চোখের তারা তুই পর্ব-২২

0
208

#চোখের_তারা_তুই
#লেখিকাঃতাইয়েবা_বিন_কেয়া
#পর্ব :২২

রাতে ফারিশ আর আঁধার বাড়ি ফিরে আসে তারা ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে যায়। ফারিশ তার নির্বাচনের কাজের জন্য নেতাদের সাথে কথা বলতে থাকে আঁধার অনেক দিন ছাদে যায় না সে তাই ছাদে যায়। হঠাৎ আঁধারের ফোনে একটা কল আসে সেটা ওর মামা। আঁধার ফোন রিসিভ করে বলে

“- হ্যালো মামা কেমন আছো তুমি। এতদিন পরে আমার কথা মনে পড়ল এর আগে ফোন করতে পারতে না “।

মামা বুঝতে পারে আঁধার একটু অভিমান করেছে সে হেঁসে বলে

“- কি করব আমার প্রিয় আঁধার এখন ব্যবসা না দেখে ঘর সংসারে মনযোগ দিয়েছে। তাই পুরো ব্যবসা সামলে তার মামাকে অনেক বিজি থাকতে হয় “।

আঁধার তার মামার ফোন না করার কারণ বুঝতে পারে আসলে আগে সে এই দেশের বিজনেস সামলে রাখতো। তাই মামাকে বেশি কষ্ট করতে হয় নাই কিন্তু এখন ডাক্তারি নিয়ে এতো বিজি থাকে ব্যবসার দিকে নজর দিতে পারে না।

আঁধার বলে

“- সরি মামা আসলে আমার জীবনে এতো কিছু হয়ে গেছে ব্যবসার কথা মাথা থেকে বের হয়ে গেছে। আচ্ছা মামি আর সবাই কেমন আছে।

মামা বলে

“- তোর মামি কি করে ভালো থাকবে। সারাদিন তোর কথা জিজ্ঞেস করে তাই আমরা দেশে চলে এসেছি আর ফারিশকে কখনো আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসা হয় নাই। ও কে নিয়ে আসবি কালকে “।

মামার দেশে ফিরার কথা শুনে খুশি হয়ে যায় কিন্তু কালকে আসতে হবে জেনে খারাপ লাগে। আসলে ওর হাতের অবস্থা দেখে আবার মামা টেনশনে না পরে যায়। আঁধার বলে

“- আসলে মামা কালকে আসা সম্ভব না। তবে তুমি টেনশন করবে না দুই তিনদিন মধ্যে চলে আসবো “।

মামা একটু সন্দেহ হয় কারণ সে দেশে ফিরেছে এইটা জেনে আঁধার সবার আগে ছুটে আসার কথা তাহলে দেরি করবে কোনো। মামা জিজ্ঞেস করে

“- আঁধার সত্যি ঘটনা কি বলো কোনো আসতে পারবে না কালকে। বাড়িতে কি কিছু হয়েছে “।

মামার কথা শুনে আঁধার একটু ভয় পেয়ে যায়। কারণ মামা সন্দেহ করে ফেলেছে এখন না বললেও সত্যি জেনে যাবে। আঁধার বলে

“- আসলে মামা আমি সিঁড়ি থেকে পড়ে ব্যাথা পেয়েছি হাতে। তাই কালকে আসতে পারব না “।

আঁধারের কথা শুনে মামা অনেক টেনশন করে তবুও আঁধার ওকে বুঝতে পারে। মামার সাথে কথা বলে নিচে নামতে যায় হঠাৎ করে পিছলে পড়ে যাবে। আঁধার বলে

“-ফারিশ”।

ফারিশ এসে ওকে ধরে ফেলে আসলে আঁধারকে অনেক সময় ধরে দেখতে না পেয়ে ছাদে যাচ্ছে তখন দেখে আঁধার পড়ে যাচ্ছে ওকে ধরে ফেলে। কিন্তু ছাদের সিঁড়ি একটু চিপা তাই আঁধার হাতে ব্যাথা পায়।

ফারিশ ওকে ধরে আতংক নিয়ে বলে

“- আঁধার আপনি কি ঠিক আছেন। আঁধার কথা বলেন কি হয়েছে আপনার “।

হাতে ব্যাথা পাওয়ার জন্য আঁধার অজ্ঞান হয়ে যায়। ফারিশ ওকে কোলো উঠিয়ে ডাক্তার কে কল করে।

