#_ঘর_কুটুম_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_২_
রাত প্রায় ১১ টা।
ঘরের বাতাস ভারী, ছিমছাম নিরবতা ছড়িয়ে আছে চারিদিকে। শোবার ঘরে বিছানায় আধশোয়া হয়ে আছে রুপন্তি। আর তার বুকে মাথা গুঁজে চুপচাপ খুঁতখুঁত করছে তার চার বছরের কন্যা তিতলি। ছোট্ট মেয়েটার আঙুল দুটো ব্যস্ত ভাবে খেলে যাচ্ছে মায়ের উড়নার ভাঁজে। তিতলি বলে,
–” পাপা আসে না কেন, মাম্মাম? পাপাকে কল কলো।”
রুপন্তির বুকটা মোচড় দিয়ে উঠে। সে তিতলির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মৃদু হেসে বললো,
–” তোমার পাপা আজ খুব বিজি, মা! আজ তুমি ঘুমিয়ে যাও। আগামীকাল পাপা তোমার সাথে খেলবে।”
তিতলি ঠোঁট ফুলিয়ে বলে ওঠে,
–” না না না! আমি এখনি পাপাকে দেখতে চাই।”
রুপন্তি কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না। চার বছরের একটা শিশুকে যে কতোটা বেদনা ছুয়ে গেছে তা বোঝাতে কোনো শব্দের প্রয়োজন হয় না। তিতলি কান্না শুরু না করলেও, তার অস্থিরতা চোখে পড়ে স্পষ্টভাবে। চারদিন হয়ে গেছে। এই ছোট্ট শিশুটি তার বাবাকে ঠিকমতো দেখতে পায়নি। কুশান প্রতিদিন রাত করে বাড়ি ফেরে, ততক্ষণে তিতলি ঘুমিয়ে পড়ে। আবার সকাল বেলা এখন মেয়ের নতুন স্কুল, প্লে তে পড়ে, ভোরে যাওয়া লাগে। তখন তার বাবা ঘুমিয়ে থাকে, হয়না সাক্ষাৎ। এই দুরুত্ব চার বছরের কোমল হৃদয়কেও যন্ত্রণার সাগরে ফেলে দিয়েছে।
রুপন্তি বার বার ফোন করেছে মানুষটিকে। কিন্তু, ফোন বন্ধ। কোনো বার্তা নাই, কোনো খোঁজ নাই। স্বামী কি এমন হয়? বাবা কি এমন হয়? তিতলিকে কোলের মধ্যে টেনে নিয়ে, বুকের সাথে চেপে ধরে সামলানোর আপ্রান চেষ্টা করে রুপন্তি। তিতলি মায়ের বুক থেকে উঠে মায়ের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
–” পাপা কি আমাকে ভালোবাসে না?”
রুপন্তি আস্তে করে মেয়েকে কাছে নিয়ে মোলায়েম সুরে জাবাব দেয়,
–” তোমার পাপা তোমাকে অনেক ভালোবাসে। কিন্তু, অফিসের কাজ না করলে তো আমাদের এই সুন্দর ঘরটা চলবে না, তাই না? তাই একটু দেরি হয়ে যায়, মা। একটু বুঝো তুমি।”
