#চিত্তে_অঙ্কিত_কৃষ্ণরেখা
#পর্বঃ|০২|
#ফাহমিদা_নূর
দরজা খুলে অপর প্রান্তের আগন্তুক কে দেখে উচ্ছাসিত চেহারা মিলিয়ে যায় শ্রেয়ার। চোখ মুখে ভেসে উঠে প্রশ্নাতীত চাহনি। নির্বোধ নয়নে ক্ষণকাল চেয়ে থেকে শুধায়,“তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন বৌ মণি?কি হয়েছে?
প্রথা প্রত্যুত্তর না করে অদৃশ্যে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। অতঃপর আচমকাই হাঁটু ভেঙ্গে নিচে বসে হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো,যেনো এতোক্ষণ আটকে রাখা যন্ত্রণা কান্না রূপে উগলে দিচ্ছে। হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রীতে যাওয়া প্রথাকে অশ্রুসিক্ত নয়নে ফিরতে দেখে শ্রেয়া তড়িৎ তাকে দুহাতে আগলে দাঁড় করিয়ে অধৈর্য গলায় বলল-“ বউ মণি তুমি কাঁদছো কেনো?ভাইয়ার সাথে দেখা হয়েছে তোমার?অফিসে ছিল তো ভাইয়া?
-“ও-ও
কান্না মিশ্রিত কষ্ঠে শ্রেয়াণ কে ইঙ্গিত স্বরুপ এটুকু উচ্চারিত করে আবারো থেমে যায় প্রথা।ঢুক গিলে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে বরাবরের মতো ব্যর্থ হয়।হঠাৎ প্রথার এরূপ আচরণে কিছুই বুঝে উঠতে পারে না শ্রেয়া,তবে এটুকু নিশ্চিত বউ মণির সাথে ভাইয়ের কিছু একটা হয়েছে।
দুপুরের লাঞ্চ সেরে ড্রয়িং রুমে বসেছিলেন সায়লা খানম।তিনিও এতোক্ষণ সতেজ মনের ছিলেন কিন্তু প্রথা কে এভাবে কাঁদতে দেখে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করেন,“ কি হয়েছে প্রথা?
দ্বার থেকে শ্রেয়ার সাহায্যে নত শিরে ভেতরে প্রবেশ করছিলো প্রথা। শাশুড়ির কন্ঠ শুনে মুখ তুলে তাকায়। তৎক্ষণাৎ ঝাঁপড়ে ধরে অভিযোগ মিশ্রিত ব্যাথাতুর গলায় বলে-“ মা?মাগো ও আমায় ঠকিয়েছে মা!আ্ আমায় ধোঁকা দিয়েছে।
অবাক ই হলেন সায়লা।প্রথার মাথায় হাত বুলিয়ে জানতে চাইলেন-“ কে ধোঁকা দিয়েছে? তুমি না শ্রেয়াণ কে চমকে দিতে গিয়েছিলে?তাহলে_
-“ আমি ওকে চমকে দিতে পারিনি মা তার আগে ও-ই আমায় চমকে দিয়েছে !ও আমার চোখের সামনে অন্য এক নারীর সাথে_
সায়লা খানমের গা ঘেঁষে ফ্লোরে বসে আবারও ডুকরে কেঁদে উঠলো প্রথা।
-“ কি করেছে শ্রেয়াণ?
গম্ভীর মুখে জিজ্ঞেস করলেন সায়লা খানম।
-“ আমি তাকে বাবা হওয়ার স্বাদ দিতে পারিনি বলে ও প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন নারীর সান্নিধ্যে যায়।আমি নাকি বন্দা!
-“ এসব কি বলছো তুমি?শ্রেয়াণ এগুলো বলেছে তোমায়?
-“ শুধু বলেনি দেখিয়েও দিয়েছে!আমারি চোখের সামনে ওই মেয়ের সাথে ছিঃ ভাবতেও এখন নিজেরই ঘেন্না লাগছে নিজের প্রতি।আমি তাকে চিনতে ভুল করেছি।
শ্রেয়া সায়লা অত্যচার্য ভঙ্গিতে একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। এতো দিন যে ছেলেকে নিখুঁত চরিত্রের অধিকারী উপাধি দিয়ে এসেছে তার নামে হঠাৎ ই এমন অভিযোগ বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে দু জনেরই। কিন্তু প্রথা যাকে নিজের চেয়ে বেশী ভালোবাসে তার নামে এসব বলার মেয়ে সে না।নিজেকে সামলে সায়লা খানম প্রথার মাথায় হাত রেখে বলেন -“ শান্ত হও বৌমা।শ্রেয়াণ আসলে কথা বলবো!
