চন্দ্রপুকুর পর্ব-৪০+৪১+৪২

0
271

#চন্দ্রপুকুর
||৪০তম পর্ব||
– ঈপ্সিতা শিকদার
মেহমাদ শাহ গুরুগম্ভীর হয়ে হিসাবকার্য সম্পন্ন করছে। সহায়ক হিসেবে খাঁস ভৃত্য মিনার তো আছেই।

“জমিদার বাবু, ভুল-ত্রুটি মার্জনা করবেন। তবে একখান কথা পেটে কুড়মুড় করছে, না বলে স্বস্তি পাচ্ছি না।”

“বলতে থাকো।” হিসাবের খাতা হতে চোখ তুলে তাকিয়ে জবাব দিল যুবক।

“আমার মনে হয়… মানে আমার মন বলছে বেগম চন্দ্রমল্লিকাকে সব খুলে বললে ভালো হতো।”

“মতিভ্রষ্ট হয়েছে তোমার! সবকিছু খুলে বলা কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। উত্তরাধিকারী শাহাজাদা হওয়ার পূর্বে শপথ করেছিলাম বংশের বাহিরে বিবাহ করলে সন্তান পৃথিবীতে আগমনের পূর্বে বিবাহিতা স্ত্রীকে এই নবাব বংশের কোনো রহস্য খুলে বলা যাবে না।”

“দুঃখিত, মার্জনা করবেন জমিদার বাবু। আমি সেটার কথা বলছিলাম না। বেগম যে আপনাকে ভুল বুঝলো সেই কথা বলছিলাম। আপনি যদি বেগমকে বলে দিতেন শাহাজাদি মেহনূরকে আপনার স্ত্রী শাহাজাদি মেহনূর নয়, বেগম চন্দ্রমল্লিকা স্বরূপ পরিচয় করিয়েছেন, তাহলে হয়তো তিনি এতোটা ক্রুব্ধ হতেন না।”

“ক্যানো বলবো? সে আমাকে বলেছিল তার গর্ভধারণে সমস্যা হওয়ার কথা? সে বিনা কারণে আমার হতে তথ্য আড়াল করতে পারে, তখন আমিও কারো নিকট বাধ্য নই। জমিদার আমি! জমিদার নবাব মেহমাদ শাহ!”

“যা আপনি বলেন জমিদার বাবু।”

“হু” বোধক ধ্বনি নির্গত হয় যুবকের দেহ হতে। আবারও কাজে ডুবে সে। হুট করেই কিছু একটা মনে পড়তেই মিনারের পানে তাকায়।

“ভালো চিকিৎসকের খোঁজ করো চন্দ্রমল্লিকার এই সমস্যা নিবারণের জন্য, শহরে নাহলে ব্রিটেইনে। জনাব হকিংস চলে গেলেই আমাদের যাওয়ার ব্যবস্থা করবে। মানে আর তিন মাস পর।”

মুচকি হাসে ভৃত্য। মানুষটার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে আছে ঐ নারীর উদ্দেশ্যে প্রেমের গন্ধ, যা চাপিয়ে যায় তার কঠোরতাকেও।

“যথা আজ্ঞা জমিদার বাবু। আপনার স্নান করার সময় হয়েছে আমি আপনার জন্য হাম্মামখানা তৈরি করে আসি।”

ইশারায় তাকে অনুমতি দেয় মেহমাদ শাহ। বিদায় নেয় মিনার।

___

বেগম লুৎফুন্নেসার কামরায় করাঘাত করে শাহাজাদি জান্নাতুল। বেগম লুৎফুন্নেসা অনুমতি প্রদান করেন।

“আসসালামু আলাইকুম আম্মিজান। কী সৌন্দর্য আপনার! আল্লাহ আপনাকে নেক হায়াত দান করুক।”

“আমিন, আমার জান জান্নাতুল। দাঁড়িয়ে আছো ক্যানো? এসে বসো পাশে।”

“অবশ্যই, আম্মিজান।”

নূরানি চেহারা বিশিষ্ট মধ্যবয়স্ক নারীটি শিমুল তুলোর তুলতুলে গদিতে এসে বসেন। বৃদ্ধা আদুরে ভঙ্গিমায় দেখেন নিজের একমাত্র কন্যাকে।

“বলো আমার জান্নাতুল, আমার আদুরে বিড়াল, আমার হৃদয়ের পক্ষী, কী অবস্থা তোমার? ভালো আছো তো তুমি?”

“আলহামদুলিল্লাহ, আম্মিজান। আল্লাহ বেশ রেখেছেন।”

“তোমার সাথে এতোকাল সাক্ষাৎ তো দূরে থাক চিঠিও প্রেরণ করিনি তোমার জন্য। আম্মিজানের উপর কোনো ক্রোধ নেই তো তোমার? আমির কি এখন তোমার সাথে আর কঠোর আচারণ করে?”

