চিরন্তিনী পর্ব-০১

0
3

#চিরন্তিনী
পর্ব- ০১

ইদানীং আমার স্বামীর প্রতি আমার ছোটোবোনের অশোভন চাহনি গুলো খুব চোখে বিঁধছে। প্রথম প্রথম খুব বেশি গুরুত্ব না দিলেও এখন আর সহ্য হয় না। মনে হচ্ছে ইচ্ছাকৃত ভাবে তামান্না আমার স্বামীকে স্পর্শ করছে। মিতুল কোথাও দাঁড়িয়ে থাকলে সে কাছে গিয়ে ঘেঁষে ঘেঁষে কথা বলে । খাওয়ার সময় মিতুলের কাছে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত যত্নের সহিত এটা – ওটা পাতে তুলে দেয়। এমনকি কখনো কখনো মজা করে তার পাত থেকে মাছ /মাংসের পিস তুলে নিয়ে খায়। এগুলো মোটেই আর সহ্য হচ্ছে না। মিতুল মাঝেমধ্যে অপ্রস্তুত হয়ে যায়। বিভ্রান্তিকর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে। আমি বুঝতে পারি সে এসব পছন্দ করছে না। আবার আমার বোন বলে কিছু বলতেও পারছে না।

উপরোক্ত ক্ষুদ্র সংলাপ’টি পরে নিশ্চয়ই আপনাদের এই কাহিনির বিস্তারিত জানতে ইচ্ছে করছে। চলুন, তাহলে আলোচ্য এ ক্ষুদ্র উপন্যাস টা নিয়ে বর্ননা করাই যাক…

তোহা — বড্ড জেদী এবং বাউন্ডুলে এই অষ্টাদশীর প্রণয় হয় একই গ্রামের মাতব্বরের জৈষ্ঠ্য পুত্র মিতুলের সাথে। দেখতে সুদর্শণ, পরিপূর্ণ এই যুবক মন কাড়ে নি এমন নারী পাওয়া যাবে না এই অনলপুরে। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে চোখ ধাঁধালো অষ্টাদশী তোহার উপর। কঠোর মনের অধিকারিণী তোহার সম্মতি পেতে পুরো ছয় মাস সাধনা করতে হয়েছিলো তাকে। সর্বক্ষণ পিছু পিছু ঘোরা, কলেজের গেটের সামনে থাকা আইসক্রিম ওয়ালাকে অগ্রিম আইসক্রিমের বিল দেওয়া, ছোট বাচ্চার হাত দিয়ে তাকে গোলাপ, চুড়ি গিফট দেওয়া থেকে শুরু করে কত কি! এক পর্যায়ে যখনই তাদের সম্পর্ক গাঢ় হলো, তখনই প্রাচীর হয়ে দাঁড়ালো তোহার পরিবার। তোহার মা-বাবা এই সম্পর্কের ঘোরতর বিরোধী। মাতব্বের স্বভাব- চরিত্র ভালো নয়। যতই টাকা পয়সা হোক, কিন্তু দিন শেষে ভালো বংশ’ই মূল। মাতব্বর এ যাবৎ দুটো বিয়ে করেছে। প্রথম স্ত্রীকে যে অসহনীয় নির্যাতন করে তাড়িয়েছে, তা এলাকার কারোরই অজানা নয়। পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিয়ের পরে বড় বড় ছেলে-মেয়ে থাকার পরেও সেই লোক বেশ কয়েকবার এলাকার নারীদের সাথে অবৈধ কেলেঙ্কারিতে লিপ্ত হয়েছে। তার ছেলে বড় হয়েছে ঢাকায়। পড়াশোনা শেষে গ্রামে এসেই ফাঁসিয়েছে অবলা তোহা কে। যতই দূরে থাকুক, কিন্তু দিন শেষে বাপের স্বভাব যে ছেলের মধ্যে নেই, তার কি প্রমাণ?

