চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব-২৬+২৭

0
602

#চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️
#পর্ব_২৬
#লেখনীতে_নন্দিনী_নীলা

শুভ্রতার বলা সব কথা আমি রুমে এসে স্পর্শকে জানালাম। তারপর বললাম,

‘ বাসার কাউকে না জানিয়ে উনাকে আপনি থাকতে দিয়ে দিয়েছেন কেন? সবাইকে জানালে কি সমস্যা হত?’

‘তখন সবাই আমার উপর অনেক রেগে ছিলো। হঠাৎ করে একটা মেয়ের সাথে আমাকে দেখলে সবাই রঙ কিছু ভাবতো। যেমনটা তুমি আমায় এতোক্ষণ ভাবছিলে। আর তখন তাদের মানাতে আর বুঝাতে গিয়ে আমার আর শ্বশুরবাড়ি যাওয়া হতো না বর সেজে। তাই ঝামেলা বিহীন আগে আমার চড়ুইপাখিকে আমার কাছে আনবো তারপর বাকি সব কাজ।’ বলেই স্পর্শ আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।

আমি পিছিয়ে হাত দিয়ে স্পর্শ কে থামতে বলে বললাম,

‘ একদম আমার কাছে আসবেন না।’

স্পর্শের মুখটা নিমিষেই আঁধার ছেয়ে গেল যেন আমার কথা শুনে। থমকানো দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ ক্যান্ট ইউ বিলিভ মি এ্যাট?’

আমি স্পর্শের কথা না শোনার ভান করে বিছানার উপর পা তুলে বসলাম। আর অসহ্য কর ভঙ্গিতে বললাম,

‘আপনি এখন যান তো আমার জন্য খাবার নিয়ে আসেন। আমি সেই দুপুর থেকে না খেয়ে আছি। আপনার চিন্তায় চিন্তায় আমার নাওয়া-খাওয়া বন্ধ। এখানে আসার পরও কেউ আমাকে খেতে দিল না। আপনিও খাওয়ার খোঁজ নিচ্ছেন না। এ কোথায় এসে পড়লাম আমি। তাড়াতাড়ি যান আমি খাবার খেয়ে ঘুমাবো।’

স্পর্শ আমার দিকে বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আছে।
কথা বলার ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছে। আমি এমন করে করে কথা বলেছি তা হয়তো স্পর্শ হজম করতে পারছে না।আমি আড়চোখে স্পর্শের বোকা চোখের চাহনী দেখছি।

স্পর্শ আমার দিকে এগিয়ে এসে ভালো করে জিজ্ঞেস করল,

‘তোমাকে কেউ খেতে দেয়নি?’

আমি বললাম, ‘ না। শুধু বলেছিল। আমি আপনার জন্য খাই নি।’

‘ আমার জন্য না খেয়ে থাকতে বলেছে কে? তোমার খিদে পেয়েছে খেয়ে নিতে।’

‘ আপনার জন্য বসে থাকার কারণ আছে।’

স্পর্শ ভ্রু কুটি করে বলল, ‘ কি কারণ আছে?’

‘ আছে আগে খাবার নিয়ে আসুন তারপর বলবো।’

স্পর্শ কপালে হাত রেখে চোখ বন্ধ করলো। তারপর বলল,

‘ যাচ্ছি। তোমার উপর মারাত্মক রাগ হচ্ছে কিন্তু আমি ব‌উকে বকা পছন্দ করিনা তাই সহ্য করছি। ‘

‘ ওরে আমার সাধু পুরুষ রে। যান এবার।’ আমি আদেশ সুরে বললাম। যেন আমি সেই রুমের কর্তী। এমন একটা ভাব নিচ্ছি। স্পর্শ রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করতে করতে কয়েক পা পায়চারী করল।
তারপর গটগট করে পায়ে শব্দ তুলে রুমের বাইরে চলে গেল। স্পর্শ রুমের বাইরে পা ফেলতেই আমি বিছানায় থেকে নেমে লাফ মেরে। তারপর ছোটে দরজার কাছে এসে উঁকি মারলাম। স্পর্শ রাগে গজগজ করতে করতে নিচে যাচ্ছে। আমি মুখ সেপে ধরে হাসছি।

স্পর্শের বোকা বোকা চেহারা দেখে আমার খুব মজা। তুই কি আবার শুরু। কম জ্বালাও নাই তুমি আমাকে। এবার আমার পালা। মিস্টার হাজবেন্ড খুব জালিয়েছো না এবার আমি সব সুদে-আসলে উসুল করব।

স্পর্শের পায়ের আওয়াজ পেতেই আবার গম্ভীর মুখ করে বিছানায় বসে পড়লাম। স্পর্শ খাবারের প্লেট এনে আমার কোলের উপর দিল। আর বলল,

‘নাও তোমার খাবার। এবার খেয়ে নাও!’

