চোখের তারা তুই পর্ব-১৯

0
89

#চোখের_তারা_তুই
#লেখিকাঃতাইয়েবা_বিন_কেয়া
#পর্ব১৯

সকাল হয়ে গেছে ফারিশ ঘুম থেকে উঠে পড়ে কিন্তু আঁধার এখনো ঘুমিয়ে আছে। ফারিশ ঘুমিয়ে থাকা আঁধারের মায়াবী মুখ দেখে কতো সুন্দর লাগে মেয়েটাকে। মাথায় হাত রেখে বলে

” রাতে ব্যাথা যাতে না করে সেইজন্য ঘুমের ঔষধ খাওয়ানো হয়েছে তাই এখনো ঘুমিয়ে রয়েছে। না হলে কখন ঘুম থেকে উঠে বাচ্চাদের মতো লাফালাফি করা শুরু করে দিতো। সারাজীবন এই বাচ্চা মেয়েটাকে সয্য করতে হবে “।

ফারিশ একটু হেসে ওয়াশরুমে চলে যায় বের হয়ে এসে ফাহিমকে ফোন করে গুডাদের খোঁজ নিতে হবে। ফারিশ বলে

” হ্যালো ফাহিম গুডাদের কে টাকা দিয়েছে কোনো খোঁজ পাওয়া গেছে কি “।

ফাহিমের সুন্দর ঘুম নষ্ট করে দিলো। কিন্তু কি করবে চাকরি যখন করে তখন বসের ফোন ধরতে হবে। ফাহিম ঘুম ঘুম চোখে বলে

” আরে ফারিশ তুই টেনশন করবি না আসল অপরাধী সামনে চলে আসবে। কিন্তু কল লিস্ট চেক করে কিছু খুঁজে পাওয়া যায় নাই খুনি খুব চালাক “।

ফারিশ একটু হতাশ হয় কিন্তু এই কথা শুনে ওর রাগ উঠে যায়। ফারিশ বলে

” শোন খুনি যদি চালাক হয় তাহলে ফারিশ ফারহান চৌধুরী ওর বাপ। শোন চয়নকে ফোন কর অনেকদিন ওর সাথে যোগাযোগ হয় না দরকার পরে নাই ওর। কিন্তু এখন দরকার ওকে আস্তানায় আসতে বল “।

ফারিশের মুখে চয়নের নাম শুনে ভয় পেয়ে যায় ফাহিম কারণ চয়ন কতটা ভয়ংকর সেটা ফাহিম জানে। কোনো মানুষকে মারতে একটু হাত কাপেঁ না ওর তাকে ফোন করতে বলছে। ফাহিম ভয়ে বলে

” ফারিশ ওকে ফোন করার খুব দরকার। চয়ন কতো ভয়ংকর সেটা তোর থেকে ভালো কে জানে বল কিন্তু চয়ন যদি এই খুনিকে ধরে ওকে বাঁচিয়ে রাখবে না। “।

ফারিশ একটা ভিলেন মতো হাসি দেয়

” তাহলে খুব কি মনে করলি আসল অপরাধীকে এতো সহজে ছেড়ে দিবো আমি। ও ফারিশকে খুব হালকা ভাবে নিয়েছে আমাকে মারা এতো সহজ না। তুই শুধু চয়নকে বল আমি এই কাজ করতে বলেছি জীবিত বা মৃত্য সেই খুনিকে আমার চাই “।

ঘড়িতে প্রায় নয়টা বেজে গেছে আঁধারের ঘুম ভেঙে যায় চোখে যেনো আরো ঘুমাতে চাই। কিন্তু আঁধার এতো বেলা অবদি ঘুমানোর মতো মেয়ে না। ঘুম থেকে উঠে ফারিশকে আশেপাশে না দেখে ওয়াশরুম চলে যায় একটু ফ্রেশ হতে। আলমারি থেকে একটা শাড়ি নেয় আসলে গুলি লাগার পর থেকে এক জামা পড়ে আছে।

ফারিশ বেলকনি থেকে কথা বলে শেষ করে রুমে এসে দেখে আঁধার বেডে নাই। হঠাৎ ওয়াশরুমের দরজা খুলে আঁধার বেরিয়ে আসে ফারিশ ওকে দেখে একটু শুকনো ঢুক গিলে। ফারিশ পিছনের দিকে তাকিয়ে বলে

” আঁধার আপনি শাড়ী কি ভাবে পড়েছেন। যদি শাড়ী পড়তে সমস্যা হয় তাহলে তুলিকে ডেকে নিতে পারতেন “।

