জামাই শ্বশুর পর্ব-০৬

0
113

#জামাই_শ্বশুর
লেখনীতে : তামান্না বিনতে সোবহান
পর্ব – ৬

সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরে এলেও জেনিফারের মুখে আর হাসি দেখা গেল না। এমনিতেও স্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই মেহমাদের, তারপরও তাকে খেপিয়ে দিল। নামহীন সম্পর্কের বোঝা টানতে গিয়ে কেউ নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসুক, এটা কোনোভাবেই চায় না মেহমাদ। জেনিফার আইনত তার স্ত্রী হলেও মনের দিক থেকে দু’জনের অবস্থান এক আলোকবর্ষ দূরত্বের সমান। এই দূরত্ব কাটিয়ে উঠে, ঘর-সংসার করা, অসম্ভব প্রায়। একটা মানুষের নিজস্ব স্বপ্নপূরণের পথে এই বিয়েটা একটা বাধা, এই বাধাকে আর দীর্ঘ করতে চাইছে না সে। যত দ্রুত সম্ভব, গ্রামের এই জটিল সমস্যার সমাধান করে জেনিফারকে একটা সুস্থ-সুন্দর জীবন দিতে হবে, যে জীবনে কোনো শর্ত থাকবে না, থাকবে না কোনো দ্বিধার দেয়াল।

রুমে বসে একা-একাই পিঠে ঔষধ লাগানোর চেষ্টা করছিল মেহমাদ, পেরে উঠছিল না। পিঠে হাত আর কতটুকু পৌঁছায়? জেনিফার দূর থেকে দেখেও আজ আর সাহায্যের হাত বাড়াতে এগিয়ে এলো না। দূরেই থাকল। মেহমাদও তাকে ডাকল না। নিজ চেষ্টায় যতটুকু পারা যায়, ঔষধ লাগিয়ে ফোন হাতে তুলে বন্ধুকে কল করল। রিসিভ্‌ হওয়ার পর জানতে চাইল, “কাজ কতদূর এগোলো?”

ওপাশ থেকে কী উত্তর এলো, জেনিফার শুনল না। তবে মেহমাদের কণ্ঠে ভেসে এলো, “আগামীকাল? আচ্ছা, আমি আগে কথা বলি, তারপর আসতে বলি। এত সহজে হবে বলে তো মনে হয় না।”

এবারও ওপাশের কথা শোনা গেল না। মেহমাদ আবারও বলল, “আচ্ছা, তুই ওনাদের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলিস্‌। আমি এরমধ্যে শ্বশুর আব্বাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করব।”

ফোন রেখে দ্রুত নিজের বাবার সাথে দেখা করল মেহমাদ। আগামীকাল কী হবে, না হবে, সবটা বলে চিন্তিতমনে ওখানে বসে রইল। মোশাররফ হোসেন ছেলেকে চিন্তিত অবস্থায় বসে থাকতে দেখে বললেন, “টেনশনের কিছু নেই, আমি তো আছিই।”

মেহমাদ থেমে থেমে বলল, “উনি যদি কোনো ঝামেলা করতে চান? যদি কারও ক্ষতি করেন?”

“ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তুমি নিজের জায়গায় সৎ থাকো। যা হবে সবকিছু আমি সামাল দেব। আইন তো আছেই।”

আইন আছে, আইন সবকিছু দেখবে, এমনি করে নিজেকে যতই সান্ত্বনা দিক মেহমাদ, আগামীকালের চিন্তায় রাতে তার ঠিকমতো ঘুম হলো না। এদিকে জেনিফার তার সাথে কোনো ধরনের কোনো কথাই বলছে না। ভালোও না, মন্দও না। একেবারে বোবা হয়ে আছে। রাতটাও কাটিয়েছে একইভাবে, একপাশে কাঁত হয়ে। টেনশনে টেনশনে রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে এলে মেহমাদ আর দেরী করল না। ওমায়ের আলীকে বুঝানোর উদ্দেশ্যে, ভোর হতেই শ্বশুরবাড়ি রওনা দিল। যাওয়ার সময়ও জেনিফার কোনো প্রশ্ন করল না। ব্যস্ত গৃহিণীর মতো রান্নাঘরে টুকটাক কাজ চালিয়ে গেল।

সাতসকালে মেহমাদকে দেখে ওমায়ের আলী ভীষণ অবাক হয়ে বললেন, “আরেহ্‌ জামাই, এত সকালে। কোনো সমস্যা?”

