#জলফড়িং
#রোজা_ইসলাম
#পার্ট ১০
ইরার মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষে যেন মীতির মুখনিঃসৃত বাক্যগুলো একেকটা বজ্রপাতের ন্যায় শুনালো। বিবশ হয়ে গেলো শরীর মন, অন্তরআত্মা! এই কারণেই আজ মা ওকে ইচ্ছে করে কলেজে পাঠিয়েছে। ওর মা ওকে আবার ধোঁকা দিলো? তাছাড়া আদির সাথে ওর বিয়ে? শরীর বিবশ হয়ে গেলো ইরার কথাটি নিজ মনে আওড়াতেই! এই কথাটি দ্বিতীয়বার ভাবতেও পারছে না ও। আদির সাথে ওর বিয়ে! গায়ে ঘৃণার কাঁটা ঝুমঝুমিয়ে ফুঁটছে। রাগ, ঘৃণা, হতাশায় ভয়ংকর চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। নিজের শরীরটা বিভৎস করমের ভারী ঠেকছে নিজের কাছে। যেন কোনও তাণ্ডব, ঝড় সৃষ্টি না করে আজ শান্ত হবে না অভ্যন্তরীণ! তবুও রাদের সেদিনের কথাটা মনে করে ধৈর্য ধরে নিজেকে ধাতস্থ করতে চেষ্টা করলো। দীর্ঘ ১০মিনিটের মতো থমথমে মুখে চেয়ে রইলো ইরা ঝকঝকে তকতকে ফ্লোরে।
পাশে বসে মীতি ভয় পেলো ইরার গম্ভীরমুখ বসে থাকতে দেখে। ওর কী করা উচিৎ ঠাউরে উঠতে পারছেনা। আচমকা লক্ষ্য করলো। ইরা উঠে দাঁড়িয়ে সর্বশক্তি দিয়ে ওর বেড সাইডের ছোট্ট ল্যাম্পটা নিচে ছুঁড়ে ফেলেছে। ঝনঝনে তীক্ষ্ণ শব্দে সেটা ভেঙ্গে খান খান মুহূর্তেই! সেই শব্দেই নাকি অন্যকিছু বুঝতে পারলো না মীতি। আদি মীতির রুমে ঢুকে ক্ষিপ্ত ইরার দিকে মনঃক্ষুণ্ন দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো! ইরা আদিকে দেখে রীতিমতো রাগে ফোঁসফোঁস করছে। কোনও প্রকার ভয়ের চিহ্ন আজ ইরার ভাবভঙ্গিতে নেই যা আছে রাগ, প্রলয়ঙ্কারী ভাব! রাগান্বিত ইরা’কে দেখেই বুঝাই যাচ্ছে ঘটনাটি সে স্বইচ্ছায় ঘটিয়েছে। যদিও এর কারণ উদঘাটন করে সক্ষম হলো না আদি! অতঃপর সময় ব্যায় না করে গম্ভীরমুখে প্রশ্নবাণ ছুঁড়ে দিলো রাগান্বিত ইরার দিকে,
—” প্রবলেম কী। ভাঙ্গলি কেন এটা? ”
ইরা উত্তর দিতে অক্ষম! ওর স্বরনালী রাগে কাঁপছে ফলস্বরূপ তৎক্ষনাৎ কিছু বলতে পারলো না। এহেন নিরবতায় আদি ধমকে উঠে,
—” কিছু জিজ্ঞেস করছি তোকে। উত্তর দিচ্ছিস না কেন? ”
ইরার রাগে শরীর কম্পিত হলেও। মীতি ভয়ে কাঁপছে। আদি শান্ত থাকলেও বুঝা যাচ্ছে সে ধীরে ধীরে রেগে যাচ্ছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে সময় নিবে না! ঠিক তখন রুমে এলো আজমল খাঁন! উনি আদি এবং ইরা’কে একনজর দেখে অত্যন্ত শান্ত গলায় বললেন,
—” আদি ইরাকে আমার রুমে নিয়ে আয়। কথা আছে তোদের সাথে!”