আঁধারের নিজের একটু লজ্জা করছে আসলে এক হাত বেন্ডেজ করা তাই শাড়ী ঠিক করে পড়তে পারে নাই। শুধু পেঁচিয়ে রেখে যার ফলে শরীরে কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। আঁধার কখনো ফারিশরর সামনে এভাবে আসে নাই সবমসময় শরীর ডেকে রাখত আর উড়না ব্যবহার করে। আঁধার বলে

” আসলে শাড়ী আমি পড়তে পারি কিন্তু আজকে হাতের জন্য ঠিক করে পড়তে পারি নাই। আর তুলি হয়তো কলেজের জন্য রেডি হচ্ছে তাই বিরক্ত করি নাই ওকে “।

ফারিশ এখনো পিছনে তাকিয়ে রয়েছে কারণ সে মেয়েদের খু্ব সম্মান করে কোনো মেয়ের অনুমতি ছাড়া তাকে দেখা বা টার্চ করা ঠিক না। যদি সেটা নিজের বউ হয় তাহলে ও না ফারিশ বলে

” আচ্ছা ঠিক আছে। আমি আম্মু বা জরিনা খালাকে পাঠিয়ে দেয় তারা আপনাকে সাহায্য করবে “।

আঁধার একটু ফারিশকে ডাক দেয়

” শুনুন ফারিশ আসলে আমার শাড়ীতে সেফটিপিন লাগানো হয় নাই সেইজন্য একটু খারাপ হয়ে গেছে।টেবিল থেকে কয়েকটি সেফটিপিন দেন আমি শাড়ী ঠিক করে নিব। জরিনা খালা বা মাকে বিরক্ত করার দরকার নাই “।

ফারিশ একটু থেমে যায় সে টেবিল থেকে কয়েকটা সেফটিপিন আঁধারকে দেয়। ফারিশের ফোনে একটা কল আসে কথা বলতে থাকে সে।

আঁধার এক হাত দিয়ে সেফটিপিন লাগাতে থাকে কিন্তু হচ্ছে না।ফারিশ দূর হতে সব দেখছে ফারিশ ফোন রেখে দেয় আঁধারের কাছে আসে। ফারিশ বলে

” আপনি এই হাত নিয়ে করতে পারবেন না। আমি আপনাকে সাহায্য করছি “।

আঁধার কি বলবে সে শুধু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়। ফারিশ হাতে থাকা পিন নিয়ে লাগাতে থাকে শেষে শাড়ীর আঁচল ঠিক করে দেয়। ফারিশ বলে

” হুম ঠিক হয়ে গেছে এখন আপনি থাকেন আমি নিচে গিয়ে দেখি খাবার রান্না করা হয়েছে কি না।আপনার মেডিসিন খেতে হবে “।

আঁধার এক দৃষ্টিতে ফারিশের দিকে তাকিয়ে থাকে। কারণ শাড়ী ঠিক করার সময় ফারিশ চাইলে আঁধারকে টার্চ করতে পারতো কিন্তু ফারিশ এমন করে কাজ করেছে যাতে আঁধারকে এতো টার্চ করতে না হয়। আঁধার বলে

” আপনি সত্যি অনেক ভালো ফারিশ সবার জীবনে কেয়ারিং পার্টনার খুব দরকার আপনি অনেক কেয়ারিং। কিন্তু সবচেয়ে ভালো একটা গুণ হলো সম্মান নিজের ওয়াইফকে যে পুরুষ টার্চ করার সুযোগ থেকে অনুমতি ছাড়া টার্চ করে না তার মতো ভালো মানুষ কেউ হয় না “।

ফারিশ নিচে যায় সবাই খাওয়া দাওয়া করছে ফারিশের মা ওকে দেখে এগিয়ে এসে বলে।

” আরে ফারিশ তুই একা নিচে নেমে আসলি আঁধার কোথায়। মেয়েটা সারাদিন ঘরে একা বসে থেকে বোর হচ্ছে ওকে নিচে নিয়ে আসলে হতো “।

” আম্মু আঁধারের শরীর এখনো সুস্থ না এতগুলো সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলে ওনার সমস্যা হতে পারে। তুমি একটা কাজ করো খাবার রেডি করে দাও উপরে নিয়ে গিয়ে খায়িয়ে দেয় “।

ফারিশ খাবার খেয়ে নিলো পরে আঁধারের জন্য খাবার নিয়ে উপরে চলে আসে যায়। আঁধার চুল হেয়ার ডায়ার দিয়ে শুকানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পিছনের দিকে শুকাতে পারছে না।

ফারিশ রুমে যায় আঁধারের অবস্থা দেখে খাবার নিচে রেখে হেয়ার ডায়ার নিয়ে নেয়। ফারিশ বলে

