চিত্তনামা পর্ব-০৩ এবং শেষ পর্ব

0
43

#চিত্তনামা—০৩ (শেষ)
#প্রানেশা_আহসান_শীতল
কপি — নিষিদ্ধ

ক্যাফেতে ঢুকতেই চোখ পড়ে একদম শেষ মাথায় সিগারেট হাতে বসে আছে নাশফিয়ান। ইনতিহা তাকিয়ে রইল খানিকপল, আজকে ভদ্রলোকে সভ্য লাগছে। সাথে সাদা শার্টটায় নাশফিয়ানকে কেমন বিদেশি বিদেশি লাগছে। ইনতিহা তাকিয়ে একটা শ্বাস ফেলে তারপর ধীর পায়ে এগিয়ে এসে নাশফিয়ানের সামনে দাড়াতে ছাপ্রীক্ষ্যাত নাশফিয়ান থতমত খায়। হাতের সিগারেট ঠিক কোথায় ফেলবে তা নিয়েই চিন্তিত হল। ইনতিহা এসব দেখতে দেখতে চেয়ার টেনে বসে নাশফিয়ানের হাতের সিগারেটেটা নিয়ে এ্যাশট্রেতে ফেলে তারপর মিষ্টি গলায় শুধায়—–“স্মোকিং কজেস ক্যান্সার! বিয়ের আগে এসব অভ্যস বদলান।”

সরু চোখে তাকায় নাশফিয়ান, কিছু বলার আগেই আবারও চোখ বড় বড় করে তাকায় তারপর বলল—– “মাত্র কি বললেন আপনি?”

“কি বলেছি?”

“বিয়ের আগে..!”

শীতল চোখে তাকায় ইনতিহা তারপর বলল—– “বলেছি বাজে যত অভ্যস আছে বিয়ে আগে বদলান। আর এই সপ্তাহের ভেতরে বিয়ের ব্যবস্থা করুন।”

হা করে তাকিয়ে রইল নাশফিয়ান। তার বিশ্বাস হচ্ছে না মেয়েটা এত দ্রুত মেনে নেবে। সেদিন বাসায় যেয়ে বাবার পিছনে পিছনে ঘুরতে হয়েছে গোটা পাঁচদিন। তারপর বাবা রাজি হয়েছে ঠিকি কিন্তু শর্ত হিসেবে এখন তাকে অফিসে বসতে হয়েছে৷ সে মন দিয়ে অফিস সামলাবে তা বাবার কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তার বদলে বাবা যেভাবেই হোক ইনতিহাকে তাকে পাইয়ে দেবে। দীর্ঘশ্বাস ফেলল নাশফিয়ান তারপর নীচু গলায় বলে—– “বেশি দ্রুত হয়ে গেল না?”

সন্দেহান মুখে চোখ ছোট ছোট করে তাকাল ইনতিহা তা দেখে থতমত খায় নাশফিয়ান তারপর নিজের সাফাই গাওয়ার ভঙ্গিতে বলল—– “ইনতিহা আপনি যা ভাবছেন তেমন কিছু না; আসলে…”

“হু? আসলে কি?”

আবারও নার্ভাস হল নাশফিয়ান। এলোমলো হল সাজান কথা মালা তা দেখে ইনতিহা আলতো শব্দ করে বলল—– “শুনেছি আপনি নাকি আমায় আগে থেকে চিনতেন ও পছন্দ করতেন। কিন্তু প্রথম দেখায় রিজেক্ট খেতে চেয়ে সং সেজে এসেছিলেন।”

ভরকায় নাশফিয়ান। মেয়েটা এত স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড। কিন্তু তাকে এসব কে বলেছ? তাই চিন্তিত গলায় প্রশ্ন করে—– “এসব আপনাকে কে বলেছে?”

“আপনার আম্মা।”

সহজসরল স্বীকারোক্তি। তবে বিরক্ত হল নাশফিয়ান। এসব ইনহিতাকে না বললেই কি হত না মায়ের? তবুও জোরপূর্বক হেসে ফেলে। তা দেখে এক ভ্রু উঁচিয়ে বলল—– “বলুন?”

