চন্দ্রকথা পর্ব-০৮ এবং শেষ পর্ব

0
111

#চন্দ্রকথা
সিমরান মিমি
সমাপ্তি পর্ব


জনশূন্য কক্ষ।মূল ফটকে দু-বার টোকা মারতেই ভেতর থেকে মহারাজ অমৃত সিং এর কাঠখোট্টা কন্ঠের আওয়াজ শোনা গেল।সামান্য অসস্তিতে পড়ে পা টিপে নতমুখী হয়ে কক্ষে প্রবেশ করলো অতৃপ্তা।মস্তক নুইয়ে রাজাকে কূর্নিশ জানিয়ে নম্রকন্ঠে বললো:

-মহারাজ, ক্ষমা করবেন।আপনি বিশ্রাম নিচ্ছিলেন,দাসীরাও সাহস পাচ্ছিলো না আপনাকে ডাকার।সেজন্যই নিজে থেকে বিরক্ত করেছি।

মহারাজ মাথা নাড়ালেন।স্বভাবসুলভ গম্ভীর চাহনিতেই একবার দেখে নিলেন নবপুত্র বধু কে।এরপর বললেন,

-বেশ!দ্রুত বলো।কোন কারনে অসময়ে কক্ষে আসতে হলো?

অতৃপ্তা আনমনা হয়ে জানালার খোলা প্রান্তরে চাইলো।দুরের ডাল টাতে কয়েকটা শালিক বসে আছে।সেদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বললো,

-কারনটা আপনার অজানা নয়, মহারাজ।রানীমা নিশ্চয়ই আপনাকে এ বিষয়ে অবগত করেছে।বিগত দশ দিন প্রাণপণে চেষ্টা চালিয়েছি রাজকুমারকে শুধরানোর জন্য, কিন্তু বারংবার ব্যর্থ হচ্ছি।আর এর প্রধাণ কারন হচ্ছে ক্ষমতা।তিনি রাজকুমার এবং ভবিষ্যৎ রাজা।সামনের মাসেই তার রাজ অভিষেক সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।মহারাজ,রাজকুমার ক্রমে বদ্ধ উন্মাদ হয়ে উঠছে এই ক্ষমতার জেরে।তার যা ইচ্ছা, যখন ইচ্ছা কোনো ভাবনা-চিন্তা ছাড়াই করছে।কারন সে রাজা,তাকে কেউ কাঠগড়ায়, বিচারের আদালতে,রাজসভায় দাঁড় করাবে না।কেন ওনাকে এতটা নাগালছাড়া করলেন আপনারা?কেন আগেই বাঁধা দেন নি?তিনি নির্বিচারে দাসী হত্যা করে।ছাড়ে না বনের পশু পর্যন্ত।তার ভয়ে তটস্থ প্রজারা।দাসীরা ভয়ে সিটকে থাকে।এমন হলে তিনি কি ভাবে এই রাজ্য সামলাবেন?

মহারাজ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।রাজার খোলস ছেড়ে ক্রমশ বাবার চরিত্রে রুপান্তরিত হলেন।চোখের কোনে দেখা দিলো অশ্রুর ঢল।অপরাধীর সুরে বললেন,

-একমাত্র পুত্র,শাসনের চেষ্টা করি নি।তবে এখন বিষয়গুলো আরো ব্যথিত করছে আমাদের।কি ই বা করা যায় ?সে-তো আদেশ মানে না।

-বেশি কিছু করতে হবে না।তাকে ক্ষমতাচ্যুত করুন।অতি শীঘ্রই ঘোষণা করুন -যতক্ষণ না পর্যন্ত রাজকুমার নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করছে ততক্ষণ পর্যন্ত অভিষেক হবে না।তবে এর একটা নির্দিষ্ট সময় সীমা খচিত করুন।উক্ত সময়ের মধ্যে রাজকুমার ব্যর্থ হলে রাজ্যের মধ্য থেকেই কোনো সাহসী এবং যোগ্য যুবকরুপি প্রজাকে ভবিষ্যৎ রাজা বানানো হবে।

ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মহারাজ। বললেন,

-আমার একমাত্র পুত্র,সিং বংশের শেষ বংশধর কে বাদ দিয়ে কোনো প্রজাকে রাজা বানিয়ে এই বংশের শাসনের সমাপ্তি করবো আমি?এ তুমি ভাবলে কি করে?

