#ছদ্মবেশে_লুকানো_ভালোবাসা
#মৌমি_দত্ত
#পর্ব_১৯
আফিম ইনায়াতকে বাসার সামনে নামিয়ে দিতেই ইনায়াত এক ছুটে চলে গেলো বাসায়। আফিম সেদিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য ভরে হাসলো।
– আমার সাথে থাকতেও কি এখন ভয় করছে তোমার ইনায়াত??
আপনমনেই প্রশ্নটা করলো আফিম। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে পৌছালো বাসায়। ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে লাবিবা আর জোসেফ। আফিমকে এমন ক্লান্ত,, বিদ্ধস্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরতে দেখে তাদের বুঝতে অসুবিধা হলো না কি হতে পারে। আফিম একবার অসহায় চোখে লাবিবা ও জোসেফের দিকে তাকিয়ে সিড়ি বেয়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো।
এদিকে আফিমের মনের এই হাল। তার উপর ইনায়াতের ঘোর বিপদ। ইনায়াত চাবি দিয়ে দরজা খুলে রুমে ঢুকতেই কেমন অদ্ভুত অনুভব করলো। মনে হলো ঘরে কেও আছে। নিজের এই ভাবনাটাকে পাত্তা দিলো না ইনায়াত। সোফায় গিয়ে বসলো ক্লান্ত ভাবে। চোখ বুজতেই মুখে কাপড় জাতীয় কিছু চেপে ধরলো বলিষ্ট একজোড়া হাত। ইনায়াত ধপ করে চোখ খুলে সেই হাত খামচে,, থাপড়ে মুখের থেকে সড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো। হাত পা ছুড়তে লাগলো। লাভ হলো না। কালো মুখোশ পড়া একটা মুখই চোখের সামনে ছিলো যা আস্তে আস্তে ঝাপসা হয়ে আসলো। জ্ঞান হারালো ইনায়াত ক্লোরোফর্মের কারণে। ইনায়াত জ্ঞান হারাতেই ঘরের মধ্যে থেকে বের হয়ে এলো আরো ৩ টা লোক। ইনায়াতকে বস্তা বন্দি করে নিচে নামানো হলো। নিচেই একটু দূরে পার্ক করে রাখা গাড়ির ব্যাকসিটে ইনায়াতকে তুলে বস্তার মুখ খুলে দিলো একজন। অপরজন কল লাগালো তাদের বস জনের কাছে। জন তখন নিজের সিক্রেট বাংলোয় ইরশাদের সাথে বসে আড্ডা দিতে ও মদ খেতে ব্যস্ত। ফোন বেজে উঠতেই হালকা বিরক্তি নিয়ে তা রিসিভ করলো জনাথন মুলার।
– হ্যালো?? বস?? মেয়েটাকে ধরা হয়ে গেছে।
– গুড!! দ্রুত আমার বাংলোয় চলে আসো।
প্রাইভেট নাম্বার বলে গার্ড বা মুলার কারোর চিন্তা হলো না কল করা নিয়ে। কল শেষেই জন ফোন কান থেকে নামিয়ে ইরশাদের দিকে তাকিয়ে বিজয়ের হাসি দিলো।
– তোমার মেয়ে আসছে।
– বাহ জন!! তুমি আসলেই অনেক পাওয়ারফুল।
– আর তুমিও অনেক ভালো বন্ধু। একটা মেয়ের ডিল করেছিলে। এখন দুটো মেয়ে দিচ্ছো।
জনাথনের চেয়ারের পাশেই হাত পা বাঁধা অবস্থায় বেহুশ পড়ে থাকা রুহির দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো জন। জনের এই দৃষ্টি দেখে শয়তানি হাসলো ইরশাদ।
– এখন ইনায়াত এসে পৌছানোর দেরি। ইনায়াতের পিছনেই সুরসুর করে আনাবো দি স্পন্দন আজাদ ও তাহজিব খানকে। খেলা হবে।
আর মৌজ হবে।
ইরশাদ আর জন দুজনেই কুৎসিত হেসে উঠলো। আর বেচারি রুহি তো জানেও না এখনের এই কথাগুলো। দুপুরের দিকে সবে স্নান করে বের হয়েছিলো। এরপর হঠাৎ কেও পেছন থেকে মুখে রুমাল চেপে ধরে আর জ্ঞান হারায় সে।
.
