ঘর কুটুম পর্ব-১৫

0
3

#_ঘর_কুটুম_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_১৫_ ( রোমান্টিক এলার্ট )

সন্ধ্যা মাত্র নেমেছে। শহরের আলো ছুঁয়ে আসা আকাশটা জানালার ওপার থেকে হালকা ঝাপসা হয়ে ফুটে উঠছে। একটি আধুনিক, ঝকঝকে ফ্ল্যাটের বেডরুম। ঘরের ভেতর আলো-আঁধারি ছায়া ফেলে জ্বলছে অসংখ্য মোমবাতি। চারপাশে এক ধরনের উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়েছে, যেন কোনো পুরোনো প্রেমের গল্প বলছে। হালকা সুরের মিউজিক বাজছে, বাতাসে ছড়িয়ে আছে মিষ্টি সুগন্ধি। পুরো ঘরজুড়ে যেন একটা নিখুঁত রোমান্টিক আবহ। সেই রুমের সোফায় বসে আছে কুশান। ধবধবে সাদা শার্ট, খোলা কয়েকটি বোতাম, যার ফাঁক দিয়ে ফুটে উঠেছে তার চওড়া ধবধবে ফরসা বুক। চোখ দুটো অন্যমনস্ক, দৃষ্টি ঘোরাফেরা করছে মোমবাতির আলোয় ঝলমল করতে থাকা সাজানো ঘরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।

অন্যদিন হলে হয়তো এই সাজানো পরিবেশ তার মন ছুঁয়ে যেত। কিন্তু আজকের কুশান যেন কিছুটা আলাদা। কয়েকদিন ধরেই মনের মধ্যে একটা অদৃশ্য টানাপোড়েন। তিতলির অসুস্থতা, তার পাশে থাকার দায়বদ্ধতা, সবকিছু মিলিয়ে ভেতরটা ভারী হয়ে আছে। ফারজানার সঙ্গে দেখা হয়নি কদিন, ফোনে কান্নাকাটি করছে বারবার। আজ সকালেও একবার কাঁদতে কাঁদতে ফোন করেছিল। কুশান তাকে আশ্বস্ত করেছিল, সন্ধ্যার পর আসবে। সেই প্রতিশ্রুতির অপেক্ষায় ফারজানা সাজিয়েছে এই ঘর। তবে কুশানের মনে হচ্ছে, সে আজ এখানে নেই পুরোটা মন দিয়ে।

হঠাৎই ওয়াশরুমের দরজা খোলে, কুশান তাকায় সে দিকে। ফারজানা বেরিয়ে আসে ধীর পায়ে। গায়ে একরত্তি পোশাক, শরীরের বেশিরভাগটাই দৃশ্যমান। মুখে হালকা মেকআপ, চুলে ঢেউ, চোখে জ্বলজ্বলে কিছু চাওয়া। একবার দেখলে চোখ ফেরানো মুশকিল। সৌন্দর্য যেন গড়িয়ে পড়ছে প্রতিটি ভাঁজ থেকে। কুশান চোখ বুলিয়ে নেয় তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত। তার চলার ভঙ্গিমা, তার চোখে চোখ রাখা, সবকিছুই যেন এক জাদু। ফারজানা এসে কুশানের কোলের উপর বসে পড়ে। হালকা হাসে সে। চোখে একরাশ কামনা।

কুশান হাত বাড়িয়ে তার কোমরটা আঁকড়ে ধরে। ফারজানা এক চুমু এঁকে দেয় কুশানের কপালে।
ধীরে ধীরে, ঠোঁটের পথ খুঁজে নেয় তারা। ফারজানা কুশানের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট বসিয়ে দেয়। কুশানও হারিয়ে যেতে থাকে ফারজানার নরম ঠোঁটের স্পর্শে। চুম্বনের আবেশে যেন সময় থমকে যায়। কুশান এগিয়ে আসে আরও কাছে, হাত চলে যায় ফারজানার জামার পেছনে। জিপার খুলতে শুরু করে সে, কিন্তু হঠাৎ, কিছু একটা ঘটে যায় কুশানের ভেতরে। অর্ধেক জিপার খোলার পর, থেমে যায় সে। চোখ বন্ধ ছিল এতক্ষণ, এবার দ্রুত সেগুলো খুলে ফেলে। ফারজানা তখনও চোখ বন্ধ করে মগ্ন সেই আবেশে।