হাসলো অতৃপ্তা।কন্ঠে তেজ নিয়ে বললো,

-বেশ!তাহলে অতি শীঘ্রই প্রজাদের দ্বারা এমন স্বৈরাচারী রাজার পতন ঘটিয়ে সিং বংশের শাসনকে কলঙ্কিত করার জন্য প্রস্তুত হোন।


নিজ কক্ষে বসে অশ্রুশীতল চোখ নিয়ে নিরবে পিঞ্জরের কুড়ে ঘরের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে অতৃপ্তা।বারংবার মন আফসোস করে বলছে নানা কথা।যদি সে কান্নাকাটি না করে নতুন আরেক পিঞ্জর কে না নিতো তাহলে এই অবলার প্রাণ যেতো না।আবারো মন কখনো বলছে বিয়েটাই তার অনুচিত হয়েছে।কিন্তু মায়া?ভাবনাগুলো ক্রমশ এলোমেলো হচ্ছে।সে দোষী,হ্যাঁ সেই তো চুড়ান্ত দোষী।ওইদিন কেন সে মন খারাপের জেরে পিঞ্জরকে নিয়ে ঘুমাতে গেলো?যদি এমনটা না হতো তাহলে কখনোই আজ প্রাণ টা মরতো না।ইশশশ!কতটা বেদনাদায়ক দৃশ্য!কি করে পারলো একটা প্রাণকে ওই তলোয়ার দ্বারা মস্তকছিন্ন করতে?আচ্ছা,পিঞ্জর কি তখন ছটফট করছিলো?ভাবতেই আর্তনাদ করে উঠলো অতৃপ্তা।হঠাৎই এক সান্নিধ্যের হাতের অস্তিত্ব পাওয়া গেল কাঁধে।চোখ মুছে পেছনে তাকাতেই অবাক হলো।’রাজকন্যা সৌদামিনী।’একে সেই বিবাহের সময়ে দেখেছে অতৃপ্তা।অথচ আজ প্রায় বাইশ দিন বিবাহ শেষ হয়েছে।এর মধ্যে একবার ও আসেনি।অভিমানীনি অতৃপ্তা কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে দিলো সৌদামিনীর।চিত্ত খাঁড়া করে বললো,

-কেন এসেছো?কিছু দরকার?

মলিন মুখে হাসলো সৌদামিনী। আলতো পায়ে হেঁটে আসনে বসলো।এরপর কুঁড়েঘরের দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললো,

-বেড়াল টাকেও ছাড়লো না অমানুষ টা।

মুহুর্তেই চোখ দুটো বড় করে তাকালো অতৃপ্তা।রাগন্বিত হয়ে কন্ঠে তেজ এনে বললো:”সংযত হয়ে কথা বলো।

আরো কিছু বলার প্রয়াস করলেও থেমে গেল।হুট করেই নিজের উপর অবাক হলো।সত্যিই তো তার স্বামী একটা অমানুষ। কিন্তু তাও কেন অন্যকেউ কিছু বললে সহ্য হয় না।সৌদামিনী হেঁসে বললো,

-কষ্ট হচ্ছে?শুধুমাত্র একটা বাজে কথা বলাতেই?তাহলে একবার ওই নর্তকীদের কথা ভাবো যাদেরকে বিনা অপরাধে হত্যা করার হুকুম দিয়েছে তোমার এই স্বামী।তাদের পরিবারের কথা ভাবো।

ভ্রুঁ-যুগল কুঁচকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো অতৃপ্তা।কিয়ৎক্ষণ চুপ করে থেকে সম্বিৎ ফিরে পেয়ে বললো,

-তোমার কথা বুঝতে পারলাম না।নর্তকীদের হত্যা করেছে মানে?

