#ছদ্মবেশে_লুকানো_ভালোবাসা
#মৌমি_দত্ত
#পর্ব_২২
ভোরের আলো ফুঁটছে মৃদু ভাবে। ইনায়াতের বাসার সোফায় বসে আছে স্পন্দন মাথা নিচু করে। আফিম উন্মাদের মতো এদিক থেকে ওদিক হাঁটছে। কামাল ফোনে কথা বলছে সবার সাথে,, সবাইকে বুঝিয়ে দিচ্ছে ইনায়াতকে খুঁজবার ব্যাপারটা।
– কেমন ভাই তুমি স্পন্দন?? কেমন ভাই??
আফিম রেগে চিৎকার করে উঠলো। স্পন্দন ভ্রু কুঁচকে মাথা তুলে তাকালো আফিমের দিকে।
– যখন তুমি জানতে ইনায়াতের বিপদ আছে,,, তখন ওর দিকে নজর রাখার কথা কিভাবে ভুলতে পারো তুমি?? হাও??
আফিম রাগ সামাল দিতে না পেরে ছোট্ট একটা চেয়ারে জোড়ে লাথি দিলো। স্পন্দন আবারও মাথা নিচু করে ফেললো। আফিম স্পন্দনের পাশেই বসে পড়লো। সেকেন্ড খানেক সেভাবে বসে আফিম উঠে দাঁড়ালো।
– স্পন্দন!! ইনায়াতের আর তোমার কথা মতো ইরশাদ মির্জা তাহজিব খানের বাসায় বন্দী ছিলো। রাইট??
স্পন্দন ভ্রু কুঁচকে মাথা তুলে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ জানালো। আফিম মাথার চুল খামচে কিছুক্ষন ভাবলো মন দিয়ে। এরপর স্পন্দনের পাশে বসে পড়লো হাসিমুখে ধুপ করে।
– তাহলে তো অর্ধেক চিন্তা শেষ!! তাহজিব খানকে ফোন করো,, দেখা করো। ইরশাদকে কয়েক ঘা দিলেই সবটা জানা যাবে।
স্পন্দনের চোখে মুখে বিষ্ময়। কথাটা মস্তিষ্কে আঘাত করতেই হাসি ফুঁটলো স্পন্দনের মুখে। আফিমকে জড়িয়ে ধরলো খুশী হয়ে। এরপর দুজনেই বের হয়ে এলো কামালের কাছে। কামাল কল শেষ করে সবে মোবাইলটা কান থেকে নামিয়েছে। দুজনকে একসাথে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
– কামাল!! তাহজিব খানের সাথে কন্ট্যাক্ট করো ইমিডিয়েটলি। কল করে আমাকে দেবে।
স্পন্দনের কথা বুঝতে না পারলেও কামাল বললো,,
– স্যার!! আমি এক্ষুনি কল করছি। চিন্তা করবেন না।
স্পন্দন আর আফিম দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে কামালের দিকে অধীর আগ্রহে। কামাল কল লাগালো আসিফের নাম্বারে। ৩ বার রিং হওয়ার পর আসিফ রিসিভ করলো,,
– হ্যালো!! এস.এ কথা বলবে!!
আফিম হা হয়ে গেলো। স্পন্দন আজাদ যে আন্ডারওয়ার্ল্ডের এস.এ তা মাথায় আসেনি এতোদিন আফিমের। কিন্তু মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললো সবটাই। এখন শুধুই ইনায়াত একমাত্র চিন্তার বিষয়। স্পন্দন একপ্রকার ছো মেরে কামালের হাত থেকে ফোন নিলো। আসিফও অপরদিকে ততোক্ষনে তাহজিবকে ফোন ধরিয়ে দিয়েছে।
– হ্যালো!! তাহজিব!! ইরশাদ কোথায়??
– এস.এ,, ইনায়াত কিডন্যাপ হয়ে গেছে। ইরশাদও আমার বন্দী থেকে পালিয়েছে। ও নিজের কোন বন্ধুর সাহায্য নিয়ে রুহিকে,, আই মিন আমার গার্লফ্রেন্ডকেও কিডন্যাপ করেছে। প্লিজ হ্যাল্প মি!! আপনার যা লাগবে তাই পাবেন। জাস্ট হ্যাল্প মি!!
– আমরা আসছি!!
স্পন্দন এই বলেই ফোন কাটলো। আফিম অধ্যির আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। স্পন্দন আফিমের দিকে তাকিয়ে বললো,,
– ইনায়াতকে কিডন্যাপের ব্যাপারটা তাহজিব জানে। তাহজিবের গার্লফ্রেন্ড রুহিকেও কিডন্যাপ করা হয়েছে। সবটাই ইরশাদ তার কোন বন্ধুর সাহায্য নিয়ে করছে। ইরশাদ আর তাহজিবের বন্দীত্বে নেই।
আফিম মেঝেতে জোড়ে পা আঘাত করলো সবটা শুনে। স্পন্দন কামালের সাথে আলাপ করছিলো সবটা নিয়ে। তখনই আফিম এসে দাঁড়ালো।
– স্পন্দন!! আমিও যাবো তোমার সাথে!! আমি এখানে থাকতে পারবো না।
স্পন্দন আফিমের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। স্পন্দন আফিমের কাঁধে এক হাত রেখে বললো,,
– এটা কোন মজা না আফিম!! ওখানে অনেক বিপদ থাকবে পদে পদে।
আফিম স্পন্দনের হাত কাঁধ থেকে ঝাড়িয়ে নিলো।
– কি চাও তুমি স্পন্দন তাহলে?? আমি এখানে এক কাপ কফি নিয়ে অফিস এটেন্ড করি?? ইনায়াত বিপদে তা জেনেও স্বাভাবিক থাকি?? আরেহ এক কাপ কফি নিয়ে অফিস এটেন্ড করতে হলেও আমার ইনায়াতকে দরকার। ইনায়াত আমার লাইফে এমন ভাবে জড়িয়ে গেছে যে,, আমার থেকেও আমার লাইফে ওর বেশি প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমি পারবো না ওকে ছাড়া এই শহরে থাকতে,,, ঐ অফিস,, ঐ রুম সবকিছু আমার মেরে ফেলবে স্পন্দন। তুমি চাইলে আমি তোমার কাছে হাতজোড় করবো। হাতজোড় করে বলছি আমিও যাবো। প্লিজ!!
আফিমের পাগলামো দেখে স্পন্দন চুপ হয়ে গেলো। মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো।
.
.
তাহজিব বর্তমানে দেশের ভিতরে যতো বড় বড় মাফিয়া আছে তাদের সম্পর্কের খোঁজ লাগাচ্ছে। এদের মধ্যে কেও ইরশাদকে সাহায্য করছে বলেই ধারনা তাহজিবের। আসিফও সেদিকে দৌড়াচ্ছে। একটু আগে স্পন্দনের সাথে কথা বলে যখন জানলো স্পন্দন আসছে। তখন মূহুর্তের জন্য অবাকই হয়েছে তাহজিব। এতো বড় একটা আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন কিনা বিনা শর্তে আসবে বলে জানিয়ে দিলো?? কিন্তু পরক্ষনেই মাথা থেকে সব চিন্তা ঝেড়ে ফেললো। কেননা সে এখন রুহিকে ছাড়া আর কিছু নিয়ে ভাববার মতো অবস্থায় নেই।
.
.
রুহি নড়েচড়ে উঠলো। অনেক কষ্টে চোখ টেনে খুললো রুহি। চোখের সামনে সব কেমন যেন ঝাপসা লাগছে তার। দীর্ঘক্ষন চোখ বন্ধ থাকার কারনে এমন হচ্ছে বুঝতে কষ্ট হলো না রুহির। তবুও কোনমতে উঠে বসলো রুহি। চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখতেই বুক কেঁপে উঠলো তার। রুমটার কিছুই তার চেনা না। এটা তার রুম না। খাটে তার পাশে পড়ে থাকা মেয়েটির ছবি অসংখ্যবার দেখেছে সে তাহজিবের রুমে। মেয়েটি আর কেও না ইনায়াত!! ইনায়াত কেও এখানে দেখে খুব অবাক হলো। বুঝতে অসুবিধা হলো না তারা দুইটি মেয়েই বিপদে আছে এখন। রুহি মাথা চেপে ধরলো। সব মনে পড়লো তার এক এক করে। সাথে এটাও মনে পড়লো যে সে অজ্ঞান হওয়ার আগে কোনমতে নিজের কাপড়ের ভাঁজে ফোন গুঁজে নিয়েছিলো। রুহি দ্রুত ফোনটা বের করলো। মোবাইল ওপেন করার চেষ্টা করে বুঝলো মোবাইল কোনভাবে চাপ পরে একেবারে অফ হয়ে গেছে। রুহি মোবাইল ওপেন করলো কোনভাবে। দ্রুত আগে মোবাইল সাইলেন্ট করে নিলো রুহি। এই মোবাইলটা কোনমতে শত্রুর চোখে পড়ুক তা চায় না সে। উঠে গিয়ে টলমল পায়ে দরজা ভিতর থেকে খিল দিয়ে দিলো দুটোই। এরপর খাটে এসে বসে কল লাগালো তাহজিবের নাম্বারে।
.
.
তাহজিব সবে একটা কল শেষ করে সোফায় ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিয়েছে। তখনই হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো জোর শব্দে। হন্তদন্ত হয়ে তাহজিব ফোন চোখের সামনে ধরতেই বিষ্ময়ে ভ্রু কুঁচকে এলো। ফোনের স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে রুহির নাম। কাঁপা হাতে ফোন রিসিভ করলো তাহজিব। নিজের ভাগের কলটা শেষ করে তাহজিবের দিকে আসলো আসিফ।
– হ্যালো!!
তাহজিব কাঁপা কন্ঠে প্রশ্ন করলো যেন। রুহির মনটা ভরে গেলো।
– শুনুন!! আমার কাছে বেশি সময় কথা বলবার জন্য নেই। শুধু বলবো আমি আর ইনায়াত আপু বিপদে আছি। আর তা নিশ্চয় এতোক্ষনে জানা হয়ে গেছে আপনার। মোবাইলটা যে বুদ্ধি করে নিজের জামার ভিতর নিয়ে নিয়েছিলাম তা কেও খেয়াল করেনি বলেই আস্ত আছে। এখন আমি জিপিএস অন করছি। আপনি দ্রুত আমার ফোনের লোকেশন ট্রেস করান। যতো দ্রুত সম্ভব। আর হ্যাঁ!! আমি কোন বিপদ হলে কল করবো। নিজে কথা বলতে না পারলেও পারিপার্শ্বিক সবটা শুনানোর ব্যবস্থা করবো। ইনায়াত আপুকে বাঁচাতে হলে যা করবার দ্রুত করুন।
অস্থির আওয়াজে বললো রুহি। রুহির কন্ঠ শুনে যেন কলিজায় ঠান্ডা প্রবাহ হলো তাহজিবের। সবটা মনোযোগ দিয়ে শুনলো তাহজিব।
– রুহি!! নিজের খেয়াল রাখো। অন্ততপক্ষে আমার বিয়েটা হওয়া পর্যন্ত নিজেকে নিজে সামলে রাখো।
তাহজিব এই বলেই দ্রুত ফোনটা কেটে দিলো। ফোন কানে ধরেই রুহি বসে রইলো মূর্তীর মতো। তাহজিব কি বলেছে তা মস্তিষ্কে পৌছালেও বিশ্বাস হচ্ছে না যেন রুহির।
তাহজিব ফোন কেটেই সবটা খুলে বললো আসিফকে। আসিফ রুহির বুদ্ধির প্রশংসা করলো মনে মনে। দ্রুত নিজের জানা শোনা মানুষকে কল লাগালো আসিফ লোকেশন ট্রেস করতে।
.
.
আফিম দ্রুত বাসায় পৌছে লাবিবা ও জোসেফকে সবটা জানিয়ে বিদায় নিয়ে এসছে স্পন্দনের গাড়িতে। দুজনেই এখন যাচ্ছে অন্য শহরে। একজনের বোন ও অন্যজনের প্রেয়সীকে খুঁজতে লড়াই শুরু হবে ভাগ্যের সাথে।
গাড়ি এসে থামলো এয়ারপোর্টে। দ্রুততার সাথে সব ফর্মালিটিজ শেষ করে স্পন্দন এর নিজস্ব জেট এ গিয়ে উঠলো তারা।এখন বর্তমানে জেটে বসে আছে তিনজনই। দেখা যাক আগে আগে কি হয়!!
মোবাইলের প্রব্লেম থাকায় সকালে পোস্ট করা হয়নি গল্প। সরি খুব সরি আপু ও ভাইয়ারা। আই প্রমিজ কালকে থেকে আবারও সকালে আর রাতে মোট দুইটা পার্ট পোস্ট করবো। আর হ্যাঁ!! আসছে #পরানসখা তাই চোখ কান খোলা রাখবেন যদি নতুন কিছু আশা করেন ।
চলবে,,