চোখের তারা তুই পর্ব-০৫

0
88

#চোখের_তারা_তুই
#পর্বঃ৫
#লেখিকাঃতাইয়েবা_বিন_কেয়া

আঁধার হাতে ব্যাথা পেয়েছে আর সারাদিন ক্লাস করে টায়ার্ড হয়ে যায় তাই একটু খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে যায়। রাতে ঘুম থেকে উঠে দেখে ফারিশ ঘরে নাই। সে একটু ছাদে যায় সেখানে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আঁধার বলে :

“আম্মু আজকে তোমার কথা অনেক মনে পড়ছে। তোমার আর বাবার ডিভোর্স হয়ে যায় তখন আমি পেটে। আমার জন্ম হলো কিন্তু বাবা কে সেটা জানতে দেও নাই। সংসার চালাতে তুমি স্কুলে চাকরি করতে টিউশনি করতে জীবনে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তোমার। কিন্তু কখনো আমাকে কিছু বুঝতে দাও নাই। ”

হঠাৎ আঁধারের ফোনো একজনের কল আসে। সে রিসিভ করে ফোনের ওই পাশ থেকে কেউ বলে :

“আঁধার তোর সাথে কোনা খারাপ কিছু করেছে ওই পরিবার। নিলয় চৌধুরী কি তোর উপর অত্যাচার করেছে আর তোর স্বামী কোনো খারাপ ব্যবহার করছে তোর সাথে “।

আসলে এই লোকটা আঁধারের মামা। ফোন হাতে নিয়ে সব কথা শুনে একটু হাসি দিয়ে আঁধার বলে :

“মামা আমার সাথে কেউ খারাপ কিছু করে নাই। আর আমি ঠিক আছি তোমাকে কেনো চিন্তা করতে হবে না। আসলে এই দুইদিন একটু কলেজে এডমিট নিয়ে বিজি থাকতে হয়েছে তাই ফোন করতে পারি নাই সরি “।

আঁধারের ঠিক আছে সেই কথা শুনে ওর মামা একটু শান্ত হয়। দুইদিন ফোনে কথা না বলতে পেরে অনেক চিন্তা করছে। ওর মামা বলে :

“তোর জন্য চিন্তা না করে কি করব এই পরিবার আমার বোনকে কেড়ে নিয়েছে ওর উপর অত্যাচার করছে। অহির জন্য ভাই হয়ে কিছু করতে পারি নাই কিন্তু মামা হিসাবে তোর জন্য যা করা দরকার তাই করব। আর এই নিলয় চৌধুরী খুব খারাপ মানুষ। “।

আঁধার মামার কথা শুনে বুঝতে পারে সে এই পরিবারকে কতো ঘৃণা করে। আসলে মায়ের সাথে যা করেছে তার জন্য ঘৃণা করা দরকার সবাইকে। মামার কথা শুনে তার বেশ ভালো লাগে কারণ এই পৃথিবীতে মামা ছাড়া কেউ নাই তার। মামাকে বলে আঁধার :

“মামা তোমার মনে আছে যখন আমার পনেরো বছর বয়স তখন মা মারা যায়। এই পৃথিবীতে কেউ ছিলো না আমার তখন তুমি তোমার বাড়িতে আশ্রয় দিলে। ডিজাই করা আমার অনেক পছন্দ তাই তোমার অফিসে আমাকে বসতে দিলে পড়াশোনা করতে দিলে। মামা তুমি না থাকলে হয়তো না খেয়ে মারা যেতাম আমি।”

আঁধারের কথা শুনে তার মামা একটু হাসে। আসলে মামা আঁধারের জন্য কিছু করে নাই সব নিজের যোগ্যতা দিয়ে করেছে সে। মামা বলে :

“অহির ডিভোর্স পর ওকে আমার বাড়িতে থাকতে বললে সে এখানে থাকবে না জানিয়ে দেয়। কারণ তোর মা কারো বোঝা হতে চাই নাই সে নিজে অনেক কষ্ট করেছে। কিন্তু কখনো আমার কাছে টাকা চাই নাই যখন তোর মা মারা যায়। তখন তোকে এই বাড়িতে নিয়ে আসি আমি কিন্তু তুই তোর মায়ের মতো কারো উপর বোঝা হয়ে থাকবি না। যখন জানতে পারি তোর ডিজাইন পছন্দ তখন আমার অফিসে তোকে কাজ দেয়। কিন্তু সেই অফিস থেকে শুধু নিজের বেতন নিয়ে সব টাকা আমার একাউন্টে জমা করে দিলি। আর বাড়িতে থাকতে দিয়েছি সেই জন্য বাড়ির সব তুই করে নিজের খাওয়ার টাকা শোধ করে দিলি।”

আঁধার ফোনে মামার কথা শুনে বুঝতে পারে। মামা উপকারের কথা কখনো মেনে নিবে না তাই সে কথা আর কেনো কথা বলে না। মামি আর পরিবারের সবার সাথে কথা বলে আঁধার। রাত হয়ে গেছে পড়াশোনা করতে হবে নিজের রুমে যায়। সেখানে গিয়ে দেখে তুলি বসে আছে আঁধার বলে :

আরে তুলি তুমি এখানে। তোমার বন্ধুর মা ঠিক হয়ে গেছে।

আঁধারের কথা শুনে তুলি ওর কাছে যায়। তারপর ওর হাত দেখে অবাক হয় কারণ অনেক লাল হয়ে গেছে। মনে হয় ভীষণ ব্যাথা পেয়েছে। আঁধারের জন্য ওর একটু খারাপ লাগে তাই তুলি বলে :

