#জলতরঙ্গের_সুর
পর্ব – ৩৫
লেখা – আসফিয়া রহমান
অনুমতি ছাড়া কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ❌
পাখির কলকাকলিতে ছিঁড়ে আসছে ভোরের অন্ধকার। পর্দার ফাঁক দিয়ে হালকা আলো ঢুকেছে ঘরে। ঊর্মি বিছানায় বসে আছে, চোখদুটো লাল হয়ে, সারাটা রাত একফোঁটাও ঘুমায়নি মেয়েটা। কল্লোলের বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে গুটিসুটি মেরে শুয়ে ছিল। আজানের আগে আগে একটু চোখ লেগে এসেছিল, আজানের সুরে সে তন্দ্রাও কেটে গেছে। তারপর কল্লোল যখন উঠে ওয়াশরুমে গেল, তখন ও নিজেও উঠে পড়েছে।
বসে থাকতে থাকতে ওর মনে হলো রাতটা কীভাবে কীভাবে যেন উড়ে চলে গেল। কল্লোল তখন ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে।
“উঠে পড়েছ?”
“ঘুমালাম কখন?”
কল্লোল দীর্ঘশ্বাস ফেলল,
“এসো নামাজটা একসাথে পড়ে ফেলি…”
উর্মি বিনাবাক্য ব্যয়ে উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ওযু করে এলো। তারপর একসাথে নামাজে দাঁড়ালো দুজনে।
নামাজের মোনাজাত শেষে ঊর্মি নিজের জায়নামাজ ছেড়ে কল্লোলের কাছ ঘেঁষে বসলো। ওর চোখ এখনো লালচে, তবে মুখটা ভীষণ শান্ত— যেন মোনাজাতে ভেতরের সব দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা উজাড় করে দিয়েছে।
কল্লোল ওর লালচে চোখ পানে তাকিয়ে বলল,
“আল্লাহর কাছে এত কেঁদেছো, ঊর্মি?”
ঊর্মি মৃদু হাসল, চোখ মুছল আঙুল দিয়ে,
“আপনাকে যেন সুস্থ রাখেন, নিরাপদ রাখেন— সেটাই চেয়েছি বারবার।”
কল্লোলের বুকটা ভারী হয়ে এল। ও হাত বাড়িয়ে আলতো করে ঊর্মির আঙুলগুলো মুঠোয় নিল। ঊর্মি মাথা নীচু করে ওর কাঁধে হেলান দিল। দুজনের মাঝে নিস্তব্ধতা নেমে এলো, বাহির থেকে কেবল ভেসে আসছে পাখির কিচিরমিচির, দূরে মসজিদের মাইকে কোরআন তেলাওয়াত।
কিছুক্ষণ পর ঊর্মি ফিসফিস করে বলল,
“না গেলে হয় না, আবরার?”
কল্লোল চোখ বন্ধ করল, যেন নিজের ভেতরটা সামলাতে চাইছে। তারপর ধীরে মাথা নাড়ল, “না গেলে হয় না, সোনা… এটা আমার হাতের বাইরে।”
ঊর্মি চোখ বুজে নিঃশব্দে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ওর আঙুলের চাপ আরও শক্ত হলো কল্লোলের হাতে। যেন বলতে চাইছে— যেতে দিচ্ছি, কিন্তু মন থেকে মানতে পারছি না এখনো।
কল্লোল আলতো করে ওকে কাছে টানল। নরম কণ্ঠে বলল, “আমি ফিরব, ঊর্মি। এই ঘরে, তোমার কাছে।”
ঊর্মি মুখ তুলল এবার। চোখ ভেজা, দৃষ্টিতে একরাশ অভিমান, “কখন ফিরবেন?”
কল্লোল কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে উত্তর দিল, “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।”
ঊর্মি মৃদু হেসে মাথা নাড়ল, “আপনারা সবসময় কথাগুলো এত অস্পষ্ট বলেন কেন? যত তাড়াতাড়ি
সম্ভব— এই কথার ভেতরেই লুকিয়ে আছে কত রাতের অপেক্ষা, কতটা কান্না।”
কল্লোল অসহায় হয়ে ওর কপালে চুমু খেল, “হানি, তুমি শক্ত থেকো। তুমি শক্ত না থাকলে আমি লড়াই করার শক্তি পাবো কোথা থেকে, বলো?”
