চলো রোদ্দুরে পর্ব-৩০+৩১

0
664

#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_30

‘ বিচ্ছেদ! যাঁদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক ই নেই তাঁদের মাঝে বিচ্ছেদ কি করে হয়? ‘

ছেলেটা আপন মনে এমন প্রশ্ন করে যাচ্ছে। ফেসবুক নামক সোশ্যাল মিডিয়া যেন আজ বিচ্ছেদের কারখানা। যেখানে প্রেম হয় দ্রুত, সাথে বিচ্ছেদ ও হয় দ্রুত। তবে একটা কথা বেশ ভাবাচ্ছে ওর সাথে তো ভোর এর মনের কোনো সম্পর্ক নেই। আছে কি?
উহু নেই। তবে ভোর এর সাথে ওর বিচ্ছেদ কি করে হয়। এটা তো সম্ভব নয়। আকাশ কুসুম কল্পনা কখনো বাস্তব হতে পারে।
ভাবনার মাঝে ডোর বেল বেজে উঠলো। ছেলেটা ডোর খুলে দেখতে পেল এক সুন্দরী স্প্যানিশ নারী। কোকো বলল
_হ্যালো ইফতিহার রাদ।

_হ্যালো কোকো। প্লিজ কাম।

_ইয়াহ।

রুমে প্রবেশ করলো কোকো। দেখতে তেইশ চব্বিশ মনে হলে ও মেয়েটির বয়স একত্রিশ বছর। যাঁর দরুন আনমনেই হাসলো রাদ। বিদেশিনী দের বয়স ধরা বড্ড নিষ্করুণ।কোকো জানালো সে রাদ এর সমস্ত দায়িত্বে রয়েছে। যে কোনো সমস্যা যেন ওকে জানানো হয়। কোকো কে কফির অফার করলো রাদ। কোকো স্পষ্ট স্প্যানিশ ভাষা তে বলল
_অন্য একদিন।

স্প্যানিশ ভাষা জানা নেই রাদের তাই ভ্রু কুঞ্চিত করে বলল
_স্যরি? আমি বুঝতে পারি নি।

_উফফ আম স্যরি। আসলে আমি ভুলে গিয়েছিলাম তুমি স্প্যানিশ ভাষা জানো না।

হেসে উঠলো রাদ। টুকটাক কিছু কথা হলো দুজনের। কোকো বয়সে ছয় বছরের বড় হলে ও ফ্রেন্ডলি। মনে হচ্ছে ওরা একই ক্লাসের স্টুডেন্ট।

কোকো চলে গেল। বিদীর্ণ মন নিয়ে ফোন টা হাতে নিলো রাদ। বেশ অনেক গুলো ঘন্টা পার হয়ে গেছে লন্ডনের মাটি তে। তবে কারো সাথেই কথা হয় নি। ইচ্ছাকৃত ভাবেই কথা বলে নি ওহ। কেন যেন অশান্ত মন টা শান্ত হচ্ছে না।

কনফারেন্স কলে যোগ হলো সাত জন। সকলের চোখে মুখে বিস্ময়। রাদ কে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে। ছেলে টা শুধুই হ্যাঁ না করছে। মন ভালো না থাকলে কিছু ভালো লাগে?
সুপ্তি বলল
_কি রে কথা বলিস না কেন?

_বলছি তো।

_আশ্চর্য কেমন কথা বলিস দেখতেই তো পাচ্ছি। ভুলে গেলি আমাদের?

হালকা হাসলো রাদ। চঞ্চল মন টা কে কখনোই দমাতে পারে না সুপ্তি। মাঝে মাঝে রাগ হয় রাদের। মেয়েটা এমন কেন?
_এই রাদ?

দ্বীপ এর কন্ঠস্বর শুনেই বলল রাদ
_পরে কথা হবে। এখন আমি রাখছি কেমন?

