গ্যারাকলে জোৎস্নারাত পর্ব-০৯

0
376

#গ্যারাকলে_জোৎস্নারাত
#লেখিকা_সিনথিয়া_জাহান
#পর্বঃ৯

বিয়ের আয়োজন হয়ে গেছে ৷ বাইরে থেকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সিদ্দিকী সাহেবের কন্যারা আজ বিদায় নেওয়ার সমস্ত ব্যবস্থা করে ফেলেছে ৷ লোকজন দিয়ে গমগম করছে পুরো বাড়ি ৷ জোৎস্না উঁকি মেরে এক পলক সেই দৃশ্য দেখে পুনরায় রাতের কাছে চলে গেল ৷

রাত গাঢ় গোলাপী শাড়ি পড়ে বধূবেশে বিছানায় বসে আছে ৷ ওর মুখটা কেমন রক্তশূণ্য হয়ে আছে ৷ অন্যের বাড়িতে চলে যাবে এটা যেন ও ভাবতেই পারছে না! জোৎস্না ওর পাশে এসে বসে পড়ল ৷ তারপর ওর হাতের উপর আলতো করে নিজের হাতটা রেখে নরম গলায় বলল,,,

বোনু এমন করে থাকিস না ৷ আমিও তো চলে যাচ্ছি ৷

রাত চোখ তুলে বোনের দিকে তাকিয়ে বলল,,, সেটাই তো সমস্যা ৷ তুই আর আমি একই সাথে চলে যাচ্ছি ৷ বাবা মামনি কিভাবে থাকবে?

জোৎস্নারও কথাটা ভেবে মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে বারবার কিন্তু ও বোনের কষ্ট না বাড়ানোর জন্য ইচ্ছা করে বলতে লাগল,,,,

তাতে কি? জিম তো আছে ৷ মেয়েদের কথা মনে পড়লে ওকে আমাদের জামা পড়িয়ে দিবে ৷ ওর চেহারা তো আমাদের সাথে অনেকাংশে মিলে যায় ৷ ব্যস ল্যাটা চুকে গেল ৷

জিম রুমের ভিতরে প্রবেশ করতে করতে বলল,,, হ্যাঁ সারাদিন শুধু এমন কুটিল বুদ্ধিই রচনা করো ৷ এই জ্বালা থেকে বাঁচার জন্য আমি বড়লোকের একটা মেয়েকে পটিয়ে ঘরজামাই থেকে যাব হুহহ!

এতো মন খারাপের মাঝেও রাত হেসে ফেলল ৷ ওকে হাসতে দেখে জোৎস্না কিছুটা স্বস্তি পেল ৷তবে জিমকে কি আর এতো সহজে ছেড়ে দেওয়া যায়? তাই ও বসা থেকে উঠে গিয়ে ওর কান টেনে ধরে বলল,,,

ওলে আমার ঘরজামাই রে! বউয়ের হাতে নিয়মিত ঝাটার বাড়ি খাবি আহাম্মক!

জিম নিজের কানকে ছাড়িয়ে নিয়ে গরম চোখে বোনের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল,,,

তবুও ভালো ৷ তোমার থেকে অন্তত বেঁচে যাব ৷ অবশ্য একটু পরেই বেঁচে যাব ৷ তোমাদের উহু উহু রা চলে এসেছে ৷ চলো নিচে চলো ৷

রাতের মুখের হাসি আবার মিলিয়ে গেল ৷ জিম তাড়া দেওয়ায় দু বোন এক এক করে নিচে নামতে লাগল ৷ ড্রয়িংরুমে সবাই নিজেদের মধ্যে খোশগল্পে মেতে ছিল ৷ তবে কনে দের দিকে নজর যেতেই ওরা গল্প বাদ দিয়ে সেদিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকল ৷

বাকি সবার মতো নিলয় আর গুরবাজের চোখও সে দিকে চলে গেল ৷ নিলয় মুগ্ধ হতে গিয়েও হতে পারল না কারন ডাবল জোৎস্না দেখতে পারছে ও ৷ কিভাবে বুঝবে এর মধ্য থেকে ওর টা কোনটা? এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ও গুরবাজের দিকে নজর দিল ৷