আসলেই কি বংশের কোনো একজন পূর্বপুরুষ খারাপ হলে বাকিরাও খারাপ হয়, চরিত্রহীন হয়? গ্রাম অঞ্চলের মুরব্বিদের এই ভ্রান্ত ধারণাকে মোটেই প্রশ্রয় দেয় নি তোহা। বরং নিজের সিদ্ধান্তেই অটল ছিলো। মেয়ের জেদী রুপের সাথে পেরে ওঠে নি তোহার মা-বাবা। শেষে আশ্রয় নিলেন অন্য মাধ্যমের। ঘরবন্দি করে ফেললেন বড় মেয়ে তোহাকে। তিন দিনের মধ্যে ছেলে দেখলেন। বাধ্য করলেন পাত্র পক্ষের সামনে বসে অন্য ছেলের নামে আঙুলে আংটি পড়তে। ভেবেছিলেন, এভাবেই বুঝি একসময় বিয়েটা হয়ে যাবে। আর স্বামীর ছোঁয়া পেলে পরবর্তীতে একটু একটু করে ভুলে যাবে প্রেমিক পুরুষ কে। কিন্তু তা আর ঘটলো কই? মেয়ের তেজের সামনে টিকতে পারলেন না তোহার পরিবার। বাবা -মায়ের চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার ফল। প্রেমিকের হাত ধরে পালালো বিয়ের আগের রাতেই। সারা এলাকায় হইচই পড়ে গেলো এ নিয়ে। ছেলে মেয়েকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে তৃতীয় দিনে সালিশ বসালেন তোহার বাবা। কিন্তু তাও সুরক্ষা হলো না। মিতুল- তোহার প্রেম কাহিনি কি অজানা? মেয়ে স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়েছে ছেলের হাত ধরে। এখানে ছেলের পরিবারের কি দোষ? দোষ তো মেয়ের পরিবারের। কিভাবে এমন কলঙ্কিনী, পর পুরুষের হাত ধরে অবৈধ সম্পর্কের জেরে বাড়ি ছাড়লো তাদের মেয়ে। সেবার ভীষণ অপমানিত হয়েছিলেন তোহার বাবা-মা। কঠোর হয়ে গেছিলেন মেয়েদের প্রতি। ফলস্বরূপ আরো শাসনে রাখতেন ছোটো মেয়ে তামান্নাকে। এসএসসির পর আর পড়ান নি পর্যন্ত।

প্রায় এগারো দিন পর তোহাকে নিয়ে বাড়ি আসে মিতুল। তারা পালিয়ে বিয়ে করে বন্ধুর বাড়িতে ছিলো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই ফিরেছিলো নীড়ে। তেমন আপত্তি করেননি মাতব্বর। মেয়ে যথেষ্ট সুন্দরী ও শিক্ষিতা। বাবা তার প্রাইমারির শিক্ষক। কানাকড়ি খুব একটা না হলেও এলাকায় সম্মান কম নয়।

“যদি তোমার সন্দেহ হয়, তাহলে তামান্নাকে সাবধান করো। ”

শিমুলের কথা কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই ভাবনার অন্তরাল থেকে বেরিয়ে এলো তোহা। দেবরের দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসলো। পেটের উপর হাত রেখে অতি সাবধানে উঠে দাঁড়ালো। সাত মাসের অন্তঃসত্তা সে। পেটের নিচের দিকটা ধীরে ধীরে উঁচু হচ্ছে। সেদিন দাদি শাশুড়ী এসেছিলেন। পেট দেখেই নিশ্চিত হয়ে বলেছেন ছেলে আসবে। এরপর থেকে কেনো যেনো রাতে ঘুম হয় না তোহার। সারাক্ষণ স্বপ্ন দেখে ছেলে বাচ্চা নিয়ে। ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো ফ্রিজের দিকে। রান্নাঘরে বিদ্যুতের লাইন টানা নেই। ফলস্বরুপ, কাঠের ছয় চালার এই ঘরটায় শোবার ঘরেই ফ্রিজ রাখা হয়েছে। তোহা রসগোল্লার প্যাকেট টা বের করলো। পুরো বক্সটাতে মাত্র চার টা রসগোল্লা অবশিষ্ট আছে। শিমুল বাড়ি ছিলো না বিধায় সে বাদে বাকিদের সবাইকে দেওয়া হয়েছে। দেবরের সামনে বক্সটা দিয়ে ক্ষীণ স্বরে বললো,