ঊর্মি চোখ বন্ধ করে ওর বুকের ভেতর মুখ গুঁজে দিল। সেই বুকে ভেসে উঠল দুটো দীর্ঘশ্বাস— একটা কল্লোলের, আরেকটা ঊর্মির।
বাইরে সূর্যের আলো ক্রমেই উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। একটা নতুন সকাল আসছে, অথচ ওদের দুজনের মাঝে নামছে বিচ্ছেদের ঘন ছায়া।
————
নামাজের পর কিছুক্ষণ ওরা দু’জনেই নীরবে বসেছিল। বাইরে ভোরের আলো এখন স্পষ্ট, পাখির কলরবের সাথে দূরে কোনো দোকানের শাটার তোলার শব্দ ভেসে আসছে।
ঊর্মি উঠে দাঁড়াল ধীরে ধীরে, “চলুন, নাস্তা করি।”
কল্লোল মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে ঊর্মির পেছন পেছন রান্নাঘরে ঢুকলো।
ঊর্মি রুটি বেলছে আর কল্লোল পাশে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ঊর্মি হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের চুলগুলো কানের পেছনে ঠেলে দিয়ে তাকালো ওর দিকে, “এভাবে কি দেখছেন?”
কল্লোল মৃদু হেসে ঊর্মির কপালে লেগে থাকা আটার গুঁড়ো আঙুলের ডগা দিয়ে আলতো করে মুছে দিল,
“আমার মিষ্টি বউটাকে দেখছি।”
ঊর্মি লজ্জায় চোখ নামিয়ে রুটি বানানোয় মন দিতে চাইল। কিন্তু তৎক্ষণাৎ ওর মনে পড়ল, কল্লোল চলে যাবে একটু পরেই। বুকের বাঁ পাশে অসহ্য ভার অনুভব করলো মেয়েটা। অথচ ওদেরও তো অন্যান্য নবদম্পতিদের মত এরকম একটা স্বাভাবিক সংসার শুরু করার কথা ছিল…
অথচ বাস্তবতায় এই স্বাভাবিক সবকিছু যেন নিষ্ঠুরভাবে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে ওদের কাছ থেকে।
কল্লোল যেন ওর মুখের পরিবর্তনটা টের পেল সহসাই। এগিয়ে এসে ওর হাত থেকে বেলনটা ছাড়িয়ে আটামাখা হাতদুটো আলগোছে মুঠোয় পুরল।
“ঊর্মি…”
ঊর্মি মুখ তুলল না। মুখ তুললেই যে কল্লোল দেখতে পাবে আবারো অশ্রুসজল চোখদুটো।
কল্লোল ওর হাতদুটো নিজের মুঠোয় চেপে ধরে নরম গলায় ডাকলো, “আমার দিকে তাকাও, ঊর্মি।”
ঊর্মি এক মুহূর্ত চুপ করে রইল। তারপর অশ্রুসজল চোখদুটো তুলে তাকাতেই কল্লোলের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল। চোখদুটো অশ্রুতে টইটুম্বুর, কিন্তু তা সত্ত্বেও মেয়েটা যেন অদ্ভুত দৃঢ়তায় ভেতরের ভাঙনটা ঢেকে রাখার চেষ্টা করছে।
কল্লোল মাথা নত করে ওর কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল।
“হানি, আমি জানি— তুমি অনেক বেশি কষ্ট পাচ্ছ। কিন্তু আমিও যে একই আগুনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি… তোমাকে ছেড়ে যাওয়া আমার কাছেও সহজ নয়।”
ঊর্মির গলা ভারী হয়ে এলো, “তাহলে থেকে যান…”
কল্লোল ওর হাত আরও শক্ত করে ধরল, “থাকতেই তো চাইছি… কিন্তু পারছি কই? দায়িত্ব আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তুমি শুধু দোয়া করো, আমি যেন দ্রুত ফিরে আসতে পারি।”
ঊর্মি ভাঙা হাসি হাসল, “ফিরবেন তো? আমায় এমন ফেলে রেখে গায়েব হয়ে যাবেন না তো?”
কল্লোল ওর ঠোঁটে আঙুল চাপা দিল, “এমন কথা মুখেও এনো না কখনো। তোমাকে বুকে নিয়ে আমার যে পুরোটা জীবন কাটানো বাকি। আমি ফিরব, এই ঘরে, তোমার কাছে।”
ঊর্মি অশ্রুসজল চোখে হাসলো।
বাইরে তখন শহর জেগে উঠছে— অথচ ঊর্মি আর কল্লোলের সকাল যেন জমাট অন্ধকারে ঢেকে আছে।
ব্রেকফাস্ট সেরে কল্লোল ইউনিফর্মের শার্টটা গায়ে দিচ্ছিল। ঊর্মি চুপচাপ পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিল। কল্লোল শার্টের বোতামে হাত দিতেই ঊর্মি এগিয়ে গিয়ে ওর হাত থামিয়ে দিল, “আমি করে দিই?”
