#চৈতালি_পূর্ণিমা
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
#পর্ব-২৫
সায়াহ্নের প্রহর কাটিয়ে গম্ভীরতা ছড়ালো পশ্চিমাকাশে। অন্ধকারাচ্ছন্ন অন্তরিক্ষে এক ফালি চাঁদ পরিলক্ষিত হলো নিবিড়ভাবে। কিঞ্চিৎ আলোয় তার ধরণীকে চন্দ্রস্নান করানোর দৃঢ় প্রচেষ্টা। বাহিরের পরিবেশ স্নিগ্ধতায় পরিপূর্ণ হলেও ভিতরকার অবস্থা যে তিক্ততায় ঘেরা। হসপিটালের ভিতরকার অবস্থা আজ একটু বেশি নীরব, নির্জন। ফেনাইলের কড়া গন্ধে মো মো করছে চারিদিক। সার্জিক্যাল ঔষধের গন্ধে গা গুলিয়ে আসছে নির্বাণের, তবে সেটা নিজের অভিব্যক্তিতে প্রকাশ হতে দিচ্ছে না সে। শীতল, শান্ত চাহনিতে থাকিয়ে থাকলো ২০৩ নাম্বার রুমটির দিকে। ভিতরেই সাদা চাদরে মোড়ানো বিছানায় শুয়ে আছে স্পর্শী, পাশেই নার্সরা তাকে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে চলেছে। মাঝে মধ্যে স্পর্শীর ব্যথাতুর কন্ঠ ভেসে আসছে, বমি করার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে বারংবার কিন্তু প্রতিবারই বিফলে যাচ্ছে না। সারাদিন পানাহার থেকে পেটে আদৌ কিছু অবিশিষ্ট আছে গল-গহ্বর দিয়ে বেরিয়ে আসার? নির্বাণ তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো, বুকের বা-পাশটায় বেশ সময় ধরেই সুক্ষ্ম ব্যথা অনুভব হচ্ছে তার।
স্পর্শীর অ্যাপেন্ডিসাইটিস ধরা পড়েছে। এর লক্ষণ আগেই স্পর্শীর মাঝে দেখা দিয়েছিল কিন্তু স্পর্শী বিষয়টা এতটা আমলে নেয়নি। কখনো গ্যাস্টিক বা ফুড পয়সনিং মনে করে নিজের মত যত্ন নিয়ে, ঔষধ খেয়ে নিয়েছে। কাউকে বলার বা ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজনবোধ করেনি। যার দরুন, জিনিসটা এখন গুরুতর আকার ধারণ করেছে। অপারেশন না করে উপায়ান্তর নেই। এইতো আর কিছু সময়ের ব্যবধানে স্পর্শীকে ‘ল্যাপারোস্কোপিক অ্যাপেনডেকটমি’ করতে নিয়ে যাওয়া হবে। সকল ব্যবস্থা প্রায় হয়েই গিয়েছে। সাধারণত অ্যাপেনডেকটমি করার আগে আট ঘন্টা না খেয়ে থাকতে হয় এবং বেশ কিছু নিয়মাবলি মানতে হয়, এরপরই অ্যাপেনডেকটমি করা হয়। কিন্তু স্পর্শী যেহেতু রোজা থাকার কারণে সারাদিন না খেয়েই ছিল আর ইন্টারনাল কানডিশন নিয়ন্ত্রণেই ছিল সেহেতু ডাক্তাররা যতদ্রুত সম্ভব অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন। বলতে, একপ্রকার তাড়াহুড়োর মধ্যেই সবটা হচ্ছে।
নির্বাণের প্রথমে স্পর্শীর উপর প্রচন্ড রাগ হয়েছিল। ইচ্ছে করেছিল তখনই স্পর্শীর গালে কয়েকটা চড় বসিয়ে দিতে।একটা মানুষ এতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন কিভাবে হতে পারে? নিজেকে নিয়ে সামান্যতম আশঙ্কা থাকলে একবারের জন্য হলেও ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন৷ অথচ এই মেয়েটা দেখ, দীর্ঘ সময় ধরে একই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিল তবুও চুপচাপ হাত গুটিয়ে বসেছিল। কাউকে কিছু বলার পর্যন্ত দরকারবোধ করেনি সে৷ কিন্তু পরিস্থিতি প্রতিকূল হওয়ায় নির্বাণ নিজের রাগ চেপে হসপিটালের সকল বাহ্যিক কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
হঠাৎ পাশ থেকে নাহিদ একটা প্যাকেট নির্বাণের সামনে এগিয়ে দিয়ে স্মিত কন্ঠে বলে, “ভাই নে তোর মাস্ক, পড়ে নে জলদি।”
নির্বাণ সচকিত দৃষ্টিতে পাশ ফিরে তাকালো। একপলক নাহিদের দিকে তাকিয়ে মাস্কটা হাতে নিয়ে নিল। প্যাকেটটা পাশের ডাস্টবিনে ফালিয়ে দিয়ে মুখে মাস্কটা পরিধান করে নিল। অবশেষে যেন কিয়ৎ স্বস্তি মিললো তার মনে। হসপিটালে বিদ্যমান গন্ধ সে ছোটবেলা থেকেই তেমন একটা সহ্য করতে পারে না। কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি, যার দরুন যতদ্রুত সম্ভব নাহিদকে দিয়ে মাস্ক আনিয়েছে। নাহিদ নির্বাণের কাঁধে হাত রেখে বলে, “তোর কোন সমস্যা হচ্ছে?”