খাবার রাখার আগেই আমি তাড়াতাড়ি দুই হাতে দিয়ে প্লেট তুলে আবার স্পর্শের হাতে দিয়ে দিলাম। স্পর্শ কপাল কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘কি হচ্ছে কি? তোমার না খিদে পেয়েছে। তাহলে আমাকে আবার দিচ্ছ কেন? ফাইজলামি হচ্ছে কি আমার সাথে।’

‘ খিদের মাথায় আবার ফাইজলামি করে কিভাবে! আমি তো খাব বলেই আপনার হাতে দিচ্ছি।’

‘হোয়াট তুমি খাবে তো আমার হাতে দিচ্ছ কেন? আজ আমাদের বাসর রাত। সেটা কি ভুলে গেছো। দেখো রাত একটা বেজে গেছে আর একটু পর সকাল হয়ে যাবে। আজকে রাতটা নিয়ে আমি কত কিছু পরিকল্পনা করেছিলাম। কত স্বপ্ন দেখেছি! তুমি জানো? সব কিছুই তো ভন্ডর করে দিচ্ছ।’

‘ সেসব আমি কিছু জানিনা। এখন আপনি আমাকে খাইয়ে দিবেন। তারপর যা হওয়ার হবে।’

‘হোয়াট আমি তোমাকে খাইয়ে দেবো? কথা তো ছিল বিয়ের পরদিন থেকে প্রত্যেক দিন তুমি আমাকে খাইয়ে দিবে।’

‘ সেটা পরে হবে খন। এখন আপনি আমাকে খাইয়ে দেন।’

‘ আই ক্যান্ট। ইট ইয়োরসেল্ফ।’ বলেই স্পর্শ খাবারের প্লেট রেখে চলে যেতে চায়। আমি স্পর্শের হাত টেনে ধরি।

আর অভিমানী মাখা গলায় বলি,

‘ আপনি আমাকে একটুও ভালোবাসেন না। বাসলে এমন রুড বিহেভ করতেই পারতেন না। এইভাবেই মুখের উপর মানা করে দিলেন। আমার কষ্ট দেখে আপনি আনন্দ পাচ্ছেন।’

‘ উফফফ। আবার তোমাকে,, আমি আর বুঝাতে পারবো না। কিছু হলেই এক কথা।’

‘ ঠিকই তো বলেছি।’

‘হুম ঠিকি বলেছো।’

বলে স্পর্শ হাত ধুয়ে এসে আমার সামনে বসলো।

‘ ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করায় পারদর্শী মেয়ে তুমি।’

‘ মোটেও না। আমি খুব ভালো মেয়ে।স্বামীর আদর খেতে এমন করলাম।’

‘ আমার দুষ্টু ব‌উ।’

স্পর্শ খুব তারাতাড়ি খাওয়া কমপ্লিট করল। আমি অর্ধেক রেখেই খাওয়া অফ করে দিলাম বাকিটা স্পর্শকে পুলিশের মত বন্দুক ধরার মতো করে খাওলাম। সে তো খাবেই না। আমি জানি আজকে আমার মত সেও খায় নি।

খাওয়া কমপ্লিট করতেই স্পর্শ আমাকে আচমকা কোলে তুলে বেরিয়ে এলো।

‘আরে আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে। এই মাঝরাতে কি শুরু করলেন। আমি ঘুমাবো! আপনি আমাকে কোথায় নিচ্ছেন?’

স্পর্শ আমার উঁচু গলার আওয়াজ শুনে একদম নাকের সাথে নাক লাগিয়ে বলল,

‘ চুপপপ, নো সাউন্ড। এভরিওয়ান উইল উইক আপ।’

আমি আবছা আলোয় স্পর্শের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি‌। স্পর্শ সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে হেঁটে চলেছে।আমি এবার স্পর্শ থেকে দৃষ্টি সরালাম কোথায় নিয়ে এসেছে আমাকে দেখার জন্য। চোখ ঘুরিয়ে দেখলাম বাগানের দক্ষিণ সাইডে গোলাপের বাগানে সেইখানে। আকাশে বিশাল বড় চাঁদ সেই চাঁদের আলোয় ফুলগুলো আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি এত ফুল ফুটেছে। টকটকে লাল। আমাকে স্পর্শ সেখানে এনে নামিয়ে দিলো। তারপর আমাকে রেখে সামনের দিকে গেল। আমি সেখানে দাঁড়িয়ে ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য বিলাস করছি। এটা ফুল বিলাস।