– কাল রাতে তোমার ভাইয়া এনেছিলো। আমি খেতে চেয়েছিলাম, তাই। সবাইকে দিয়েছি, এটা তোমার।

শিমুল একটু লজ্জা পেলো। বয়সে তোহার থেকে দু বছরের বড় হলেও এই বয়সকে মোটেই গুরুত্ব দেয় না তার ভাবী। সম্পর্কের জের ধরেই সর্বদা নাম ধরে ডেকে তুমি সম্বোধন করে। রসগোল্লার প্যাকেট টা হাতে নিয়ে এলোমেলো কন্ঠে বললো,

– কি দরকার ছিলো, ভাবী? তোমার জন্য এনেছে, সবাইকে কেনো দিতে গেলে?

বিনিময়ে মৃদু হাসলো তোহা। এ বাড়িতে কোনো কিছু একা খাওয়ার জো নেই। মিতুলের সামনে এ নিয়ে কিছু না বললেই একাকী ঠিকই কথা শুনাতো শাশুড়ী – ননদ। বললো,

– সবাই’ই যখন ভাগ পেলো, তুমি কেনো বঞ্চিত হবে? খাও, আমি খেয়েছি।

মিতুলের দুটো শুকনো শার্ট হাতে শোবার ঘরে ঢুকলো তামান্না। ঢুকতে ঢুকতে বললো,

– আপু, শার্ট দুটো ধুয়ে দিয়েছিলাম । কোথায় রাখবো?

তামান্নার হাতে স্বামীর শার্ট দেখতেই ফুঁসে উঠলো তোহা। দ্রুত গতিতে কদম বাড়িয়ে ছিনিয়ে নিলো। শাসিয়ে ক্ষ্যাপাটে স্বরে বললো,

– মা – বাবা তোকে আমার যত্ন করার জন্য এখানে পাঠিয়েছেন। কিন্তু তুই তো দেখছি তোর দুলাভাইকে নিয়ে ব্যস্ত।

বিনিময়ে সুন্দর করে হাসলো তামান্না। বললো,

– এটা কি বলছো? দুলাভাইয়ের শার্ট তো তোমাকেই ধুতে হতো। তুমি অসুস্থ বলে আমি ধুয়ে দিচ্ছি। আলাদা করে আর কিইবা করলাম?

দুই বোনকে কথা বলতে দেখে শিমুল ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। তোহা শূন্য ঘর পেয়ে খোলাখুলি কথা বলে উঠলো। বললো,

– ইদানীং তোর চলাফেরা, আচরণ কিছুই পছন্দ হচ্ছে না আমার। তোর দুলাভাই আসলে আশেপাশে ও ঘেঁষবি না। তাতে বিরক্ত হয় সে। আর ভুলেও আমার শোবার ঘরে ঢুকবি না। কিছু প্রয়োজন হলে নিজেই ডেকে নেবো। মনে থাকে যেনো।

মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো তামান্না। বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। তোহা চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করলো। যতই বাবা- মা তাকে না মানুক। কিন্তু বাচ্চা হবে শুনেই ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। বাড়িতে নিতে আসে নি ঠিকই, তবে এই অসুস্থ শরীরে যেনো তোহার কষ্ট না হয়, তাই তামান্নাকে পাঠিয়ে দিয়েছে গতমাসে। বাচ্চা না হওয়া পর্যন্ত বোনের দেখভাল সেই করবে। কিন্তু এর মধ্যেই নিজের বোন হয়ে বোনের সংসারের দিকে নজর দিয়েছে। উফফ! এসব নেতিবাচক বিষয় নিয়ে ভাবতে চায় না তোহা। হয়তো সেই গুলিয়ে ফেলেছে সব। তামান্না নিশ্চয়ই মিতুলকে ভাই হিসেবে দেখে এই হাসি – তামাশা, খুনশুটিতে মেতেছে।