“না ঠিক আছি আমি।”
নাহিদ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে, “চিন্তা করিস না, ভাবীর কিছু হবে না। দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে।”
“হুম।”
নির্বাণ একপলক নিজের ডান দিকের বিপরীত পাশে তাকালো। মিজান,সাহেলা, নিলুফা চিন্তিত মুখে বসে আছেন স্টিলের তৈরি চেয়ারের উপর। কপালে তাদের গভীর ভাঁজ। বুঝার অবকাশ নেই তারা ঠিক কতটা দুশ্চিন্তায় আছেন স্পর্শীকে নিয়ে। নির্বাণ দৃষ্টি ঘুরালো, থুতনি চিবুকে ঠেকিয়ে তাকালো মেঝের দিকে। মনে মাঝে ঘুরছে অপ্রীতিকর ঘটনা। কিয়ৎক্ষণ পর ডাক্তার এসে জানায় ওটি রেডি হয়ে গিয়েছে, একটু পরই স্পর্শীকে সেখানে শিফট করা হবে। নির্বাণের মনটা হুট করেই আনচান করে উঠলো। সে কারো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার চিন্তা না করে ডাক্তারের কাছ থেকে অনুমতি চাইলো স্পর্শীকে একবার দেখার জন্য। প্রথমে ডাক্তার না করলেও পরবর্তীতে রাজি হলেন। অনুমতি পেয়ে নির্বাণ ছুটলো স্পর্শীর কেবিনের দিকে। কেবিনে ঢুকতে দেখতে পেল বিছানার উপর স্পর্শী ব্যথায় কাতরাচ্ছে, দুই হাত দিয়ে পেট জড়িয়ে মৃদু আর্তনাদ করছে। মুহূর্তেই নির্বাণের ভিতরটা কেমন করে উঠলো, ধীর পায়ে এগিয়ে গেল সামনে। স্পর্শীর কাছে গিয়ে নিজের হাতের মুঠোয় তার একটি হাত বন্দী করে নিল, আরেক হাতটি স্পর্শীর চুলের মাঝে গলিয়ে দিয়ে বলল, “এইতো আরেকটু সহ্য করো, এরপর ঠিক হয়ে যাবে তুমি। কিছু হবে না তোমার।”
স্পর্শী কথা বলতে পারলো না, শুধু সিক্ত দৃষ্টিতে তাকালো নির্বাণের পানে। মানুষটাকে বাহির দিয়ে শান্ত দেখালেও তার ভিতরকার অবস্থা যে কতটা দুরবস্থ তা যদি স্পর্শী অনুভব করতে পারতো তাহলে হয়তো নিমিষেই নিজের সকল ব্যথা ভুলে যেতে পারতো।
_____________
কেবিনের সামনে রাখা চেয়ারে ক্লান্ত দেহটা হেলিয়ে দিয়ে বসে আছে নির্বাণ। অভিব্যক্তি প্রচন্ড শীতল তার, মনের মাঝে থাকা ভয়,ভীতি ইতিমধ্যে কেটে গিয়েছে তার, তবে আশঙ্কা কমেনি। কিছুক্ষণ আগেই স্পর্শীকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে। অপারেশন সাকসেসফুলি হয়েছে, কোন ধরনের কম্পলিকেশন হয়নি। তবে স্পর্শীর পরিশিষ্টটি ফেটে যাওয়ার কিঞ্চিৎ সম্ভাবনা আছে বলে কিছু সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে ডাক্তার। নার্স কেবিনের সকল কিছু ঠিক-ঠাক করে দিয়ে বেরিয়ে আসে, আর জানায় তারা এখন রোগীকে দেখতে পারবেন। আর কিছু ঔষধের কথা বলে দিল, এইগুলো দ্রুত নিয়ে আসতে। নার্সের কথা শুনে নির্বাণ উঠে দাঁড়ায়, বাহির থেকেই একনজর স্পর্শীকে দেখে নার্সের হাত থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে চলে যায় ঔষধ আনতে। আর বাকিরা কেবিনে চলে যায় স্পর্শীকে দেখতে।
