চারুলতা তোমার জন্য পর্ব-০৪

0
14

#চারুলতা_তোমার_জন্য
#৪র্থ_পর্ব

শ্রাবণের মনে হচ্ছে সে স্বপ্ন দেখছে। তার খাটের পাশে তার চারুলতা দুহাতের উপর মাথা নুয়ে চোখ বুজে আছে। চাঁদের অকৃত্রিম আলো তার শুভ্র বদনে খেলা করছে। লুকোচুরি খেলা। চৈত্রের উষ্ণ হাওয়ায় তার সামনের ছোট চুলগুলো আদুরে দোল খাচ্ছে। এমন স্বপ্ন সে প্রায়শ দেখে। কল্পনার জগতে প্রায়শ হারিয়ে যায় চারুলতার বিভ্রমে। এই বিশাল বাড়িতে একা একা থাকতে থাকতে নিঃসঙ্গ মস্তিষ্ক নানাবিধ বিভ্রম খেলা খেলে। শ্রাবণের সাথেও সেটাই হয়। জোরের ঘোরেও তার মস্তিষ্ক তার সাথে এই ভ্রমখেলা খেলে মজা নিচ্ছে কারণ চারুলতার এখানে থাকার কথা নয়। ভ্রম জেনেও শ্রাবণের দৃষ্টি কোমল হল। অচল, অবিচল নেশাধরা দৃষ্টি। আটকে রইলো শুভ্র, শান্ত মুখশ্রীতে। আলো আঁধারের মায়াখেলায় তাকে অসম্ভব মায়াবতী লাগছে। মেয়েটি অত্যন্ত সুন্দর বলেই কি এই ঘোর নাকি কেবল হৃদয়ের কোনো ছলনা জানা নেই। তবে অক্লান্তভাবে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে সে।

তাদের প্রথম মোলাকাত জঘন্য ছিল। শ্রাবণ তালুকদারের গায়ে হাত তুলেছিলো মেয়েটি। ছেলেবেলা থেকে খানিকটা দাম্ভিক, আত্মপ্রেমী মানুষ শ্রাবণ। বুঝ হবার পর থেকেই নিজেকে ব্যতীত কাউকে প্রাধান্য দেবার ইচ্ছে হয় নি। শ্রাবণের ধারণা এই পৃথিবী তার গুরত্বের যোগ্য নয়। একাকীত্ব আর নিঃসঙ্গতা ছাড়া তো এই পৃথিবী তাকে কিছুই দেয় নি। ফলে স্বভাবত চারুর প্রতি তীব্র ঘৃণায় হৃদয় টলমল করার কথা। কিন্তু ব্যতিক্রম হলো। নব বসন্তের মত মেয়েটির বিচরণ তার হৃদগলিতে ভিন্নতা আনলো। মোহ-ঘোরে আচ্ছাদিত হলো সে। প্রথমে মনের এমন উন্মাদনাকে খুব একটা আমলে আনলো না শ্রাবণ। ভাবলো বহুদিন একা থাকতে থাকতে তার মন একটি খেলায় মত্ত হয়েছে। সে চারুলতাকে ঘিরে একটা খেলার আবিষ্কার করেছে। সেই খেলায় চারুলতাকে নানাভাবে উত্যক্ত করবে সে। রাগী চারুলতা মনের সেই খেলায় ধরাশায়ী হবে। এতেই আনন্দ। নীরস জীবনে একটু আনন্দ পাওয়া খারাপ কিছু নয় নিশ্চয়ই। এতে করে মেয়েটিকে জব্দও করা হবে। সে একটা সময় নিজের ভুলের জন্য অনুতপ্ত হবে। চারুলতা বুঝবে সে ভুল মানুষের সাথে ঝামেলা করেছে। মাঝে মাঝে শ্রাবণ তাকে আলতো করে ছাড় দিবে। কিন্তু সেই ছাড়টি হবে মেপে মেপে।

