#গ্যারাকলে_জোৎস্নারাত
#লেখিকা_সিনথিয়া_জাহান
#পর্বঃ৮
প্রকৃতি আজ শান্ত রূপ ধারন করেছে ৷ গাছে গাছে বাসা বাঁধা পাখিরা শান্ত, বাতাস শান্ত তেমনি শান্ত হয়ে রাত সেই শান্ত প্রকৃতির প্রতি নজর দিয়েছে ৷ নজর প্রকৃতির দিকে থাকলেও মন যে অজানা গন্তব্যে পাড়ি জমিয়েছে ৷ মন আর মস্তিষ্কে শুধু গুরবাজের শেষোক্ত কথা আর ওর মলিন মুখখানা ঘুরপাক খাচ্ছে ৷
প্রকৃতি দেখা থেকে অব্যাহতি নিয়ে রাত অবহেলায় পড়ে থাকা ফোনটার দিকে তাকাল ৷ একজনকে ও ফোন দিতে চাচ্ছে কিন্তু কোথায় যেন একটু দ্বিধা কাজ করছে ৷ বারবার ফোনে হাত দিতে ধরেও থেমে গেল ৷ অবশেষে ফোনটা হাতে নিল ও কিন্তু যাকে ফোন দেওয়ার কথা তাকে দিচ্ছে না ৷ ফোনের স্ক্রিনে ‘পুলিশ’ নামটা জ্বলজ্বল করছে ৷ রাত সেই সেভ করা নাম্বার টার দিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকল ৷
কয়েকবার হাত টা কল অপশনে চলে গেলেও শেষ মুহূর্তে হাত সরিয়ে নিয়েছে রাত ৷ এসব দোনা মোনা করতেই এক ঘন্টা চলে গেল কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হলো না ৷ হঠাৎ কোথা থেকে জোৎস্না উড়ে এসে কল অপশনে ক্লিক করল ৷ রাত যারপরনাই অবাক হয়ে বলল,,,
এটা কি করলি?
যেটা তোর করার কথা ছিল গা’ধা!
রাত ফোন কেটে দেওয়ার চেষ্টা করতে ধরলেই জোৎস্না ওকে আটকাতে লাগল ৷ ওদের দু বোনের ধস্তাধস্তির মাঝে ওদিকে ফোন রিসিভ হয়ে গেল ৷ তা দেখে জোৎস্না বাকা হেসে বলল,,,
এবার সামলাও ৷ আমি চললুম ৷
জোৎস্না যেমন উড়ে এসেছিল তেমনি নাচতে নাচতে চলে গেল রুম থেকে ৷ ওর গমনপথের থেকে চোখ সরিয়ে রাত কম্পিত হাতে ফোনটা নিজের কানে রাখল ৷ তবে কথা বলল না, অবশ্য গুরবাজও এখনও কিছু বলছে না ৷ এভাবে কয়েক মিনিট কেটে গেল ৷ অতঃপর রাত বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে নমনীয় কন্ঠে বলল,,,
শুনুন ৷
পাক্কা এক মিনিট পর গুরবাজ গমগমে স্বরে বলল,,, হুম ৷
আসলে আ-আ-আমি…
কি?
আমি তখন ওভাবে বলতে চাইনি ৷ আপনাকে কষ্ট দেওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার ছিল না ৷
কিন্তু দিয়েছো ৷
আ-আমি তো ইচ্ছা করে বলেছিলাম ৷ মন থেকে বলিনি ৷
তো মনে কি ছিল?
আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই না, এটা সত্যি বলছি মন থেকে বলিনি ৷
বুঝলাম মন থেকে বলোনি ৷ এটা বাইরের কথা ছিল ৷ আমি জানতে চাচ্ছি ভেতরের কথা কি ছিল?
রাত হাসফাঁশ করতে লাগল ৷ তবুও অস্ফুট স্বরে বলে উঠল,,, এর উল্টোটা ৷
তার মানে আমাকে বিয়ে করতে চাও তুমি?
