চিত্তে অঙ্কিত কৃষ্ণরেখা পর্ব-০১

0
1234

#চিত্তে_অঙ্কিত_কৃষ্ণরেখা
#পর্বঃ|০১|
#ফাহমিদা_নূর(NehMat)

১.
প্রেগন্যান্সি পজেটিভ সার্টিফিকেট হাতে স্তব্ধ বিমূঢ় ভঙ্গিতে সামনের দৃশ্যপটে স্থির চেয়ে আছে প্রথা।চতুর্দিকে যেনো অন্ধকার ধেয়ে আসছে পাল্লা দিয়ে। স্বচ্ছ কাঁচের আয়নার ন্যায় হৃদকুঠুরি ভাঙন ধরেছে নদীর পাড়ের মতো।নিজের স্বামীর সাথে অন্য নারীর জড়াজড়ি মুহূর্তের দৃশ্য দেখে দুকদম পিছিয়ে থম মেরে দাঁড়িয়ে রয় সে। চোখের সম্মুখে এমন নি’কৃ’ষ্ট অবস্থায় শ্রেয়াণ কে দেখে বিস্তির্ণ আকাশটা যেনো চু’রমার হয়ে প্রথার মাথায় ঠাঁয় নিয়েছে।হৃদ যন্ত্র টাও মনে হয় স্থির হয়ে গিয়েছে তৎক্ষণাৎ।প্রথা ধীরে ধীরে অনুভব করছে তার হাত পা কাঁপছে। প্রচন্ড কাঁপছে। বক্ষস্থলে ব্যাথা উঠছে দূর্বার গতিতে।কাঁপুনির দায়ে হাতে থাকা নীল ফাইল টা পড়ে গেলো ফ্লোরে। টাইলসের সাথে ফাইলের সংঘর্ষে খট করে শব্দ হলো।সেই শব্দ সোফায় একে অপরের ঠোঁটে ঠোঁট সেঁটে থাকা শ্রেয়াণের কর্ণকোঠরে পৌঁছাতেই চকিতে চোখ মেলে ফট করে ঘাড় বাঁকিয়ে দ্বাবের অভিমুখে তাকায়‌।প্রথাকে চোখের সামনে আবিষ্কার করে অ’প্রস্তুত হওয়ার ভান ধরে দুজন। যদিও তারা পূর্ব হতে অবগত ছিল প্রথার উপস্থিতির ব্যাপারে।হতবাক অবস্থায় ক্ষণকাণ দৃষ্টি নিবদ্ধ করে তড়িৎ উরু থেকে অর্ধাবৃত মেয়েটিকে সরিয়ে ফ্লোর থেকে সাদা শার্ট কুড়িয়ে গায়ে জড়াতে জড়াতে প্রথার সামনে এসে দাঁড়ায় শ্রেয়াণ। উদ্বিগ্ন ভাবভঙ্গি ফুটিয়ে অস্থির গলায় বলে -’প্রথা ত তুমি এখানে? বিশ্বাস করো_

