#_ঘর_কুটুম_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_অন্তিম_পর্ব_
৪ বছর পর!!
সময় থেমে থাকে না। কারো জন্য না। সে নিজের গতিতে চলে। নির্দয়, অবিচল, অথচ প্রয়োজনীয়।
এই চার বছরে বদলে গেছে অনেক কিছু। বদলে গেছে ছোয়ার জীবন। আর সেই পরিবর্তনের কেন্দ্রে এসে দাঁড়িয়েছে একটি ছোট্ট প্রাণ, একটি নিঃশব্দ, অথচ অগণিত গল্পের জন্মদাতা নাম, পূর্না। একদিন হঠাৎ শিশিরের শরীরটা একটু খারাপ হয়ে পড়ে। কিছুটা উদ্বিগ্ন ছোয়া তাকে নিয়ে যায় হাসপাতালে। অথচ তারা জানত না, ওই দিনটা শুধু একটা চিকিৎসার দিন নয়। বরং তাদের জীবনে নতুন এক মোড়, নতুন এক অধ্যায়ের শুরু। হাসপাতালের করিডোরে হঠাৎ কান্নার রোল। কিছু মানুষের আর্তনাদ কানে আসে। মা বাঁচল না, বাচ্চাটার কী হবে এখন?
ছোয়া আর শিশির তখনই জানতে পারে, সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেছেন এক হতভাগী মা। মাত্র তিন মাস গর্ভে থাকতেই বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এখন সেই নবজাতক, জন্মের আগেই পিতৃহারা, জন্মের মুহূর্তেই মাতৃহারা। অনাথ, অসহায়। বাচ্চাটিকে হাতে তুলে নিয়েছিল ছোয়া। শিশুটির ক্ষীণ কান্না যেন ছোয়ার হৃদয়ে নতুন করে মা হবার বাসনাকে জাগিয়ে দিল। শিশিরের দৃষ্টিতে তখন এক অভাবনীয় মায়া, ভবিষ্যতের নতুন অধ্যায় যেন স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। ছোট্ট শিশুটির পরিবার আর্থিকভাবে অসচ্ছল। তারা জানত না কীভাবে এই শিশুটির ভবিষ্যৎ গড়বে। ছোয়া আর শিশিরের দিকে তাকিয়ে, একবার চোখের জলে, একবার স্বস্তির নিশ্বাসে, তারা সন্তানটিকে তাদের হাতে তুলে দেয়। শিশিরের পরিবারের সবাইও সাদরে গ্রহন করে বাচ্চাটিকে।
সেইদিন ছোয়া ও শিশিরের জীবন পেয়েছিল পূর্ণতা।
শিশির আদরের সাথেই নাম রেখেছিল, পূর্না। কারণ, সেই তাদের জীবনে এনেছে অপূর্ণতার পরিপূর্ণ রূপ।
আনজিলা বেগম, যিনি এক সময় ছোয়ার ওপর কঠোর আচরণ করতেন, তিনিও আজ আর আগের মানুষ নন। সেইদিন সব সত্যি জানার পর অনুতপ্ত হন তিনি। তিনি নিজেই একদিন ছোয়ার হাত ধরে ক্ষমা চেয়েছেন, নিজের ভুল বোঝার জন্য, অন্যায় আচরণের জন্য। ছোয়া কিছু বলেনি। মুখে হাসি রেখেই সব পুরনো আঘাত ধুয়ে মুছে ফেলেছে। পরবর্তীতে পূর্না এসে তার আলোয় মুছে গেছে সব অন্ধকার।
বর্তমানে পূর্নার বয়স তিন বছর। আধো আধো বুলিতে মাতিয়ে রাখে পুরো বাড়ি। তার ছোট ছোট পায়ে দৌড়াদৌড়ি, হাসির শব্দে যেন কাচের দালানটাও হাসে। শিশির আর ছোয়ার প্রান পূর্না। কেউ কখনোই বলতে পারবে না পূর্না তাদের সন্তান না। পূর্না যখন মা মা বলে ডাকে, ছোয়ার বুকটা ভরে যায়। শিশির এখন অফিস থেকে ফেরার পথে ছোয়ার ফোন পেলে হাসে, বাবুর জন্য এটাসেটা আনতে বলে। এই ছোট ছোট কথা শিশিরের পৃথিবী। ছেলেটি, যে এক সময় ভাবত বাবা ডাক শোনার সৌভাগ্য হবে না তার, এখন প্রতিদিন কানে পায় সেই ডাক, বাবা। আল্লাহর দরবারে প্রতিদিন হাজার বার শুকরিয়া আদায় করে শিশির।