___________
নিশুতি রাত। চারদিকে পিনপতন নীরবতা, মাঝে মধ্যে বাহির থেকে ভেসে আসছে নিশাচর প্রাণীর হাঁক। স্পর্শী তখন তন্দ্রাঘোরে বিভোর, না খেয়ে থাকার কারণে বেশ দূর্বল হয়ে পড়েছে শরীরটা। স্পর্শী নিদ্রার মধ্যে পাশ ফিরতে চাইলে হাতে টান অনুভব করলো। সে সাথে সুক্ষ্ণ ব্যথা। ধীরে ধীরে চোখ খুললো স্পর্শী। অবচেতন মনে চারদিকে চোখ বুলালো, কিছুটা সময় লাগলো তার নিজের অবস্থান বুঝতে৷ আবছা অন্ধকার রুমে নিজের ডান হাত উঠাতেই আবার টান অনুভব হলো তার, মৃদু শব্দ করে উঠলো সে। ডান হাতে ক্যানোলা লাগানো তার, স্যালাইন চলছে। স্পর্শী দীর্ঘশ্বাস ফেলতে না ফেলতে পাশ থেকে কেউ উৎকন্ঠা সুরে বলে উঠে,
“কি হয়েছে স্পর্শী? কোথাও কি ব্যথা করছে? সমস্যা হচ্ছে তোমার?”
স্পর্শী অন্যপাশ ফিরে, মুখের সামনে একটি পুরুষালী অবয়ব দেখে সে থমকায়। নির্বাণ স্পর্শীর আরেকটু কাছে ঝুঁকতেই আবছা অন্ধকারের মাঝে নির্বাণের চোখ দুইটি ঝলঝল করে উঠে, স্পর্শীর এক মুহূর্ত বিলম্ব হলো না মানুষটিকে চিনতে। নির্বাণ পুনরায় বলে উঠে, ” চুপ করে আছো কেন? খারাপ লাগছে, ডাক্তার ডাকবো?”
স্পর্শী মৃদু কন্ঠে বলে, “না, ঠিক আছি আমি। হাতে তখন একটু টান লেগেছিল আর কিছু না।”
নির্বাণ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো, নিজের মুখের মাস্কটা খুলে পিছন দিক থেকে টুলটা টেনে নিয়ে স্পর্শী কাছে এসে বসলো। স্পর্শীর এক হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে বসে পড়লো সে। স্পর্শী জিজ্ঞেস করে, “বাকি সবাই কোথায়?”
“বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি তাদের।”
“অহ!”
নির্বাণ মন্থর কন্ঠে বলে, “হুম! ঘুমোও তুমি, আমি আছি পাশে।”
“ঘুম আসছে না এখন।”
“আচ্ছা, তাহলে চুপ করে থাকো। বেশি কথা বলার প্রয়োজন নেই, আর কোন সমস্যা হলে জানাবা আমাকে।”
স্পর্শী একপাশে মাথা নাড়িয়ে বুঝালো, কোন সমস্যা হলে সে বলবে। নির্বাণ ক্ষান্ত হয়ে স্পর্শীর হাত শক্ত করেই বসে রইলো। কিছু সময় নীরবে, নিভৃতে কেটে যেতেই স্পর্শীর পেটের ভিতরে থাকা ইঁদুরগুলো বজ্রকন্ঠে গর্জে উঠে জানান দিল তার খিদে লেগেছে। তাও মাত্রাতিরিক্ত পরিমানে। শব্দটা একটু বেশি জোরেই গুঞ্জিত হয়েছিল বলে মনে হলো স্পর্শীর, নির্বাণ বোধহয় শুনতে পেরেছিল সে শব্দ। লজ্জায় দৃষ্টি নত হয়ে আসে স্পর্শীর। নির্বাণ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “খিদে পেয়েছে?”
স্পর্শী একপলক নির্বাণের দিকে তাকিয়ে দ্রুত দৃষ্টি নামালো। কোনমতে জড়ানো কন্ঠে বলে উঠে, “হ্যাঁ কিছুটা।”
“অপারেশনের পর আট ঘন্টা কিছু খেতে পারবে না তুমি। পাঁচ ঘন্টা হয়ে গিয়েছে আর তিন ঘন্টা বাকি, এরপর খেতে পারবে তুমি।”
স্পর্শী আতঙ্কিত সুরে বলল, “ততক্ষণে তো খুদার জ্বালায় মারা যাব আমি।”
“যাবা না।”
স্পর্শী কাতর কন্ঠে বলে, “একটু কিছু কি খাওয়া যাবে না?”