কথা গুলো শেষ হওয়ার ফুসরত পেল না তাঁর পূর্বেই ল্যাপটপ অফ করে দিলো রাদ। শ্বাস প্রশ্বাস প্রচন্ড ভার হয়ে আছে। এ আবহাওয়া যেন সহ্য হচ্ছে না ওর। ভেতর টা কেমন জ্বালা পোড়া করছে। এ জীবনে এমন ব্যথা কখনো অনুভব হয় নি। এ দেশে থাকা সম্ভব নয়। পারবে না থাকতে।
.
সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে ভোর। মনস্থির করেছে নিজেকে আইনজীবী হিসেবে গড়ে তোলার। পড়াশোনায় বেশ অনেক টা মনোযোগী হলো মেয়েটা। সামনে যে এইচ এস সি পরীক্ষা। সেই হিসেবে প্রত্যেক মুহুর্ত অতি গুরুত্বপূর্ণ।

রিসিপশন থেকে কল এসেছে কেউ একজন ওর সাথে দেখা করতে চায়। তাই নিজেকে ঠিক ঠাক করে নিচে এলো মেয়ে টা। রনিত কে দেখে আলতো হাসলো। কাছে এসে বলল
_কেমন আছেন ভাইয়া?

_ভালো। তুমি কেমন আছো?

_হ্যাঁ ঠিক ঠাক।

ভোরের গলা থেকে যেন কথা বের হয় না। রনিতের সাথে গার্ডেন এ আসলো। দীর্ঘশ্বাস উপনীত করে রনিত বলল
_সোশ্যাল মিডিয়া কখনো পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটায় না। ব্যাঘাত ঘটায় আমাদের মন মস্তিষ্ক। সমস্ত কিছুর ব্যবহার তো আমাদের হাতে তাই না?

_আসলে ভাইয়া।

_সেসব বাদ দাও। সিম কার্ড টা ও খুলে রেখেছো? এই যে তুমি কি করছো না করছো এসব আমি জানবো কি করে? তাছাড়া রাদ

ঘন চোখের পাপড়ি গুলো কেমন নড়তে লাগলো। সামান্য পানির আভাস ও রয়েছে। উদ্বিগ্ন কন্ঠে ভোর বলল
_ডাক্তার সাহেব কি?

_তেমন কিছু নয়। ওহ চিন্তিত খুব, আমি নিশ্চয়ই রাত এক টা দুটো তে হোস্টলে হুটহাট চলে আসতে পারবো না? তাই মন মড়া করে থেকো না বোন।

রনিতের কথায় লজ্জা পেলো ভোর। রাদ হুটহাট চলে আসে এসব ও জানে রনিত?
ভোরের মাথায় হাত বুলিয়ে রনিত বলল
_নিয়মিত খবর নিবো তোমার। সিম কার্ড টা অন করো।

ফোন নিয়ে বিপাকে পরলো ভোর। রাদ কে কি কল করবে? রনিত তো নাম্বার দিয়ে গেল। কল করার জন্যই নিশ্চয়ই নাম্বার দিয়েছে? কেমন দোটানায় ভুগছে মেয়েটা। ভালো লাগছে না কিছুই। অবশেষে স্থির করলো কল করবেই। বিদেশী নাম্বার টা ডায়াল করলো তবে রিসিভ হলো না। দ্বিতীয় বার কল করে একবার রিং হতেই কল কেঁটে দিলো ওহ। ফোন সুইচ অফ করবে তখনি কল ব্যাক হলো। কেন যেন ফোন সুইচ অফ করতে পারলো না মেয়েটা। রিসিভ করে কানে গুঁজে রাখলো। কয়েক মুহুর্ত এভাবেই পার হয়ে গেল। কেউ ই কথা বলছে না। শুধু ঘন ঘন নিশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। মোলায়েম গলায় রাদ শুধালো
_কেমন আছো ভোর?

_ভালো।

_মন খারাপ?

_না।

_তো কি করছিলে?

_এই তো পড়াশোনা করছিলাম।

নীরবতা বিরাজ করছে। রাদ ভাঙা গলায় বলল
_আমাকে মিস করো?

_কিছু টা করি। তবে সব ঠিক ঠাক ভাবেই চলছে।

ফোঁস করে দম ফেললো রাদ। ভোর হাসি মাখা স্বরে বলল
_লন্ডন খুব সুন্দর তাই না? আপনার ভালো লাগার ই কথা। আমাকে নিয়ে চিন্তিত হবেন না। আমি ঠিক আছি। আমি বরং ভালোই আছি।

_হুম। আচ্ছা শোনো

_হ্যাঁ বলুন।

কয়েক টা শুকনো ঢোক গিললো রাদ।বলল
_ সত্যিই কোনো অসুবিধা হচ্ছে না?