রাতের অবস্থা বেগতিক হয়ে গেল ৷ এই লোক ওকে কথার জালে ফাঁসাতে চাচ্ছে ৷ আর ও ফেঁসেও যাচ্ছে ৷ ওর থেকে জবাব না পেয়ে গুরবাজ কাটকাট গলায় বলল,,,
ওহ বুঝেছি সেটাও চাও না ৷ তুমি শুধু চাও আমিই যেন বিয়েটা ভেঙে দিই তাই না? আচ্ছা ঠিক আছে তাই হবে ৷ রাখছি ৷
বলে গুরবাজ ফোন কেটে দিল ৷ রাত থম মেরে বসে থাকল ৷ ওর হঠাৎ ভীষণ খারাপ লাগতে শুরু করল ৷ এভাবে কয় মিনিট বসে থাকল সেটা রাত জানে না তবে বাবার ডাকে ওর ধ্যান ভাঙল ৷ জোবায়ের সিদ্দিকী গম্ভীর গলায় বললেন,,,
গুরবাজ ফোন দিয়ে এসব কি বলল? জিম দ্রুত নিচে নেমে এসো ৷
রাত বুঝে গেল জিম বলতে ওকেই ডাকছে ওর বাবা ৷ তার মানে গুরবাজ বিয়ে ভেঙে দিল? এতো সহজেই কিভাবে ভেঙে দিল? না রাত এসব ভাবতে পারছে না ৷ ও তৎক্ষণাৎ গুরবাজের নাম্বারে ডায়াল করল ৷ দুই বার রিং পড়তেই রিসিভ হলো ৷ রিসিভ হতেই রাত কম্পিত গলায় বলে উঠল,,,
স-সত্যি সত্যিই বিয়ে ভেঙে দিলেন?
হ্যাঁ তো? সেটাই তো তুমি চেয়েছিলে ৷ আমি তো তোমার ইচ্ছাই পূরণ করলাম ৷ এতেও সমস্যা?
রাতের এবার চোখ ছলছল করে উঠল ৷ও ভেজা কন্ঠে বলতে লাগল,,, হ্যাঁ সমস্যা কারন আমি ওটা চাইনি ৷ আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই ৷ আর হ্যাঁ ভালোও বাসব সত্যি বলছি ৷ তবুও বিয়ে ভাঙবেন না প্লিজ ৷
বলতে বলতে রাত কেঁদে ফেলল ৷ ক্ষণকাল ওকে কাঁদতে দিয়ে গুরবাজ অস্পষ্ট হেসে অত্যন্ত নমনীয় কন্ঠে বলল,,,
এই যে আমার বাচ্চাদের মাম্মা কান্না থামাও ৷ আর বিয়ের প্রস্তুতি নাও ৷ আমি এক মাস পরের বিয়ে টা ভেঙে দিয়ে সেটা পরশুতে এনেছি ৷
রাত কান্না থামিয়ে হতভম্ভ গলায় বলল,,, মানে?
মানে কি? তুমি ভাবলে কিভাবে আমি তোমার সাথে বিয়ে ভেঙে দিব? ন্যাহ কখনোই না ৷ তুমি চাও আর না চাও, ভালোবাসো আর না বাসো তবুও আমার বউ হয়েই থাকতে হবে ৷
কিন্তু?
কি কিন্তু? তবে তোমার ভুল বোঝাবুঝির কারনে আমি তোমার এমন রূপ দেখব সেটা ভাবতে পারিনি ৷ এবার তো আমি তোমাকে আরও বেশি করে ভালোবেসে ফেললাম ৷ বাই দা ওয়ে নিচে গিয়ে দেখো আসল কাহিনী কি, ভুলভাল ভেবে কান্না করো না ৷
গুরবাজ ফোন কেটে গিয়ে মুচকি হাসল ৷ কালু মিয়া পাশ দিয়ে যাচ্ছিল ৷ ওর হাসির দিকে চোখ যেতেই ও আ*র্তনাদ করে উঠল ৷ তা দেখে গুরবাজের মুখের হাসি মিলিয়ে গেল ৷ ভ্রু কুঁচকে বলল,,,
কি সমস্যা কালু মিয়া?
কালু মিয়া ওর দিকে এগিয়ে এসে অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলে উঠল,,,
আপনি হাসতেও পারেন?
গুরবাজ কপাল কুঁচকে কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে ওকে দ্বিতীয় দফায় অবাক করে দিয়ে আবার হাসল ৷ তা দেখে কালু মিয়া আ*র্তনাদ করে বলতে লাগল,,,
স্যার আপনার উপর জ্বিন আঁছড় করেছে!