কল্লোল একটু অবাক হলেও হেসে সম্মতি দিল। ঊর্মি একে একে সবগুলো বোতাম লাগালো। শেষ বোতামটা লাগিয়ে হাত সরিয়ে নিতে গেলেই কল্লোল ওর হাতটা ধরে ফেলল।
ঊর্মি মাথা তুলে ওর দিকে তাকালো। কল্লোল ওর হাতখানা ধরে নিজের ঘাড়ে রাখল। তারপর দুহাত বাড়িয়ে পাতলা কোমরটা জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। এক হাতে কোমর জড়িয়ে আরেক হাত রাখল ওর গালে। বৃদ্ধাঙ্গুলে ঠোঁটের কোণ ছুঁয়ে যেতে যেতে বলল, “এই ক’দিন কোথায় থাকবে, সুইটহার্ট? এখানে থাকবে? নাকি মা-বাবার কাছে যাবে?”
“এখানেই। ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস করতে হবে। সামনে পরীক্ষা…”
“একা থাকবে?”
“আগেও তো একাই থাকতাম।”
“মাঝেমধ্যে ফুপি আসবে, ফুপির সাথে আড্ডা দিও, ভালো লাগবে।”
“হুঁ…”
ঊর্মি খানিকটা অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল।
“আপনাকে ফোনে পাব তো, আবরার?”
“ফোনে? উমম… মাঝেমধ্যে নেটওয়ার্ক ইস্যুস থাকে, আবার যেহেতু এটা একটা অপারেশন, সবসময় ফোন অন রাখাটাও সেফ না… আমি তোমাকে কল করব, ঠিক আছে?”
ঊর্মি ছলছল চোখে তাকালো, “আমাদের কী এভাবে সংসার শুরু করার কথা ছিল, আবরার?”
কল্লোল ওর ঠোঁটে চুমু খেল, “খুব তাড়াতাড়ি আমরা সুন্দর একটা সংসার শুরু করব, সোনা। সৈনিকের জীবনসঙ্গী হতে হলে মন শক্ত করতে হয়, ভেঙে পড়লে চলে না… You have to be strong, okay?”
“হুঁ…” ঊর্মি উপরনিচ মাথা নাড়ল।
কল্লোল এবার ওর নরম ঠোঁটজোড়া আঁকড়ে ধরলো কোনোরকম আগাম বার্তা ছাড়াই। ঊর্মি হকচকিয়ে গেল। এখনই তো সিরিয়াস কথাবার্তা বলছিল, এরমধ্যেই আবার কী হলো!!
আচমকা ঠোঁটে চিনচিনে ব্যথা অনুভব হতেই ঊর্মি মোচড়ামুচড়ি শুরু করল। কল্লোল ছাড়ল না ওকে। নিজের আঁশ মিটিয়ে তবেই ছাড়লো। ঊর্মির তখন প্রাণ যায় যায় অবস্থা। ঠোঁটের ব্যথার সাথে সাথে নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে ভীষণ।
কল্লোল ওর হাত টেনে বিছানায় বসালো। হাত দিয়ে ওর পিঠ ডলতে ডলতে বলল, Calm down honey, relax…”
এতে যেন খানিকটা কাজ হলো। মেয়েটার নিঃশ্বাস স্বাভাবিক হলো অনেকটা সময় পর। কল্লোল হাত বাড়িয়ে ওকে বুকে টানল।
“তুমি এত ভয় পেয়ে যাও কেন, হানি?”
ঊর্মি ওর বুকে কিল বসালো, “আপনি এত অধৈর্য হোন কেন?”
কল্লোল হেসে আবার ওর ঠোঁটে শক্ত একটা চুমু খেল, “তোমাকে একেবারে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে!”
লজ্জায় ঊর্মির কান দিয়ে যেন গরম ধোঁয়া বের হলো। ও আবারো কল্লোলের বুকে কিল বসালো, “আপনি একটা অসভ্য লোক!”
কল্লোল হো হো করে হেসে উঠলো, “সব পুরুষই বউয়ের কাছে এই উপাধি পায়, হানি! এটা বউদের তরফ থেকে স্বামীদের পাওয়া জাতীয় উপাধি…”
ঊর্মি আরেকটা কিল বসালো, “এই, চুপ করুন তো আপনি!”
“আহ্, হানি! যাওয়ার আগে এভাবে মারছো আমাকে?”
এতক্ষণ ধরে খানিকটা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠা ঊর্মির মুখটা আবার ম্লান হয়ে গেল। কয়েক মুহূর্তের জন্য ও ভুলেই বসেছিল কল্লোলের যাওয়ার কথা। ম্লান মুখে ও ধীরে ধীরে বলল, “এটা আপনার শাস্তি! আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার শাস্তি…”
কল্লোল ফিসফিস করে বলল, “তবে, প্রিয়তমার দেওয়া শাস্তি মাথা পেতে গ্রহণ করিলাম!”