_না। অসুবিধা হবে কেন? আমি তো আগের মতোই আছি।

ব্যথিত হলো রাদ। ভোর এর সাথে টুকটাক কথা বলে বুঝতে পারলো মেয়েটার তেমন কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। কাঁধের ব্যাগ টা ভালো করে পরে নিলো। হাতে থাকা প্লেন এর টিকেট টা লন্ডনের এয়ারপোর্ট এই ছিঁড়ে ফেলে দিলো। ভেবেছিলো আজ ই দেশে ফিরে যাবে। কিন্তু সব কিছুই তো ঠিক রয়েছে। তাহলে ওহ কেন দেশে যাবে?
.

আজ এক সপ্তাহ হলো একি হসপিটালে জব করছে সুপ্তি আর নাহিদ। এর মাঝে হাজার বার ঝগড়া করেছে দুজনে।প্রতি টা কাজেই ঝগড়া। এমন কি অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে ও ঝগড়া করেছে দুজনে। হসপিটালে আসা লোকজন হা হয়ে তাকিয়ে আছে। বোধহয় ডাক্তার দের তুই তুই করে ঝগড়া করতে কখনো দেখে নি তাঁরা। নাহিদ এর ধ্যান ফিরতেই নাহিদ বলল
_চুপ। এটা হসপিটাল, তোর বাবার টাকার হোটেল না।

_থাপ্পড় চিনিস।

_সুপ্তি বাড়াবাড়ি করবি না তুই।

_সামনে থেকে যাহ।

নাহিদের গাঁয়ে থাক্কা মেরে চলে গেল সুপ্তি। ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে নাহিদ ওহ পিছু ছুটলো। ক্যান্টিনে এসে দুজনেই এক টেবিলে বসলো। রাগে গজগজ করতে করতে খাবার শেষ করলো দুজনে। হাই তুলে নাহিদ বলল
_বিল দিয়ে দে সুপ্তি।

_তোর টাকা নাই?

_না আমি গরিব মানুষ।

_আমি কি তোর পেছনে আমার সমস্ত বেতন খরচ করবো?

_হুহ করবি।

_পারবো না। আর তোর বিল তুই দিবি। এমন কি আমার টা ও দিয়ে দিবি।

_বয়ে গেছে আমার।

গাঁ ছাড়া ভাব নিয়ে বলল নাহিদ। দাঁতে দাঁত চেপে কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে রইলো সুপ্তি। হুট করেই নাহিদের বুক পকেট থেকে কার্ড নিয়ে গেল। হতচকিয়ে উঠলো ছেলেটা। সুপ্তির থেকে কার্ড টা নেওয়ার জন্য পাগল প্রায় অবস্থা। পুরো ক্যান্টিনে ছুটতে লাগলো দুজনে। ট্রেরেস এ এসে মেয়েটার নাগাল পেল। তবে সুপ্তি কার্ড দিতে নারাজ। মুখের ভঙ্গিমা বদল ঘটেছে নাহিদের। বলল
_কার্ড টা ফেরত দে সুপ্তি।

_দিবো না।

_ভালোই ভালোই দিয়ে দে বলছি।

_বললাম তো ,দিবো না।

_সুপ্তি।

নাহিদের ধমক এতো টা জোরালো ছিলো যে সুপ্তির হাত থেকে কার্ড টা পরে গেল। সেটা তুলে নিয়ে নাহিদ দেখতে পেলো কাঁদছে সুপ্তি। পুরো যা তা অবস্থা। দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব ভয় পেয়েছে। নিজের ভুল বুঝতে পারে নাহিদ। তাই শান্ত সুরে বলল
_রাগ করিস না আমি তো

কথা শেষ করার পূর্বেই চলে গেল সুপ্তি। যাওয়ার আগে দুজনের বিল পরিশোধ করে দিলো। নাহিদের এমন ব্যবহারে প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছে ওহ।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