“আপনাকে, আপনাকে প্রথমে আমি আমার এক ফেন্ডের বিয়েতে দেখেছি। খোঁজ নিয়ে জানলাম আমি ভাবীর কাজিন।”

চোখ ছোটো ছোটো করে মনে করার চেষ্টা করে ইনতিহা। মুহুর্তেই মনে পড়েছে এমন ভাবে বলল,

“ইজদিহার আমার কাজিন!”

“নিভ্র আমার বন্ধু।”

একসাথে দুইজন বলতেই একই সাথে হেসে ফেলে দুইজন। তারপর একই সাথে বলল,

“ এডভান্স কনগ্রেচুলেশনস ফর নিউ লাইফ!”

——

হোগা, হ্যান্ডসাম সোনা সাবসে
মেরা দিল গায়া লে কার,
মেরা নিন্দ চুড়ালি উসনে
আর খাব গায়া দে কার।

সানগ্লাস পড়া ইনতিহাকে দেখে যেন সবাই আকাশ থেকে পড়ল। তবে তার মাঝে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। সে তার মতো নাচানাচি করতে ব্যস্ত! প্রথমে সবাই ভরকালেও এখন সবাই ইনজয় করছে।

আব ইয়ে নেয়না বলে ইয়ার,
বলে এহি লাগাতার,
কয়ি চাহে,
জিতনা রোকে,
কারুঙ্গি পেয়ারর…

নাশফিয়ানের সামনে এসে ঘুরতে ঘুরতে ইনতিহা হাসতে হাসতে নাটকীয় ভঙ্গিতে নাচতে লাগল ইনতিহা।

মেরা সাইয়া সুপার স্টার…
মেরা সাইয়া সুপার স্টার…
মে ফ্যান হুই উনকি…
ও মেরি, মেরা সাইয়া সুপার স্টার…

ইনতিহার এন্ট্রিতেই যেন ধামাকা ছিল। চিরচেনা সেই সাথে চাপা গম্ভীর স্বভাবের মেয়েটার এমন চঞ্চলতা দেখে যেন সবাই অবাক হয়েছে। সব থেকে বেশি অবাক বোধহয় নাশফিয়ান হয়েছে। ইনতিহা হাসি মুখে এগিয়ে এসে, আবারো গানের সাথে বলে,

“ ফিল্মি স্টাইলসে যাব উসনে
কাল রাত মুজে প্রপোজ কিয়া…
ডায় না দেখা বায় না দেখা,
উসকো দিলকা রোজ দিয়া।

কালকে রাতে আসলেই নাশফিয়ান আবারো বোকার মত লাল গোলাপ নিয়ে ইনহিতার কথা মত রাত বারোটায় ইনতিহাকে প্রপোজ করে আর সাথে সাথেই ইনতিহা এক্সসেপ্ট করেছে। তাই যেন নাশফিয়ানের খুশির অন্ত নেই। ইনতিহা এখন নিজপর মাঝেই ব্যস্ত তারপর সবার সামনে নাটকীয় ভঙ্গিতে ঘুরতে ঘুরতে আবারো নাশফিয়ানকে দেখিয়ে বলল,

“হুয়ে চারচে চার হাজার।
ফোটো ছাপ গায়ি ইন আখবার।
মুজকো পারভা নেহি কই,
আই এ্যাম ওয়েট দ্য সুপারস্টার।

তারপর হুট করেই নাশফিয়ানের সামনে এসে একটা লাল জুতা এগিয়ে দিয়ে আবারো বলল,

মেরা সাইয়া সুপার স্টার…
মেরা সাইয়া সুপার স্টার…
মে ফ্যান হুই উনকি…
ও মেরি, মেরা সাইয়া সুপার স্টার…

গান শেষ হতেই নাশফিয়ান শব্দ করে হেসে ফেলে সাথে বাকিরাও ইনতিহার দুষ্টুমির জন্য হেসে ফেলে। ইনতিহা নিজেও হেসে ফেলে। সে কখনই এটা করতে পারত না কিভাবে করেছে নিজেও জানেনা। লম্বা লম্বা শ্বাস ফেলে নাশফিয়ানের দিকে তাকায় তারপর নিজের ঘোমটা ঠিক করে নাশফিয়ানকে হাসোজ্জল গলায় জিজ্ঞেস করল——– “কেমন লাগছে আমায়?”

