চৈত্রের শেষে বৃষ্টি পর্ব-০৩

0
41

#চৈত্রের_শেষে_বৃষ্টি (০৩)
#ছনিয়া_তাবাচ্ছুম

ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে শশী আর তার বন্ধু ঊর্মি ক্যাম্পাস দিয়ে হেঁটে ভার্সিটির বাইরে চলে আসে। দুই বন্ধু রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে আর গল্প করছে। কিন্তু মাঝ পথে এসে ঘটে এক কাহিনী। কোথা থেকে একটা ছেলে এসে ঊর্মি কে ধাক্কা মেরে দেয়। ঊর্মি টাল সামলাতে না পেরে পরে যায় পিচ তলা রাস্তায়। আচমকা ঘটনাটা তাড়াতাড়ি ঘটে যাওয়ায় কেউ বুঝতে পারল না আসলে ঘটল টা কি? শশী জলদি করে ঊর্মি কে ধরে দাঁড় করিয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল,

” হেই চোখে দেখেন না চোখ কি কপালে নিয়ে হাটেন।কেয়ারলেস কোথাকার।

ছেলেটা স্যরি না বলে চলে যাওয়ায় শশী’র আরো বেশি রাগ হয়। দাঁত কিড়মিড় করে চেচিয়ে বলে ওঠে,

” ম্যানার নেই আপনার। সামান্য স্যরি টুকু বলতে পারেন না। আজব পাবলিক।

শশী’র কথা’য় ছেলেটা ঘুরে তাকায়। পিছনে তাকিয়ে দুটো রমনী কে দেখে। একজন ব্যথায় কুকড়িয়ে আছে আর একজন রেগে দাঁত কিড়মিড় করছে। শশী কে রাগতে দেখে ছেলেটা এগিয়ে এসে বলল,

” ব্যথা কি আপনি পাইছেন?

সহসা অচেনা ছেলেটার কথায় শশী তাজ্জব বনে যায় সাথে ঊর্মিও। শশী তীব্র গতিতে ছেলেটার একদম কাছে এসে বলে,

” হ্যাঁ ব্যথা আমি পাইছি। স্যরি বলুন বলছি।

ছেলেটা বাঁকা হেঁসে ঊর্মির দিকে তাকিয়ে বলে,

” মিস ব্যথাওয়ালী আপনার বন্ধু কে একটু সামলান। উনি কিন্তু বেশি বেশি করছে বলতে বলতে ঊর্মির সামনে এগিয়ে এসে বলল,

” অ্যাই এম সরি মিস ব্যথাওয়ালী। অ্যাই এম এক্সট্রিমলি সরি ফর দ্যাট। আমার একটু তাড়া ছিল বিধায় স্যরি না বলেই চলে যাচ্ছিলাম তার জন্য আবারো স্যরি। আপনি প্লিজ ব্যথার জন্য ওষুধ খেয়ে নেবেন৷ আমার সময় নেই নইলে আমিই আপনাকে ডক্টরের চেম্বারে নিয়ে যাইতাম।

ছেলেটার কথা শুনে ঊর্মি ব্যথার কথা ভুলে মুচকি হেসে জবাব দেয়,

” তার প্রয়োজন নেই আমার বন্ধু আছে ও আমাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবে।

” আচ্ছা বেশ। মনে করে যাবেন। আর আপনার বন্ধু কে একটু বলবেন অতিরিক্ত রাগ শরীরের জন্য ভালো না। বলে ছেলেটা চলে যায়।

শশী পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে সবটা দেখছে আর রাগে গজগজ করছে। ছেলেটা ঊর্মির কাছ থেকে সরলেই শশী গিয়ে ঊর্মির হাত খামচে ধরে বলে,