চলবে

#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_31

সময় পেরিয়ে গেল সাড়ে চার বছর। কিছু দিন হলো গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছে ভোর। আপাততো দেশের উচ্চপদস্থ একজন আইনজীবীর সহকারী হিসেবে জয়েন করেছে ওহ। মেয়েটা নিজ দায়িত্বের প্রতি বেশ নিষ্ঠা।সেই কারনেই আইন নিয়ে গ্রাজুয়েশন পাস করার সঙ্গে সঙ্গে এমন এক অফার পেল। এই কয়েক টা বছর ছিলো ব্যস্ততার কারখানা। প্রচুর ব্যস্ত সময় পার করেছে। এই যে কিছু দিন হলো রনিত এর ছেলে হয়েছে দেখতে যাওয়ার ও ফুসরত পায় নি। আজ বেশ গুছিয়ে যাচ্ছে ওহ। বাচ্চা টার নরম হাতের ছোঁয়া পাওয়ার জন্য মন টা কেমন যেন করছে। গাড়ি তে হেলান দিয়ে চার পাশ টা দেখে চলেছে ভোর। মৃদু সমীরণ ওর চোখে তন্দ্রা লাগিয়ে দিলো।বারং বার ঝিমুনি হচ্ছে। তাই বলল
_ড্রাইভার কাকা গাড়ি টা একটু সাইট করুন।

চোখে মুখে পানির ছিটে দিয়ে আবারো গাড়ি তে এসে বসলো। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে নির্লিপ্ত তাকিয়ে রইলো রাদের দিকে। ছেলেটার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ থাকলে ও মনের দুরুত্ব যেন অনেক টা। কি অদ্ভুত লাগে মানুষ দূরে চলে গেলে পর হয়ে যায় বুঝি?

_ম্যাডাম চলে এসেছি।

ড্রাইভারের কন্ঠে ঘোর ভাঙলো মেয়েটির। উত্তর করার জন্য কয়েক সেকেন্ড সময় নিলো। মৃদু কন্ঠে বলল
_জি।

হাতে কিছু জিনিস পত্র নিয়ে চুপিসারে ঘরে প্রবেশ করলো ভোর। বাসা টা কেমন নির্জন নির্জন লাগছে। কেউ নেই যেন। অবশ্য কেউ না থাকলে কাজের মেয়েটা নিশ্চয়ই কিছু বলতো। ধীর পায়ে রনিতের ঘরে যেতেই পা থমকে গেল। বাচ্চা ছেলেটির সাথে খেলা করছে রাদ।অশ্রুগন্থির বিরুদ্ধে লড়ে ও কোনো কাজ হলো না। বেহায়া চোখ থেকে অশ্রু বর্ষণ হতে লাগলো।বাচ্চা টি কে কোলে তুলে এগিয়ে আসলো রাদ। ভোর কে দেখে জোড়ালো কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না। শুধু একটু করে হাসলো। বাচ্চা টি কে নিয়ে ট্রেরেস এ দিয়ে আসলো রনিত আর ইনায়ার কাছে। ভোর তখনো রনিতের রুমেই ঠায় দাঁড়িয়ে। ওহ যেন ভাষাহীন নির্বিকার কোনো মানবী। পেছন থেকে আলতো করে মেয়েটার হাত স্পর্শ করলো রাদ।ডান হাতের তালু তে চোখের পানি মুছে নিলো ভোর। মেয়েটার হাত নাড়াচাড়া করে রাদ বলল
_হাত কেঁটে ফেলেছেন আপনি। বলতেই হয় নিজের প্রতি বড্ড যত্নশীল।

আপনি সম্বোধনে কিছু টা বিব্রত হলো মেয়েটা। তাই কোনোউত্তর করছে না । রাদ এর চোখ যেন হাসে। স্বযত্নে মেয়েটার মুখে স্পর্শ করে বলল
_না জানিয়ে চলে এসেছি তাই কথা বলছো না? কাল খুব বকে ছিলাম এর জন্যই। ভেবেছিলাম সারপ্রাইজ দিবো।

বাক্য গুলো এতো টাই মোলায়েম স্বরে বলল যে হেসে ফেললো ভোর। সাথে চোখে রয়েছে হালকা পানির আভাস। ক্লান্তির শ্বাস ফেলে রাদ বলল
_খবর নিয়ে জানতে পারলাম তুমি রনিতের বাসাতেই আসবে তাই আমি ও চলে এলাম এখানে। মম ড্যাড এর সাথে ও দেখা করি নি। প্রচুর অভিমান হয়েছে আমার। সাড়ে চার বছর সবাই চোখের পলকে কাঁটিয়ে দিলো। একটি বার ও মন খারাপ করলো না কেউ। এমন কি দিন রাত ডাক্তার সাহেব বলা মেয়েটি ও আমাকে মিস করে নি। এটা মানা যায়?