“পরিস্থিতির শিকার ছিলেন আপনি, আম্মিজান। আমি সে সম্পর্কে জ্ঞাত। আর আলহামদুলিল্লাহ, আমি বেঁচে তো আছি, ভালো ভাবেই হোক বা খারাপ ভাবেই হোক। অতীতের কথা বাদ দেন। আমি বস্তুত, অন্য কিছু জানতে এসেছি।”

দ্বিধান্বিত হন বেগম লুৎফুন্নেসা। হাসির সহিতই প্রশ্ন করেন,

“অর্থাৎ? আমি বোধগম্য করতে পারিনি তোমার কথা।”

“অর্থ অতি সহজ আম্মিজান। আমি চন্দ্রমল্লিকার বিষয়ে কথা বলতে চাই।”

“চন্দ্রমল্লিকা?” আপন মনেই বিড়বিড়ায় বৃদ্ধা। বোধ করতে পারেন কন্যার কথার সারমর্ম।

“আম্মিজান, আপনি কি কোনো খোঁজ নেননি তার? আমার হৃদয় অনুভূতির জোয়ারে যা ব্যক্ত করছে তা আপনার হৃদয় ব্যক্ত করেনি?”

“করেছে আমার জান্নাতুল, করেছে। আমি জানার চেষ্টা করেছিলাম, খোঁজ নিয়েছিলাম চন্দ্রমল্লিকার বিষয়ে। কিন্তু কিছুই জানতে পারিনি তার পিতৃপরিচয় সম্পর্কে।”

“জানতে পারোনি না কি নিজেদের পুঞ্জিভূত পাপকর্মের ভীতিতে খোঁজ নেওনি তার সম্পর্কে ঠিকভাবে? যাকগে, এখন আমি তথা শাহাজাদি জান্নাতুল এসে পড়েছি, সবাই সবার যোগ্য স্থান ফিরে পাবে। নিজের বাস্তবতা এবং পরিচয়ও।”

উত্তর দিলেন না বয়স্ক নারীটি। খুবই সূক্ষ্মভাবে এড়িয়ে গেলেন।

“রাখো এসব ঝামেলার কথা৷ নিজের বিষয়ে জানাও আম্মিজানকে, আমার চাঁদের টুকরো।”

“দুঃখিত, আম্মিজান। এখন একটু কাজ পড়ে আছে আমার। তাই যেতে হবে। বিদায়।”

সায় জানালেন বেগম লুৎফুন্নেসা। শাহাজাদি জান্নাতুলও আর অপেক্ষা করেন না। নিঃশব্দে কক্ষে ত্যাগ করেন।

___

জনাব আরহানের নিদ্রা ভঙ্গ হয় এক ফালি সোনালি আলো চোখে উপচে পড়ায়। চোখ ডলে উঠে বসে সে স্বাগতম জানায় নব এই পরিবেশকে।

গতকাল যাত্রার জন্য বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল সে। তাই আর নিজ কামরা হতে বের হয়নি। খাবার-দাবার কোনোরকম সেড়ে রাজ্যের ঘুমে তলিয়ে যায় সে।

তবে এখন পড়েছে মহা বিড়ম্বনায়। সকাল সকাল পরিস্কার হতে গোসলখানায় যাওয়ার প্রয়োজন, তবে কোথায় তা অবস্থিত জানা নেই তার।

ব্রিটেইনে তার ছোট্ট বাসাটিই তার নিকট বিপুল পরিমাণ ভালো মনে হচ্ছে। লাগোয়া গোসলখানাটাকে এখন মনে হচ্ছে বিরাট বড়ো কোনো সুবিধাজনক কিছু।

কামরা থেকে বের হতে যেয়েও থেমে যায় সে। ভাবে,
-দেখা যাক, যদি কেউ আসে।

এখানের বারান্দাতেও ভিন্ন এক ধারা খেয়াল করে যুবক। বারান্দার কোনো দোয়ার নেই বা কক্ষ হতে বারান্দা পৃথককারী কোনো দেয়াল তুলে দেয়া হয়নি। বরং, পাতলা পর্দায় আলাদা করা মাত্র।

উন্মুক্ত ও সতেজ বাতাসে শ্বাস গ্রহণ করে চমৎকার এক তৃপ্তি বোধ করে সে। চুমু খায় আকাশ পানে তাকিয়ে।

হুট করে আশপাশ দেখতে দেখতে চোখজোড়া স্থির হয় এক কৃষ্ণবর্ণা রমণীর উপর। যদিও চেহারা সুস্পষ্ট দেখতে পায়।

