চিত্তনামা পর্ব-০২

0
53

#চিত্তনামা—০২
#প্রানেশা_আহসান_শীতল
“কপি — নিষিদ্ধ”

টেবিলের উপর রাখা গোলাপের দিকে শীতল চোখে তাকালো ইনতিহা তারপর নাশফিয়ানের দিকে তাকালো। নাশফিয়ান দাঁত ক্যালিয়ে হাসল। বড়ই বাচ্চামো ঠেকল ইনহিতার কাছে। তারপর নাশফিয়ানকে হতাশ করে বলে,

“আমার গোলাপ পছন্দ না!”

ঠুস করে মনটা ভেঙ্গে গেলো নাশফিয়ানের। মুখে ঝকমকে হাসিটা বিষাদে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। ইনহিতা দেখেও প্রতিক্রিয়া বিহীন আবারও বলে,

“গোলাপে আমার অ্যালার্জি আছে।”

এখন একটা মানুষের একটা জিনিসে সমস্যা থাকতেই পারে। তাই নিজেকে সামলে নিয়ে নাশফিয়ান হাসার চেষ্টা করলো তারপর বলে,

“আচ্ছা আরেকবার একটু অপেক্ষা করুন!”

কথাটা বলেই নাশফিয়ান আবারো ক্যাফ থেকে বেড়িয়ে যায় তারপর সেই বেলীফুলের মালাটা নিয়ে আসে। আর ততখনে একটা ডেজার্ট আর দুইটা কোল্ড কফি দিয়ে যায় ওয়েটার। ইনতিহা আবারো দেখল তারপর বলে,

“বেলীফুলের ঘ্রাণ আমার পছন্দ না। আর আমি কফিএকবার খেয়েছি!”

এইবার যেনো নাশফিয়ানের মনে হচ্ছে রাস্তায় শুয়ে পড়তে তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে হাসার চেষ্টা করে বলে,

“ব্যাপার না। একজন মানুষের একটা জিনিস পছন্দ নাই হতে পারে! আমরা কখনো কাউকে তার মতপর বিরুদ্ধে জোর করাতে পারি না।”

এই কথাটায় ঠিক কতটা আর্তনাদ ছিল ইনতিহা টের পেলো কিনা কে জানে! তবে সে আর কথা না বাড়িয়ে ডেজার্ট ট তুলে নিয়ে খেতে শুরু করল। নাশফিয়ান৷ একটা শ্বাস ফেলল সে ভেবেছিলো ইনতিহা এবারও বলবে তার ডেজার্ট পছন্দ না।

ইনতিহা খেতে খেতে নাশফিয়ানের দিকে তাকালো। মুখের আদল এক বাচ্চা বাচ্চা ভাব আছে নাশফিয়ানের। ইনহিতা আলতো গলায় প্রশ্ন করে,

“গ্রাজুয়েশন শেষে কি করছেন এখন?”

নাশফিয়ান তাকাল তারপর মৃদুস্বরে বলে,

“আপতত কিছু করছি না। বাবার বিজনেস সামলাবো ভেবেছি!”

“মানে আপনি এখন বেকার?”

“বেকার কখন বললাম? আব্বুর বিজনেস দেখবো!”

“আহ্!”

মাথা নাড়াল ইনতিহা, আর কথা হলো না। খাওয়া শেষ করে ফোনে সময় দেখে ইনহিতা বলল,

“এবার আমার যেতে হবে!”

নাশফিয়ান সৌজন্যেমূলক হাসল তারপর বলে,

“আমি গাড়ি এনেছি; আমি পৌঁছে দিতে পারবো।”

“লাগবে না।”

কথাটা বলেই উঠে দাঁড়ায় ইনতিহা। তারপর ধীরে ক্যাফ থেকে বেড়িয়ে যায়। ইনতিহা বেড়িয়ে যেতেই নাশফিয়ান গায়ের জ্যাকেটটা খুলে ফেলো। তারপর চুল গুলো ঠিক করে প্যাটের পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে সিগারেট ধরায়। সিগারেট শেষ করে উঠে বেড়িয়ে যায়। ক্যাফ থেকে বেরোতেই ইনতিহাকে দেখে থমকায়। বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে। নাশফিয়ান ঢোক গিলে এগিয়ে এল তারপর বলে,

“যান নি?”