ঊর্মি চোখে জল নিয়েই হেসে ফেললো এবার।
———–
হঠাৎ বাইরে থেকে গাড়ির হর্ন বাজল। ঊর্মির বুকটা ধক করে উঠল। হঠাৎ করেই ওর যেন মনে হলো অক্সিজেনের বড্ড সংকট। কল্লোলের তখন রেডি হওয়া শেষ। ঊর্মি বিছানায় বসে আছে।
কল্লোল ঝুঁকে ওর কপালে চুমু খেলো, “যেতে হবে লিটল বার্ড…”
ঊর্মি হঠাৎ করে উঠে দাঁড়িয়ে ওর হাত শক্ত করে চেপে ধরল। গলার স্বর কেঁপে উঠল ওর, “না! যাবেন না! যাবেন না আপনি! কেউ আমার হাসব্যান্ডকে আজকে নিয়ে যেতে পারবে না!”
কল্লোল স্তব্ধ হয়ে গেল, “ঊর্মি… শান্ত হও, সোনা! প্লিজ…”
ঊর্মি কান্না মিশ্রিত রাগী গলায় বলল, “বিয়ের পরদিন কোনো মেয়ের হাসব্যান্ডকে এভাবে কেউ ছিনিয়ে নেয় না… আমি কারো কাছে যেতে দেব না আপনাকে।”
ও হঠাৎ কল্লোলের ইউনিফর্ম শক্ত করে আঁকড়ে ধরল দু’হাতে, “এই দেখেন, আমি ছাড়ব না। আপনি চাইলেও যেতে পারবেন না।”
কল্লোল অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে। বুকের বাঁ পাশটায় ব্যথা হচ্ছে, মাথাটা খালি খালি লাগছে।
ঊর্মি কাঁদতে কাঁদতে হেসে ফেলল এবার,
“চলুন না, পালিয়ে যাই। দূরে কোথাও, অনেক দূরে… তাহলে আর কেউ আমাদের খুঁজে পাবে না। এসব যুদ্ধ-টুদ্ধ ছেড়ে দিন, আমার সাথে সংসার করুন।”
কল্লোলের চোখ ভিজে উঠল। আলতো করে ওর গাল ছুঁয়ে ফিসফিস করে বলল, “এমন কোরো না সোনা! তোমাকে স্ট্রং হতে হবে তো…”
উর্মি এবার ওর বুকে অনবরত কিল-ঘুষি মারতে মারতে চিৎকার করে উঠলো, “আমি স্ট্রং হতে চাই না! আমি আপনাকে চাই…” বলতে বলতে ও হঠাৎই তীব্র আক্রমণ করে বসলো কল্লোলের পুরু ঠোঁটদুটোতে।
কল্লোল অসহায় হয়ে পড়ল আবারো। শেষ মুহূর্তে এসে মেয়েটা এমন পাগলামী শুরু করবে কে জানতো! কল্লোল আলতো করে ঊর্মির কোমর আঁকড়ে ধরে তাল মেলালো।
দুইজনের নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠল, ঘরের বাতাসও যেন ওদের আবেগে ভারী হয়ে উঠেছে। আরেকবার হর্নের শব্দ কানে আসতেই ঊর্মির ঘোর কেটে গেল। সাথে সাথে ধাক্কা দিয়ে কল্লোলকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দিল মেয়েটা।
আচমকা এমন হওয়ায় কল্লোল দু’পা পিছিয়ে গেল।
“হানি…”
অসহায় চোখে তাকিয়ে এক পা এগোতে চাইলেই ঊর্মি পিছিয়ে গেল কয়েক পা, অভিমানি কন্ঠে বলল,
“একদম আগাবেন না। যান, আপনার জন্য গাড়ি বাইরে অপেক্ষা করছে…”
“এভাবে বিদায় দেবে আমাকে?”
ঊর্মি অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিল। কল্লোল দ্রুত এগিয়ে এসে শক্ত করে জাপটে ধরল ওকে। তারপর একনাগাড়ে চুমু খেয়ে গেল কপালে, দু গালে, নাকের ডগায়, থুতনিতে, ঠোঁটে।
ঊর্মি কোনোরকম প্রতিক্রিয়া দেখাল না। কল্লোল এবার মাথা আরো ঝুঁকিয়ে ওর কন্ঠনালি বরাবর ঠোঁট ছোঁয়ালো। ঊর্মি কেঁপে উঠলো এবার। দুহাতে ঠেলল কল্লোলকে, “আপনার দেরি হচ্ছে, প্লিজ যান…”
কল্লোল সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ওর ঠোঁটে আবার চুমু খেল।
“আসছি, সোনা… খুব তাড়াতাড়ি আসব ইনশাআল্লাহ!”