এই বারান্দার শেষ কোণে কোণাকুণি দাঁড়ালে কিছুটা দেখতে পাওয়া যায় অন্দরমহলের বারান্দা। আরহানের চোখ যেয়ে পড়ে সেদিকেই।
যামিনী পুকুর পাড়ে বসে বসে গাছ লাগাচ্ছে। কৃষ্ণচূড়া ও রাধাচূড়া গাছের চাড়া রোপণ করছে সে। ছোটো ছোটো চন্দ্রমল্লিকা ফুলের গাছ তো আছেই।

মূলত প্রিয় পুরুষটিকে উপহার দিতেই এমনটা করা। হাত-পা মাটিতে মেখে গিয়েছে। আঁচলটা তো কোন ক্ষণেই মাথা হতে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে ভেজা ভূমিতে। কিন্তু এসবের মাঝখানে যে কেউ একজন একদৃষ্টিতে দেখছে তাতে তার কোনোরূপ ধ্যান নেই।

জনাব আরহানের ঘোর ভঙ্গ হয় কোনো বিপত্তি ব্যতীতই। বোধ হয় ভুল করছে সে এভাবে আড়াল হতে কোনো নারীকে দেখে। চোখ ফিরিয়ে নেয়, নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা করে। তবে নিজেকে আটকেও রাখতে পারে না। দ্রুতো ক্যামেরাটা নিয়ে এসে ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে ফেলে।

এর মাঝেই তার কক্ষের দোয়ারে করাঘাতের শব্দ। সে বিরক্তিতে ‘চ’ বোধক শব্দ উচ্চারণ করে সেখান হতে প্রস্থান করে।

দরজা খুলতেই একজন খাদিম প্রবেশ করে। ঝুঁকে সালাম জানায় তাকে।

“আসসালামু আলাইকুম সাহেব। আপনাকে খাওয়ার জন্য জিজ্ঞেস করতে পাঠানো হয়েছে আমায়। আপনি কি কামরাতেই আহার করবেন না কি ভোজনশালায়?”

“সবার সাথে ভোজনেদ কার্য সম্পন্ন করতে চাই আমি মশাই। তবে সব কিছুর পূর্বে আমাকে গোসলখানায় তো নিয়ে চলুন। আই নিড টু টেক আ বাথ্।”

প্রাসাদে কার্যরত ও প্রায় সকল গ্রামবাসীই চলনসই শিক্ষিত। তাই খাদিমের অসুবিধা হয় না জনাব আরহানের কথা বোধগম্য করতে।

“যথা আজ্ঞা সাহেব। আপনি একটু অপেক্ষা করুন আমি ব্যবস্থা করছি আপনার স্নান করার।”

হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ায় যুবক। খাদিমও বিদায় নেয় কার্য সম্পাদনে।

___

ভোজনশালায় অপেক্ষা করছেন সকলে মেহমাদ শাহ ও জনাব আরহান করিমের জন্য। আহিল, মিনার ও দিনার তিনজনও উপস্থিত। তারা পারে না, খাবারের জন্য আর্তনাদ করে উঠে, এতোটা ক্ষুধাবোধ হচ্ছে তাদের। অবশেষে অপেক্ষার অবশান ঘটিয়ে প্রবেশ করে উভয় ব্যক্তি।

পর্দার আড়ালে বসে আছে নবাব পরিবারের নারীরা। তারা উভয় প্রবেশ করতেই বেগম লুৎফুন্নেসা আয়েশা খাতুনকে কানে কানে আদেশ করেন,

“খাবার পরিবেশন করতে বলো সেবক ও সেবিকাদের।”

একে একে তৈরিকৃত নানান পদের খাবার পরিবেশন করা হয়। গোটা চৌপায়া ভরে যায় খাবারে। গরুর গোশতো ভুনা, শিক কাবাব, জালি কাবাব, শামি কাবাব, মুরগির কোরমা, পরোটা, লুচি, নিরামিষ; কী নেই! ঘ্রাণেই যেন জিভে জল চলে আসছে উপস্থিত ব্যক্তিদের।

“কেমন কাটলো রাত্রি আরহান করিম সাহেব? কোনো প্রকার অসুবিধা তো বোধ হয়নি আপনাদের?”

“অসুবিধা তো হয়েছে, একখান বিরাট অসুবিধা! যার জন্য দায়ী শুধুমাত্র আপনি!”

চলবে…

#চন্দ্রপুকুর
||৪১ও৪২তম পর্ব||
– ঈপ্সিতা শিকদার
আঁতকে উঠে মেহমাদ শাহ জনাব আরহান করিমের এমন দ্বিধাহীন উক্তিতে। তার বিবর্ণ মুখশ্রী দেখে হেসে ফেলে স্মুখের মানুষটি।

“কাম ডাউন! ডোন্ট ওয়ারি, আমি তো শুধু মজা করছিলাম। মূলত একটাই সমস্যা, তা হলো কী আহার করব তা চয়ন করায় বড্ড সমস্যায় ভুলছি। এতো আয়োজন খাবারের!”

