ঘর কুটুম পর্ব-০১

0
5

#_ঘর_কুটুম_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্বঃ১

১.
–” তোমার সমস্যার জন্য আমাদের সন্তান হচ্ছে না। অথচ সবাই আমাকে বন্ধ্যা বলবে কেন?”

ছোয়ার কন্ঠে রাগ, ক্ষোভ আর অসহ্য যন্ত্রণার ছাপ। শিশিরের দিকে তাকিয়ে তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে কথাটা বললো। শিশির তখন অফিস ব্যাগ চেক করছে। ছোার কথা শুনে চোখ লাল করে তাকায় তার দিকে। ছোয়া আবার কিছু বলতে যাবে, তার আগেই শিশির সামনে এসে এক হাত দিয়ে তার মুখ চেপে ধরলো শক্ত করে। গলা নিচু স্বরে, প্রায় শ্বাস রোধ করে দিয়ে শিশির বললো,
–” একদম গলার আওয়াজ নিচে করে কথা বলবে। এইসব একটা সাউন্ড যদি রুমের বাইরে যায়, তোমার কন্ঠনালী টেনে ছি*ড়ে ফেলবো আমি।”

ছোয়ার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। শিশিরের হাতটা যেন পাষানের মতো শক্ত, চোখে হিংস্রতা। ছোয়া হাত দিয়ে শিশিরের কবজি ধরে সরাতে চাইছে, কিন্তু পারছে না। এক মুহুর্ত পরে শিশির ছোয়ার মুখ থেকে হাত সরিয়ে এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে ফেলে তাকে। ছোয়া টাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে যায়। শিশির দরজা খুলে সজোরে সেটা লাগিয়ে৷ বেরিয়ে যায়। শব্দটা ছোয়ার বুকে বজ্রপাতের মতো বেজে উঠে।

ঘর নিস্তব্ধ। শুধু ছোয়ার হাপরের মতো নিঃশ্বাস শোনা যায়। সে দুইবার গা ঝাকিয়ে শ্বাস নিতে নিতে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে। মাথাটা ঝিমঝিম করছে তার। আলমারির সাথে হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে থাকে, মাথাটা ঠেসে দেয় আলমারির কাঠের গায়ে। নিজের দুই হাতে নিজের চুল টেনে ধরে ছোয়া। ব্যাথায় না, অসহায়তায়। এই ঘর তার স্বামী সংসারের ঘর না, যেন কারাগার। দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে কান্না চেপে ধরে রাখতে চায়, কিন্তু ব্যর্থ হয়। কেন সে এতো কিছু সহ্য করছে? বিয়ের ছয় বছর হয়ে গেলো। তিন বছর আগেই ডাক্তারের রিপোর্ট বলেছিলো, ছোয়ার কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা শিশিরের। তবুও সব প্রশ্ন, সব কু*ৎ*সা, সব অ*প*বা*দ গিয়ে পড়ে ছোয়ার গায়ে।

ঠিক তখনি ফোন বেজে উঠে। হাত বাড়িয়ে ফোনটা হাতে নেয় ছোয়া৷ স্ক্রিনে মায়ের কল বাজছে। কলটা দেখতেই ছোয়ার বুকের ভেতর জমে থাকা কান্না হুহু করে বেরিয়ে আসে। কল বাজতে বাজতে কেটে যায়। আবার বাজে। ছোয়া তাড়াতাড়ি চোখ মুছে, গলা পরিষ্কার করে কল রিসিভ করে। গলা শুকিয়প আসছে ছোয়ার।
–” হ্যা! মা! বলো।”

ফোনের ওপাশ থেকে চিন্তিত কন্ঠে মিনা খাতুন বললেন,
–” কিরে, তোর গলার আওয়াজ এমন লাগছে কেন? ঠিক আছিস তুই?”