__
-“ তাকে সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসার,বিশ্বাস করার অপরাধে এতো বড় শাস্তির উপযুক্ত ছিলাম না আমি!এটা তো আমার প্রাপ্য ছিল না।
চোখ বুজে সায়লা রহমানের কোলে মাথা রেখে বিভিন্ন প্রলাপ বকছে প্রথা।পরম মমতায় তার মাথায় হাত বুলাচ্ছে সায়লা। চিন্তিত চেহারায় পাশে বসে আছে শ্রেয়া,তার পাশে না চাওয়া সত্তেও দুঃখী দুঃখী ভাব লেপ্টে বসে আছে নিলিশা।তার চেহারায় দুঃখী ভাব ফুটে উঠলেও মনে মনে পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে।যার বহিঃপ্রকাশ সবার চক্ষু গোচর হয়ে ঠোঁটের কোণে প্রকাশ পাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে।
’ আমার জীবনে এক তরফা কোন কিছুর ঠাঁই নেই।হোক সেটা ভালোবাসা কিংবা অন্যকিছু। যেহেতু শ্রেয়াণের মনে আমার জন্য বিন্দু পরিমাণ জায়গা বরাদ্দ নেই ,আজ থেকে শ্রেয়াণ নাম টাও আমার মনে ঘৃণার তালিকাতেই পড়বে।ও শুধু আমার বিশ্বাস ভঙ্গ করেনি আমার ভালোবাসা কেও অপমান করেছে।এর শাস্তি তাকে পেতে হবে।আমি তাকে শাস্তি দেবো।বাবা হয়েও বাবা ডাক শুনতে না পারার শাস্তি।মনে মনে এসব প্রতিজ্ঞা করতে করতে আবারও হেঁচকি তুলে কেঁদে উঠলো প্রথা-“ আমি তো ওকে ভালোবাসতে চাইনি ও-ই আমায় বাধ্য করেছিলো।তাহলে এখন কেনো এভাবে প্রতারণা করলো মা? আমার এখন তাকে নই বরং নিজেকে নি কৃ ষ্ট মনে হচ্ছে। ইচ্ছে করছে নিজেকে নিজেই শেষ করে দিই।
-“ কী বাজে কথা বলছো বৌমা?ভুলে যেও না তুমি এখন একা নও তোমার মাঝে আরো একটা ছোট্ট প্রাণ জড়িয়ে আছে।
-“ আর সেই প্রাণের আশপাশেও শ্রেয়াণের ছায়া পড়তে দেবো না আমি।সে শাস্তি পাবে,চরম শাস্তি!
-“ কী করবে তুমি?
-“ হারিয়ে যাবো!শ্রেয়াণের জীবন থেকে এই দেশ থেকে।ও জানতে পারবে একটা ছোট্ট প্রাণ আসছে পৃথিবীতে, যার শরীরে তার রক্ত বইছে।যার গঠন কিঞ্চিৎ হলেও তার মতো হবে কিন্তু সে ওই প্রাণ কে ছোঁতে পারবে না।দু চোখ জুড়িয়ে দেখতে পারবে না কারণ তার আগেই আমি ধরাশায়ী হয়ে যাবো!আহ ভাবলেই কতো শান্তি লাগছে একদিন সে তার জীবনে আমার শূণ্যতা অনুভব করবে। উঠতে বসতে আমাকে মনে পড়বে। ছোট্ট বেবীকে একপলক দেখতে চাইবে কিন্তু অপারগ হয়ে আফসোস করবে।ফিরে পেতে চাইবে আমাকে তখন আমি ফেরত আসবো না।তার কাতর চেহারা দেখে মনের খোয়াইশ মিটাবো।
আহত চোখে সকলে প্রথার বিলাপ শুনছে। যদিও নিলিশা বিরক্ত।শ্রেয়া বলে-“ বৌ মণি তুমি একটু রেস্ট নাও প্লিজ?ভাইয়া আসলে যা হবার হবে? এমনো তো হতে পারে কোন ভুল বুঝাবুঝি _
তাকে সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে নিলিশা বলে-“ চোখের দেখা তো ভুল হতে পারে না?