আজমল খাঁন চলে গেলেন। বড় বাবার গলার স্বরে যেন ইরা নিজের সম্বিৎ ফিরে পেলো। অসহায় বোধ করলো। রাগে ছুটে গিয়ে কান্না পেলো। অনিচ্ছায় শর্তেও গাল বেয়ে ঝরছে জলের প্রস্রবণ! আদি ভারী আশ্চর্য হলো! এক্ষুণি রেগে থাকা মেয়েটা এভাবে কাঁদছে কেন? এটা সেটা ভেবেও সঠিক উত্তর পেলো না আদি। ও হয়তো কস্মিনকালেও ভাবেনি এই কান্নার কারণে আজ জঘন্য এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে! ভবিষ্যৎ নিয়ে অজ্ঞাত আদি শান্ত গলায় বলল,
—” চল, বাবা অপেক্ষা করছে। ”
ইরা ক্রন্দনরত অবস্থায় ঝট করে বলল,
—” আমি কোথাও যাবো না!”
ঘোষণা করে ইরা মীতি’র বেডে বসে পরলো৷ আদি দ্বিতীয় বারের মতো আশ্চর্যান্বিত হলো ইরার বেয়াদবি দেখে। ছাই চাপা দেওয়া রাগ জ্বলে উঠলো রন্ধ্রে রন্ধ্রে! তেড়ে গিয়ে কিছু বলবে। তার আগেই পিছন থেকে ওকে থামিয়ে দিলো নীলা বেগম! আদি উনার দিকে তাকিয়ে ব্যগ্র গলায় বলল,
—” ছোট মা, আমার ধৈর্য সীমানা শেষ হয়ে যাচ্ছে!”
নীলা বেগম আদির পিঠে হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করলেন। অনুরক্তির সুরে বললেন,
—” বাবা, আমি ওর সাথে একটু কথা বলে ভাইয়ের রুমে পাঠাচ্ছি, তুমি যাও! ভাই অপেক্ষা করছে।”
গম্ভীরমুখে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে ধাতস্থ করে আদি ইরার দিকে ধাঁরালো দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। পরপর রুম থেকে বেরিয়ে যায়। যার অর্থ ‘পরে দেখে নিবো তোকে’। আদি যেতেই ইরার হাত টেনে ইরাকে ওর রুমে নিয়ে গেলেন নীলা। প্রথমেই ইরার গালে একটা কঠোর হাতে শক্ত চড় লাগিয়ে দিলেন উনি। ইরা চক্ষুদ্বয় খিঁচে বন্ধ করে ব্যাথা সহ্য করে নেয়! নীলা বেগম চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন,
—” ঝাঁজ দেখাস তুই! ঝাঁজ! একবার তোর বাবা এসব জানলে এই ঝাঁজ থাকবে? ”
ইরা চাপা গলায় বলল,
—” কী করবে? ভাইয়ার মতো বাড়ি থেকে বের করে দিবে? তাহলে তাই করুক। সেটাও ভালো হবে। কিন্তু মরে গেলেও আমি আদিত্য’কে বিয়ে করবো না। ”
বাক্য সম্পূর্ণ করতেই ওর গালে আরও একটি আক্রমণ হলো। ইরার শ্যাম গাল দু’টো আরক্তিম হয়ে উঠলো মুহূর্তে। রাগ, কান্না, আঘাতে মুখটা বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। ইরা রাগ, মানসিক চিন্তায় জ্ঞানশূন্য হয়ে যায়। নীলা বেগম আরও কিছু বলার আগেই। রুম ছেড়ে বেরিয়ে ছুটে যায় বড় বাবার কক্ষে। নীলা বেগম মাথায় হাত দিয়ে বসেন। এখন যদি মেয়ে বড় বাবাকে সব বলে দেয় কী হবে? ভালো চাইতে গিয়ে তাড়াহুড়ো করে মেয়েকেও হারাতে হয় উনার! চিন্তায় প্রেশার বেড়ে গেলো উনার। হাফসাফ করতে শুরু করলেন উনি। পিছু ডাকলেন ইরাকে। শুনেনি মেয়েটা। ইরার বাবা ছোট্ট ফুপি তখনো ড্রইংরুমে বসে বিয়ে সম্পর্কেই আলাপ-আলোচনায় ব্যাস্ত। অথচ তাদের জানা নেই কী ঝড় বাড়িতে উঠতে যাচ্ছে।