শিশির ছোয়ার আলিশান ফ্লাটে এখন, রঙিন বেলুন, খেলনা, পুতুল, ছোট ছোট জুতো, কৌতূহলী চোখ আর চঞ্চল পায়ের শব্দ। ফ্ল্যাটজুড়ে সতর্কতা রাখতে হয়। কারণ, পূর্না অনেক দুষ্টু! কাচের জিনিস সরিয়ে রাখতে হয়। খেলনা ছড়ানো থাকে প্রতিটা কোণে।
কিন্তু, ছোয়া ক্লান্ত হয় না। হিমশিম খেলেও বিরক্ত হয় না। কারণ, সে জানে, পূর্না তার জীবনের সবচেয়ে আলোকিত আশীর্বাদ। শ্রেয়া এখন বিবাহিত, কিন্তু প্রায়ই চলে আসে পূর্নার সাথে সময় কাটাতে। শিথীও আসে ভাইঝিকে দেখতে। আনজিলা বেগমের কোলে পূর্না যখন বসে থাকে, তার মুখে হাসি আর চোখে শান্তি। সেই আধো ভাষায় বলা, দাদু! আম্মু! বাবু!
সেইসব শব্দে ভরে ওঠে সংসার।
শিশির আর ছোয়ার আজকের সুখী সংসার। এক সময়ের অনেক দুঃখ, ত্যাগ আর ভালোবাসার ফল।
আর সেই ভালোবাসার পরিপূর্ণ রূপই হলো পূর্না।
সত্যিই তো, সব ভালোবাসার একটাই নাম, পূর্ণতা।
আর সেই নামেই আজ ছোয়া আর শিশির তাদের গল্প লিখে যাচ্ছে প্রতিদিন।
…
সময় যেন ধীরে ধীরে গলে পড়ছিলো, গলতে গলতে বদলে দিচ্ছিলো অনেক কিছু। বদলেছে অরুনিমার জীবন, বদলেছে তার ভাবনা, অনুভব আর একান্ত নিজস্ব আবেগগুলো। আরাভ! সেই মানুষটা, যে একদিন আচমকাই এসে দাঁড়িয়েছিলো তার জীবনে, অরুনিমা তাকে আর ফেরায়নি। কেন জানি না, মনে হয়েছিলো, এবার একটু নিজের জন্য ভাবা যাক।
শুরুটা সহজ ছিল না। আরাভের পরিবার প্রথমদিকে অরুনিমাকে মেনে নিতে পারেনি। নানা রকম জিজ্ঞাসা, মন্তব্য, সন্দেহ, সব কিছু পেরিয়ে এসে এক সময় সবার কাছেই অরুনিমা হয়ে উঠলো সেই বাড়ির আদরের বউমা। আরাভ তো ছিলোই তার পাশে। নির্ভরতার নাম ছিল আরাভ।
স্মার্ট, সুদর্শন, সংযত অথচ দৃঢ়চেতা এই মানুষটা কতটা যত্ন করে অরুনিমাকে আগলে রেখেছে, ভাবলে এখনো কেমন একটা আবেশ ছুঁয়ে যায় অরুনিমার মন। নিজের আগোছালো জীবনটাকে ধীরে ধীরে যেন সাজিয়ে দিয়েছে আরাভ। আর এখন, এখন সে মা হতে চলেছে। পাঁচ মাস হয়ে গেছে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থার। এই নতুন যাত্রা, নতুন এক অনুভব নিয়ে দিন কাটে অরুনিমার। আরাভের যত্ন যেন বহুগুণে বেড়ে গেছে। অফিস, ব্যবসা, সব কিছুর ভিড়েও অরুনিমার ওষুধ ঠিকমতো খাওয়ানো, সময়মতো খাওয়া-দাওয়া করানো, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, কোনো কিছুতেই বিন্দুমাত্র অবহেলা নেই। যেন একটু কিছু ভুল হলে, সে নিজেকেই ক্ষমা করতে পারবে না।