ছোয়া চোখ বন্ধ করে গভীর নিঃশ্বাস নেয়। মায়ের কন্ঠ যেন ভেতরের সব কান্না আরও তীব্র ভাবে নাড়িয়ে দিচ্ছে।
–” হ্যা! ঠিক আছি। আসলে গলাটা বসে গেছে মা। গতকাল আইসক্রিম খেয়েছিলাম, তার উপর ফ্রিজের ঠান্ডা পানি। তাই এমন হয়ে গেছে।”

সবাটাই মিথ্যা। বাস্তবতা বলার সাহস ছোয়ার নেই। মিনা খাতুন একটু রেগে গিয়ে বললো,
–” তুই কি একটু নিজের যত্ন নিতে পারিস না, ছোয়া? কতোবার বলেছি, এরকম করবি না।”

ছোয়া ঠোঁট কামড়িয়ে কান্না আটকায়। নিজের যন্ত্রণার কথা কিভাবে বলবে?
–” থাক মা এসব বাদ দাও। তুমি কেমন আছো? আর বাবা?”

মিনা খাতুনের গলা একটু নরম হয়,
–” ভালো আছিরে মা। তোর বাবাও ভালো আছে।”

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছোয়া বলে,
–” আচ্ছা, মা! এখন রান্না বসাতে হবে। পরে কল দিবো তোমাকে।”

–” আচ্ছা! ঠিক আছে।”

কল কেটে যায়। ছোয়া ফোনটা বিছানার উপর ছুড়ে দেয়। হাঁটুতে মুখ গুজে আবার কান্নায় ভে*ঙে পড়ে। এই কান্না একজন নারীর হার না মানা যু*দ্ধের কান্না। সন্তান না হওয়ার দায়, শাশুড়ি ও সমাজের বাঁকা কথা, নিজের স্বামীর হাতে গলা চেপে ধরা, এক বিষাক্ত সহ্যশক্তির জীবন। এই কান্না হচ্ছে সেই যন্ত্রণা যা সে কারোর কাছে বলতে পারে না, বোঝাতে পারে না। একটা সংসার আছে তার, ঘর আছে, মানুষ আছে, সম্পর্ক আছে। কিন্তু, তাতে ছোয়ার জায়গা নেই।

আজকের সূর্য যেন রাগে ফুঁসছে। দুপুরের রোদে পুড়ে যাচ্ছে সব কিছু। শরীরের চামড়ায় যেন আগুনের আচ লাগছে। ঠিক যেন, আকাশের আগুন নেমে এসেছে রাস্তায়। পিচঢালা রাস্তাগুলো ফুটে উঠছে, বাতাস যেন গরম তাওয়া থেকে বের হওয়া ধোয়া।

এই রোদ মাথায় নিয়ে, কাঁধে ব্যাগ আর উড়না সামলে নিয়ে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে চলেছে অরুনিমা। ক্লান্ত, অবসন্ন, রোদের তাপে মুখ শুকিয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পর পর চারপাশে তাকায় সে, যদি একটা রিকশা বা সিএনজি কিছু চোখে পড়ে। কিন্তু, না। রাস্তা ফাকা না হলেও, কোনো খালি রিকশা বা সিএনজি চোখে বাঁধছে না। একবার থেমে দাড়ায় অরুনিমা। কপালের ঘাম মুছে, চোখ সরু করে সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে থাকে।

হঠাৎ চোখ পড়ে ফুটপাতের পাশে একটা আখের রসের ঠেলা। দাড়িয়ে আছে এক লোক, রস বিক্রি করছে। আখের রস দেখে অরুনিমার গলা যেন আরও শুকিয়ে আসে। কাঁধের ব্যাগে হাত দিয়ে একটা পানির বোতল বের করে। পানিটা এক চুমুক খেতে চায়, কিন্তু গরম পানি আর গলায় যাচ্ছে না। হালকা বিরক্তি নিয়ে বোতলের পানিটুকু ফেলে দেয় সে। অরুনিমা আখের রসের ঠেলার কাছে গিয়ে বলে,
–” মামা! আখের রস কতো করে?”