” তুই তো ভাই হেব্বি খারাপ। ছেলেটা হেঁসে হেসে দুটো কথা বলল আর তুই পটে গেলি। তোর জন্য আমি ছেলেটার সাথে ঝগড়া শুরু করে দিলাম আর তুই। সব নেমকহারাম। বলে গটগট পায়ে সামনে হেঁটে গিয়ে একটা রিকশা নিয়ে বাসার উদ্দেশ্য চলে যায়। আর তার যাওয়ার পানে ঊর্মি হাভলাকান্তের মতো তাকিয়ে থাকে। এখন তাকে কষ্ট করে একা একা বাসায় ফিরতে হবে। শশী থাকলে ওকে ধরে নিয়ে যেতে পারত। ভালোয় পা’য়ে ব্যথা পাইছে। খানিকটা ছুলে গেছে। কষ্টে এখন নিজের চুল নিজের ছিঁড়তে মন চাইছে কি দরকার ছিল ছেলেটার সাথে ভালো করে কথা বলার। যদি না বলত তাহলে তাকে কষ্ট করতে হতো না। বেচারা ঊর্মি!

________________________

রাতে ড্রয়িংরম বসে পরিবারের সবার সাথে গল্প করছে পরশ নওয়াজ। তখন তার মা মরিয়ম নওয়াজ সবার জন্য হালকা নাস্তা আনেন। এখন অবশ্য খাওয়ার সময় কিন্তু তার ছোটো মেয়েটা বলছে আম্মু সবার জন্য সিঙ্গারা বানিয়ে আনো তাই। দোতালা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে একটা ছেলে ঠোঁটে তার হাসি। হয়তো কোনো বিষয়ে খুশি সে। ড্রয়িংরুমে এসে সিঙ্গারার গন্ধ পেয়ে বলল,

“- ওরেব্বাস সিঙ্গারার গন্ধ পাচ্ছি কে বানালো?

সোফায় বসে থাকা সাবা বলল,

” আম্মু ছাড়া আর কে?

” – বড় আম্মু আর গুলো ধরে দাও আমিও কয়টা খায়।

শান্তর কথা’য় ড্রয়িংরুমে সবাই হাসেন। কারণ শান্ত নওয়াজ সিঙ্গারা লাভার। সিঙ্গারা খুব পছন্দ করেন। সিঙ্গারা খেতে খেতে শান্ত বলল,

” বড় ভাইয়া, ভাবির কিন্তু সেই ঝাঁজ।

শান্তর কথা’য় ড্রয়িংরুমে র সবাই অবাক হয়ে তাকান। নিজের দিকে সবাই কে তাকাতে দেখে ঘাবড়ে যায় শান্ত। মরিয়ম নওয়াজ শান্ত কে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

“- ভাবি কে? পরশ শান্ত কি বলছে তুই বিয়ে করে ফেলছিস। আমাদের বলার প্রয়োজন বোধটুকুও করলি না। এ কেমন ছেলে পেটে ধরলাম আমি। আমাকে এই দিন দেখতে হবে আমি কোনো দিন ও ভাবি নাই বলে বিলাপ করেন। স্ত্রী র অহেতুক কথা শুনে আনোয়ার নওয়াজ বললেন,

“- আহ্ মরিয়ম! থামবে এবার!অহেতুক না জেনে বিলাপ করা শুরু করে দিলে। শান্ত কি না কি বলল আর তুমি তাই শুনে কি না কি শুরু করছো একটু বলবে আমায়।

“- পরশ যদি বিয়েই না করবে তাহলে শান্ত কাকে ভাবি বলবে তুমি কও আমারে।

“- সময় হলে সবটা জানতে পারবে চুপ থাকো। ছোটরা আছে এখানে। স্বামী র কথায় চুপ করেন মরিয়ম নওয়াজ।

আর এদিকে পরশ রাগি দৃষ্টিতে শান্তর দিকে তাকিয়ে আছে। শান্ত ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে। শান্ত যে ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলছে সেটা সে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। শান্ত আমতাআমতা করে পরশ কে বলে,

“- আব আ- সলে ভাইয়া।

পরশ শান্ত কন্ঠে শান্তকে তার রুমে আসতে বলে নিজের রুমে চলে যায়। পরশের পিছন পিছন শান্ত চুপচাপ হেঁটে যায়। আর তাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আনোয়ার নওয়াজ মুচকি হাসেন। স্বামী কে হাসতে দেখে বললেন,

“- কি গো তুমি হাসছো কেন? তোমার আবার কি হলো?

