চৈতালি পূর্ণিমা পর্ব-৩৯+৪০

0
1002

#চৈতালি_পূর্ণিমা
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
#পর্ব-৩৯

চলতি সময়ের মধ্যেই যেন সূর্যকরোজ্জ্বল গগনের মন ক্ষুণ্ণ হলো। আঁধার নামলো মেঘের কোল ঝুড়ে।
শেফালি ফুলের নরম গায়ে অনিল আঁচড় কাটতেই দোলায়মান হলো তারা। কয়েকটা ঝরে পড়লো নিমেষে। ঝপঝপ শব্দ করে শালিকের দল উড়ে গেল দিগন্তে। হয়তো আজ ধরণির বুক জুড়ে নামবে এক মুঠো শীতলতা। বদ্ধ এক কক্ষে হাতে উষ্ণ কফির কাপটি চেপে নির্বাণ কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া সকল কিছু তাপসিকে খুলে বলল। অতঃপর জানালার বাহিরে তাকিয়ে দেখতে থাকলো বিষণ্ণ আকাশটিকে। পাশেই তাপসি দু’হাতের মাঝে কফির কাপটা চেপে ধরে অপ্রসন্ন কন্ঠে বললেন, “ভিসি স্যার এইটা কিভাবে বলতে পারলেন যে, আপনি শিক্ষক-ছাত্রীর সম্পর্ক হীন করেছেন? এই কথাটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? তাহলে তো বলা চলে, পৃথিবীর সব শিক্ষকই এই হীন কাজটি করেছেন, কেননা তারাও কোন না কোন স্টুডেন্টকেই বিয়ে করেছেন। এখন কি সবাইকে সাসপেন্ড করবেন নাকি তিনি? হাস্যকর লাগলো ব্যাপারটা আমার কাছে।”

নির্বাণ স্মিত হাসলো, “আপনি এখনো ধরতে পারেননি বিষয়টা। শিক্ষক-ছাত্রীর সম্পর্কটা অযুহাতমাত্র দেখিয়েছেন তিনি, আসল কাহিনী হচ্ছে আমি সামান্য একজন লেকচারার হয়ে তার পারমিশন ছাড়াই ট্রাইবুনালদের ডেকেছিলাম আর তাকে কিছু না জানিয়ে কাহিনি করেছিলাম সেটাই তার ইগোতে লেগেছিল। যার জন্য তিনি মিটিংয়ে নিজ থেকে আমার কথা উঠিয়ে, নিজেই সকল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর তিনি এসব করেছেন শুধুমাত্র নিজের পাওয়ার দেখাতে। কিন্তু সে তো আর জানে না, ভিতরের খবর কোনটাই আমার অজানা না।”

“আজব তো! এটা কোন কথা নাকি?”

“আপনি নিজেই একবার ভাবুন, তার যদি শিক্ষক-ছাত্রীর বিয়ে নিয়ে সমস্যা হতো তাহলে মুহিব স্যারের বিয়েতে গিয়ে তিনি এক হাড়ি দই খেয়ে শেষ করতেন নাকি? মুহিব স্যারও তো এই ভার্সিটিরই অন্যের ডিপার্টমেন্টের এক ছাত্রীকে বিয়ে করেছেন। তাও ঘটা করে। কথা কিন্তু তখনও কম উঠেনি, বেশ সমালোচনায় ছিলেন তিনি। তবে সেটা নিয়ে কি ভিসি স্যারের মাথাব্যথা হতে দেখেছেন? না, কারণ ভার্সিটি লেভেলে এসে এই বিষয়টা অতি সাধারণ হয়ে দাঁড়ায়। যদিও পাছে লোকে সব জায়গায় কথা বলে। সবাই সবকিছু ভালোভাবে নিতে পারেনা। এখনো এমন কিছু মানুষ আছে যারা শিক্ষক-ছাত্রীর বিয়ে ভালো চোখে দেখে না।”

তাপসি ভ্রু কুঞ্চিত করে তাকালেন, “তা নাহয় বুঝলাম কিন্তু আপনি কি তাহলে লোকভয়ের জন্য ছেড়ে দিলেন চাকরিটা?”

নির্বাণ দৃষ্টি কফির কাপটায় নিবদ্ধ করে বলল, “ভুল বললেন। লোকভয় আমার মধ্যে কোন কালেই ছিল না। আর থাকবেও না। আমি চাকরিটা ছেড়েছি অন্য কারণে।”

তাপসি কৌতূহলী কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, “কি সেই কারণ?”