ইরা আজমল খাঁনের রুমে ঢুকে দেখলো বড় বাবা বেডে বসে আছে। আদি রুমে থাকা সিঙ্গেল সোফায়! ইরা কারো কিছু বলার আগেই গিয়ে বেডে বড় বাবার পাশে বসে! আজমল খাঁন কাছ থেকে মেয়ের মুখের তাকিয়েই বুঝলেন ওকে দমিয়ে রাখার ভালো চেষ্টা করা হয়েছে। আদিও ইরার দিকে ভ্রুঁদ্বয় কুঞ্চিত করে চেয়ে আছে। ওর গালে স্পষ্ট মারের দাগ! যা ওর ভালো লাগলো না। ছোট মা ওকে মারবে বুঝতে পারেনি আদি! আজমল খাঁন ছেলের উৎকাণ্ঠিত মুখশ্রীতে একবার চেয়ে সময় ব্যায় না করে ইরার উদ্দেশ্যে সহজ গলায় বললেন,
—” নিশ্চয়ই শুনেছ, তোমার পরিবার। তোমার জন্য আদিকে পছন্দ করেছে! তোমার কী কোনও অমত আছে এই বিয়েতে!”
তৎক্ষনাৎ ইরা আদির দিকে তাকালো। এই ছেলে জায়গায় অন্য যে কেউ হলেও হয়তো ইরা সাহস পেতো না পরিবারের বিরুদ্ধে কথা বলার। কিন্তু আজ ওর কোনও বাঁধা নেই। রাদের কথাই সত্যি যা হয় ভালো হয়। এই যে ইরা সত্যি বলার সাহস পেয়েছে! ইরা সময় নিয়ে শান্ত গলায় নতমস্তকে বলল,
—” আমি আদি ভাইয়াকে ভাই ছাড়া কিছু ভাবি না বড় বাবা! ”
আদি তখনও শান্ত এবং স্বাভাবিক৷ কেননা, ইরার উত্তর এমন হবে ও আগেই জানতো। কিন্তু আদি ওর বাবার পরবর্তী প্রশ্ন গুলোর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। ও শুধু হতভম্ব বাকরুদ্ধ দৃষ্টিতে স্থির চেয়ে রইলো ইরা দিকে। আজমল খাঁন স্বাভাবিক গলায় বললেন,
—” আমাদের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া যায় না? ”
ইরা নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলো। মলিন গলায় বলল,
—” এটা ছাড়া তোমাদের সকল সিদ্ধান্ত মেনে নিবো!”
—” তোমার কোনও পছন্দ আছে ইরা? কোনও সম্পর্ক? ”
এপর্যায়ে প্রচণ্ড ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়লো ইরা। এতক্ষণের রাগ, জেদ, সাহসীকতা, কান্না গুলো সব ভয়ে পরিনত হলো! মাথা তুলে বড় বাবার দিকে তাকালো। এবং চোরাচোখে একবার আদির দিকে। আদির চক্ষুদ্বয়ের কোণায় কোণায় বিস্মিয় বাবার প্রশ্ন শুনে। ইরা জানে আদি ঝড় তুলে দিবে ইরা রাদের সম্পর্কে বললেই। কিন্তু আজ ইরার দেঁয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। ও কিছুতেই নিজের ভালোবাসা বিসর্জন দিয়ে আদিকে বিয়ে করতে পারবে না! ভয়ে চক্ষু ব্যায়ে পানি পরছে ইরার। আজমল খাঁন উৎসাহী চোখে চেয়ে উত্তরের আসায়! ইরা সাহস সঞ্চয় করে কাঁপা কাঁপা গলায় ক্ষীণ আওয়াজে দমবন্ধ গলায় বলল,
—” আ..আছে!”