কুশানের চোখে ফুটে ওঠে দ্বিধা, এক ধরনের হাহাকার। সে ধীরে ধীরে ঠোঁট সরিয়ে নেয়। ফারজানা বিরক্ত হয়ে কিছু বলতে চায়, কিন্তু তার আগেই কুশান তাকে কোল থেকে সরিয়ে উঠে পড়ে। বারান্দার দিকে এগিয়ে যায়, যেন একটু মুক্ত বাতাস খোঁজে সে। ফারজানা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। তার চোখে ধাক্কার মতো বিস্ময়, অপমান আর অপূর্ণতা।

রাত ঠিক ৯টা!!
হঠাৎ করেই কলিং বেলের শব্দে থমকে যায় রূপন্তির মন। রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে ডাইনিংয়ের দিকে আসতে আসতে মনে মনে ভাবে, এই সময় কে এলো? কুশান আজকাল বাসায় তাড়াতাড়ি আসে, তাও রাত সাড়ে দশটার পর। তাহলে এখন কে? তিতলি তখন বিছানায় বসে পুতুল নিয়ে খেলছে। আগের মতো আর নিস্তেজ দেখায় না তাকে। গালে রঙ ফিরে এসেছে, চোখে প্রাণ। একটানা অসুস্থতার পর এই শান্ত ছবিটাই রূপন্তির সবচেয়ে বড় স্বস্তি। আবার বেজে ওঠে কলিং বেল। একটু দম নিলো রূপন্তি, তারপর এগিয়ে যায় দরজার দিকে। দরজা খুলতেই মুহূর্তের জন্য থমকে যায় সে। কুশান। দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে, শান্ত চোখ, নিরুত্তাপ মুখ। এতো তাড়াতাড়ি? তবে মুখে কিছু বলে না রুপন্তি। কুশানের জন্য পথ ছেড়ে দেয়।

কুশান চুপচাপ ভিতরে ঢোকে। তেমন কোনো অভিব্যক্তি নেই তার মুখে, তবে ক্লান্তি বা হীনমন্যতার ছায়া যেন লুকানো নেই। রূপন্তি দরজা বন্ধ করে ঘরে ফিরে আসে। এসে দেখে, তিতলি হেসে হেসে দৌঁড়ে গিয়ে কুশানের কোলে উঠে গেছে। মেয়েকে এতো খুশি দেখে শান্তি লাগে রুপন্তির। তবু মা বলে কথা। কিছুটা অস্থির হয় রূপন্তি। কুশান এখনও বাইরের পোশাকে। এই মুহূর্তে মাথায় ভেসে আসে ডাক্তারদের সাবধানবাণী, তিতলি পুরোপুরি সুস্থ না, একটু অসাবধানতায় সংক্রমণ হতে পারে। রূপন্তি বলে ওঠে,
–” তিতলির শরীরটা এখনো সম্পূর্ন সুস্থ না। বাহির থেকে এসে ফ্রেশ না হয়ে ওকে ধরা হয়তো ঠিক হচ্ছে না।”

কুশান এক ঝলক তাকায় রুপন্তির চোখে। ভুল বলেনি রুপন্তি। চোখ সরিয়ে নিয়ে তিতলির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
–” আম্মু! তুমি একটু বসো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

তিতলি হেসে মাথা নাড়ে।
–” ঠিক আছে, পাপা!”

কুশান তাকে আবার বিছানায় বসিয়ে রেখে ওয়াশরুমে চলে যায়। রুপন্তি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে সেই চলে যাওয়া পেছনের দিকে। এই কুশানটা কে? এমন তো ছিল না সে। কিছুদিন আগেও যে মানুষটা দিনের পর দিন মেয়ের খোঁজ নেয়নি, আজ সে ফিরে এসেছে এক অদ্ভুত নরম রূপে। হয়তো একটা কিছু বদলেছে ওর ভেতরে। তবু, তিতলি তো খুশি। ওর চোখের হাসিটা তো সত্যি। এইটুকু পেলেই রূপন্তির বুক হালকা হয়ে যায়। ভালোবাসা না থাক, দায়িত্বটুকু তো থাকুক। তিতলির জন্য সেটাই যথেষ্ট। রূপন্তি আর কিছু না ভেবে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যায়। হয়তো রাতের খাবারটা এবার তিনজনের জন্যই হবে। ফ্রেশ হয়ে ফিরে এসে কুশান মেয়ের সঙ্গে খেলা শুরু করে। পুতুল নিয়ে, গল্প নিয়ে তিতলি খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। রূপন্তি রান্নাঘর থেকে সেই হাসির শব্দ শুনতে পায়। বহুদিন পর এই ঘরটা আবার একটা পরিবারের মতো লাগছে।