অনেক চেষ্টার পর একটা সময় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে তিতলি। বুকে একটা ভারি পাথর চেপে বসে থাকে রুপন্তি। চোখ বন্ধ করে বুকের ভেতরের কান্নাটা গিলে ফেলে। এই রাত গুলো যেন তাকে প্রতিদিন একটু একটু করে খেয়ে ফেলছে। মানুষটা একজন সফল ব্যাবসায়ী। কিন্তু, একজন অসফল স্বামী আর অনুপস্থিত পিতা। রুপন্তি তাকায় ঘড়ির দিকে ১২ টা ৩০ বাজে। রুপন্তি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। মোবাইলটা হাতে তুলে নেয়। কল করে, কিন্তু মোবাইল বন্ধ। ক্লান্ত চোখে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে খাকে কিছুক্ষণ। তার দাম্পত্য জীবনের এই পরিণতি, এই অবহেলা, এই অবজ্ঞা কি সে কখনো কল্পনা করেছিলো? এই মানুষটা একটা সময় তার ভালোবাসা ছিলো। তার স্বপ্নের পুরুষ। যে হাত ধরে সে সংসার গড়েছিলো। আজ সেই হাতেই সে ক্রমাগত ভেঙে পড়ছে।
আলতো করে চোখ বন্ধ করে খাটের রেলিং এ হেলান দেয় রুপন্তি। হঠাৎ করেই কানে আসে কলিং বেলের শব্দ। চমকে উঠে বসে পড়ে। ঘড়ির কাটায় চোখ রাখে সে, ১টা ৪০ বাজে। একটা তাচ্ছিল্যপূর্ন, তিক্ত হাসি ঠোঁটে খেলে যায়। চুপচাপ রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে আসে। ফ্লাটের মেইন দরজা খুলতেই সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটিকে দেখে বুকের ভেতরটা কেমন জানি মোচড় দিয়ে উঠে। হ্যা! এই সুদর্শন যুবকই হলো তার স্বামী আর তার সন্তানের বাবা, কুশান রহমান।
কুশানের এক হাতে কালো কোট ঝুলছে। টাই আলগা করে গলায় ঝুলিয়ে রেখেছে। শার্টের উপরের কয়েকটা বোতাম খোলা। চোখ লাল, ঠোঁটে এক ধরনের মাতাল হাসি। কুশান হাসতে হাসতে বলে,
–” বউ! ঘুমিয়ে গেছিলে নাকি?”
রুপন্তির চোখ মুখ কুঁচকে যায়। কুশানের মুখ থেকে কড়া মদের গন্ধ ভেসে আসছে। ঘৃনা ভরা কন্ঠে বললো,
–” মাতাল হয়ে এতো রাতে বাসায় ফেরো। লজ্জা করে না তোমার?”
কুশান যেন হাসির আরও কারন খুঁজে পেলো। গলায় যেন ঠাট্টার ছোঁয়া।
–” লজ্জা কেন করবে? আমি কি পরের বাড়ি যাচ্ছি? এইসব লজ্জা আমার ধাতে নেই, রুপন্তি!”
বলতে বলতে এক প্রকার হেলে পড়ছে কুশান। মাথা ঘুরছে, ঠিকঠাক ভাবে তাকাতেও পারছে না। রুপন্তি দাঁতে দাঁত চেপে রাগ সামলায়। অভিমান গিলে ফেলে। গলা নামিয়ে বলে,
–” তিতলি তোমার জন্য কান্না করছে। তোমার সঙ্গে একটু সময় কাটাতে চায় বাচ্চা মেয়েটা। তোমার মেয়েটাকে কি একবারও মনে পড়ে না তোমার? চার বছরের একটা বাচ্চা রাত ১২ টা পর্যন্ত জেগে থাকে। শুধু মাত্র তার পাপাকে দেখবে বলে, আর তুমি? রাত দুইটায় ফেরো মাতাল হয়ে। এইটা কি সংসার, কুশান?”
–” রুপন্তি এখন ড্রামা করো না, প্লিজ!”