তোহা খাটে শান্ত হয়ে বসলো। মিতুল নিশ্চয়ই এসব দুষ্টুমিতে বিরক্ত হয়েছে। কিছু বলতেও পারছে না। কিন্তু বাড়ি ফিরলে রাতে তাকে বোঝাতে হবে। বলতে হবে তামান্নার অবুঝ মনের কথা। হয়তো ভাই হিসেবেই এমন তামাশা করে সে। সত্যিই তো, তোহাদের কোনো ভাই নেই।

সন্ধ্যা হতেই তলপেট ব্যথা করছে। ক্রমশ তা বিষ হয়ে অবশ হয়ে যাচ্ছে। মাত্র তো সাত মাস, কিন্তু ব্যথাও যে সওয়ার নয়। মিতুল কে কল দেওয়ার সাথে সাথেই উদ্ভ্রান্তের ন্যায় ছুটে এসেছে। বিশালাকার দোকান টা ভুলক্রমে তালা না দিয়েই বাড়ি এসেছে দেখে তোহার শশুর রাগারাগি করেছেন। কিন্তু ছেলের ত্যাড়া কথার সামনে টিকতে না পেরে নিজেই ছুটেছেন দোকানে।

শোবার ঘরে শুয়ে আছে তোহা। পেটে হাত দিয়ে চেষ্টা করছেন ব্যাথা কমানোর। কিন্তু হচ্ছে না। তারিখ অনুযায়ী আজ একবার ডক্টর দেখানোর কথা। কিন্তু মানসিক যন্ত্রণায় এতোসব ভুলেই বসেছে সে। পাশেই তামান্না বসে আছে গরম পানি হাতে। থেমে থেমে তা খাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে তোহা। মিতুল দ্রুত পায়ে ঘরে ঢুকে তামান্নাকে সরতে বসলো। তার জায়গায় বসে গালে হাত ছুইয়ে আদুরে কন্ঠে চিন্তার ছাপ ফেলে বললো,

– বেশি ব্যথা করছে?

তোহা সহ্য করার চেষ্টা চালিয়ে চাপা কন্ঠে বললো,

– হ্যাঁ, একটু।

তোহার ভাষ্যমতে একটু মানেই অনেক। সে সহজে নিজের সমস্যার কথা খোলাখুলি বলতে চায় না। দ্রুত তাকে ধরে বাড়ির বাইরে বের করলো। বাইকে বসানো এই মুহুর্তে সম্ভব নয়। পাশের বাসার এক সিএনজি চালক কে ডেকে আনলো শিমুল। আজিজ ড্রাইভার মাত্রই সন্ধ্যার নামাজ পড়তে এসেছিলেন। মোনাজাত শেষে ঘাড় ঘোরাতেই টেনে নিয়ে এসেছে শিমুল।

তোহাকে খুবই সাবধানতার সাথে ভেতরে ওঠানো হলো। তামান্না যে চে বোনের সাথে যেতে চাইলেও বাধ সাধলো মিতুল। বললো,

– কোনো দরকার নেই। চেক আপ করে তাড়াতাড়ি ফিরবো আমরা।

এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু বলার সাহস পেলো না তামান্না। চুপ চাপ গম্ভীর মুখে চলে গেলো বাড়ির ভেতরে।

সেবার তোহার পেটে ব্যথার যন্ত্রণা যেনো মিতুল কে ছুয়েছিলো প্রগাঢ় ভাবে। কতটাই না ছটফট করছিলো। শেষে নিজের ব্যথা ভুলে স্বামীকে সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলো তোহা। ডেলিভারির দিন ঠিক কি অবস্থা হবে এটা ভেবেই হেসে কুটিকুটি হচ্ছিলো সে আর শিমুল।