“সরি আঁধার আমার জন্য তুমি কতো ব্যাথা পেলে। আমি যদি গাড়ি নিয়ে না যেতাম তাহলে এতো সমস্যা হতো না। বিশ্বাস করো আমার জানা ছিলো না পরিষদের সামনে মারামারি হবে। তাহলে তোমাকে একা রেখে কোথাও যেতাম না সরি “।

তুলির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা কান্না করে দিবে এমন হয়ে গেছে মুখ। আসলে ওর কেনো দোষ নাই সব হয়েছে ওর ভাইয়ের জন্য বেচারি মেয়ে শুধু কষ্ট পেয়েছে। তুলির হাত ধরে আঁধার বলে :

“আরে তুমি নিজেকে দায়ী করবে না তুলি। তোমার কোনো দোষ নাই রাস্তায় হঠাৎ গন্ডগোল হয়েছে। আর যদি গাড়ির মধ্যে থাকতাম তাহলে ওরা গাড়ি ভেঙে ফেলতে পারতো। তাই তোমাকে অনেক ধন্যবাদ গাড়ি তুমি নিয়ে গেলে না হলে বড় সমস্যা হতে পারতো। তাই কেনো সরি না আমার তোমাকে ধন্যবাদ দিতে হবে।”

আঁধারের কথা শনে তুলি একটু খুশি হয়ে গেছে। তার জন্য আঁধারের কোনো সমস্যা হয়নি সেটা জেনে একটু নিজেকে শান্ত করতে পেরেছে। তুলি বলে :

“কিন্তু তাহলে ভাইয়া আমাকে বকা দিলো কেনো। আমাকে এক ঘন্টা কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। আর বলেছে আমাকে একজন টাকলার মাথে বিয়ে দিবে। আচ্ছা তুমি বলো আমার বর যদি টাকলা হয় সকলের সামনে কি করে মুখ দেখাবো আমি। প্রচুর বকা দিয়েছে। ”

তুলির কথা শুনে অনেক রাগ হচ্ছে ফারিশের উপর। নিজেকে কি মনে করে সে ভুল করবেন ওনি আর বকা দিবে তুলিকে। আজ বাড়িতে ফিরে আসতে দেন এমপি সাহেবকে তারপর দেখাবো বকা কাকে বলে।

ফারিশ থানায় যায় অপরাধী কারা তাদের দেখতে। পুলিশ অফিসার ফরিদ হোসেন সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করছে। পুলিশকে দেখে ফারিশ বলে :

“অফিসার কিছু বলেছে কেনো ওরা পরিষদের সামনে গন্ডগোল করেছে। ”

ফারিশের কথা শুনে অফিসার একটু হতাশ হয়ে বলেন :

“এমপি স্যার ওরা কেউ কিছু জানে না। শুধু ওদের কেউ টাকা দিয়েছে পরিষদের সামনে ঝামেলা করতে। কিন্তু সেটা কে তার কথা বলতে পারছে না “।

অফিসার কথা শুনে ফারিশ অনেক টেনশনে পরে যায় কারণ কে এইসব করেছে।কেউ রাজনীতির জন্য করে থাকবে কিন্তু নিবার্চনের এখন অনেক দেরি। ফারিশ বলে :

“আচ্ছা ঠিক আছে অফিসার আপনি ওদের জিজ্ঞেস করতে থাকেন।যদি কিছু জানা না যায় তাহলে কি করতে হবে সেটা ফারিশ ফারহান চৌধুরী খুব ভালো করে জানে। ”

অপরিচিত একটা মানুষের ফোন আসে ফরিদের কাছে মানে পুলিশের কাছে। ফরিদ ফোন রিসিভ করে বলে :

“স্যার আপনি চিন্তা করবেন না কেউ কোনো কথা বলে নাই আপনার নামে।শুধু বলেছে কেউ টাকা দিয়েছে তাদের পরিষদের সামনে ঝামেলা করতে। ”

ফরিদের কথা শুনে অপরিচিত লোক একটু রাগ করে হয়। সে রাগী কণ্ঠে বলে :

“একটা কাজ যদি হতো ওদের দিয়ে শুধ বলেছি পরিষদের সামনে গন্ডগোল করতে। যাতে ফারিশ ভিতর থেকে বের হয়ে আসে কিন্তু সেটা করতে পারে নাই। একবার যদি ফারিশ গন্ডগোল মধ্যে এসে যেতো তাহলে ফারিশ ফারহান চৌধুরীর লাশ হয়ে যেতো।”

অপরিচিত লোকের কথা শুনে ফরিদ একটু ভয় পেয়ে যায়।
তবে সে অনেক টাকা পেয়েছে তাকে কাজ করে দিতে হবে। অপরিচিত লোককে অফিসার বলে :

“স্যার আপনি চিন্তা করবেন না ফারিশ ফারহান চৌধুরী অবশ্যই মরবে। আজ বেঁচে গেছে কালকে কি করবে বাচঁবে মৃত্যু বরণ তাকে করতে হবে।”

ফরিদের কথা শুনে অপরিচিত লোক খুশি হয়ে যায় বুঝতে পারে সঠিক লোক পেয়েছে সে। আপরিচিত লোক বলে :

“ফারিশকে এতো সহজে খুন করা যাবে না ওহ সুন্দর করে কথা বলে ওকে ভদ্রলোক মনে করবে না। ফারিশ চাইলে ঝড় তুলে দিতে পারে এমপি কি এমনি হয়ে গেছে। ওর শরীরে চৌধুরীর রক্ত তাই ফারিশ খুব ভালো করে জানে ঠাণ্ডা মাথায় কি করে কাজ করতে হবে। আর আসল খুনিকে তোমার বাসায় রাখতে হবে তাহলে কেউ সন্দেহ করবে না”।

#চলবে