গুরবাজ অবশ্য স্বাভাবিক ভাবেই মোহিত নজরে এক জনের দিকে তাকিয়ে আছে ৷ নিলয় গলা খাকারি দিয়ে বলল,,,

শাড়ি দুটো সুন্দর তাই না? একই শাড়ি দুজনে পড়েছে, ভালোই মানিয়েছে ৷

গুরবাজ ছোট করে বলল,,, হু ৷

তবে যাই বলো দুজনের মাথা নিচু করে আসা উচিত ছিল ৷ নতুন বউ বলে কথা ৷

আমার জন মাথা নিচু করেই রেখেছে ৷ তুমি তোমার টার কথা ভাবো ৷

নিলয় সকলের অগোচরে বিজয়ীর হাসি হাসল ৷ ওর মিশন কমপ্লিট হয়েছে ৷ নিজের বউকে খুঁজে পেয়েছে ৷ এবার তাই আত্মবিশ্বাসের সহিত মুখে সামান্য হাসি ফুটিয়ে রাখা , আশে পাশে নজর বোলাতে থাকা জোৎস্নার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকাল ৷ আর বিরবির করে বলল,,,

মাথা নিচু করে কেন হাঁটবে আশ্চর্য? যদি পড়ে যায়? পুলিশের বউ টা এতো বোকা ছ্যাহ!

জোৎস্না রাত কাছাকাছি চলে আসার পরও ওদের হবু স্বামীদের নজর ওদের থেকে সরল না ৷ বরং সেটা আরও বেড়ে গেল ৷ নিজেদের প্রিয়তমদের পাশে বসে ওরা মাথা নিচু করে রাখল ৷

বেশ কিছুক্ষণ পর কাজি সাহেব চলে আসলেন ৷ বহু সময় প্রতীক্ষার পর দুই বিয়ে সম্পন্ন করলেন উনি ৷ তবে জোৎস্নার ক্ষেত্রে কম পরিশ্রম করলেও রাতের ক্ষেত্রে উনার পরিশ্রম বেশি গেল ৷ ওর কান্না বাঁধ মানছিল না ৷ কবুল বলার সময় এই যে কান্না শুরু করেছিল সে কান্না এখনও অব্যাহত আছে ৷

জোৎস্না কাঁদেনি এমনটা নয় কিন্তু রাত ম*রাকান্না জুড়ে দিয়েছে ৷ একটু আগে বোনদের বিদায় করতে পারলে বেঁচে যাবে বলতে থাকা জিমও জোরে জোরে কান্না করতে লাগল ৷ সারাদিন যে বোনদের আশেপাশে ঘুরঘুর করত তারা চলে যাবে ভাবলেই ওর বুক ফেটে যাচ্ছে ৷

বিদায়ের সময় তিন ভাইবোন কে আলাদা করা দায় হয়ে পড়ল ৷ ওদের অবস্থা দেখে ওখানে উপস্থিত সবার চোখ ছলছল করে উঠল ৷ নাইমা রহমান নিজের মেয়েদের অনেকক্ষন নিজের সাথে আঁকড়ে রাখলেন ৷ এভাবেই অনেক সময় কেটে গেল ৷ এই পুরো সময় গুরবাজ আর নিলয় ছিল নিরব দর্শক ৷ নিজেদের প্রিয় মানুষকে তাদের প্রিয় মানুষের সাথে সময় কাটাতে দিল ৷ ওদের মাঝে আজ কোনো তাড়া নেই ৷

তবুও যেতে তো হবেই ৷ তাই জোবায়ের সিদ্দিকী রাত কে নিয়ে এসে গুরবাজের হাতে দিয়ে ভেজা কন্ঠে বলতে লাগলেন,,,

আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো বাবা ৷ পুলিশের অভিনয় করতে করতে আমার জোৎস্নাকে আবার জেলে ভরে দিও না ৷

উনার কথা শোনামাত্রই গালিব মেহতাব বুকে হাত দিয়ে আ*র্তনাদ করে বললেন,,,

কিহ! জোৎস্না? ভাইজান ভুল মানুষকে এনে দিলেন না তো? আমার বউমা রাত, জোৎস্না না ৷

গুরবাজ তৎক্ষণাৎ জবাব দিল,,, এটাই আমার রাত ৷ জোবায়ের বাবা ভুল করে জোৎস্না বলে ফেলেছেন ডোন্ট মাইন্ড ৷