অশ্রুভেজা চোখে তাচ্ছিল্য হাসল প্রথা।নিলিশার উদ্দেশ্যে বলল-“ ঠিকই বলেছো চোখের দেখা ভুল হতে পারে না! চিন্তা নিও না খুব শিঘ্রই এ বাড়িতে একমাত্র তোমারই রাজত্ব চলবে। মনের আশা পূর্ণতা পাওয়ার সময় নিকটে চলে এসেছে তোমার।
-“ কী আবোলতাবোল বকছো প্রথা?মাথা ঠিক নেই তোমার।আনমনে বলে ফেলেছো তাই কিছু বললাম না।
মাথা ঝাঁকিয়ে নিলিশার কথা উড়িয়ে দেয় প্রথা।সোফা থেকে উঠে স্বাভাবিক ভাবে পা চালায় সিঁড়ির অভিমুখে । পেছন থেকে তিন জোড়া চোখ তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয়।
প্রিতিটি সিঁড়ি পার করার আগমুহূর্তে জীবন ক্যানভাসে শ্রেয়াণ নামক পুরুষটির প্রবেশ কালের স্মৃতি চারণ করতে ব্যস্ত হলো প্রথা।শ্রেয়াণের সাথে বিয়ের তিন বছর হলেও তাদের মাঝে পরিচিতি ঘটে আরো দু বছর পূর্বে । অফিস শেষে ফেরার পথে সেদিন প্রতাপ চৌধুরীর এক্সিডেন্টে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছিল।যার ফলে ইমার্জেন্সি রক্তের প্রয়োজন হয়।শ্রেয়াণও তখন ভার্সিটি পড়ুয়া স্টুডেন্ট ছিল এবং রক্তদান করতো। ভাগ্যক্রমে তার সাথেই প্রতাপ চৌধুরীর রক্তের গ্রুপ ম্যাচ হওয়ায় সে-ই রক্ত দিয়েছিল। সেদিন বাবার জন্য এতোই শোকাহত ছিল যে প্রথা শ্রেয়াণ কে লক্ষ্য করেনি কিন্তু শ্রেয়াণ ঠিকই তাকে দেখেছিল। এরপর কয়েক মাস তাদের দেখা সাক্ষাৎ হয়নি। হঠাৎ ই একদিন নবীন বরণ অনুষ্ঠানে শ্রেয়াণ প্রথার দেখা পেয়েছিল। অতঃপর পরিচয় পরবর্তীতে সেটা রূপান্তরিত হয় বন্ধুত্বে, যদিও বা প্রথা শ্রেয়াণের তিন ইয়ার জুনিয়র।এমনই একদিন শ্রেয়াণ প্রথা কে প্রপোজ করে বসে।প্রথার মনেও অবশ্য শ্রেয়াণের জন্য অনুভূতি ছিল তবে সে বাবার অনুমতি ছাড়া কোন সম্পর্কে জড়াতে চাইনি বলে তাকে রিজেক্ট করে দেয়। এরপর থেকে শুরু হয় শ্রেয়াণের পাগলামি।রাত বিরাতে চৌধুরী বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা,প্রথার ভার্সিটি যাওয়ার পথে অপেক্ষা, প্রতিদিন এক গুচ্ছ গোলাপের সাথে চিঠি পার্সেল সহ বিভিন্ন পাগলামো যেনো শ্রেয়াণের নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। অবশেষে প্রথা জানায় তার বাবা রাজি হলে সেও রাজি।এরপর কয়েক দিন শ্রেয়াণের কোন হদিস পায়নি প্রথা।আরো কিছু দিন অতিবাহিত হওয়ার পর একদিন সায়লা খানম কে নিয়ে চৌধুরী বাড়িতে হাজির হয় শ্রেয়াণ। অতঃপর দু পরিবার কে রাজি করিয়ে চার হাত এক হয়েছিল কোন এক বৃষ্টি মুখর দিনে।
হতাশা মিশ্রিত দীর্ঘ শ্বাস ফেলে কক্ষে প্রবেশ করে প্রথা।এই রুমের পরোদে পরোদে – আনাচে কানাচে দুজনের দুষ্টু মিষ্টি খুনসুটি,প্রেম ভালোবাসা,মান অভিমানের স্মৃতি রা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।ওই তো বেডের উপরের দেয়ালে তাদের ভালোবাসার একটি মুহূর্তর সাক্ষী স্বরুপ বড়ো ফ্রেমে বন্দী পেয়েছে খুনসুটি পূর্ণ ছবি। ওয়্যারড্রপের ওই ফুলদানিতে কতো যত্ন সহকারে দুজন এঁকেছিল এস লাভ পি।বেড সাইডের মগটাতেও দুজনের হাস্যোজ্জ্বল ছবি জ্বলজ্বল করছে।শখ করেই বানিয়ে এনেছিল শ্রেয়াণ।মগটা আলগোছে হাতে তুলে প্রথা। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে দেখতে আচমকা ছুড়ে মারে ফ্লোরে-“ সব মিথ্যে ছিল সব!
—
-“ তোর বাবা লন্ডন গেছে আজ পনেরো দিন কিন্তু একবারো ফোন করলো না! এখান থেকে কল করলে বন্ধ বলছে। আবার কোন বিপদ হয়নি তো?
-“ মা শুধু শুধু টেনশন করো না তো!হয়তো কাজের প্রেশারে কল দিতে পারছেনা।ভাইয়া তো বললো তার সাথে বাবার কথা হয়েছে।
সোফায় গা এলিয়ে চোখ বুজে সায়লার কথায় প্রত্যুত্তর করলো শ্রেয়া।
-“ দিদুন তুমি কি দাদু কে মিস করছো?