কিন্তু শ্রাবণের খেলাটা দীর্ঘস্থায়ী হল না। ধীরে ধীরে চারুলতার মোহে বিভোর হলো সে। মেয়েটির উত্তেজিত মুখশ্রী তাকে আনন্দের সাথে সাথে কৌতুহলী করে তুললো। তার চোখের বিষন্নতা তাকে বিচলিত করতে লাগলো। মাঝে মাঝে মেয়েটি যখন গোলগোল চোখে অসীম বিস্ময় নিয়ে তার কথার তুবড়ি ছোটায় শ্রাবণের বিরক্তি আসলেও সেটা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। বরং মেয়েটি চুপ করে থাকলেই তার মনে হয় কিছু কমতি আছে। অদ্ভুত এই টান। শ্রাবণ নারী সৌন্দর্য্যে আকৃষ্ট হবার ছেলে নয়। তবুও চারুলতা তাকে আকৃষ্ট করলো। তাকে দেখলেই মনে হয় ও আমার, কেবল আমার চারুলতা। তার নিরস জীবনে এই মেয়েটি থাকলে পৃথিবীর কি খুব ক্ষতি হবে? এই ভুবন শ্রাবণকে কিছুই দেয় নি। অন্তত চারুলতা তার থাকুক।

চারুর ঘুম ভাঙলো। বসে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়াল নেই। একা একা বিনা কথা বা কাজে কি বসে থাকা যায়? অন্তত চারু তো পারে না। চোখ মেলতেই দেখলো শ্রাবণ স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। চারু প্রায় সাথে সাথে শুধালো,
“স্যার, এখন কেমন লাগছে?”

কথাটা শুনতেই মস্তিষ্ক জাগ্রত হলো। নড়েচড়ে উঠলো শ্রাবণ। চারুলতা সত্যি এখানে? সে বিমূঢ় চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ। নিজেকে ভালো করে দেখলো সে। হাতে ক্যানোলা লাগানো। ক্যানোলার মাধ্যমে তাকে নাপা দেওয়া হচ্ছিলো। নাপার বোতলটা শেষ হয়ে গেছে। ফলে ক্যানোলা থেকে রক্ত উঠছে। নিজের পরিস্থিতি বোঝার জন্য ভাঙ্গা অস্পষ্ট স্বরে শুধালো,
“আমি এখানে?”
“আপনি ভিড়মি খায়ে চিৎপটাং হয়ে গিয়েছিলেন। ভাগ্যিস সাথী খালা ছিলেন। দারোয়ান ভাইকে ডেকে তারপর দোতালা অবধি টেনে উঠতে হয়েছে। বাপরে আপনার দৈত্য শরীর টেনে আনতে আমাদের হাওয়া টাইট হয়ে গেছে। এতো ভারী শরীর কি করে বানিয়েছেন আপনি? উফফফফ! তারপর ডাক্তার এলেন। অবস্থা দেখে এখানেই ঔষধ দিলেন। আচ্ছা, আপনি এতো অসুস্থ তাও কেন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করেন নি। আপনার তো আমাদের মত লাইনে বসে সিরিয়াল দিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে ডাক্তার দেখাতে হয় না। আপনার নিজস্ব ডাক্তার। এসে দেখে যাবে। তাও এতো ঢং। শুনেন আপনার ভাগ্য ভালো আমি আপনাকে দেখতে এসেছিলাম নয়তো আপনি এতোক্ষণে টপকেই যেতেন”

শ্রাবণ তাকিয়ে রয়েছে চারুর দিকে। মেয়েটির মুখে তীব্র বিরক্তি এবং চাপা উত্তেজনা প্রকাশ পাচ্ছে। এই কথাগুলো সে জোর করে নিজের মধ্যে যেন চেপে রেখেছিলো। শ্রাবণ চুপ করে আরো কিছুক্ষণ তার কথা শুনলো। তারপর গাঢ় স্বরে বললো,
“এখন আপনি বাড়ি যেতে পারেন”

চারু একটু থমকালো। লোকটির মাঝে নূন্যতম কৃতজ্ঞতা নেই? নিঃসন্দেহে পৃথিবী শ্রেষ্ঠ অকৃতজ্ঞের মধ্যে এই লোক নাম লিখিয়ে শিরোপা জিতে নিতে পারবে। জল্লাদের সাথে সাথে লোকটি চরম অকৃতজ্ঞ। চারুও ঝাঁঝালো স্বরে বললো,
“সেটা আপনি না বললেও যেতাম। সাইড টেবিলে ঔষধ আছে, আর প্রেসক্রিপশন আছে। একটু কষ্ট করে দেখে নিবেন। আসছি”
“মিস মেহেনাজ আপনি আমার গাড়িটা নিয়ে যান”
“নো থ্যাংক্স। আমি যেতে পারবো”