রাদ এর নাকি সুরে কথা গুলো শুনে কি বলবে ঠিক ঠাওর করতে পারছে না ভোর। ছেলেটা উনত্রিশ এ পদার্পণ করেছে বোঝায় যায় না। কতো টা শুভ্র আর সুন্দর মানুষ টি। এতোক্ষন পর বোধহয় কথা বলার প্রয়োজন করলো মেয়েটি। হাসি মাখা স্বরে বলল
_আমি মিস করেছি।

_মিথ্যে বলবে না একদম। জানো না মিথ্যে বলা পছন্দ করি না আমি।

_মিথ্যে বলছি না আমি। সত্যিই খুব মিস করেছি আপনাকে।

_আচ্ছা যাও মেনে নিলাম। তবে এই সাড়ে চার বছরে কখনো বলেছো মিস করো আমায়?

_বললে কি হতো?

_ইউ নো হোয়াট আমি এয়ারপোর্ট এ টিকিট হাতে দাঁড়িয়ে ছিলাম।যে কেউ একজন বলবে আমাকে ছাড়া ভালো লাগছে না আর আমি সেই ছুতোয় চলে আসবো। বাট না তুমি আর না মম ড্যাড কেউ আমাকে এই বাহনা করার সুযোগ দিলে না। সেদিন ই ঠিক করেছিলাম কাউ কে না বলেই দেশে আসবো।

মাথা টা নিচু করে নিলো ভোর। অদ্ভুত ভালো লাগায় শরীর কেঁপে উঠছে বার বার। রাদ যেন এক ঝাঁক রোদ্দুর হয়ে ফিরেছে ওর জীবনে। আঁধারে ঢেকে থাকা চাঁদ টা ও আজ রোদ্দুর মাখতে ব্যস্ত। ভোর কে লজ্জা পেতে দেখে রাদ বলল
_এই মেয়ে লজ্জা পাচ্ছো কেন?

_লজ্জা কই না তো। আমি কেন লজ্জা পাবো। আমি তো

বার বার তুতলে যাচ্ছে ভোর। যাঁর দরুন মুখ টিপে হাসছে রাদ। ভোর এবার আরো লজ্জা পেল। চোখ বন্ধ করে দাঁত দিয়ে জ্বিভ কাটলো। আশে পাশে একবার তাকিয়ে সামান্য ঝুকলো রাদ। বলল
_একটা গিফ্ট এনেছি তোমার জন্য।

_গিফ্ট?

_হু। পরিয়ে দেই?

মাথা ঝাঁকালো ভোর। মেয়েটার চোখের পাতায় হাত বুলিয়ে রাদ বলল
_ক্লোজ ইউর আই।

মেয়েটা চোখ বন্ধ করলো। বুক পকেট থেকে একজোড়া ইয়ারিং বের করলো রাদ। বড্ড সুন্দর ইয়ারিং জোড়া। রাদ আজ ও লক্ষ্য করেছে মেয়েটার কান খালি। কেন যে ইয়ারিং পরতে চায় না কে জানে। ছোট্ট ইয়ারিং জোড়া ভোরের কানে পরিয়ে দিলো রাদ। সামান্য কেঁপে উঠলো মেয়েটি। হাত দিয়ে ইয়ারিং খুলতে চাইলেই রাদ বাঁধা দিয়ে বলল
_উহহু এটা খুলবে না। অলোয়েজ পরে থাকবে। কান খালি রাখলে মনে হয় পশ্চিমা আকাশে ঘন আঁধার। ভোর হয়ে ও যেন কোনো রোদ্দুর নেই।

মৃদু প্রসারিত হলো মেয়েটির ঠোঁট। রাদের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে রইলো মেয়ে টি। ছেলেটা এতো সুন্দর কেন?

_উহহুমম উহহুম।

হালকা কাশির শব্দ কানে আসতেই লজ্জা পেয়ে পেছন ঘুরে নিলো ভোর। ইনায়া আর রনিত ঘরে প্রবেশ করে রাদের দিকে তাকালো। রাদ নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল
_কি?

_আমাদের গিফ্ট কোথায়?

মজা করে রাদ বলল
_তোদের জন্য কোনো গিফ্ট নেই।

_এটা ঠিক না রাদ। আমি তোর একমাত্র জিগার কা দোস্ত আর তুই কি না।

রনিতের পাংশুটে ভাব দেখে হো হো করে হেসে উঠলো সকলেই। কে বলবে ছেলে টা এক ছেলের বাবা হয়ে গেছে।
.