লোকটি মুখ তুলে তাকিয়ে বলে,
–” ২০ টাকা গ্লাস।”

–” আমার এই বোতলটা ভরে দিন তো।”
বোতলটা এগিয়ে দেয় অরুনিমা।

রস ভরে দেওয়ার পর টাকা মিটিয়ে অরুনিমা ধীরে ধীরে হাঁটতে থাকে। অল্প অল্প করে আখের রস পান করছে, যেন শরীরটাও একটু একটু করে প্রান ফিরে পাচ্ছে। আজ কলেজে কাজের চাপটাও বেশি ছিলো। ছাত্র ছাত্রীদের পরীক্ষা চলছে, ডিউটি করতে হচ্ছে, পাশাপাশি আজ কলেজে টিচারর্স মিটিং ছিলো। বেশ ক্ষুধাও লেগেছে। বাসায় রান্না করা আছে, শুধু গরম করলেই হবে। এমন সময় ফোন বেজে উঠে। মোবাইল বের কতেই দেখে তার বাবা কল করেছে। অরুনিমা এক মুহুর্ত চুপ থাকে। তারপর ধীরে ধীরে কলটা রিসিভ করে।
–” হ্যালো!”

ফোনের ওপাশ থেকে রিদ্ধ শেখের গলা ভেসে আসে,
–” মামনি! কেমন আছো তুমি?”

–” ভালো আছি, বাপি!”
স্বাভাবিক গলায় উত্তর দেয় অরুনিমা।

–” বাইরে মনে হচ্ছে।”

–” হ্যা! কলেজ থেকে বাসায় যাচ্ছি।”

রিদ্ধ শেখ একটু গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
–” তুমি কি আমার দেওয়া গাড়ি ব্যবহার করো না, অরু?”

অরুনিমা একটু থামে। একটা নিঃশ্বাস নিয়ে উত্তর দেয়,
–” বাপি! আমি তোমাকে অনেক আগেই বলেছি, আমার নিজের আয়ে আমি দিব্যি চলতে পারি। তোমার গাড়ি, ড্রাইভার এইসব আমার দরকার নেই।”

–” হেঁটে হেঁটে যাচ্ছো, তাহলে?”

–” রিকশা, সিনএনজি কিছুই পাইনি।”

রিদ্ধ শেখ দুঃখ ভরা গলায় বললো,
–” এতে তোমার কষ্ট হচ্ছে, অরু!”

হালকা হাসে অরুনিমা। গলায় অভিমান আর ক্ষীন কষ্ট মেশানো সুর,
–” এই দুপুরের তপ্ত রোদ থেকে অনেক বেশি কষ্ট ছিলো তোমাদের আলাদা হয়ে যাওয়া, বাপি! সেই কষ্ট, সেই বিভাজনের রোদে আমি অনেক আগেই পুড়েছি। তুমি আর মা দু’জনেই বুঝোনি, আর বোঝার চেষ্টাও করোনি। তোমরা তোমাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে গেছো, আর আমাকে ফেলে গেছো মাঝপথে। এখন আমি নিজেকে সামলাতে শিখে গেছি। তোমাদের এই চিন্তা এখন আর আমার জীবনে প্রভাব ফেলে না, বাপি!”

ফোনের ওপাশে চুপ। রিদ্ধ শেখের কাছে এর কোনো জবাব নেই। অরুনিমা বলে,
–” আমি বাস স্টপে চলে এসেছি, বাপি! রাখছি।”

–” সাবধানে যেও, মা!”

কল কেটে দেয় অরুনিমা। মনে হয়, বুকের ভেতর কিছু একটা গুমরে উঠছে। কিন্তু, সে তা বাইরে আসতে দেয় না। ফোনটা ব্যাগে রেখে বাসে উঠে অরুনিমা। বাস ভর্তি ভিড়। দরজার দিকে দাড়ায় সে। বাইরে থেকে গরম দমকা বাতাস মুখে এসে লাগছে, তবুও বাতাসটা ভালো লাগছে অরুনিমার। চোখ বন্ধ করে একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে সে। এরপর চোখ মেলে বাসের বাহিরের দিকে তাকায়। দুপুরে ঝিমিরে পড়া ব্যস্ত শহরটা যেন এখন তার নিজের মতোই নিঃশব্দ আর একা।