আজমল খাঁন যেন জানতেন এমন কিছুই হবে। উনি শান্ত রইলেন। আদির শ্রবণেন্দ্রিয়ে ইরার উত্তর পৌঁছাতেই তৎক্ষনাৎ দাঁড়িয়ে গিয়েছে ও। চোখ থেকে যেন রক্ত ঝড়ে পরবে। কপালের রগ ওর ইতিমধ্যে দৃশ্যমান! বাবা সম্মুখে বলেই হয়তো দাঁড়িয়ে ক্ষ্যান্ত হয়েছে না হলে ও কী করতো সেই ধারণা হয়তো আদির নিজের ও নেই। আজমল খাঁন চক্ষু ধারা শাসায় ছেলেকে। আদির নড়চড় নেই। আজমল খাঁন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
—” খুলে বলো। ছেলে কে? কী করে? কত দিনে সম্পর্ক?”
ইরা উত্তর দিয়েই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আদিকে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখে ভয়ে চুপসে সিটিয়ে গিয়েছে ও। আজমল খানের প্রশ্নে হেঁচকি তুলে কাঁদছে ও! আজমল খাঁন ইরার ভয় বুঝতে পেরে উঠে আদির হাত টেনে বসালেন৷ ইরাকে আশ্বস্ত গলায় বললেন,
—” ভয় নেই আম্মা, তুমি বলো আমি আছি না!”
ইরা উপায় না পেয়ে মাথা নিচু করে রাদ সম্পর্কে নির্দ্বিধায় বলল বড় বাবার কাছে। আদি সব শুনে নিজেকে সামলাতে ব্যার্থ! তৎক্ষনাৎ নিজের হাত ছাড়িয়ে ছুঁটে এসে ইরার গালে সর্বশক্তি দিয়ে একটি থাপ্পড় মারলো। চড়ের তোড়ে ইরার ছোট্ট শরীর হেলে পরলো বিছানায়। তীক্ষ্ণ শব্দ হলো বলিষ্ঠ হাতে আঘাতে। আদি ইরার হাত টেনে বেড থেকে দাঁড় করিয়ে ঝাঁঝালো গলায় বলল,
—” বেয়াদব মেয়ে কোথাকার! তোর লজ্জা করলো না এভাবে আমাদের বিশ্বাস ভাঙ্গতে। আবার নির্লজ্জের মতো..! ”
আজমল খাঁন ছেলে’কে কিছু বলবে তার আগেই আদি পিছনে ফিরে গর্জে উঠে দারাজ গলায় বলল,
—” একদম আদর দেখাতে আসবেনা বাবা। শুধু তোমার জন্য আজ আমাকে এই দিন দেখতে হচ্ছে। তুমি যদি ওকে সাপোর্ট দাও। আমি কসম করে বলছি আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো!”
আদি বাবা’কে একটি শব্দ উচ্চারণ করার সময় না দিয়ে ইরার হাত টেনে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। বাহিরে সবাই দাঁড়িয়ে ছিলো আদির চিৎকার চেঁচামেচি শুনে। আজিম খান মেয়ের দিয়ে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে ছিলেন। দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে সবাই সব শুনেছে! তবে কারোর ভয় ওকে গ্রাস করতে পারেনি ইরা’কে। আদির ভয়ে তটস্থ ইরা একদম মেইয়ে গিয়েছে। এই মেয়েটাই যে কিয়ৎক্ষন আগে রাগ, ঝাঁঝ দেখাচ্ছিলো বুঝার উপায় নেই। আদি ওকে টেনে হিঁচড়ে ইরার রুমে নিয়ে গেলো। ইরাকে বেডে ধাক্কা দিয়ে ফেলে। চার্জে থাকা ইরার ফোন নিজের পকেটে গুঁজে। আঙুল তাক করে! হিংস্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ইরার দিকে। দারাজ গলায় বলে,
—” এই ফোনের জন্যেই এসব হয়েছে তাই না। এটা আর কখনো পাবিনা তুই। তোকে আমি ওয়ার্নিং দিয়েছিলাম! এবার তুই বুঝবি আদি কী জিনিস! তোর সাহস হলো কী করে এসব করার!”