ইনতিহা চমকে পাশে তাকায় তারপর নাশফিয়ানকে দেখে হেসে বলে,

“বৃষ্টি হচ্ছে। কমলে যাবো। আপনি চলে যান।”

জবাব করলো না নাশফিয়ান। দাঁড়িয়ে রইল। ইনতিহার এখন কেন যেন ভীষণ অনুতাপ হচ্ছে তার বেলীফুল পছন্দ। অনেক পছন্দ শুধু মাত্র নাশফিয়ানকে এমন অগোছালো দেখে পছন্দ না হওয়ায় সে রিজেক্ট করে দিয়ে মিথ্যা বলেছে। তাই ধীরে আবারো বলে,

“এই যে শুনছেন?”

নাশফিয়ান বাহিরের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টি উপভোগ করছিল। নাশফিয়ানকে ডাকছে বুঝতেই নাশফিয়ান পাশে তাকায় তারপর বলে,

“উম? হু… ডেকেছেন?”

ঢোক গিলল ইনতিহা। এখন কেমন নার্ভাস লাগছে তাই বাহিরের দিকে তাকিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে আবারো নাশফিয়ানের দিকে তাকায় তারপর জড়তা ভরা গলায় বলে,

“বেলী… বেলী ফুলের মালা টা?”

“ফেলে দিয়েছি!”

খুব ভারী গলায় উত্তর এল। তবে এবার ইনহিতার খারাপ লাগল। লোকটার সাথে এতোটা তীক্ষ্ণ গলায় কথা বলা উচিত হয় নি। নাশফিয়ান চোখ সরিয়ে নিয়ে আবারও বাহিরে তাকাল। ইনতিহা নাশফিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইল। ব্যাপারটা এমন নাশফিয়ান বৃষ্টি দেখতে ব্যাস্ত আর ইনতিহা নিজের ভাবনায় বিচরণ হয়ে নাশফিয়ানকে এডমেয়ার করতে ব্যস্ত!

বৃষ্টি কমে আসতেই নাশফিয়ান বলে,

“আমি কি উবার ঠিক করে দেবো নাকি সিএনজি?”

ইনতিহা শ্বাস ফেলে তারপর বলে,

“আপনার সাথে যাবো!”

নাশফিয়ান যেন ভুল শুনলো! নিজেকে বিশ্বাস করতে পড়ল না তাই চমকানো গলায় শুধায়,

“হু.. কি? বুঝিনি?”

ইনতিহা বিরক্তি শ্বাস ফেলে বলে,

“বাংলায়ই বলেছি নাশফিয়ান। আমি আপনার সাথে যবো। আমায় বাসায় ড্রপ করে দিন।”

সহজ সাবলীল ভাবেই ইনতিহা বলেছে তবে নাশফিয়ানের যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। অবাক চোখে তাকিয়ে রইল তা দেখে ইনতিহা আবারো বলে,

“আমার দেড়ি হচ্ছে নাশফিয়ান…!”

“আচ্ছা একটু, একটু অপেক্ষা করুন। গাড়ি পাকিং লটে!”

কথাটা বলেই নাশফিয়ান চলে যায়। আর ইনতিহা শব্দ করে হেসে ফেলে। খানিক বাদেই এক সাফেদ গাড়ি এসে থামল ইনতিহার দিকে। গাড়ির জানলার কাচঁ নামিয়ে নাশফিয়ান মাথা নিচু করে ইনতিহাকে ডেকে বলে,

“এই যে মিস, আসুন — গেট ইন দ্য কার!”

নিজের হাসি কোনও মতে দমিয়ে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসল ইনতিহা তারপর ঠিকানা বলে। গাড়িতে তেমন একটা কথা হল না। নিরবচ্ছিন্ন রইল সেই যাত্রা। গাড়ি এসে থামলো ইনতিহার বাসার সামনে। ইনতিহা কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে যায়। নাশফিয়ান তাকিয়ে রইল। সে ভেবেছিল ইনতিহা কিচু একটা বলবে তবে তাকে হতাশ করে বাড়ির গেট খুলে ভেতরে প্রবেশ করে। নাশফিয়ানের কেন যেন ভঙ্গুর মনে হল নিজেকে। গাড়ির কাচঁ উঠিয়ে মাথা নিচু করে স্টিয়ারিং হুইলেই মাথা নামিয়ে রইল। খানিক বাদে জানলায় কেউ ঠকঠক শব্দ করল। নাশফিয়ান মাথা তুলে চাইল সাথে গাড়ির কাচঁ নামাতেই ইনতিহার হাসোজ্জল মুখটা চোখে পড়ল। ইনতিহা হাসি হাসি মুখে হাত এগিয়ে দেয়। নাশফিয়ান অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। তা দেখে ইনতিহা চোখ দিয়ে ইশারা করে হাত ধরতে। নাশফিয়ান ধীরে হাতটা ধরে হ্যান্ডশেক করে। ইনতিহা মৃদুস্বরে বলে,