“উপভোগ করুন, আরহান সাহেব। এতো আমাদের ক্ষুদ্র ব্যবস্থা শুধু সবার উদ্দেশ্যে। শুরু করা যাক তবে।”

জমিদার বাবু এক গাল খাবার মুখে পুরে নিলেই সকলে খাওয়া শুরু করে। জনাব হকিংস ও তার সঙ্গীরাও চেটেপুটে খায়।

ভোজনশালার দু’পাশা দুটি প্রবেশ পথ একটা অন্দরমহল হতে প্রবেশের এবং অপরটি মূল মহলের সাথে যুক্ত। অন্দরমহলের মাঝ বরাবর পর্দা টানা। যার ব্যবহার শুধু বিশেষ মেহমানের আগমন ঘটলেই হয়।

যামিনী মন মোতাবেক তৈরি হয়ে ভোজনশালার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। আজ তার একটু দেরিই হয়ে গিয়েছে নামাজ পড়তে পড়তে। তবে সে নিশ্চিত জমিদার বাবু নিশ্চয়ই তার জন্য অপেক্ষারত।

দোয়ারে আসতেই বাধাপ্রাপ্ত হয় প্রহরীর দ্বারা। অকস্মাৎ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় অবাক হওয়ার সাথে ক্ষুব্ধও হয়ে উঠে সে।

“সাহস কী করে হয় এই অপরাধের! তুমি ভুলে গিয়েছো আমি কে! আমি বেগম এই অন্দরমহলের। আমাকে ভোজনশালায় প্রবেশ করতে বাধা দান করছো? আমাকে?”

“দুঃখিত বেগম। ভুল-ত্রুটি মার্জনা করবেন। বেগম লুৎফুন্নেসা ও জমিদার নবাব শাহের আদেশ আপনাকে যেন ভোজনশালায় প্রবেশ করতে নে দেওয়া হয়। আপনার ভোজনের ব্যবস্থা আপনার কামরায় করে দেওয়া হবে।”

বিস্মিত হয়, বেদনাগ্রস্তও। মেনে নিতে পারে না প্রহরীর সহজ স্বীকারোক্তি।

“কী! হতে পারে না। তুমি মিথ্যে বলছো। বাবু মশাই, কখনও এমন কিছু বলবে না।”

“আস্তাগফিরুল্লাহ, বেগম। আপনার সাথে মিথ্যে বলার স্পর্ধা আমার কখনোই হবে না। উপরওয়ালা জানা আমার বাণীর সত্যতা৷ মার্জনা করুন।”

রমণীর পরিশেষে বিশ্বাস হয় প্রহরীর বাণী। আর কোনো শব্দ উচ্চারিত হয় না তার মুখ হতে। কম্পিত পদচারণায় সে উলটোপথে হাটা শুরু করে। তার হাত-পা থরথর কাঁপছে। পড়ে যেতে নেয় সে। দিলরুবা তাকে আগলে ধরে।

“বেগম, সামলান নিজেকে। এতো তাড়াতাড়ি ভেঙে পড়লে কীভাবে গোটা যুদ্ধ লড়বেন?”

উঠে দাঁড়ায় সে। বিড়বিড়ায়,
“বাবু মশাই… বাবু মশাই আমাকে ছাড়া খাবার খাচ্ছেন। কীভাবে?”

আবারও মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যেতে নেয় যামিনী। দিলরুবা ও মোহিনী তাকে আঁকড়ে ধরে কামরায় নিয়ে যায়।

রোহিণী দ্রুতো পানপাত্রে জল নিয়ে আসে তার মনিবের উদ্দেশ্যে। সে সবসময়ই নারীটিকে নিজের বড়ো বোন বলে ভাবে।

“বেগম, আপনি শান্ত হন। নিজেকে সামলে নিন। নাহলে এসব কিছুর মোকাবেলা করবেন কী করে?”

যুবতী জমিদারনি কিছুটা শান্ত হয়। স্থির হয়ে বসে সুদীর্ঘ এক শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করে।

নিজেই নিজেকে মনে মনে বলে,
“নিশ্চয়ই আমার উপর ক্রুব্ধ হয়ে তিনি এমনটি করেছেন। আমি তাঁকে খুব দ্রুতোই মানিয়ে নিব।”

___

“বুঝলে আহিল, আজ একটা মেয়েকে দেখেছি। একদম আঁধারিয়া সৌন্দর্য। যাকে বলে ব্ল্যাক বিউটি! আমরা রেসিজমকে নিয়ে পত্রিকায় লিখতে যেমন ধরনের মডেল খুঁজছি, ঠিক তেমন।”

আরহান করিমের সাথে আহিল, মাহিন ও দিনার নিজেদের মধ্যে আড্ডা দিচ্ছিল। সেই সাথে তাদের লিখা নিবন্ধ ও তৈরি করা তথ্যচিত্রের মাঝে শেরপুরের কী কী তুলে ধরবে। ঠিক তখনই কোনো রকম ভূমিকা ব্যতীত আনমনেই কথাটি বলে উঠে আরহান করিম৷

অবাক তিন সহকারী। হুট করে এই গ্রাম বাংলায় এমন কাকে খুঁজে পেল। যেখানে নারীরা এতোটা পর্দার মাঝে থাকে।

“কার কথা বলছেন, স্যার? এখানে কোথায় আর কীভাবে এমন মেয়ে পেলেন?”