কথাটা বলেই কুশান রুপন্তিকে পাশ কাটিয়ে ঘরে চলে যায়। এক মুহুর্ত দাড়িয়ে থাকে রুপন্তি দরজায়। তারপর চোখের কোণে জমে থাকা জল চেপে ধরে দরজা বন্ধ করে। চোখ বন্ধ করে থাকে কিছুক্ষণ। মনে হয়, তার স্বপ্নগুলো কোথাও হারিয়ে গেছে। এই সংসার, এই ঘর, এই মানুষ, সব কিছু মিলিয়ে যেন একটা দীর্ঘ দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছে। চুপচাপ রুমে ফিরে যায় রুপন্তি।
কুশান এখন ওয়াশরুমে। তিতলি পাশ ফিরে ঘুমোচ্ছে। ঘুমের মাঝেও মেয়েটার মুখটা একটু কুঁচকে আছে। হয়তো ঘুমের মধ্যেও বাবাকে খুঁজছে। রুপন্তি মেয়ের শরীরে হাত দিয়ে দেখে, শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে। রুপন্তি আলতো করে কাথাটা আরও একটু ভালো করে গায়ে জড়িয়ে দেয়। বেড সাইড টেবিল থেকে এসি রিমোট নিয়ে টেম্পারেচার একটু বাড়িয়ে দেয়। একবার জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে বাইরে তাকায় রুপন্তি। জানালার গ্লাস লাগানো থাকলেও, বাইরে চাঁদের আলো দেখা যাচ্ছে কাচ ভেদ করে।
এমন সময় ওয়াশরুমের দরজার খুলে যায়। ভেজা মুখ তোয়ালে দিয়ে মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসে কুশান। পরনে থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট আর ঢিলা টি-শার্ট। চুল এলোমেলো, চোখ লালচে। সে ক্লান্ত গলায় বলে,
–” এক গ্লাস লেবুর শরবত এনে দাও তো। মাথাটা ধরেছে খুব।”
রুপন্তি ভ্রু কুচকিয়ে তাকায় কুশানের দিকে। এই লোকটার মুখে কোনো অনুশোচনা নেই। নেই কোনো ক্ষমা চাওয়ার ইচ্ছে। কুশানের এভাবে, এমন ঠান্ডা ভঙ্গিতে শরবতের দাবি জানানো, যেন কিছুই হয়নি আজ রাতে। কোনো তর্ক, কোনো কষ্ট, কোনো কথা, তার কোনো কিছুই যেন গুরুত্ব পায় না কুশানের কাছে। রুপন্তি কুশানের দিকে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর কোনো কথা না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে।
লেবু কেটে, চিনি, পানি মিশিয়ে এক গ্লাস শরবত বানায় রুপন্তি। শরবত হাতে নিয়ে রুমে ফিরে আসে রুপন্তি। রুমে ঢুকতেই তার চোখ আটকে যায়। তিতলির পাশে বসা কুশান। মেয়েটার কপালে আলতো করে চুমু খাচ্ছে সে। মেয়েটার ছোট ছোট আঙুলের নিজের হাত আর ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিচ্ছে।
রুপন্তি কিছুটা থমকে দাড়ায় দরজার কাছে। চুপচাপ কিছু সময় তাকিয়ে থাকে দৃশ্যটার দিকে। এই মানুষটা যাকে ভালোবেসে সংসার গড়েছিলো, যার হাত ধরে নতুন একটা জীবন শুরু করেছিলো। আজ তার সেই মানুষটা কেমন অচেনা হয়ে গেছে। এই মানুষটা তার স্বামী। এই মেয়েটা সেই স্বামীর রক্ত থেকে তৈরি। তবু কোথাও একটা ফাঁক তৈরি হয়ে গেছে। অথচ, মেয়ের পাশে কুশানের এই মুহুর্তটা একটা নিঃশব্দ সুন্দরতা বয়ে আনে রুপন্তির মনে। তারপর সে এগিয়ে এসে শরবতের গ্লাসটা বাড়িয়ে দেয় কুশানের দিকে।
–” নাও। লেবুর শরবত।”
কুশান গ্লাস হাতে নেয়। কোনো কথা না বলে এক নিশ্বাসে খেয়ে ফেলে। তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে শুয়ে পড়ে তিতলির এক পাশে। রুপন্তি দাড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর আস্তে করে বলে,