রামিসার দিকে তাকানো দুষ্কর হয়ে পরেছে। রাদ সত্যিই যেন বড় সড় অন্যায় করেছে আজ। এ দিকে রাদ নিজে ও অভিমান নামক খাঁচা তে বন্দী। মাঝে ইফতিহার পরেছেন মহা ঝামেলায়। একবার স্ত্রীর দিকে তাকাচ্ছেন তো এক বার ছেলের দিকে। দুজন দু দিকে মুখ ফিরিয়ে আছেন। যেন একে অপরের চরম শত্রু। রগ রগা কন্ঠে ইফতিহার বললেন
_তোমরা কি শুরু করেছো বলো তো?

_কিছু নয় ড্যাড। আমি পারবো না কারো রাগ ভাঙাতে।

_শোনো তোমার ছেলে কে বলে দেও আমি কারো রাগ ভাঙানোর জন্য বসে নেই।

_আজব তো। কি শুরু করলে তোমরা?

এবার ঝমঝমে কেঁদে উঠলেন রামিসা।মহা বিপাকে রয়েছেন ইফতিহার। স্ত্রীর পাশে বসলেন তিনি। এ দিকে রাদ নিজে ও ভালোবাসার রোদ্দুরে আইক্রিম এর মতো গলে গেল। অভিমানী কন্ঠে বলল
_ সাড়ে চার বছর কি কম সময়। আমার কষ্ট হয় নি? আমাকে দূরে ঠেলে দিয়ে সবাই তো ভালোই ছিলে। দূর দেশে আমি একা একা মরেছি উত্তাপে। চারপাশে কতো শত মানুষ। অথচ কেউ আমার আপন নয়।তোমাদের কথাই ভেবেছি সারাক্ষন। অভিমানের রোদ্দুরে পুরেছি খুব।এখন ইচ্ছে করে না বলে এসেছি এটা কি আমার অন্যায় হলো?

_ ছেলে শুধু দূরত্ব টাই দেখলো। মায়ের ভালোবাসা টা দেখবে না? আমি সাড়ে চার বছর ধরে নিজ হাতে রান্না খাওয়াতে পারি নি। বুক টা জ্বলে যাচ্ছে আমার। আর ছেলে না বলে এসেছে নেই কোনো আয়োজন। আমার কষ্ট হয় না তাই না?

ইফতিহার মাথা চেপে ধরলেন। মা ছেলের অভিযোগ চলতে থাকলো কিছুক্ষন। আজব এক গল্পের দুনিয়া থেকে ইফতিহার উঠে গেলেন। সামান্য চেঁচিয়ে দারুন অঙ্গ ভঙ্গি করে বললেন
_তোমাদের শুধু কষ্ট হয় আর আমি বাবা বলে কোনো কষ্ট নেই আমার?

ইফতিহারের মুখের ভঙ্গিমা দেখে রাদ আর রামিসা দুজনেই খলবিলিয়ে হেসে উঠলেন। ছুটে গিয়ে ইফতিহার কে জড়িয়ে ধরলো রাদ। বলল
_ইউ আর দ্যা বেস্ট।

_আর আমি?

রামিসার দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার ইফতিহারের দিকে তাকালো রাদ। দুজন কে পরখ করে নিয়ে আবার ছুটলো রামিসার দিকে। রামিসা কে জড়িয়ে ধরতেই রামিসা বলল
_তোমাকে ছেড়ে কতো কষ্টে ছিলাম তুমি জানো বেটা?

_স্যরি মম। আসলে আমার ওহ তো অভিমান হয় তাই না?

_অভিমান ভাঙানোর জন্য এবার একটা বউ নিয়ে আসবো ঘরে।

_আচ্ছা নিয়ে এসো। তবে সেই বউ কে বলে দিবে আমার মম ড্যাড এর ভালোবাসা শুধু মাত্র আমার জন্য।

রাদের কথায় হেসে উঠলেন ইফতিহার,রামিসা। আবারো পুরো বাড়ি টা সেজে উঠলো ভালোবাসায়। এক সুন্দর পরিবারের খাঁটি ভালোবাসার রোদ্দুরে যেন মুখরিত চারপাশ।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

চলবে