” আপনি যখন একা কাজ করতে পারেন না তাহলে করতে যান কোনো। সবসময় পাকামো করা কি খুব জরুরি “।

আঁধার ধমকে একটু চুপ করে যায় এভাবে বলার কি আছে একজন কাজ করতে না পারলে তাকে সাহায্য করতে হয়। কিন্তু এভাবে বকা কে দেয়।

ফারিশ হেয়ার ডায়ার হাত থেকে নিয়ে চুলগুলো শুকাতে সাহায্য করে। ফারিশ বলে

” ভুল করলে একটু বকা দিবো সেটা উপায় নাই। কিছু বললে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকবে থাক আর রাগ করতে হবে না খাবার নিয়ে এসেছি খেতে হবে “।

আঁধার একটু হাসি দেয় আর বলে

” বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করলে বাচ্চামো সয্য করতে হবে। আর চুল এইদিকে একটু ভেজা শুকিয়ে দেন “।

ফারিশ একটু হাসি দিয়ে চুল শুকিয়ে দেয়। খাবার খায়িয়ে দিবে তখন আঁধার হাত ধরে ফেলে। ফারিশ বলে

” খাবার খেয়ে নেন আমি খেয়ে এসেছি “।

আঁধার হাত ছেড়ে দেয় সে যতো অসুস্থ থাক এই বাড়ির নিয়ম ব্রেক করবে না। এই বাড়িতে পুরুষের আগে খাবার খাবে পরে মহিলারা।

ফারিশ খাবার খাওয়ানের সময় একটা মনে পরে তাই বলে

” শুনুন আঁধার একটা কথা বলে রাখি আজকে আমার ফুপু আর ফুপাতো ভাই আসবে। ওদের থেকে দূরে থাকবেন আপনি “।

আঁধার একটু অবাক হয় ফারিশের ফুপি মানে তারও ফুপি কিন্তু সে তাদের থেকে দূরে থাকবে কোনো। আঁধার বলে

“আমি ফুপুর থেকে দূরে থাকব কোনো আর আমার ফুপি আছে সেটা কেউ বলে নাই আমাকে “।

” আপনি এতোদিন এই বাড়িতে থাকেন নাই। আর ফুপি লন্ডন থাকে আজ এখানে ফিরছে কিন্তু ফুপি কিন্তু একদম ভালো মানুষ না অনেক রাগী মহিলা ওনি। সবাইকে বকা দেয় আর আপনার মায়ের সাথে তার সম্পর্ক ভালো ছিলো না। তাই আপনাকে দেখতে পারবে না সে “।

আঁধার এবার একটু ভয় পেয়ে যায়। আঁধার বলে

” সত্যি সে অনেক রাগী। আমাকে বকা দিবে আমার ভয় করছে “।

ফারিশ ওকে ভয় দেখাতে চাই না কিন্তু ফুপির থেকে আঁধারকে সাবধানে থাকতে হলে তার বিষয়ে সব জানতে হবে। ফারিশ বলে

” ফুপি ভয় পাওয়ার মতো মানুষ। আর ওনার ছেলে রানেল সে এমপি হতে চেয়েছে কিন্তু বড় আব্বু তাকে পছন্দ করতো না।রানেল খুব লোভী আর ছোটবেলা থেকে আমাকে অনেক হিংসা করে তাই আপনি সাবধানে থাকবেন “।

আঁধার একটু ভয় করছে তবুও নিজেকে শান্তনা দেয়। হঠাৎ নিচ থেকে ফুপির গলা শুনা যায়। ফারিশ বলে

” মনে হয় ফুপি চলে এসেছে মনে রাখবেন কথাগুলো যথেষ্ট দূরে থাকবেন ফুপি থেকে। আর রুমে একা থাকা ঠিক হবে না আপনার হয় তুলি না হয় জরিনা খালাকে নিজের সাথে রাখবেন আঁধার। আমি চাই না আপনার কোনো সমস্যা হোক “।

” কিন্তু আপনি যেমন ওনার ভাইয়ের ছেলে তেমনি আমি ও ওনার ভাইয়ের মেয়ে তাহলে ওনি কোনো আমাকে সমস্যায় ফেলবেন “।

” আমি আগে বলেছি ফুপি আপনার মাকে দেখতে পারতো না। সবসময় ওনার সাথে খারাপ ব্যবহার করত আপনার মায়ের এই বাড়ি থেকে যাওয়ার পিছনে ওনার মনে হয় হাত আছে। সো আপনি খুব কেয়াফুল থাকবেন আঁধার কারণ আপনার মায়ের সাথে যেটা হয়েছে সেটা যেনো আপনার সাথে না হয় “।

#চলবে