আদির রাগে উন্মাদ লাগছে! সব ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। ইরার সম্মুখে এক মুহূর্ত থাকলে ভয়ংকর কিছু করে ফেলবে তাই হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো এবং ইরা’কে রুম বন্দী করে যেতে ভুললো না। ইরা আদিকে যেতে দেখে কান্নার গতি বাড়ালো। কিন্তু টু শব্দ উচ্চারণ করার শক্তি সাহস কিছু হলো না। চিৎকার করে কেঁদে উঠলো ও। দৌড়ে গিয়ে দরজায় ঝাপিয়ে পরলো। কিন্তু আদি বাহিরে দিয়ে দরজা লক করে রেখেছে বুঝতে সময় লাগলো না। ইরা দরজায় ভয়ে ধাক্কাতেও পারছে না। বাহিরে আদি চিৎকার করে শাসিয়ে আজমল খাঁনের উদ্দেশ্য বলছে,
—” ঐ ছেলের সাথে ইরার বিয়ের কথা চিন্তা করলেও আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো বাবা! আমাকে হারাতে না চাইলে। ওর রুমের দরজা কেউ খুলবে না, মরে যাক তবুও না! ”
আজিম খাঁন বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন। ইরার ছোট্ট ফুপি নীলা বেগমের শিক্ষায় প্রশ্ন তুলতে একবার ভাবলেন না। নীলা বেগম মুখ লুকিয়ে কাঁদেন, আফরোজ আদির এহেন রাগ দেখে ছেলের চিন্তায় তটস্থ হয়ে পরলেন। নিরব, নিস্তব্ধ, স্বাভাবিক রইলেন কেবল মাত্র আজমল খাঁন। স্বাভাবিক, প্রাণবন্ত বাড়িটা মুহূর্তে এলোমেলো গুমোট পরিস্থিতিতে ডুবে গেলো।
_____________
গোধূলি লগ্নে এক্সট্রা কাজ শেষে রাদ মাত্র অফিস থেকে বেরিয়েছে। পার্কিং এ যেতে যেতে চার-পাঁচ বার ফোন লাগালো কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে! বারবার রিং হয়ে কেটে যাচ্ছে। একে একে অনেকগুলো কল দিয়ে ফেলল ইরার নাম্বারে। তুলছেই না মেয়েটা। কিছু দিন আগের কথা মনে করে রাদের বুকটা ধ্বক করে উঠে। আবারও কী ইরা ওর থেকে দূরে চলে যাবে? কপালে চিন্তার ভাজ গাঢ় হয়। কলেজ থেকে ফিরতি পথেও ইরা ওকে ফোন দিয়েছিলো। বলেছে বাসায় গিয়ে খেয়ে কল দিবে! কিন্তু কোনও খবর নেই সেই থেকে। এর মধ্যে ব্যাস্ত বলে রাদ নিজেও আর ফোন দিতে পারেনি। কিন্তু এখন এতগুলো কল দিচ্ছে তুলছে না কেন? ক্লান্ত পরিশ্রান্ত মন, মস্তিষ্ক শুধু নেগেটিভ ভাবছে। রাদ চিন্তিত অবস্থাতেই ফোন পকেটে ঢুকিয়ে বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট দিলো! তখনই ফোন সশব্দে ভেজে উঠলো। রাদ হন্তদন্ত ভঙ্গিতে পকেট থেকে ফোন বের করে কল রিসিভ করলো। ব্যাস্ত, উৎকাণ্ঠিত ভরাট গলায় বলল,
—” এতগুলো কল দিয়েছি তুলছিলে না কেন? ইজ এভ্রিথিং ওকে ইরা? ”
ওপাশ থেকে যা প্রত্যুত্তর এলো স্তম্ভিত হয়ে রয়ে যায় রাদ। আদি হিংস্র কণ্ঠে শাসিয়ে বলল,
—” তুমি যে-ই হয়ে থাকো না কেন ব্রো। কান খুলে শুনে রাখো। ইরা আমার হবু বৌ! আর কখনো ফোন দিবে না ওকে! দ্রুতই আমাদের বিয়ে হতে যাচ্ছে। কোনও ঝামেলা চাইনা আমি! তাই ভালো ভাবেই বলছি। আদারওয়াইজ প্রয়োজনে রূঢ় হতে বাধ্য হবো।”
রাদের মাথায় বজ্র সৃষ্টি করে, আদি ত্রস্ত হাতে ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে!
চলবে!