বাক্য সম্পূর্ণ করার পূর্বে প্রথা কাঁপা স্বরে প্রশ্ন করে -’ এ্ এসব কি হচ্ছে শ্রেয়াণ?তুমি পরনারীর সাথে
বাকি শব্দ গুচ্ছ গলায় আটকে আসে প্রথার। কান্নার দাপটে বহু কষ্টেও কথা বের হয়না মুখ দিয়ে। আঁখি পল্লব ঝাঁপটাতেই অনবরত অশ্রু কণা গড়িয়ে পড়ছে দুচোখ বেয়ে। কান্না সংবরনের প্রচেষ্টায় নিন্মাষ্ঠ কামড়ে দু হাতে মুখ চেপে ঝাঁপসা চোখে শ্রেয়াণের দিকে চেয়ে আছে উত্তরের আশায়।অপলক দৃষ্টিতে প্রথার পরিপার্শ্বিক অবস্থা পরখ করে শ্রেয়াণ উদগ্রীব গলায় বলে-’প্রথা জান বিশ্বাস করো আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। প্লিজ আমায় ভুল বুঝোনা। স্যরি টু স্যে,চোখের সামনে এমন আবেদনময়ী নারী দেখে নিজেকে সামলাতে পারিনি।এতোটাই মত্ত হয়েছিলাম যে এই পাপ করার আগমুহূর্তে একবারো তোমার কথা মনে পড়েনি। তোমার মায়া মায়া মুখটা ভেসে উঠেনি। প্লিজ ক্ষমা করো।
এটুকু বলা শেষেই শ্রেয়াণের চোখ মুখ শক্ত হয়ে আসে।চেহারার রং পাল্টে রূপ নেয় কাঠিন্যতায় । পূর্বের উদগ্রীব উদ্বিগ্ন ভাবটা হারিয়ে যায় নিমেষেই।অধর কোণে ফুটে উঠে বাঁকা হাসি।সে হাসি ধরে রেখেই তাচ্ছিল্য স্বরে বলে -“ কী ভেবেছিলে প্রথা ডার্লিং?আমি এমন কিছুই বলবো? এভাবেই তোমার সামনে হাতজোড় করে আকুতি মিনতি করবো ’প্লিজ প্রথা আমায় ক্ষমা করো,আমি ভুল করে ফেলেছি ’ ইত্যাদি ইত্যাদি!

শ্রেয়াণের প্রতিটি বাক্য কর্ণকোহর পৌঁছাতেই বাকহারা নয়নে চেয়ে রইলো প্রথা। কান্না করতেও যেনো ভুলে বসেছে‌। আঙ্গুল তুলে ধরে আসা গলায় বলে -’ তুমি সত্যিই শ্রেয়াণ নাকি অন্যকেউ?শ্রেয়াণ তো আমার সাথে এভাবে কথা বলেনা।আর না আমাকে ছেড়ে অন্য নারীর দিকে চোখ তুলে তাকায়।

শ্রেয়াণ যেনো বিরক্ত হলো এমন কথায়,বলল “দ্যাটস্ ইউর ফল্স্ ফেয়ার।আমিই শ্রেয়াণ আর মনিতা ডার্লিং এর সাথে একটু আগে আমিই ইন্টিমেট ছিলাম।

ক্ষণকাল হতবুদ্ধি চেয়ে থেকে আচমকাই শ্রেয়াণের কলার চেপে ধরলো প্রথা।ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল-“ কেনো ঠকালে?কি কমতি ছিল আমার?কি দেইনি তোমায়? ভালোবাসা,সম্মান,শ্রদ্ধা,বিশ্বাস,ভরসা?

-’ সন্তান!
সন্তর্পণে কলার থেকে প্রথার হাত ছাড়িয়ে দিয়ে বলল শ্রেয়াণ।প্রথাকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফের বলে শ্রেয়াণ -“ তিন বছরে একটা সন্তান দিতে পেরেছো আমায়?পেরেছো আধো আধো বুলিতে বাবা ডাক শুনাতে ?বন্দা মেয়ে একটা!

শ্রেয়াণের একেকটি কথা ক্ষত বিক্ষত করে দিচ্ছে প্রথার কোমল হৃদয়।মনে হচ্ছে কেউ বিরামহীন চুরি চালাচ্ছে তার কলিজায়।

-’ তুমিই তো একসময় বলেছিলে ’প্রথা আমার তুমি হলেই চলবে। কাউকে লাগবে না আমার।বাবা মা ডাক শুনতে আমরা সন্তান এডপ্ট নেবো?

-’ তখন তোমার মোহে অন্ধ ছিলাম।পড়ালেখা তো করেছো। মানুষ পরিবর্তনশীল এটা নিশ্চই জানো?

থম মেরে চেয়ে রইলো প্রথা।আজ যেনো নতুন শ্রেয়াণ
কে দেখছে চোখের সামনে।যার সাথে প্রথার ভালোবাসার শ্রেয়াণের বিস্তর ফারাক।

-’ এই মেয়েটা কে?এখন তুমি ওকেই ভালোবাসো তাইতো?

বিরক্তিতে ‘চ বাচক শব্দ উচ্চারণ করল শ্রেয়াণ।এক হাতে কিঞ্চিৎ দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মনিতা কে কাছে টেনে কোমর জড়িয়ে ধরে তাচ্ছিল্য হেসে বলে-’শ্রেয়াণ এখন ভালোবাসার পেছনে ছুটে না।সে এখন বেড পারফরম্যান্সে এক্সপার্ট এমন নতুন নতুন নারীর সঙ্গ_

-’ চুপ চুপ চুপ
দু হাতে কানে চেপে ধরে মৃদু চেঁচিয়ে উঠল প্রথা। এমন অশ্রাব্য ভাষা নিতে পারছে শ্রেয়াণের মুখে। সম্মুখে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে প্রথা।শ্রেয়াণ এখনো মনিতার কোমর আঁকড়ে আছে আর মনিতা মিষ্টি হাসিতে শ্রেয়াণের মুখে স্লাইড করছে।ঘৃণায় চোখ জ্বলে ওঠে প্রথার। ঠিক কতোটা নিকৃষ্ট হলে মানুষ নিজের স্ত্রীর সামনে অন্য নারীর সাথে এভাবে লেপ্টে থাকার সাহস পায়? দাঁতে দাঁত চেপে মনিতা কে ছোঁ মেরে শ্রেয়াণের কাছ থেকে টেনে সর্বস্ব দিয়ে লাগায় এক চড়।মেয়েটা ছিটকে পড়ে যায় শ্রয়াণের অফিস ডেস্কের উপর।
প্রথার কাজে কুটিল হাসি দিয়ে শ্রেয়াণ বলে -“খামোখা ওকে মেরে কী লাভ।আজ ওর ডিউটি এটুকুই;কাল নতুন কেউ আসবে। এভাবেই কাপড়ের মতো পাল্টাতে থাকবে আমার বেড পার্টনার!

চোখের লেগে থাকা পানি আলতো হাতে মুছে নেয় প্রথা।নিজেকে স্বাভাবিক করে প্রশ্ন করে -“ এতে কী লাভ? মাত্রই বললে তোমায় সন্তান দিতে পারিনি বলে এসব পতিতা দের সাথে ফিজিক্যাল সম্পর্কে জড়াচ্ছো? যেখানে একজন কে দিয়েই বাবা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হতো সেখানে নিত্যনতুন মেয়ে কেন দরকার?

এই পর্যায়ে থমথমে হয়ে যায় শ্রেয়াণের মুখ।দমে না গিয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে বলে -“ আজ যেহেতু আমার চরিত্রে সম্পর্কে জেনেই গেছো আর কিছু লুকাবো না।আসলে একটি শরীর দিয়ে আমার পোষায় না_

ভগ্ন হৃদয়ে ফ্লোরে বসে ঝাপসা চোখে হাতড়ে নীল ফাইল হাতে তুলে নেয় প্রথা।শ্রেয়াণের বাকি কথা না শুনেই দৌঁড়ে বেরিয়ে যায় কেবিন ছেঁড়ে।আহত চোখে তার যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো শ্রেয়াণ।পর পরই দেখা যায় তার মুখখানি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে ক্রমশ।
-“ চলো বেইবি বাকি কাজটা সেরে ফেলি?

রক্তঝড়া চক্ষু নিয়ে পাশে তাকায় শ্রেয়াণ। দিকবিদিক না তাকিয়ে মনিতার গালে ঠাসস শব্দের থাপ্পড় লাগিয়ে চিৎকার করে উঠে -“ গেট আউট ফ্রম হ্যেয়ার।
ভয়ে সিঁটিয়ে গিয়ে মেয়েটি তৎক্ষণাৎ কেবিন ত্যাগ করে। ফ্লোরে হাঁটু ভেঙ্গে বসে পড়ে শ্রেয়াণ,দু হাত সম্মুখে তুলে ধরে অস্থির ভাবে নিজে নিজেই আওড়ায় -’এই হাত?এই হাত দিয়েই আমি প্রথা ছাড়া অন্য নারী কে স্পর্শ করেছি।এই শরীর প্রথা ছাড়া অন্য নারীর সংস্পর্শে ছিল।আমি কি করে নিজেকে ক্ষমা করবো?কিভাবে নিজেকে পবিত্র করবো?
একটু থেমে আবারো বলে-“ কিন্তু আমার তো কিছু করার ছিল না!বাবাকে বাঁচাতে এটুকু করতেই হতো?আ’ম স্যরি প্রথা। প্লিজ আরেকটু ধৈর্য্য ধরো ,সব ঠিক করে দেবো আমি ।তখন বুঝতে পারবে তোমার শ্রেয়াণ তোমারই ছিল;তোমারই আছে আর তোমারি থাকবে।সে একমাত্র প্রথা ছাড়া অন্য নারীর সংস্পর্শে তো দূর চোখ তুলে তাকাতেও ইচ্ছে পোষণ করে না।

চোখ বুজে মাথার চুল খামচে ধরে শ্রেয়াণ।প্রথার মতো তার হৃদয়ও ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে,যার বহিঃপ্রকাশে চোখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে।একটু হলেই অশ্রু গড়িয়ে পড়বে।
তখনই ডেস্কে থাকা ফোন বেজে উঠলো।শ্রেয়াণ কালবিলম্ব না করে তড়িৎ উঠে দাঁড়ায়, ফোন রিসিভ করেই চেঁচিয়ে উঠে -“ ইউ বা*স্টার্ড তোর কথামতো ওই ন”ষ্টার সাথে ইন্টিমেট হয়ে আমি আমার স্ত্রী আমার ভালোবাসা কে আঘাত করেছি।শুধু মাত্র তোর জন্যই আমি ওর বিশ্বাস ভেঙ্গে দিয়েছি। আমি তোকে ছাড়বো না কু*ত্তার বা চ্চা।আই উইল কিল ইউ।

অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এলো কোন পুরুষালী শান্তনা বাণী-“ কোল্ড ডাউন মিস্টার শ্রেয়াণ জাওয়ান।ভুলে যেওয়া তোমার একমাত্র বাবা আমার কাছে বন্দী!সো, যদি বাবাকে ফিরে পেতে চাও তাহলে আমার কথা মতো চলতে তুমি বাধ্য।

চোয়াল শক্ত করে নেয় শ্রয়াণ, দৃঢ় কন্ঠে বলে-“ আমার বাবা কে কোথায় রেখেছিস?

-’ একটা এমএমএস পৌঁছেছে তোমার ওখানে।দেখে নাও অনুগ্রহ করে,ভালো লাগবে আই হোপ।

তড়িৎ ল্যাপটপ অন করে এমএমএস এ ক্লিক করে শ্রেয়াণ। একটি ভিডিও শো করছে। যেখানে স্পষ্ট প্রদর্শিত হচ্ছে শ্রেয়াণের বাবা শাহিন জাওয়ান কে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি চেয়ারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তার চোখে মুখে ফুটে উঠেছে ক্লান্তি আর অসহায়ত্বের ছাপ।শাহিন জাওয়ান বারে বারে আকুতি স্বরে বলছে -‘’ প্লিজ আমাকে এই নরক থেকে উদ্ধার করো শ্রেয়াণ।সইতে পারছিনা আর।

বাবার বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো শ্রেয়াণ জাওয়ান।কান থেকে ফোন নামিয়ে স্ক্রিনে প্রজ্বল্লিত নাম্বার ট্রেক করার চেষ্টা চালায়, তখন ই অপর প্রান্তে থেকে শুনা যায়-“ আমায় ট্রেক করার বৃথা চেষ্টা করো না শ্রেয়াণ। বিফলে যাবে।

সত্যিই গত বারের ন্যায় এবারেও দেখা গেলো নাম্বার প্রাইভেট।ট্রেক করার অযোগ্য।

-’ কী চাস তুই?
-’ তেমন কিছু না।আপাতত তোমার কাছ থেকে আপনজনের বিচ্ছিন্ন মূহুর্ত উপভোগ করতে চাই।এরপর বাকিটাও দেখিয়ে দেবো উদাহরণ সমেত।

-’ কাপুরুষের মতো পেছন থেকে গুটি চালচিস?সাহস থাকলে সামনে আয়?

-’ আমি কি পাগল যে জেনে শুনে তোমার কাছে নিজেকে সমর্পণ করবো?