“ইনতিহা তাপ্তী। তৃতীয় বর্ষ — স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ। আপনার সথে দেখা হয়ে ভলো লাগল। আশা করি আমাদের আবারও দেখা হবে!”

অবাক-খুশি হয়ে নাশফিয়ান মৃদু লাজুক হাসে তারপর বলে,

“নাশফিয়ান যাওফিন। আই হোপ সো…!”

ইনতিহা হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,

“সাবধানে বাসায় যাবেন। আল্লাহ হাফেজ।”

“আল্লাহ হাফেজ!”

আবারো ঘুরে কিছু একটা মনে পড়তেই ঘুরে আবারও বলে,

“ওহহ; শুনুন- আমার বেলীফুল পছন্দ। আপনাকে হয়রানি করার জন্য দুঃখিত!”

কথাটা বলেই দৌড়ে চলে যায়। আর নাশফিয়ান শব্দ করে হেসে ফেলে। তারপর গাড়ি স্টর্ট দিয়ে বড়ির দিকে রওনা দেয়।

———

“আম্মা, মা, এই আম্মু?”

বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতেই আনজুমকে ডাকতে লাগলো নাশফিয়ান। আনজুম বেগম রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে বলে,

“কি হয়েছে বাপ? এমনে ডাকিস কেন? আর এত খুশি কেন তুই? মাইয়া কি রিজেক্ট করে দিছে।”

“আরে আম্মা, না; এইটাই ওইটা, যেইটাকে আমি পছন্দ করতাম।”

চমকে যায় আনজুম বেগম। শাড়ির আচল দিয়ে নিজের মুখ মুছে বলে,

“কি কস বাপ? এইটাই ওইটা?”

“হ্যাঁ।”

মুখটা ছোট হয়ে এল আনজুম বেগমের তারপর বলে,

“কিন্তু?”

“কিন্তু কি আম্মু?”

“তুই যেভাবে গেলি?”

“কি করবো? এখন আব্বুর আগে পিছনে ঘুরে যা করার করতে হবে।”

“তাহলে দাঁড়িয়ে আছ কেন? তাড়াতাড়ি বাবার সাথে দেখা করো।”

কথাটা বলেতেই নাশফিয়ান মাথা নাড়িয়ে বাবার রুমের দিকে পা ফেলে।

—–

ফ্রেশ হয়ে ল্যাপটপটা নিয়ে বসতেই মা সাবিনা বেগম এসে ইনতিহার পাশে বসল তারপর ধীর গলায় বলল,

“ডেট মিটআপ কেমন ছিল?”

“ভালো।”

একদম স্বাভাবিক গলায় তাই সাবিনা বেগম একটু বিচলিত হল! তাই চওন্তিত গলায় বলে,

“পছন্দ?”

তার কথা সম্পূর্ণ করার আগেই ইনতিহা বলে,

“আমি আরেকবর দেখা করতে চাই আম্মু; তারপর সিদ্ধান্ত জানাব!”

অবিশ্বাস্য তাকাল সাবিনা বেগম। তরপর বলে,

“অবশ্য, অবশ্যই। দেখা করবি। আচ্ছা আমি কি ধরে নেবো তুই রাজি?”

“আম্মা?”

সরু চোখে তাকাতেই সাবিনা বেগম জোড় করে হেসে বলে,

“আরে সময় নে। দেখা কর। বললাম না পরিবার ভালো, ছেলেও ভাল!”

সাবিনা বেগমের কথা শুনে বিরবির করে হতাশ গলায় ইনহিতা বলে,

“তাই তো নিজেকে ছাপ্রি প্রমান করতে চায়; অথচ অভিনয়ও জানে না!”

.

.
চলবে?