প্রায় দুই ঘণ্টা পরে আঁধারের জ্ঞান ফিরে আসে ওর। চোখ খুলে দেখে ফারিশ ওর মাথার কাছে বসে আছে । আঁধার একটু ব্যাথা অনুভব করে হাতে

“- আপনি কি ঠিক আছেন আঁধার। হাতে কি বেশি ব্যাথা করছে “।

” এমপি সাহের আপনি টেনশন করবেন না আমি ঠিক আছি। হঠাৎ করে ছাদে কি করে পড়ে গেলাম বুঝতে পারি নাই “।

ডাক্তার বলে

” ফারিশ স্যার আপনি টেনশন করবেন না ওনি ঠিক আছেন। কিন্তু রেস্ট দরকার আর মনে রাখবেন হাত যোনো বেশি নড়াচড়া না করে তাহলে ব্যাথা বেড়ে যেতে পারে “।

ফারিশ ডাক্তারকে বিদায় দেয় এরপর আঁধারের কাছে আসে। রাগী চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বলে

“- কি হয়েছে শান্তি আরো লাফালাফি করেন ছাদে যান। অবশ্যই শান্তি হবে না এখনো আপনার যতখন হাত না ভেঙে যাবে ততক্ষণে আপনি কিছু বুঝতে পারবেন না। জানি না আর কতো টেনশনে ফেললে শান্তি হবেন “।

আঁধার জানে ফারিশ ওকে বকা দিবে আসলে দোষ ওর কোনো ছাঁদে যেতে গেলো। এখন বকা সয্য করতে হবে। আঁধার বলে

“- সরি আসলে বুঝতে পারি নাই পরে যাবে। মাফ করে দিন এমপি সাহেব “।

“- কোনো মাফ নাই এখন রেস্ট নিবেন আর যদি বাহির বের হন হাত পা ভেঙে রেখে দিবো। ফারিশ ফারহান চৌধুরীর রাগ কতটা সেটা আপনি দেখবেন শুধু একপা বেড থেকে নিচে নেমে দেখেন “।

আঁধার কি করবে বেডে বসে রয়েছে ঠিক তখন দিশার ফোন আসে ও কল রিসিভ করে। আঁধার বলে

-” ওহ দিশা আপু দারুণ সময় ফোন করলে তুমি। বেডে বসে থাকতে থাকতে বোরিং লাগছে এখন তোমার সাথে কথা বলা যাবে “।

দিশা হাসি দিয়ে বলে

” তুমি কলেজে আসো না কোনো আঁধার। তুলিকে জিজ্ঞেস করেছি তুমি নাকি অনেক অসুস্থ হাতে গুলি লেগেছে তাই সেইজন্য ফোন করেছি “।

” আরে তুমি টেনশন করো না এখন ঠিক আছি আমি”।

” আচ্ছা আঁধার তুমি এমপির জন্য গুলি খেতে গেলে কোনো। এমপি কি তোমার পরিচিত যদি পরিচিত হয় তাহলে কেমন পরিচিতি যার জন্য তুমি গুলি খেতে পারে “।

আঁধার এবার পড়েছে মহা বিপদে কি বলবে দিশাকে। সত্যি পারবে না তবে ঘটনা মেনেজ করতে হবে

“- কি বলো তুমি দিশা আপু এমপিকে কি করে জানবো। তুলির মুখে ওনার নাম শুনেছি আর সেইদিন গুলির সামনে যেকোনো মানুষ থাকলে তাকে বাঁচাতে যেতাম “।

দিশার কথা বেশি বিশ্বাস হলো না কিন্তু সে চিন্তা করে নাই আঁধার এমপির বউ হতে পারে। দিশা ওকে আসল কারণ বলে যার জন্য সে ফোন করেছে

“- আচ্ছা শুনো আঁধার কালকে কলেজে আসতে হবে তোমাকে। যারা মেডিক্যাল কাজে বাহিরে গিয়েছে তাদের সবাইকে পুরস্কৃত করা হবে আর এইটা করবে কে যানো এমপি নিজে। কালকে কলেজে এমপি আসবে “।

আঁধারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে একতো কলেজে যেতে হবে আবার নাকি এমপি মানে ফারিশ আসবে। ফারিশ ওকে বেড থেকে একপা নড়তে দেয় না আর কলেজে যেতে দিবে অসম্ভব। আঁধার বলে