মেহমাদ ঝটপট বলল, “সমস্যা বলেই তো এসেছি শ্বশুর আব্বা।”

“কী হয়েছে বলো? টাকা লাগবে?”

“না না, সেসব কিছু না।”

“তাহলে?”

চোখের ইশারায় ওমায়ের আলীর পিএসের দিকে দৃষ্টি ঘুরাল মেহমাদ। ওমায়ের আলী সাথে সাথে বললেন, “রফিক, তুমি অফিসে যাও। হাতের কাজগুলো সেরে রাখো।”

রফিক চলে গেলে মেহমাদ ফিসফিসিয়ে বলল, “আপনার জায়গার যে দলিলপত্র, ওগুলো কি ঠিকঠাক? মানে কোনো ভুলচুক নেই তো?”

ওমায়ের আলী ঘাবড়ে গিয়ে বললেন, “কেন? ওগুলো তো ঠিকই আছে।”

“তাহলে তো চিন্তার কিছু নেই। আপনার জায়গা আপনারই থাকবে।”

গম্ভীরকণ্ঠে ওমায়ের আলী প্রশ্ন ছুঁড়লেন, “তুমি কী বলতে এসেছ?”

“তেমন কিছু না। রাস্তা জরিপের জন্য আজকে সার্ভেয়ার আসবে। হয়তো সকাল দশটায় ওরা আপনার উঠোনে এসে দাঁড়াবে। ঠিকমতো আদরযত্ন করাবেন, ঠিক আছে? নইলে আপনার মেয়ের জামাইয়ের মান-সম্মান যাবে।”

ফট করে বসা থেকে লাফিয়ে উঠলেন ওমায়ের আলী। বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলেন মেহমাদের দিকে। সামনের পরিস্থিতি আন্দাজ করে অবিশ্বাস্য কণ্ঠে বললেন, “তুমি আমার সাথে এই বেইমানী করতে পারো না। আমি তোমাকে অনেকগুলো টাকা দিয়েছি। সেসবের কী হবে?”

মেহমাদ মুচকি হেসে বলল, “আপনার দেয়া টাকা তো অনেক আগেই দুদকের ঠিকানায় পৌঁছে গেছে। টেনশনের কিচ্ছু নেই। আগামী নির্বাচনে আপনাকে আর কষ্ট করে আসন দখলদারি করতে হবে না। আপনার আসনের বারোটা বেজে যাচ্ছে, শ্বশুর আব্বা।”

ওমায়ের আলী হুংকার ছেড়ে বললেন, “তোমাকে আমি দেখে নেব।”

“পরে দেখবেন কেন? এখুনি দেখুন।”

মেহমাদও বসা থেকে দাঁড়িয়ে শ্বশুরের মুখোমুখি হয়ে দু’হাতে শ্বশুরের পাঞ্জাবির কলারটা একটু ঠিকঠাক করে দিয়ে বলল, “আসন্ন ঝড়তুফান যদি একা মোকাবেলা করতে না পারেন, আমাকে ডাকবেন। আমি এসে দাঁড়ালে কেউ আপনাকে কিচ্ছু বলবে না। বেস্ট অব লাক, শ্বশুর আব্বা।”

হতভম্বের মতো মেহমাদের গমনপথের দিকে তাকিয়ে রইলেন ওমায়ের আলী। কাকে ফোন করবেন, কীভাবে বিপদ আটকাবেন, ভেবে পেলেন না। দিশেহারা ও অস্থির হয়ে চিৎকার দিয়ে রফিককে ডেকে বললেন, “মেহমাদের পিছনে লোক লাগাও। কোথায় যায়, কী করে, কাদের সাথে ওঠাবসা সব ইনফরমেশন চাই আমার। সবার আগে সার্ভেয়ারের আসা আটকাও। শিগগির জানো, আজ এখানে কোন কোন আইনজীবী আসছে। কতজন আসছে। তারা আসার আগেই টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করো। কুইক…।”