রাত মুমূর্ষু অবস্থায় থাকলেও চকিতে গুরবাজের মুখ টার দিকে একপলক তাকাল ৷ অতঃপর চোখ সরিয়ে নিল ৷ ওদিকে গালিব মেহতাবের হাত এখনও তার বুকে অবস্থান করছে ৷ তা দেখে মনসুর নিজে জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলল,,,

স্যার আমার মতো করুন ৷ সমস্যা নেই ভয় পাবেন না ৷ শ্বাস কোনো মেয়ে নয় যে আপনার ক্ষ*তি করবে!

মনসুরের কথা শুনে গালিব মেহতাব শান্ত হলেন ৷ ও দিকে রাতের কান্নাকে তোয়াক্কা না করে জোবায়ের সিদ্দিকী বুকে পাথর চাপা দিয়ে মেয়েকে গাড়িতে তুলে দিলেন ৷ উনি অনুমতি দিতেও গুরবাজ গাড়ি স্টার্ট করার জন্য ড্রাইভার কে ইশারা করল ৷ রাত এবার আরো জোরে জোরে কান্না করতে লাগল ৷ ওর দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকল গুরবাজ ৷ ওর মনটা ভার হয়ে গেল ৷ সামনের সিট থেকে গালিব মেহতাব বলতে লাগলেন,,,

মা কেঁদো না ৷ আমাদের বাড়িতে কোনো মেয়ে মানুষ নেই তাই কূটনামি করার মতো কাউকে পাবে না ৷ আর হ্যাঁ আমি সব কাজ করতে পারি , গুরবাজও পারে ৷ আমাদের দ্বারা কাজ করিয়ে নিতে পারবে ৷

রাত কান্না থামিয়ে আহাম্মক হয়ে শ্বশুড়ের দিকে তাকাল ৷ এমন কথা ও আশা করেনি ৷তবে একজনের স্পর্শ পেতেই ও থমকে গেল ৷ গুরবাজ ওর হাতকে নিজের শক্ত হাতের মুঠোয় পুড়ে নিল ৷ ও তাকাতেই গুরবাজ শান্ত স্বরে বলল,,,

রিল্যাক্স ৷ কিচ্ছু হয়নি ৷ যখন ইচ্ছা তখন আসতে পারবে ৷ আমি নিজে রেখে যাব ৷

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

এক মেয়েকে বিদায় জানানোর পর দ্বিতীয় মেয়েকেও বিদায় জানানোর সময় চলে আসল ৷জোৎস্নার অবস্থা কোনো অংশে রাতের থেকে ভালো নয় ৷ কাঁদতে কাঁদতে ওর গলা শুকিয়ে গেছে ৷ জিমও বোনের শাড়ির আঁচল টেনে ধরে কেঁদে চলেছে ৷ নাইমা রহমান এসব সহ্য করতে না পেরে চুপ করে এক জায়গায় বসে আছেন ৷

জোবায়ের সিদ্দিকী মেয়েকে নিলয়ের হাতে তুলে দিয়ে বলতে লাগলেন,,,

আ-আমার জিমকে কোনো অবস্থায় কষ্ট দিবে না ৷ ওর একটু পর পর ক্ষুধা লাগে তাই সময়মতো ওর খাওয়ার ব্যবস্থা করবে বাবা ৷

সকলের কান্না কয়েক মুহূর্তের জন্য থেমে গেল ৷ জিম আর জোৎস্না ক্রন্দনরত চোখেই অ**গ্নিবর্ষণ করে বাবার দিকে তাকাল ৷ জোবায়ের সিদ্দিকী সেই চাহনি দেখে থতমত খেয়ে গেলেন ৷ তাই গলা খাকারি দিয়ে বলতে লাগলেন,,,

গুরবাজ ওকে দ্রুত নিয়ে যাও ৷ আমি এই কষ্ট আর সহ্য করতে পারছি না ৷

নিলয় তৎক্ষণাৎ বলে উঠল,,, বাবা আমি নিলয়!