টুপটাপ করে বৃষ্টি পড়ছে বারান্দার সামনে। আকাশ জুড়ে জমে আছে ধূসর মেঘের স্তর, মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ ঝলকে দিগন্তটা একটু উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, আবার নিভে যায়। চারদিকের শীতল হাওয়ায় জমে আছে এক ধরনের নিরবতা, যা বুকের গভীরে গিয়ে জমাট বাঁধে।
রূপন্তি একা দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়। ভেতরে তিতলি ঘুমিয়ে পড়েছে অনেকক্ষণ। ঔষধের প্রভাবে এখন মেয়েটার ঘুম হয় গভীর, নিশ্ছিদ্র। সেই ঘুমের তলদেশে যেন লুকিয়ে আছে এক পৃথিবী শান্তি।
আজকের রাতটা একটু অন্যরকম ছিল। কুশান নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছে তিতলিকে। মেয়েটা হাসছিল, অনেক দিন পর সে হাসি যেন রূপন্তির ভেতর একটা আলোকবর্তিকা জ্বালিয়ে দিল। কুশান কী করছে এখন? ফোন চালাচ্ছে? নাকি ঘুমিয়ে পড়েছে? হয়তো সে ভেবে দেখছেও না রূপন্তি কী ভাবছে এই মুহূর্তে।

ঠিক তখনই, পেছন থেকে একজোড়া শক্ত, পরিচিত হাত এসে জড়িয়ে ধরে তার কোমর। এক মুহূর্তের জন্য রূপন্তির গা কেঁপে ওঠে। স্পর্শটা খুব চেনা, অথচ কেন যেন আজ সেটা একদমই অচেনা মনে হয়। গভীর এক অস্বস্তি, না কি ভুলে যাওয়ার ভয়ে শরীরটা কেমন জমে আসে। তবু সে জানে, এই স্পর্শ কুশানের। অনেক দিন হয়েছে, কুশান আর ওর এতটা কাছে আসেনি। রূপন্তি থেমে যায়। শরীরের ভেতর শিরাগুলো তীর তীর করে ওঠে। কুশান ধীরে ধীরে তার খোপা করা চুল খুলে দেয়। চুল গড়িয়ে পড়ে কোমর পর্যন্ত, সেই পুরোনো দিনের মতো, যেদিন প্রথম প্রেম হয়েছিল হয়তো। চুল সরিয়ে কুশান মুখ গুঁজে দেয় রূপন্তির কাঁধে। ঠোঁট ছুঁয়ে ছুঁয়ে হাঁটে তার ত্বকের উপর দিয়ে। রূপন্তির নিঃশ্বাস ভারী হয়ে ওঠে। চোখ বুঁজে আসে।

আজ কুশান ফারজানার কাছে নিজের চাহিদা মেটায়নি। না, ফারজানার সাজানো ভালোবাসা তাকে টানেনি। আজ মনটা অন্যরকম। আজ রূপন্তিকে চাইছে সে, শুধু শরীর নয়, তার ভেতরের মানুষটাকে। কয়েকদিন ধরেই রুপন্তির খুব কাছে যেতে চাইছে মনটা, আজ নিজেকে সামলাতে পারেনি। রূপন্তি বাঁধা দেয় না। হয়তো ভেতরে কোথাও আজও জেগে আছে এক টুকরো টান, একফোঁটা অভিমান, আর অসংখ্য অপূর্ণতা। আজকের রাতে সে কুশানকে ফেরাতে পারে না। ভাঙা দেয়ালের ধুলোচাপা ভালোবাসা যেন আচমকাই উঠে দাঁড়ায়। কুশান রূপন্তিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। চোখে জল, ঠোঁটে কাপুনি, রূপন্তিকে দেখে থেমে থাকে এক মুহূর্ত। তারপর সেই নরম ঠোঁটে নিজের পুরুষালি ঠোঁট মিশিয়ে দেয় কুশান। রূপন্তির পেটের উপর চলে যায় কুশানের হাত, শক্ত করে চেপে ধরে যেন আর হারাতে চায় না তাকে।
চুমুর গভীরে হারিয়ে যায় তারা, সময় থমকে দাঁড়ায় যেন।

অনেকটা সময় পর, কুশান রূপন্তিকে কোলে তুলে নেয়। রূপন্তি তাকিয়ে থাকে তার চোখে। সেই চোখে আজ আগের মতোই কোমলতা। ঘরের ভেতরে ঢুকে কুশান একবার চোখ রাখে ঘুমন্ত তিতলির দিকে, তারপর পাশের ঘরে নিয়ে যায় রূপন্তিকে। বিছানায় আলতো করে শুইয়ে দেয়। নিজেও আধশোয়া হয়ে পড়ে তার উপর। চুমু আঁকে তার কপালে, গালে, চোখে, মুখে। পরক্ষণেই রূপন্তির ঠোঁট খুঁজে নেয় আবার। রূপন্তি কোনো শব্দ করে না, শুধু চোখ বুজে থাকে। হাত চেপে ধরে কুশান, যেন এ মুঠো ছুটে না যায়। ঠিক তখনই রূপন্তির চোখ বেয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। সেই ফোঁটা হয়তো অনিচ্ছাকৃত, কিংবা অনেক দিনের জমে থাকা হাহাকারের একমাত্র প্রকাশ। রাত আরও গাঢ় হয়ে আসে। বৃষ্টির শব্দে ঢাকা পড়ে যায় সমস্ত দ্বিধা, সমস্ত অভিমান। শুধু থেকে যায় উষ্ণ আলিঙ্গন।

সকালের নরম আলোটা জানালার ফাঁক গলে ঘরের ভেতর ঢুকছে। রূপন্তি নাস্তার কাজ শেষ করে চুপচাপ ফিরে এলো বেডরুমে। চোখ প্রথমেই আটকে গেল বিছানার দিকটায়, তিতলিকে জড়িয়ে ধরে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন কুশান। অর্ধেক শরীর খোলা, ওর পিঠজুড়ে তাজা আঁচড়ের দাগ। এক মুহূর্তে লজ্জায় মুখ লাল হয়ে উঠল রূপন্তির। সেই দাগগুলো তারই তৈরি, গত রাতের ভালোবাসায় গড়া নিদর্শন। চুপচাপ আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল সে। গলার কাছে চোখ পড়ে, অজস্র দাগ, যাকে ইংরেজিতে বলে লাভ বাইট। অজান্তেই ঠোঁটে হালকা এক হাসি খেলে গেল। গতরাতের কুশান যেন নতুন কেউ ছিল, আবেগে, গভীরতায়, ছুঁয়ে থাকার তীব্রতায়।

হঠাৎই তার দৃষ্টি যায় ড্রেসিং টেবিলের ওপর রাখা কুশানের আইফোনটির দিকে। ফোনটা বারবার আলো দিচ্ছে, নিঃশব্দ রিং। রূপন্তি কাছে গিয়ে স্ক্রিনে চোখ রাখে। ফারজানা নামের কেউ কল করছে। ভ্রু কুঁচকে যায় তার। কে এই ফারজানা? পরমুহূর্তেই মনে হয়, অফিসের কেউ হয়তো। কুশান তখনো গভীর ঘুমে। রাতে ঘুমাতে ঘুমাতে প্রায় ভোর হয়ে গেছিলো, স্বাভাবিক। রূপন্তির মনে হয়, হয়তো কলটা ধরে জানিয়ে দেওয়া উচিত, তিনি এখন ঘুমাচ্ছেন, পরে যেন ফোন করে। ফোনে কথা বললে হয়তো মেয়ের ঘুমও ভাঙবে, তাই ফোনটা নিয়ে ডাইনিং রুমে এসে কলটা রিসিভ করে। কানে ফোন তুলতেই ওপাশ থেকে বিস্ফোরণের মতো গর্জে ওঠে এক নারীকণ্ঠ,
–” এইসব কী কুশান? আমার মধ্যে আগুন লাগিয়ে দিয়ে এখন তুমি ফোনও ধরছো না? আমি তো পাগল হয়ে যাচ্ছি। এতক্ষণ ধরে ফোন করছি, একটা রেসপন্স নেই।”

এক মুহূর্তে রূপন্তির শরীরটা ঠান্ডা হয়ে আসে। চোখে মুখে অবিশ্বাসের ছায়া। এ কণ্ঠ কোনো অফিস সহকর্মীর নয়, এটা এক নারীর, যার হৃদয়ে ক্ষোভ জমেছে, অভিমান আর দাবির আগুনে পোড়া এক নারীর। রূপন্তি ধীরে বলে,
–” কি বলছেন আপনি এইসব?”