নির্বাণ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে, “গেলে কি আমি এতক্ষণ বসে থাকতাম?”
স্পর্শী কিছু বলল না, মুখ ছোট করে নিচে তাকিয়ে থাকলো। নির্বাণ স্পর্শীর চুলের ভাঁজে হাত গলিয়ে দিল, “আর কিছু সময়, একটু ধৈর্য ধরো। ঘুম দাও, দেখবে সময় এমনেই চলে গিয়েছে।”
স্পর্শী কিছু বলল না। খিদার চোটে নিজের ঠোঁট কাঁমড়ে ধরলো সে। অতঃপর নির্বাণের শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে বলল, “আপনি রাতে খেয়েছেন?”
নির্বাণ এক মুহূর্ত চুপ থেকে বলল, “হ্যাঁ খেয়েছি।”
স্পর্শী নিষ্পলক নয়নে তাকালো, সময় গড়ালো আপন গতিতে। তার বুঝতে দেরি নেই নির্বাণ মিথ্যা বলছে। ক্ষণেই কন্ঠে অপার বিস্ময় মিশিয়ে বলে উঠলো সে, “তার মানে কি সন্ধ্যা থেকে এখন পর্যন্ত আপনি না খাও? কিছু খান নাই আপনি? কিন্তু কেন?”
“ঠিক আছি আমি।”
স্পর্শী অসন্তোষ নয়নে তাকায়,”আপনি কি পাগল? এতক্ষণ কেউ না খেয়ে থাকে? ইফতারও তো আমার জন্য ঠিক মত খেতে পারেন নাই।”
নির্বাণ শীতল দৃষ্টিতে তাকায়, “না খেয়ে তো তুমিও আছো।”
“আমার হিসাব আলাদা। আপনি যান, এখনই দিয়ে খেয়ে আসেন।”
“খাব নে, তুমি এখন ঘুমাও। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।”
“বলছি না আপনাকে খেতে যেতে? আরেকটু পর আযান দিবে, রোজা রাখবেন না? সেহেরিটা করে আসেন গিয়ে। আমি আছি এইখানে।”
নির্বাণ কিছু বলতে যাবে এর আগেই একজন নার্স প্রবেশ করলেন রুমে। তিনি সব ঠিক আছে কি-না সেটা পরোক্ষ করতে এসেছেন। নির্বাণ উঠে দাঁড়ালো, নার্সকে জায়গা দিল এদিকে আসার। স্পর্শী নার্সকে দেখা মাত্র বলে উঠে, “আপু একটু শুনেন।”
নার্সটি স্পর্শীর দিকে ঘুরে তাকালো, “জ্বি বলুন।”
“ক্যান্টিন কি এখনো খোলা আছে?”
“হ্যাঁ আছে।”
“আচ্ছা! তাহলে আপনি একটু কষ্ট উনাকে সাথে নিয়ে যেতে পারবেন সেখানে?”
“জি অবশ্যই।”
স্পর্শী মিষ্টি হেসে ধন্যবাদ জানিয়ে নির্বাণের দিকে তাকিয়ে বলল,”তার সাথে যান, আর ভালো মত খেয়ে আসবেন।”
নির্বাণ কাঠিন্য কন্ঠে বলে, “আমি ক্যান্টিনের খাবার খেতে পারি না।”
“তাই বলে না খেয়ে থাকবেন?”
নির্বাণ কিছু বলার আগেই নাহিদ রুমে আসে। নাহিদ দেখামাত্র নির্বাণ বলে উঠে, “তুই এইখানে কি করছিস?”
নাহিদ সামনের দিকে এগুতে এগুতে বলে, “মা, খাবার পাঠিয়েছে তোর জন্য। সেটাই এনেছি। তুই তো আবার ক্যান্টিনে খেতে পারিস না। আর ভাবির জন্য কিছু ফল পাঠিয়েছে।”
নির্বাণ ‘চ’ উচ্চারণ করার মত শব্দ করে বলে, “মাও না।”
“মায়ের বড় ছেলে না খেয়ে আছে, সে কি এখন আর তাকে রেখে ছোটজনকে ভাত দিবে? নে ধর তোর খাবার, খেয়ে নিস।”
নির্বাণ কিছু বলল না, চুপচাপ খাবারটা নিয়ে নিল। নাহিদ খাবারটা দিয়ে স্পর্শী খোঁজ খবর নিল। অতঃপর কিছুটা সময় থেকে চলে গেল। নাহিদ যেতেই স্পর্শী বলে-কহে নির্বাণকে খাওয়ালো। ভাবা যায় মানুষটা ওর জন্যই এতক্ষণ না খেয়ে ছিল?