একটু থেমে ফের বলে-“ ওহ আরেকটি কথা,ভুলেও প্রথা বেইবি কিংবা অন্য কারো কাছে নিজেকে নির্দোষ, চরিত্রবান পুরুষ প্রমাণ করার চেষ্টা করবে না। যদি করো তখন কি হবে বুঝতেই পারছো?

তার কথার বিনিময়ে শ্রেয়াণ হিংস্র স্বরে বলে উঠে-’ আমি তোকে বাঁচতে দেবো না বা*স্টার্ড। নিজের হাতে খুন করবো তোকে!
অপর প্রান্ত থেকে হেঁয়ালি স্বরে বায় বায় বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিল।শ্রেয়াণ ক্রুদের চোটে ফোন আছাড় দিতে উপরে তুলে আবার কী মনে করে নামিয়ে নেয়।

আথালি-পাথালি পায়ে ফুটপাত বেয়ে আনমনে হেঁটে চলেছে প্রথা।পড়নের লাল টকটকে শাড়ির আঁচল অবহেলায় রাস্তার সাথে মিলেমিশে প্রথাকে অনুসরণ করছে, ক্ষণে ক্ষণে আবার বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে দুলছে।চুলে গুজে আছে বেলী ফুলের গাজরা।প্রথা হাতের ফাইলটা বুকে জড়িয়ে হেঁটে যাচ্ছে একমনে। আশপাশ কি হচ্ছে সে ধ্যান তার মধ্যে আপাতত নেই।থাকবেই বা কেন?সে তো হিসেব মেলাতে ব্যাস্ত।প্রথার মা নেই, একমাত্র সন্তান হওয়ার দরুন বাবা প্রতাপ চৌধুরীই তাকে সর্বস্ব আদর ভালোবাসা উগলে দিয়ে বড় করেছে পরম যত্নে।বাবার পরেই শ্রেয়াণ নামের দ্বিতীয় কোন পুরুষ কে ভরসা এবং ভালোবাসার স্থানে বসিয়েছিল।যে তাকে আজ ঠকিয়েছে।খুব বাজে ভাবেই ঠকিয়েছে।যে হাতের উষ্ণ ছোঁয়া তিন বছর আগে প্রথার নামে রেজিষ্ট্রি করে দিয়েছিল শ্রেয়াণ, সে হাত এখন স্পর্শ করছে ভিন্ন ভিন্ন নারীকে।যে বক্ষে তার লেপ্টে থাকার কথা সেখানে স্থান পাচ্ছে অন্য কেউ?আর ভাবতে পারে না প্রথা।পা দুটো যেনো অবস হয়ে আসছে।চলার শক্তি টুকু ফুরিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।হাতের ইশারায় একটি টেক্সি থামিয়ে সেটাতে চড়ে বসে প্রথা।সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুজে স্মৃতি চারণ করতে থাকে কিছু মুহূর্তের।

কলিং বেলের আওয়াজ কর্ণকোঠরে পৌঁছাতেই শ্রেয়া তাড়াহুড়ো ভঙ্গিতে এগিয়ে যায় দ্বারের উদ্দেশ্যে।সে জানে প্রথা এসেছে,কারণ ঘন্টা খানেক পূর্বে ভাইকে বাবা হওয়ার সুসংবাদ দিতে নিজেকে রক্ত জবা রূপে সাজিয়ে ভাইকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়েছিলো প্রথা।সেক্ষণ থেকেই ভাইয়ের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে উত পেতে প্রথা আসার অপেক্ষায় বসেছিল শ্রেয়া।দরজা খুলে অপর প্রান্তের আগন্তুক কে দেখে উচ্ছাসিত চেহারা মিলিয়ে যায় শ্রেয়ার। চোখ মুখে ভেসে উঠে প্রশ্নাতীত চাহনি। নির্বোধ নয়নে ক্ষণকাল চেয়ে থেকে শুধায়,“তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন বৌ মণি?কি হয়েছে?

প্রথা প্রত্যুত্তর না করে অদৃশ্যে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। অতঃপর আচমকাই..

চলবে..