–” আমি খাবার দিচ্ছি। তাড়াতাড়ি এসো।”
কুশান চোখ তুলেও তাকায় না। ঠান্ডা গলায় বলে,
–” আমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি।”
এই কথাটা যেন শূন্যে একটা গোলা নিক্ষেপ করে রুপন্তির বুকে। তার ঠোঁট শুকিয়ে আসে। চোখ জ্বলতে শুরু করে। সে আর কিছু বলে না। শুধু গ্লাসটা হাতে নিয়ে রান্নাঘরে ফিরে আসে। রুপন্তি সব খাবার ফ্রিজে তুলে রাখে। একবার জিজ্ঞেসও করে না কুশান সে খেয়েছে কিনা। অথচ এই কুশান একটা সময় নিজের হাতে খাবার খাইয়ে দিতো তাকে। এতোটাও বদলে যায় মানুষ? কিভাবে? চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে রুপন্তির। কিছু সময় পর নিজেকে সামলিয়ে চোখ মুছে ধীরে ধীরে রুমে ফিরে আসে।
রুমে ঢুকে দেখে, কুশান বড় লাইট বন্ধ করে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। নীলাভ আলোটা পুরো রুমে ছড়িয়ে পড়েছে। রুপন্তি একটু এগিয়ে গিয়ে কুশানের দিকে তাকিয়ে থাকে। এই সেই মানুষ, যার ভালোবাসায় নিজেকে সমর্পন করেছিলো সে। আজ সেই মানুষটা তার পাশে থেকেও যেন শত মাইল দুরে।
রুপন্তির চোখ পড়ে তিতলির উপর। মেয়েটা বাবার গলা জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। কুশান এক হাত দিয়ে মেয়েকে জড়িয়ে নিয়ে গভীর ঘুমে। দৃশ্যটা অপূর্ব। যদিও সেই সৌন্দর্য কেবল দৃশ্যত। রুপন্তির বুকের ভেতর এখনো তীব্র কান্নার ঢেউ। সে ধীরে ধীরে বিছানায় উঠে আসে। তিতলির অন্য পাশে শুয়ে পড়ে। চোখ পড়ে কুশানের ঘুমন্ত মুখে। এক সময় ভেবেছিলো, এই মানুষটাই তার নিরাপত্তা। আজ সেই মানুষটাই হয়ে গেছে তার সবচেয়ে বড় অস্বস্তি।
রুপন্তির চোখ ছলছল করে উঠে। তার দিকে কেউ নেই। কথা বলার কেউ নেই। আলিঙ্গনের জন্য নেই কোনো উষ্ণতা৷ বুঝে নেওয়ার মতো পাশে কেউ নেই। উল্টো দিকে ফিরে নিঃশব্দে কান্না করতে থাকে রুপন্তি। চোখের পানিতে বালিশ ভিজে যাচ্ছে। এক বিছানায় তিনজন মানুষ। তবুও সেই বিছানায় সবচেয়ে নিঃসঙ্গ একজনই, রুপন্তি।
…
ছোয়া রান্নাঘরে চায়ের কাপ নামাচ্ছে। চুলায় দুধ জাল হচ্ছে চা বানানোর জন্য। ডাইনিং টেবিলের উপর সাজানো আছে রুটি, ডিম ভাজি, আলু ভাজি। এক পাশে বসে খাচ্ছে শিশির। সামনে তার মা আনজিলা বেগম। বয়স হলেও, এখন বেশ সুন্দর চেহারা। তিনি ছেলের প্লেটে আরেকটু ভাজি তুলে দিতে দিতে মৃদু সুরে বলে ওঠে,
–” তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।”
শিশির খেতে উত্তর দেয়,
–” হ্যা, ম্যা! বলো।”
আনজিলা বেগম একটু থেমে বলে,
–” আমি তোর জন্য মেয়ে দেখতেছি। তুই এই মেয়েকে তাড়াতাড়ি ডিভোর্স দিয়ে দে।”
শব্দগুলো ছুরি হয়ে কেটে যায় টেবিলের নিরবতা। শিশিরের হাত থেমে যায়। সে ধীরে মাথা তোলে, ভ্রু কুচকিয়ে তাকায় মায়ের দিকে। আনজিলা বেগম ভেতরের যন্ত্রণা উগরে দেওয়ার মতো করে বললো,
–” আর কতোদিন এমনে থাকবি তুই? বিয়ের কতো গুলো বছর হয়ে গেলো, একটা বাচ্চা হলো না। এই মেয়ের জন্য তুই কেন তোর জীবন শেষ করবি? সংসার কি শুধু ভালোবাসা দিয়ে চলে? উত্তরাধিকার নাই, বংশ নাই। তোর ভবিষ্যত কি? পরের মেয়েয়র জন্য আমি কেন আমার ছেলের জীবন বিসর্জন দিবো? সন্তান না হলে তোর এই বংশের হাল কে ধরবে?”