সায়লার গা ঘেঁষে বসে জিজ্ঞেস করলো নিলিশা আর শাদাতের একমাত্র কন্যা ফাইজা। বিনিময়ে চিন্তিত স্বরে সায়লা বলে-“ মিস করছি না কিন্তু মন কেমন খচখচ করছে এই আরকি!
তপ্ত শ্বাস ফেলে ফের বলে সায়লা-“ ছোট মা কে একবার দেখে আসো তো দাদুভাই?
খুশিই হলো ফাইজা,হাসি মুখে বলে-“ এখুনি যাচ্ছি কিন্তু দিদুন ছোট মা কান্না করছিল কেনো বলোতো?
-“ তুমি এখনো ছোট তাই বুঝবে না দাদুভাই!বড়ো হও আগে!
-“জানো আমার খুব খারাপ লেগেছে!
-“ হুঁ আমাদের ও খারাপ লেগেছে।
—
রাত বারোটা ছুঁই ছুঁই। ডুপ্লিকেট চাবির সাহায্য বাড়িতে প্রবেশ করে শ্রেয়াণ। প্রবেশ মাত্রই ড্রয়িং রুমে সায়লা খানম কে বসে থাকতে দেখে ক্ষণকাল স্থির দাঁড়িয়ে রয়। তারপর দীর্ঘ শ্বাস ত্যাগ করে কাউকে দেখেই নি এমন ভান ধরে সিঁড়ির দিকে পা এগুতে নিলে পেছন থেকে আওয়াজ ভেসে আসে সায়লা খানমের।বাধ্য ছেলের মতো দাঁড়িয়ে যায় শ্রেয়াণ।পেছনে ঘুরে সায়লার মুখোমুখি হয়ে বলে-“ কিছু বলবে?
ক্রুদ্ধ হলেন সায়লা, গম্ভীর আওয়াজে বললেন -“ দুপুর থেকে একের পর এক ফোন দিয়ে যাচ্ছি অথচ রিসিভ হয়নি?কেনো?
-“ ব্যস্ত ছিলাম!
ছোট একটা জবাবে রাগ যেনো মাথা ছাড়া দিয়ে উঠছে সায়লার।নিজেকে দমিয়ে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলেন -“ প্রথা যা বলেছে তা কি সত্যি?
শ্রেয়াণ দায়সারা ভাবে প্রত্যুত্তর করে-“ হ্যাঁ
তৎক্ষণাৎ মায়ের হাতের শক্ত চড় পড়লো শ্রেয়াণের গালে।মুখে হাত দিয়ে নির্বিকার ভঙ্গিতে শিতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁড়িয়ে থাকে শ্রেয়াণ।যেনো পূর্ব হতে অবগত ছিল এমন কিছুই হবে।
রক্ত চক্ষু নিয়ে রাগত স্বরে আবারো বললেন সায়লা -“ তুমি প্রথা কে বন্দ্যা মেয়ে বলেছো কোন মুখে?
-“ যা সত্যি তাই বলেছি।গায়ে লেগেছে বুঝি?হাহ লাগারই কথা সত্যি সব সময় তিতা’য় লাগে।
অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো সায়লা। সিরিয়াস বিষয় নিয়ে শ্রেয়াণ কখনো কোনদিন মায়ের মুখে মুখে তর্কে লিপ্ত হয়নি। আজকের শ্রেয়াণের সাথে বিগত ঊনত্রিশ বছরের শ্রেয়াণের বিস্তর ফারাক দেখতে পাচ্ছেন সায়লা। নিজের আশ্চর্য কে পেছনে ঠেলে গম্ভীর রুক্ষ গলায় বলেন -“ দ্বিতীয় বার ওর নামের সাথে এই ট্যাগ দেবে না।ফলাফলে তুমিই শূন্য পাবে!
শ্রেয়াণ তাচ্ছিল্য স্বরে বলল-“ সমাজে যারা মা হতে অক্ষম তাদের ট্যাগ তো একটাই ’বন্দ্যা’।সে হিসেবে ও কেন বাতিলের খাতায় থাকবে?
বিনিময়ে সায়লা যা বলল তাতে শ্রেয়াণ যেনো আশ্চর্যান্বিত হলো, অত্যাচার্য গলায় বলল-“মানে?
#চলবে ইন-শা-আল্লাহ
#চিত্তে_অঙ্কিত_কৃষ্ণরেখা
#পর্বঃ|০৩|
#ফাহমিদা_নূর
আজকের শ্রেয়াণের সাথে বিগত ঊনত্রিশ বছরের শ্রেয়াণের বিস্তর ফারাক দেখতে পাচ্ছেন সায়লা। নিজের আশ্চর্য কে পেছনে ঠেলে গম্ভীর রুক্ষ গলায় বলেন -“ দ্বিতীয় বার ওর নামের সাথে এই ট্যাগ দেবে না।ফলাফলে তুমিই শূন্য পাবে!