রুহির বাসায় খোঁজ করে এসে আসিফ খবর জানিয়েছে রুহি বাসায় নেই। রুহির ফোনও বন্ধ বলছে। তাহজিব চিন্তায় মাথা চেপে ধরে বসে থাকলো সোফায়। চোখের সামনে ভেসে উঠছে রুহির মুখটা। আজকে সকালে যদি রুহিকে আটকে দিতো,, কোথাও যেতে না দিতো। এই কথাগুলো ভেবেই নিজের প্রতি নিজের রাগ বাড়ছে। আসিফ তাহজিবের পাশেই চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে। আরভিদ সাহেবকে কল করা হয়েছে। কিন্তু মিশনে থাকায় সে ফোন ধরেনি। তাই তাহজিব তাকে খবরটা আপাতত জানানো হবে না বলেই সিদ্ধান্ত নিলো। নিজেকে শক্ত করে উঠে দাঁড়ালো তাহজিব।
– ইরশাদের খোঁজ করো আসিফ। যেভাবেই হোক খোঁজ চায়। ইরশাদকে পেলে রুহিকেও পাবো। আমার রুহিকে যদি ঐ ইরশাদ একবার চোখ তুলেও দেখে,,, আমার হাতেই ওকে জঘন্য ভাবে মরতে হবে।
আসিফ অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে রইলো তাহজিবের দিকে। তাহজিবের অজান্তেই তাহজিবের চোখে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে রুহির জন্য চিন্তা,,, পাগলামী। এগুলো কি শুধুই অকারণ ?? এগুলোকি ভালোবাসা না??
.
.
স্পন্দন আফরার সাথে কলে কথা বলছে নিজের রুমের মিনি ট্যারেসে বসে৷ তখনই হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকলো কামাল।
– স্যার!! সর্বনাশ!! আফিম আহসান আজকে ইনায়াত ম্যামকে প্রোপোজ করেছে।
কামালের কথাটা কর্ণগোচর হতেই কিছু সেকেন্ড স্তব্ধ হয়ে ছিলো স্পন্দন। পরমূহুর্তেই দাঁড়িয়ে পড়লো মোবাইল কান থেকে সড়িয়ে।
– হোয়াট!! ঐ চরিত্রহীন আফিম আহসান?? ওর সাহস কেমনে হয় আমার পুতুলের মতো বোনকে নিয়ে ভাববার?? গাড়ি বের করো। আমি এক্ষুনি ওর হাড়গোড় ভাঙ্গতে যাবো।
কামাল একবার অস্থিরতা নিয়ে স্পন্দনের মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছে যেখানে জ্বলজ্বল করছে কলের অপরপাশের আফরার উপস্থিতি। কামালকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিরক্তি ও রাগ নিয়ে বলে উঠলো স্পন্দন।
– কি সমস্যা?? গার্ডস এক করো। গাড়ি বের করো। ঐ চরিত্রহীন লম্পট ছেলের সব স্বপ্ন আর হাড়গোড় আমি ভেঙ্গে দিবো আজকে।
– স্যার একটা সমস্যা আছে।
কামালের মিনমিনিয়ে বলা কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালো স্পন্দন।
– কি সমস্যা??
– স্যার,, ইয়ে মানে,, আসলে,,, আফরা ভাবী আফিম স্যারের বোন।
– তোহ কি হয়েছ,,,
সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে পারলো না স্পন্দন। ধুপ করে আবারও নিজের রকিং চেয়ারে বসে পড়লো স্পন্দন। কাঁপা হাতে একবার মোবাইলটা চোখের সামনে এনে দেখলো। মোবাইলটা কানের কাছে নিয়ে বললো,,
– হ্যালো!! আফরামনি??
– আমার ভাই চরিত্রহীন?? লম্পট?? আমার ভাইয়ের হাড়গোড় ভাঙ্গবেন আপনি?? তাই না??