হঠাৎ স্থানটা ঝলমল করে উঠল আলোয় আলোয় ঝিকিমিকি করে উঠলো। ঝলঝল করে কিছু অসংখ্য ছোট ছোট প্রাণী উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে এটা তো জোনাকি। আমি জোনাকি বলে লাফিয়ে উঠলাম আর সেখানেই দুহাত মেলে লাফাতে লাগলাম। আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে খুশিতে লাফালাফি করছি। হঠাৎ থেমে গেলাম মুখে দু হাত চেপে ধরে অবাক হয়ে সামনে তাকিয়ে আছি।

আমার সামনে স্পর্শ হাঁটু মুড়ে বসে আছে। তার হাতে একটা লাল টকটকে গোলাপের কলি।

স্পর্শ ফুলটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,,,,

‘ ভালোবাসি? তোমাকে আমি ঠিক কতোটা ভালোবাসি তা কখনো প্রকাশ করিনি। কারণ আমি নিজের অনুভূতি গুলোকে অপ্রকাশিত রাখতেই বেশি ভালোবাসি। মুখে বলার থেকে কাজে করতে বেশি ভালোবাসি। আমি চাই না মুখে বারবারই ভালোবাসি বলতে। আমি চাই দেখাতে, এতো এতো ভালোবাসা দেবো এত এত ভালোবাসব যে তুমি নিজেই বুঝে যাবে আমি এই সাদাফ মাহফুজ স্পর্শ তোমাকে ঠিক কতটা ভালোবাসি। যা তুমি অনুভব করবে প্রতি সেকেন্ডে, প্রতিক্ষণে। আমার প্রতিটা শ্বাস প্রশ্বাস জানে, সে তার অভিমানী চড়ুইপাখিকে পাগরের মতো ভালোবাসে আর সারাজীবন ভালোবাসবে। তুমি কি এই ভালোবাসা গ্ৰহণ করবে। থাকবে তো শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এই স্পর্শের বুকে মধ্যে?’

আমি খুশিতে কেঁদেই ফেললাম।
আর তারাতাড়ি ফুলটা ধরে নিলাম।

#চলবে…..

#চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️
#পর্ব_২৭
#লেখনীতে_নন্দিনী_নীলা

চিৎকার-চেঁচামেচিতে সকালের ঘুম ভাঙলো। স্পর্শ আমাকে রেখে রুম থেকে বেরিয়ে পড়েছে। আমি নতুন বউ কিভাবে বের হব ভাবছি। সীফা আমাকে নিয়ে এলো বাইরে। ওর থেকে জানতে পেলাম বাড়িতে নাকি পুলিশ এসেছে। পুলিশ এসেছে শুনে আমার শুভ্রতার কথা সবার আগে মনে পড়লো। আমি সীফার জন্য শুভ্রতার কাছে যেতে পারছি না। এসব কি শুভ্রতার বাবাই করল সে স্পর্শের বাড়ি চিনলো কি করে?কি সব ঝামেলা। আজ আমার বৌভাত কোথায় শ্বশুরবাড়িতে একটু লাজুক বউ হয়ে বসে থাকবো। আনন্দ হবে। কিন্তু এই পুলিশ এসে আমার সব মাটি করে দিচ্ছে। এখন যদি স্পর্শ কে পুলিশ অ্যারেস্ট করতে চায়। সব সমস্যা কেন আমাদের বেলায় হয়।

কত অপেক্ষার পর কাল কে রাতে আমরা দুজন কত সুন্দর ভাবে কাটিয়েছি। দুজন দুজনের পাশে ছিলাম। কি সুন্দর সেই সময়টুকু ছিল। সকাল হতেই সব শেষ হয়ে গেল। আবার আতঙ্ক চলে আসলো। এই আতঙ্ক ঝড় কি আমাদের জীবন থেকে যাবে না। আমি চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে নিচে দাঁড়িয়ে থাকা স্পর্শ আর পুলিশকে দেখছি। সীফা আমাকে রেখে ফোন আসতেই চলে গেল। আমি সেই সুযোগে শুভ্রতার কাছে চলে এলাম। একি রুম ফাঁকা কেন?
আমি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও শুভ্রতা কে খুঁজে পেলাম না। স্পর্শ কি ওকে অন্য কোথাও লুকিয়ে রাখলো নাকি? কিন্তু কখনো রাতে তো তিনি আমার থেকে বের হয়নি। শুভ্রতা তো এখানেই ছিল। আর স্পর্শ এই মাত্র আমার সাথে ঘুম থেকে উঠে নিচে গিয়েছে শুভ্রতা তাহলে কোথায় গেল? টেনশনে আমার মাথা খারাপ হওয়ার অবস্থা। আমি হন্তদন্ত হয়ে নিচে নেমে এলাম। পুলিশ চলে গেছে। স্পর্শ কপালে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে‌। ওনার সামনে বড় ভাই আব্বু আম্মু। সবাই এসব কি ? পুলিশ কেন তার খোঁজ করতে এসেছে এসব নিয়ে নানা প্রশ্ন করে যাচ্ছে। স্পর্শ শুভ্রতার কথা বলে যাচ্ছে।