অরুনিমার মাঝে মাঝে অবাক লাগে, এ মানুষটা কে? এতোটা যত্ন নেওয়া কি আদৌ সম্ভব কারো পক্ষ থেকে? তার মন বলে, সম্ভব! যদি সে মানুষটার নাম হয় আরাভ। অরুনিমা তো কখনো কল্পনাও করেনি সংসার করবে, মা হবে, এমন এক পূর্ণতা পাবে জীবনে। বিয়ের পর থেকেই আরাভের যত্ন, আদর, শ্রদ্ধা, সব কিছু যেন নতুন করে শিখিয়েছে অরুনিমাকে, ভালোবাসা বলে কিছু একটা সত্যিই আছে। আর যেদিন জানতে পারলো, সে মা হতে চলেছে, সেদিন যেন তার বুক ভরে উঠেছিলো এক অচেনা মমতায়। নিজেকে প্রথমবারের মতো পুরোপুরি একজন নারী বলে অনুভব করেছিল সে।
মাঝেমাঝেই সে চুপ করে বসে ভাবতে বসে, কী করে এমন মানুষটা তার জীবনে এল? সে কী এতটা ভাগ্যবতী? আরাভের পরিবারের মানুষগুলোকেও এখন মনে হয়, যেন তার আপন, তার খুব কাছের।
আর কিছু মাস পরেই এই সংসারে আসবে নতুন অতিথি, নতুন প্রাণ। নতুন একটা অধ্যায় শুরু হবে অরুনিমা আর আরাভের জীবনে। একটা ছোট্ট হাত ধরবে তাদের দুই হাতে, আর জীবন, জীবন আবার নতুন করে শুরু হবে।
…
সময়, সে বড়ো অদ্ভুত এক খেলোয়াড়। কারো জীবনে সে ঝড় তোলে। আবার সেই ঝড় থেমে গেলে রেখে যায় স্তব্ধতা। ক্ষতের ওপরে শুকনো রক্তের মতো একটা সান্ত্বনা। সময়ের এই খেলা কেউ আগে থেকে বোঝে না, টের পায় শুধু পিছনে তাকিয়ে। রুপন্তির জীবন যেন সময়ের তেমনই এক বিস্তৃত পটভূমি, যেখানে আনন্দ আর দুঃখ, প্রাপ্তি আর বেদনা পাশাপাশি হেঁটে চলে।
রুপন্তি এখন একা? না, একা নয়। তার সঙ্গে আছে ছোট্ট তিতলি, তার কন্যা, তার জীবন। সেই তিতলি, যে এখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলে যায় নিজে নিজেই, আর চোখে মুখে লেগে থাকে এক অদ্ভুত পরিণত ভাব। মা-বাবার আলাদা হয়ে যাওয়াটা তিতলি বুঝে গেছে অনেক আগেই। বুঝে গেছে, এই বিচ্ছেদের দায় তার মায়ের নয়, তার বাবার। এমনকি এতটুকু বয়সেই মেয়েটা এতটা বোঝদার হয়ে উঠেছে যে, সে এখন আর বাবার জন্য কাঁদে না। তার ভেতর থেকে যেন এক অনুভূতির জায়গা ফাঁকা হয়ে গেছে।তবে শূন্য নয়, বরং সেই জায়গায় সে গেঁথে ফেলেছে মায়ের জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা।
রুপন্তি চাকরি করে, পাশাপাশি ছোট একটা অনলাইন ব্যবসাও চালায়। ছোয়া যখন শিশিরকে বলে রুপন্তির জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলো, তখন রুপন্তির চোখে ছিল কৃতজ্ঞতার জ্যোতি। আজও সেই চাকরি রুপন্তির চালিকাশক্তি। সারাদিন কাজ করে বাড়ি ফিরে মেয়ের পড়াশোনার খোঁজখবর নেয়, বাসার কাজ সারে, তার সময় নেই আর কোনো কিছুর জন্য। নতুন জীবন? প্রেম? না, এসব তার অভিধানে এখন নেই। রুপন্তির এখন একটাই লক্ষ্য, তিতলিকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। তার নিজস্বতা, তার আত্মসম্মানই এখন তার পরিচয়।