যুবক ধীরে ধীরে ব্যক্ত করে সকলের ঘটনাটি। আহিল বরাবরই ঠোঁটকাটা ধরনের মানুষ। সে মুখ খুলতে দেরি করে না।

“যা তা কথা বলেন তো আপনি স্যার। মেয়ের চেহারাও আপনি দেখেননি, আবার বলছেন ব্ল্যাক বিউটি!”

সাথে সাথে চাপড় পড়ে তার মাথায়। ভেঙচি কাটে সে। মাহিন আলতো হেসে তার আদর্শ পুরুষটির দিকে তাকায়।

“তবে স্যার, ঐ কন্যাকে পছন্দ হলেও কিছু করার নেই। তাকে জীবনেও আপনি পাচ্ছেন না এই প্রজেক্টের জন্য। নবাব পরিবারের সদস্য কি না কে জানে? আচ্ছা, বলুন তো পরনে কী ধরনের পোশাক ছিল?”

কয়েক মুহূর্ত ভেবেও মনে করতে পারে না আরহান। অতঃপর চোখে ভেসে উঠে কাদায় মাখামাখি দামী ময়ুরপঙ্ক্ষী রঙা শাড়ির আঁচলের কথা।

“বেশ দামী জামদানী ছিল যতোটা বুঝতে পেরেছি। তবে তা জেনে কী হবে?”

“আরে স্যার, আপনি খেয়াল করেননি এ নবাব বাড়িতে দাসীরা শুভ্র রঙা সাধারণ শাড়ি ব্যতীত কিছু পরিধান করে না৷ সুতরাং, নারীটি নিশ্চয়ই সম্ভ্রান্ত কেউ। তাই দূরে থাকুন। এখানে নবাব পরিবারের নারীর দিকে চোখ তুলে তাকানোও নিষেধ। ধরে ফেললে মৃত্যু পাবে।”

“যা-ই বলো। ‘ব্ল্যাক বিউটি’ আমার স্বপ্নীয় কাজ। আমার এই ড্রিম প্রজেক্ট প্ল্যানিং অনুযায়ী এক্সিকিউট হলে আমাকে পুরো বিশ্বে সবাই এক নামে চিনবে। এর জন্য শুধু প্রয়োজন, একজন পরিপূর্ণ আঁধারিয়া সৌন্দর্যকে।

যার স্নিগ্ধতায় কারো হৃদয় পুড়বে না। বরং, হৃদয় শীতল হয়ে যাবে। আর আমার মনে হয় আমি তাকে পেয়ে গিয়েছি। আর আমি তো অন্যকিছু করব না, শুধুমাত্র একটা ভালো ছবি চাই তার। কন্যাটি বেগম চন্দ্রমল্লিকা নাহলেই হলো।”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাহিন। সে বোধ করতে পারছি অপরিকল্পিত কিছু হতে চলেছে সামনে। তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সর্বদাই একটু অধিক পরিমাণই কার্যকর।

তিনজন আবার এই বিষয়টি বাদ দিয়ে পরিকল্পনা করায় লেগে যায়। দিনার প্রস্তাব রাখে,

“আমার মতে যেহেতু আমরা সবাই ক্লান্ত যাত্রার পরে। আমরা তো প্রাসাদটাকে অবস্থান দিতামই আমাদের প্রজেক্টে, তবে ক্যানো না প্রাসাদটাকেই আগে ধরি। এতে আমরা বিশ্রামও করতে পারব, আর কাজও।”

বিনা কোনো কথায় রাজি হয়ে যায়৷ তার মাথায় সে কল্পনা করছে আরেক পরিকল্পনা।

ভাবে,
-একবার অন্দরমহল পরিদর্শনের জন্য ঢুকতে পারলেই মেয়েটিকেও খুঁজে নিবে সে। আর একটা প্রোপার ছবি অজান্তেই তুলে নিলেই খেলা শেষ।

___

রাত্রি গভীর। যামিনী যত্নের সহিত চোখে কাজল এঁকে নিচ্ছে। সুগন্ধিটাও দেহের বিশেষ বিশেষ অংশে খুব নমনীয়তার সাথে মেখে নিচ্ছে সে।

“মাশাআল্লাহ, বেগম। আজ তো আঁধার আকাশে উঠা চাঁদও আপনাকে দর্শন করে লজ্জিত হবে।”

“হয়েছে, আর মিথ্যে তারিফ করা লাগবে না। তার চেয়ে বরং আমাকে গহনা চয়ন করতে সহায়তা করো। এই নীল পাথরেরটা পরব না কি লাল পাথরের?”