জোবায়ের সিদ্দিকী দ্বিতীয় দফায় থতমত খেয়ে গেলেন ৷ তাই চট জলদি নজর ঘুরিয়ে নিয়ে নিলয়ের বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে লাগলেন ৷ একটু পর জোৎস্নাকেও বিদায় দেওয়া হলো ৷ দুই কন্যার বিদায়ে পুরো সিদ্দিকী পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসল ৷ ভগ্ন হৃদয়ে পড়ে রইল তারা!

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

খুব বেশি আত্মীয় স্বজন না থাকায় গালিব মেহতাবই রাত আর গুরবাজকে তাদের রুমে রেখে গেলেন ৷ গালিব মেহতাব চলে গেলেই নফল নামাজের মাধ্যমে নতুন জীবন শুরু করল রাত আর গুরবাজ ৷ হঠাৎ ফুল দিয়ে সাজানো বিছানার দিকে নজর যেতেই রাতের ভয় করতে লাগল ৷ ও এসবের জন্য একটও প্রস্তুত না ৷

গুরবাজের ডাকে ওর ধ্যান ভাঙল ৷ গুটিগুটি পায়ে ও গিয়ে বিছানায় বসে পড়ল ৷ বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে গুরবাজ ওর সম্মুখে বসে পড়ল ৷ ওর উপস্থিতি রাতের ভয় দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিল ৷ কিছুক্ষণ নিরবতার পর গুরবাজ শান্ত গলায় বলল,,,

তোমার হাতটা দাও ৷

রাত তৎক্ষণাৎ দিল না ৷ গুরবাজ দুই তিন বার বলার পর ও হাত উঁচু করল ৷ পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা ব্রেসলেট বের করে সেটা রাতের হাতে পড়িয়ে দিতে দিতে গুরবাজ বলল,,,

দীর্ঘ সঞ্চয়ের পর আমি তোমার জন্য একটা সোনার ব্রেসলেট বানাতে সক্ষম হয়েছি ৷

রাত কৌতূহলবশত জিজ্ঞাসা করল,,, দীর্ঘ সময়? আমাকে কতদিন থেকে চেনেন আপনি?

যেদিন দেখতে গিয়েছিলাম সেদিন থেকেই ৷ আগে কখনো দেখিনি ৷ তবে হবু বউয়ের জন্য দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চয় করছিলাম আর সেটা তো তুমিই ৷

রাত কিছু বলল না ৷ তবে একটা প্রশ্ন মাথায় আসতেই ও বলতে লাগল,,,

একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে পারি?

নিঃসন্দেহে রাত সিদ্দিকী ৷

আমাকে আপনি এতো সহজে কিভাবে চিনতে পারেন? আব্বুই তো সবসময় চিনতে পারে না ৷

গুরবাজ অস্পষ্ট হেসে বলল,,, তোমার ভ্রুর উপরে ছোট্ট একটা তিল আছে যেটা জোৎস্নার নেই ৷

কিন্তু সেটা তো অনেক ছোট ৷

ভুলে যেও না আমি পুলিশ ৷ এসব ক্ষেত্রে আমার নজর অত্যন্ত তীক্ষ্ণ ৷ তার উপর তুমি আমার বউ বলে কথা ৷ তোমাকে চিনব না? এটা হতে পারে?

রাত ক্ষণকাল চুপ থেকে বলল,, আচ্ছা বুঝলাম কিন্তু দূর থেকেও কিভাবে চিনতে পারেন?

তোমার মুখের সমস্ত এক্সপ্রেসন আমার মুখস্ত ৷ তোমার মুখের আলাদা একটা বৈশিষ্ট্য আছে যেটা জোৎস্নার মুখে নেই ৷ তোমার মুখে সবসময় লাজুকতা সরলতা আর মায়া থাকে ৷ অন্যদিকে জোৎস্নার মুখে দুষ্টুমি, আত্মবিশ্বাস আর হাসির রেখা ফুটে থাকে ৷

রাত হতভম্ভ গলায় বলল,,এতো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন?

করব না কেন? তুমি আমার অনেক শখের মানুষ ৷

কথাটা বলে গুরবাজ মুচকি হাসল ৷ সেই হাসির দিকে তাকিয়ে রাতের পিলে চমকে উঠল ৷ ও অস্ফুট স্বরে বলল,,,

আপনি হাসতেও পারেন?