রফিক উরাধুরা কাজ শুরু করল। ওমায়ের আলীর কথামতো একদলকে মেহমাদের পিছনে লেলিয়ে দিল। কাছের ও বিশ্বস্ত এক উকিলকে ফোন করে সার্ভেয়ার আসার ঘটনা নিশ্চিত হয়ে বলল, “কোনো উপায় নেই, স্যার। ওরা আজ অ্যাকশন নিবে। উপরমহল থেকে অর্ডার এসেছে।”

“কীভাবে সম্ভব? মেহমাদের এত সাহস ও ক্ষমতা হয় কী করে আমার পিছনে পড়ার?” হতাশ হয়ে বিড়বিড়ালেন ওমায়ের আলী।

উত্তর না দিয়ে কাচুমাচু মুখে দাঁড়িয়ে রইল রফিক। ওমায়ের আলী বললেন, “ওই যুবকটা কে, সেটা জানা গেছে?”

“না স্যার। এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ পাইনি।”

“ঘাস কাটো সারাদিন? কী করো তোমরা? এত এত লোককে পেলেপুষে দু’হাতভরা টাকা দিয়ে লাভ হচ্ছে কী? একটা ছেলেকে খুঁজে বের করতে পারছ না! সরো এখান থেকে।”

***

দশটা বাজার সাথে সাথেই সার্ভেয়ারের লোকজন ওমায়ের আলীর উঠোনে এসে উপস্থিত হলো। সাথে গ্রামের মেম্বার, চেয়ারম্যান ও ভুক্তভোগী মানুষেরা। সবাইকে দেখে ওমায়ের আলীর হার্টঅ্যাটাক করার মতো অবস্থা হলো। কোন ফাঁক দিয়ে পালাবেন, সেই পথও খুঁজে পেলেন না। একজন উকিল সবগুলো কাগজপত্র দেখতে চাইলে, ওমায়ের আলী নকল পেপারস্‌ বের করে দিলেন। তাতে বিশেষ সুবিধা হলো না। গ্রামবাসীদের সাথে নিয়ে জরিপের কাজ শুরু হলো। নিজের জায়গায় বসে ঘামতে থাকলেন ওমায়ের আলী। অক্ষম আক্রোশে ফেটে পড়ে মেহমাদের দিকে তাকালেন। ততক্ষণে মেহমাদ সার্ভেয়ারের লোকজনে সাথে সাথে রাস্তার মূল সীমানায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখান থেকে পথের শুরু হয়েছে।

একদিকে মাপামাপির কাজ চলছে, অন্যদিকে জেনিফার বাবার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। মেয়ের মনমরা মুখ দেখে তিনি প্রচণ্ড অসহায়বোধ করলেন। কোনোমতে বললেন, “তোকে বিয়ে কেন দিলাম? ওর মগজধোলাই করার জন্য। আর তুই কী করলি? এতদিনেও মেহমাদের মন থেকে রাস্তার পোকা বের করতে পারলি না। এখন আমার সব জলে যাবে। সব…।”

জেনিফার নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল, “যা তোমার নয়, তা নিয়ে এত বড়াই কেন বাবা?”

“আমার নয় বললেই হলো? এতবছর ধরে এই জমিনের ওপর দাঁড়িয়ে হেঁটেছি, এখন সেটা একনিমিষেই হাতছাড়া করে ফেলব? অসম্ভব। এমন দু’একটা উকিলকে কীভাবে সাইজ করতে হয় আমারও জানা আছে।”

“চেষ্টা তো কম করোনি। লাভ কী হলো? মেহমাদকে থামাতে পেরেছ?”