“মন উঠে গিয়েছে এই প্রফেশন থেকে। আগের মত সেই টান অনুভব করি না। কালক্রমে রিজাইন আমি করতামই। হয়তো আজ না করে একমাস পর করতাম, পার্থক্য শুধু এখানেই।”

“বুঝলাম। তবে আপনি যখন সব জানতেন তখন ভিসি স্যারের মুখের উপর কিছু বললেন না কেন?”

“তার সাথে তর্কে জড়ানোর ইচ্ছা আমার ছিল না তাই। বললে তো কত কিছুই বলা যায়। হয়তো আজ মুখ খুললে এমন কিছু বলে ফেলতাম যা তিনি সহ্য করতে পারতেন না। তখন আবার বিশ্রি এক ঘটনা ঘটে যেত।”

তাপসি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলেন, “আপনি পারেনও বটে। তা আপনার কি মনে হয় স্যারের মুখের উপর রেজিগনেশন লেটার দিয়ে এসেছেন তিনি ঝামেলা করবেন না?”

নির্বাণ কাপে আলতোভাবে অধর ছুঁয়ে নির্বিকার কন্ঠে বলল, “ঝামেলা করার সুযোগ নেই তার কাছে। কারণ আমি এখানকার সাধারণ একজন লেকচারার, কোন প্রফেসর না যে যখন তখন রিজাইন করতে পারব না বা তিনি আমার উপর কোন এলিগেশন লাগিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি করবেন।”

“আছেন আর কতদিন?”

“মাস শেষ হওয়া পর্যন্ত আছি৷ ”

তাপসি আড়ষ্ট কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, “তার মানে আর এক সপ্তাহ?”

“হ্যাঁ।”

“এরপর কি করবেন ভেবেছেন?”

নির্বাণ একপলক তাকালো তাপসির দিকে, “পরিকল্পনা আছে একটা। যদি সেটার মতই সব তাহলে সেটেল হতে বেশি সময় লাগবে না আশা করি।”

“যাক ভালোই।”

নির্বাণ স্মিত মুখে তাকিয়ে কফির কাপটা টেবিলের উপর রেখে বলল, “উঠি এখন। আমার ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে। থ্যাংক্স ফর দ্যা কফি।

তাপসি মৃদু হাসলো। নির্বাণ সেন্টার টেবিলের উপর থেকে নিজের বই নিয়ে বেরিয়ে গেল। কলাভবনের বারান্দা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় কিঞ্চিৎ সময়ের জন্য দাঁড়ালো। নিষ্প্রভ চাহনিতে তাকালো সুদূরে মাথা উঁচিয়ে থাকা বটমূলটার দিকে। তারই নিচে বন্ধুমহলের আড্ডায় স্পর্শী ম্লানমুখে বসে আছে। মাঝে মধ্যে বন্ধুমহলের কথায় মিথ্যে হাসি ফুটিয়ে তুলছে ঠোঁটের কোণে। বুঝতে দেরি নেই, বিগত দিনের ঘটনা থেকে এখনো ঠিকঠাক বেরিয়ে আসতে পারেনি সে। রেশ রয়ে গিয়েছে এখনো৷ যদিও মেয়েটাকে সে কয়েকদিন ভার্সিটি আসতে নিষেধ করেছিল, সাথে কোনকিছু নিয়ে মন খারাপ করতেও কিন্তু মেয়েটা তার কথা শুনলে তো। বড্ড অবাধ্য সে। এই যে এখনো, ঝোড়ো হাওয়ার মাঝে বসে আছে৷ ঠান্ডা হাওয়া গায়ে লেগে গেলে? তার উপর কখন ঝুম বৃষ্টি নেমে পড়ে কে জানে? বুদ্ধি-সুদ্ধিও বোধ হয় লোভ পাচ্ছে মেয়েটার। স্পর্শীকে নিয়ে কি যে করবে নির্বাণ কে জানে? দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দ্রুত কয়েকটি শাণিত শব্দে বাক্য এঁটে একটা মেসেজ পাঠিয়ে দিল স্পর্শীকে। অতঃপর মুঠোফোনটা পকেটে পুরে হাঁটা দিল ক্লাসের দিকে।

_____________________

আকাশ জুড়ে তখন কৃষ্ণমেঘের রাজত্ব। দিবালোক হয়েও যেন নিশুতি রাতের প্রহর চলছে। কিঞ্চিৎ সময় যেতে না যেতেই গা ঝাঁকুনি দিয়ে এক পলশা বৃষ্টি নামলো তপ্ত ধরার মধ্যখানে৷ আলতোভাবে ছুঁয়ে সিক্ত করে তুললো শুভ্রতায় মোড়ানো কোমল ফুলের গা। অকৃত্রিম ঘ্রাণে মাতোয়ারা হলো আশপাশ। নিজের মন ভোলাতে বিষণ্ণচিত্তে সামনে দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিল স্পর্শী। শীতল কণাগুলো ছুঁয়ে দিতে থাকলো ম্রিয়মাণ নয়নে। অকস্মাৎ ফোনটা বেজে উঠলো তার। নির্বাণ ফোন দিয়েছে৷ স্পর্শী ফোন তুলতেই নির্বাণ জিজ্ঞেস করলো, “কোথায় তুমি?”

স্পর্শী আশপাশে তাকিয়ে সে এখন কোথায় তা জানালো নির্বাণকে। জায়গায় সনাক্ত করতে পেরে নির্বাণ বলল, “সেখানে দাঁড়িয়ে থাকো আসছি আমি। ভুলেও ভিজবে না৷”

স্পর্শী অবসন্ন কন্ঠে সম্মতি জানিয়ে ফোন রাখলো। কিয়ৎকাল পরই নির্বাণ গাড়ি নিয়ে স্পর্শীর সামনে হাজির হলো। ভিতর দিয়ে গেট খুলে দিয়ে স্পর্শীকে দ্রুত ভিতরে এসে বসতে বলল সে৷ স্পর্শী একপলক নির্বাণের দিকে তাকিয়ে নীরবে উঠে বসে দরজা লাগালো। নির্বাণ এবার পকেট থেকে রুমাল বের করে স্পর্শীর আর্দ্র হাতটি মুছে দিল। অতঃপর মুখে-চোখে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু জলগুলো মুছে দিল খুব যতনে। কপালের কিনারে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানটাও দেখে নিল একবার, তাতে পানি ঢুকেছে কি-না। মেয়েটা যে বেখেয়ালি আচরণ করে, তার দ্বারা কোন ভরসা নেই৷ নির্বাণের চিন্তিত মুখ দেখে স্পর্শী বলল, “আমি ঠিক আছি।”

নির্বাণ তাও সরে আসলো না। ভালোমত আঘাতটা দেখে নিল আরেকবার। অতঃপর সরে এসে গম্ভীর কন্ঠে বলল, “তোমাকে আজ ভার্সিটি আসতে মানা করেছিলাম আমি।”

স্পর্শী মাথা নত করলো। আজ ভার্সিটি আসতে চায়নি সে কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কিছু নোটসের জন্য আর ল্যাব স্যারের আর্জেন্ট ডাক পড়ায় অগত্যা আসতে হলো তাকে। এখন এতে কি করবে সে? মিনমিন কন্ঠে উত্তর দিল সে, “গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল। আবার ল্যাব স্যারও ডেকেছিলেন সবাইকে তাই…..”

“বুঝেছি আর বলতে হবে না৷ সকালে খেয়েছ কিছু?”

স্পর্শী মাথা দোলালো৷ যার অর্থ সে খেয়েছে। নির্বাণ এবার আর কিছু না বলে স্পর্শী সান্নিধ্যে এগিয়ে দিয়ে তার সিটবেলটা লাগিয়ে দিল। সাথে সিটটা কিছু পিছনের দিকে হেলিয়ে দিয়ে বলল, “রেস্ট নাও এখন। মাথা কোনরকমের প্রেশার দিও না।”

একটু থেমে আবার বলল সে, “পানি পড়েছে মাথায় একটু, কাপড়টা নামিয়ে নাও। নাহলে পরে মাথাব্যথা করবে। এখানে আমি বাদে তো কেউ নি।”

স্পর্শী স্মিত মুখে তাকালো। মাথার কাপড় নামিয়ে গা আলগা করে বসলো সিটে। নির্বাণ সেদিক আর তেমন একটা গুরুত্ব না দিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করলো। কিছু সময় ড্রাইভ করার পর পরই গাড়িটা থামলো। কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই নির্বাণ গাড়ি থেকে নেমে গেল। স্পর্শী সেদিকে হতবিহ্বল নয়নে তাকালো। তৎক্ষনাৎ প্রশ্ন জাগলো মনে, “আরেহ! হঠাৎ লোকটার কি হলো? এই বৃষ্টির মধ্যে গেল কোথায় সে?” প্রশ্নটির জবাব খুঁজে পেতে বেশি অপেক্ষা করতে হলো না স্পর্শীর। কিছু সময়ের ব্যবধানেই নির্বাণ একটা পলিথিন হাতে নিয়ে ফেরত এলো৷ স্পর্শী ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই নির্বাণ পলিথিনটা স্পর্শীর কোলে দিয়ে নিজের চুলের মাঝে হাত গলিয়ে দিয়ে মাথা ঝাঁকাল। অল্প সময়ের ব্যবধান হলেও বেশ খানিকটা ভিজে গিয়েছে নির্বাণ। স্পর্শী অপ্রসন্ন দৃষ্টিতে সেদিক তাকিয়ে একবার নিজের কোলে তাকালো, আইসক্রিম রাখা আছে তাতে। স্পর্শী স্তম্ভিত হয়ে জিজ্ঞেস করল, “আপনি এইটা আনতে বাহিরে গিয়েছিলেন?”

নির্বাণ ছোট করে বলল, “হু!”

“আপনি পাগল? বৃষ্টিতে ভিজে কেউ আইসক্রিম আনতে যায়?”

নির্বাণ শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো, “সমস্যা কি এতে?”

“সমস্যা নেই বলছেন?”

“নেই তো।”

স্পর্শী ক্রুদ্ধ হয়ে বলল, “হঠাৎ এমন পাগলামি করলেন কেন?”

“বৃষ্টির দিনে আইসক্রিম খাওয়া কি তোমার অভ্যাস নয়?”

স্পর্শী থমকালো। গোল গোল চোখে তাকালো। ঠোঁটের কোণে ফুটল নিরন্তর হাসি। কোন এক সময় কথায় কথায় স্পর্শী নির্বাণকে জানিয়েছিল বৃষ্টিমুখর দিনে আইসক্রিম খাওয়া তার ছোটবেলার অভ্যাস। প্রায়শই সে বৃষ্টি দেখতে দেখতে বা ভিজতে ভিজতে আইসক্রিম খেতে প্রচন্ড পছন্দ করে। এমন সময় তার মন খারাপ থাকলেও সেটা ভালো হয়ে যায়। কিন্তু কথাটি সে একবারই বলেছিল নির্বাণকে। সেই হিসাবে মানুষটা সেই কথা এখন অবধি মনে রেখেছে তা ভাবতেও পারেনি স্পর্শী। বিস্ময়-বিহ্বল কন্ঠে সে বলল, “আপনার এখনো মনে আছে কথাটা?”

নির্বাণ মনে মনে বলতে চাইলো, “প্রেয়সীর মন ভোলানোর বিষয়বস্তু কি আর ভুলে থাকা যায়?”
কিন্তু মুখে বলল অন্যভাবে, “ভুলার বিষয়বস্তু তো ছিল না যে, মনে থাকবে না।”

স্পর্শীর হাসলো। কোল থেকে পলিথিন ব্যাগটা নামিয়ে রেখে নিজের ওড়নার একপাশ টেনে বলল, “এদিক আসেন। মাথায় পানি জমে আছে এখনো, মুছে দিচ্ছি।”

নির্বাণ একবার ‘দরকার নেই’ বলতে গিয়েও বলল না। স্পর্শীর নরম চাহনিতে আহত হয়ে পরাজিত সৈন্যের ন্যায় মাথা ঝুঁকিয়ে নিল। স্পর্শী আর এদিক-সেদিক না তাকিয়ে নিজের কাজে মন দিল৷ নির্বাণের চুল ভালোমত মুছে দিয়ে স্পর্শী ক্ষান্ত হলো, নির্বাণও আর কথা না বাড়িয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল। ততক্ষণে স্পর্শী পলিথিন থেকে কোণ-আইসক্রিমটা নিয়ে খেয়ে শুরু করেছে। নির্বাণ আড়চোখে একবার তাকালো। স্পর্শীর অধরের কোণে মাধুর্য লেগে থাকতে দেখে মন প্রশান্ত হলো। যদি প্রণয়িনী নারীটি জানতো তার সামান্যটুকু হাসির জন্য মানবটি প্রলয়কারীও হয়ে উঠতে পারে তাহলে হয়তো সে কখনোই মন ক্ষুণ্ণ করার স্পর্ধা করতো না।

#চলবে

#চৈতালি_পূর্ণিমা
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
#পর্ব-৪০

পরিবেশ তখনও দীর্ঘ বর্ষণের প্রেমে মাতাল। দোলায়মান গাছের পাতা৷ সিক্ততায় মোড়ানো শেফালি,শিউলি গা। নিষুপ্তি পরিবেশে কৃষ্ণমেঘের ডাক ঝংকার তুলছে৷ জানালার ধারে মৃদু শব্দ হচ্ছে। বাতাসের বেগে কেঁপে কেঁপে উঠছে সুক্ষ্ম কাঁচের কপাট৷ ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব পড়েছে। স্পর্শীর গা কাঁটা দিয়ে উঠতেই সামনে খুলে রাখা বই স্থিরচিত্তে বন্ধ করে উঠে দাঁড়ালো। মাথার উপর ঘূর্ণমান যন্ত্রটি বন্ধ করে খালি হাতে খোঁপা করে বেরুলো রুম থেকে উদ্দেশ্য পার্শিয়াকে খোঁজা। গতকাল থেকে দেখা নেই তার। স্পর্শী কয়েকবার পার্শিয়ার নাম ডেকে উঠলো কিন্তু সাড়া মিললো না কোনবার। অনেক খোঁজাখোঁজির পর স্পৃহার বিছানার তলায় তার সন্ধান পাওয়া গেল। বিছানার শেষপ্রান্তে গুটিসুটি মেরে বসে আছে সে। স্পর্শী নিচের দিকে মাথা নুয়ে খুব আদরমাখা কন্ঠে ডাকল, হাতে ইশারা করল। কিন্তু পার্শিয়া আসল না, মুখ ঘুরিয়ে সেখানেই একগুঁয়ে হয়ে বসে থাকলো। অনেক ডাকাডাকির পরও যখন পার্শিয়া এক চুলও নড়লো তখন স্পর্শী হাত বাড়িয়ে ওকে কাছে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করলো। পার্শিয়া তা দেখে অন্যপাশের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে গেল৷ স্পর্শীও তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়াল। পার্শিয়া একঝলক স্পর্শীকে দেখে মুখ ঝামটা মেরে রুম থেকে বেরিয়ে গেল৷ স্পর্শী বিমূঢ় দৃষ্টিতে তাকালো সেদিক। বুঝতে দেরি নেই, তার ক্ষুদ্র মনে পাহাড় সম অভিমান জমেছে। এটা সহজে ভাঙ্গার নয়। স্পর্শী দ্রুত পায়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে এলো। পার্শিয়াকে ড্রয়িংরুমের সোফায় অলসভাবে বসে থাকতে দেখে পিছন থেকে গিয়ে তাকে কোলে তুলে নিল। পার্শিয়া প্রথমে কিছু না বললেও স্পর্শীকে দেখামাত্র নেমে পড়ার জন্য তোড়জোড় লাগালো৷ স্পর্শী জোড় করে পার্শিয়াকে কোলে বসিয়ে অনুনয় সুরে বলতে থাকে, “আমার বাচ্চাটা রাগ করেছে আমার সাথে? সরি সোনা! ভুল হয়ে গেছে এবার, আমি আর বকা দিব না। এবারের মত মাফ করে দাও। সরি!”

কথাটা বলে পার্শিয়ার গালের সাথে নিজের গাল ঘেঁষে দিল সে। কিন্তু তাও পার্শিয়া কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না। স্পর্শী অবাক হয়ে বলল, “বাব্বাহ! এত রাগ?”

পার্শিয়া মুখ ঘুরিয়ে নিল। যার অর্থ, হ্যাঁ সে অনেক রাগ তার সাথে। একটুও কথা বলবে না সে। স্পর্শী স্মিত মুখে বলল, “আচ্ছা বাবা সরি তো। আর রাগ করে থাকে না। আমি আর কখনো তোমায় বকব না।”

আরও কতক্ষণ আহ্লাদ কন্ঠে স্পর্শীকে মানানোর চেষ্টা করলো। সর্বশেষে পার্শিয়ার মনও গললো তবে রাগ সম্পূর্ণ গেল না। সে ‘ম্যাও,ম্যাও’ শব্দ করে অভিযোগের ঝুলি নিয়ে বসলো। তীব্র আক্রোশ সেই কন্ঠে৷ স্পর্শী চুপচাপ শুনলো কথাগুলো আর আনমনে হাসলো। মন্থর গতিতে পার্শিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শান্ত করলো তাকে। বিড়ালছানা অবস্থা থেকেই পার্শিয়া স্পর্শীর সাথে আছে। স্পর্শী শুরু থেকেই একদম আদুরে বাচ্চার মত বড় করেছে তাকে। যার জন্য তার টান,ভালোবাসা,অভিমান একটু বেশি স্পর্শীর প্রতি। বাড়ির সকলে তাকে যা ইচ্ছা তা বলুক সেটা তার গায়ে না লাগলেও, স্পর্শীর সামান্য বকা তার সহ্য হয় না।
স্পর্শী পার্শিয়াকে আদর করতে করতে বলল, “মানুষ না হয়েও এত রাগ তোর, মানুষ হলে কি করতি কে জানে?”

পার্শিয়া কি বুঝলো কে জানে, উচ্চস্বরে চেঁচাতে লাগলো। স্পর্শী নিজের কপাল চাপড়ে বলে, “আরেহ তোর দুর্নাম করিনি, চেঁচানো বন্ধ কর।”

পার্শিয়া সরু দৃষ্টি তাকিয়ে থামলো। স্পর্শী হাসে, “এমন করতে থাকলে নির্বাণ কিন্তু তোকে ঘরে জায়গায় দিবে না৷ ভদ্র হো একটু।”

এই কথার প্রেক্ষিতে পার্শিয়ার মুখ ছোট হয়ে এলো। সে স্পর্শীর গায়ের সাথে লেগে মৃদুস্বরে ডাকতে থাকলো। স্পর্শী কিছু না বলে ওর সাথে খেলায় মত্ত হলো। ঘণ্টাখানেক এভাবে অতিবাহিত হওয়ার পর পার্শিয়া স্পর্শীর কোলে ঘুমিয়ে পড়লো। স্পর্শী পার্শিয়াকে কোলে করে নিজের রুমে এসে শুয়ে দিল। অতঃপর মুঠোফোন হাতে নিলে দেখতে পেল স্ক্রিনে নির্বাণের তিনটি মিসডকল ভাসছে৷ স্পর্শী দ্রুত কল ব্যাক করলো৷ দুইবার রিং হতেই নির্বাণ ফোন ধরলো। স্পর্শী সালাম দিয়ে দ্রুত বেগে বলতে শুরু করে, “ফোন আমার সাথে ছিল না তাই কল শুনিনি আপনার।”

নির্বাণ সালামের উত্তর দিয়ে ধীরে সুস্থে উত্তর দেয়, “ব্যস্ত হতে হবে না। আগেই বুঝেছিলাম বিষয়টা আমি।”

স্পর্শী চট করে জিজ্ঞেস করে বসে, “আপনি এত বুঝেন কিভাবে বলুন তো?”

“তুমি আপাদমস্তক আমার মুখস্ত বলে।”

স্পর্শী থমকালো। সর্বাঙ্গে খেলে যায় সহস্র শিহরণ। মানুষটার প্রত্যেক কথাই এমন, না থমকে পারা যায় না৷ ছোট বাক্য তার অথচ অনুভূতি রাজ্যসম। স্পর্শীকে চুপ থাকতে দেখে নির্বাণ প্রশ্ন করে,

“মন এখনো খারাপ?”

“নাহ! ঠিক আছি এখন।”

নির্বাণ এই প্রসঙ্গে আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। অন্য সংলাপে গেল৷ শেষে স্পর্শীকে কিছুদিন ভার্সিটি আসতে সম্পূর্ণ নিষেধ করলো। স্পর্শী যদিও বা জানতে চাইলো এর কারণ কি কিন্তু কি মনে করে যেন প্রশ্নটা করলো না। নীরবে সম্মতি জানালো।

________________

সময় গড়ালো স্রোতঃস্বিনীর ন্যায় । দিন পেরিয়ে সপ্তাহ শেষ এলো, ঘনিয়ে এলো কাঙ্ক্ষিত দিন। কোলাহল বাড়লো, গুঞ্জন উঠলো সকলের মাঝে। কানে কানে ছড়িয়ে গেল নির্বাণের রিজাইন করার কথা। যদিও এবার কেউ সমালোচনা করার সুযোগ পেল না তবে আফসোস করলো ঠিকই। যে যাই বলুক না কেন, দিনশেষে সকলের উপলব্ধি এক বিন্দুতে এসেই মিলিত হয় যে একজন ভালো স্যার তারা তাদের মাঝ থেকে হারিয়ে ফেলছে। অজান্তেই খারাপ লাগা কাজ করছিল সকলের চিত্তে৷ বদরাগী হলেও নির্বাণের পড়ানোর ধরণ ছিল অন্য সব টিচার হতে ভিন্ন। সাথে, নির্বাণের দেওয়া নোটসগুলোর কার্যকরতা ছিল বেশ। পরীক্ষার আগে তার নোটসগুলো পড়লেই সিলেবাস কভার করতে পারতো সকলে। কেউ স্বীকারোক্তি করতে না চাইলেও সত্য এইটাই, নির্বাণের যাওয়াটা সকলের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল। এমনটা কেউই চায়নি।

তখন দ্বিপ্রহর। রোদের উত্তাপ মোলায়েম। সোনালী,কমলাটে রোদ্দুরের ছটা গড়িয়ে পড়েছে বড় বটমূলের উপর। বাতাসে পুষ্পের পরাগ ভাসন্ত।কৃষ্ণচূড়ার শেষপ্রান্তে এক চড়ুই পাখির দল কিচিরমিচিরে মশগুল। শহীদ স্তম্ভের সামনে নির্বাণকে ঘিরে গোল করে দাঁড়িয়েছে কয়েক’শ স্টুডেন্ট। অনুনয় সুর সকলের, অন্তিম বিদায় জানাচ্ছে তারা নির্বাণকে। অনেকে অনুরোধ করছে নির্বাণকে থেকে যাওয়ার জন্য, অনেকে আবার নিজের করা ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী হচ্ছে৷ বেশির ভাগ সকলে ধরেই নিয়েছিল নির্বাণ বিগত দিনেগুলোয় ঘটে যাওয়া ঘটনায় তাদের ব্যবহার দেখে রুষ্ট হয়ে চলে যাচ্ছে। নির্বাণ যেহেতু তার এবং স্পর্শীর কাবিননামা সোশাল সাইটে দিয়ে দিয়েছিল সেহেতু কারো মনে আর কোন সন্দেহ অবশিষ্ট ছিল না। যার দরুন, সকলের মাঝে অনুশোচনাবোধটাই প্রখর ছিল। নির্বাণ সকলকে বুঝ দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলল। অতঃপর বিদায় নিয়ে ভীড় থেকে বেরিয়ে এসে দূরে নজর যেতেই আঁটকালো হালকা আকাশি রঙের কামিজ পরিহিত শ্যাম কন্যাটির পানে। মুখ মলিনতায় বেষ্টিত হলেও দৃঢ়৷ নয়ন দু’টি অক্ষিকাচে এক গাঁদা প্রশ্ন। নির্বাণ স্থিরচিত্তে এগিয়ে গেল নারীটির দিকে। নিভৃতে পকেট থেকে গাড়ির চাবিটা বের স্পর্শীর হাতে গুঁজে দিয়ে মৃদুস্বরে বলল, “গাড়িতে গিয়ে বসো, আমি আসছি।”

কথাটা বলে নির্বাণ অন্যদিকে চলে গেল আর স্পর্শী সেদিক তাকিয়ে থেকে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো। দীর্ঘ বিরতি নিয়ে আজই প্রথম ভার্সিটি এসেছিল সে। ভার্সিটি আসার পর পরই বন্ধু-বান্ধব এবং বিভিন্ন জনের কাছ থেকে নির্বাণের রিজাইনের খবরটি পেল সে। প্রথমে কারো কথায় বিশ্বাস করতে না চাইলেও শেষে এখানে এসে বিশ্বাস করতেই হলো নির্বাণ আসলেই রিজাইন করছে। এখন মনের মাঝে একটাই প্রশ্ন থেকে যায়, “কেন?”

__________________

স্পর্শী গাড়িতে এসে বসেছে পনেরো মিনিট হতে চলল। ঘড়ির কাঁটা টুকটুক করে সামনে দিকে পদার্পণ করেই চলেছে৷ স্পর্শী সিটে মাথা হেলিয়ে আঁখিপল্লব বন্ধ করে থাকলো। মনের মাঝে তখন তীব্র অভিমান, সাথে হাজারো প্রশ্ন। সব প্রশ্নর শেষেই ‘কেন’ শব্দটা সুবিন্যস্তভাবে এসে লেপ্টে যাচ্ছে। অশান্ত মস্তিষ্ক তালগোল পাকাচ্ছে সবকিছু, পরোক্ষভাবে দোষী দেখাচ্ছে তাকে। মিনিট যত গড়ালো স্পর্শীর ধৈর্য ধরে রাখা ততই দায়সমান হয়ে দাঁড়ালো। আর কিছু সময় যাওয়ার পর আবির্ভাব হলো নির্বাণের। সে গাড়িতে উঠে বসামাত্র স্পর্শী চোখ মেলে তাকালো৷ এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে সোজা নির্বাণের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে মারে, “এর জন্যই আমাকে ভার্সিটি আসতে মানা করেছিলেন? যাতে আমি এসব সম্পর্কে কিছু জানতে না পারি?”

নির্বাণের নির্বিকার কন্ঠ, “কোনসব?”

“আপনি জব থেকে রিজাইন করেছেন, কিন্তু কেন? আর আমাকে জানান নি কেন?”

প্রশ্নের বিপরীতে নির্বাণ পাল্টা প্রশ্ন করে, “আগে জানালে কি করতে তুমি? রিজাইন নিতে দিতে না আমায়?”

স্পর্শী তীর্যক দৃষ্টিতে তাকায়, “কি করতাম জানি না তবে বিষয়টা কি আমার আগে জানার উচিৎ ছিল না?”