দিলরুবা একটা নিয়ে হাতে তুলে দেয়। যামিনীও খুশি মনে তা পরিধান করে নেয়।

রমণী এবার বড়ো চাদর, হিজাব ও নিকাবে নিজেকে পূর্ণরূপে আড়াল করে মেহমাদ শাহের কামরার দিকে রওনা হয়। জানা অনুযায়ীই মিনার দাঁড়িয়ে সেখানে।

“আসসালামু আলাইকুম, বেগম। আল্লাহ আপনাকে সদা সুস্থ রাখুক।”

“ওয়ালাইকুম আসসালাম। বাবু মশাই কি অভ্যন্তরে আছেন?”

“জী। তবে এই মুহূর্তে আপনি প্রবেশ করতে পারবেন না। জমিদার বাবু ব্যস্ত, কারো অভ্যন্তরে প্রবেশ করা নিষেধ।”

এগিয়ে যেতে নিয়েও থেমে যায় মিনারে কথা শুনে। ভ্রু কুঁচকে তাকায়, তৎক্ষণাৎ মাথা নিচু করে ফেলে যুবকটি। তার অসহায় দৃষ্টি বোধগম্য হয় জমিদার গিন্নির।

“ঠিক আছে। তাকে যেয়ে বলো বেগম চন্দ্রমল্লিকা এসেছেন এবং আপনার সাথে সাক্ষাৎ করতে চান। আমি নিশ্চিত তিনি উপেক্ষা করতে পারবেন না।”

“কিন্তু…”

হাতের ইশারায় তাকে বলতে না দিয়ে থামিয়ে দেয় যামিনী। শুধায়,

“আমি কোনো কিছু শুনতে চাই না। যতোটুকু বলেছি, ততোটুকুই করো।”

“যথা আজ্ঞা।”

মিনার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে অপেক্ষারত নারীটিকে রেখে। যামিনী প্রসন্নচিত্তে দাঁড়িয়ে।

মেহমাদ শাহ ও বেগম চন্দ্রমল্লিকার বেশধারী শাহাজাদি মেহনূরের সাক্ষাৎকার নিচ্ছে চার শহুরে সাংবাদিক। হুট করে বাধাগ্রস্ত হয় মিনারের আগমনে।

“দুঃখিত, জমিদার বাবু অনুমতি ব্যতীত প্রবেশের জন্য। খুব জরুরি কথার প্রয়োজন।”

যুবক জ্ঞাত তার ভৃত্যের আচারণ সম্পর্কে। তাই বিনা কোনো শর্তেই চোখের ইশারায় তাকে কাছে ডাকে।

মিনার কানে কানে ফিসফিসিয়ে জানায়,
“বেগম চন্দ্রমল্লিকা এসেছেন। আপনার সাথে সাক্ষাৎ করতে চাচ্ছেন।”

“তাকে জানাও, এখন আমি ব্যস্ত। পরে কথা হবে।”

প্রস্থান করে মিনার। সে দ্বার খুলে বের হওয়ার মুহূর্তে শাহাজাদি মেহনূর সাক্ষাৎকার দিচ্ছিল। যামিনীর শ্রবণগত হয় সেই কণ্ঠ।

সে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকায়। মিনার বের হয়ে তাকে তার মনিবের বচন জানায়।

যামিনী কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায় না। নত চোখে কঠোর কণ্ঠে প্রশ্ন করে,
“অভ্যন্তরে কি শাহাজাদি মেহনূর আছে?”

“হ্যাঁ, কিন্ত…”

“চুপ করো। আমি আর কিছু শুনতে চাচ্ছি না।”

রাগে, ক্ষোভে, বেদনায় দৌড়ে পালাতে চায় সে, তবে নিজেকে সামলে কোনোরকম ছোটো ছোটো পায়ে হেঁটে নিজের কামরার দিকে যায়।

পথিমধ্যে এক দাসীর মৃদু কণ্ঠ শুনতে পায়।
“বেগম চন্দ্রমল্লিকার রাজত্বকাল সমাপ্ত হওয়ার পথে এখন তো জমিদার বাবুর ডানে বায়ে যেথায় দেখি সব স্থানেই শাহাজাদি মেহনূর।”

