চোখের তারা তুই পর্ব-০৪

0
99

#চোখের_তারা_তুই
#পর্বঃ৪
#লেখিকাঃতাইয়েবা_বিন_কেয়া

ফারিশ মুশকি হেসে আঁধার কে জিজ্ঞেস করে :

“এই শহরের এমপি আসলে কে সেটা আপনি জানেন না। বড় আব্বু আপনাকে বলে নাই”।

ফারিশের কথা আঁধার বুঝতে পারে না। কারণ এই শহরের এমপি কে সেটা বড় আব্বু আঁধার কে কোনো বলবে।তাই সে ফারিশকে বলে :

“বড় আব্বু আমাকে এমপির বিষয়ে কেনো বলবে। আর এই শহরের এমপি কে সেটা জেনে আমি কি করব। তবে এমপি আসলে একটা বজ্জাত। আমার মতো একটা ভালো মেয়ে এমপির জন্য ব্যাথা পেয়েছে তাই এই এমপির কখনো ভালো হবে না। বিয়ের পর বউ ছাড়া হানিমুনে যেতে হবে তখন বুঝতে পারবে ব্যাথা কাকে বলে। ”

ফারিশ ওর কথা শুনে মুশকি হাসে কারণ সত্যি এমপিকে বউ ছাড়া হানিমুনে যেতে হবে। কারণ এমপি বিয়ের বিষয়ে বিশ্বাস করে না আবার আঁধারের অভিশাপ বেচারা এমপি। ফারিশ আঁধার কে এমপির বিষয়ে একটা কথা বলে :

“আপনার অভিশাপ বেচারা এমপির উপর লেগে গেছে এমপির বউ ছাড়া হানিমুনে যেতে হবে। কারণ তার বউ বিয়ের ছয়মাস পড়ে চলে যাবে “।

ফারিশের কথা শুনে আঁধার অনেক খুশি হয়ে যায়। কারণ তার অভিশাপ লেগে গেছে। আঁধার বলে :

“আপনি সত্যি বলছেন এই এমপির বউ ছয়মাস পড়ে চলে যাবে। আসলে ঠিক হবে বজ্জাত এমপির সাথে একটা মেয়ে কি করে থাকতে পারবে। যে এমপি পাঁচ বছরে একটা রাস্তা ঠিক করতে পারে নাই সে তার বউকে কি করে খুশি রাখবে”।

আঁধারের কথা শুনে ফারিশ বলে :

“এমপি চাইলে তার বউকে খুশি রাখতে পারে কিন্তু তার বউ অনেক বাচ্চা টাইপ। আর এমপি বিয়েতে বিশ্বাস করে না তাই ডিভোর্স হয়ে যাবে। আর এই রাস্তায় কাজ চলছে তাই রাস্তা এমন। পুরাতন রাস্তা ভেঙে নতুন করে রাস্তা তৈরি করতে হবে। এমপি কিন্তু ভালো কাজ করছে জনগণের সুবিধা হবে। ”

আঁধার ফারিশের কথা ভেবে দেখে ফারিশ ভুল কিছু বলছে না। রাস্তায় কাজ চলছে এমন মনে হচ্ছে তাহলে কি এমপি খারাপ মানুষ না সেটা ভাবে। তারপর আঁধার বলে :

“ঠিক আছে এমপি খারাপ মানুষ না কিন্তু ওনার জন্য আমি হাতে ব্যাথা পেয়েছি। তাই আমার কাছে ওনি খারাপ অনেক খারাপ মানুষ। বেটা একটা বজ্জাত। ”

ফারিশ শুধু ওর কথা শুনে হাসছে মেয়েটা আসলে বাচ্চা টাইপ। সামনে থাকা ড্রাইভার ওর কথা শুনে হাসছে কি গালি দিচ্ছে সে এমপিকে কিন্তু আসলে এই এমপিকে সেটা সে জানে না। যদি ভবিষ্যতে কখনো এমপির বউ ছাড়া হানিমুনে যেতে হয় তাহলে আঁধার মেনে নিতে পারবে।

আঁধার গালি দিচ্ছে :

“বজ্জাত এমপি বিয়ের তিনদিন পরে তোর বউ মারা যাবে। তোর জন্য ওই লোকজন মারা*মারি করছে আমাকে পাথর ছুঁড়ে মেরেছে। যদি কখনো সামনে দেখতে পাই তোকে এক ঘন্টা সুইমিং পুলে দাঁড় করিয়ে রাখব বজ্জাত এমপি ”

ফারিশ আর আঁধার বাড়ি ফিরে আসে তখন বিকাল হয়ে গেছে বাড়ির সবাই খাওয়া শেষ করে বিশ্রাম নিতে গেছে। যদিও বেশ ভালো হয়েছে না হলে আঁধারের হাতের অবস্থা দেখে সবাই অনেক চিন্তা করবে। আঁধার কে ফারিশ রুমে নিয়ে যায় হাতে বেশ লাল হয়ে গেছে নিশ্চয়ই আঁধারের ব্যাথা করছে অনেক। তাই ফ্রিজ থেকে বরফ বের করে ওর হাতে লাগিয়ে দেয়। ফারিশ বরফ নিয়ে হাতে লাগিয়ে দেয় আর বলে :

