চৈত্রের শেষে বৃষ্টি পর্ব-০২

0
39

#চৈত্রের_শেষে_বৃষ্টি (০২)
#ছনিয়া_তাবাচ্ছুম

শশী ফ্লোর থেকে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। তারপর বাসা থেকে বের হয় কারোর সাথে দেখা করার জন্য।৷ শশী মিনিট পাঁচেকের মধ্যে একটা নিরিবিলি জায়গায় গিয়ে পৌঁছায়। সেখানে আগে থেকেই একজন দাঁড়িয়ে ছিল। শশী এগিয়ে এসে পিছন থেকে ডাক দেয়।

” – ভাইয়া।

সৌহার্দ্য পিছনে ফিরে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

“- তুমি চলে এসেছো শশী। খুব ভালো করছো? আমি ভাবলাম হয়তো আমার দেড়ি হয়ে যাবে। বাট আমি তোমার আগে পৌঁছে গেছি। কিছু কি হয়েছে শশী? আর্জেন্ট দেখা করতে বললে? এক দমে কথা গুলো বলে সৌহার্দ্য।

সৌহার্দ্য এর কথায় শশী মৃদু হেসে বলল,

“- একটু দম নাও ভাইয়া। তারপর না হয় বলছি কেন ডেকেছি।

শশী’র কথা’য় সহমত হয় সৌহার্দ্য। দু’জন গিয়ে একটা বেঞ্চে বসে। এখানে কেউ নেই। জায়গা টা খুব নিস্তব্ধ, মাঝে মাঝে পাখির কিচিরমিচির শব্দ শোনা যাচ্ছে। বেঞ্চে পাশাপাশি বসে শশী আর সৌহার্দ্য। দু’জন ই কিছুক্ষণ চুপ থাকে। নিরবতা ভেঙে শশী সৌহার্দ্য কে জিজ্ঞেস করল,

“- মা তোমাকে কি বলছে ভাইয়া?

আচমকা শশী’র এমন প্রশ্নে হকচকিয়ে ওঠে সৌহার্দ্য। তবে বুঝতে পারে না শশী কি বলছে। তাই অবাক হয়ে বলল,

” – ঠিক বুঝলাম না শশী। আম্মু কি বলছে আমাকে? তেমন কিছু তো বলেনি?

শশী গম্ভীর কণ্ঠে সুধালো,

” তোমার বিয়ের ব্যাপারে।

সৌহার্দ্য আশ্চর্য হয়ে আবার বলল,

“- আমার বিয়ে মানে? কিসব আবোলতাবোল বকছো তুমি? আমার বিয়ে সম্মন্ধে তো কিছু কথা হয়নি। এমনকি বাবা মা ও আমাকে কিছু বলেনি। অনেক আগেই আমি সবাইকে বলে দিছি আমি কোনো বিয়ে টিয়ে করতে পারব না। কিন্তু হঠাৎ করে আজ এমন কথা আসছে কেন শশী।

শশী চুপ করে সৌহার্দ্য এর কথা শুনল। শশী এটা বুঝতে পারছে এটা বেশ অনেক দিন আগের কথা যেটা আজ তার মা বলছে। শশী’র মনে এখন একটা কথা’য় আসছে এতদিন আগের কথা আজ কেন তার মা বলল? শশী’র ভাবনার মাঝেই সৌহার্দ্য বলল,

” শশী!

শশী চমকে বলল,

” কি।

সৌহার্দ্য জিজ্ঞেস করল,

” কিছু কি হয়েছে শশী? তুমি নিশ্চিন্তে আমাকে বলতে পারো।

শশী মৃদু স্বরে বলল,

“- তেমন কিছু নয় ভাইয়া। আসলে উৎসবের জন্য মনটা ভিষণ ছটফট করছিল। মনটা অনেক কু গাইছিল তাই আর কি? উৎসব ঠিক আছে তো ভাইয়া।