শ্রেয়াণ তাচ্ছিল্য স্বরে বলল-“ সমাজে যারা মা হতে অক্ষম তাদের ট্যাগ তো একটাই ’বন্দ্যা’।সে হিসেবে ও কেন বাতিলের খাতায় থাকবে?
বিনিময়ে সায়লা যা বলল তাতে শ্রেয়াণ যেনো আশ্চর্যান্বিত, বাকরুদ্ধ হলো, অত্যাচার্য গলায় অস্ফুট স্বরে বলল-“মানে?
শ্রেয়াণের মুখাবয়ব দেখে সায়লার যেনো ভালোই লাগলো,ব্যাঙ্গার্থক গলায় কথাটি পুণরায় রিপিট করলেন -“ হ্যাঁ।প্রথা বন্ধ্যা নয় বরং তুমিই বাবা হতে অক্ষম ছিলে।আর প্রথা?সে তো তোমায় সর্বস্ব দিয়ে আগলে রাখতে চেয়েছিলো। সত্যিটা জানার পর যদি তুমি নিজেকে তার অযোগ্য কিংবা অপূর্ণ মনে করে তাকে তোমার জীবন থেকে মুক্তি দিয়ে দাও সেই ভয়ে অক্ষমতা টা নিজের ঘাড়ে নিয়ে নিলো।ভালোবাসতো তো তাই তোমার হৃদয়ে দাগ দিতে চায়নি।সমাজের কটুক্তি নিজের গায়েই মাখিয়েছে বেচারি মেয়েটা।
শ্রেয়াণ বাকহারা নয়নে কেবল মায়ের দিকে চেয়ে আছে।সায়লা বলতে শুরু করে-“ মনে আছে বিগত দেড় বছর ধরে তোমার জন্য সকালের ব্রেকফাস্ট আর রাতের ডিনার প্রথা নিজের হাতে রুমে নিয়ে যেতো?সেটায় মেডিসিন মেশানো থাকতো যাতে তোমার অক্ষমতা কেটে যায়।মাঝে মাঝে খাওয়ার পর তুমি অজ্ঞান হয়ে যেতে, পরে নিজেকে হসপিটালে আবিষ্কার করতে? তখনো তুমি নিজ থেকে বেহুঁশ হতে না প্রথা খাবারে অজ্ঞান হওয়ার ওষুধ মিশিয়ে দিতো যার অযুহাতে তোমায় হসপিটালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারে।আর প্রথার এতোদিনের পরিশ্রমের ফল স্বরূপ তুমি _
বাবা শব্দ উচ্চারণ করতে গিয়ে শ্রেয়াণের পেছনে তাকায় সায়লা।খানিকটা দূরে সিঁড়ির উপর মলিন চোখে দাঁড়িয়ে আছে প্রথা। চোখের ইশারায় মাথা দুদিক নাড়িয়ে বাকিটা বলতে নিষেধ করছে। দমে গেলেন সায়লা। প্রশ্রয় দিলেন তার চাওয়াকে।তখনই অধৈর্য গলায় শ্রেয়াণ বলে উঠে -“ ফলস্বরূপ আমি কী মা? প্লীজ বলো?
উত্তর দিলেন না সায়লা বরং নিজের মতো করেই বললেন-“ সেইম অন ইউ শ্রেয়াণ!সেইম অন ইউ।তোমাকে সন্তান বলতেও আজ আমার লজ্জা লাগছে। বাড়িতে বৌ রেখে পর নারীর সাথে ছিঃ?সেটা আবার মায়ের সামনে নির্বিকার চিত্তে স্বীকারোক্তিও দিচ্ছো?তোমার কাছ এটা আসা করিনি! এমন শিক্ষা তো আমার সন্তানদের আমি দেয়নি।
প্রলম্বিত শ্বাস টেনে হাত মুঠো বন্ধ করে নেয় শ্রেয়াণ।মায়ের প্রতিটি বাক্য তার হৃদয় এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিচ্ছে কিন্তু সে নিজেকে সংযত কৌশলে ড্রয়িং রুম থেকে শুরু করে চোখের দেখা পুরো বাড়ির দেয়াল জুড়ে চোখ বুলিয়ে নেয়।সময় সময় ফোন করে যে অজ্ঞাত লোক শাহিন জাওয়ান কে কিডন্যাপ করে এখন মে!রে ফেলার হুমকি দিচ্ছে সে যেনো শ্রেয়াণের প্রতিটি পদক্ষেপের সংবাদ পাচ্ছে বাতাসের ঝাপটার ন্যায় দূর্বার গতিতে। কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব?বাড়িতে কি তার অজান্তেই কোন গোপন ক্যামেরা বসিয়েছে ওই রাসকেল? প্রতিটি কোণায় কোণায় নজর বুলিয়ে সন্দেহ জনক কিছু না পেয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো শ্রেয়াণ। আপাতত কাউকে কিছু বলা যাবে না।কখনো কখনো খামোশি ও ভয়ঙ্কর উত্তর দেয় পরিস্থিতির।কথাটি অনুকরণ করে শ্রেয়াণ ওই ব্যাক্তির কথা মেনে পরিবারের আপনজন কে কথার আঘাতে দূরে ঠেলে দিচ্ছে কিন্তু খুব শিঘ্রই সব ঠিক করে দেবে শ্রেয়াণ।