকে দেখতেই গুরবাজের পিলে চমকে উঠল ৷ গালিব মেহতাবের মতো বুকে হাত দিয়ে ও থতমত গলায় বলল,,,
সর্বনাশ! আমি তোমাকে রাত ভেবেছিলাম!
জোৎস্না বেশ চমকে উঠল ৷ ও অভিনয় করা বাদ দিয়ে বলতে লাগল,,,
কিভাবে চিনলেন দুলা ব্রো? কত কষ্টে নিজের স্বত্ত্বা কে লুকিয়ে রাখলাম তবুও ধরেই ফেললেন? যাক সে কথা আপনার চোখ দুটো আমার টিউবলাইটকে দান করা যায় না দুলা ব্রো?
চলবে,,,,