গুরবাজ জোরে হেসে উঠল ৷ অতঃপর ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলতে লাগল,,,

আরও অনেক কিছুই করতে পারি ৷ দেখাব রাত সিদ্দিকী?

রাত গুরবাজের চাহনি দেখে ভয়ে ঢোক গিলল ৷ একটু একটু করে এগিয়ে এসে গুরবাজ রাতের কপালে অনেক সময় নিয়ে চুম্মন করল ৷ অতঃপর রাতের ওষ্ঠে হাত বোলাতে বোলাতে বলল,,,

শুধু এটা না, আরও অনেককিছু করতে পারি ৷দেখাব? দেখাই কি বলো রাত সিদ্দিকী?

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

জোৎস্না কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বিছানার দিকে তাকিয়ে আছে ৷ সবার বাসরঘর সাজানো থাকে নানারকম ফুল দিয়ে আর ওর বাসরঘর সাজানো হয়েছে প্লাস্টিকের আপেল দিয়ে!তাও আবারও অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে ৷

নিলয় জায়নামাজ গুছিয়ে রাখতে রাখতে আড়চোখে জোৎস্নার হতভম্ভ মুখটার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগল ৷ একটু পর ও পিছন থেকে জোৎস্নাকে জরিয়ে ধরে ওর ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে বলল,,,

আমার ক্রিয়েটিভি কেমন লাগল দুষ্টুরানী?

জোৎস্না অনেককিছুই বলতো কিন্তু নিলয়ের স্পর্শে ও থমকে গেল ৷ তা বুঝতে পেরে নিলয় বাকা হাসল ৷ ও বলতে লাগল,,,

আমার দুষ্টুরানী দেখি লজ্জাও পায়?

জোৎস্না নিলয়ের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে অন্য মুখ হয়ে বলতে লাগল,,,

টিউবলাইট কি আমাকে নির্লজ্জ ভাবে নাকি?

নিলয় জোৎস্নার সম্মুখে এসে ওর থুতনি ধরে মুখটা নিজের সামনাসামনি এনে বলল,,,

উহু রুপবতী লাগে আর খাদকবতী ৷

জোৎস্না লজ্জা পেলেও শেষ সম্বোধন শুনে ভ্রু কুঁচকে ফেলল ৷ তাই নিলয়ের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ও গম্ভীর মুখে বিছানায় গিয়ে বসে পড়ল ৷ তা দেখে নিলয় মাথা চুলকে কাবার্ড থেকে একটা জিনিস বের করে সেটা নিজের পিছনে আড়াল করে জোৎস্নার সম্মুখে গিয়ে বসল ৷ তা দেখে জোৎস্না মুখ ঘুরিয়ে নিল ৷

নিলয় জিনিস টা উম্মোচন করে জোৎস্নার সম্মুখে এনে বলল,,,

দেখো তো এটা কি?

জোৎস্না অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকাল আর তাকানোর সাথে সাথেই ওর রাগ পড়ে গিয়ে মুখে হাসি ফুটে উঠল ৷ ছোট ছোট আপেল দিয়ে অনেক সুন্দর করে একটা ঝুড়ি বানানো হয়েছে ৷ জোৎস্না সেটা খপ করে নিজের হাতে নিয়ে বলতে লাগল,,,

উফফফ কি যে ক্ষুধা লেগেছিল আমার! আপনি অনেক কিউটি টিউবলাইট ৷ আইলাভিউ উম্মাহ ৷

কথাটা বলে ও একটা একটা করে আপেল ছিঁড়ে খেতে লাগল ৷ তা দেখে ক্ষণকাল ম**রার মতো বসে থেকে নিলয় আহাম্মক হয়ে বলতে লাগল,,,

হায় আল্লাহ আমার ক্রিয়েটিভি কিভাবে কামড়ে কামড়ে খেয়ে ফেলছে ছ্যাহ! ওরে খাদকবতী এটা সাজিয়ে রাখার জন্য দিয়েছিলাম, খাওয়ার জন্য না ৷ আমার এক মাসের পরিশ্রম এক মিনিটে খেয়ে ফেলল!

চলবে,,,,,