এটাই ভাবছিল হঠাৎ মনে পড়লো দুপুরে প্রথার সম্মুখে করা পাপের কথা।মনে প্রশ্ন উদয় হলো প্রথা কোথায়? তড়িৎ আশপাশ অবলোকন করে নিজ কক্ষে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পেছনে ফিরতেই প্রথাকে দেখতে পায় শ্রেয়াণ।খরা ধরা চৌচির হৃদয়ে যেনো এক পসলা বর্ষের ছোঁয়া পেলো শ্রেয়াণ।মন গহীনে প্রশান্তিতে ভরে উঠে কিন্তু তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়না প্রথার চোখে চোখ মিলিয়ে।যে চোখে নিত্যদিনের অভ্যাসবশত আজও ভোরের সূচনা হয়েছিল তার জন্য একরাশ মুগ্ধতা আর মাদকতা দিয়ে সে চোখে স্পষ্ট ঘৃণা আর বিরক্তি দেখতে পাচ্ছে শ্রেয়াণ।বুকে যেনো চিন চিনে ব্যাথা উঠলো তার।ছলাৎ করে উঠলো হৃদয় ও মন। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির রেখা বদলে রূপ নেয় অপরাধবোধের।মনে মনে আকুতি মিশ্রিত প্রতিজ্ঞা করে শ্রেয়াণ-“ জান তোমার চোখে আমার জন্য ঘৃণা সইতে পারছিনা আমি। প্লীজ আর মাত্র কয়েক দিন ধৈর্য্য ধরো তারপর সকল সত্যি বলে আবারো হৃদয় জয় করে নেবো।কি করবো বলো?তুমি যেমন আমার প্রাণ ঠিক তেমনি বাবাও তো মায়ের স্বামী।বাবাকে সহি সালামতে মায়ের কাছে ফিরে দিতে না পারলে তো সত্যিই আমাকে সন্তান পরিচয় দিতে বিবেকে বাঁধবে। আপাতত আমার অমানবিক আচরণ টুকু সহ্য করে নাও প্লীজ।
একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বিভিন্ন ভাবনায় বিভোর শ্রেয়াণ দেখতে পেলো প্রথা মাথায় এক হাত রেখে এদিক ওদিক কিঞ্চিৎ টলছে, চোখ দুটো বূজে নিতে চাইছে পিটপিট ভঙ্গিমায়।তৎক্ষণাৎ অস্থির ভঙ্গিতে এগিয়ে যায় শ্রেয়াণ -“ প প প্রথা ? কষ্ট হচ্ছে তোমার?
রেলিং ধরে বহু কষ্টে নিজেকে স্থির করে প্রথা।হাত উঁচিয়ে শ্রেয়াণের উদ্দেশ্য বজ্রকণ্ঠে বলে-“ ঔ অপবিত্র হাতে আমাকে ছোঁয়ার মোটেও চেষ্টা করবেন না মিস্টার শ্রেয়াণ জাওয়ান!
থমকে দাঁড়ায় শ্রেয়াণ। বিমূঢ় হয়ে তাকায় তার দিকে। কিছু মুহূর্তের ব্যবধানে এতোটা কঠোর হয়ে গেছে প্রথা?
কান্নার ফলে চোখ ফুলে উঠেছে প্রথার, চক্ষু হয়েছে রক্তিম বর্ণ। তাছাড়া সারাদিন অনাহারের ফলপ্রসূতে হয়তো মাথা চক্কর দিয়ে উঠেছে।সায়লা এগিয়ে এসে তাকে নিয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো। নিরব দর্শকের মতো শ্রেয়াণ সবকিছু দেখেই গেলো শুধু বলার মতো ভাষা খুঁজে পেলো না। খুঁজে পেলেও হয়তো তারা আজ তার কথা মানতো না। কিছু পল চেয়ে থেকে দ্রুত কদমে নিজ কক্ষ পথে ধাবিত হয় শ্রেয়াণ। কিছু বুঝাপড়া বাকিস।
জায়গা ফাঁকা হতেই আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো নিলিশা। ঠোঁটের কোণে বুলে আছে প্রাণবন্ত হাসি। চোখের সামনে শ্রেয়াণের হাল দেখে যেনো সে তৃষ্ণা জুড়াচ্ছে। চরম তৃষ্ণা । হাত বন্দী ফোন সামনে তুলে বায় বলে লাইন বিচ্ছিন্ন করলো। যেটা এতোক্ষণ কানেক্ট থেকে সিঁড়ি ঘরের দৃশ্য উপভোগ করছিল নিলিশা এবং ফোনের বিপরীত প্রান্তের লোক। সংযোগ কে টে বুকে হাত গুজে পিলারে হেলান দেয় আবেশে। চুক চুক শব্দ সংযোগ বাঁকা হেসে বলে-“ বাবা হওয়ার সুসংবাদ টা কেউই তোমায় দিলো না শ্রেয়াণ।হয়তো দেবেওনা।চাইলে আমি তোমায় জানাতে পারি কিন্তু _
সেকেন্ড দুয়েক ঠোঁট চুকা করে চুপ হয়ে পুণরায় বলল,“কিন্তু বলবো না!