প্রায় সাথে সাথেই বলে উঠলো চারু। তার একটি আত্মসম্মান আছে। জল্লাদ শ্রাবণ তালুকদার হলে সেও মেহেনাজ চারু। ধার তার ব্যক্তিত্বেও আছে। অফিসে সে তার বস হতে পারে, কিন্তু অফিসের বাহিরে চারু মুক্তমনা, শেকলহীন রমনী। শ্রাবণ উঠে বসলো। তার জ্বর এখন নেই। মাথা ঝিমঝিম করছে কিন্তু সে দূর্বল পুরুষ নয়। তাই শুয়ে থাকার মানে হয় না। স্থির চোখে তাকিয়ে বিরক্তি ভরে বললো,
“জেদ করছেন কেন মিস মেহেনাজ?”
“আমার ইচ্ছে। উঠে যখন গেছেন কিছু খেয়ে নিয়েন। সাথী খালা খাবার ফ্রিজে রেখেছেন। আসছি”

শ্রাবণের কপালে সমান্তরাল ভাঁজ কুঞ্চিত হলো। মেয়েটির জেদ তাকে অন্তত বিরক্ত করে মাঝে মাঝে। হাতের ক্যানোলা খুলে ফেললো সে। চারু উদ্বিগ্ন স্বরে শুধালো,
“করছেন কি? ক্যানোলা খুলছেন কেন? ব্লাড পরবে তো। তারপর আবার ভিড়মি খাবেন। এমনেই আপনার ব্লাড সুগার কম। দেখুন এবার ভিড়মি খেলে আপনাকে সেবা করার জন্য কেউ নেই। মানুষকে এতো জ্বালান কেনো আপনি শুনি?”
“হুসসস! কত কথা বলেন আপনি! মাথা ধরিয়ে দিচ্ছেন”
“অদ্ভুত কে বলবো না…”

চারুর কথাটা শেষ হলো না। তার আগেই শ্রাবণ তার মুখ চেপে ধরলো। কঠিন স্বরে বললো,
“আর একটাও কথা নয়। চলুন আপনাকে বাড়ি পৌছে দিচ্ছি”
“আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না”
“আমি আপনাকে অনুরোধ করছি না। দিস ইজ মাই অর্ডার”
“আমি অফিসে নেই। আপনার অর্ডার শুনতে আমি বাধ্য নই”
“আপনি চুপচাপ যাবেন, নাকি আমি আমার মতো ব্যবস্থা করবো?”

চারুর চোখ বিস্ফারিত হল। আমতা আমতা করে বললো,
“কি করবেন আপনি?”

তার কণ্ঠ কাঁপছে। শ্রাবণ একটু ঝুকলো। তাদের মধ্যকার দুরত্ব হুট করেই কমে গেলো। চারু একটু পিছিয়ে গেলো। শ্রাবণের ভারী স্বর নিচু হলো,
“আমি যা করবো আপনার ভালো লাগবে না মিস মেহেনাজ। আমার না শোনার অভ্যাস নেই। তাই ভালোই ভালোই বলছি চলুন”

চারু হতচকিত হলো। লোকটি বলে কি? জ্বরে মস্তিষ্কের নিউরণে জট লেগে গেলো নাকি। শুকনো ঢোক গিলে শুধালো,
“কি…কি করবেন আপনি?”

শ্রাবণ বাঁকা হেসে বললো,
“এখন ঘরে শুধু আমি আর আপনি, ইউ আর নট দ্যাট ডাম্ব”

শ্রাবণের ইশারা বুঝতে না পারলেও মস্তিষ্কে একসাথে অনেকগুলো চিন্তা ধাওয়া দিলো। ফলে সাথে সাথেই বলে উঠলো,
“দাঁড়িয়ে আছেন কেন চলুন”

বলেই একপ্রকার ছুটে বেরিয়ে গেলো চারু। চারুর উদ্বিগ্ন মুখখানা দেখে শ্রাবণের হাসি বিস্তৃত হলো। মেয়েটি তাকে বিনোদন দেবার সুযোগ একেবারেই হাত ছাড়া করে না।

*****

শ্রাবণ সম্পর্কে চারুর একটি অবান্তর ধারণা জন্মেছে। জল্লাদ মানুষের মত দেখতে হলেও সে মানুষ নয়। কারণ এতো অসুস্থতার পরও কেউ এতো দ্রুত সুস্থ কি করে হয়? ঠিক পরদিন থেকেই তার যান্ত্রিক জীবন শুরু হয়ে গেছে। অফিসে এসেই ভারী স্বরে শুধালো,
“মিস মেহেনাজ, আমার কফি কোথায়?”