ঊর্মি কিছু বলল না। কল্লোল ঊর্মিকে জরিয়েই দরজায় কাছে এগিয়ে গেল। দরজা খুলে বেরিয়ে যাবার আগে ঊর্মির কপালের চুলগুলো আলতো হাতে সরিয়ে শেষবারের মতো ঠোঁট ছোঁয়ালো কপালে।
“আল্লাহ হাফেজ! সাবধানে থেকো…”
ঊর্মি এবার আর চুপ থাকতে পারলো না। দু’পা উঁচিয়ে কল্লোলের ডান গালে চুমু খেয়ে ফিসফিসিয়ে বললো, “আপনি সাবধানে থাকবেন, আবরার। নিজের কোনো ক্ষতি হতে দেবেন না। নিজের জন্য না হলেও আমার জন্য, ঠিক আছে?”
কল্লোল হেসে মাথা ঝাঁকালো, “আচ্ছা হানি, এবার আসি…?”
“হুঁ…” ঊর্মি হাত নাড়ল।
নববিবাহিত স্ত্রীকে পেছনে রেখে একজন নৌসেনা পা বাড়াল দেশের প্রতি নিজের দায়িত্ব, কর্তব্য পালনের উদ্দেশ্যে।
To be continued…
#জলতরঙ্গের_সুর
পর্ব – ৩৬
লেখা – আসফিয়া রহমান
অনুমতি ছাড়া কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ❌
দুটো মানুষের এই করুণ বিচ্ছেদেও সময় থেমে থাকল না; এগিয়ে চলল নিজ গতিতে। কল্লোল যাওয়ার দুদিন হয়ে গেছে। ঊর্মি আজকে ইউনিভার্সিটি এসেছে। এই দু’দিন বদ্ধ ঘরে একা একা দম আটকে আসছিল ওর।
ক্যাম্পাসের পরিচিত সবকিছুই যেন আজ অচেনা
লাগছে। গেটের সামনে রিকশার ভিড়, টঙের চায়ের দোকান, গাছের ছায়ায় আড্ডা দেওয়া মুখগুলো… সবকিছুই আগের মতো আছে, কিন্তু ঊর্মির কাছে যেন একেবারেই অন্যরকম।
বেঞ্চে বসে থাকা তুলি দূর থেকে ওকে দেখে হাত নেড়ে ডাকল, “ঊর্মি! এইদিকে আয়।”
ঊর্মি মৃদু হেসে এগিয়ে গেল। তুলি আর নাফিস বসে আছে। তাদের কথাবার্তায় প্রাণ আছে, হাসি আছে— কিন্তু ঊর্মির মনে সেই রঙ স্পর্শ করছে না। তবুও মুখে স্বাভাবিক ভঙ্গি ধরে রাখার চেষ্টা করল ও।
নাফিস ঠাট্টার ছলে বলল, “কি রে, নববধূ! এতোদিন পর ক্যাম্পাসে!”
ঊর্মি হাসল, “এতদিন পর মানে? বিয়ের মাত্র চারদিন আজকে! তোমরা তো মনে হচ্ছে বছরখানেক বাদে দেখছো আমাকে!”
সবাই হেসে উঠল। কিন্তু হাসির ফাঁকে কেউ খেয়াল করল না, ঊর্মির চোখের অদ্ভুত শূন্যতাটা। তুলি হাসতে হাসতে বলল, “বছরখানেকের মতোই মনে হচ্ছে! তুই তো বিয়ের একমাস আগে থেকে নিখোঁজ!!”
ঊর্মি অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল। মনে পড়লো তানিয়া, মেহরিন, নিশাতদের সাথে সমুদ্র যাত্রার দিনগুলো। সেদিন যদি ওদের বোটটা ঝড়ের কবলে না পড়তো তাহলে কি ক্যাপ্টেনের সাথে ওর কখনো দেখা হতো? না, বোধহয়! সামির ভাইয়ের বিয়ে থেকে ফেরার পর ঊর্মি কখনো ভাবেই নি ওই গোমড়ামুখো করোলা সাহেবের সাথে আবার কখনো দেখা হবে ওর!
অথচ, প্রকৃতির কী খেলা! ওই গোমড়ামুখো করোলা সাহেবের সাথে দ্বিতীয় সাক্ষাৎটাই ঊর্মিকে, ঊর্মির ভাগ্যকে পাল্টে দিল পুরোপুরিভাবে। আজ ওই গোমড়ামুখো মানুষটাকে ছাড়া ঊর্মি ভালো নেই। ভালো থাকতে পারছে না।
উর্মিকে অন্যমনস্ক হয়ে পড়তে দেখে তুলি আবার ওকে খোঁচা দিল, “কী ব্যাপার ম্যাডাম? হাজব্যান্ডকে মিস করছেন নাকি, হুঁ?
ঊর্মি প্রথমে হাসতে চাইল, কিন্তু হাসিটা যেন গলায় আটকে গেল। গম্ভীর মুখে এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে আস্তে করে বলল, “হু… মিস করছি! ভীষণ…”
ওর কণ্ঠস্বর কেঁপে গেল শেষদিকে, চোখের কোণায় জল চিকচিক করছে। নাফিস, তুলি দুজনেই অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকাল। সাধারণত এমন খুনসুটি ঊর্মি হেসেই উড়িয়ে দেয়। কিন্তু আজ?