শিশির মাত্রই অফিস থেকে ফিরেছে। দরজায় শব্দ করতেই মা দরজা খুলে দেয়। চুপচাপ ক্লান্ত মুখে ঘরে ঢুকে শিশির। রুমে ঢুকতেই প্রথমে চোখ পড়ে, ছোয়া বিছানা গুছিয়ে রাখছে। এক মুহুর্তের জন্য চোখাচোখি হয়। তবুও, ছোয়া যেন দেখেও না দেখার ভান করে, আবার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়।

শিশির কিছু বললো না। এগিয়ে গিয়ে অফিস ব্যাগটা রুমে থাকা সেন্টার টেবিলের উপর রাখে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে হাতঘড়িটা খুলে রাখলো। আয়নায় নিজের ক্লান্ত মুখটা দেখে, আয়না দিয়ে ছোয়ার দিকে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ। আয়নার প্রতিফলনের থাকা মেয়েটি আজও তার পাশে আছে, তবুও কতো দুরে।

সকালে ঘটে যাওয়া কাহিনি মনে পড়ে যায় শিশিরের। নিজেকে সামলাতে পারেনি তখন, খারাপ আচরণ করে ফেলেছিলো ছোয়ার সাথে। নিজের অক্ষমতা, সন্তান জন্মদানের অক্ষম পুরুষ সে। সমাজে পুরুষ হয়ে এমন অক্ষমতা নিয়ে বাঁচা সহজ নয়। এই সন্তান জন্মদানের অক্ষমতা তাকে প্রতিনিয়ত দগ্ধ করে। বিয়ের পর কতোবার চেষ্টা করেও যখন সন্তান গর্ভধারনের খবর আসছিলো না, তখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছিলো তারা। আর সেখান থেকেই বেরিয়ে আসে নির্মম সত্যিটা, দোষটা শিশিরের। শরীরের অক্ষমতা যতোনা কষ্ট দেয়, তার চেয়েও বেশি কষ্ট দেয় সমাজের ভয়। সবাই যদি জানতে পারে, তার এই অক্ষমতা সম্পর্কে, তাহলে তাকে তাচ্ছিল্য করবে, অপমানসূচক কথা বলবে। এই ভাবনার ভারে নুয়ে পড়ে শিশির।

ধীরে ধীরে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে ঢুকে যায় ওয়াশরুমে। দরজা বন্ধ করার আগে এক মুহুর্ত ছোয়ার দিকে তাকালো। ছোয়া তখনও ব্যস্ততা দেখানোর ভান করে বিছানায় কিছু একটা ঠিক করছিলো। ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ হলো। ছোয়া স্থির হয়ে রইলো। কিছু সময় সেই বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে ধীরে বারান্দায় চলে যায়। রাতের হাওয়া তার শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে। এই হাওয়া তার চেনা। এই নিরবতাও চেনা হয়ে গেছে বহু আগেই।

হঠাৎ পেছন থেকে এক জোড়া হাত তাকে জড়িয়ে ধরে। একটু চমকে উঠতে যায় ছোয়া, কিন্তু পরক্ষণেই শরীর চিনে ফেলে সেই স্পর্শ। এই স্পর্শ তার পরিচিত, এই বুক তার অভ্যস্ত। শিশির পেছন থেকে ছোঁয়ার কাধে মুখ গুঁজে বলে,
–” আই এ্যাম সরি!”

ছোয়া চুপ থাকে। কিছু বলে না সে। চোখ তার আকাশের দিকে। কোনো এক চুপচাপ প্রতিক্রিয়া তার মুখে। শিশির আবার বলে,
–” ছোয়া! সকালে যা হয়েছে, সেই আচরণ করা আমার একদমই ঠিক হয়নি। আমি সত্যি সত্যি তোমার কাছে সরি বলছি।”

ধীরে ধীরে ঘুরে দাড়ায় ছোয়া। চোখে পানি টলমল করছে। শিশির তাকিয়ে থাকে স্তব্ধ হয়ে, কেমন অপরাধ বোধে ডুবে। ছোয়ার চোখে জমে থাকা অশ্রুর পরত যেন শিশিরের আত্নাকে ছুঁয়ে যায়। ছোয়ার কম্পিত সুরে বললো,
–” এমন তো সব সময় বলো তুমি। আর আমি সহ্য করে যায়। সরি বলো, আমি চুপ করে থাকি। তুমি ভুল করো, আমি মাফ করে দিই। এটা কি নিয়ম হয়ে গেছে?”

শিশির ছোয়ার মুখে হাত রাখে।
–” আমার ভয় লাগে ছোয়া, যদি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাও। আমি জানি আমি তোমাকে সেই খুশি দিতে পারবো না, যেটা একটা সংসারে সবচেয়ে বড় আনন্দ, একটা সন্তান। আমি কখনো বাবা হতে পারবো না। আমি তোমাকে কোনোদিন সন্তান দিতে পারবো না। যদি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাও, এই চিন্তা আমাকে তাড়া করে বেড়ায়।”

ছোয়ার চোখ দুটো মুহুর্তেই আরও ছলছল করে উঠে। তবুও সে হেসে ফেলে। করুন একটা হাসি।
–” তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে হলে, আমি অনেক আগেই চলে যেতাম, শিশির। সেদিনই চলে যেতাম, যেদিন শুনলাম তুমি বাবা হতে পারবে না। কিন্তু, আমি তো থেকে গেছি শিশির। কারন, তুমি আমার স্বামী। আর আমি আমার স্বামীকে অনেক ভালোবাসি।”

শিশির মাথা নিচু করে ফেলে। ছোয়া আবার বলে,
–” আমি শুধু ঐ কথা গুলো থেকে মুক্তি চাই, শিশির! তোমার মা আমাকে দিনে শতবার বন্ধ্যা বলে অপবাদ দেয়। বলে, আমি তোমার জীবন নষ্ট করে দিচ্ছি। আমি অপয়া, অলক্ষি। তোমার আত্মীয়দের মুখেও আমি কেবল শুনি অপমান। আমি এই কলঙ্ক থেকে মুক্তি চাই, শিশির!”

শিশির চুপ। একটু সময় নিয়ে সে ধীরে বলে ওঠে,
–” তোমাকে এখান থেকে মুক্তি দিতে গেলে সমাজের মানুষ আমাকে ছিঁড়ে খাবে। আমার অক্ষমতা নিয়ে কটাক্ষ করবে। আমার পুরুষত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। ছিঁড়ে ফেলবে সমাজের মানুষ আমাকে।”

ছোয়া গলার স্বর একটু কাঁপিয়ে বললো,
–” তার মানে আমি এই কলঙ্কে বোঝা সারাজীবন বয়ে বেড়াবো?”

এক মুহুর্ত আর দেরি না করে শিশির ছোয়াকে নিজের বুকের মধ্যে টেনে নেয়। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। ছোয়া এবার আর নিজেকে সামলাতে পারে না। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। বিড়বিড় করে বলে,
–” আমি মুক্তি চাই, শিশির! আমি আর পারছি না। এঔ কথাগুলো, এই অপমান, এগুলো প্রতিদিন আমাকে একটু একটু করে মেরে ফেলছে। আমি আর পারছি না।”

শিশির চোখ বন্ধ করে। শুধু শক্ত করে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে রাখে ছোয়াকে। তার টি-শার্ট ভিজে যাচ্ছে ছোয়ার চোখের জলে। রাতের আকাশে চাদ উঠেছে। তার আলো এসে পড়ছে বারান্দায় দাড়িয়ে থাকা এই দম্পতির উপর। চাঁদ আজ বড় সুন্দর। কিন্তু, তাদের চোখে চাঁদের সেই নির্মল সৌন্দর্য ধরা পড়ছে না। এই মুহুর্তে তারা দাড়িয়ে আছে সম্পর্কের সবচেয়ে ভঙ্গুর এক কিনারায়। আর সেই কিনারায় দাড়িয়ে চলছে টিকে থাকার লড়াই।!!

#_চলবে_ইনশাআল্লাহ_🌹