সৌহার্দ্য খুব অবাক হয় শশী’র কথা’য়। কারণ শশী আজ সকালেই তাদের বাসায় গিছিল। অনেক্ক্ষণ যাবত উৎসবের সাথে আড্ডা দিয়ে আসছিল৷ তবে এ ব্যাপারে সৌহার্দ্য কিছু বলে না। সৌহার্দ্য ঠিকই বুঝতে পারছে শশী কি বলতে তাকে এখানে ডেকেছে। আর এসে যেহেতু বলতে চাইছে না সেজন্য আর জোর করে না। অন্য প্রসঙ্গে বলে

“- উৎসব ঠিক আছে শশী। তোমার মন যদি না মানে তাহলে আমাদের বাসায় গিয়ে দেখে আসো তাহলে ভালো লাগবে।

শশী আচমকা বলল,

“- না না ভাইয়া তার দরকার নেই। আমি পরে গিয়ে দেখে আসব। আমি তাহলে আসি পরে কথা হবে ভাইয়া। তাই বলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে শশী। শশী র যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে ওঠে,

” আমি বেঁচে থাকতে তোমার জীবনটা নষ্ট হতে দেব না শশী। সবসময় বড়ো ভাইয়ের মতো ঢাল হয়ে দাঁড়াব। আমি বুঝতে পারছি মামিমা মানে আমার শাশুড়ী আম্মা তোমার সাথে আমাকে বিয়ে দিতে চাই। বাট এটা কখনো হওয়ার না। আমি তোমার জীবনটা সুন্দর করে সাজিয়ে দেব। তুমি অনেক দ্বিধায় ভুগছো এই বিষয় টা নিয়ে। তবে তুমি এটুকু আশা রাখতে পারো আমার থেকে। আমি কখনোই তোমাকে এ ব্যাপারে কিছু বলব না। অতঃপর কারোর কাছে ফোন দিয়ে কথা বলে।

_____________________

দেখতে দেখতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। প্রতিদিনের মতো সূর্য মামা পশ্চিম আকাশে ডুবে যায়।

শশী বিছানায় চার হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে শুয়ে হাসছে। তার এক হাতে ফোন। একটু আগে তার মা এসে তাকে বলে গেছে।

“শশী আমি তোকে যা বলছি ভুলে যা মা। মন খারাপ করে থাকিস না। তোকে এই বিয়েটা করতে হবে না। তুই যাকে বিয়ে করতে চাইবি আমরা তোকে তার সাথেই বিয়ে দেব। আমরা তোকে হাসিখুশি দেখতে চাই মা। তোর এমন মন খারাপ দেখতে আমাদের একটুও ভালো না। মা’য়ের কথা শোনার পর থেকে কিছুটা স্বস্তি বোধ করে শশী। তবে উৎসবের জন্য তার খুব খারাপ লাগে। কেন না উৎসব কে সে নিজের সন্তান মনে করে। নিজের বুক দিয়ে আগলে রাখে। বাড়ির কাছাকাছি হওয়ায় সুবিধা হয় তার। মন খুলে দেখতে পারে ছুতে পারে নিতে পারে।
রাতের ডিনার সেরে শুয়ে পরে শশী।

****
সকাল সকাল ঘুম ভেঙে যায় শশী’র। ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ওজু করে ফজরের নামাজ পড়ে নেয়। তারপর নিজের জন্য কিচেন থেকে কফি করে ছাদে চলে আসে। সকালে হলেও মনে হচ্ছে অন্ধকার হয়ে আসছে। আকাশে মেঘেরা দৌড়ে বেড়াচ্ছে। শশী বুঝতে পারে এই সময় মেঘ জমতে থাকা মানে বৃষ্টি হওয়া। দেখতে দেখতে অনেকটা সময় পার হয়ে যায়। শশী’র ভার্সিটি যেতে হবে, না গেলেই নয়। কারণ আজ তার খুব ইম্পরট্যান্ট ক্লাস আছে। শশী এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট ।

——————
ভার্সিটির ক্যাম্পাসে বসে কারোর জন্য অপেক্ষা করছে শশী। তার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এক সুদর্শন যুবক শশী’র পাশে ধপ করে বসে পরে। হঠাৎ শব্দ হওয়ায় শশী ভয়ে লাফ দিয়ে ওঠে। তারপর পাশে তাকিয়ে নির্ধারিত মানুষ কে দেখে হেঁসে ওঠে বুকে ফু দিয়ে বলল,