চুপ থাকো! এটা জ্বিনের না এটা আমার বাচ্চাদের মাম্মার আঁছড় ৷
বলে গুরবাজ মুচকি মুচকি হাসতে লাগল ৷ আর কালু মিয়া সেই হাসির দিকে তাকিয়ে ক্ষণে ক্ষণে হার্ট এ’ট্যাক করতে লাগল!
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
তুমি গুরবাজকে কি বলেছো?
জোবায়ের সিদ্দিকীর হু’ঙ্কারে জিম ভয় পেয়ে গেল ৷ ও ভেবেছিল রাত ভেবে হয়তো ওর নাম নিয়েছিল কিন্তু এসে দেখল ঘটনা পুরো উল্টো ৷ জিম মনে মনে বলতে লাগল,,,
দোষ করলে জিমের নাম মনে হারায় না জোবায়ের সিদ্দিকী ওরফে বাবার!
জোবায়ের সিদ্দিকী পুনরায় বলে উঠলেন,,, কি হলো কথা বলছো না কেন?
জিম অস্ফুট স্বরে বলল,,, কি বলেছি?
নাইমা রহমান, জোৎস্না আর রাতও হন্তদন্ত হয়ে সেখানে চলে আসল ৷ সবার হয়ে রাত ব্যস্ত কন্ঠে বলে উঠল,,,
জিম উনাকে কি বলেছে বাবা?
কি বলেছো জানো?
সবাই একযোগে বলল,,, নাহ ৷
জোবায়ের সিদ্দিকী ভ্রু কুঁচকে ওদের দিকে এক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে বললেন,,, ঠিক আছে আমিই বলছি ৷ এই লিলিপুট গুরবাজকে বলেছে তাড়াতাড়ি আপুকে বিয়ে করে নাও ৷ আপুর বিয়ে হলে আমার বিয়ে টাও নির্দ্বিধায় হয়ে যাবে ৷
সবাই অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে জিমের দিকে তাকাল ৷ অবশ্য জিমও অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে ৷ জোবায়ের সিদ্দিকী পুনরায় বলতে লাগলেন,,,
এখন গুরবাজ বিয়ের ডেট এগিয়ে এনেছে ৷ ও পরশুই রাতকে বিয়ে করতে চায় ৷ এবং এটা নাকি ওর ফাইনাল ডিসিশন ৷
এরই মাঝে জোৎস্না বলে উঠল,,, কি রে জিম আমার টিউব.. না মানে দ্বিতীয় জনকে বলিস নি?
নাইমা রহমান গরম চোখে তাকাতেই জোৎস্না থতমত খেয়ে মাথা নিচু করে ফেলল ৷ নাইমা রহমান কন্ঠটা খাটো করে শুধুমাত্র ওকে শোনানোর জন্য দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,,,
নির্লজ্জ মেয়ে! মুখে কিছুই আটকায় না! একদম নিজের বাপের স্বভাব পেয়েছে!
জোৎস্না প্রথম দফায় লজ্জা পেলেও বাবার প্রসঙ্গ আসতেই হেসে ফেলল ৷ তা দেখে নাইমা রহমান পুনরায় কিছু বলতে যাবেন তার আগেই জিমের কথা শুনে উনি থেমে গেলেন ৷
সত্যি বলছি আমি গুরবাজ ভাইয়ার সাথে কথা বলিনি ৷ আমার কাছে ফোনই নেই ৷
তাহলে কি ও মিথ্যা কথা বলছে? খবরদার নিজের দোষ অন্যের উপর চাপাবে না ৷সেদিন তুমি আমাকেও বলেছিলে যে তুমি বিয়ে করতে চাও ৷
ওটা তো রাগের মাথায় বলেছিলাম ৷
তোমার রাগও আছে ছোকরা? যাক সেটা পরে গবেষণা করা যাবে ৷ তার আগে বিয়ের সমস্ত ব্যবস্থা করতে হবে ৷ আমার সাথে চলো নাইমা ৷
উনারা চলে গেলেন ৷ পরে রইল তিন বাচ্চা ৷ জোৎস্না কাটকাট গলায় বলে উঠল,,,
জিমের বাচ্চা তুই আমার টিউবলাইটকে কেন ফোন দিলি না? আমি আর রাত একসাথে বিয়ে করব ৷
জিম আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল,,, আমি গুরবাজ ভাইয়ার সাথে কোনো কথা বলিনি বুঝেছো?