ওমায়ের আলী কোনোকিছু না বলে পরবর্তী ভাবনা সাজাতে লাগলেন। জেনিফার ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে সবার কাজ দেখতে দেখতে পূণরায় শ্বশুরবাড়িতে এলো। এখানে সবার জন্য রান্নার আয়োজন চলছে। আজ যারা যারা উপস্থিত আছে, সবাইকেই খাওয়ানো হবে। যেহেতু সারাদিন ধরে কাজ চলবে, তাই প্রত্যেকের কথা চিন্তা করেই বাবুর্চি দিয়ে উঠোনের বিশাল জায়গা জুড়ে রান্না ও আসনের ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। হেঁটে হেঁটে সবকিছু ঠিকঠাক কি না পর্যবেক্ষণ করে, বড়ো একটা ফ্লাস্কে চা, অনেকগুলো চায়ের কাপ সাথে সবার জন্য বিস্কুট, সিঙ্গারা ও সমুচা তুলে বকুলকে সাথে নিয়ে আবারও রাস্তায় এলো।

বকুল মেহমাদের সামনে গিয়ে বলল, “ভাইজান, চা নিয়ে এসেছি। সবাইকে চা দেন আগে।”

রাস্তার পাশের খোলা মাঠে চেয়ার-টেবিল সাজানো ছিল। মেহমাদ টেবিলের ওপর সবকিছু রেখে জানতে চাইল, “রান্না শেষ হয়েছে?”

“শেষ হয়নি এখনও।”

“আচ্ছা, তুমি ওদিকে খেয়াল রেখো।”

মেহমাদ সবার জন্যই চা ঢেলে, যত্ন ও সম্মানের সাথে সবাইকে চা পরিবেশন করাল। জেনিফার কাছে দাঁড়িয়ে থেকে সব দেখল অথচ মুখ দিয়ে কোনো কথা বলল না। যেভাবে মাপামাপি চলছে, সব ঠিকঠাক হলে হয়তো জেনিফারদের বাড়ির অর্ধেকটাই ভেঙে ফেলতে হবে। তার মন খারাপ কি না, ঠিক বুঝল না মেহমাদ। ফ্লাস্ক থেকে চা ঢেলে একটা কাপ জেনিফারের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “মন খারাপ?”

জেনিফার দু’দিকে মাথা নেড়ে চা হাতে নিল। মেহমাদ তাকে নিরিবিলি একটা জায়গায় বসার ব্যবস্থা করে দিয়ে বলল, “আমার ওপর রাগ হচ্ছে আপনার?”

এবারও দু’দিকে মাথা নাড়ল জেনিফার। মেহমাদ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “আমার কাজে কষ্ট পাচ্ছেন?”

এর উত্তরেও দু’দিকে মাথা নাড়ল জেনিফার। মেহমাদ কিঞ্চিৎ হেসে বলল, “রাগ নেই, মন খারাপ নেই, কষ্টও পাচ্ছেন না, তাহলে চুপ করে আছেন কেন?”

জেনিফার অভিমানী মনে নিজের ফোন থেকে মেহমাদের নম্বরে একটা ম্যাসেজ পাঠাল। এরপর ইশারায় ফোন দেখিয়ে ম্যাসেজ পড়ার ইঙ্গিত দিল। মেহমাদ ফোন হাতে তুলে তাতে চোখ বুলাল, “কালকের জন্য আপনি আমাকে স্যরি বলেননি। আর যতক্ষণ না পর্যন্ত স্যরি বলছেন, ততক্ষণ আমি আপনার সাথে কথা বলব না।”