শিশির নিঃশব্দে তাকিয়ে থাকে তার মায়ের দিকে। আনজিলা বেগম বলতেই থাকে,
–” এই মেয়েটারে তুই যতোই ভালোবাসিস তাতে কি লাভ হবে? সংসার তো সম্পূর্ণ হলো না। আমি তো তোর সুখ চাই। আর সন্তান ছাড়া কখনো কেউ সুখী হতে পারে না। আর এই মেয়ের জন্য তুই কেন সব কিছু বিসর্জন দিবি? তুই যদি এই মেয়েকে ডিভোর্স না দিস, আমি এই বাড়ি থেকে চলে যাবো। আমি আর এইসব সহ্য করবো না।”
কথা গুলো বলে হনহন করে নিজের রুমে চলে যায় আনজিলা বেগম। টেবিলের উপর খাবার কিন্তু শিশিরের মুখে আর সেই খাবার উঠছে না। চোখে মুখে গভীর অস্থিরতা আর অসহায়তা। ঠিক সেই সময় ছোয়া চা হাতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসে। শিশিরকে এমন চুপচাপ বসে থাকতে দেখে একটু ভ্রু কুচকায় ছোয়া। সে শিশিরের কাঁধে হাত রাখতেই শিশিরের ধ্যান ভাঙে। ছোয়ার দিকে তাকায় শিশির। ছোয়াকে কি সুন্দর মায়াবী লাগছে। পারিবারিক ভাবে বিয়ে তাদের। বিয়ের আগে বিন্দু মাত্র চেনা জানা শোনা ছিলো না। যেদিন ছোয়াকে দেখতে গিয়েছিলো, সেদিন ছোয়াকে দেখেই পছন্দ হয়ে গিয়েছিলো শিশিরের। ফর্সা, সুন্দর গড়নের মেয়ে ছোয়া। যে কোনো পুরুষের নজর কাড়তে সক্ষম তার সৌন্দর্য। রান্নাঘরে কাজ করার জন্য মুখটা হালকা ঘেমে আছে। ফর্সা মুখে, আগুনের আঁচে লাল হয়ে যাওয়া মুখের উপর ঘাম বিন্দু গুলো যেন মুক্তার মতো লাগছে তার কাছে। ছোয়া জিজ্ঞেস করে,
–” কি হয়েছে? এমন করে তাকিয়ে আছো কেন?”
শিশির কোনো উত্তর না দিয়ে ছোয়ার হাত ধরে তাকে নিজের কোলে বসিয়ে নেয়। ছোয়া লজ্জায় চারপাশে একবার তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
–” কি করছো? কেউ দেখে ফেললে?”
–” মা রুমে চলে গেছে।”
আস্তে বলে শিশির।
–” না খেয়ে চলে গেলেন কেন?”
শিশির চুপ করে থাকে কিছুক্ষণ। তাপরর বলে,
–” ক্ষুধা লাগলে খাবে।”
শিশির কিছু সময় ছোয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর ডাকে,
–” ছোয়া!”
–” হুম!”
–” আমার উপর তোমার অনেক রাগ তাই না?”
ছোয়া চোখ তুলে তাকায় শিশিরের দিকে। এই উজ্জ্বল শ্যামবর্নের পুরুষটির উপর কি তার সত্যিই অনেক রাগ? উত্তর খুঁজে পায় না ছোয়া। শুধু বলে,
–” তোমার অফিসের সময় হয়ে যাচ্ছে।”
শিশির হালকা হাসে। তারপর ধীরে, খুব স্নিগ্ধ করে, একটা চুমু খায় ছোয়ার ঠোঁটে। ছোয়া হালকা হাসে। এই মুহুর্তে, তার মন বলে, সব না পাওয়ার মাঝেও কিছু পাওয়ার নামই হয়তো সংসার। ছোয়া উঠে দাড়ায়। চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলে,
–” চা’টা খেয়ে নাও। অফিসে দেরি হয়ে যাবে।”
শিশির চা শেষ করে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।ছোয়া তার চলে যাওয়ার পেছনে তাকিয়ে থাকে কিছু সময়। এই পুরুষটা যেন একদিকে সব কিছু, অন্যদিকে সব অপূর্ণতা।
#_চলবে_ইনশাআল্লাহ_🌹