তুলি হাত বাড়িয়ে ওর আঙুল চেপে ধরল, গলা নিচু করে জিজ্ঞেস করল, “ঊর্মি, তুই ঠিক আছিস তো?”
ঊর্মি মৃদু হাসল, চোখের কোণায় জমে ওঠা আবেগের বাষ্প মুছে নিল আঙুলের ডগায়, “ঠিক আছি। তবে মাঝে মাঝে মনে হয়… আমি যেন শূন্যের ভেতর হাঁটছি।”
তিনজনের মাঝে হঠাৎ করে থমথমে নীরবতা নেমে এল। ক্যাম্পাসের চঞ্চলতা চারদিকে চলছে, অথচ এই ছোট্ট বেঞ্চের ওপর হঠাৎই জমে উঠল মন কেমনের আবহ।
________________________________
বঙ্গোপসাগরের গাঢ় অন্ধকারে লুকিয়ে আছে এক দ্বীপ—বহুদিন জনশূন্য; অথচ সাম্প্রতিক গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে অন্য কথা— সেই দ্বীপ এখন আর জনশূন্য নয়। অস্ত্র মজুত, পাচারের রুট, এমনকি বড় ধরণের সন্ত্রাসী হামলার প্রস্তুতি এখান থেকেই নেওয়া হচ্ছে। নীরব সমুদ্রকে ব্যবহার করা হচ্ছে অশুভ পরিকল্পনার আড়াল হিসেবে। এই পরিকল্পনা শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার জন্য এক ভয়াবহ হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
এই তথ্য হাতে আসার পর নৌবাহিনীর একটি বিশেষ কমান্ডো টিমকে পাঠানো হয়েছে সেই ঘাঁটি ধ্বংস করতে।এই গোপন অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ক্যাপ্টেন আবরার ইমতিয়াজ কল্লোল।
———–
রাত প্রায় তিনটা। সমুদ্রের ঢেউ নিস্তব্ধ অন্ধকারে একেরপর এক ধাক্কা খাচ্ছে বোটের গায়ে। দূরে দ্বীপের অস্পষ্ট ছায়া, যেন অন্ধকারে গিলে ফেলতে চাইছে আগন্তুকদের।
ক্যাপ্টেন আবরার ইমতিয়াজ কল্লোল নাইট-ভিশন গগলস চোখে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন দ্বীপটার দিকে। উত্তর-পূর্ব প্রান্তে ক্ষীণ আলোর আভাস— মানুষের উপস্থিতির নির্ভুল প্রমাণ।
ক্যাপ্টেন নিঃশব্দে হাত তুললেন, ইঙ্গিত দিলেন টিমকে। টিমের প্রত্যেকের দৃষ্টি তৎক্ষণাৎ স্থির হলো তার ওপর। ক্যাপ্টেন নিচু গলায় বললেন, “Be careful. Slow and silent. Eyes open, fingers steady.”
টিম প্রস্তুত হলো। বোট ঢেউয়ের তালে তীরে পৌঁছাতেই ক্যাপ্টেন আবার বললেন, “Alpha team— flank left. Bravo team— hold position. No one fires until my signal.”
টিম নিঃশব্দে তীর ঘেঁষে ছড়িয়ে পড়ল। অন্ধকারে সবকিছুই স্থির— কেবল আবছা আলো, আর পাহারারত কয়েকটি ছায়ামূর্তি। হঠাৎ ঝোপের আড়াল থেকে পাহারাদারদের একজন কিছু টের পেয়ে গেল বোধহয়, “কে ওখানে?”
“Contact! Cover fire!” ক্যাপ্টেন গর্জে উঠলেন।
সাইলেন্সড অস্ত্র হাতে কমান্ডোরা দ্রুত আঘাত হানল। পাহারাদাররাও পাল্টা গুলি চালাল বেপরোয়াভাবে। রাতের অন্ধকার মুহূর্তেই ভরে গেল ট্রেসার বুলেটের লাল রেখায়।
ক্যাপ্টেন বাম হাতের ইশারায় নির্দেশ দিলেন ওদেরকে বাম দিক ঘিরে ফেলতে। ঠিক তখনই—
ঠাস্!
ক্যাপ্টেনের বাম কাঁধ ঝাঁকুনি খেল। দপ করে গরম একটা যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়ল বুক পর্যন্ত।
টিমের একজন চিৎকার করে উঠলো, “Sir, you’re hit!”
ক্যাপ্টেন দাঁতে দাঁত চাপলেন, “I’m fine! Keep moving!”
এক মুহুর্তের মধ্যে কাঁধটা ভিজে গেছে রক্তে, তারপরেও ডান হাতে বাম কাঁধ চেপে ধরে টিমকে একেরপর এক নির্দেশনা দিয়ে গেলেন তিনি।
দ্বীপের প্রথম প্রতিরোধ ভেঙে পড়ল কিছুক্ষণের মধ্যেই। কল্লোলের কাঁধ থেকে অনবরত রক্ত পড়ছে, গুলির শব্দ থেমে আসতেই তিনি হাত ইশারা করলেন—
“Move in. Fast!”
কমান্ডোরা ছড়িয়ে গিয়ে ভেতরের দিকে অগ্রসর হলো।
একজন অফিসার ফিসফিস করে বলল, “Sir, you need first aid—”
ক্যাপ্টেন মাথা নাড়লেন, “Negative. Mission first.”
টিম এক মুহূর্তও দেরি করল না। সমন্বিত আক্রমণে তারা দ্বীপের ভেতরে প্রবেশ করল। আবার গুলি ছুটল, কমান্ডোদের হাতে নিয়ন্ত্রিত নিখুঁত একেকটা নিশানা। প্রতিপক্ষ দিশেহারা হয়ে পড়ল।
কাঁধ থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে, ক্যাপ্টেন তবুও এগিয়ে চলেছেন সামনে সামনে। বাম হাতটা অবশ হয়ে আসছে, তাই ক্যাপ্টেন তার কুচকুচে কালো রিভলভারটা শক্ত করে ধরে রেখেছেন ডান হাতে।
ঘন জঙ্গল পেরোতেই দেখা গেল— কয়েকটা টিনের ঘর আর কাঠের গুদাম দাঁড়িয়ে আছে পাশাপাশি। সেখানেই ক্ষীণ আলোর উৎস। ক্যাপ্টেন নাইট-ভিশন দিয়ে স্ক্যান করলেন। গুদামের চারপাশে পাহারারত কয়েকজন সশস্ত্র লোক।
“ওখানেই ভান্ডার। Clear it.”
ইশারা দিতেই কমান্ডোরা নিঃশব্দে ঘিরে ফেলল গুদাম। হঠাৎ বজ্রপাতের মতো শব্দ হলো— বুম!
ফ্ল্যাশব্যাং ছুঁড়ে মারা হলো ভেতরে।
ফ্ল্যাশব্যাং-এর পরে কমান্ডোরা গুদামের ভেতরে প্রবেশ করল। অল্পক্ষণে ভান্ডারের সব অস্ত্র ও সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রণে আনা হলো। ক্যাপ্টেন সাদা ইউনিফর্মের কাঁধের দিকটা ক্রমশ কালচে হয়ে আসছে, তবুও সঙ্গিদের সেটা বুঝতে না দিয়ে তিনি নিজের পেশাদারিত্ব বজায় রাখলেন।
“Sweep and secure.”
টিম নিঃশব্দে কাজ করল, প্রত্যেকেই জানে শেষ মুহূর্ত এসে কোনো ভুল করা যাবে না।
মিশনের মূল লক্ষ্য— এই গোপন অস্ত্র ভান্ডারের নিশ্চিহ্নতা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলো। কিন্তু ক্যাপ্টেনের শরীর বলছে অন্য কথা। মাথাটা অল্প অল্প ঝিমঝিম করছে, বাম কাঁধ ভারী, অবশ হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই।
একজন কমান্ডো ক্যাপ্টেনের কাছে এগিয়ে এলেন। ধীরে ধীরে বললেন, “Sir… you need evacuation, now.”
ক্যাপ্টেনের যেন কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে, “Copy. Bring me out. Mission complete, no delay.”
মিশন সফল হলেও, ক্যাপ্টেন আর টিকে থাকতে পারছেন না। প্রথমবারের মতো তাঁর পেশাদার ঢাল ভেঙে গেল শারীরিক দুর্বলতার কাছে।
টিম তাঁকে নিয়ে দ্রুত বোটের দিকে এগোল। বোট তীর ছাড়তেই ক্যাপ্টেন অনুভব করলেন তার মাথাটা ঘুরছে। কাঁধের ক্ষত থেকে রক্ত থামছে না এখনো। টিমের দুইজন তাঁকে ধরে সাবধানে বসাল, একজন তড়িঘড়ি করে ফার্স্ট-এইড কিট বের করল।
“Pressure bandage, now!”
চাপ দিয়ে ক্ষত বন্ধ করার চেষ্টা হলো। ক্যাপ্টেন দাঁতে দাঁত চেপে ব্যথা সহ্য করলেন।
বোট গতি বাড়ালো সর্বোচ্চ। দূরে নৌবাহিনীর মেডিক্যাল ভেসেল অপেক্ষা করছে। কল্লোলের চোখ আধা-বোজা হয়ে আসছে, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
অবশেষে তাঁরা পৌঁছাল মেডিক্যাল ভেসেলে। স্ট্রেচারে করে ক্যাপ্টেনকে ভেতরে নেওয়া হলো। সাদা আলোয় ঝকঝকে মেডিক্যাল রুম, ডাক্তার ও নার্সরা তড়িঘড়ি কাজ শুরু করলেন।
“Bullet wound, left shoulder. Massive blood loss!” রিপোর্ট করা হলো।
“IV line, oxygen, move fast!”