চারু জোরপূর্বক হাসি লেপ্টে বললো,
“আনছি”

চারু ভেবেছিলো লোকটি তাকে একবার হলেও কষ মুখে বলবে,
“ধন্যবাদ”

গাড়ি করে বাড়ি অবধি পৌছে দিলো অথচ একটিবার ধন্যবাদ জানালো না। অকৃতজ্ঞ জল্লাদ। কালা, তেঁতো কফি খেতে খেতে ভেতরটাও কষমার্কা হয়ে গেছে সে। হতাশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে সুর তুললো,
“এক কাপ কালা কফি বানাই জল্লাদের জন্য। পানি দিব, কফি দিব, দুধ দিব না সামান্যও। এক কাপা কালা কফি বানাই জল্লাদের জন্য।“

কফিখানা নিয়ে যেতেই শ্রাবণ কঠিন স্বরে বললো,
“আজকের শিডিউল কি মিস মেহেনাজ? আর রিপোর্টগুলো আমাকে এখনো মেইল করা হল না কেন?”

চারু হতবাক স্বরে শুধালো,
“কোন মেইল?”
“নতুন ডিলের রিপোর্ট”
“সে তো আপনাকে আগেই মেইল করেছি আমি”
“আমার তো মেইল আসে নি”
“সেটা আমি কি জানি। আপনার মেইল, আপনার সমস্যা। আমি বাবা আমার মেইল পাঠিয়ে দিয়েছি আমার কাজ শেষ। এখন আপনি জানেন, আপনার মেইল জানে। আর গতকাল আমার অনেক ধকল গেছে আমি কোনো শিডিউল রেডি করি নি। আমি কি জানি আপনি সকাল হতেই ঢ্যাং ঢ্যাং করে চলে আসবেন। আমি ভেবেছি আজকেও ছুটি”
“আপনি কত ঘন কথা বলেন! মাই গড!”

শ্রাবণের অভিযোগে বিস্মিত হলো চারু। অবাক স্বরে শুধালো,
“আমি কখন কথা বললাম?”
“একটু আগে কফি বানানোর সময় কি গান গাচ্ছিলেন!”

জল্লাদ গান শুনে ফেলেছে? চারু অবিচলিত স্বরে বললো,
“এখন আমার একা একা গুনগুন করাতেও আপনার সমস্যা!”
“অবশ্যই। আই ওয়ান্ট পিস। এখন থেকে টানা দু ঘন্টা আপনি কোনো কথা বলবেন না। কথা বললেই আপনার স্যালারি কেটে রাখবো। সো শাট ইউর মাউথ”
“আপনি…..”
“এক হাজার টাকা মাইনাস”

রাগে গা জ্বলছে চারুর। আচ্ছা এই গরম কফিটা শ্রাবণের মুখে ছুড়লে কি খুব খারাপ কিছু হবে? সে কি একটা চান্স নিবে? চারুর কিড়মিড় দৃষ্টিকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে বললো,
“এখন মিটিংগুলো রিশিডিউল করুন। আর রিপোর্টটা আমার মেইল করুন এখনি”

চারু কোনো কথা বললো না। শব্দ করে কফি মগটা রেখেই হনহন করে বেড়িয়ে গেল। জল্লাদের ভরসা নেই হ্যা বললেও একহাজার টাকা কেটে নিতে পারে। তাই সে এই জল্লাদের সাথে মোটেই কথা বলবে না। বলবেই না। পা ধরলেও সে কথা বলবে না।

****

ক্লাইন্টের সাথে মিটিং এর সময় গোলোযোগ বাধলো। মিটিং এর মেইল প্রেজেনটেশন ফাইলটাই করাপটেড হয়ে গেলো। ফলে ক্লাইন্টের সাথে হওয়া ডিলটা প্রায় হাত থেকে ফঁচকেই যাচ্ছিলো। শ্রাবণ কঠিন স্বরে বললো,
“ফাইল কি করে করাপ্টেড হলো মিস মেহেনাজ?”