আনোয়ার নওয়াজ মুচকি হেসে বলেন,

” – তৈরি হয়ে নাও মরিয়ম। ছেলে তো বড়ো হয়েছে তার বিয়েটাও তো দিতে হবে। এবার আমাদের বাড়ি নতুন মেহমান আসুক কি বলো?

মরিয়ম নওয়াজ কিছু না বুঝে বললেন,

“- নতুম মেহমান মানে পরশের বিয়ের কথা বলছো তুমি।

“- হ্যাঁ।

****

রুমের ভিতর পরশ আর শান্ত। পরশ সোফায় বসে আছে আর শান্ত খাটে। পরশ পায়ের উপর পা দিয়ে বলল,

” এবার বল কি হয়েছে?

শান্ত উৎফুল্ল হয়ে বলে ওঠে,

” – ভাইয়া আজ কে ভাবি কে খুব রাগিয়ে দিয়েছি।

শান্তর কথা’য় ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে।

শান্ত হাসতে হাসতে শশী আর ঊর্মির সাথে ঘটে যাওয়া সব বলে। সব শুনে পরশও হাসে। তারপর বলে,

” ওয়েট একটা ফোন দিয়ে দেখি কি বলে? অতঃপর ফোন লাগায় শশী’র নাম্বারে। দুই বার দিলেও রিসিভ করে না শশী। ফলে তিনবারের মাথায় রিসিভ করে বলে,

” বারবার ফোন দিচ্ছো ক্যান। তুমি বুঝছো না মেজাজ খারাপ আছে কি বলতে কি বলে ফেলবানে?

পরশ মুখ টিপে হেঁসে জবাব দেয়,

“- আরে জান মেজাজ খারাপ কেন? কি হয়েছে আমাকে একটু বলবে?

শশী রেগেমেগে বলে,

” – একটা বজ্জাত ছেলে ঊর্মিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিছে। অথচ স্যরি না বলে চলে যাচ্ছিল। আমি যখন ছেলেটাকে বললাম ছেলেটা আমায় এসে কি বলে জানো?

“- কি?

“- ব্যাথা কি আমি পাইছি। এটা কোনো কথা হইল বলো?

“- মোটেও না। ছেলেটা একদমই ঠিক করে নাই। তারপর কি হলো?

” তারপর ছেলেটা ঊর্মি কে গিয়ে স্যরি বললো। আর ঊর্মিও হাসি মুখে ছেলেটার সাথে কথা বলল। এটা কি ঊর্মি ঠিক করছে তুমি বলো?

“- না না ঊর্মি কাজটা একদমই ঠিক করে নি। ওর উচিত ছিল ছেলেটাকে আচ্ছা করে ঝাড় দেওয়ার কি বলো?

“- হ্যাঁ, তুমি ঠিক বলছো? এজন্যই তো ওকে রাস্তায় ছেড়ে বাড়ি চলে আসছি। ওর জন্য আমি ছেলেটার সাথে ঝগড়া বাধিয়ে দিলাম আর ও কি করল? ফারদার যদি ছেলেটা কে সামনে পাই তাহলে আচ্ছা করে ঝাড় দিয়ে দেব। তখন বুঝবে শশী কি জিনিস।।

“- হ্যাঁ হ্যাঁ আচ্ছা করে দিয়ে দিও। এখন মাথাটা ঠান্ডা করে একটু ঘুমাও। পরে কথা হবে রাখি। আল্লাহ হাফেজ।

” আল্লাহ হাফেজ। বলে কল কেটে দেয়।

কল কেটে দেওয়ার পর উচ্চ স্বরে হেসে ওঠে দু’জন। কারণ পরশ স্পিকারে দিয়ে কথা বলছিল। হাসি থামিয়ে শান্ত বলে,

“- ভাইয়া আমি আর ভুলেও ভাবির সামনে পড়ব না। আমাকে সামনে পাইলে ভাবি যে কি করবেনে।

পরশ হেঁসে বলে,

” ভাই তুই ভুলেও শশীর সামনে পড়িস না। যদি পড়িস তাহলে খবর আছে বলে হেঁসে ওঠে।

#চলবে