_______________
পরেরদিন স্পর্শীর খবর পেয়ে সামান্তা এলো দেখা করতে। তাকে দেখে কিছুটা সময় কাটিয়ে গেল। সামান্তা যাওয়ার পর পরই নিধি আর কেয়া এলো সেখানে। সকালে নিধি ফোন করেছিল স্পর্শীকে, ফোনটা তখন স্পৃহার কাছে থাকায় সে ফোন ধরে এবং স্পর্শীর অসুস্থতার সম্পর্কে জানায়। স্পর্শীর অবস্থা জানা মাত্রই নিধি সবাইকে এই খবর জানায়। মাহিন, সামি ইতিমধ্যে রমজানের ছুটি গ্রামের বাড়ি চলে গিয়েছে বলে তৎক্ষনাৎ আসতে পারলো না। কেয়া এইখানেই ছিল বলে নিধির সাথেই চলে আসে স্পর্শীকে দেখতে।
স্পর্শীর খোঁজ খবর নেওয়া শেষে তারা ক্ষান্ত হয়। নিধি টুল টেনে বসে বলে, “জানিস! তোর খবর শুনে কতটা ভয় পেয়েছিলাম আমি? কি তাড়াহুড়োর মধ্যে এসেছি তা আর নাই বললাম।”
কেয়া বলে, “যাক, এখন ভালো আছিস দেখে শান্তি লাগলো। কি চিন্তায় না ছিলাম ভাই।”
স্পর্শী স্মিত হাসে, “এত টেনশন নেওয়ার কিছু নেই, ছোট একটা অপারেশন হয়েছে মাত্র।”
নিধি ভ্রু কুঁচকে তাকায়, “হ্যাঁ, অপারেশন তো বার্গার খাওয়ার মত ইজি তাই না? আজাইরা!”
“তা না! আমি সেভাবে বলতে চাইনি।”
স্পর্শী নিজের কথা পরিষ্কার করে উপস্থাপন করতে চাইলো কিন্তু নিধি সেই সুযোগ না দিয়ে বলল, “থাক হইসে আর বলা লাগবে না৷ তোমাকে চেনা আছে আমাদের।”
স্পর্শী কিছু বলল না, নীরব রইলো। হঠাৎ কেয়া বলে উঠলো, “এই তোর জামাই আসে নাই তোকে দেখতে? কই সে? তোর অবস্থার কথা জানে সে?”
স্পর্শী কেয়ার দিকে তাকালো, “হ্যাঁ জানে। কাল সারারাত আমার সাথেই ছিল।”
কথাটা শুনে নিধি ব্যঙ্গাত্মক সুরে বলে উঠে, “আরেহ তাই নাকি মামা! জল তাহলে গড়িয়ে এত দূর চলে গেসে আর আমরা জানি এই না? ভালোই ভালোই! তা দুলাভাইকে কি আমাদের দেখাতি না? সারাজীবন কি আঁচলের তলায় লুকিয়ে রাখবি?”
কেয়াও নিধির সঙ্গ দিয়ে বলে, “সেটাই তো? পরিচয় করাবি না আমাদেরকে ভাইয়ার সাথে? কোথায় সে?”
স্পর্শী কিছু বলতে যাবে তার আগেই সে দেখে নির্বাণ দরজা দিয়ে ঢুকছে৷ সামান্তাদের সাথে বের হয়েছিল সে তাদের এগিয়ে দিতে, সে সাথে স্পর্শীর জন্য কিছু মেডিসিন কিনে আনতে। নির্বাণ ভিতরে ঢুকে হাতে প্রেসক্রিপশন নিয়ে দেখতে দেখতে স্পর্শীর উদ্দেশ্যে বলে উঠে, “তোমার এখন মেডিসিন আছে। সুপ যে-টা খেতে দিয়ে গিয়েছিলাম খেয়েছিলে?”
গুরুগম্ভীর এক পুরুষালি কন্ঠ শুনে নিধি আর কেয়া দ্রুত পিছন ঘুরে তাকায়। মুহূর্তে নির্বাণকে দেখামাত্র ভূত দেখার মত চমকে উঠে দুইজনেই। নিজের বিস্ময় ভাব ধরে রাখতে না পেরে আচমকাই নিধি বলে, “স্যার আপনি এইখানে কি করছেন?”
#চলবে