চারু নির্বাক, নির্বিকার। সে আঙ্গুল দেখছে। সে কথা বলবে না। চারুর এমন নির্লিপ্ততাইয় বেকুব বনে গেলো শ্রাবণ। ক্লাইন্ট হুমড়ি তুমড়ি করছে। শ্রাবণের যোগ্যতা নিয়েও তার সন্দেহ ঠিকরে পড়তে লাগলো। শ্রাবণ চারুর দিকে চোখ গরম তাকালো। গমগমে স্বরে শুধালো,
“আপনি কথা কেন বলছেন না মিস মেহেনাজ। ফাইল করাপ্টেড কি করে হলো?”

চারু ঠোঁট উল্টালো। কিন্তু উত্তর দিলো না। ফোনের ঘড়িটা একবার দেখতেই শ্রাবণের স্মরণ হলো সে চারুকে চুপ করে থাকতে বলেছে। বলে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো,
“আপনি দয়া করে কথা বলবেন?”

চারু মাথা দু দিকে নাড়ালো। সে কথা বলবে না। এদিকে ক্লাইন্ট ঘোষণা দিলো,
“এতো কেয়ারলেস কি করে আপনারা? এতো ইম্পোর্টেন্ট মিটিং অথচ আপনাদের কোনো প্রিপারেশন নেই। আমি কোন ভরসায় আপনাদের সাথে ডিল করবো। লাখ লাখ টাকার ডিল এটা”
“জাস্ট গিভ মি এ মিনিট। মিস মেহেনাজ আপনার কাছে স্পেয়ার ফাইল আছে?”

চারু উপর নিচে মাথা দোলালো। যার অর্থ তার সাথে ফাইলের একটি কপি আছে। শ্রাবণের রাগ বাড়লো। মেয়েটি তার মস্তিষ্কে আগুণ ধরিয়ে দেবার সুযোগ হাতছাড়া করে না। শ্রাবণ তার হাতের কবজি চেপে ধরে বললো,
“টক টু মি, মিস মেহেনাজ। আমার মেজাজ খারাপ হচ্ছে কিন্তু”

চারু তবুও নির্বাক। শ্রাবণ নিজের রাগ সংবরণের চেষ্টা করলো। নিজেকে শান্ত করে ভারী স্বরে বললো,
“কি করলে আপনি কথা বলবেন?”

চারু আবার মুখ ভ্যাসকালো। যার অর্থ সেটা আপনার চিন্তা। শ্রাবণ গাল ফুলিয়ে শ্বাস ফেললো। ধীর কণ্ঠে বললো,
“ওকে আই এম সরি। আপনি যদি এখন কথা বলেন, আমি আপনার স্যালারি দু হাজার বাড়িয়ে দিবো। নাউ টক”
“থ্যাংকিউ স্যার, এই না হলে বুদ্ধিমান বস। কি বুদ্ধি আপনার?”
“ফাইলটা ইচ্ছে করে করাপ্টেড করেছেন আপনি তাই না?”
“কে জানে হয়তো। এখন আপনি রাগ ঝাড়বেন নাকি ক্লাইন্ট ধরবেন”

শ্রাবণ শীতল নয়নে তাকিয়ে আছে। অগ্নিস্ফুলিঙ্গও এই দৃষ্টিতে বরফ হয়ে যাবে যেন। কিন্তু তার দৃষ্টিকে সম্পূর্ণরুপে অগ্রাহ্য করলো চারু। অবশেষে জল্লাদকে নাস্তানাবুদ করতে পেরেছে সে। জল্লাদ তাকে সরি বলেছে। দিনটাকে স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখবে সে। ডিলটা সম্পন্ন হবার পরও শ্রাবণ হাসলো না। বরং তার কানের কাছে গাঢ় স্বরে বললো,
“বদলাটা তুলে রাখলাম, সুদে আসলে বুঝে নিব”………

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি