#জলতরঙ্গের_সুর
পর্ব – ০২
লেখা – আসফিয়া রহমান
অনুমতি ছাড়া কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ❌
বাড়িতে ঢুকতেই ঊর্মি দেখল উঠোন জুড়ে পুরোদমে চলছে অনুষ্ঠানের পূর্ব প্রস্তুতি। ঊর্মিদের বাড়ির সামনের বিশাল উঠানটা যেন পাল্টে ফেলেছে তার পরিচিত চেহারা। প্যান্ডেল বানানো হচ্ছে এক পাশে, কাঠ আর কাপড় মেলছে তার কাঠামোতে। আরেক পাশে তৈরি হচ্ছে স্টেজ, কাঠের ফ্রেমে চড়ছে রঙিন কাপড়, ফুলের তোড়া। লাইটের তার ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে মাটিতে।
এই ভিড়-ভাট্টার মধ্যেই সামির ভাই, ওরফে বর-টু-বি, নিজেই সামলাচ্ছে সবকিছু। ঊর্মিকে দেখেই এগিয়ে এল সে, একগাল হেসে জানতে চাইল কুশলাদি,
“কি খবর ঊর্মি? কেমন আছিস?”
“ভালো। তোমার কী খবর? বিয়ের খুশিতে দেখছি ডিরেক্ট সাইট ইঞ্জিনিয়ার হয়ে মাঠে নেমে পড়েছো!”
সামির ভাই হেসে বলল, “হ্যাঁ… ওই ইঞ্জিনিয়ারগিরি করতে করতেই জীবনটা গেল আমার! চাচ্চুরা সবাই অন্যান্য দিকে ব্যস্ত, তাই এটাও আমাকেই দেখতে হচ্ছে। বাই দ্য ওয়ে, তোদের ট্রেন পৌঁছাল কয়টায়? ওই ট্রেনে আমার একটা বন্ধুরও আসার কথা…”
“সাড়ে ছটা কি সাতটার মতো হবে! তোমার বন্ধু এখনো এসে পৌঁছায়নি?”
“না…আচ্ছা দাঁড়া দেখছি ফোন করে। তুই ভেতরে গিয়ে ফ্রেশ হ…” পকেট থেকে ফোন বের করতে করতে বলল সামির ভাই।
ঊর্মি কিছু বলার আগেই ফোনটা কানে দিয়ে পাশ ফিরল সামির।
“আপু কখন এসেছ? এত দেরি হল কেন?”
ঊর্মির ছোট বোন ইশা দৌড়ে এসে দাঁড়ালো ওর কাছে।
“এইতো এখনই… ট্রেন লেট! মাঝে একবার ইঞ্জিনে প্রবলেম হয়েছিল…”
“ও আচ্ছা, তাড়াতাড়ি ভেতরে এসো আম্মু অপেক্ষা করছে তোমার জন্য।”
ঊর্মি আর ইশা দুজনেই ভেতরে চলে গেল ব্যাগ হাতে।
_________________________________
পরদিন সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ।
বিকেল থেকেই চলছে তোরজোর। হলুদের আয়োজন করা হয়েছে বাড়ির ছাদে। ঊর্মিদের বাড়িটা দোতলা ছাদ বিশিষ্ট। বারান্দার একপাশ দিয়ে উঠে গেছে ছাদের সিঁড়ি। ব্যস্ততা আর আনন্দের ফোয়ারায় মেতেছে পুরো বাড়ি। মেয়েরা সবাই আটপৌরে করে হলুদ শাড়ি পরেছে। কেউ খোঁপায় গুঁজেছে গাঁদা ফুল, কেউবা গোলাপ।
ছেলেরা পড়েছে সাদা পাঞ্জাবি। কেউ কেউ অনুষ্ঠানের রঙে রঙ মিলিয়ে ওভারকোট পড়েছে তার উপর। বাচ্চাগুলো ছোট ছোট গ্রুপ করে দৌড়াদৌড়ি করছে এদিক ওদিক।
ঊর্মি ছাদের একপাশে দাঁড়িয়ে দেখছিল সবকিছু। সেও আজ আটপৌরে হলুদ শাড়ির ভাঁজে আবৃত করেছে নিজেকে।
হঠাৎ করে পেছন থেকে ঊর্মির ছোট বোন ইশা এসে বলল, “আপু, এই ডালাটা একটু নিচে বড় আম্মুকে দিয়ে আসো তো! আমাকে অনেকক্ষণ আগে বলেছিল, ভুলে গেছি। ওদিকে সামির ভাই ডাকছে আমাকে, নাহলে আমিই যেতাম।”
“আচ্ছা, আমি যাচ্ছি…দে!”
“তাড়াতাড়ি যাও…”
ঊর্মি ডালাভর্তি ফুলগুলো হাতে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছিল তাড়াহুড়ো করে। সাউন্ড সিস্টেমে গান বাজছে উচ্চস্বরে, চারদিকের খুশি খুশি কোলাহলে ওর মনটাও বেশ ফুরফুরে।
এক হাত দিয়ে শাড়ি সামলে, অন্য হাতে ডালাটা ধরে নামতে নামতেই সিঁড়ির মাঝামাঝি এসে হঠাৎ…
ঠাস!
এক শক্ত কিছুতে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে যেতে রেলিং ধরে কোনোরকমে নিজেকে সামলালো মেয়েটা।
“আহ!” ঊর্মির মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো ছোট্ট আর্তনাদ।
ডালাটা তালগোল পাকিয়ে একপাশে কাত হয়ে উল্টে পড়েছে, ফুলগুলো ছড়িয়ে পড়েছে সিঁড়ির ধাপে ধাপে।
অপর ব্যক্তিও ধাক্কা খেয়ে দু’কদম পিছিয়ে গিয়ে নিজেকে সামলে নিল। প্রথমে কিছুটা হতচকিত হয়ে তাকাল মেয়েটার দিকে, তারপর গম্ভীর গলায় বলল,
“দেখেশুনে চলা উচিত…” বাক্যটা শেষ না করেই থেমে গেল সে।
ঊর্মিও তখন রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে, অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে।
তারপর অবাক বিস্ময়ে বলে, “আপনি?”
অপর ব্যক্তি চমকেছে কিনা বোঝা গেল না। তার চোখের দৃষ্টি আর মুখের অভিব্যক্তি দুটোই শান্ত।
“সামিরই কি আপনার কাজিন?”
ছেলেটার দৃষ্টি কিছুক্ষণ সিঁড়িতে পড়ে থাকা ফুলের উপর থেকে ধীরে ধীরে আবার ফিরে এলো ঊর্মির মুখের উপর।
ঊর্মি মৃদু মাথা নাড়ল। মুখে এখনও বিস্ময়ের রেশ, “আপনিই তাহলে সামির ভাইয়ের সেই বন্ধু!”
এক মুহূর্ত যেন স্থির হয়ে থাকল সময়। শব্দহীন স্বীকৃতি ভেসে এলো দু’জনের চোখাচোখিতে। তখনই সিঁড়ির নিচ থেকে তাড়া দেওয়া গলায় ডাকলো কেউ, “ঊর্মি! কোথায় হারালি?”
ঊর্মি তখন সিঁড়ির ধাপে বসে পড়েছে, এক এক করে কুড়িয়ে নিচ্ছে ফুলগুলো। কল্লোল চুপচাপ এক হাঁটু গেড়ে বসল ওর পাশে। শব্দ না করে তুলতে শুরু করল ফুলগুলো।
একটা ফুল ওর হাতে তুলে দিয়ে বলল,
“ইউ শ্যুড বি কেয়ারফুল!”
ঊর্মি সেদিকে একপলক তাকিয়ে কিছু না বলে নিচু হয়ে আবার ফুল তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। হঠাৎ করে দু’জনের আঙুল একসাথে গিয়ে ছুঁয়ে ফেলল একটা গাঁদা ফুল।
ঊর্মি অপ্রস্তুত হয়ে উঠল। দ্রুত হাত সরিয়ে ওঠাতে লাগলো অন্য ফুলগুলো। সব ফুল এক জায়গায় করে তুলে নিয়ে ঊর্মি উঠে দাঁড়াল। পাশ কাটিয়ে নিচে নামার সময় মৃদু স্বরে বলল, “থ্যাংকস।”
নীচে নামতেই ও দেখল বড় আম্মু অপেক্ষা করছে,
“এত দেরি করলি কেন? দুটো সিঁড়ি নামতে এত সময় লাগে!”
ঊর্মি হেসে উঠল, যেন কিছুই হয়নি।
“আরে ধুর, কি যে বলো, ফুল পড়ে গিয়েছিল…তুলতে সময় লাগল।”
_________________________________
সামিরকে হলুদ মাখিয়ে ভূত বানানো হচ্ছে। মেয়েরা হেসে কুটি কুটি হচ্ছে সবাই। সামির রক্ষা চেয়ে চিৎকার করলেও কর্ণপাত করছে না কেউ।
সামিরের পর এখন চলছে বাকিদের পালা। ঊর্মি এক কোণে দাঁড়িয়ে ছিল। ঠিক তখনই পিছন থেকে এক জোড়া ঠান্ডা হাত আচমকা স্পর্শ করল ওর গাল—
চাপ্প! চাপ্প!
হলুদের ঘন প্রলেপ!
ইশা লুকিয়ে লুকিয়ে পেছন থেকে এসে হলুদ ঘষে দিয়েছে।
“ইশা!”
ঊর্মির মুখ হা হয়ে গেল আপনাআপনি।
ইশা দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে, মুখে খিলখিল হাসি, “প্রতিশোধ! গতবার আমাকেও এমন করেছিলে!”
ঊর্মি হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে, “ইশা! এইবার তোর শেষ! আমি আসছি, দাঁড়া!”
দু’হাতে একগাদা হলুদ তুলে নিয়ে ঊর্মি দৌড়াতে শুরু করল ইশার পেছনে। সবাই নিজেদের মতো হইচই করছে, এদিকে ফেরার সময় নেই কারো।
ইশা হো হো করে হাসতে হাসতে দৌড়াতে লাগল পুরো ছাদজুড়ে। ঠিক কোন দিকে দৌড়াচ্ছে, সেটা ইশা নিজেও জানে না; শুধু জানে, ঊর্মিকে এড়াতে হবে।
একটা বাঁক ঘুরে ইশা এক লাফে লুকিয়ে পড়ল কোথাও।
ঊর্মি তখন উত্তেজনায়, হাসিতে, আর প্রতিশোধ স্পৃহায় নিজের হুঁশে নেই। গান বাজছে প্রকাণ্ড শব্দে, ওর হাতে এখনো থকথকে হলুদের দলা।
তাকিয়ে দেখে সামনে একটা ছায়ামতো চেহারা দাঁড়িয়ে।উচ্চতা একটু বেশি, তবে মুখটা অন্ধকারে স্পষ্ট না।
চাপ্প!
ঊর্মি নিশ্চিন্তে পেছন থেকে এসে দুই হাতে হলুদের ঘন প্রলেপ মেখে দিল সেই ছায়ামানবের গালে।
এক মুহূর্ত স্তব্ধতা।
ছায়ামানব ঘুরে তাকালো এদিকে। ছায়া থেকে আলোয় বেরিয়ে এলো মুখটা। গম্ভীর মুখটায় ঊর্মির হলুদ লাগানো হাতের ছাপ!
ঊর্মির চোখ বিস্ফারিত। মুখ হাঁ হয়ে গেল।
“আপনি…!”
কল্লোল চোখ বন্ধ করল এক সেকেন্ডের জন্য। তারপর ঠান্ডা গলায় বলল, “আপনি কি সবসময় এমন বাচ্চামি করেন, নাকি এটা শুধু আজকের দিনের জন্য স্পেশাল?”
ঊর্মির মুখ শুকিয়ে গেল। ঠোঁট কাঁপল একটু, কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল ও। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “আমি… আসলে ভেবেছিলাম ইশা….”
কল্লোল ওর দিকে এক পলক তাকাল। এক হাত দিয়ে নিজের গাল থেকে একটু হলুদ চোখের সামনে নিয়ে এলো।
ঊর্মি এবার নিচু গলায় বলল,
“সরি… আমি সত্যি বুঝতে পারিনি।”
কল্লোল আগের থেকেও দ্বিগুণ ঠান্ডা স্বরে বলল,
“তাহলে এখন বুঝেছেন?”
ঊর্মি কথা হারিয়ে ফেলল। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো ও। কল্লোলের এই গম্ভীরতা যেন বুকে চেপে বসেছে। চারপাশের হাসি, গান, হৈচৈ সব কেমন যেন দূরে সরে গেল এক মুহূর্তেই।
এটুকু বলে কল্লোল পাশ কাটিয়ে সোজা চলে গেল। আলো-ছায়ার মাঝে মিশে গেল তার দীর্ঘ অবয়ব। ঊর্মি তখনো হাতে হলুদের প্রলেপ আর একরাশ মনখারাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল চুপচাপ।
একটু পরে ও ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করল ভেতরের দিকে। পিছন ফিরে তাকাল না একবারও। ছাদের সাদা সিমেন্টের মেঝেতে তখনো পড়ে আছে ছিটকে পড়া হলুদের প্রলেপ।
____________________________________
পরদিন সকালে ঊর্মি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। ঠান্ডা বাতাসে চুল এলোমেলো হচ্ছে, ওর চোখে এখনও একটু চাপা ক্লান্তি। রাতে সবাই একসাথে গাদাগাদি করে শোয়ায়
ঘুম হয়নি ঠিকঠাক।
পেছন থেকে ইশার কণ্ঠ এলো,
“আপু! কী হয়েছে? আজ সকাল থেকেই দেখি মহারানীর মুখ ভার!”
ঊর্মি ঘুরে তাকাল, “তোর কারণে…”
“আমার?!” ইশা চোখ গোল করে ফেলল, “আমি কী করলাম?”
“তুই যে পালিয়ে গেলি, আর আমি অন্য কাউকে গিয়ে হলুদ লাগিয়ে এলাম…”
“আহ! এটা নিয়ে এত সিরিয়াস হবার কী আছে! কালকে আমি দেখেছি, তুমি কার গালে হলুদ মাখিয়েছ!”
ঊর্মি চমকে উঠল, “তুই দেখেছিলি?”
“অবশ্যই! আমি জানতাম তুমি আমার পেছনে আসবে, তাই আগে থেকেই পাশের সিঁড়িতে লুকিয়ে দেখছিলাম। কিন্তু বুঝিনি তুমি কল্লোল ভাইয়ের গালে মাখিয়ে দেবে!”
হেসে কুটিকুটি হলো ইশা।
ঊর্মি মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে ফেলে, কেবল বলে,
“সে তো খুব রেগে গেল…”
“হুম। একটু চমকে গেছিল ঠিকই, কিন্তু তুমি ভাবছ যেটা… তার চেয়ে রাগটা অনেক কম ছিল মনে হয়।”
“তুই এত জানিস কী করে?”
“কারণ সে আবার পেছন ফিরে তাকিয়েছিল। তুমি তখন চলে যাচ্ছিলে, উনি চুপচাপ তোমার দিকে তাকিয়ে ছিল খানিকক্ষণ…”
“বেশি বুঝিস না! সর এখান থেকে…”
ঊর্মি চুপ করে গেল। একটা ছোট্ট ভাঁজ পড়ল ওর কপালে, কিন্তু ঠোঁটের কোণে টুক করে খেলে গেল হালকা একটা হাসির রেখা।
ঊর্মি বারান্দা থেকে নেমে এসে রান্নাঘরের দিকে গেল। বিয়ের দিন সকালের ব্যস্ততা চলছে সেখানে, কেউ লাচ্ছি বানাচ্ছে, কেউ পোলাওয়ের চাল ধুচ্ছে, কেউ আবার ছোটদের ধাওয়া করে ধরে খাওয়াচ্ছে।
“আম্মু, কী করো?” ঊর্মি ওর মায়ের পেছনে এসে দাঁড়ালো।
“বিয়ে বাড়িতে কাজের অভাব আছে? লাচ্ছি বানাচ্ছি।”
“আমাকে দাও, টেবিলের উপর রেখে আসি…”
“রেখে আসতে হবে না। তুই একটা কাজ কর…”
“কী?”
“সামিরের যে বন্ধুটা এসেছে না? কল্লোল… ওর সাথে দেখা হয়েছে তোর? এই লাচ্ছিটা ওকে একটু দিয়ে আয় তো মা…”
“আমি?” ঊর্মি চোখ বড়বড় করে তাকালো।
“হ্যাঁ, সবাই তো ব্যস্ত এখানে…কাকে বলি? তুই একটু যা না!”
“সকাল সকাল আবার ওই গম্ভীরমুখো-টার মুখোমুখি হতে হবে? উফ্…!” বিড়বিড় করলো ও।
“কিছু বলছিস?”
ঊর্মি বেজার মুখে রাজি হলো, “না কিছু না, দাও!”
ও গ্লাসটা হাতে নিয়ে বের হতে যাবে এমন সময় ডাইনিং রুমের দরজায় দেখা গেল কল্লোল দাঁড়িয়ে আছে। চোখে এখনো খানিকটা ঘুমঘুম ভাব, চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে, সাদা টিশার্টের উপর একটা হালকা নীল তোয়ালে কাঁধে ঝোলানো।
ঊর্মির চোখ ওর দিকে যেতেই, কাল রাতের মুহূর্তটা ঝাঁপিয়ে এল ওর মনে। সঙ্গে সঙ্গে গালটা একটু গরম হয়ে উঠল ওর। ইচ্ছে করল হাত বাড়িয়ে ঠিক করে দেয় ওর এলোমেলো চুল।
কল্লোল সোজা এগিয়ে এসে প্রশ্ন করল,
“আপনাদের এখানে খাওয়ার পানি কোথায় পাব?”
ভাবনার মাঝখানে চমকে উঠলো ঊর্মি। এসব কি ভাবছে ও? পাগল হয়ে গেল নাকি?
তারপর অন্যদিকে তাকিয়ে জবাব দিল, “ওই পাশে… ওই টেবিলের উপর…. আমি দিচ্ছি…”
টেবিলের উপর লাচ্ছির গ্লাসটা রেখে এক গ্লাস পানি এনে এগিয়ে দিল ওর দিকে। কল্লোল হাত বাড়িয়ে নিতে নিতে এক পলক তাকাল ওর দিকে।
ঊর্মি চোখ নামিয়ে ফেলল নিচে। কল্লোল পানি খেতে খেতে একটু থেমে বলল,
“আপনার কালকের দুঃখবোধটা আজকের হাসির সাথে মিলিয়ে গেছে মনে হচ্ছে।”
ঊর্মি মুখ তুলল এক মুহূর্তের জন্য, তুতলে উঠে কৈফিয়ত দিতে চাইল যেন, আ-ম… আ-মি মোটেই হাসছিলাম না…!”
কল্লোল গ্লাসটা ঠোঁট থেকে নামিয়ে আবার তাকাল, মুখে এখনো সেই চিরচেনা গাম্ভীর্য।
“তাই নাকি?”
ওর ঠোঁটের কোণে একটুখানি রেখা, সেটা কি আদৌ হাসি কিনা বোঝা গেল না।
ঊর্মি গলা নিচু করে বলল,
“কালকে আমি ইচ্ছা করে করিনি, সত্যি বলছি। আমি ভেবেছিলাম ইশা দাঁড়িয়ে…”
কল্লোল ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“জানি।”
ঊর্মি একেবারে থেমে গেল।
“জানেন মানে?”
কল্লোল একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল, তারপর শান্ত স্বরে বলল, “জানি… কারণ কেউ যদি ইচ্ছে করে কিছু করত, তাহলে পরে এতবার মনে পড়ত না।”
ঊর্মির গলার কাছে যেন কিছু একটা আটকে গেল। অপ্রস্তুত দৃষ্টি এদিক ওদিক ঘুরাতে ঘুরাতে কেশে গলা পরিষ্কার করার চেষ্টা করল। তারপর টেবিল থেকে লাচ্ছির গ্লাসটা এনে কল্লোলের দিকে বাড়িয়ে দিল,
“এটা আপনার…”
কল্লোল পানির গ্লাসটা ফিরিয়ে দিয়ে লাচ্ছির গ্লাসটা নিতে নিতে বলল, “থ্যাংকস!”
ঊর্মি ঘাড় নাড়ল চুপচাপ।
কল্লোল চলে গেল, পেছনে ফেলে রেখে গেল একটা অদ্ভুত অনুভূতির ধাক্কা, যেটা একেবারে বুকের ঠিক মাঝখানে এসে লাগল ঊর্মির।
ঊর্মি এবার আস্তে করে নিজে নিজেই বলল,
“এই লোকটা… কেমন যেন… অদ্ভুত!”
তারপর আবার কাজে মন দিল। কিন্তু মনের ভেতর চলতে থাকল একটা অদ্ভুত আলো-ছায়ার খেলা, কল্লোল নামক গম্ভীর ছায়ামানবটার ছায়া তাতে গাঢ় হতে লাগল ক্রমশ…
To be continued…