হাসলো সৌদামিনী।তাচ্ছিল্য করে বললো,

-কেন, তুমি জানো না?অবশ্য জানবেই বা কি করে?তার পূর্বেই তো দাসীদের হত্যা করেছে।

থেমে মলিন কন্ঠে বললো,

-তোমাকেও বা কি দোষ দিবো?তোমার ভাগ্য তো আমার থেকেও খারাপ।এতসব অন্যায়-অনাচার দেখার পর প্রতিনিয়ত গুমরে মরেছি এটা ভেবে -যে কি করে এমন একটা অমানুষের বোন হলাম আমি।আর তোমার কথা নাহয় ছেড়েই দিলাম।কিভাবে সহ্য করো এমন একটা মানুষকে?বাস করো কিভাবে?

-সে কি এতটাই খারাপ যে বোন হিসেবে তুমি একটা প্রশংসা ও করতে পারছো না?

চোখ দুটো অশ্রুসিক্ত হয়ে গেলো সৌদামিনীর।দুপাশে মাথা নাড়িয়ে বললো,

-আমার ভাইজান আমাকে বোন হিসেবে অসম্ভব ভালোবাসে।এতটাই ভালোবাসে যে আমি হস্তি ভয় পাই দেখে হস্তিশালা প্রাসাদ থেকে আধা ক্রোশ দূরে নির্মাণ করেছে।ঘোড়াশালের একমাত্র শুভ্র ঘোড়া পছন্দের ছিলো দেখে নিজের প্রিয় ঘোড়াকে আমায় উপহার দিয়েছে।কিন্তু এই প্রশংসা গুলো উচ্চারণ করতে পারি না আমি।কারন ওই আর্তনাদ গুলো ককর্ণকুহরে বাজে।তুমি জানো রাজকুমারী,আমার ভাইজান খুব’ই ভালো। শুধুমাত্র ওনার জেদ আর হিংসা এই অধপতনের জন্য দায়ী।এই খামখেয়ালীপণা,একাগ্রতা সবচেয়ে খারাপ।নিজ কোনো বস্তু অন্য কেউ ছোঁয়া তো দূর দেখতেও পারবে না।সে যেটাই বলবে ভুল হোক সঠিক হোক সেটাই পালনীয়।এমনকি এই নিয়ম জলসাঘর পর্যন্ত পালন হয়।ভাইজান কোনো নর্তকীর দ্বারা মুগ্ধ হলে ওই নর্তকীর কাল নেমে আসে।কারন সে অন্য কাউকেও মুগ্ধ করবে এই ক্ষোভে কালক্ষেপন না করে অতিদ্রুত তাকে হত্যা করা হয়।কখনো দেহ দ্বিগন্ডিত করে,কখনো ফাঁসিতে চড়িয়ে বা কখনো অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করে।আর এগুলো কেউ জানতেও পারবে না,কারন যে বলবে তাকেও হত্যা করা হবে।কিন্তু কতদিন’ই বা এসব লোকচক্ষুর আড়ালে রাখা যাবে?ব্যক্তিগত দাসীকে পাঠিয়েছিলাম নর্তকী রুপে সত্যতা যাচাই করতে।কারন সেখানে প্রাসাদের কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।কিন্তু আমার সেই দাসী আজ এক বৎসর যাবৎ ফেরেনি।হয়তো সে ও আমার ভাইজানের হিংস্রতায় হারিয়ে গেছে।

দুহাত দিয়ে কান চেপে ধরলো অতৃপ্তা।চিৎকার করে বললো,

-চুপ করো,চুপ করো।বন্ধ করো এসব সাজানো মিথ্যে।আমি বিশ্বাস করি না।

-তুমি অবুঝ নও।আশা করি নিজেই সত্যটা জেনে নিবে।

বলে ত্রস্ত পায়ে কক্ষ ত্যাগ করলো রাজকন্যা সৌদামিনী।


দুপায়ে শক্ত ভাবে বাঁধানো ঘূঙুর,পড়নে নর্তকীদের জড়ির পোশাক এবং থুতনি পর্যন্ত পাতলা ওড়নায় ঢাকা এক নর্তকী বসে আছে জলসাঘরের জমিনে।দুপাশে আরো দুজন অপেক্ষা করছে রাজকুমারের মন জয় করার জন্য।একটা নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষার পর শোনা গেল হেঁটে আসার ঠকঠক আওয়াজ।দাম্ভিকতার জেরে বুক টান করে জলসা ঘরে প্রবেশ করলেন রাজকুমার।এগিয়ে এলো দুই নর্তকী।আসনটাকে নামমাত্র নিজেদের পোশাক দ্বারা মুছে কুর্নিশ করে বসতে বললেন।রাজকুমার বসা মাত্র’ই স্টিলের পাত্র নিয়ে এগিয়ে এলো আরো একজন।আরামসে ঢেলে দিলো সুরাহ। পান করতে করতে অভিরুপ সামনে বসা তিনজনের দিকে তাকালো।বললো,

-শুরু করো।

বলার সাথে সাথেই বাজনা বাজাতে আরম্ভ করলো বাদক রা। সেই বাজনার সাথে সাথে ঝুনঝুন শব্দে বেজে উঠলো ঘুঙুর।পা এবং হাত গুলো সমান তালে দুলতে লাগলো ক্রমশ।অভিরুপ নেশাক্ত চোখে নর্তকী দের দিকে তাকালো।এক দৃষ্টিতে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে ঘোর লাগানো কন্ঠে বলে উঠলো,

-এই এই দেহ আমার পরিচিত।

একা একাই বিরবির করতে করতে উঠে দাঁড়ালো।পায়ের ওই আঙুল এবং নখ গুলো তার চিরচেনা।এইতো গতকাল রাতেই চুমু খেয়েছে এই পায়ে।ত্রস্ত পায়ে নর্তকী’-র পায়ের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এগিয়ে গেল। আচমকাই এক হাত বাড়ির কোমড় জড়িয়ে তুলে নিলো নিজের সাথে।গায়ের সাথে জড়িয়ে কোলে নিয়ে চেপে ধরে বসে পড়লো আসনে।মাথার ওড়না সরাতে সরাতে কানের কাছে গিয়ে বললো,

-আমার অতৃপ্তা।এই পোশাক কি তোমাকে আমার থেকে অপরিচিত করতে পারবে?

ক্রমশ নড়তে আরম্ভ করলো রাজকুমারী।অভিরুপ খামচে ধরলো অতৃপ্তার পেট।কন্ঠে ক্ষোভ নিয়ে বললো,

-এই অপবিত্র -নোংরা জায়গায় প্রবেশ করার সাহস হলো কি করে তোমার?

তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো অতৃপ্তা।বললো,

-আমাকে এই নোংরা জায়গা’র সবথেকে নোংরা মানুষটার সাথে প্রতিনিয়ত নিদ্রায় যেতে হয়।আফসোস!তুমি আজীবন
রাজকুমার হয়েই থাকলে,রাজা আর হতে পারলে না।

এরইমধ্যে দুজন প্রহরী ঢুকলো জলসা ঘরে। রাজকুমার কে কুর্নিশ করে বললো,

-যুবরাজ,ইন্দ্রনগরে থাকাকালীন আপনার অনুপস্থিতিতে যে নর্তকী উজির পুত্রকে সেবা দিয়েছিলো এবং কারাগার থেকে পালিয়েছিলো তাকে আটক করা হয়েছে।ইতোমধ্যে হয়তো অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা হয়েছে।

চমকে রাজকুমারের কোল থেকে নামলো অতৃপ্তা।বিস্ময় এবং ঘৃনা নিয়ে ছুঁটে গেল জলসাঘরের ফটকের দিকে।মুহুর্তে’ই রাজকুমারের আদেশে বন্ধ করে দেওয়া হলো ফটক।তাদেরকে ধাক্কা মেরে ফটক খুলতে যেতেই হাত ধরে টেনে নিলো অভিরুপ।ক্রোধে ফেঁটে পড়লো অতৃপ্তা। একটানে প্রহরীর কোমর থেকে বের করে নিলো বিষাক্ত খঞ্জন।রাগের বশবর্তী হয়ে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য অবস্থায় খঞ্জন ঢুকিয়ে দিলো বুকে।

-জানোয়ার,অমানুষ!