নাশফিয়ান একবার সবাইকে দেখে নেয় তারপর ইনহিতার দিকে তাকিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে ধীর গলায় বলল——– “মিসেস নাশফিয়ান এর মত!”

কথাটা শুনতেই লাজুক হাসল ইনতিহা। আর বাকিদের মধ্যে হইহট্টগোল সাড়া পরে গেল। অবশেষে, অবশেষে পাগলা তার প্রেয়সীকে পেয়েছে।

——

বিয়ে পড়ানো হয়েছে অনেক সময়। ইনহিতা ঘোমটা তুলে বসে আছে আর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে। অনেকটা সময় গড়িয়ে যেতেই রুমের দরজা ঠেলে নাশফিয়ান ভেতরে ঢোকে তা দেখে ত্যাড়ছা গলায় ইনতিহা বলল—– “কোথায় ছিলেন?”

“বাহিরে…”

ইনতিহা থেমে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আবারো নাশফিয়ানের দিকে তাকায়। নাশফিয়ানের বুঝতে বাকি নেই ম্যাডামের ভাষণ এবার কোনটা তাই তার আগেই নাশফিয়ান বলল—– “ প্লিজ ডোন্ট সে দ্যাট, আমি তোমার তিন ঘন্টা সাত-চল্লিশ মিনিট আমি নষ্ট করেছি!”

ইনতিহা মাথা নাড়িয়ে বলল——- “উহু, হয়নি।”

“ তাহলে?”
অবাক গলায় প্রশ্ন আসতেই ইনতিহা আবারও ঘড়ি দেখে বলল —– “তিন ঘন্টা উনপঞ্চাশ মিনিট বারো সেকেন্ড। এখন এতোটা সময় ওয়েস্ট করার জন্য আপনার পানিশমেন্ট কি হওয়া উচিত?”

নাশফিয়ান সরুচোখে তাকিয়ে বলল—– “ পানিশমেন্ট?”

“হ্যাঁ।”

“শিখবে?”

“কি?”

“নতুন ধরনের পানিশমেন্ট!”

“সেটা কেমন?”

বোকা গলায় প্রশ্ন আসতেই নাশফিয়ান ইনতিহার সামনে বিছানায় বসে তারপর তার গালে শীতল ঠান্ডা হাতটা রেখে থুতনী তুলল চোখে চোখ রেখে বলল—– “আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে। একটুও চোখ বন্ধ করবে না। তাহলেই নতুন…”

কথাটা সম্পূর্ণ করার আগেই ইনতিহা কথার মিনিং বুঝতেই ধাক্কা মেরে নাশফিয়ানকে সরিয়ে দিয়ে চেঁচিয়ে বলল—– “ছিহ্; আপনি অনেক অসভ্য! আগে ছাপ্রী ছিলেন এখন ছাপ্রী থেকে প্রমোট হয়ে অসভ্য হয়েছেন!”

কথাটা শেষ হতেই ইনতিহাকে নিজের সাথে জাপ্টে ধরে নাশফিয়ান তারপর বলল—– “এ্যানিথিং ফর মাই প্রিন্সেস!”

নিজেকে ছাড়াতে চাইলো ইনতিহা সাথে চেঁচিয়ে উঠল, “নাশপাতির বাচ্চা ছাড়…!”

“না!”

“মেরে ফেলবো!”

“বিধবা হবে তখন!”

“আরেকটা ছাপ্রী বিয়ে করবো!”

“একদম মেরে ফেলবো ইনতিহা।”

এভাবেই চলল তাদের খুনশুটি। ঘরের লাইট বন্ধ হয়েছে কখন! তবে খানিক বাদেবাদে অভিমান ভরা কণ্ঠ তো কখনো হাস্যধ্বনির কলকল ধ্বনি তো আবার কিছু ক্ষানিকপর আবারোও চাপা আর্তনাদ মুখরিত হয়ে আছে এইরুম। এখানেই চলুক নিরামিষ ডক্টরনী আর ছাপ্রী নাশপাতির ভিন্নগল্প!

~সমাপ্ত~