কামরা প্রবেশ করে শব্দ করে কেঁদে দেয় সে। তাকে কাঁদতে দেখে এগিয়ে আসে দিলরুবা।
“কী হয়েছে বেগম? শান্ত হন। মোহিনী জল নিয়ে এসো।”

জল পান করে যামিনী। দিলরুবার কাঁধে মাথা রেখে শুধায়,

“বাবু মশাই, আমাকে ভুলে গিয়েছে দিলরুবা। আমি গিয়েছিলাম তাকে মানাতে, সে জানায় আমার সাক্ষাৎ করতে পারবে না ব্যস্ততার কারণে। এই গভীর রাত্রিতে এক কামরায় একাকি বন্ধ শাহাজাদি মেহনূর ও বাবু মশাই। ভাবতেই আমার গায়ে কাটা দিচ্ছে দিলরুবা!”

মোহিনী টিপ্পনী কাটে,
“ভুল-ত্রুটি মার্জনা করবেন বেগম। ভোজনশালার অভ্যন্তরে আপনাকে প্রবেশ করতে দিলেন না। অথচ, শাহাজাদিকে সাথে নিয়ে আহার করছিলেন জমিদার বাবু।”

এবার আরও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। দিলরুবা ও মোহিনী তাকে সান্ত্বনা দিতে শুরু করে। রাত্রি পাড় হয় ক্রন্দনধ্বনির সাথে।

___

ফজরের সময়, শাহাজাদি জান্নাতুল কালো বিশালাকার চাদর প্যাঁচিয়ে যামিনী জন্মস্থান তথা গ্রামের বাজারে দাঁড়িয়ে। একটু বাদে একজন লোক আসলো।

সে নবাব বংশের হয়ে গুপ্তচর হিসেবে কাজ করে আসছে বহু বছর ধরে।

“খবর পেয়েছো কোনো তালহা? কে ঐ কন্যার পিতা? কেমন দেখতে? কোথায় গিয়েছে?”

“দুঃখিত, শাহাজাদি। আমি বেশ চেষ্টা করেও নীলকণ্ঠ দাসের মুখ থেকে একটা শব্দও বের করতে পারিনি। তার একটাই বাণী আমি কিছু জানি না।”

“অর্থের লোভ দেখাওনি? তাদের তো আমার সিংহের শাস্তি দেওয়ার পর চরম দুর্দিন কাটানোর কথা।”

“এই বিষয়টা নিয়ে আমিও দ্বিধান্বিত শাহাজাদি। তাদের যেখানে সর্বস্বান্ত হওয়ার কথা সেখানে পূর্বের তুলনায়ও স্বাচ্ছন্দ্যে থাকছে। এজন্যই অর্থের লোভ তাদের প্রবাহিত করতে পারেনি।”

ভাবনায় পড়ে যান মধ্যবয়স্ক সম্ভ্রান্ত নারীটি। এমনটা তো হওয়ার কথা নয়৷

“তালহা, তুমি নজর রাখো নীলকণ্ঠের উপর। আমার মনে হচ্ছে এখানে কোনো তো ঘাপলা আছেই।”

“যথা আজ্ঞা, বেগম।”

এবার উপহার স্বরূপ একটি অর্থ ভর্তি থলি গুপ্তচরের দিকে এগিয়ে দিয়ে নবাববাড়ির জন্য রওনা হন শাহাজাদি জান্নাতুল। তাঁর মস্তিষ্কে এখন রাজ্যের ভাবনার ভার।

আড়াল হতে কেউ বেরিয়ে আসে তাকে বের হতে দেখে। এতোটা সময় তার উপরই নজর রাখছিল। যদিও কথোপকথন শ্রবণ করতে পারেনি।

ব্যক্তিটি এবার তাকে নিয়োগকারী মনিবকে জানানো কাজে অগ্রসর হওয়ার পরিকল্পনা করে। তা বাস্তবায়নেই স্থান ত্যাগ করে সে।

___

আঁধার আকাশের বুক চিড়ে ধীরে ধীরে সূর্যের উদয় ঘটছে। আলোকরশ্মি ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। যামিনী তা দর্শন করছে।

তার চোখে এই মুহূর্ত না ঠাঁই পেয়েছে অশ্রু, না স্থান পেয়েছে তার হৃদয়ের কোনো বেদনা। বরং, তীব্র এক নেশা নিজের ভালোবাসা ও নিজের ক্ষমতাকে ফিরে পাওয়ার।

“বেগম, আপনার জন্য বিশেষ জড়িবুটি সমৃদ্ধ তৈল নিয়ে এসেছি। এই তৈল দিয়ে গা মালিশ করে দিলে আপনার সকল দুঃশ্চিন্তা ও ক্লান্তি নেমে যাবে। সতেজ ভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে পারবেন।”

