#চার_দেওয়ালঅ
#পর্ব_২
যা হয়েছে সে নিয়ে আর কোনরকম উচ্চবাচ্য করার দরকার নেই, চাপা গলায় বলল স্বরূপ, এখন থেকে নিজেকে সাবধানে রাখতে চেষ্টা করো| রাতুল এলে সামনে বেরোনোর আর কোন দরকার নেই| এখন ভালোয় ভালোয় অণিমার সঙ্গে বিয়েটা হয়ে গেলে বাঁচি| নিজেকে একটু ঢেকেঢুকে রাখলেও তো পার?
আমি কি করলাম? অবাক হতেও বোধহয় এবার ভুলে যাব আমি| তুমি তো দেখেছ আমাকে সেই পোশাকে, কোথায় ভুল ছিল আমার! তাছাড়া আমি না বেরোলেও রাতুলের এ বাড়ির সর্বত্র গতিবিধি, তাকে আটকাবে কিভাবে?
অতকিছু আমি জানি না| তোমায় যা বললাম দয়া করে সেটুকু মেনে চলো| এটা আমার বোনের ভবিষ্যতের প্রশ্ন| তোমার জন্য ওর ভবিষ্যতে যেন কোন আঁচ না আসে| নিজেকে সামলে রাখতে পারো না কেমন মেয়ে তুমি?
কি বলতে চাইছ টা কি? এখানে আমার দো ষ কি ছিল? তোমার বাবাই তো বলেছেন রাতুল যখনই আসুক, তাকে জামাই আদর করতে হবে| একটু থামলাম, এতক্ষণ উত্তেজনায় দম নিতে ভুলে গিয়েছিলাম| গম্ভীর মুখে বলে উঠলাম, আজকের ঘটনায় তুমি কি আমায় বিশ্বাস করছ না? কি মনে হয় তোমার আমি মিথ্যে বলছি?
আমার কথা শুনে স্বরূপ রেগে যায়| বিরক্তি মাখা স্বরে বলে, নতুন করে আর কোনো ঝামেলা বাঁধিও না তনুশ্রী| দেখছ তো আমাদের আর্থিক অবস্থা| নুন আনতে পান্তা ফুরোয়| আমাদের সন্তান আসতে চলেছে তার কথাটাও তো ভাবতে হবে| তোমার সব কথাই না হয় আমি বিশ্বাস করলাম কিন্তু তাতে কি! এখন কি চাও তুমি? কি করলে তুমি সন্তুষ্ট হবে? তোমার জন্য কি আমি রাতুলের সঙ্গে ঝা মেলা করতে যাব? ওর সঙ্গে ঝা মেলা করলে আমরা টি কতে পারব? কত পয়সা জানো না বুঝি?
সে কথা আমি কখন বললাম? কিন্তু ওই ছেলের সঙ্গে বিয়েটা হলে তোমার বোন শান্তিতে থাকবে তো? এরপর তোমার বোনকে বাড়িতে রেখে ওই ছেলে যদি আরো একটা বিয়ে করে বসে তখন তোমার বোন কোথায় যাবে? ভেবেছ সেটা? এ বাড়িতেই ফিরে আসবে কিন্তু! যদি তার মধ্যে ছেলেপুলে হয়ে যায়… তখন বিপদ আরো বাড়বে|
মুখ থেকে শুভ কথা বলতে পারো না নাকি! অতকিছু কোনদিনই ঘটবে না! রাতুল আমাদের অণিমাকেই ভালোবাসে| আসলে বয়সটা কম, অত বোঝে টোঝে না… তোমায় দেখে সাময়িকভাবে হয়ত একটা ভুল করে ফেলেছে| ভুল কি আমাদেরও হয় না, ওসব কথা ভুলে যাও তনু, রাত অনেক হল| যাও, ঘুমিয়ে পড়ো| নিজের কথা ভাব না ভাব, অন্ততঃ আমাদের বাচ্চাটার কথা ভাব| পাশ ফিরে শুতে গিয়েও উঠে বসে স্বরূপ, চাপা গলায় বলে, কান খুলে শুনে রাখো তনু, এই কথাগুলো যেন কোনোভাবেই অণিমার কানে না ওঠে| তাহলে কিন্তু আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না| তখন আমি ভুলে যাব, কোন একদিন তোমায় ভালোবেসেছিলাম| সিঁদুর পরিয়ে ভাল রাখার দায়িত্ব নিয়ে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম|
জেনেশুনে ওই ছেলের হাতে নিজের একটি মাত্র বোনকে তুলে দেবে? বলতে না চেয়েও কথাটা বলেই ফেললাম| এ কেমন মানসিকতা আমার স্বামীর? স্বরূপের শেষ কথাগুলো নিজের কানে শুনেও কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না| এই কি সেই ছেলেটা যাকে একদিন আমি ভালোবেসেছিলাম? এর হাত ধরে আজন্মের চেনা বাড়ি ছেড়ে আসতে আসতে ভেবেছিলাম, পুঁ তি গ ন্ধ ম য় ন র ক থেকে এতদিনে উদ্ধার পেলাম|