কারণ আমিও চাই প্রথা হারিয়ে যাক।সে যেনো কুনাক্ষরেও টের না পায় তার শ্রেয়াণ তারই ছিল এবং আছে । ব্যাস বা-বা কে মুক্ত করার বিনিময়ে জে.কে এর কথামতো তাকে ভুল বুঝানোর উদ্দেশ্যে ইন্টি!মেট হওয়ার মিথ্যা অভিনয় করছিল মাত্র।
ফের মাথা ঝাঁকিয়ে হাসল নিলিশা -“ শ্রেয়াণ! শ্রেয়াণ! শ্রেয়াণ! তোমার ভালোবাসার বন্দিনী যখন উড়াল দিয়ে দূর অজানায় হারিয়ে যাবে সেদিন তোমার পাগলপ্রায় অবস্থা দেখার জন্য উত পেতে আছি আমি। কখন যে সে দিনটা আসবে আর আমি তোমার ক্রন্দনরত মুখশ্রীটা হৃদয় জুড়িয়ে দেখবো।
–
কক্ষে প্রবেশ করে ফোন হাতে অজ্ঞাত ব্যক্তির কলের অপেক্ষা করছে শ্রেয়াণ। সোফায় আসন পেতে টি টেবিলে রাখা ল্যাপটপ কিবোর্ডে দক্ষ হাতে টাইপিং করছে এধার থেকে ওধার।ক্ষণকাল পর হাতের ফোন ভাইব্রেশন দিয়ে উঠলে নাম্বার দেখে ভ্রু কুঁচকে নেয়। তপ্ত শ্বাস ফেলে রিসিভ করে বলে-“ কিছু হয়েছে আফিফ? এতো রাতে কল করেছো কেনো?
-“ বস বাসায় পৌঁছে গেছেন?
-“ হ্যাঁ কেনো?
-“ ম্যাডাম কি আপনারে জুতা_
মুখ ফসকে এটা বলেই চোখ বুজে জিহ্বা কাটে শ্রেয়াণের এসিস্ট্যান্ট আফিফ।পর পরই নিজেকে শুধরে বলে-“ মানে ম্যাডাম কি রা গ ক রে _
-“ এটা বলতে ফোন করেছো?
-“ স্যার আপনি তো নির্দোষ।ঔ হা!লায় আপনারে দিয়া ম্যাডামের মনে আঘাত করতে এসব করাইছে।হা!লারে পাইলে কাইট্টা ছিড়া লবণ_
নিরবে আফিফের কথা শুনছিল শ্রেয়াণ। তখনি ফোনে ছয় ডিজিটের প্রাইভেট নাম্বার থেকে কল ঢুকে। নাম্বার চিনতে ভুল হয়না শ্রেয়াণের আফিফের কল কে!টে তড়িৎ সেটা রিসিভ করে কানে তুলতেই ভেসে আসে -“ আপনজনের চোখে নিজের জন্য ঘৃণা দেখে কেমন ফিলিংস হচ্ছে শ্রেয়াণ জাওয়ান?
চোখ মুখ শক্ত করে রইলো শ্রেয়াণ। ইচ্ছে করছে ওপর প্রান্তের স্ক্রাউন্ডেল ফোন থেকে টেনে হিচড়ে বের করে জানে মে রে দিতে।
-“ যা চেয়েছিস তাই হয়েছে এবার তোর লোকেশন দে।
-“ লন্ডন।
চোখ কান সজাগ করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় শ্রেয়াণ। ট্রাউজার পকেটে হাত পুরে এগিয়ে যায় বেলকনির অভিমুখে।ওপার থেকে পুণরায় আওয়াজ আসে-“ তোমার বিমান যখন লন্ডনে ল্যান্ড করবে তখন এয়ার পোর্টের বাইরে হোইল চেয়ারে বসে অর্ধমৃত অবস্থায় রিসিভ করবে তোমার একমাত্র সো কন্ড ফাদার শাহিন জাওয়ান।
-“ খুব শিঘ্রই দেখা হচ্ছে।
-“উহুম! আমাকে দেখার সৌভাগ্য তোমার হবে না স্যরি!