দিলরুবার কথায় সায় জানায় রমণী। বক্ষে ভর দিয়ে পালঙ্কে শায়িত হয়।

“শাহাজাদি মেহনূর, তোমার থেকে সব যদি পুনরায় ছিনিয়ে নিয়ে বিদার না করেছি তবে আমিও বেগম চন্দ্রমল্লিকা। আমি এই মহলের বেগম, সারা দুনিয়ার নিকটও আমারই হওয়া উচিত।

এমন ব্যবস্থা করব যে জমিদার বাবু চাইতে হোক বা না চাইতে হোক আমারই থাকবে। বিশেষ করে আমার রাজত্বকাল এতো দ্রুতো তো সমাপ্ত হচ্ছে নআ।”

যামিনী আপন মনেই বাক্যগুলো একে একে উচ্চারণ করে। তার চোখে-মুখে তীব্র ক্ষমতার উদ্দেশ্যে তাড়না দেখতে পাওয়া যায়।

কী একটা ভেবেই যেন সে উপদেশ দেয়,
“আমার মতে সবকিছু পুনরায় পূর্বের মতো করতে শহুরে বাবুদের জানাতে হবে বেগম চন্দ্রমল্লিকাই জমিদার বাবুর স্ত্রী। শাহাজাদি মেহনূর নয়।”

“কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব? বেগম চন্দ্রমল্লিকা যদি তাদের যেয়ে জানায় তবে তো ধ্বংস নেমে আসবে তার উপর, যা বর্ষণ করবে স্বয়ং জমিদার বাবু। তবে হ্যাঁ, করতে হলে এমন ভাবে করতে হবে যেন সাপও মরে লাঠিও না ভাঙে।”

ত্রুটি বুঝতে পারে দাঁত দিয়ে জিভ কাটে দিলরুবা। মোহিনীর কথায় সায় জানায় সে। রোহিণী ব্যতিক্রমধর্মী মতামত ব্যক্ত করে।

“কিন্তু আমার মনে হয় জমিদার বাবু যেহেতু না করেছেন, তবে এমন কিছু করা বা এদিকে এগিয়ে যাওয়া আর ঠিক হবে না। খুব বড়োও ক্ষতিও তো করা হয়ে যাতে পারে বেগমের দ্বারা অজান্তেই।”

যামিনী নিঃশ্চুপ হয়ে গভীর ভাবনায় ডুবে। সে কিছু শ্রবণ করলো কি না বোধগম্য হলো না। আর তারাও আর ঘাটালো না।

___

একজন কালো পোশাকধারী এক ব্যক্তি রহমতপুর গ্রামে যাওয়ার পথে এক ঝোপের মধ্যে আড়াল হয়ে বসলেন। বারবার হাতে হিসাব করে দেখছেন কতটা বাজে। হয়তো অপেক্ষা করছেন কারো।

কয়েক মিনিট পরে অন্য একজন পুরুষ আসলো। সেও ঝোপঝাড়ের আড়ালে যেয়ে বসলো।

“তোমাকে যে কাজ দিয়েছি তার কী খবর? তোমাকে কিন্তু কাজটি অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে যথাসম্ভব সঠিকভাবে সম্পাদন করতে হবে।”

“ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ আপনার সম্মুখে কখনও লজ্জিত না রাখুক।”

“আমিন। তবে নীলকণ্ঠ দাস ও শতরূপা দাসের কী অবস্থা? তারা মুখ বন্ধ রেখেছে তো।”

“আপাতত তো রেখেছে। তবে জানি না কতোদিন এভাবে পারবো বেগম চন্দ্রমল্লিকার সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়া হতে তাদের বিরত রাখতে পারব। কারণ শাহাজাদি জান্নাতুল যেভাবে গামছা বেঁধে মাঠে নেমেছেন, আমার পরাজিত হওয়ার আশঙ্কাই অধিক।”

“খবরদার! এ কথা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করবা না। এতোগুলো অর্থ তোমার পিছনে খরচ করছি আমার স্বার্থসিদ্ধির জন্য। তা যদি না হয়, তবে তোমাকে হত্যা করার ব্যবস্থা করতেও আমার হস্তখানা কম্পিত হবে না।”

“মার্জনা করবেন বেগম। আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে যাব আপনাকে।”

“হু, প্রয়োজনে প্রতি মাসে আরও অধিক অর্থ দিয়ে কিনে রাখো নীলকণ্ঠ দাস ও তার পরিবারকে। তবে কেউ যেন না জানতে পারে অস্তিত্বের সত্যতা সম্পর্কে।”

“যথা আজ্ঞা বেগম।”

হাতে কিছু অর্থ ধরিয়ে স্থান ত্যাগ করে ব্যক্তিটি। নবাব বাড়ির দ্বারের সামনে আসতেই দোয়ার খুলে দেয় প্রহরী। সেই সাথে করে এক প্রশ্ন….

চলবে…