“হয়তো ছিল।”

নির্বাণের হেয়ালি দেখে স্পর্শী অপ্রসন্ন কন্ঠে বলে, “তাহলে কেন জানালেন না? টিচার হওয়া না আপনার ড্রিম জব ছিল? কেন ছাড়লেন সেটা?”

“কারণ আমি সিউর ছিলাম তোমাকে জানালে তুমি কখনো আমায় রিজাইন করতে দিতে না। তাই জানায়নি। আর রইলো জবের কথা, সেটা করতে এখন আমার মন টানে না। আমি আরও আগে থেকেই জবটা ছাড়ার কথা ভাবছিলাম।”

স্পর্শী তৎক্ষনাৎ কোন প্রশ্ন না করলেও কিয়ৎক্ষণ পর বলে উঠে, “আপনার রিজাইনের পিছনের কারণ কি আমি? সত্যি করে বলবেন প্লিজ।”

নির্বাণ হঠাৎ রেগে গেল। পরুষ কন্ঠে বলে, “একটু বেশি বুঝো তুমি। আমি একবারও বলেছি কারণ তুমি? সবকিছুতে নিজেকে টেনে আনবে না। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আমার নিজের কিছু কারণ ছিল। ভিন্ন পরিকল্পনা আছে আমার। আজ নাহলেও কাল আমি রিজাইন করতাম।”

স্পর্শী মাথা নুয়ে নিল। ভয়ার্ত মনে সাহস জুগিয়ে বলে, “হয়তো আপনার ভিন্ন কারণ ছিল কিন্তু আমাকে কি একবার বলা যেত না? অন্যের কাছ থেকে কেন জানতে হলো আমায়? সামান্যটুকু ভরসা কি নেই আপনার আমার প্রতি?”

নির্বাণ স্পর্শীর হাতটা নিজের মুঠোয় নিল। কন্ঠস্বর নেমে এলো কয়েকগুণ, “তোমাকে কোন প্রকার টেনশন দিতে চাচ্ছিলাম না। চেয়েছিলাম সব কাজ নীরবে শেষ করে নিতে কিন্তু শেষে কিভাবে কথা পাঁচকান হলো জানা নেই আমার। তোমাকে কষ্ট দেওয়ার কোন ইচ্ছে আমার ছিল না।”

স্পর্শী প্রত্যুত্তর করলো না। অভিমান কি আর এত সহজে ভাঙ্গে? নির্বাণ নিজের সর্বস্ব দিয়ে স্পর্শীকে বুঝানোর চেষ্টা করলো। দীর্ঘ সময় ব্যয় করার পর স্পর্শীর মন একটু গললো। সে নরম চোখে তাকালো নির্বাণের পানে। নির্বাণ তা দেখে বলে, “এভাবে তাকাচ্ছো কেন? বেকার বলে কি এখন আমায় ত্যাজ্য বর করার পরিকল্পনা করছ নাকি?”

নির্বাণের কটাক্ষ ধরতে পেরে স্পর্শী কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “করলেও কি? লাভ তো আপনারই, বিয়ের দাওয়াত পাবেন একটা। তাও নিজের বউয়ের। এমন ভাগ্য কি আর সবার হয়?”

নির্বাণ প্রখর দৃষ্টিতে তাকালো। পরমুহূর্তেই স্পর্শীর হাত ধরে টান মেরে নিজের সান্নিধ্যে নিয়ে এসে বলে, “এমন ভাগ্যের দরকার নেই আমার। শতবার হলেও বিয়ে তুমি আমাকেই করবে। আমি ব্যতীত অন্য কোন অপশন তোমার লাইফে নেই। মনে থাকে যেন।”

কথাটা বলেই নির্বাণ স্পর্শীকে ছেড়ে দিল। অতঃপর নিজের সিটবেল লাগিয়ে স্পর্শীর কোল থেকে চাবিটা নিয়ে গাড়ি চালাতে শুরু করে গমগম কন্ঠে বলল, “নিজের সিটবেল লাগাও স্পর্শী।”

স্পর্শী হতবিহ্বল নয়নে তাকিয়ে থাকে। এই প্রথম নির্বাণ তার সিটবেল নিজ থেকে না লাগিয়ে দিয়ে মুখে বলছে। মানে এত রাগ? তাও এই সামান্য কথাতে? স্পর্শী কিছুক্ষণ নীরব থেকে নিজের সিটবেল লাগালো। তীব্র অভিমান মনে নিয়ে আনমনে আওড়ালো, “রাগ করার কথা কার, আর রাগ করছে কে? ভালোই!”

#চলবে।