বুকে হাত দিয়ে আর্তনাদ করে জমিনে বসে পড়লো রাজকুমার।রক্তে রঞ্জিত হয়ে গেল রাজকুমারের পোশাক,হাত এবং খঞ্জন।প্রহরী’রা চিৎকার করে উঠলো।অতৃপ্তা হতভম্ব হয়ে চারদিকে তাকাতে লাগলো।কাঁপা হাতে বুকের উপর গেঁথে যাওয়া খঞ্জন টা ছুঁলো অতৃপ্তা।চোখ দিয়ে অনর্গল অশ্রু ঝরছে তার।হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইলো অভিরুপের মুখের দিকে।ব্যথায় বিষিয়ে উঠলো রাজকুমার।ক্রমশ মুখশী এবং হাত-পা নীলবর্ণ ধারণ করলো। কন্ঠে ব্যথাতুর আর্তনাদ তুলে ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বললো,

-এটা বিষাক্ত ছিলো।বুকে ব্যথা হচ্ছে অতৃপ্তা।শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।

হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো অতৃপ্তা।কাঁপা দু হাতে অভিরুপের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,

-আ…….মি বুঝতে পারি নি।রাজকুমার?কথা বলুন।কেউ বৈদ্যকে ডাকো।

কিন্তু বৈদ্যের জন্য আর অপেক্ষা করলেন না রাজকুমার।এর আগেই নিস্তব্ধ হয়ে গেলেন।তার ওই জ্বলজ্বল করা হিংস্র চোখ দুটো এখনো তাকিয়ে আছে অতৃপ্তার দিকে।হয়তো বলছে, “তোমাকে একা রেখে আমি যাবো না।শীঘ্রই ফিরবো।”

➤বিস্তীর্ণ নীলাকাশ।সদ্য মাঠ থেকে শস্য তোলার পর কচি ঘাস জন্মেছে ফাঁকা ফাঁকা আস্তরণে।চারপাশে অজস্র ভেড়ার পাল।সুদুর আকাশে কিছুক্ষণ পর পর উড়ে যাচ্ছে চিলের দল।দুজন যুবক বসে আছে গাছের ছায়ায়।মাঠ থেকে কিছুটা দুরত্বে তাদের পরিশ্রান্তের জায়গা হলেও সতর্ক দৃষ্টি ভেড়ার পালের দিকে।হঠাৎ রাখাল অন্যজনের উদ্দেশ্যে বললো,

-রাজবাড়ির ঘটনা শুনছিস?

অপরজন অবাক চিত্তে তাকালো।সরলতার সাথে মাথা নাড়ালো।এর মানে সে জানে না।অপরজন যেন নিজেকে বিজ্ঞ মনে করলো।আয়েষ করে বসে বললো,

-ওই যে রানী,আমাদের রাজকুমার অভিরুপ সিং-তার বেগম নাকি গতকাল অগ্নিকুন্ডে ঝাঁপ দিয়েছে।সে নাকি আবার গর্ভবতী ও ছিলো।

অপরজন অবাক হয়ে বললো,-সে তো স্বামী শোকে পাগল হয়ে গেছিলো।শুনলাম শেকল পড়িয়ে রাখতো সবাই।

মাথা নাড়ালো বিজ্ঞ রাখাল।ক্ষোভ নিয়ে বললো-এগুলা শোক না, নাটক।নিজের হাতে স্বামী খুন করে পাগল হওয়ার নাটক।

অপরজন যেন উক্ত কথায় আশাহত হলো।বললো,

-সে যাই বলিস।একেবারে খারাপ কিছু করেনি বেগম।যদি না মারতো, তবে না জানি নগরের ভাগ্যে কি ছিলো ।

সমাপ্ত