-“ কাপুরুষের মতো আড়ালেই থেকে যাবি? অন্ততঃ নামটুকু বলে যা?
-“ তোমার এই আশা টা আংশিক পূরণ করতে পারি আন্ডার ওয়ার্ল্ডে আমার নাম জে কে!
আরেকটা কথা, আমরা সব সময় যেমটা ভাবি তেমনটা নাও হতে পারে আবার এমন কিছুও হতে পারে যেটা আমাদের কল্পনাতীত ছিল।
-“ স্পষ্ট ভাষায় বল!
-“বুঝতে পারবে খুব শিঘ্রই।যা তোমার মনে চলছে তার বিপরীত কিছু ঘটবে। গুড লাক..
কপাল কুঁচকে ফোনের দিকে চেয়ে রইলো শ্রেয়াণ।
শেষের কথাগুলো মর্মার্থ বুঝতে পারছেনা সে কোন মতেই।তার মনের বিপরীতে কি ঘটবে?বেশীক্ষণ সে ভাবনা মাথায় না রেখে পাশের ব্যালকনিতে নজর দেয়। এক রুম পরেই প্রথার সয়নকক্ষ।যেটাতে অভিমান করে মাঝে মাঝেই শিফট হয়ে যেতো প্রথা। মধ্যরাতে শ্রেয়াণ আবার কোলে তুলে নিয়ে আসতো এই রুমে।আজো হয়তো প্রথা সেখানেই আছে অভিমান করলে শ্রেয়াণ এখনি ছুটে যেতো সে রুমে। কিন্তু আজ ছুটে যাওয়ার কোন মুখ নেই তার কারণ সে প্রথার সাথে মান অভিমানের কিছু করেনি বরং বিশ্বাসঘাতকতা করছে,তার বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে যেটা জুড়া না লাগা অব্দি তার ছায়া মাড়ানোও প্রথার জন্য ঘৃণ্য।
ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে তুলে শ্রেয়াণ।ভাবনায় চলছে একটি বাক্য -“ আর মাত্র কিছুদিন। তারপর দুজনের ভুল বোঝাবুঝির দিন শেষ।
–
বিশ্বাস ভেঙে পড়ার শব্দ শোনা যায় না কিন্তু তার প্রতিধ্বনি মাথার ভেতর ক্রমাগত ঘুরপাক খায়।যখন সত্য প্রকাশ পেল, মনে হলো আমার পৃথিবীটা হঠাৎ থমকে গেছে। শরীরে রক্ত বইছে ঠিকই কিন্তু হৃদয় যেন নিথর। যাকে নিজের থেকে বেশি বিশ্বাস করেছিলাম, সেই মানুষটাই যখন ছুরি চালাল, তখন আঘাতটা শুধু শরীরে নয়, আত্মায়ও বাজল।
তাকে ছাড়া জীবনটা কল্পনা করাই ছিল অসম্ভব, অথচ আজ বুঝলাম, যে মানুষটা ছিল আমার সবচেয়ে বড় আশ্রয়, সে-ই আমাকে আশ্রয়হীন করে দিল। বুকের ভেতর শূন্যতার এমন এক শীতল অনুভূতি যেন হৃদপিণ্ডের জায়গায় জমে থাকা এক টুকরো বরফ।
এই মূহুর্তে প্রতিটি স্মৃতি বিষ হয়ে ওঠছে। যা একদিন সুখ এনে দিত আজ তা শুধুই কষ্টের জ্বালা। সেই মুহূর্তগুলো মনে পড়লে চোখ ভিজে আসছে, কিন্তু অশ্রুগুলোও যেন জ্বলন্ত। মনের ভেতর প্রশ্নগুলো অনবরত আঘাত করছে আমার-‘কেন? কী এমন করলাম আমি? যে আমার ভালোবাসা তার কাছে যথেষ্ট হলো না?’
এতটুকু লিখেই ডাইরি থেকে বেগুনি রঙের কলমটা উঠিয়ে নেয় প্রথা। ল্যাম্পের সোনালী আলোয় পড়ার ছোট টেবিল ভরে উঠেছে। একদৃষ্টিতে প্রথা ল্যাম্পের দিকে তাকিয়ে রয়। এক খন্ড আলোর ছটা প্রথার চোখে ভারি খেয়ে অশ্রু কণাগুলো মুক্তার মতো চিকচিক করছে। চোখ বুঝতেই কান্নারা গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে।এক হাতে অশ্রু মুছে আবারো ডাইরিতে কলম রাখে প্রথা।
তুমি আমায় সারপ্রাইজ দিয়েছো আজ। অনেক অনেক বড়ো।বিনিময়ে আমি তোমায় খালি হাত রাখবো না। আমিও দেবো খুব শিঘ্রই! ওয়েট এন্ড ওয়াচ..
#চলবে ইনশা-আল্লাহ