খুব আদুরি স্বরে জিজ্ঞেস করলো আফরা। আফরার এই স্বর শুনে শুকনো ঢোক গিললো স্পন্দন।
– না মানে আসলে,,, এসব তো আর মিথ্যা না। তাই না??
– রাখেন আপনার সত্যি মিথ্যা। আপনি না আমার ভাইয়ের হাড়গোড় ভাঙ্গবেন বলেছেন। আসেন আপনি,,, ২০ মিনিট সময় দিলাম। যদি ২০ মিনিটে আমার বাসায় না দেখি তাহলে আপনার সাথে সম্পর্ক শেষ। ব্রেকাপ!!
আফরার কথা শুনে চমকালো স্পন্দন। কিসের ব্রেকাপ??
– আজকেই না ভালোবাসার আদানপ্রদান হলো। আজকে আবার কিসের ব্রেকাপ??
– ব্রেকাপ,, শুনেছেন?? ২০ মিনিটে আমার বাসায় এসে যদি আমার ভাইয়ের কাছে সরি না বলেন। তাহলে ব্রেকাপ।
খট করে ফোন কেটে দিলো আফরা। এখন সে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। ভাই তার কাছে আগে। আর এদিকে স্পন্দন ক্যাবলার মতো মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে। পরক্ষনেই একরাশ রাগ নিয়ে বললো,,
– বোন আগে,, বৌ পরে। কামাল গাড়ি বের করো।
কামাল শুকনো একটা ঢোক গিলে নিচে নেমে এলো গাড়ি বের করতে আর স্পন্দন রেডি হতে লাগলো।
.
.
আফিম নিজের রুমে শুয়ে আছে বিষন্ন মনে। আজকে সত্যিই তার আফসোস হচ্ছে। যদি কনার মতো একটা মেয়ের জন্য নিজের জীবন না বিগড়াতো। তাহলে ইনায়াতের মতো একটা ভালো মেয়ের মনে নিজের জন্য জায়গা করতে পারতো সে অনায়াসে। তবুও নিজেকে সাহস দিচ্ছে আফিম ক্রমাগত। কাল থেকে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে বলে যখন অনুপ্রেরনা দিচ্ছিলো আফিম। তখনই ধুপধাপ পা ফেলে ঘরে ঢুকলো রাগে ফোসফোস করতে থাকা আফরা। ঢুকেই আফিমের খাটে গিয়ে ধুপ করে বসে পড়লো। হঠাৎ কেও খাটে নিজের পাশে বসেছে অনুভব করতেই চমকে সেদিকে তাকালো আফিম। নিজের বোনকে ফোসফোস করতে দেখে অবাক হলো খুব।
– কি হলো বোনু?? তোর অবস্থা এমন কেন লাল লাল??
– ইনায়াতের ভাই হয় বলে জীবন কিনে নিয়েছে স্পন্দন?? উনার সাহস কেমনে হয় তোমাকে চরিত্রহীন আর লম্পট বলার?? আগামী ২০ মিনিটে এসে যদি উনি তোমার কাছে ক্ষমা না চায়। তাহলে উনার সাথে ব্রেকাপ। দেখে নিও ভাইয়া,, সত্যি সত্যি ব্রেকাপ।
আফরার কথাগুলো যেনো মাথার উপর দিয়ে গেলো আফিমের। পিটপিট করে তাকিয়ে রইলো রাগে ফুসফুস করতে থাকা বোনের দিকে। হঠাৎ মাথায় প্রশ্ন ঝড় তুললো ” ব্রেকাপ বলতে কি বুঝিয়েছে আফরা?? নিজের সম্পর্কের কথা?? আফরা ও স্পন্দন একে অপরকে চেনে কিভাবে তারা?? তাদের কি সম্পর্ক আছে?? সম্পর্ক হলো কবে?? আর ইনায়াতের ভাই স্পন্দন মানে?? ইনায়াত তো বলেছিলো তার কোন ভাই নেই!! তাহলে স্পন্দন কিভাবে ইনায়াতের ভাই হয়?? “। বেচারি আফরার মাথায় রাগ বলে খেয়ালই হলো না সে কি বলছে আর না খেয়াল হলো ইনায়াত ও স্পন্দনের ভাই বোন হবার ব্যাপারটা।
– কি হয়েছে খুলে বল। এসব শুরু হলো কবে??