তিতলি জানে, তার মা তার জন্য কত কিছু ত্যাগ করেছে। তাই সে পড়াশোনায় মন দেয়, মাকে কষ্ট না দেওয়ার চেষ্টা করে। মাঝেমধ্যে বাবাকে মনে পড়ে? পড়ে, অবশ্যই পড়ে। কিন্তু মনে পড়লেই সে দৌড়ে গিয়ে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে। যেন বলে, তুমি আছো তো মা, তোমার জন্যই তো আমি আছি।
আর কুশান? সে এখন একা, বিশাল এক আলিশান বাড়িতে। চারপাশে শূন্যতা, নিঃসঙ্গতা। মাঝে মাঝে দেয়ালের ছবি থেকে ঝরে পড়ে তিতলির হাসি, রুপন্তির চোখের মায়াময় চাহনি। একবার ফারজানা এসেছিলো তার কাছে, সেই ফারজানা, যার জন্য এই সংসার ভাঙন। কিন্তু কুশান তখন ক্রোধে উন্মত্ত। সে ফারজানার গলা চেপে ধরে। ফারজানা কোনোভাবে পালিয়ে বাঁচে। তারপর কুশান বন্ধ করে দেয় সব অর্থসাহায্য। আর কোনোদিন ফিরে তাকায়নি সেই দিকটায়। ফারজানা ও এখন কোথায় আছে কে জানে। কুশান জানে না। কোনো প্রকার যোগাযোগ নেই।
তবে সময় তাকে রেহাই দেয়নি। এখন রোজ রাতে, কুশান ধুঁকতে ধুঁকতে শুয়ে থাকে বিছানায়। মনে হয়, হয়তো এই বুঝি তিতলি দৌড়ে এসে তার বুকে মুখ গুঁজে বলবে, পাপা! কিন্তু সে জানে, সেই দিন আর নেই। সেই ছোট্ট মেয়ে, যে একদিন পাপা বলতে পাগল ছিলো, এখন স্পষ্ট গলায় বলে, তুমি এসো না, আমি তোমাকে দেখতে চাই না। এই কথাগুলো কুশানকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছে। সে আর কোনোদিন সাহস করেনি মেয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর। তবে সে চোখের আড়াল থেকে তিতলিকে দেখে, সাথে দেখে তার স্ত্রীকে। যাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো সে।
তিতলির স্কুল ছুটির সময়, কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকে কুশান। কখনো রুপন্তি আসে মেয়েকে নিতে, কখনো তিতলি বান্ধবীদের সঙ্গে বাড়ি ফিরে। কুশান শুধু দেখে, একদৃষ্টে। ওইটুকু মুহূর্তই যেন তার জীবনের একমাত্র শান্তির সময়। বাকি সবটা শুধু এক দীর্ঘ নরকযাত্রা। রুপন্তি আর তিতলি জানে না, ঠিক কতোটা দুরত্বে দাঁড়িয়ে এক ভাঙা মানুষ রোজ চেয়ে থাকে তাদের দিকে, নীরব, অনুতপ্ত, অসহায় হয়ে।
…
একই গ্রহে জন্ম। একই দেশের আলো-হাওয়ায় বেড়ে ওঠা। আর একই শহরের ধুলো-পথ মাড়িয়ে স্কুলে যাওয়া তিনটি কিশোরী, ছোয়া, অরুনিমা আর রুপন্তি। তখনো জানত না কেউ, সামনে তাদের জীবনের পথে কত বাঁক, কত চমক, কতটা গভীরতা অপেক্ষা করে আছে। অথচ, এক সময় তারা ছিল একেবারে অবিচ্ছেদ্য। এক টিফিন ভাগ করে খাওয়া, একসাথে মাঠে দৌড়ানো, পরস্পরের গায়ে মাথা রেখে কান্না করা আর স্বপ্ন গড়া তিনটি ছোট্ট হৃদয়।
কিন্তু সময়?