আমি কোনায় দাঁড়িয়ে কথা শুনছি চিন্তিত মুখে।‌ ভাবি এসে আমাকে বলল,

‘ কি হয়েছে তোমার?’

‘ভাবি কিছু হয়নি।’

‘ পুলিশ দেখে ভয় পেয়েছো তাই না।’

‘ না মানে হ্যা।’

‘ আরে চিন্তা করো না। কিছু হবে না।’

‘ হুম।’

স্পর্শ হঠাৎ আমার নাম ধরে ডেকে উঠে বলল,

‘ মারিয়া যাও তো শুভ্রতাকে ডেকে নিয়ে আসো এখানে।’

স্পর্শের কথা শুনে আমার পিল চমকে উঠলাম‌। তারমানে স্পর্শ জানেনা শুভ্রতা কোথায়।এই মেয়ে কোথায় গেল তাহলে।

আমি নরছি না দেখে স্পর্শ ধমক দিয়ে বলল,

‘ কি হলো এখনো যাচ্ছ না কেন? ‘

আমি হাতের আঙ্গুলে আঁচল মুচড়াচ্ছি। স্পর্শের ধমক খেয়ে ছিটকে উঠলাম। আমি এগিয়ে এসে স্পর্শ কে নিচু স্বরে বললাম,

‘ আপনার সাথে আমার জরুরি কথা আছে একটু এদিকে আসেন প্লিজ।’

স্পর্শ বলল,
‘ তোমার সব কথা পরে শুনবো আগে তুমি শুভ্রতাকে এখানে নিয়ে আসো। ‘

‘ ওকে নিয়েই কিছু বলার ছিল। প্লিজ আসুন না।’

‘ ওকে নিয়ে মানে?’

স্পর্শ অবাক গলায় বলল। আমি শুকনো ঢোক গিলে স্পর্শের বাহু চেপে ধরে সবার থেকে দূরে নিয়ে এলাম।

‘ কি হয়েছে? এমন করছো কেন?’

আমি বললাম, ‘ শুভ্রতা রুমে নাই। আমি সারারুম খোঁজেছি।’

‘ হোয়াট? রুমে নাই ও একা একা কোথায় গেছে। ‘

‘ জানি না।’

‘ কোন ঝামেলায় পরলাম। এই কোন উটকো ঝামেলা ঘারে এসে পড়ল।’

স্পর্শ সবাইকে জানিয়ে দিল শুভ্রতাকে পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই মিলেই বাড়ি তন্নতন্ন করে খোঁজা হলো। কিন্তু সারা বাড়িতেও তার টিকিটি অব্দি পাওয়া গেল না। আত্নীয় স্বজনে ভরপুর বাড়িতে। অনেক সকালে পুলিশ আসায়। সবার নজরে পড়েনি। কারণ তারা সবাই তখন ঘুমিয়ে ছিল। কিন্তু এক দুই জন তবু্ও জেগেছিল আর তাদের নজরে এই ঘটনা ঘটে গেছে। আর এতেই সবাই জানতে সময় লাগলো না। একেতে শুভ্রতা কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সেটা নিয়ে আমি স্পর্শ। শ্বশুরবাড়ির সবাই চিন্তিত আছি। আর তাকে স্পর্শ নিয়ে এসেছে পুলিশও এসেছিল সেই জন্য। কিন্তু আমার শাশুড়ি মার চাচাতো ভাই এস আই তার কথা বলে কাটানো গেছে সাথে যথার্থ প্রমাণের অভাবে তারা ফিরে গেছে। কিন্তু এখন শুভ্রতা হারিয়ে তার কিছু হলে তার দায় আসবে স্পর্শের উপর কারণ স্পর্শের সাথেই পালিয়ে এসেছে সে।

আত্নীয় স্বজনরা এখন খালি কানাঘুষা করছে ফিসফিস করে। স্পর্শ কপালে হাত করে বিছানায় বসে আছে। রাতের মধ্যে মেয়েটা গেল কোথায়?