আফিমের গম্ভীর গলার আওয়াজে আফরার রাগ টাঁই টাঁই ফিস হয়ে গেলো যেন। আস্তে করে ঘাড় ঘুড়িয়ে আফিমের দিকে তাকাতেই আবার ঘাড় ঝট করে ঘুড়িয়ে নিলো। আফিমের গম্ভীর মুখ দেখে খেয়াল হলো সে এতোক্ষন কি বলেছে। জোড়পূর্বক হেসে আফিমের দিকে তাকালো আফরা।
– আমি আসি ভাইয়া। অনেক পড়া বাকি। খুব ব্যস্ত আমি,, খুব খুব ব্যস্ত।
এই বলে আফরা যেই না উঠতে যাবে। অমনি ডাক দিলো আফিম গম্ভীর আওয়াজে।
– দাঁড়া আফরা। সব না বলে এক পাও বের হবি না রুম থেকে।
আফরা থেমে গেলো। ভাইয়ের কথা অমান্য করে বের হয়ে যাওয়ার সাহস তার নেই। আফরা মাথা নিচু করে অপরাধী ভঙ্গীতে ফিরে তাকালো আফিমের দিকে।
– সবকিছু শুনতে চাই। পাই টু পাই!!
আফরা চোখ বন্ধ করে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে আল্লাহর নাম নিলো। আসলেই ক্রোধ ভালো না তার প্রমাণ হয়ে গেলো আজকে আবারও।
– ভাইয়া!! ঠান্ডা মাথায় শুনিস! কেমন??
আফরা বলতে শুরু করলো তার ট্রিপে হওয়া এক্সিডেন্টের কথা। আর এক্সিডেন্ট থেকে বাঁচিয়ে নেওয়া স্পন্দনের কথা। এরপর স্পন্দনকে ভালো লেগে যাওয়া। স্পন্দনেরও আফরাকে নিয়ে ভাবার কথা। আজকে সকালে স্পন্দনের ভার্সিটি আসা আর প্রোপোজ করবার কথা। প্রোপোজ এক্সেপ্ট করবার কথা। এরপর একটু আগে আফরার স্পন্দনের সাথে কথা বলার কথা। কামালের মাঝখানে এসে বলা কথা এবং আফরা ফোন কেটে দেওয়া পর্যন্ত সব বললো আফরা। আফিম তো হা। তার পিঠ পিছে এতোকিছু হয়ে গেলো??
বোনের সামনে এভাবে স্পন্দন অসম্মান করেছে দেখে খারাপ লাগলো আফিমের। আবার পরমূহুর্তেই মাথায় আসলো ভাই বোনের ব্যাপারটা। তখনই নিচে গাড়ির আওয়াজ পেলো আফরা আর আফিম।
– ঐ যে,, চলে এসেছে আপনার আশিক আমাকে মারতে।
আফিম বিরক্ত হয়ে বলল আফরার দিকে তাকিয়ে। আফরা কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকালো আফিমের দিকে। আফিম নাহয় সব কিছু স্বাভাবিক ভাবে নিলো। কিন্তু মা বাবা?? ভেবেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে আফরার। আফিম নিচে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করে নিলো নিজেকে। আফরার দিকে তাকিয়ে বললো,,
– চল বোনু,, তোর বিয়ে পাঁকা করেনি।
আফিম বের হয়ে আসলো রুম থেকে। আফরা কিছুক্ষন ক্যাবলার মতো সেদিকে তাকিয়ে থাকলো। পরমূহুর্তে নিচে কি হচ্ছে ভাবতেই দৌড়ে বের হয়ে আসলো রুম থেকে।
আজকে লাস্টে বলার কিছু নাই। 😑 আমি কেলান্ত আপনাদের কথাগুলো শুনে। ফার্স্ট গল্প ছিলো এটা ভাই। এতেই এতো গালাগালি?? মান সম্মান ধুয়ে দেওয়ার মতো বাংলা গালিও আছে ইনবক্সে। 💙
চলবে,,,