” এভাবে কেউ শব্দ করে বসে। আমি কি ভয়টাই না পেলাম। একটুহানির জন্য মোর পরাণ পাখিটা ফুড়ুৎ করে উড়াল দেয়নি।
শশী’র কথা’য় ছেলেটা উচ্চস্বরে হেঁসে বলল,

“- আমি থাকতে আমার চাঁদের কিচ্ছু হবে না মেরি জান। তুমি আমার একমাত্র চাঁদ। যাকে কেউ ছুতে পারবে না।

ছেলেটার কথা য় লজ্জা পায় শশী। লজ্জায় মাথা নিচু করে ঘাসের দিকে তাকিয়ে রয়।

ছেলেটার নাম পরশ নওয়াজ। সদ্য গ্রাজুয়েট কম্পিলিট করে ভার্সিটি থেকে বেড়িয়েছে।। এখন বাবা’র বিজনেস সামলাচ্ছে। পরম শশী’র লজ্জা মাখা মুখ দেখে বলল,

” লজ্জাবতী! কথা বলবে না। নাকি চলে যাবো?

শশী পরশের দিকে তাকিয়ে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

“- কে অপেক্ষা করছে উহু! কাকে দেখার জন্য চলে যেতে চাইছো?

আচমকা শশী’র এহেন কথা’য় হতবাক হয়ে যায় পরশ। মুখ হা হয়ে যায়। বোকা বোকা হেসে বলল,

“- অ্যার ইউ ম্যাড? আমি তোমাকে ছাড়া আর কাকে দেখবো? আমার চাঁদ রেখে আমি কেন অন্য গ্রহের চাঁদ দেখব হ্যাঁ। তুমি আমার একমাত্র ব্যক্তিগত চাঁদ।

“- তাহলে বললে ক্যান চলে যাইবা।

“- আরে আমি মজা করে বলছি আর তুমি সিরিয়াস হয়ে গেছো। হাউ সুইট।

শশী মুখ গোমড়া করে গাল ফুলিয়ে বসে রয়। আর তার গোমড়া মুখ দেখে পরশ হাত বাড়িয়ে গাল দুটো টেনে দিয়ে বলে,

” হাউ সুইট। গাল দুটো পুরাই টমেটোর মতো নরম। তোমাকে রাগলে অনেক কিউট লাগে। সেটা কি একজন জানে।

শশী পরশের হাত ঝাড়া মেরে ফেলে দিয়ে উঠে দাড়ায়। তারপর বলল,

” – পরশ আর কত দেড়ি? আমি কিন্তু বাসায় বলে দেবো। তোমার জন্য আমি হাজার টা প্রপোজাল রিজেক্ট করছি কিন্তু এভাবে তো জীবন চলে না। আমি শুধু ক্যারিয়ারের কথা বলে আব্বু আম্মু কে চুপ করিয়ে রেখেছি। আব্বু আম্মু ও সবটা মেনে নিয়েছে কিন্তু আমার এবার অনার্স শেষ। আব্বু বলছে অনার্স শেষ হলেই আমার বিয়ে দিতে চাই। তারপর না হয় আমাকে মাস্টার্স শেষ করতে বলছে। এখন তুমিই বলো আমি কি করব?

পরশ মুচকি হেসে বলল,

” – আর মাত্র কয়েকটা দিন জান। তোমার জন্য সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। তুমি ভাবতেও পারবে না তোমার জন্য ঠিক কি অপেক্ষা করছে।

“- তুমি কি করবে?

“- সিক্রেট জান বলা যাবে না। আজ আমি আসি অফিসে যেতে হবে।

বলে ক্যাম্পাস থেকে বেড়িয়ে যায়। আর পরশের যাওয়ার পানে একধ্যানে তাকিয়ে থাকে শশী। শশী’র মাথায় একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে সেটা হলো পরশ কি করতে চাইছে?

#চলবে —