ওপাশটা থেমে যায়। কিছুক্ষণের নীরবতার পর জিজ্ঞাসা আসে,
–” আপনি কে?”

–” আপনি যার ফোনে কল করেছেন, তার স্ত্রী।”
স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে রূপন্তি।

এক মুহূর্ত নীরবতা, তারপরই একটা কুৎসিত হাসি ভেসে আসে ওপাশ থেকে।
–” ওহ, মিসেস রূপন্তি?”

রূপন্তির বুকটা কেমন কেঁপে ওঠে। গলা শুকিয়ে আসে।
–” আপনি কে?”

ফারজানা বলে,
–” জানার সাহস আছে? ভয় পাবে না তো?”

–” মানে?”

–” আমি তোমার বরের প্রেমিকা।”

মাথার ভেতর যেন শব্দ করে কিছু একটা ভেঙে পড়ে।
রূপন্তি কাঁপা কণ্ঠে বলে,
–” কি বলছেন আপনি এইসব?”

তীব্র তাচ্ছিল্যে বলে ফারজানা,
–” বুঝিয়ে বলি তাহলে। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত অবধি যে তোমার বর আমার সঙ্গে থাকে। যে আমার শরীর ছুঁয়ে আমাকে পাগল করে, তার কথা বলছি। তোমার বর আমার সঙ্গে সময় কাটাতে আসে। সোজা ভাষায়, আমি হলাম সেই মেয়ে, যার কাছে তোমার স্বামী এসে নিজের চাহিদা নিবারন করে।”

রূপন্তির পা কাঁপে। সে চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে, ডাইনিং টেবিলের এক কোণা আঁকড়ে ধরে নিজেকে সামলায়। ফারজানা বলতে থাকে,
–” গতকাল তোমার স্বামী কি করেছে জানো? আমার কাছে এসে, আমাকে উত্তেজিত করে বেরিয়ে গেলো। এখন তোমার প্রতি তার সোহাগ বেড়ে গেছে নাকি?

প্রতিটি শব্দ যেন ছুরির মতো বিঁধছে রূপন্তির মনের মধ্যে। ফারজানা ক্রোধের কন্ঠে বলে,
–” একটা কথা মনে রেখো, আমি কুশানকে শুধু শরীরের জন্য দিইনি। তাকে ভালোবেসেছি। নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছি। কুশান যদি আমাকে ছেড়ে যেতে চায়, আমি কাউকেই ছাড়বো না। কাউকেই না।”

বলেই কলটা কেটে দেয় ফারজানা। রূপন্তি ধপ করে বসে পড়ে চেয়ারে। মাথা নিচু করে বসে থাকে। ফোনটা একপাশে রেখে দুই হাতে মাথা চেপে ধরে। ঘরের চারপাশটা যেন হঠাৎ অন্ধকার হয়ে এসেছে। গত রাতের কথা মনে পড়ে, কুশানের চোখ, তার স্পর্শ, তার উন্মাদনা। কতটা তীব্র ছিল সেই মুহূর্ত। কিন্তু আজ! এইসব কী শুনল সে? পানির জন্য হাত বাড়াতে গিয়েও থেমে যায় রূপন্তি। তার ভেতরটা কেমন অসাড় হয়ে গেছে। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে অঝোর জল।

সেই চোখের জল, একদিকে বিশ্বাসভঙ্গের ব্যথা, অন্যদিকে নিজের সহজ সরল ভালোবাসার অপমান। একটা রাতেই সব কিছু বদলে গেলো। যে কুশানকে মনে হয়েছিল, ফিরে এসেছে, সত্যিকারের মন নিয়ে, যে হাত ধরে ভেবেছিল সংসারটা আবার জোড়া লাগবে, সে কি সত্যিই ফিরে এসেছে? নাকি শুধু মুহূর্তের খেলা? রূপন্তি জানে না। জানে না কী করবে, কী ভাববে। শুধু জানে, তার বুকটা এখন কেবলই ফাঁকা লাগছে। গতকাল রাতে ভেবেছিলো, আবার সব ঠিক হয়ে যাবে। সুখের সংসার তৈরি হবে আবার। কিন্তু, এক মুহুর্তে যেন সব ওলট-পালট হয়ে গেলো। ভেঙে তছনছ হয়ে গেলো সমস্ত পরিকল্পনা।

#_চলবে_ইনশাআল্লাহ_🌹