পাশের বাড়ির মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান। চারদিকে মানুষের হইচই, আলোয় ধাধানো সজ্জিত গেট দেখে আর ঘরে বসে থাকতে পারলো না তোহা। সাড়ে সাত মাসের পেট নিয়ে শাশুড়ীকে মিনতি করেই এগিয়ে গেলো বর দেখতে। গেটে বরপক্ষকে আটকানো, গায়ে হলুদ, মেয়েকে নতুন বিয়ের সাজে সাজানো, এরপর বিয়ে, খাওয়া- দাওয়া – সবমিলিয়ে তখন প্রায় বিকেল। এখন আর এখানে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে না। বড্ড জনাকীর্ণ জায়গায় নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার। শাশুড়ীকে বলতেই তিনি জানালেন – এখন যেতে পারবেন না। প্রতিবেশীদের সাথে কতদিন পর একসাথে গল্প করার সুযোগ পেলেন। তোহাকে বললেন,

– আমার যেতে রাত হবে, তুমি যাও।

আর আপত্তি করেনি তোহা। পাশাপাশি বাড়ি। খুব বেশি যে দূরত্ব তা ও নয়। একা একাই ধীর পায়ে হেটে এলো নিজেদের বাড়ির গেটে। কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। এই যে বিয়ের পরিবেশ থেকে দম বন্ধকর অবস্থা সৃষ্টি করে সে বেরিয়ে এলো, এখন আর বাড়ির ভেতরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। ইচ্ছে করছে আবারও গিয়ে ভিড়ের মধ্যে মিশে যেতে। কিন্তু যেতে পারলো না। প্রায় তিন / চার ঘন্টা হয়ে গেছে সে বাইরে ছিলো। এখন বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন।

চমৎকার দিন টা হুট করেই রুপ নিলো ভয়ংকর এক বিকেলে। স্বশব্দে বজ্রপাত হলো। খুব অল্প সময়ের মধ্যে কালো মেঘে অন্ধকার হয়ে গেলো ধরণী। তোহার বেশ আফসোস হলো। আহারে! কি সুন্দর করে সাজানো আশপাশ। এভাবে বৃষ্টিতে সব ভিজে যাবে?
শুধুই কি ভিঁজে যাবে, নাকি তছনছ হয়ে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে কারো সংসার। এতো সব মেঘের আওয়াজের মধ্যে তোহার কর্ণকুহরে ক্ষীণ এক নারীর আর্তনাদ পৌছালো। কিছু ঘন নিঃশ্বাস ভারী হয়ে বাতাসে মিশে যাচ্ছে। তোহা এখন তার শোবার ঘরের সামনেই দাঁড়িয়ে। দরজা ভেতর থেকে লাগানো। শব্দটা ক্রমশো গাঢ় হওয়ার সাথে সাথে তার মাথা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। দরজার পাশে ছোট্ট একটা জানালা। তোহার ইচ্ছে করলো না একবার তাকিয়ে দেখতে। কিছু ভয়, নেতিবাচক ভাবনায় বুকটা ফুলে ফেঁপে উঠছে। এক পর্যায়ে কাঁপা হাতে জানালার খুপরি দুটো টেনে খুলে দিলো। সেই শব্দে ভয়ে হতভম্ব হয়ে উঠে বসলো দুজন। তারা শুয়ে ছিলো খাটে, আষ্টেপৃষ্ঠে! তোহা স্তব্ধ চোখে তাকিয়ে রইল স্বামীর পানে। মিতুল ভীত চোখে বার বার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে পোশাক পড়ছে। বিছানার অপর প্রান্তে চাদর জড়িয়ে হু হু করে কাঁদছে তামান্না। সম্বিত ফিরতে সেও পড়তে লাগলো পোশাক।

চলবে?