মেহমাদ একটু শব্দ তুলেই হেসে ফেলল এবার। ফোন পকেটে রেখে বলল, “আমি আসলে আপনাকে ইচ্ছে করে ওইভাবে বলিনি। আমাদের মধ্যে থাকা সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আপনি জানেন। যতই সাধুসন্ন্যাসী থাকার চেষ্টা করি না কেন, আমি আসলে রক্তে-মাংসে মানুষ। আমারও ভুল হয়, সঙ্গিনীকে নিয়ে একান্তই কিছু ইচ্ছেস্বপ্ন উঁকি মারে মনে, যেটুকু আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে এড়িয়ে যাই। তারপরও, ভুল করেও যেন ভুল নাহয়, এজন্য নিজেকে ও আপনাকে বারবার সতর্ক করছি। যেহেতু এই বন্ধন ও এর স্থায়িত্ব খুবই কম, সেহেতু আমি কোনোভাবেই চাই না, ভুলচুক হোক। অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল থেকে নিজে যেমন বাঁচতে চাই, আপনাকেও বাঁচাতে চাই। আমার এক কথাতে আপনি যেভাবে নিজের চাওয়াগুলোকে বিসর্জন দিয়েছেন, কোনোভাবে আমি তার অবমূল্যায়ন করতে চাই না। অনিচ্ছাকৃতভাবে আপনাকে কষ্ট দেয়ার জন্য আমি সত্যিই খুব দুঃখিত, জেনিফার।”

জেনিফারকে বিস্মিত অবস্থায় রেখে আবারও নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল মেহমাদ। জেনিফার বাড়ি ফিরল ঠিকই, তবে মনের মধ্যে একগাদা প্রশ্ন ও কৌতূহল নিয়ে ফিরল।

সারাদিনে রাস্তার এক মাথা থেকে অন্য মাথা পর্যন্ত জরিপের কাজ শেষ হলে, ওমায়ের আলীর কাগজপত্র দেখে একজন আইনজীবী ওমায়ের আলীকে ওয়ার্নিং দিয়ে বললেন, “আপনাকে দু’সপ্তাহ সময় দেয়া হলো। এরমধ্যে হয় আপনি স্বেচ্ছায় রাস্তার দখলদারি ছাড়বেন, নয়তো আমরা আইনী পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।”

কোনো শব্দ ও সম্মতি ছাড়াই সার্ভেয়ারের লোকজনকে বিদায় দিলেন ওমায়ের আলী। মেহমাদ তাদের বাড়ি এনে, গ্রামের উপস্থিত সবাইকে নিজ নিজ আসনে বসিয়ে খাবারদাবারের পর্ব সেরে নিল। সন্ধ্যের পরপর সবাই বিদায় নিলে, মোশাররফ হোসেন ছেলেকে বললেন, “তুমি খুব সাবধানে থেকো। তোমার শ্বশুর এত সহজে কাজটা কমপ্লিট হতে দিবে না।”

মেহমাদ বাবাকে আশ্বস্ত করে বলল, “চিন্তা করো না। আমার কিছুই হবে না।”

সারাদিনের ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীরকে ঝরঝরে করতে ওয়াশরুমে ঢুকে লম্বা সময় নিয়ে শাওয়ার নিল মেহমাদ। চুল মুছে মাকে ডেকে কফি চাইল। দশ মিনিটের মধ্যে কফি হাতে নিয়ে রুমে এলো জেনিফার। কাপটা তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে, বাবার নম্বর থেকে কল আসায় ফোন রিসিভ্‌ করে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়াল। মেহমাদ তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে কফিতে চুমুক দিয়ে পরবর্তী কাজের সুরাহা করতে গেল, এমন সময় কানে এলো, “বাবা, তুমি কী চাও জানি না। আইন কী করবে, কী করবে না, সেটাও জানি না। আমি শুধু একটা কথা বলি, তুমি কোনোভাবেই আমাকে তোমার গেইমের গুটি ভাবতে পারো না। এ পর্যন্ত আমি যা করেছি, নিজের বিবেকের কাছে সৎ থাকতে করেছি। আর আগামীতে যা করব, সেটাও সবদিক বিবেচনা করেই করব। ভালো হয়, তোমার এই গেইম থেকে আমাকে বাতিল করলে। তোমরা একেকজন আমাকে খেলার পুতুল ভাবলেও আমি আমার মনের কথা শোনে সিদ্ধান্ত নিতে পছন্দ করি। তাই আমার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সেটার সম্পূর্ণ চিন্তাটা আমার ওপর ছেড়ে দিলেই ভালো হবে। প্লিজ, জোর করে তোমার সিদ্ধান্ত আমার কাঁধে চাপিয়ে দিয়ো না। আমি এটা বরদাস্ত করব না।”

***

চলবে…