দেব| না দিয়ে উপায়ই বা কি? এতদিনে পাড়ার সবাই, অণিমার বন্ধু বান্ধব জেনে গেছে রাতুলের সঙ্গেই অণিমার বিয়ে হবে| কেবল ফাইনাল পরীক্ষার অপেক্ষা| সবাই দেখে প্রায়ই রাতুল আমাদের বাড়ি আসে| অণিমার সঙ্গে সময় কাটায়| কোনভাবে যদি এখন বিয়েটা না হয়, তখন কিন্তু সব দোষ আমার বোনের ঘাড়ে পড়বে| এ সমাজে আজো পুরুষ দো ষী হয় না, সব দো ষ, সব অ প বাদ মেয়েদের জন্য তোলা থাকে| ঠান্ডা মাথায় কথাটা ভেবে দেখ তনু| তোমায় ভালোবাসি, তাই জানি তুমি মিথ্যে বলছ না… কিন্তু সত্যি হলেও কিছু সত্যি সামনে না আসাই ভাল| সিনেমা, সিরিয়ালে দেখানো প্র তি বাদের গল্প দিয়ে জীবন চলে না| এখন যদি এই সামান্য একটা কারণের জন্য অণিমার বিয়ে ভেঙে যায় তবে অন্য কেউ আর ওকে কোনদিনও বিয়ে করতে রাজি হবে কিনা সন্দেহ| সারাজীবন অণিমা আইবুড়ো থেকে যাবে, আর দাদা-বৌদি হিসেবে আমাকে আর তোমাকে ওর বিয়ে ভেঙে দেওয়ার জন্য দায়ী করবে| বলবে আমাদের জন্যও ওর সংসার সাজানো হল না| দাদা হয়ে কিভাবে বোনের স্বপ্ন ভেঙে দেব বলতে পার? কেবল প্র তি বা দ করলেই হয় না তনু, পরবর্তীকালে এর ফলে কি কি ঘটতে পারে সেটাও ভেবে রাখতে হয়| অনেক বুঝিয়েছে এমন ভেবে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে স্বরূপ| শোওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মৃদু নাসিকা গর্জন শুরু হয়ে যায়|
জেগেই কেটে যায় সারাটা রাত| এই বাড়িতে কিভাবে থাকব আমি? যে মানুষটাকে বিশ্বাস করে এখানে এসেছিলাম সেই তো হাসিমুখে সব অন্যায় মেনে নিতে! কিভাবে মেনে নেব আমি? বুকের ভেতর উথালপাথাল, একবার ভাবলাম ফিরে যাই বাবার কাছে, কিন্তু বাবা কি আদৌ আশ্রয় দেবে? চাইলেও কি দিতে পারবে? বাবার আর্থিক অবস্থা আমার অজানা নয়| এখন তো আমি আর একাকী নই, সঙ্গে রয়েছে আমার সন্তান| একটা প্রাণ বেড়ে উঠছে আমার মধ্যে|দুজনের খরচ চালানোর ক্ষমতা বাবার নেই| এই মুহূর্তে আমিও কাজে বেরোতে পারব না, শরীরে সে শক্তি নেই আমার|
এর মধ্যে কেটেছে আরো এক সপ্তাহ| আজকাল বেশ ভয় ভয় থাকি| কিন্তু উপায় কি? পা লা নোর উপায় থাকলে এতদিনে ঠিক পা লা তুম| এই কদিনে রাতুল আরো বেশি চেষ্টা করেছে আমার ঘনিষ্ঠ হতে| গোপনে গিফট নিয়ে এসেছে, লোকচক্ষুর আড়ালে ভালোবাসার নাটকও করেছে| সে সবে যখন কোন কাজ হয় নি তখন ভয় দেখিয়েছে, ওর কথা মতো কাজ না করলে চরিত্রের অ প বা দ দিয়ে আমাকে বাড়ি ছা ড়া করবে| কেউ শুনবে না আমার মতো একটা চা ল চু লো হীন মেয়ের কথা, সবাই রাতুলের কথাই মেনে নেবে|
বুঝলাম জল গ লা ছাড়িয়ে মাথার ওপর উ ঠতে চলেছে| এভাবে চুপ করে থাকলে চলবে না কিন্তু আমি এক অ স হায় মেয়ে আমার কথা শুনবে কে? জানালার ধারে বসে চুপচাপ খানিক ভাবলাম, বুঝলাম কথা বলে কথা শুনে কিছুই হবে না| এ আমার একার ল ড়া ই, তাই ল ড় তে আমাকেই হবে| এমন কিছু একটা করতে হবে যাতে রাতুলের ভালমানুষির মু খোশ এ বাড়ির সবার সামনে খ সে পড়ে, স্বরূপও সবটা মেনে নিতে বাধ্য হয়| কাঁ টা দিয়ে কাঁ টা তো লা আমার অভিপ্রায় নয়, কিন্তু এছাড়া আর উপায়ই বা কি?
আমার এক বোন ছিল পাড়াতুতো| সুন্দরী, আকর্ষণীয়া| তাকে একদিন সময় করে আসতে বলি| অনেকদিন ধরেই তার আমার শ্বশুর বাড়ি ঘুরে দেখার শখ ছিল| এই ফাঁকে আমাকে নিজের কার্যসিদ্ধি করতে হবে| ওই বোনকে সবটা ভাল করে বুঝিয়ে বলতে হবে| আচমকা সে ভ য় পেয়ে গেলে আমার পুরো পরিকল্পনাটাই মাটি হবে|
( ক্রমশ )