ওদের দুজনকে একলা রেখে রাত একটু দূরে চলে গেল ৷ তারপর গুরবাজকে ফোন দিল ৷ তৎক্ষণাৎ ফোন রিসিভ করে গুরবাজ বলল,,,
এতো অধৈর্য হচ্ছো কেন? পরশুই তো চলে আসবে আমার কাছে ৷
সাট আপ ৷ আপনি কোন সাহসে আমার ভাইয়ের নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছেন?
বাহ রে মিথ্যা অপবাদ কোথায় দিয়েছি? হ্যাঁ এটা সত্যি ওর সাথে আমার পার্সোনালি এ বিষয়ে কোনো কথা হয়নি কিন্তু ও মনে মনে এটাই চায় ৷ আমি সেটা জানি ৷
কঁচু জানেন! অযথা আমার ভাইটাকে ফাঁসিয়ে দিলেন!
বলে রাত ফোন কেটে দিয়ে রাগে গজগজ করতে লাগল ৷ অন্যদিকে গুরবাজের মুখ থেকে যেন আজ হাসি সরতেই চাচ্ছে না ৷ অবশ্য ওর এই হাসি কালু মিয়ার বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে! বেচারা জীবনের সবচেয়ে বড় শক টা আজকেই পেল!
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
জোৎস্না এটা মানতে পারছে না ৷ রাত সিঙ্গেল থেকে মিঙ্গেল হয়ে যাবে আর ও কিনা সিঙ্গেল থেকে যাবে? উহু এটা হতে দিতে পারে না ও! তাই ফোনটা হাতে নিয়ে ও ‘টিউবলাইট’ নামে সেভ করা নাম্বার টাতে ফোন দিল ৷ সাথে সাথেই ফোন রিসিভ হলো ৷ নিলয় ওকে সালাম দিল ৷ জোৎস্না সালামের জবাব দিয়ে বলল,,,
আপনার হাত কেমন আছে?
আমার হাত তো এখনও অবিবাহিত আছে ৷
আহ বাজে কথা বলবেন না তো ৷ হাতের কি অবস্থা সেটা বলুন ৷
আলহামদুলিল্লাহ্ ফিট এন্ড ফাইন ৷ তবে…
তবে কি? ব্যাথা হচ্ছে? ওষুধ ঠিকমতো খাচ্ছেন তো? মলম দিচ্ছেন তো?
হ্যাঁ ওসব ঠিক আছে ৷ তুমি যা যা বলেছো সব করেছি কিন্তু হাত বেচারার মন খারাপ ৷
জোৎস্না আহাম্মক হয়ে গেল ৷ কাটকাট গলায় বলতে লাগল,,,
আপনার হাতের মনও আছে? যাক সে কথা আপনার হাতকে আমার কাছে দিয়ে যান ৷ দুটো থা’প্পড় মে**রে ওর মন ভালো করে দিই!
উহু তার দরকার পড়বে না ৷ আমার হাত এখনও বিয়ে করতে পারছে না তো তাই ওর মন খারাপ ৷
শালাহ আপনারও বিয়ে হবে না! এদিকে দুলা ব্রো মাথা খাটিয়ে এক মাস পরের বিয়ে পরশুই করতে যাচ্ছে ৷ আর আপনি হাতের সাথে পিরিত করতে থাকুন যত্তসব!
নিলয় হাসি ঠাট্টার মুডে ছিল কিন্তু জোৎস্নার কথা শুনে ও ভ্রু কুঞ্চিত করে ব্যস্ত কন্ঠে বলল,,,
কিভাবে?
যেভাবে হয় সেভাবে ৷ আপনার প্রতি আমার অতো বেশি ইন্টারেস্ট নেই, দেরি করে বিয়ে করলেও সমস্যা নেই ৷ কিন্তু আমি আমার জমজ বোনের সাথে একই দিনে বিয়ে করতে চাই ৷ তাই কিছু একটা করুন ৷
নিলয় থতমত খেয়ে বলল,,, একই সাথে অপমানও করলে আবার দরদও দেখালে ছ্যাহ! যাক গে অপমান আমার গায়ে লাগে না ৷
লাগবে কিভাবে? আপনার তো গন্ডারের চামড়া!