অ্যানেসথেশিয়ার ভারী ঘোর নেমে আসছে ধীরে ধীরে। চোখের পাতা আর খুলে রাখা যাচ্ছে না। তবুও সেই ভারী ঘোরে ঢুকে পড়ার আগ মুহূর্তে ক্যাপ্টেন আবরার ইমতিয়াজ কল্লোল শেষ শক্তিটুকু জড়ো করে ঠোঁট নাড়লেন ফিসফিসিয়ে, “Mi…ssion… suc…cess…”
শব্দগুলো ভাঙা, মৃদু, কিন্তু প্রত্যেকটা অক্ষরে যেন আলাদা করে বাজছে দৃঢ়তা।
ডাক্তার তাকে শান্ত করতে দ্রুত পাশে ঝুঁকে নরম কন্ঠে বললেন, “You did well, Captain. Now let us do ours.”
ক্যাপ্টেনের মুখে একটুখানি প্রশান্তির ছাপ ফুটে উঠল। তারপর ধীরে ধীরে আলো ম্লান হতে শুরু করল চারপাশে। সাদা মেডিক্যাল রুম ভেসে গেল ঝাপসা অন্ধকারে। যেন ঘন কুয়াশার পর্দা নামছে চারপাশে। সেই ঘন কুয়াশা ভেদ করে ক্যাপ্টেন আবরার ইমতিয়াজ কল্লোল ডুবে গেলেন এক অচেনা, ঘন অন্ধকারের ভেতর।
নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের গভীরে তলিয়ে যেতে যেতে হঠাৎই ক্যাপ্টেনের সামনে ভেসে উঠল আরেকটা দৃশ্য—
…
একটা শোবার ঘর। ঘরটা অন্ধকার, জানালা দিয়ে চাঁদের ফিকে আলো ঢুকছে। হঠাৎই বিছানায় চমকে উঠে বসলো ঊর্মি। ঘামে ভিজে গেছে পুরো শরীর, হৃদপিন্ডের গতি অস্বাভাবিক, চোখদুটো ভয়ার্ত।
ও অস্থির নিঃশ্বাস নিতে নিতে মুখে হাত চাপা দিল—
“না… না… এটা হতে পারে… না…”
আতঙ্কিত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে বসে থাকল ও। তারপর এদিকওদিক তাকিয়ে বিছানা থেকে নেমে তড়িঘড়ি করে লাইট জ্বালালো। হাত কাঁপছে ওর, চোখ ভিজে গেছে তিক্ত নোনাজলে।
“আবরার… আপনি ঠিক আছেন তো? কিছু হয়নি তো আপনার? আমি দুঃস্বপ্ন দেখেছি, ঠিক না? প্লিজ, আল্লাহ… ওকে ঠিক রাখো…”
বুকের ভেতর থেকে অস্থিরতা যেন ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে। ঊর্মি অযু করে এসে জায়নামাজ বিছিয়ে বসে পড়ল । চোখ বন্ধ, ঠোঁটজোড়া তিরতির করে কাঁপছে ওর।
…
ঠিক তখনই দৃশ্যটা ভেঙে গেল। ঊর্মির অশ্রুসিক্ত মুখখানা ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে মিলিয়ে গেল অন্ধকার কুয়াশার ভেতর।
কল্লোলের চোখের সামনে অচেতনতার আঁধার আরও গভীর হলো, কিন্তু শেষ মুহূর্তে প্রিয়তমা স্ত্রীর প্রার্থনার প্রতিধ্বনিটা যেন গুঞ্জন করে বেজে উঠলো কানের কাছে—
“আবরার… আপনি ঠিক আছেন তো?”
_________________________________
Naval Headquarters, Dhaka.
অপারেশন কন্ট্রোল রুমে বিশাল স্ক্রিনে রিপোর্ট ভেসে উঠেছে।
“Objective secure. Enemy stockpile neutralized. Heavy casualties inflicted on hostile force.”
কমান্ডার-ইন-চিফ গভীর শ্বাস নিয়ে বললেন, “Good job, team. But what about Captain Kallol’s condition?”
রিপোর্টিং অফিসার স্যালুট দিল,
“He’s critical, Sir. Currently under medical care.”
এক মুহূর্ত নীরবতা নেমে এল। তারপর কমান্ডার ধীরে বললেন, “This man is not just the team’s leader. He is our spirit. Pray he makes it. We’ll need him again.”
To be continued…