“- কি এইটা কখনো সম্ভব না। কালকে কলেজে যেতে পারব না কারণ আমার হাতে অনেক ব্যাথা “।

” দেখো আঁধার এই কথা বুঝতে পারছি কিন্তু চেয়ারম্যান স্যার সেটা মানবে না। তোমাকে যেতে হবে কারণ তুমি সবচেয়ে ভালো মেডিক্যাল কাজ করেছো না গেলে হয়তো তোমাকে বাতিল করবে কলেজ থেকে। চেয়ারম্যান স্যার অনেক রাগী মানুষ “।

” আচ্ছা এই এমপির কোনো কাজ নাই কলেজে কোনো আসতে হবে”।

দিশা একটু হেসে ওকে নির্বাচনের বিষয়ে বলে

“- আরে আঁধার তুমি জানো না আর কয়েকদিন পরে নির্বাচন আসছে সেইজন্য কলেজে আসবে ভোট চাইতে। আর এবার এমপির বিরুদ্ধে অনেক শক্তিশালী মানুষ দাঁড়িয়েছে। তাই ভোটের দরকার ওনার “।

আঁধার একটু টেনশন করে ফারিশের জন্য নির্বাচনে কি হবে তাই নিয়ে তবুও ভাগ্য যা থাকবে তাই হবে। আঁধার বলে

“- ঠিক আছে কি হবে দেখা যাবে “।

ফারিশ রুমে এসে দেখে আঁধার কার সাথে কথা বলছে। ফারিশ বলে

“- কার সাথে কথা বলছেন আপনি “।

আঁধার একটু হাসি দিয়ে বলে

“- আসলে দিশা আপু ফোন করছে কালকে কলেজে অনুষ্ঠান আছে আমাকে যেতে বলছে। না গেলে চেয়ারম্যান স্যার অনেক সমস্যা করবে “।

“- একদম যেতে পারবেন না আপনি কালকে কলেজে। হাতের এই অবস্থা আবার ওনি কলেজে যাবে আর চেয়ারম্যানকে দেখে নিবো আমি “।

“- না কালকে আমি কলেজে যাবে। কালকে কলেজে এমপি আসবে সবাই ওনাকে দেখবে আমি কোনো দেখবো না “।

ফারিশ কলেজে এমপির কথা শুনে মনে পড়ে কালকে একটা কলেজে অনুষ্ঠানে ওকে যেতে হবে। কিন্তু সেটা আঁধারের কলেজ সেটা ও জানতো না। ফারিশ বলে

” এমপি আসবে তার কাজে তাকে দেখার জন্য আপনাকে কোনো যেতে হবে। এমপিকে আগে কখনো দেখেন নাই “।

আঁধার এখন দুষ্টামি করার মুডে আছে সে বলে

” আরে ধুর এমপিকে দেখবো এতো ভাগ্য আছে আমার সেই বিয়ে বাড়িতে একটু দেখেছি। কিন্তু ভালো করে দেখতে চাই শুনছি খুব ভালো দেখতে আর বিয়ে হয় নাই যদি এমপিকে একবার পটানো যায় তাহলে এমপির বউ হয়ে যাবে। কি দারুণ হবে বিষয়টা ওহ “।

” কিন্তু এমপির বিয়ে হয় নাই কিন্তু আপনার তো হয়েছে তাহলে এমপিকে পটিয়ে কি লাভ হবে “।

আঁধার বেড থেকে নিচে নেমে ফারিশের কাঁধে হাত রেখে বলে

” সত্যি বলতে এমপি ভালো দেখতে কিন্তু আমার জামাই তার চেয়ে ভালো দেখতে। আপনি কিন্তু এমপির চেয়ে সুন্দর “।

ফারিশ একটু হাসি দিয়ে ওর হাত কাঁধ থেকে নিচে নামিয়ে বলে

“- তাহলে কালকে কলেজে যেতে হবে না এমপিকে কি আর দেখবেন। ঘরে বসে নিজের জামাইকে দেখেন “।

” ফারিশ কালকে যেতে হবে না হলে সমস্যা হবে আ৷ এমপির জন্য দয়া হচ্ছে বেচারা এমপি এবার নির্বাচনে শুনেছি ওনার বিরুদ্ধে ভালো মানুষ দাঁড়িয়েছে। পরের নির্বাচনে যদি ফেল করে তাই এবার এমপির থেকে পুরস্কার চাই “।

” এমপির থেকে পুরস্কার পেলে খুশি হবেন আপনি “।

“- না পুরো এমপিকে পেলে আরো খুশি হবো “।

#চলবে