এদিকে মেহমানরা আসা শুরু করে দিয়েছে রিসেপশনের জন্য। আমার রেডি হতে হবে আমি পার্লারের লোকদের সাথে বসে আছি স্পর্শ তাদের দেখে রুম থেকে চলে গেছে। আমি সাজতে বসেও শান্তি পাচ্ছি না স্পর্শের জন্য চিন্তা হচ্ছে।
স্পর্শের নাগাল আর পেলাম না। একেবারে স্টেজে উঠে তার নাগাল পেলাম। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মুখ বানিয়ে বসে আছে। আর আত্নীয় দের সাথে কথা বলছে জোর করে হাসি ফুটিয়ে।

আমি আসতেই স্পর্শ আমাকে ধরে বসতে সাহায্য করলো। আমি স্পর্শের পাশে বসেই ফিসফিস করে বললাম,

‘ এতো টেনশন করবেন না প্লিজ। আমার ভালো লাগছে না।’

স্পর্শ আমার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে হাতের পিঠে চুমু খেয়ে মুখে মৃদু হাসি টেনে বলল,

‘ আই এ্যাম ফাইন। ইউ ডোন্ট ওয়ারি।’

‘ আপনি ঠিক নেয় আমি জানি।’ মন খারাপ করে বললাম।

‘আমি একদম ঠিক আছি আর শুভ্রতার খুঁজে পেয়ে গেছি।’

‘কি?? পেয়ে গেছেন কোথায় শুভ্রতাকে! উনি বাসা থেকে চলে কেন গিয়েছে? কার সাথে গিয়েছে? এখন কোথায় আছে? আমাদেরকে না বলে চলে গেল কেন? উনি….

শুভ্রতা কে পাওয়া গেছে শুনে আমি উত্তেজিত হয়ে একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছি। স্পর্শ চেয়েও আমাকে থামাতে পারছেনা। তাই মুখে হাত দিয়ে আমাকে থামাতে সক্ষম। আর বলল,

‘তুমি নতুন ব‌উ! স্টেজে বসে আছো! এখানে যারা আছে সবার দৃষ্টি এখন তোমার উপর। তাই দয়া করে এত এত প্রশ্নের ঝুলি অফ করো। শুভ্রতা কোথায় আছে? কেন গিয়েছে?কিভাবে গিয়েছে?
সেসব বিবরণ আমি তোমাকে পরে দিচ্ছি। এখন দয়া করে শান্ত থাকো।’

আমি উম উম করে যাচ্ছি স্পর্শ তা দেখে মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিল। আমি রাগী চোখে স্পর্শের দিকে তাকালাম।

‘আপনার জন্য আমার সমস্ত সাজ নষ্ট হয়ে গেল। দেখি আপনার হাত।’

বলেই স্পর্শের হাত আমি টেনে সামনে এনে দেখলাম সত্যি লিপস্টিক তার হাতের ছাপ আছে। আমি তাকে দেখিয়ে বললাম,

‘এই দেখুন কি করেছেন? আমার ঠোটে লিপস্টিক সব আপনার হাতে চলে গেছে। এভাবে কেউ মুখ ছেপে ধরে?’

‘ আসলেই কাজটা ভুল হয়েছে। এটা হাত দিয়ে না ধরে মুখ দিয়ে ধরলে ভালো হতো তাই না। তখন হাত নষ্ট হতো না। কিন্তু কি করবো বলো এতো লোকের সামনে যদি তোমায় কিস করতাম তুমি তো লজ্জা পেতে। এতো লিপস্টিক কেউ পরে? তুমি এসব না পরলেই বেশি সুন্দর লাগে।’

‘ ছিহহ কি অশ্লীল কথাবার্তা।’

‘আর এতো প্রশ্ন কেউ করে? মানুষ একটা করে প্রশ্ন করে। আর তুমি তো হাজারটা প্রশ্ন একসাথে করে দাও। উত্তর আর কি দেব! তোমার প্রশ্নের ঝুলি শুনে তো আমার মাথা ঘোরানো শুরু হয়ে যায়।’

‘ আপনি বলছেন আমি কথা বলি! আমি বাচাল!’

‘ নো। তা কখন বললাম আমি। তুমি নিজেই তো বললা।

‘ আপনি এটাই বুঝিয়েছেন।’

‘ জ্বি না। তুমি বেশি বুঝ।’

‘ ধ্যাত।’

বিরক্ত ভাব করে থেমে গেলাম।

#চলবে…