সে তো কখনও কারো হয় না। তার আছে নিজের নিয়ম, নিজের গতি। আর সেই সময়ের হাত ধরে, স্কুলের সেই নির্ভার বন্ধুত্ব ছুটে গেছে তিনটি ভিন্ন জীবনের দিকে। ছোয়া এখন পূর্ণা নামের এক দত্তক সন্তানের মা, জীবনকে ভালোবাসার নতুন ভাষায় লিখছে। অরুনিমা, যার জীবন একদিন ছিল শুধু কষ্ট আর অবিশ্বাসে ভরা, আজ সে মা হতে চলেছে, আরাভ নামের এক নিরাপদ ছায়ায় দিন কাটাচ্ছে। আর রুপন্তি, যে ভালোবাসার নামে পেয়েছিলো প্রতারণা, হারিয়েছিলো সংসার, আজ সে এক সংগ্রামী একক মা, তিতলির হাত ধরে নতুন এক পরিচয় গড়ে তুলেছে নিজের।
তবু, সময় যতই এগিয়ে যাক, জীবন যতই নতুন রূপ পাক, তাদের বন্ধুত্বটা থেকে যায় একই জায়গায়।
সময় সুযোগ মেলানো সহজ নয়। একজনের সংসার, আরেকজনের গর্ভকালীন সময়ের জটিলতা, আর কারো ব্যস্ত কর্মজীবন তবু তারা চেষ্টা করে। পনেরো দিনের মাঝে অন্তত একদিন, কোনো এক দুপুর, বিকেল বা সন্ধ্যায় দেখা হয়। দেখা না হলে ফোনে কথা হয়। কেউ কাউকে একদিন না শুনলে মন খারাপ হয়ে যায়।
সেই দেখা হওয়ার দিনগুলো যেন ছোটখাটো উৎসব। কারো বাসায় বসে গল্প, চা, মিষ্টি, আর অনেক অনাবশ্যক হাসাহাসি। এভাবেই ছোট ছোট মুহূর্তে, তারা ফিরে পায় সেই স্কুল জীবনের তিন পাতার খোলা খাতাগুলো। যেখানে বন্ধুত্ব লেখা ছিল না, কিন্তু অনুভব করা যেত। তাদের বন্ধুত্বে কোনো বিচার নেই, তুলনা নেই, অভিযোগ নেই। শুধু সহানুভূতি, শ্রদ্ধা আর গভীর এক ভালবাসা। কেউ কারো থেকে এগিয়ে গেলেও ঈর্ষা নেই, বরং গর্ব আছে।
আর এভাবেই সময় বয়ে চলে। প্রতিদিন বয়স বাড়ে, পেছনে পড়ে থাকে স্মৃতির পাতাগুলো। কিন্তু তারা চায়, বছর কুড়ি, তিরিশ, চল্লিশ, ষাট পরেও, যেন দেখা হয় এক গোধূলি বেলায়। হয়তো কারো নাতি-নাতনিকে নিয়ে গল্প হবে, কারো পুরনো প্রেম নিয়ে খুনসুটি চলবে। হয়তো ছোয়ার চুল পেকে যাবে, রুপন্তির চোখে চশমা, অরুনিমার হাঁটুর ব্যথা থাকবে। তবু মনে থাকবে সেই পুরনো দিন, পুরনো টিফিন, আর পুরনো বন্ধুত্ব।
সময় থেমে থাকে না, জীবন থামে না। তবে বন্ধুত্ব?
সেই তো রয়ে যায়। ঠিক এক পাথরের মতো, যার ওপর দাঁড়িয়ে তারা আজও হাসে, কাঁদে, বেঁচে থাকে।
শেষ না হোক এমন বন্ধুত্ব।
শেষ না হোক এমন গল্প!!!!!!!
………………🌹সমাপ্ত🌹…………………