যাক এটাও লাগেনি ৷ তবে হ্যাঁ ওই পুলিশের বিয়ে করতে এই তাড়াহুড়ো আমার গায়ে লেগেছে তাই নো চিন্তা ৷ তোমার আমার বিয়েও পরশুই হচ্ছে ৷ তুমি গিয়ে চিল করো ৷ আমি কাউয়া ধরে এনে বিয়ের ব্যবস্থা করছি ৷
ফোন কেটে গেছে ৷ জোৎস্না ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে কিছুক্ষণ হাসল ৷ অতঃপর চুপচুপ করে এনে রাখা কয়েকটা আপেল কোলের মধ্যে নিয়ে একটা একটা করে খেতে খেতে বলল,,,
আরে আমার টিউবলাইট, আপনাকেও বিয়ে করার প্রতি ইন্টারেস্টেড আমি ৷ তাই যত দ্রুত বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা যায় ততই ভালো ৷
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
নিলয় নিজের কথা রেখেছে ৷ ও নিজের বুদ্ধিকে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত খাটিয়ে জোবায়ের সিদ্দিকীকে রাজি করিয়েছে সাথে নিজের সোজা সরল মা বাবাকেও ৷ আজ সেই বিখ্যাত “পরশু দিন” ৷ জোবায়ের সিদ্দিকী কাজ করতে করতে নিজের বেহাল দশা করে ফেলেছেন ৷
এটাই প্রথম বিয়ে যে বিয়ের কনেরা নিজেদের বিয়েতে যাবতীয় কাজ করে চলেছে ৷ কারন ওদের তো আর বড় ভাই নেই আর না আছে কোনো চাচা ৷ ডেকোরেটরের লোকের সাথে হাতে হাতে কাজ করে দিচ্ছে ওরা ৷ জোৎস্না একটা লোককে ফুল দিয়ে ঘর সাজাতে সাহায্য করছে ৷ হঠাৎ জোবায়ের সিদ্দিকী ওই লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,,
এই মেয়ে এদিকে একটু শুনে যাও তো ৷
লোকটা একপলক উনার দিকে তাকিয়ে আশেপাশে তাকাতে লাগলেন ৷ না কোনো মেয়ে তো নেই তাহলে কাকে ডাকছে? উনি জোৎস্নার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই জোৎস্না স্বাভাবিক গলায় বলল,,,
আপনাকেই ডাকছে ৷ যান গিয়ে শুনে আসুন কি বলে ৷
লোকটা এখনও দ্বিধান্বিত ৷ জোবায়ের সিদ্দিকী গলা খানিকটা উঁচু করে বললেন,,,
তোমার কানে কথা যায় না? দ্রুত এদিকে আসো মেয়ে ৷
লোকটা মাথা চুলকাতে চুলকাতে নিজেকে আপাদমস্তক দেখতে লাগল ৷ না ও তো ঠিকঠাক পোশাকই পড়েছে তাহলে মেয়ে বলে ডাকছে কেন? উনি জোৎস্নাকে বললেন,,,
আমার মুখে কি কিছু লেগে আছে?
জোৎস্না উনার অবস্থা দেখে হাসছিল ৷ নিজের হাসি থামিয়ে ও বলতে লাগল,,,
উহু কোনো কিছু লেগে নেই ৷ আপনি ছেলেই আছেন ৷ আসলে আমার বাবার ভুলে যাওয়ার রোগ আছে ৷
তাই বলে একটা জলজ্যান্ত ছেলেকে মেয়ে বলে ডাকবে?
নিজেদের সন্তানদেরই চেনেন না তাহলে এটা ভুলবেন না কোন হিসেবে?
আশ্চর্য! খুব আশ্চর্য! ভীষণ ভীষণ আশ্চর্য!
এসব বলতে বলতে লোকটা জোবায়ের সিদ্দিকীর দিকে চলে গেলেন ৷ অন্যদিকে জোৎস্না এবার জোরে জোরে হাসতে লাগল ৷ একটু পর জোবায়ের সিদ্দিকী ওকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,,
এই যে অমাবস্যা হাসি বন্ধ করে বোনের সাথে গিয়ে সাজুগুজু শুরু করো ৷
জোৎস্নার হাসি থেমে গেল ৷ ও কর্কশ গলায় বলতে লাগল,,,
মিস্টার জোবায়ের সিদ্দিকী প্লিজ মনে রাখুন ইউর বাচ্চাদের নেইম!
চলবে,,,,