“আচ্ছা পাথরটা যদি আমার শরীরে এসে লেগে যেতো তাহলে কি এমন সমস্যা হতো। আপনি কেনো সেটা ধরতে গেলেন হাতে কতো ব্যাথা লেগেছে । ”

ফারিশের কথা শুনে বিষাদের একটা হাসি দিয়ে আঁধার বলে :

“ফারিশ আপনি আর আমি এই বিয়ে মেনে নিতে পারব না ছয়মাস পর আমাদের ডিভোর্স হয়ে যাবে। কিন্তু এখনো ডিভোর্স হয়ে যায় নাই তাই আমার স্বামীকে সব বিপদ থেকে বাঁচিয়ে রাখা আমার দায়িত্ব।আর পাথরটা অনেক বড়ো ছিলো যদি আপনার কেনো বড়ো বিপদ হয়ে যেতো”।

আঁধারের মুখে স্বামী কথা শুনে কেমন একটা আজব অনূভুতি হলো। যদিও কেমন সেটা ভালো না খারাপ সেটা ফারিশ জানে না তবুও ফারিশ বলে :

” আমি যেমন এই বিয়ে মেনে নিতে পারব না আপনি ও মেনে নিতে পারবেন না। তাহলে আমার বড়ো বিপদ হলে আপনার কষ্ট হবে কেনো “।

ফারিশের কথা শুনে আঁধার একটু শ্বাস নিয়ে বলে :

“আমার কষ্ট হবে না কিন্তু এই পরিবারের হবে। আর আমি যদি পাথরের আঘাতে মারা যায় তাহলে কেউ কাঁদবে না আমার জন্য। কিন্তু আপনার কিছু হয়ে গেলে সবাই ভেঙে পড়বে। এই পরিবার আমার আপন না কিন্তু রক্তের সম্পর্ক আছে তাদের সাথে। আর আপনার কিছু হয়ে গেলে আমার কথাটা বলে থেমে যায়।”

আঁধারের কথা শুনে ফারিশ কিছু বলতে যাবে তখন ওর ফোনে কেউ কল দেয় :

হ্যালো, এমপি স্যার যারা পরিষদের সামনে গন্ডগোল করেছে তাদের ধরতে পেরেছি আপনাকে আসতে হবে (পুলিশ)।

ফেনো ফারিশকে এমপি বলেছে কেউ সেটা শুনে আঁধার অবাক হয়ে গেছে। এমপি মানে তাহলে ফারিশ এই শহরের এমপি(লেখিকা).

ফারিশ আঁধারের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা অবাক হয়ে গেছে। ফারিশ একটু হেসে পুলিশকে বলে:

আচ্ছা ঠিক আছে আমি রাতে আসবো এখন একটা কাজে বিজি আছি। পরে ফোন করে কথা বলছি আপনার সাথে বাই।

ফারিশের ফোন রাখা শেষ হলে আঁধার জোরে কান্না করতে থাকে কান্না কম করছে চিৎকার বেশি করছে। কান্না করতে থাকে আর আঁধার বলতে থাকে :

“আপনি কি করে এইটা করতে পারলেন আমার সাথে।আপনার যখন বউ আর বাচ্চা আছে তাহলে আমাকে বিয়ে করলেন কেনো। ছয়মাস আপনার বাচ্চাদের সাথে একটা সতীনের সাথে সংসার করতে পারব না আমি।”

আঁধারের কথা শুনে ফারিশ অবাক তার বাচ্চা আর বউ আছে কিন্তু সেটা সে নিজে জানে না। আর এই মেয়ে যে জোরে কান্না করছে পুরো বাড়ির মানুষ চলে আসবে মনে হয়। আঁধারকে ধমক দিয়ে ফারিশ বলে :

“আমার কেনো বউ আর বাচ্চা নাই। আপনি এইসব কি বলছেন আর আমি বিয়ের বিষয়ে বিশ্বাস করি না সেটা আপনি জানেন।”

আঁধার আরো জোরে কান্না করতে থাকে। আর বলে :

“আপনার যদি বউ আর বাচ্চা না থাকে তাহলে এমপি কি করে হতে পারলেন আপনি। নিশ্চয়ই আপনি বিবাহিত। ”

ফারিশ একটু বিরক্ত হয়ে বলে:

“আচ্ছা কেউ বিয়ে না করলে কি এমপি হতে পারে না। বিয়ের সাথে এমপির কি সম্পর্ক।”

ফারিশের কথা শুনে কান্না থামিয়ে আঁধার বলে :

“আসলে আমাদের শহরে যারা এমপি হয়েছে তাদের সবার বউ আর বাচ্চা আছে। কোনো এমপি এমন নাই যার বউ আর বাচ্চা নাই ছোটবেলা থেকে খুব শখ ছিলো এমপির সাথে প্রেম করব।কিন্তু সব এমপি বিবাহিত ছিলো তাই আমি মনে করেছি বিয়ে আর বাচ্চা না থাকলে এমপি হতে পারে না কেউ।”

আঁধারের কথা শুনে ফারিশ হাসবে না কাঁদবে সেটা বুঝতে পারে না। সত্যি বিয়ে না করলে এমপি হওয়া যায় না। বড় আব্বু তুমি কার সাথে বিয়ে দিলে এই মেয়েতো আসলে একটা বাচ্চা মেয়ে। ফারিশ এই ছয়মাস তোকে আর কি শুনতে হবে কে যানে।

#চলবে